আপনাতেই আমি পর্ব ৩২

আপনাতেই আমি পর্ব ৩২
ইশিকা ইসলাম ইশা

রাত তখন প্রায় ১০টা,
তীব্র এখনো রুমে আসে নি।রিদি নিচে নেমে আসে।একজন কাজের লোক কে জিজ্ঞেস করতে ওনি বলে তীব্র তার বিল্ডিং এ আছে।রিদি রেগে বিল্ডিং এর দিকে যায়।সেখানকার দুইজন গাড রিদিকে দেখে গেট খুলে দেয়।রিদি সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে।
তীব্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিল।হুট করেই রিদি কে দেখে ভু কুঁচকে বল,
এখানে এসেছেন কেন বেগমজান?আপনাকে বলেছি তো আরাম করতে!!
রিদি বিরক্ত হয়ে বলল ,
আম্মা আর রাদিফ ভাইয়া কোথায়??
আমি জানি না!!
মিথ্যা!আপনি জানেন ওরা কোথায়?
না!!
হা!!!
হা!জানি!জানি ওরা কোথায়!তো!!
কি করেছেন ওদের সাথে??ছেড়ে দিন ওদের!!
পারব না!!

কেন??কি করেছে আপনার!!যা করেছে আমার সাথে করেছে।আমি বলছি আপনি ওদের ছেড়ে দিবেন!!
তীব্রর রাগ হল!!রাগে কেঁপে উঠলো সর্বাঙ্গ।কটমট করে বলল,
কি করেছে আমার!!কি করেছে??
তীব্রর আগের মতো ভয়ংকর রাগ দেখে অবাক হল রিদি!!রাগে যেন মুখের চামড়া ফেটেই রক্ত বের হবে।
আমার অস্তিত্ব কেড়ে নিয়েছে!!রিদি বুঝল না।তীব্র রাগে টগবগ করছে।
শুনবি!!শুনবি কি করেছে।মেরে ফেলেছে!খুন করেছে!!
ককককারর???
তীব্র রিদির পেটে হাত রাখতেই রাগ যেন একটু কমে।
এইখানে ছিল আমার অস্তিত্ব।রিদি কেপে উঠল।
মা…নে??
আমার বাচ্চা ছিল এইখানে!! দুনিয়াতে আসার আগেই যার মৃত্যু ঘটেছে। এইখানে ছোট্ট একটা প্রান ছিল কিন্তু সে এখন নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কার জননননন্য?????????
তীব্রর চিৎকারে কেপে উঠল রিদি!!আজান্তেই হাত রাখল পেটে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
আমার বাচ্চা!!
তীব্র চোখে পানি টলটল করছে।রিদি তাকালো তীব্রর দিকে। তীব্রর চোখে পানি দেখে অবাক হল। তীব্র কান্না করছে!!তীব্র!! তীব্র ধপ করে রিদির পেটের কাছে বসে পড়ে।রিদি তীব্র কে ভাংচুর হতে দেখে অবাক হল।নিজের কষ্ট ভুলে তীব্রর কাছে বসল।রিদি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অনাগত সন্তানের জন্য তীব্রর কষ্ট।যে আসেই নি,যে নাই ই তার জন্য কষ্ট হচ্ছে তীব্রর।মেরে ফেললেও নাকি যার হাত পর্যন্ত কাঁপে না তাকে বাচ্চার জন্য এমন কষ্ট পেতে দেখে মনের কোথাও ভীষণ পিরা অনূভুব করল রিদি। তীব্রর মুখ তুলে দুহাতে ধরল।তীব্রর চোখের জল মুছে দিতেই তীব্র ঝট করেই জরিয়ে ধরলো রিদিকে।

আমার বাচ্চাটা ফেরত চায় বেগম সাহেবা!যাকে দেখে নি,ছুই নি,জানি ও না।তার জন্য এতো এতো মায়া কেন হবে!!কেন??আপনি জানেন প্রথম যখন শুনলাম আপনি পেটের মধ্যে ছোট্ট একটা বাবু ছিল কিন্তু এখন আর নেই তখন বুকের বা পাশে কি তিরতিরে ব্যাথা অনুভব করেছিলাম। ইচ্ছে করছিল পুরো দুনিয়া ধ্বংস করে দেয়।কেন আমার বাবু ছিনিয়ে নিবে!! কেন??দোষ তো আমি করেছি আমার বাবু কি করেছে!!আপনি আমার সাথে যা খুশি করুন কিন্তু আমার বাবু কে ফিরিয়ে দিন। প্লিজ…….
তীব্রর সব কথা শুনে তীব্রর উপর ভীষণ মায়া হল রিদির। বাচ্চা হারানোর কষ্টের মাঝেও তীব্রর কষ্ট অনুভব করল রিদি।রিদি তীব্রর ভার আর নিতে পারল না। কষ্ট তো তারও হচ্ছে।কি এক মায়ার জিনিস এই সন্তান!রিদি ধীরে ধীরে ফ্লোরে শুয়ে পড়ল। চোঁখের পানি ঝরতেই থাকল।
অনেক সময় পরও তীব্র উঠল না রিদির ওপর থেকে।সেভাবেই আছে।তীব্রর গরম নিঃশ্বাস বারি খাচ্ছে গলায়।রিদি শিউরে উঠছে বার বার।তীব্র মাথা তুলে তাকাল রিদির দিকে।রিদির সাথে হয়তো চোখে চোখৈ কথা হল।তীব্র ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল রিদির মুখের কাছে। এগিয়ে এসে ঠোট ছোয়াল কপালে।রিদি ঘামচে ধরল তীব্রর শার্ট।তীব্র হিসেবে আজ হয়তো প্রথম ভালবাসাময় মিলন তাদের।

সকালে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে তীব্র তার দিকে ঝুকে আছে।তীব্র কে এভাবে তাকাতে দেখে রিদি কম্বল এর নিচে চলে আসে।তীব্র হেসে কম্বল পেঁচিয়ে ই জরিয়ে ধরে রিদিকে। দুষ্টু মিষ্টি ভালবাসায় শুরু হয় তাদের সকাল।রিদি তীব্র কে মেনে নিয়েছে।যদিও মাঝে মাঝে আবাক লাগে তীব্র চৌধুরী নাকি তার স্বামী।সবাই তো এটাই বলে,”মেয়েদের চেহেরা সুন্দর হওয়ার থেকে ভাগ্য ভালো হওয়া জরূরি”যেমন রিদির।রিদি ও মানে হয়তো তার ভাগ্যে বেশিই ভালো। যেখানে হাজারটা মেয়ে তীব্র কে দেখার জন্য সুযোগ খুজে সেখানে সেই পুরুষ টি তাকে দেখার জন্য সুযোগ খুজে। হসপিটালে ক্লাস শেষে আগের মতো আর আড্ডা দিতে পারে না রিদি।তাকে গিয়ে বসে থাকতে হয় তীব্রর সামনে।রিদি নিয়তি প্রথমেও মেনে নিয়েছে আবারো মেনে নিল।মেনে নিলে বা মানিয়ে নিলে যদি সুখী হওয়া যায় তবে কেন নয়!
তীব্র হসপিটাল ছেড়েছে প্রায় ২দিন।ছেড়েছে বলতে আপাতত তার সার্জারি নাই। তাই অফিসের কাজের জন্য অফিসে আছে।রিদির ক্লাস শেষে বের হতেই তীব্রর কল পেয়ে ধরল।
কি হয়েছে বেগমজান??কোন সমস্যা? কেউ কিছু বলেছে?

আপনি কেন আমাকে জিজ্ঞেস করছেন??পিছে তো লোক লাগানোই আছে ওদের জিঙ্গেস করুন!!
তীব্র ভু কুঁচকে বলল,
আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে!
রিদি চেয়ার টেনে বসতে বসতে কটমট করে তাকালো তীব্রর দিকে।কিটমিট করে বলল,
সেটা আপনার জন্য। রাতের ঘুম না হওয়ায়।
তীব্র হাসল।রিদি বিরক্ত হয়ে বলল,
হাসবেন না! অসভ্য!!
তীব্র এবার জোরেই হাসল।রিদি বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিল। অসভ্য পুরুষ হু!!
সাথে সাথে ম্যাসেজ এলো!
“””বেগম সাহেবা আপনাকে আপনার কাছে যত্ন করে রেখেন।কারন #আপনাতেই আমি “””

ক্যাফেতে বসে আছে রিদি।আর তার একপাশে মেঘ অন্য পাশে আয়ান। কয়েকদিন তীব্রর জন্য তেমন যোগাযোগ হয় নি তাদের।ক্লাসেই যা টুকটাক কথা হতো।তবে এখন খেয়াল করেছে দুইজন দুইজনের সাথে কথা বলে না।এটা নিয়েই আজ শালিস বসিয়েছে রিদি।
কি হল চুপ করে আছিস কেন?বল কি হয়ছে তোদের?
আমাকে কেন বলছিস ওকে বল ওর কি হয়েছে কথা কই না কেন আমার লগে??(আয়ান)
মেঘলা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে,
আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!!
রিদি, আয়ান দুইজনেই চমকে উঠলো,
কিহহহহ??

আগে বলিস নি কেন?(রিদি)
বলতাম কি করে তোর জীবনেই এতোবড় একটা ধাক্কা গেছে (মেঘলা)
তই আমি কি মরছিলাম!!(আয়ান)
তোকে বলে কি হবে আয়ান!(মেঘ)
আমাকে বলে কি হবে মানে! আমি বুঝব তোর কথা!!(আয়ান)
বুঝবি!!আদো কখনো আমাকে বুঝেছিস? তাছাড়া তোর তো জি এফ নিয়েই সময় শেষ!!(মেঘ)
আয়ান কিছু বলার আগেই রিদি বলল,
তুই কি চাইছিস না বিয়েটা করতে!!মানে তোর কি কোনভাবে পছন্দ না!
অপছন্দ করার কিছু নেই।নিদিষ্ট কোন কারন ও নেই মানা করার।তোরা থাক আমি এখন উঠছি।(মেঘ)
মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে গেল আয়ান,

আপনাতেই আমি পর্ব ৩১

দেখলি দেখলি কেমন ভাব দেখিয়ে গেল!!
তুই না ওর ছোট বেলার বন্ধু আয়ান!!তাহলে কেন ওকে বুঝিস না?ওর চোখের ভাষা কেন বুঝতে চাস না! বুঝতে আবার বেশি দেরি করে ফেলিস না আয়ান!
কি বলতে চাইছিস?
বলতে চাইছি না বুঝতে বলছি!!কখনো মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখিস!বলে রিদিও বেরিয়ে যায়। আয়ান হতবাক হয়ে তাদের যাওয়ার দেখে। দুইজনের কথা তার মাথায় ঢুকে নি।

আপনাতেই আমি পর্ব ৩৩