আপনাতেই আমি পর্ব ৩৯

আপনাতেই আমি পর্ব ৩৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

রিদির ঘুম ভাঙ্গে রোজকার মতো। আড়মোড়া ভেঙ্গে আশেপাশে তাকাতেই চমকে উঠলো।এই রুম তো তাদের না। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চারদিকে দেখল রিদি।কাঠের তৈরি ঘর চারদিকে কাঠ দিয়ে তৈরি ।ঘরের মাঝে একটা সাদা বিছানা পাশে একটা সাইড টেবিল।একপাশে বড় কাচের গ্লাস দিয়ে দরজার মতো।একদিকে সোফা।অপর পাশে আলমারি।সোফার সামনে একটা টি টেবিল।

রিদি ভয়ে ভয়ে সবটা দেখে এবার তাকালো দরজার দিকে।খোলা দরজা।রিদি নিজের দিকে তাকিয়ে আরো অবাক হল।তার পোশাক কে বদলে দিল।তীব্র!তীব্র কোথায়? মস্তিষ্ক জবাব দিলো না।ভয়ে বুক কাপল রিদির। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ভয়টা দ্বিগুণ হল রিদির।ঝট করে উঠে দাঁড়াল।পাশের টেবিলে থেকে ফুলদানি নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়াল।পায়ের শব্দ কাছাকাছি আসতেই রিদি ফুলদানি ছুড়ে মারল।
কি করছেন বেগমজান??
ঝট করে চোখ খুলে তাকায় রিদি।সামনে তীব্র কে দেখে তার কাছে আসতেই থামিয়ে দিল তীব্র।
ওয়েট!ওয়েট!আম কামিং!!
সাবধানে রিদির কাছে আসতেই রিদি জরিয়ে ধরে কান্না করে দিল।তীব্র থতমত খেয়ে বলল,
ভয় পেয়েছেন??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদির রাগ হল।ভয় পাবে না!হুট করে সব পরিবর্তন দেখলে ভয় পাবে না সে।রাগে তীব্র কে ছেড়ে বলল,
এসব কোন ধরনের কাজ?কোথায় আছি?আর কিভাবে আসলাম?
সরি!সরি!বেশি ভয় পেয়েছেন?
না।না।আমি ভয় পাব কেন?অচমকা নিজেকে অন্য এক জায়গায় দেখে অন্য পরিবেশ এ দেখে আমি কেন ভয় পাব!!আমি তো সাহসের মূর্তি।আমি তো তীব্র চৌধুরীর বৌ আমার তো ভয় পাওয়া মানা।তাই না!!
মুখ ভাঙ্গানো কথা শুনে জোরেই হাসল তীব্র।তীব্রর হাসির দিকে তাকিয়েই রইল রিদি।তীব্রর মুচকি বাঁকা হাসির চেয়ে প্রানখোলা হাসিটা আরো নজরকারা লাগল। যদিও খুব কম হাসে তীব্র।রিদি রাগ ভুলে বলল,
এভাবে হাসবেন না!একদম বুকে গিয়ে লাগে।

তীব্র আরো জোরে হেসে উঠলো।রিদির রাগ হলো।ছেলে মানুষ এতো সুন্দর হবে কেন?ছেলে মানুষ হবে ঠিকঠাক এতো বেশি সুদর্শন হতে হবে কেন??হুট করে রিদির কান্না পেল।তার বর এতো কিউট কেন?রিদির কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে তীব্র হাসি থামিয়ে জরিয়ে ধরলো,
আমি যেমন ই হয় সবটাই আপনার।কারন #আপনাতেই আমি বেগমজান।রিদি তীব্রর বুকে মুখ ঘুষে বলল,
আমরা কোথায় আছি??
এটা আমার বাগানবাড়ি।রিদি তীব্র কে ছেড়ে আশেপাশে দেখল। যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু গাছ আর গাছ।যেন আকাশের সাথে মিশে আছে গাছপালা। দৃশ্যটা দেখার মতো সুন্দর।রিদি খুশিতে চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।তীব্র রিদির দিকে চেয়ে সোফায় বসল।পাশ থেকে ল্যাপটপ নিয়ে মনোযোগ দিল তাতে।রিদি এখন বাচ্চাদের মতো এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখবে তা জানে তীব্র।তাই আপাতত একটু কাজ করে নিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরেই ফিরে আসে রিদি।হাতে তার বেশ কিছু ফুল। রিদি এসেই তীব্রর কোলে বসে পড়ে।তীব্র রিদির কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,

এগুলো কি করবেন বেগমজান?
ভালো লাগলো তাই নিয়ে আসলাম।
তীব্র রিদির গলায় মুখ গুঁজে বলল,
আপনি খুশি তো বেগমজান!
রিদি কেপে উঠল। উষ্ণ আলিঙ্গনে শিহরিত হল শীরর।শিরা উপশিরায় বেয়ে বয়ে গেল শীতলতা। ধুকপুক করে উঠল বুকের ভেতর।তীব্রর ছোঁয়ার তীব্রতা বাড়তেই খামচে ধরলো শার্ট।ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা গেল শুধু। শান্ত পরিবেশে তখন ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ঠান্ডা বাতাস এসে শীতলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে যেন।প্রকৃতিও যেন তাদের পক্ষে হয়ে সায় জানালো।ভালবাসা ময় বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো দুইজনে।

ব্যাস্ত শহর মানুষ ছুটছে নিজেদের কাজে জীবিকা অর্জনের জন্য।আকাশের অবস্থা তখন খুব ভালো না মনে হয় বৃষ্টি নামবে তপ্ত দুপুরে বৃষ্টি হওয়ার দোয়াই যেন করছে সবাই।সময় তখন দুপুর ২টা ৩০ মিনিট।ক্যাফের পাশে রেস্টুরেন্টে বসে আছে রিদি।রিদির পাশেই বসে আছে মেঘ।বাগান বাড়ি থেকে এসেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক হয়েছে।একান্ত সময় বেশ ভালোই কেটেছে তাদের।খিদায় পেট চু চু করছে সকালে আজ কিছু খেতে পারে নি রিদি।তাই রেস্টুরেন্টে এসেছে সাথে এসেছে মেঘ,আয়ান। আয়ান খাবার অর্ডার করে এসে বসল মেঘের পাশে।একটু পরেই খাবার চলে এলো খাবার খেতে যেতেই দেখে পাশের ক্যাফেতে বসে আছে তীব্র।রিদি তীব্র কে দেখে আবাক হল।চেয়ার ছেড়ে দু কদম এগিয়ে থেমে গেল। তীব্রর পাশে একটা মেয়েকে দেখে আরো অবাক হল।

কারন তীব্র কাজ ছাড়া ১সেকেন্ড ও কোন মেয়ের সাথে কথা বলে না। সবচেয়ে বেশি অবাক করা বিষয় তীব্রর হাত ধরে বসে আছে মেয়েটি। মেয়েটির চোখে পানি। কান্না করছে আর কি যেন বলছে।রিদির বুক কাপল আজানা ভয়ে।ধরে রাখা সেই হাতের দিকে বার বার তাকালো। এতো দিনে তীব্রর সাথে অন্য কাউকে দেখে ভেতরটা জ্বলে উঠলো। তবুও নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে বার বার নিজেকে বোঝাতে লাগল কাজে এসেছে রিদি ।তুই মনে হয় বেশিই ভাবছিস। এবার মেয়েটি তীব্রর হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তীব্র কিছু বলছে না চুপচাপ বসে আছে।রিদির আর সহ্য হল না।ঘুরে এসে ব্যাগ নিয়ে হনহন করে চলে গেল।

আপনাতেই আমি পর্ব ৩৮

এদিকে মেঘ, আয়ান হা হয়ে তাকিয়ে রইল।হুট করে কি হল বুঝল না কেউ।কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ ও দিল না রিদি। রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে রিদি একটা রিক্সায় উঠে বসে। রিক্সায় উঠে হু হু করে কেঁদে ওঠে।বার বার নিজেকে বুঝানোর পরেও ব্যর্থ হচ্ছে।কোন দরকার হয়তো তাই এসেছে।মেয়েটা হয়তো বন্ধু,কাজিন বা কাজের কেউ হতে পারে।নিজেকে বুঝানোর পরেও হাত ধরার দৃশ্য যেন এলোমেলো করে দিচ্ছে রিদিকে।রিদির কান্নায় প্রকৃতি যেন তার দলে এলো।ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল ধরনী জুড়ে।রিকসা আলা মামা বৃষ্টি দেখে নিজের রেইনকোট পড়ে নিল।রিদিকে পলিথিন এগিয়ে দিল।রিদি ব্যাগের উপর পলিথিন রেখে চুপচাপ বসে থাকল। পুরোপুরি ভিজে গেল রিদি। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেল কান্না।

আপনাতেই আমি পর্ব ৪০