আপনাতেই আমি পর্ব ৪৪

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৪
ইশিকা ইসলাম ইশা

থমথমে পরিবেশ চৌধুরী বাড়িতে। কিছুক্ষণ আগেই ঘূর্নিঝড় বয়ে গেছে চৌধুরী বাড়ির উপর দিয়ে।ঝরটা অবশ্য তীব্র ই করেছে। তীব্র ছাড়া এমন ঝর আর কেই বা আনবে।।পুরো ডয়্রিং রুমের জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে।সোফা উল্টে এদিক ওদিক পড়ে আছে। বিলাশ বহুল বাড়ির বিলাশিতার জন্য কেনা দামি জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুরমার হয়ে আছে। আমির অসহায় মুখে চেয়ারে বসে আছে। চৌধুরী বাড়িতে খুশি যেন আসার সাথে সাথেই চলে যায়।রুপ আমিরের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে দোতলায় রিদির বন্ধ ঘরের দিকে তাকাল।এতো কিছু হল কিন্তু রিদি বের হয় নি ঘর লক করে বসে আছে।রুপ নিজেও অসহায় বোধ করল পরিস্থিতি বুঝে।কি জানি আগে আবার কি অপেক্ষা করছে!!!রুপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজের মেয়েদের সব পরিষ্কার করতে বলল।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,

রিদির ওপর রাগ করে থাকা সম্ভব হয় না তীব্রর তা রিদি জানে।তাই তো সারাদিন পেছনে পেছনে ঘুরে সরি সরি বলে মানিয়ে নিয়েছে তীব্র কে।তীব্র অবশ্য খুশির খবর শুনে রিদির ওপর রেগে ছিল ও না। শুধু অভিমান হয়েছিল রিদির ওপর।তবে রিদির পিছু পিছু ঘুরাই আর রাগ করে থাকতে পারল না।মান অভিমান ভুলে বুকে জরিয়ে নিল রিদিকে।রিদি খুশিতে বাচ্চা নিয়ে হাজারো জল্পনা কল্পনা তীব্র কে বলতে লাগল। তীব্র ও মনোযোগ দিয়ে শুনল বৌয়ের কথা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতে সব ঠিক হলো তাই তীব্র সকালেই রিদিকে হসপিটালে নিয়ে আসে গাইনি ডাক্তারের কাছে।ওনি বেশ কিছু টেষ্ট করতে দেয়।সব শেষ করেই রিদি ক্লাস করে রোজকার মতোই বাসায় ফিরে আসে।আইনায় দাঁড়িয়ে নিজের পেটের ওপর হাত বুলিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে রিদি।মা হবে সে” মা”।কথাটা মনে হতেই সব কিছু ভালো লাগছে তার।মা হওয়ার অনুভূতি শুধু হয়তো মায়েরাই বুঝতে পারবে।রিদি পেটে হাত বুলিয়ে বলে,
আমি খুব ভালো আম্মু হবো তোমার।খুব ভালোবাসব তোমাকে। আমি তো পায় নি মায়ের আদর ভালোবাসা।পেয়েছি শুধু ঘৃনা।ভাবতেই চোখ ছলছল করে উঠলো রিদির।এতো ঘৃনার কারন কি শুধু তার গায়ের রং নাকি অন্য কিছু!জানে না রিদি?জানতেও চাই না আর!সে খুব সুখে আছে।এর বেশি কিছু চাইনা তার।কথা গুলো ভেবে আবারো পেটে হাত বুলিয়ে হাজারো কথা বলে চলছে।রুপ বোনের কান্ডে হেসে বলে,
হয়েছে হয়েছে আজই সব বলবি নাকি!!৯মাস তোর ভেতরেই থাকবে সময় আছে এখনো!!চল এখন কিছু খাবি!!দাদি তোর জন্য লাড্ডু বানিয়েছে।

দুইজন নিচে আসতেই দেখে আমির চৌধুরী হাসিমুখে চা খাচ্ছে আর কথা বলছে দাদির সাথে।রিদি গিয়ে তাদের সাথে বসতেই সদর দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে তীব্র।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।রাগে নাকি অন্য কিছু বুঝল না রিদি।তীব্র রিদিকে দেখে কোন দিকে না তাকিয়ে রিদির কাছে এসে দাঁড়ায়।রিদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তীব্রর দিকে। বুঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে!!বুঝা বা বলার আগেই তীব্রর কথা শুনে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো রিদির,
“আমার এই বাচ্চাটা চাইনা।আমি চাই না ও পৃথিবীতে আসুক। অবরেশন করতে হবে ”
সবাই কথাটা শুনেই ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তীব্র রিদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,
রিদির হাত ধরে টেনে দু তিন কদম নিতেই হুস আসে রিদির। আচমকা হাত ছাড়িয়ে বলে!!
পাগল হয়ে গেছেন?!!!!

তীব্র রাগে শান্ত স্বরে বলে,
না! আমার বেবি চাই না!!
রিদির চোখে টলমলে পানি।সাথে বিষ্ময়।
কিন্তু কেন??
তীব্রর এখন পুরো দুনিয়া শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে কটমিট করে বলে,
তোকে হারিয়ে এই বাচ্চা আমার চায় না!তাই আজই অবরেশন করাবো!!
রিদি তীব্রর কথা না বুঝে বলল,
মানে??
তীব্র রিদির হাতে রিপোর্ট ধরিয়ে দেয়।রিদি কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্ট পড়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তীব্রর দিকে।
আমি অবরেশন করাবো না!!
রিদির কথায় তীব্রর চোখমুখ ভয়ংকর হয়ে উঠল.।আচমকা চেঁচিয়ে উঠলো তীব্র!!
কি বললি!!
রিদি কেঁদে দিল,
আমি পারবো না!!

রিদির কান্নায় তীব্রর ভেতর ঝর বয়ে গেলেও সে চোখ মুখ শক্ত দাঁড়িয়ে আছে,
তুই কি চাইছিস!! বাচ্চার জন্য আমি তোর বলি দেই?
আমির এতোক্ষণ চুপ থেকে বলল,
কি বলছিস??কি আছে রিপোর্ট??কেন ওকে অবরেশন করাতে চাইছিস?তুই কি পাগল হয়ে গেছিস??
তীব্র উওর করল না!!বাবাকে বলল,
ওকে বলো আমার সাথে যেতে!!
রিদি চেঁচিয়ে উঠলো,
আমি যাব না! বাচ্চা নষ্ট করব না!!এতে আমি মরে গেলে যা…..
চুপপপপপপপপ!!!!!
ভয়ংকর ধমকে কেঁপে উঠলো রিদি সহ সবাই।এই কথার জন্য একটা থাপ্পর খেত আজ তবে তীব্র আজ মারল না। দাঁত পিষে বলল,

আমার শুধু তোকে চায়!চাইনা তোকে হারিয়ে এই বাচ্চা!!বুঝেছিস চল!!
রিদি এক পা দু পা পিছিয়ে গেল। বাচ্চা নষ্ট করবে ভেবেই আর মাথা কাজ করছে না রিদির।রিদি জানে তীব্র যা বলে তাই করে ছাড়ে।তাই কিছু না বুঝে শূন্য মস্তিষ্কে দৌড়ে উপরে চলে আসে।আসতে আসতে চেঁচিয়ে বলে,
আমি আমার বাচ্চা চাই!!ওকে এই পৃথিবীতে আনতে চায়।আমি যাব না আপনার সাথে!
তীব্র ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরো বিষিয়ে উঠল,

কষ্ট কি তার হচ্ছে না!! সে কি চায় না বাবা হতে!! তার অস্তিত্ব কে সে দুনিয়াতে আনতে চায় না!কিন্তু রিদি কে হারিয়ে সে কখনো বাবা হতে চাই না। রিপোর্ট এ সাফ সাফ লেখা আছে রিদি বেবি কন্টিনিউ করলে তার বাঁচার চান্স ২০% এর ও কম। সেখানে তীব্র রিদির লাইফ ১% ও ঝুকিতে রাখতে চায় না সেখানে তার বাঁচার চান্স 20% বাকি ৮০%রিস্ক।প্রথম বেবি মিসক্যারিজ হওয়াতে রিদির কন্সিভ করার চান্স খুব কম ছিল।তীব্র মেনে নিয়েছিল। তার বৌ হলেই চলবে।রিদিকে তখনো জানিয়েছিল না এই ব্যাপারে তীব্র।

কিন্তু রিদির কন্সিভ এর কথা শুনে কোথাও যেন ভয় পাচ্ছিল যা সত্য হল। কিন্তু এই বৌ তার ভয়টা বুঝছে না। বাচ্চা লাগবেই কেন??তৃপ্তি আছে তো! কিন্তু রিদি তার কোন কথা শুনছে না এতেই রেগে সে হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ভেঙে দিচ্ছে।মিশ্র একটা চাপা কষ্ট বুকে আঘাত করছে।রাগ কার উপর?রিদি?নাকি পরিস্থিতি?বুঝছে না তীব্র।রিদিকে হারিয়ে বাচ্চা নাকি বাচ্চা হারিয়ে রিদি!!কিভাবে চুজ করবে?এদিকে রিদি তার কথা শুনছে না।উপরে গিয়ে বসে আছে।সে তো রিদি ছাড়া বাঁচতে পারবে না।এই মেয়ে কেন সেটা বুঝে না!! তীব্র পারছে না এই পরিস্থিতির সাথে লড়তে।

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৩

আমির ছেলেকে আজ থামানোর চেষ্টা করছে না।তিনি ছেলের অবস্থা হয়তো আন্দাজ করতে পারছে। আবার রিদির মাতৃস্নেহ ও বুঝতে পারছে।এ কেমন পরিস্থিতি!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৫