আপনাতেই আমি পর্ব ৪৭
ইশিকা ইসলাম ইশা
সোফায় বসে টিভি দেখছে রিদি।পাশেই তৃপ্তি বসে আছে। তৃপ্তি একদম রুপের মতো স্বচ্ছ, শান্ত, রুপসী।এখন আদো আদো করে কথা শিখেছে।মেয়েটা বাবা, চাচার ভক্ত।বাবা পেলে মা কে চিনেই না।চাচু কে পেলে তো কথাই নাই। দাদার সাথেও তার ভাব অনেক। তবে এরা না থাকলে রিদি তার একমাত্র থাকার জায়গা। তৃপ্তি ছোট হলেও কথা বার্তা একদম চৌধুরী বাড়ির মতো।মানে আরকি ম্যাচুয়ার।
তাচু বকবে মামনি!!এতব খেয়ো না!এতা তো বাত্তাদের তাবার!!
তৃপ্তির কথায় চিফস এর প্যাকেট এর দিকে তাকিয়ে লাস্ট চিফস টা মুখে পুরে নেয়।
মা আমার সোনা আমার একদম চাচুর চামচা গিরি করবে না আচ্ছা!!মানে চাচুকে বলবে না যে মামনি চিফস খেয়েছে।
তৃপ্তি ভু কুঁচকে তাকাল রিদির দিকে।রিদি অসহায় ফেস করে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে।তোকে আমি কতো ভালোবাসি জানিস! তাছাড়া আমি খাই নি।এই যে পেটের মধ্যে বসে আছে ও বলছে খাবে তাই খেয়েছি।
তোত বাবু তিফস তেতে চেয়েছে??
হ্যাঁ!!!!
তুমি তেতে চাওনি??
না!!
আত্তা।
রিদি ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পরপর গালে চুমু বসিয়ে বলল।তুই তো আমার সোনা,মোনা,পাখি।
তৃপ্তি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আবারো খাওয়াই মনোযোগ দিল।রিদি সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।যাক বেঁচে গেছে।৫টা মাস সে তীব্রর টর্চার সহ্য করছে।খাওয়া,পড়া,ঘুম সব তীব্রর মতো করতে হয়। প্রতিদিন ই চেক আপ হয় তার।রিদি মনে মনে ভাবে এতো কেয়ার তো একজন প্রাধান মন্ত্রীর ও হয় না।বাপরে!!!
৬মাস চলছে তার ।এই ৬ মাসে ৬০০ রকম অত্যাচার হয়েছে তার ওপর।ভাবা যায় এসব!রিদির বসে থাকার মাঝেই তীব্র প্রবেশ করে সদর দরজা দিয়ে। তৃপ্তি তীব্র কে দেখেই দৌড় দিল।তীব্র তৃপ্তি কে কোলে তুলে চাইল রিদির দিকে।রিদি মেকি হাসি দিয়ে চাইল তীব্রর দিকে।তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সোফায় বসে। তৃপ্তিকে কোলে বসিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আজ তোমার মামনি কি তোমার খাবার খেয়েছে!!
তৃপ্তি গম্ভীর মুখে একবার তীব্র তো একবার রিদির দিকে তাকালো,
পরক্ষনেই মাথা ঝুঁকিয়ে না বলল।
রিদি তৃপ্তির মাথা ঝুকানো দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে গিয়েও ফেলা হলো না তৃপ্তির পরের কথায়,
মামনি তাই নি তো!পেতে তাবুবু তেয়েছে!!
রিদি চোখ বড় বড় করে তাকালো তৃপ্তির দিকে। তৃপ্তির সেদিকে খেয়াল নেই।চাচুর কোলে থেকে বাবাকে দেখেই নেমে দৌড় দিয়ে বাবার কোলে চড়ে বসেছে।তীর পেছন থেকে সব শুনে করুন মুখে রিদির দিকে তাকালো।মেয়েকে সে সদা সত্য বলতে বলেছে কিন্তু এই সত্য আজ রিদির ফাসি হয়ে যাবে ভাবেনি। বেচারি এমনিতেই তীব্রর টর্চার সহ্য করছে তারপর আবার আজকের ঘটনা।আহা বেচারি রিদির জন্য মায়া ও হল।তবে তীব্রর দিক ভেবে দেখলেও তীব্রর ভয় টা প্রখর। সামান্য তিল পরিমাণ এদিক ওদিক সহ্য করে না তীব্র রিদির ব্যাপারে।পেছনে এসে আমির চৌধুরী ও দাঁড়িয়েছে।সব বুঝে সে চেয়ে দেখছে আশেপাশে সোফা আর ফুলদানির দিকে। নিশ্চয় আজ এদের উপর রাগ ঝারবে।আহারে!!!
রিদি ও করুন চোখে চেয়ে আছে তীব্রর দিকে।তীব্র শান্ত দৃষ্টিতে রিদিকে দেখে উপরে চলে গেল।তীব্রকে উপরে যেতে দেখে ফুস করে শ্বাস ছাড়লো তীর। বড় সর একটা ধামাকার জন্য বুকটা দুরুদুরু করছিলো।যাক বেঁচে গেছে এবার।আমির ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসল। কিন্তু তার স্বস্তি বেশিক্ষণ টিকল না।যেমন গটগট করে উপরে গেছিলো তেমনি গটগট করে নিচে নেমে রিদিকে কোলে তুলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।তীর আমির হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে।মনে মনে প্রার্থনা করে বলল,
তীর: আল্লাহ রক্ষা করো।একটা মাএ শালী আমার।
করিডর দিয়ে যেতে যেতে রিদি ভয়ে ভয়ে বলে,
আসলে হয়েছে কি!বাবুর খেতে ইচ্ছে করছিল তা……
রিদির কথা শেষ করার আগেই তীব্র রিদিকে সাবধানে বেডে বসিয়ে দেয়। রিদি অসহায় মুখ করে তীব্রর দিকে তাকালো। নিশ্চয় আজ তাকে মেরে ভক্তা করে ফেলবে তীব্র এমন ভাবনা থেকেই রিদি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
শুনুন আপনার এই বাচ্চা খুব পেটুক!!একদম!!! আমার কোন দোষ নাই।
তীব্র কিছু না বলে কাবাড থেকে অনেক গুলো চকলেট বের করে রিদির হাতে দিল। গম্ভীর মুখে বলল,
খাও!!!!
রিদি চমকে উঠল এতো চকলেট দেখে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে যেন। তীব্রকে তোয়াক্কা না করে চকলেট খুলে খেতে শুরু করলো। তীব্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।সে রেগেই চকলেট বের করে দিয়েছিল।নে কতো পারবি খা!! টাইপ ভাবনা থেকে।তবে রিদির খাওয়া দেখে রাগ বেশিক্ষণ টিকল না।পুরো মুখে চকলেট লেগে আছে। বাচ্চারাও এর চেয়ে ভালো করে খায়।রিদি খাওয়ার ফাঁকে একবার তীব্র কে দেখে খাওয়ার অফার করলেও তীব্রর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই দেখে আবারো নিজের খাওয়াই মনোযোগ দিল রিদি।
খাওয়ার মাঝেই হুট করেই থেমে গেল রিদি। শিরশির করে উঠলো শরীর। চকলেট মাখানো হাতটা চলে গেল তীব্রর চুলের ভাজে।আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। ধুকপুক করছে বুক।একটু পরে তীব্র রিদিকে ছেড়ে চাইল রিদির মুখের দিকে।রিদির চোখ তখনো বন্ধ।তীব্র রিদির বন্ধ চোখের উপর চুমু দিল।রিদির চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু কনা।৫ মাসে তীব্র রিদির কাছে আসেনি। কপালে চুমু ব্যাতিত গভীর সম্পর্ক হয়নি তাদের।রিদি মুখে না বললেও অভিমান হতো। অভিমান আর অভিযোগ মিলিয়ে রিদির মনে কোথাও এই ধারনা জন্মে যে তীব্রর কাছে হয়তো তাকে আর ভালো লাগছে না।অনেকটা মোটা হয়েছে সে এই ৫মাসে।শরীর ফুলেছে।এমনিতেই সে সুন্দরী না। প্রেগন্যান্সির অনেক সাইড এফেক্ট এ অনেকটা পরিবর্তন এসেছে তার মাঝে। তবুও কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি তীব্র কেন তাকে স্পর্শ করছে না।অনেক অভিমানি হয়েছে সে তীব্রর সাথে থেকে।আগে অভিমান, অভিযোগ জিনিসটা তার ডিকশনারিতে ছিলোই না।
চাওয়ার চেয়ে বেশি পেয়েছে সে,অনেক বেশি ভালোবাসা দিয়েছে তীব্র তাকে এর বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই।এই ভালবাসা টুকু নিয়ে সে মৃত্যু বরণ করতেও প্রস্তুত।
কাঁদছেন কেন জান?(তীব্রর কথায় চোখ মেলে তাকায় রিদি ।টলমলে চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তীব্র।মুখে না বললেও হয়তো কথার আদান প্রদান হচ্ছে।)রিদি মুচকি হেসে বলল,
অনেকদিন পর বিশেষ মূহুর্ত পেলাম তাই হয়তো!!
তীব্র কিছু বললো না চেয়ে রইল রিদির চোখের দিকে।রিদি আবারো বলল,
ছাড়ুন!!গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
তীব্র শুনলো না।রিদির কপালে কপালে ঠেকিয়ে নেশাক্ত গলায় বলল,
বেশি শক্ত হচ্ছি আপনার সাথে তাই না!
রিদি অবাক হলেও তাৎক্ষণিক মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
তীব্র নাকে নাক ঘষে একি ভঙ্গিতে আবারো বলল,
আপনার প্রতি চাহিদা কমে যাচ্ছে তাই না!
রিদি কিছু বলতে গেলে তীব্র রিদির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে,
হুসসসস!আপনার কাছে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আমার অনেক যুদ্ধ করতে হচ্ছে আপনি জানেন!জানেন না! আপনার থেকে দূরে থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে জানেন!! জানেন না!আপনি আমার কাছে নেশার চেয়েও ভয়ঙ্কর নেশা।এই নেশা আমার এক জনমে কাটবে না বেগমজান।
তীব্র রিদির কপালে উষ্ণ অধর ছুঁইয়ে দিয়ে আবারো বলল,
আপনাতেই আমি পর্ব ৪৬
আমার এই গলুমোলু বৌ ভীষণ সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর।আমার অন্ধকার জীবনের আলো আপনি জান।সব মেনে নিচ্ছি, মানিয়ে নিচ্ছি। অপেক্ষা শুধু বেবিটা আসার।
রিদি ঝট করে তীব্র কে জরিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।সে জানে তীব্র তাকে কতোটা ভালবাসে। তবুও একটু অবহেলায় কেমন অভিমানি হয়ে উঠেছিল। তীব্র বুকে চেপে ধরে রিদিকে।মনে মনে বলে আমার অভিমানি বেগমজান। ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে। ভীষণ!!