আপনাতেই আমি পর্ব ৪৯
ইশিকা ইসলাম ইশা
রিদির খাওয়ার মাঝেই রুমে ঢুকে মোনা।মোনা কে দেখে পা নামাতে চাইলে তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রিদির দিকে।রিদি জোর করলে পা চেপে ধরল।মোনা রিদির কাচুমাচু মুখ দেখে হেসে বলল,
এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই রিদি।সরি আসলে এই সময় আসতাম না। কিন্তু ফাইলটা অনেক জরুরি।তাই দিতে আসতেই হল।
ছি ছি আপু আপনি কেন সরি বলছেন!বসুন!!
মোনা কিছু বলার আগেই পেছন থেকে বেরিয়ে আসে ৫-৬ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে।মোনা ছেলেকে দেখে রিদিকে বলে,
তুমি আরা….
মুগ্ধ!!!!
মুগ্ধ চশমা ঠেলে তাকলো রিদির দিকে। মায়ের আচল ধরে একবার রিদি তো একবার তীব্র কে দেখল।রিদি হাত বাড়িয়ে মুগ্ধ কে কাছে টেনে আনল।ধবধবে সাদা কিউট একটা বাচ্চা।একদম মায়ের মতোই সুন্দর।রিদি এট ওটা জিঙ্গেস করতেই আছে।মুগ্ধ শুধু মাথা নেড়ে হ্যা না বলছে।তীব্র ওকে টেনে নিজের কোলের উপর বসায়।রিদির যেন সুবিধা হল সে গাল টেনে বললো,
তুমি এতো কিউট কেন??
মুগ্ধ ফ্যালফ্যাল করে তাকালো রিদির দিকে। একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবারো তাকালো রিদির দিকে।
টকটকে গোলাপী রঙের ঠোঁট দুটো কিছু ফাক করে বলল,
আম্মু জানে।আমি জানি না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছেলের কথায় মৃদু হাসল মোনা।রিদি এমন কথায় হো হো করে হেসে উঠলো।মা ভক্ত ছেলে মুগ্ধ।
তাহলে তোমার আম্মুকেই জিঙ্গেস করি!তুমি এতো কিউট কেন??কি গো আপু এতো কিউট কেন তোমার ছেলে!!
মোনা মৃদু হেসে বলল,
রিদি তুমিও না!!তোমরা থাকো আমি এখন আসি। মুগ্ধ কে খাইয়ে মেডিসিন দিতে হবে।তীব্র এই ফাইলে মুগ্ধর সব রিপোর্ট আছে।একটু দেখে নিও।
তীব্র মুগ্ধ কে কোল থেকে নামিয়ে। ড্রয়ার খুলে বড় একটা চকলেট দিল।চকলেট পেয়ে মুগ্ধ হেঁটে মায়ের কাছে এসে দাড়ালো।আবারো ফিরে রিদির কাছে এসে দাড়ালো রিদি ফিরে আসতে দেখে বলল,
কি হয়েছে বাবা??কিছু বলবে??
মুগ্ধ কিছু না বলে রিদির গালে চুমু দিয়ে আবারো মায়ের কাছে দাড়ালো।মুচকি হেসে মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে গেল।রিদি সেদিকে তাকিয়ে হাসল। মুগ্ধ মোনার ছেলে।স্বামীর সাথে ডিভোর্স এর পর ধরা পড়ে মুগ্ধর হার্টে ছিদ্র।প্রথম যেদিন মোনাকে তীব্রর হাত ধরে কাঁদতে দেখেছিল সেই কাদার কারনটা ছিল মুগ্ধ।ছেলের অসুস্থতা মেনে নিতে পারছিলো না।সব হারিয়ে ছেলেটাই তার বেঁচে থাকার কারন।তীব্র সব বলেছে রিদিকে।যদিও আগে রিদি জানত না এসব। মুগ্ধের অপারেশন এর পর রিদিকে জানাই তীব্র।এতে রিদির অনুশোচনা হয়েছিল।ভুল বুঝেছিল মোনা আর তীব্র কে।রিদি ক্ষমাও চেয়ে ছিল।প্রথম মুগ্ধ কে দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিল। খুব সুন্দর শান্ত একটা বাচ্চা।যাকে বলে অতিরিক্ত ঠান্ডা বাচ্চা।
দেখলেন বাচ্চাটা কতো কিউট!!
দেখলাম!তুমি বাচ্চা নাকি মুগ্ধ!!
রিদি কটমট করে কিছু বলার আগেই তীব্র বলল,
নো মোর ওয়ার্ড।
আহহহ……
ক কি কি হয়েছে??
কি আবার আপনার ধমক শুনে সে রেগে আমাকে কিক মারছে।বাপের কথায় এখন বাচ্চাও তার দলে।
তীব্র হাসল।হাত বাড়িয়ে রিদির পেটের উপর হাত রাখল । প্রতিদিন সন্তানের সাথে যুক্তি পরামর্শ করে প্রতিদিন সে। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা সন্তানের সাথে কথা বলে তাই সে তার দলে।এটা হয় রিদি ঘুমিয়ে যাবার পর তাদের গোপন আলোচনা। তীব্র কথাগুলো ভেবে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,
মাম্মা কে কষ্ট দিও না বাবাই।রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসল।রোজ রাতে রিদি ঘুমানোর পর তীব্র আলোচনায় বসে তার সন্তানের সাথে।সে কতো কথা।
কোথায় কি হয়েছে?কার আজ অপারেশন করেছে।কেমন ফিলিং হয়েছিল।আজ অফিসে কি হয়েছে।কে তার হাতের দাবাং মার্কা চর খেয়েছে।কোনটা করা বেশি ভালো হবে?তোমার মা কেন এটা করে? কেন কথা শোনে না?
রিদি আশ্চর্য হয়ে যায় তীব্রর এমন কথায়।আজ পর্যন্ত তার সাথে এসব কথা কখনো শেয়ার করেনি।রাগে রিদির তখন ইচ্ছে করে উঠে তীব্রর সাথে তুলকালাম ঝরগা করতে।তবে সে উঠে না।তীব্র যদি বুঝতে পারে সে জেগে আছে তাহলে আর হয়তো কথা বলবে না। তবে মনে মনে ভেংচি কেটে বলে।
বাবু চাই না তার!!হু!!তাহলে এতো গল্প কেন?ঢং !! পরক্ষণেই আবার তীব্রর কথায় বুকটা ধরপর করে উঠে। প্রতিদিন তীব্র আলোচনার শেষ সময়ে এসে বলে,
শোন বাবাই আমি প্রতিদিনই তোমাকে বলি তুমি একজন যোদ্ধা।যুদ্ধ করে হলেও আম্মু কে নিয়েই পৃথিবীতে এসো। দরকার হলে ভাগ্যের সাথে লড়াই করে এই পৃথিবীতে এসবা।আম্মু ছাড়া পৃথিবী সুন্দর হয় না বাবা। আম্মু না থাকলে আমাদের জীবন কিন্তু থমকে যাবে।বাবার প্রান ভ্রমরা তোমরা।একটারও কিছু হলে অধেক মরেই যাব।আমার তোমাদের দুজনকেই চাই।
রিদি সব ভেবে মুচকি হাসল।এই হাসিতে রয়েছে লুকানো ভয়। হারিয়ে ফেলার ভয় নয়তো হারিয়ে যাবার ভয়। তবুও আল্লাহর কাছে রোজ তার একটাই প্রার্থনা।তাকে যদি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়।তাহলে তার অস্তিত্বে ধারন করা মানুষ দুটো যেন সর্বদা ভালো থাকে।
আপনাতেই আমি পর্ব ৪৮
কার চাওয়া পূরন হবে কারটা থাকবে শুধু চাওয়া হয়েই তা তো সময় বলবে। অপেক্ষা শুধু সময়ের।আগামী দিনের সময় তাদের তিনজনের জীবনে কোন মোড় নিবে তা আজানা।কে বাঁচাবে,কে থাকবে তার হিসাব হয়তো সময় করে দেবে।
তবে একটা কথা বলি,
মানুষ ভালবাসা ছাড়া মরে যাই না।তারা বাঁচে জীবন্ত লাশ হয়ে।