আপনাতেই আমি পর্ব ৫৭
ইশিকা ইসলাম ইশা
বাচ্চার কান্নায় ধ্যান ভাঙল রিদির।চারদিকে তখন ফজরের আজান দিচ্ছে।অতীতের কথা ভেবে সবসময় কাঁদলেও আজ হাসছে রিদি। হাসির কারন হলো ঘুমে ফোলা ফোলা মুখে ঠোঁট ফুলিয়ে কাদছে বাবুটা। বাবুর কান্না দেখেই হেসে উঠলো রিদি।রিদির হাসি দেখে কান্না থামিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকালো রিদির দিকে। এইটুকু বাচ্চা কি বুঝলো কি জানি!নিজেও ফোকলা দাঁতে হেসে উঠলো।
হাসির শব্দ ঘুম ভেঙ্গে যায় নীরের।রিদি খিলখিল করে হাসছে দেখে হা হয়ে তাকালো রিদির দিকে।রিদির সাথে ফোকলা হাসির বাচ্চাটাকে দেখে অজান্তেই মুখ থেকে বের হল,
“মাশাআল্লাহ ”
বাবুর হাসিটাও একদম রিদির মতো লাগছে। মানুষ কে হাসলে এতো সুন্দর দেখাই রিদিকে না দেখলে হয়তো জানত না নীর।ইসসসস দুইজনের হাসির প্রেমে পড়ে গেলাম।কথাগুলো ভেবে নিজেও হাসল নীর।আজ সকালের শুরুটা এতো সুন্দর হবে ভাবে নি।এ যেন ঘন কালো মেঘ সরে এক ফালি রোদের ঝলক।
অন্ধকার রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে একজন মধ্যবয়স্ক লোক। হুট করে আলো জ্বলে উঠায় চোখ বন্ধ করে নেয় লোকটি। লাইটের আলো যেন চোখে বিধছে। একটু পর পিট পিট করে চোখ খুলে সামনে বসা ব্যাক্তিকে দেখেই চমকে উঠলো।থরথর করে কেঁপে উঠলো পুরো সত্বা।
তী তী ব্র…………. কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা বলতে বলতেই চিৎকার করে উঠল লোকটি।ছিটকে আসা রক্ত তীব্রর মুখে পড়তেই বিরক্ত হল তীব্র।
হুশশশশশ…..
এতো জোরে কেউ চিল্লায়। শুধু মাত্র একটা হাতের একটা আঙুল ই কেটেছি।এখনো তো একটা একটা করে সব গুলো কাটতে হবে।খুব শান্ত স্বরে দায়িত্ববান লোকের মতো কথাটা বলে তীব্র।যেন তাকে কতো বড় কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এদিক থেকে ওদিক হলেই তার চাকরি শেষ।
তীব্র কে সাইকোর মতো কথা বলতে দেখে লোকটি ভয়ে কেঁদে দিল।
আমাকে মাফ করে দাও তীব্র!!
চট করে তীব্র বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কেন??কি করেছেন আপনি??আপনাকে কেন মাফ করব?? ডঃ ফারুক?
এমন ভাবে কথাটা বলল যেন সে মাফ চাওয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল।
লোকটা আবারো একই ভাবে কেঁদে বলল,
আমাকে মাফ করে দাও তীব্র!!আমি লোভে এমন একটা কাজ করেছি!!
তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,
আপনারা মিয়া আজব পাবলিক।সিংহ শান্ত থাকলে ভাবেন সে তো খাঁচায় বন্দী তাকে মারলেও সে পালটা আঘাত করতে পারবে না। কিন্তু আফসোস আপনারা ভুলে যান।সে যদি একবার রেগে যায় তো সব ধংস হয়ে যাই। তার গর্জন ই তো কেঁপে উঠেন। আঘাত তো সে পরের বিষয়।
লোকটি আবারো কেঁদে বলল,
আমাকে মাফ করে দাও তী………….
আহহহহহহহহহহহহহহহহ….ভয়াবহ চিৎকারে কেপে উঠলো পুরো ঘর।লাবিব চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।গুনে দেখল একটা হাতের তিনটা আঙুল নেই।তবে প্রতিবারের মতো এবার ভয় পেল না।দেখে দেখে অভ্যস্ত সে।হাম তুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।এই খেলা অনেকদিন পর দেখছে।ভাবি থাকাকালীন তীব্র নিজ হাতে এসব কাজ করত না।
তীব্র হুংকার দিয়ে উঠলো।
আমার সন্তান কে এই দুটো হাত দিয়ে পাচার করেছিলি তাই না!সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে মা থেকে আলাদা করেছিলি।ঐটুকু একটা বাচ্চার কান্না যখন তোর মধ্যে মানুষ্যত্ব বোধ জাগাই নি।তুই ভাবছিস কিভাবে আমার সন্তানের পাচার কারীকে উপরে পাঠাতে আমার বিবেক কাজ করবববববববে….
চিৎকার করে কথাট বলেই আরো দুটো আঙ্গুল কেটে দেয় তীব্র। লোকটা এবার ভয়ে ঙ্গান হারিয়ে ফেলে।
লোকটিকে ঙ্গান হারিয়ে ফেলতে দেখে তীব্র বিরক্ত হল যেন ইম্পর্ট্যান্ট কাজে কেউ বাধা দিয়েছে। রাগে কটমট করে লাবিবের উদ্দেশ্য বলল,
দেখছিস না অঙ্গান হয়ে গেছে।যা হাতে সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দে।এখনো বাম হাতের আঙ্গুল কাটা বাকি আছে।কথাটা এমন ভাবে বলল যেন কতো মহান কাজ করছে।
লাবিব ঝটপট হাত ব্যান্ডেজ করে পানি এনে মুখে মারে। একটু পর পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে আবারো তীব্র কে দেখে ভয়ে বলে,
আমাকে মেরো না বাবা!!আমি তোমার বাবার বয়সী!!আমাকে মাফ করে দাও!আমি জানতাম না যে মেয়েটা তোমার ওয়াইফ।আমাকে অনেক গুলো টাকা দিয়ে একটা নাম্বার থেকে কল করে বলে।বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে যেন বাচ্চাটাকে হসপিটালের পেছনের গাড়িতে রেখে আসি। আর মৃত একটা বাচ্চা যেন মেয়েটার পাশে রেখে দিই।এরপর যেন আমি কোথাও লুকিয়ে থাকি বা দেশের বাইরে চলে যায়। এইটুকু বলেই থামে লোকটা তবে তীব্রর ভয়ানক চাহনি দেখে আবারো বলে,
একটু পরে যখন জানতে পারি বাচ্চা টা তোমার সেদিনই আমি আমার পরিবার নিয়ে ইতালি চলে যায়।এতো টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারি নি তখন।আমি প্রথমে জানতাম না বাচ্চা তোমার।জানলে কখনো করতাম না!আমাকে মাফ করে দাও।
তীব্র চেয়ারে শরীর ছেড়ে বসল। ব্যাথাতুর কন্ঠে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চারা!একটু পরেই কেঁদে উঠে তাই না!!
লোকটি ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ায়।তীব্র একই সুরে বলে,
সেই বাচ্চার কান্না আটকাতে ওর মুখ চেপে…..
চেপে ধরেছিলি!!
লোকটি চমকে উঠল।ভয়ে এবার শেষ সে। ঘাম ছুটতে লাগল শীরর থেকে ।তীব্র কিভাবে জানল!!!
তীব্র একই সুরে আবারো বলল,
সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাকে মায়ের থেকে দূরে করে দিলি??ঐই টুকু বাচ্চা কতোটা কষ্ট পেয়েছে তার হিসাব আছে।যাকে পৃথিবীতে আনতে নিজের জীবন বাজি রেখেছে।যাকে পৃথিবীতে আনতে আমি এই আমি তীব্র চৌধুরী কেঁদেছি!!জানিস!!আমি!আরে আমি!!তীব্র!তীব্র চৌধুরী কেঁদেছি।রোজ তাহাজ্জুদ পড়ে কেঁদেছি। নিষ্পাপ একটা প্রানের মায়ায়! যাদের বাঁচাতে এতো কিছু!!সেই বাচ্চাটাকে তুই জন্ম নিতেই কষ্ট দিয়েছিস।ও কাদতে না পারে তাই সদ্য জন্মানো বাচ্চার মুখে কাপড় পর্যন্ত
গুজেছিসসসসসসসস…
আবারো সেই চিৎকার।এবার অপর হাতের পাচটা আঙ্গুল কেটেছে। রক্ত ছিটে এসে পড়েছে তীব্রর মুখে।তীব্র রক্ত মুছে তাকাল লোকটার দিকে। ।আবারো ঙ্গান হারাতে দেখে তীব্র চেয়ারে বসল।
রক্ত লাল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোটা পানি।লাবিবের চোখ আজ ছলছল করছে।এই কয়টা মাস সে দেখেছে তীব্রর নিশ্চুপ হাহাকার।
তীব্র চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে বিরবির করে বলল,
জান!!
কথাটা বলেই চোখমুখ শক্ত করে উঠে দাড়ালো তীব্র।গুদাম ঘর থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে পড়তেই।লাবিব গার্ড কে সব বলে ছুটে এসে গাড়িতে বসে পড়ে।সাথে সাথে গাড়িও চলতে শুরু করে।তীব্র সিটে হেলান ভাবতে লাগল সেদিনের কথা,
রিদির সাথে কথা বলে ফোন অফ করেই মিটিং এ যাই তীব্র। কিন্তু কিছুতেই মিটিং এ মনোযোগ দিতে পারে না।ঠিক ২০মিনিট পর মিটিং অসমাপ্ত রেখেই বেরিয়ে আসে।কেন যেন অস্থির করছে বুকের ভেতর।মনে হচ্ছে কেউ যেন ডাকছে। তীব্র ঝটপট ফোন অন করতেই অনেক গুলো কল দেখে ঘাবরে যায়। তখনি লাবিব কোথা থেকে ছুটে এসে বলে রিদির বের হওয়ার খবর দিতেই পায়ের নিচের মাটি সরে যায় তীব্রর। লাবিব একে একে সব ঘটনা বলে।তবে সব কিছু বুঝতে সময় লাগে তীব্রর।
তীব্র কে স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে লাবিব আবারো বলে,
স্যার আমাদের যেতে হবে।ভাবির আমাদের দরকার স্যার!!
“ভাবির আমাদের দরকার”কথাটা মস্তিষ্ক সরন করতেই তীব্র ছুট লাগায়।গাড়ি দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করছে তীব্র।তার কানে একটাই কথা বাজছে ভাবিকে আমাদের দরকার।ঠিক দুতিন মিনিট পর লাবিবের চিৎকার শুনে গাড়ি থামাই তীব্র। ভয়ংকর রেগে বলে,
হোয়াট দ্যা হেল??
লাবিব ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
স্যার.. ভাবির.. এক্সিডেন্ট হয়েছে। রাস্তায় সবাই মিলে ভাবিকে হসপিটালে নিয়ে গেছে। কিন্তু কোন হসপিটালে তা…….
আবারো ভয়নক গতিতে গাড়ি ছুটতে লাগলো।লাবিব পুরো কথা শেষ করার আগেই তীব্র গাড়ি চালাতে শুরু করে।
ঠিক ৩০ মিনিট পর হসপিটালে আসে তীব্র।রিদিকে তখন ওটিতে ডক্টর দেখছে।ঠিক ১৫ মিনিট পর একটি নাস বের হয়।তীব্রকে দেখে অবাক হয়ে ভয়ে ভয়ে বলে,
পসেন্টের অবস্থা খুব খারাপ!আর ব বা চ্চা মানে এক্সিডেন্ট এর সময় বাচ্চা মারা গেছে।
তীব্র কোন কথা ছাড়াই ধপ করে বসে পড়ল চেয়ারে।হুট করেই চারদিক ঘুরতে লাগলো।নিজেকে সামলানোর আগেই চারদিকে অন্ধকার হয়ে এলো।এরপর!!এরপর সব শেষ।
তীব্রর যখন ঙ্গান ফিরে তখন ২ ঘন্টা পার হয়েছে।চারদিকে তাকিয়ে বুঝল সে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।হাতে ক্যানলা লাগানো।তীব্র এক ঝটকায় সব খুলে বাইরে বের হতেই লাবিব ছুটে আসে।
স্যার আপনি অসুস্থ।আপনার এখন আরাম করতে হবে ডক্টর বলেছে আ…..
রিদি কোথায়??
লাবিব ভয়ে তীব্রর দিকে তাকালো,
আসলে স্যার!!
রিদি কোথায়???
লাবিব তীব্রর দিকে তাকিয়ে ঝটপট বলে,
ভাবিকে ১২ ঘন্টার অভজাবেশনে রাখা হয়েছে।১২ ঘন্টার মধ্যে ঙ্গান না ফিরল……..
তীব্র পুরো কথা না শুনে প্রশ্ন করে,
বাচ্চা কোথায়??
তীব্রর শান্ত শক্ত কথায় লাবিব নিচু স্বরে বলল,
বাচ্চাকে লাশ ঘরে……
তীব্র এবারো পুরো কথা না শুনেই হাঁটতে লাগল লাশ ঘরের দিকে।সেখানে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আমির।খবর পেয়ে হসপিটালে এসেই একটার পর একটা ধাক্কা খেয়ে সে বিমূঢ় হয়ে বসে আছে,
বাচ্চা বেঁচে নেই!
রিদিকে ১২ঘন্টার সময় দেওয়া হয়েছে!
তীব্রর মিনি হাট স্টোক করেছে!
তীব্রর মতো ছেলের হাট স্টোক!!!রিদি জীবন মরনের মাঝে ঝুলছে আর বাচ্চাটা!!আমির তিনটা জীবন শেষ হতে দেখছে। চারদিকে যেন ভয়ংকর খেলা চলছে।জীবনে এই দিন কখনো দেখতে হবে ভাবেনি। আমিরের পাশে বসে আছে রায়ান।সে নিজেও স্তব্ধ।কি থেকে কি হয়ে গেল। সবারই ভাবনার বাইরে।
তীব্র এসে সোজা লাশ ঘরে ঢুকে। ছোট্ট শরীর টা কোলে তুলে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল ।এরপর কোলে নিয়েই বের হল রুম থেকে।তীব্র কে বের হতে দেখে আমির বলে,
কোথায় যাচ্ছিস তীব্র??
তীব্র হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিলো।বাবার দায়িত্ব পালন করতে।
মানে!!!!
তীব্র কোন উত্তর দিল না।
আমির তীব্রর যাওয়ার পানে চেয়ে রইল।তীব্রর অতিরিক্ত ঠান্ডা স্বভাবের কারনে সহজে ওকে বোঝা যায় না।ভেতরে কি চলছে তা বাইরে প্রকাশ পায় না।
চৌধুরী বাড়িতে সময় তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল।বাচ্চাকে একবার হলেও রিদিকে দেখানো উচিত তাই আমির দাফন করতে দেয়নি এখনো।
এদিকে নিজের রুমে কিছু কাগজপত্র দেখছে তীব্র। পাশাপাশি কয়েকটা রিপোর্ট একসাথে দেখে অপর পাশের আরো একটা রিপোর্টৈ চোখ বুলাল। শান্ত মুখের আদল পরিবর্তন ঘটল মূহূর্তে। কপালে দেখা গেল সুক্ষ্ম ভাজ। রিপোর্ট গুলো আলমারিতে তুলে রুম থেকে বের হয়ে আসল। তীব্র লাশ ঘর থেকে বাবুকে নিয়ে কিছু টেষ্ট করাই।যার পুরোটাই হয় গোপনে।অল্প সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট হাতেও পেয়ে যায় ।সব মিলিয়ে বুঝল বাচ্চাটা তাদের না।চারদিকে কোন কিছুর জাল বিছানো সেটা টের পেতেই তার চতুর মস্তিষ্ক সব গোছাতে ব্যস্ত হল।
তীব্র রিদির প্রেগন্যান্সির সময় সব টেষ্ট নিজে করিয়েছে।লাস্ট টেস্ট এর রিপোর্ট অনুযায়ী রিদির গর্ভে সন্তান মেয়ে। কিন্তু মৃত বাচ্চাটা ছেলে।ছেলেটার মৃত্যু হয়েছে সকাল ১০:১০ মিনিট এ।রিদির ডেলিভারী হয়েছে অনুমানিক ১১টার পর।যদি বাচ্চা এক্সিডেন্ট এর সময় মারাও যায় তবুও ওর মৃত্যু সময় হবে ১০:২৫-৩০ এর আশেপাশে।তবে যতটুকু কনফিউশন ছিল তা ক্লিয়ার হয়ে গেল একটা ফোন কলে।
দাফন কাজ সম্পন্ন করে হসপিটালে যেতেই তীব্রর ফোন বেজে উঠে। আননোন নাম্বার!!তীব্র ভু কুঁচকে নাম্বারের দিকে তাকিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো পুরুষালী কন্ঠ।কন্ঠ চিনতে তীব্রর খুব একটা সময় লাগল না,
হে !!!!হোটায়স আপ!!
তীব্রর মুখের রং পরিবর্তন ঘটল।
মনে কি আছে আমাকে!!উপসসস আমি ভুলেই গেছিলাম তীব্র চৌধুরী কিছু ভুলে না !!মনে তো নিশ্চয়ই আছে!!
তীব্র দক্ষ হাতে চেয়ার টেনে বসল ফাঁকা কেবিনে।শরীর টানটান করে বলল।
কোন নামটা তোকে সুট করবে সেটাই ভাবছি!! উঁহু কোন নামে তোকে ডাকব সেটাই ভাবছি!!
ওপাশ থেকে ভেসে এলো হাসির শব্দ। সম্পর্কে কিন্তু জামাই তুই আমার!!
তীব্র তিরিক্ষি মেজাজে বলল,
আমার বাচ্চা কোথায়???
ওপাশ থেকে হাসি থেমে গেল। গম্ভীর স্বর ভেসে এলো,
ভেরি চালাক!!আজ আমি মানতে বাধ্য তীব্রর সম্পর্কে যা শুনেছি সব সত্য!আসল মাইনে ইউ আর তীব্র চৌধুরী!গ্রেট!
তীব্র কটমট করে বলল,
আমার সম্পর্কে ধারনা থাকলে কখনো আমার জানের দিকে হাত বাড়াতি না রুপেশ মির্জা !!!নাকি!!! ব্ল্যাক ডেভিড নাকি!! শশুর মশাই!!আরো একটা সম্পর্ক আছে ফুপা মশাই!
ওপাশ থেকে দমে যাওয়া কন্ঠে বলল,
বেশিই জানিস দেখছি!!
তীব্রর শান্ত স্বরে আবারো বলল,
আমার বাচ্চা কোথায়??
ওপাশ থেকে ভেসে আসল সদ্য কয়েক ঘণ্টা আগে জন্ম নেওয়া বাচ্চার কান্নার আওয়াজ।তীব্রর বুক ধক করে উঠলো। এতোক্ষণের তেজি তীব্র মূহূর্তে নরম হলো। রাগান্বিত লাল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা পানি!! কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“ওকে কিছু করিস না”
তীব্রর নরম কন্ঠে ওপাশের ব্যাক্তি যেন শক্তি পেল। রাগান্বিত স্বরে বলল,
ফাইনালি তীব্র!!তীব্র চৌধুরীর দূর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে!কি অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করেছিস!!তোর মেয়ে আমার কাছে!!আর আমার মেয়ে তোর কাছে।তবে এখানে ব্যাপার টা ভিন্ন!এখানে তোর মেয়েও তোর দূবল জায়গা।আমার মেয়ে ও তোর দূবল জায়গা। হা হাহা…..
আগে যদি জানতাম তীব্র!দি গ্রেট তীব্র চৌধুরীর দূর্বলতা আমার মেয়ে হবে!তাহলে এই লুকোচুরি খেলা আর খেলতাম না। এমনিতেই তুই আমার ভীষণ লস করেছিস।পাচার কাজ বন্ধ করেছিস!
তীব্রর চোয়াল শক্ত হলো রাগে ভেতর ফেটে পড়লেও শান্ত স্বরে বলল,
কি চাই!!
আমার মেয়ে আমি ফেরত চাই!!
মেয়ে চাই নাকি সম্পত্তি চাই!!!
দুটোই চাই!!
মেয়ে তো একটা না।
সম্পত্তি তো একজনের নামেই লিখে গেছে।
১২ঘন্টার মধ্যে অলরেডি ৮ঘন্টা শেষ!!আছে ৪ঘন্টা! বাঁচলে সম্পত্তি নিস!!
কিহহহ???
আপনাতেই আমি পর্ব ৫৬
আমার মেয়ে পাচার করতে এতোই ব্যস্ত ছিলি নিজের মেয়ের খেয়াল করিস নি!তবে তোর মেয়েকে আমি বাঁচাতে পারি!!
ওপাশ থেকে প্রশ্ন,
কিভাবে??
মেয়ে তোর হোক বা আমার।ওদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক।আমার মেয়েই পারে তোর মেয়েকে বাঁচাতে!!ভেবে দেখ!!তোর মেয়ের কিছু হলে কিন্তু সব সম্পত্তি ট্রাস্ট এ চলে যাবে।আর আমার মেয়ের কিছু হলে তুই উপরে চলে যাবি।আই রিপিট তুই উপরে চলে যাবি।
ওপাশ থেকে জবাব আসে কয়েক সেকেন্ড পর,
কোন চালাকি করলে বাচ্চা বাঁচবে না তীব্র! তাছাড়া তোর মেয়ে কে পেতে হলে আমার মেয়েকে তোকে ছাড়তে হবে।
তীব্র উওর করল না।ফোন কেটে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল।আপাতত তাকে ঠান্ডা মাথায় থাকতে হবে।