আপনাতেই আমি পর্ব ৬৮
ইশিকা ইসলাম ইশা
টুং টুং গিটারের শব্দে সবাই স্টেজ এর দিকে তাকাতেই লাইট জ্বলে ওঠে লাইটের আলোয় স্পষ্ট হয়ে আসে তীব্রর মুখ।ঢুলের ওপর বসে সামনে মাইকে সুর তোলে,
“”””একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরন কেশ,
ভাটি অঞ্চলে সেই কন্যার দেশ….
(চারদিকে যেন কোলাহল থেমে শান্ত হয়ে এলো পরিবেশ। সবার মনোযোগ তীব্রর দিকে।কেউ কেউ তো শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবার কেউ কেউ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
“”””একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরন কেশ,
ভাটি অঞ্চলে সেই কন্যার দেশ,
দুই চোখে আহা রে কি মায়া,
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া,
(এতো দিন পর তীব্রর আওয়াজ শুনে চোখ ভিজে উঠলো রিদির।মেয়েকে বুকে জরিয়ে চুপচাপ বসে রইল রুমে)
“”তাহার কথা বলে”””
তাহার বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি।
“”তাহার কথা বলে”””
তাহার বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি।
(তীব্র চোখ বন্ধ তবে মুখে মিষ্টি হাসি।হাসির কারন অবশ্যই রিদি।তীব্র সেই প্রথম দিন গুলো ভেবে গানটা গাইছে)
“কন্যার চিরল বিরল চুল তাহার কেশে জবা ফুল ”
(তীব্রর চোখে ভেসে উঠলো সেই সকালে তার বাগানের ফুল ছিড়ে রিদি যখন তার দীর্ঘ,ঘন,কালো কেশে গুঁজে ছিল)
“কন্যার চিরল বিরল চুল তাহার কেশে জবা ফুল ”
“”সেই ফুল পানিতে ফেইলা,কন্যা করল ভুল “”
কন্যা ভুল করিস না,কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলব না।
(তীব্রর চোখ বন্ধ হলেও হদয়ের ব্যাথা যেন ব্যাক্ত করছে রিদির ভুল ধারণা নিয়ে তার ওপর সকল অভিযোগ, অভিমান)
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“”””একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরন কেশ,
ভাটি অঞ্চলে সেই কন্যার দেশ,
দুই চোখে আহা রে কি মায়া,
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া,
হাত খালি,গলা খালি,কন্যার নাকে নাকফুল!!
হাত খালি,গলা খালি কন্যার নাকফুল!!!
সেই ফুল পানিতে ফেইলা কন্যা করল ভুল!
কন্যা ভুল করিস না,কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলব না!!!
(রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছে রোজ কে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো।না অনেক হয়েছে আর না।অনেক দূরত্ব সহ্য করেছে আর না এবার যা হবে একসাথে থেকেই হবে)
এখন নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি ।
এখন নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি ।
“”সবুজ বরন লাও ডগায় দুধ সাদা ফুল ধরে
ভুল করা কন্যার লাগি,মন আনচান করে””
“”সবুজ বরন লাও ডগায় দুধ সাদা ফুল ধরে
ভুল করা কন্যার লাগি,মন আনচান করে””
(তীব্র বন্ধ চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু কনা)
“”আমার মন আনচান করে
আমার মন আনচান করে
আমার মন আনচান করে
আমার। মন। আনচান। করে “””
গান শেষ হতেই তীব্র গোপনে একটা শ্বাস ফেলে চোখ খুলতেই সামনে রিদিকে দেখে তাকালো!রিদির কোলে রোজ!!সে বাবার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। শুধু রোজ ই তার বাবার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তা নয়!!সবাই তাঁদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে!!তাকানোর কারন অনেক আছে।একে তো তীব্রর গান!!তীব্রর গান শুনে তো অনেকে ফিদাহ তার উপর আবার রিদিকে তীব্রর সামনে দেখে অবাক হয়েছে। তাঁদের ধারনা মতে রিদির মতো সাধারণ ডক্টরের এতো সাহস কিভাবে সে তীব্র চোধুরীর সামনে এভাবে দাঁড়ানোর সাহস করে!!তীব্র কিন্ত এখনো বাইরের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম!!!
তীব্র রোজ কে ঝট করে কোলে তুলে নিল।কতোদিন?? কতোদিন!!পর সে মেয়েকে কোলে তুলে নিল!!ইসস কি শান্তি!! পৃথিবীতে বাবা হওয়ার মতো সুখ কি আর কিছু আছে!!কি জানি!তবে তীব্রর কাছে তো এরচেয়ে বেশি সুখের কিছু নেই!তীব্র মেয়েকে বুকে নিতেই রোজ বাবার বুকের সাথে লেপ্টে গেল।তীব্রর চোখ বেয়ে আজ গড়িয়ে পড়ল অশ্রু।তবে সেটা কারো নজরে এলো না।তীব্রর ফিরা আজ তবে সার্থক। নয়তো তীব্র ফিরত না!!কেন ফিরেছে চলুন জেনে আসি!!
চারদিকের ঝকঝকে আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চৌধুরী বাড়ি। আজ তীব্র আর রিদির এনিভারসিরি। আমির লাবিবের থেকে সব শুনেছে কয়েকদিন আগে।লাবিব না চাইতেও বলেছে আমির কে।লাবিব তীব্রর রাগ আর রিদির অভিমান টেনে নতুন দূরত্ব টানতে চাই না।তাই এবার বসের পারমিশন ছাড়াই প্রথমবার কাজটা করেছে। আমির কে সব বলেছে। আমির সব শুনে প্রথমে ঝটকা খেলেও ব্যাপার টা এবার তীব্রর মতো ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করেছে।বলতে গেলে লাবিব আর আমির মিলেই মূলত এসব করেছে।আজ আমির ই চৌধুরী বাড়িতে পার্টির আয়োজন করেছে।তাতে যুক্ত হয়েছে অনেক মানুষ।প্রেস, মিডিয়া সব। আমিরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব চলছে এখনো।তীব্র আজ সকালে ফিরেছে বাসায়।তবে চৌধুরী বাড়িতে এতো আয়োজন কেন?? হচ্ছে কি??তাতে তার কি!!সে তো ফিরবে না!! তবুও বাধ্য হয়েই ফিরেছে।আর বাধ্য হয়েই পার্টিতে হাজির হয়েছে।আমির চৌধুরীর ব্ল্যাকমেইল এ সে বাধ্য হয়েই ফিরেছে। আমির জানে ছেলে সোজা কথার মানুষ না তাই তো হুমকিস্বরূপ ফিরতে বাধ্য করেছে।
আর তীব্রর ইমোশনাল এর ফাইদা নিয়ে গান গাওয়ার জন্যও রাজি করিয়েছে আমির।আমির জানে তীব্রর সুরের প্রতিটি ছন্দ শুধু একজনকেই ঘিরে রয়েছে!! আমির চাইছে এবার সব ভুল বুঝাবুঝি মিটে যাক। বাবার জোড়াজোড়িতে গানটা গাইতে রাজি হলেও আজ সত্যি ইমোশনাল হয়েই গেয়েছে তীব্র।তবে এতো বড় সারপ্রাইজ পাবে ভাবেনি।সে তো বলেই দিয়েছিল আর ফিরবে না।
এদিকে রিদি দাঁড়িয়ে থেকে বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখছে!!তবুও তীব্র রিদির দিকে তাকালো না।রিদির চোখ ছলছল করছে।তবে কি শুধু মেয়ে কেই চাই তার!!তাকে কি ক্ষমা করা যায় না!!রিদিকে ভাবনায় রেখে তীব্র মেয়েকে নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসার জন্য পা বাড়াতেই আমিরের কথায় থেমে যায়।
হ্যালো লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান!! আজকের পার্টির আয়োজন করা হয়েছে আমার ছোট ছেলে ডঃ তীব্র চৌধুরী আর আমার ছোট বৌমা ডঃ রিদিতা তীব্র চৌধুরীর বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে।তবে আজ তাঁদের ৪র্থ বিবাহ বার্ষিকীকে তাদের মধ্যে ঘর আলোকিত করে এসেছে চৌধুরী বাড়ির নতুন সদস্য। ডঃ তীব্র চৌধুরী আর ডঃ রিদিতা চৌধুরীর মেয়ে,
“””তীব্রতা চৌধুরী রোজ”””
কথাটা বলার সাথে সাথেই হুট করে স্টেজ এ বেশ কয়েকজন গাড তীব্র রিদি আর রোজের আশেপাশে দাঁড়িয়ে গেল। প্রটেকশন এর জন্য।তীব্র আজ পর্যন্ত কখনো মিডিয়া বা তার মাফিয়া জগতে তার আর রিদির ব্যাপারে কোন কথা বলনি। সবাই হয়তো এটাও জানত না তীব্র বিবাহিত!!তাই কথাটা বলার সাথে সাথেই সব গাড তাদের ঘিরে রাখে।
এদিকে তীব্র রেগে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে!রিদির কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মেয়েকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। তীক্ষ্ণ বাজ নজরে আশেপাশে সবটা দেখে গাডদের ইশারা করতেই দুইজন রিদির সামনে এসে দাঁড়ালো।যদিও রিদির পড়নে লাল-খয়েরির মাঝে একটা হিজাব নিকাব পড়া বোরকা।
আপনাতেই আমি পর্ব ৬৭
তাছাড়া এসব কাজ আমিরের একার পক্ষে করা সম্ভব না!! লাবিব ও নিশ্চিত যুক্ত আছে!!যদিও তীব্র জানে লাবিব রিদি আর রোজ কে সবার সামনে প্রকাশ করার আগে থেকে হয়তো সব প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে!!তবুও!তীব্র ওভার পসেসিভ রিদি আর রোজ কে নিয়ে!!তাছাড়া আজ যা হলো সেটা কখনোই চাই নি তীব্র!!এমনিতেই তার শত্রুর অভাব নেই।তীব্রর রাগ হলেও যেন সে রাগ করতে পারছে না।আজ এই সবের জন্য ই তো মেয়েকে বুকে নিয়ে এতোটা শান্তি অনূভব করছে।তবে তাকে সম্পূর্ণভাবে খেয়াল রাখতে হবে সবকিছু।আজকের পর রিদি আর রোজ কে বাধ্যতামূলক থাকতে হবে চৌধুরী বাড়ি।সব ভেবে তীব্রর মনে কোথাও তো শীতল বাতাস বয়ে গেল।তবে রয়ে রিদির প্রতি অভিযোগ আর অভিমান!!!