আপনাতেই আমি পর্ব ৬৯

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

ফোনের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল তীব্রর।যাকে বলে শয়তানি হাসি।চোখে মুখে তার দারুন দাম্ভিকতা!!যেন অনেক কিছু জয় করে ফেলেছে।মুখে আগের মতো বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তীব্র বলে,
“তীব্র চৌধুরীকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত হয়নি! তীব্র শুধু এক জায়গায় দূবল!! শুধু এক জায়গায়!! বলেই হাতে পেপার বল টা ঘুরানো থামিয়ে দেয়!! চোখে হিংস্রতাকে ছাপিয়ে ঘিরে রেখেছে একরাশ সস্তি।রিদি,রোজ তার কাছে আছে এতেই আপাতত সে শান্ত!!

মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকার শেষ করে বাসায় ঢুকতেই মনে হল এতো বড় পার্টির পর এবার ড্রয়িং রুমে চলছে পার্টি। সেখানে উপস্থিত আছে কিছু চেনা মুখ।মেঘ, আয়ান, নীর, রায়ান, দাদি, আমির, তীর, রুপালি, তৃপ্তি।আর এদের সবার মধ্যে মনি রোজ। আমির চৌধুরী তো নাতনী পেয়ে দিন দুনিয়া ভুলে বসেছে।
কিন্তু সবাই রোজ কে কোলে নিতে চাইলেও রোজ দাদার কোল ছাড়া আর কারো কাছে যাচ্ছে না।কেউ জোর করে নিলে কেঁদে কেঁদে একাকার করে ফেলছে।
তীব্র সবার মাঝেই একবার রিদির দিকে তাকালো।রিদি রোজ কে কোলে নিয়ে সামলাতে ব্যস্ত। মেয়ে তার কেঁদেই চলছে!রোজ বলতে গেলে এমনিতেই একটু মুডি তাছাড়া রোজ সবার কাছে সহজে যায় না। আজ এতো মানুষ কাছে দেখে মায়ের কোল ছাড়া হচ্ছে না। একবার আমিরের কোলে গিয়েছে। কিছুক্ষণ থেকে যখন আবার মেঘ নিয়েছে তখন থেকে কাঁদছে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এদিকে সবাই অপরাধীর মতো চেয়ে আছে রিদির দিকে।রিদি সবার দৃষ্টি দেখে মুচকি হেসে বলল,
“সবাই এতো টেনশনে কেন?
চিন্তা করবেন না!একটু পরেই রোজ থেমে যাবে।এতো মানুষ জন একসাথে দেখেছে তাই এমন করছে!!
আমির তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ফেলে রোজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
মেয়ে কার দেখতে তো হবে? তীব্র ও ছোট বেলায় এমন ছিল। তিশা ব্যাতিত কারো কোলে থাকত না!
রিদি মুচকি হেসে মেয়েকে সামলাতে চেয়েও পারছে না।রোজ কেঁদেই যাচ্ছে!হুট করেই রোজের জেদ উঠলে সহজে থামে না। বলতে হয় মেয়ে বাবার কপি। রিদি রোজ কে নিয়ে এটা ওটা বলছে আর ঘুরছে। রোজের কান্না কিছুটা থামলেও এখনো কাঁদছে তবে চিৎকার করে কাঁদছে না। সে মায়ের উপর নারাজ।কেন তাকে অন্য জনের কাছে দিল।রিদি মেয়েকে নিয়ে বারান্দায় দিকে যেতেই হুট করে সামনে এসে দাড়ালো তীব্র।রিদি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে তাকালো তীব্রর দিকে।তীব্র রিদির দিকে না তাকিয়ে মেয়ের দিকে তাকাতেই দেখে কেঁদে কেঁদে মুখ লাল করে ফেলেছে রোজ।

মেয়ের অবস্থা দেখে বিরক্ত হল তীব্র।তার মেয়ে কোন পুতুল নাকি যে সবার কোলে নেওয়াই লাগবে। এডজাস্ট করতে একটু সময় তো লাগবেই রোজের।তীব্র বিরক্ত হলেও মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে মেয়ের দিকে হাত বাড়াতেই রোজ চট করে বাবার কাছে চলে আসে।রোজ কে কোলে নিয়ে তীব্রর মুখের হাসি চওড়া হল। রোজ কে নেওয়ার সময় তীব্রর চোখ গেল রিদির গলার দিকে। সেখানে আচরের দাগ লাল হয়ে আছে।এটা রোজের কাজ তা বুঝেছে। তবে তীব্র রিদিকে ইগনোর করে রোজ কে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেল।রিদি তীব্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। তীব্র তার উপর রেগে আছে থাকাটা স্বাভাবিক ই।তবে এতে রিদির দোষই বা কোথায়??তবে রিদি চাইছে না আর দূরত্ব।

রাত প্রায় ১টার কাছাকাছি।সবাই আজ চৌধুরী বাড়িতেই থেকেছে। অনেক রাত হয়ে যাওয়াই সবাই থেকে গেছে।সবাইকে রুম দেখিয়ে দিয়ে এখন যে যার রুমে রেস্ট করছে।তীব্র সেই ৪০ মিনিট আগে রোজ কে নিয়ে গেছে।রোজ কে খাইয়েও দিয়েছে। চেন্জ ও করিয়ে দিয়েছে।তা নীরের থেকে শুনেছে রিদি।তীব্র নীরের থেকে রোজের জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিল।তবে রিদির সাথে কোন কথা বলে নি।সবাই বিষয়টি খেয়াল করলেও কেউ কিছু বলে নি।আপাতত সবটা রিদির উপর ছেড়ে দিয়েছে!!

রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রয়িং রুম থেকে নীরের রুমের দিকে যেতে গিয়েও গেল না।মেয়ে ছাড়া তার ঘুম আসবে না।যদিও তীব্রর কাছে আছে তবুও রিদির অস্থির লাগছে।তাই দুনোমনো করে তীব্রর রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ঢুকবে কি না সেটা ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে রুমে ঢুকে।
রুমে কোন সারা শব্দ নেই।রোজ হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে রিদি বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে তীব্রর বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে রোজ। তীব্রর চোখ ও বন্ধ।হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।রিদি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বেরিয়ে আসতে চেয়েও চোখ পড়লো তীব্রর দিকে। তীব্রর চুল ভিজা হয়ে আছে।হয়তো গোসল করেছে। চুলে তখনো চিপচিপে পানি।রিদি মনে মনে বলল,

এই লোক অসভ্যর চুড়ান্ত!!গোসল করে চুল মুছার জন্য আলাদা করে মানুষ লাগে!
রিদি মনে মনে কথাটা ভেবে টাওয়াল নিয়ে ধীরে তীব্রর পাশে বসল। আস্তে আস্তে মাথাটা মুছে দিয়ে সরে আসতেই ওরনার টান পড়ে।রিদি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ওরনার এক কোনা তীব্রর পিঠের নিচে কিছুটা ঢুকে গেছে।রিদি ওরনা বের করে চলে আসতেই হুট করেই বিছনায় বসে যায়।বসে না পায়ের সাথে কিছু একটা লেগে পড়ে যেতে লাগলে বিছনায় বসে পড়ে।
বসার কয়েক মূহূতেই রিদি তীব্রর হাতে হাত রাখে। সাথে সাথে হাত এবার কপালে রেখে আবার সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিয়ে অবাক হয়ে তাকায় তীব্রর দিকে।

জ্বর!!এত জ্বর নিয়ে কিভাবে আছে?রিদি ঝটপট রোজ কে তীব্রর বুক থেকে তুলে একপাশে সুয়িয়ে দেয়।
ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার নিয়ে তীব্রর মুখে ধরে!!জ্বর ১০৪ ডিগ্রি।রিদি আবারো ঝটপট নেমে বাথরুম থেকে এক বালতি পানি নিয়ে আসে।তীব্রর মাথায় পানি দেওয়ার জন্য। কিন্তু তীব্রকে টেনে তোলা তার পক্ষে সম্ভব না।তাই আস্তে করে তীব্র কে ডাকতেই তীব্র পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়।রিদিকে দেখে তীব্র ধীর কন্ঠে বলে,
আপনি এখানে?? আমার মতো জানোয়ারের কাছে কেন?আর এতো কাছে বসেছেন কেন??সরুন
রিদি তীব্রর কথা তোয়াক্কা না করে বলল,
আপনার অনেক জ্বর তীব্র!একটু এদিকে মাথা দিন!আমি মাথায় পানি ঢালব!!
তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,

লাগবে না! এই জ্বরে আমার কিছু হবে না!!
রিদি কথা বাড়ালো না।তীব্র যে ঘার ত্যাড়ার চুড়ান্ত তা জানে রিদি।সে নিজেই তীব্র কে একটু টেনে নিল। কিন্তু তীব্র আবারো একই জায়গায় এসে শুয়ে বলল,
কিছু করব না আমি!থাক জ্বর!!
রিদির রাগ হলো। জ্বর ১০৪ তবুও ত্যাড়ামো থাকবেই।রিদি রেগে তীব্র কে টেনে মাথা টা খাটের সাইডে রেখে বলল,
খবরদার যদি সরেছেন!!আমাকে জোরে কথা বলতে বাধ্য করবেন না আপনার মেয়ে ঘুমাচ্ছে!
মেয়ের কথায় তীব্র আর জেদ দেখাল না। আজকাল নিজেকে চিনতে বেশ কষ্ট হয় তীব্রর।রিদি আর মেয়ের ব্যাপার আসলেই তীব্র যেন সব মেনে যায়।অথচ তার রাগ ,জেদ কেমন তা সবার জানা!

রিদি পানি মাথায় ঢেলে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া তীব্রর দিকে ছলছল চোখে তাকালো।জ্বরের মাত্রা অনেক। তবুও কতোটা স্বাভাবিক চলাফেরা করেছে।যেন কিছুই হয়নি।একটাবার কাউকে বলেও নি।
রাগ করার কথা আমার সেখানে নিজে রেগে বসে আছে।নিজে সেদিন মোনাপুর সাথে মিলে নাটক করেছে কিন্তু কেন করেছে সেটা আমাকে জানাচ্ছে না!কি এমন হয়েছে? তীব্র কেন চাইছে না আমি জানি সব।রোজ বেঁচে আছে সেটা যদি তীব্র জানত তবে কেন বলেনি! রোজ এতদিন কোথায় ছিল??
এসব ভেবেই তীব্রর প্রতি রাগ রিদির।যদিও রিদি আজই জেনেছে তীব্র আর মোনার সেদিনের নাটকের কথা।লাবিব আর আমির বলেছে তাকে কিন্তু এসব করার কারন বলে নি।

রাত প্রায় আড়াইটা বাজে,
বেডের মাঝখানে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে রিদি।রিদির একপাশে তীব্র অন্য পাশে রোজ ঘুমিয়ে আছে।তখন মাথা ধুইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল তীব্রকে।
হঠাৎ কারো গোঙানির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির।পাশেই তীব্র কে থরথর করে কাঁপতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
কি হয়েছে??তীব্র??ঠান্ডা লাগছে!!কি হয়েছে?

রিদি তীব্রর কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আবার বেড়েছে। শরীর পুড়ে যাচ্ছে।রিদি কি করবে বুঝতে না।কাউকে ডাকার জন্য একটু সরতেই তীব্র হুট করেই রিদির কোমর জরিয়ে ধরে।রিদির মনে হলো শরীরে যেন কেউ জলন্ত আগুনের গোলা রেখেছে।রিদি নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও পারল না।তার কাছে ফোন ও না ই কিভাবে কাউকে ডাকবে।জোরে ডাকলে রোজ উঠে যাবে।রোজ উঠে গেলে তাকে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়বে।
রিদি বেড টেবিলে তীব্রর ফোন দেখতে পেয়ে নেওয়ার জন্য ঝুকতেই রিদির শরীর কেঁপে উঠলো। ঝট করেই চোখ বন্ধ করে নিল। তীব্র রিদির দিকে সরে এসে বুকে মাথা রাখতেই রিদি আবারো কেঁপে উঠলো।বিরবির করে কিছু বলছে তীব্র। রিদি মুখটা একটু নিচু করে শুনল তীব্রর কথা।

“আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন প্লিজ!!আমি ঘুমাবো জান!অনেক রাত নির্ঘুম কেটেছে আমার ঘুম দরকার!দয়া করে দূরে সরবেন না!প্লিজ আমাকে ঘুমাতে দিন।মরে যাব আমি প্লিজ….
তীব্রর জ্বরের ঘোরে এমন কথায় ফুঁপিয়ে উঠলো রিদি।খুদাথর্থ মানুষ অনেক দিন না খেলে যেভাবে বলে তীব্রও আজ একটু ঘুমানোর জন্য রিদির কাছে যেন ঘুম ভিক্ষা চাইছে।রিদি আর পারল না নিজেকে শক্ত রাখতে হু হু করে কেঁদে উঠলো। নিজে কষ্ট পাচ্ছে তাকেও কষ্ট দিচ্ছে অথচ বলছে না এসব কেন করছে!এতোটা জেদি কেন এই ছেলে।সে কি জানে না রিদি তাকে কতোটা ভালবাসে।এই একটা মানুষ কে সে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছে।রিদি সব ভুলে তীব্র কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে।

রিদিরবুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণে শান্ত হয়ে এলো তীব্র।কাপাকাপি কমলে রিদি কম্বল দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিয়ে পাশ ফিরে মেয়ের দিকে ঘুরতেই দেখে রোজ নড়েচড়ে উঠছে।রিদি রোজ কে কোলে তুলে নিল। চেন্জ করে ফিডার মুখে ধরতেই চপচপ করে খেতে লাগল।তা দেখে মুচকি হাসল রিদি।মনে মনে একবার মেয়ের নাম আওয়ালো,
“তীব্রতা চৌধুরী রোজ”
রিদি অবশ্য জানত না তীব্র রোজের এই নাম এনাউন্স করবে সবার সামনে। রোজের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বুকের মাঝে জরিয়ে ধরলো তুলতুলে শরীরটা।

সকাল প্রায় ৮টার কাছাকাছি,
ছোট ছোট হাতের স্পর্শে ঘুম হালকা হয়ে আসে তীব্রর। শরীর হালকা ব্যাথা করছে।পিট পিট করে চোখ খুলে দেখে রোজ তার ছোট ছোট হাত দিয়ে তার উপরে উঠার চেষ্টা করছে।রোজ কে দেখে তীব্রর মুখে সবসময় এর মতো হাসি ফুটে উঠল।রোজ কে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে কিছু মনে করে চট করে এপাশে তাকাতেই নজর এলো রিদি কে।তীব্রর কাঁধে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে রিদি।রিদিকে দেখে তীব্রর রাতের কথা মনে পড়ল। তীব্র মুচকি হেসে রিদিকে বুকে নিয়ে আসতেই রিদি ঘুমের মধ্যে তীব্রর মিশে গেল।নিজে থেকেই জরিয়ে ধরে শান্তি মতো ঘুমাল। কিন্তু বেশিক্ষণ রিদির ঘুম হলো না।চুলে টান পড়ায় রিদি পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে তীব্রর বুকে দেখে মাথা তুলে চাইল তীব্রর দিকে।তীব্র রিদির তাকানো দেখে বলে,
“আপনি নিজ থেকে আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়েছেন!আমি কিন্তু কিছু করি নি!
রিদি কিছু বলার আগেই রোজ আবারো রিদির চুল ধরে টানতেই রিদি কিছুটা ব্যাথা পেয়ে আহহ করে উঠে।রিদি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

থাকব না তোর বাবার কাছে!তুই ই থাক!তোর বাপ আস্ত একটা বেয়াদব, অসভ্য!!তার মেয়ে তুই আবার সভ্য কিভাবে হবি!তুই ও অসভ্য!!রোজ কিছু না বুঝে ড্যাবড্যাব করে তাকালো মায়ের দিকে।
কথাটা বলে রিদি উঠতে চাইলে তীব্র ঝট করে চেপে ধরে বলে,
এই এই ওর বাবা অসভ্য মানে!
রিদি কটমট করে বলল,
হ্যা!! অসভ্যর চুড়ান্ত!বাপ মেয়ে দুটাই এক!!কষ্ট দিতে পারলে তো আপনাদের মজা লাগে, শান্তি লাগে! ছাড়ুন!!
তীব্র ছাড়ল না। তাকিয়ে রইল রিদির ছলছল চোখের দিকে।সকাল সকাল রিদির কান্না দেখে তীব্র নরম হয়ে বলল,
কাঁদছেন কেন জান?
জান কথায় কি আছে কে জানে!রিদি হু হু করে কেঁদে উঠলো এমন আদুরে ডাকে! অভিমানী কন্যার মতো অভিমানী সুরে বলল,

আপনি খুব খারাপ তীব্র!আপনি ইচ্ছা করে আমাকে কষ্ট দেন! সেদিন আপনার আর মোনাপুর মাঝে কিছুই হয়নি।অথচ নাটক এভাবে করছিলেন যেন সত্যি!! সেদিন নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছিল।আমার অবস্থা একবার ভেবে দেখেছিলেন।একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা, অন্যদিকে আপনার অবহেলা!তারপর আপনার নাটক!! এতো কিছু আমি আপনার সাথে করলে কি করতেন!!
যে সন্তান হারানোর শোক আমাকে তীলে তিলে শেষ করছিল সে বেঁচে ছিল।অথচ আপনি আমাকে বলেন নি!কেন?কারন আপনার আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে!! আ……

রিদি কিছু বলার আগেই ভ্যা ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠে রোজ।মায়ের কান্না দেখে সে কাঁদছে!!তীব্রর বুকের উপর উঠার চেষ্টা করে মা অব্দি পৌঁছাতে চাইছে!!রিদি মেয়ের কান্না দেখে আর কিছু বলল না। নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তীব্র রোজ কে বুকের উপর নেয়।ইসসস মা মেয়ে কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা করেছে।
রোজ,রিদি দুইজনেই তীব্রর বুকে কাঁদছে।তীব্র রিদির মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
সব বলব এখন কান্না অফ করেন!!আপনার কান্নায় আমার মেয়ে কাঁদছে!রিদি তীব্রর কথায় ভু কুঁচকে তাকাল!! সত্যি তাকে কি সব বলবে!! বিশ্বাস করল রিদি চোখ মুছে মেয়ের দিকে তাকালো ।নিজেকে সামলে মিষ্টি করে হেসে বলল,
আম্মু আর কাঁদবে না মামনি! থাক তুমি কেঁদো না!!
আমার সোনা মেয়ে তো তুমি!!রোজ একটু পর থেমে এবার বাবার দিকে তাকালো। তীব্র মিষ্টি হেসে মেয়ের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বুকে শুইয়ে দিল।

সকাল প্রায় ১০টা ছুঁই ছুঁই,
অনেকক্ষণ ধরে তীব্রর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীর।মনে মনে হাজার বার বলছে রিদি আপু যেন এখানেই থাকে,এখানেই থাকে।পাশেই রায়ান রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সেই সকাল থেকে বোনের খোঁজ নেই। পুরো বাড়ি খুজেও রিদি কে পায় নি রায়ান সহ বাকিরা।তবে পুরো বাড়ি খুঁজলেও তীব্রর রুমে ঢুকে নি।তাই এখন লাস্ট একবার তীব্রর রুমে ঢুকার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু নীরের আজগবি কাহিনী দেখে বিরক্ত হয়ে তাকালো নীরের দিকে।নীর কি যেন বিরবির করছে,একবার দরজা খুলতে হাত দিচ্ছে তো একবার হাত সরিয়ে নিচ্ছে। রায়ান খানিকটা রেগেই বলে,
এসব কি করছ??না নিজে যাচ্ছ না আমাকে যেতে দিচ্ছ!!সরো!!
নীর চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
বোনের ঘরে এভাবে সরাসরি ঢুকবেন!! লজ্জা নাই!!
রায়ান কটমট করে কিছু বলার আগেই রুপালি এসে বলল,
কি হলো পেলে রিদুকে??
নীর কিছুটা সময় নিয়ে বলল,

আসলে আপু!!মানে এভাবে ঢোকা কি ঠিক হবে!!
রুপালি নীরের কথার মানে বুঝতে পারলেও বলল,
আমি জানি!! কিন্তু এছাড়া আর কোন অপশন নাই নীর। রিদি যদি তীব্রর রুমে থাকে তবে ঠিক আছে কিন্তু রিদি যদি তীব্রর রুমেনা থাকে তবে কোথায়?রিদি কোথায় এটা তীব্র জিঙ্গেস করলে কি বলব আমরা!রিদি নেই একথা জানলে তীব্র কোন কিছু আস্ত রাখবে না!!
নীর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে নব মোচর দিয়ে খুলে রুমে ঢুকে,
সাথে সাথেই নীরের মুখে ফুটে ওঠে মুচকি হাসি। তীব্রর বামপাশে রিদি তীব্রর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।আবার তীব্রর বুকেই ঘুমিয়ে আছে তাদের ছোট্ট রাজকন্যা।ইসস এমন একটা মুহূর্ত!ঐ যে বলে না কিছু ভালবাসা দেখতেও সুন্দর!!তেমনি সুন্দর একটা মূহুর্তের সাক্ষী হলো নীর।ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে আসতেই রায়ান বলে,
রিদি আছে ভেতরে!!!
নীর মুচকি হেসে বলল,
আপু,রোজ,ভাইয়া ঘুমাচ্ছে!
রায়ান কিছুটা অবাক হলেও কিছু না বলে চলে গেল।রুপালিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তার রুমে গেল।

সুন্দর একটা সোনালি সকাল।সকাল বললেও ভুল হবে!বাজ প্রায় ১০:৪৪।এসি রুমের ঠান্ডা আবহাওয়া আর সবচেয়ে বড় শান্তির জায়গা তীব্রর প্রসস্থ বুক।এর চেয়ে আরামদায়ক আর কিছু নেই ,না ছিল আর না কোনদিন হবে! রোজ ও আজ বাবা মায়ের সাথে নিরাপদে ঘুমাচ্ছে বাবার বুকে!!রিদি ঠান্ডা রুমে
ঠান্ডার আভাস পেয়ে আরো একটু সিটিয়ে গেল তীব্রর সাথে।পিট পিট করে চোখ খুলে নিজেকে তীব্রর বাহুডরে দেখে লজ্জা,ভয়,সংকোচ বাদ দিয়ে নিজ থেকেই মেয়ে সহ জরিয়ে ধরলো তীব্র কে।মুখটা উচু করে গলা বরাবর চুমু একে দিল। কিন্তু না! এইটুকু তে মন ভরল না!!একটু উঠে তীব্রর মুখ বরাবর করে তাকালো। ফর্সা চেহেরায় মোটা ভূ ,তরতরে খাড়া নাক, লালচে ঠোট,হালকা চাপদাড়ি খুব সুন্দর করে কাটিং করা,সিল্কি চুল গুলো পড়ে আছে অবহেলায় কপালে রিদি সিল্কি চুলে হাত চালালো। কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট ছোয়াল কপালে।আবারো ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখল তীব্রর কপালে কিছুক্ষণ।তীব্র নড়েচড়ে উঠতেই রিদি সরে যেতে চাইলে তীব্র চোখ বন্ধ করেই বলে,

“এসেছেন নিজের ইচ্ছায়,যাবেন আমার ইচ্ছায়!!
রিদি হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে, এখন এসে ঘিরে ধরল লজ্জা!!সরে আসতে চাইলে তীব্র হাত টা কোমরে শক্ত করে চেপে দাঁত পিশে বলল,
“খবরদার নড়বেন না! অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হয়নি এখনো!!
রিদি অবাক চোখে তাকাল তীব্রর দিকে। তীব্র অধিকার নিয়ে বলল,
পুরো মুখে ঠোঁটের ছোয়া চাই! কপাল কে হিংসা করছে আমার মুখ,গাল,ঠৌট,চোখ।তাদের ও চাই আপনার ঠোঁটের ছোয়া!আমি আবার মহৎ মানুষ। হিংসা হিংসি পছন্দ না। জলদি করুন!
তীব্র কথায় রিদি বেক্কল বনে গেল।এটা আবার কেমন কথা!!রিদিকে ভাবনায় দেখে তীব্র জোড় দিয়ে বলে,
কি হল দিন! অস্থির লাগছে কিন্তু!বুক ধরপর করছে!!জলদি!জলদি!
রিদি আহাম্মক এর মতো কিছুক্ষণ চেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে ঠোঁট ছোয়াল গালে এরপর চোখে, থুতনিতে,ঠোটের কাছে থেমে গেলে তীব্র অস্থির হয়ে বলে,

জলদি করুন! আই সয়ার জান!! শুধু মেয়ে আছে তাই!নয়তো তীব্র চৌধুরী কে অপেক্ষা করানোর ফল বুঝাতাম!এখন চুপচাপ আমার ঠোঁট কে শান্ত করুন!ও সবচেয়ে বেশি অশান্তি করছে!কথাটা বলেই তীব্র রিদিকে টেনে দ্রুততার সাথে ঠোঁট ছোয়াল রিদির ঠোঁটে। কিন্তু বেশি গভীরে ডুব দেওয়ার আগেই কেঁদে উঠলো রোজ!! তীব্র অসহায় মুখ করে রিদির দিকে চেয়ে ঘুমন্ত মেয়েকে বুকে চেপে হালকা করে চাপর দিতে লাগল।এদিকে রিদি লজ্জা পেয়ে প্রায় লাল ই হয়ে যাবে হয়তো!!তীব্র সেদিকে তাকিয়ে বলল,
“প্রথম বার ছুঁয়েছিলাম মনে আছে!! ঠিক সেদিনের মতো আজ আপনি লজ্জায় লাল নীল হচ্ছেন!!”””ইসসস! কি যে মায়া”””

রিদি তীব্রর কথায় লজ্জায় আড়ষ্ট হলেও নিজেকে সামলে ঘড়ির দিকে তাকাতেই লজ্জা সাইডে রেখে চোখ বড়বড় হয়ে গেল। প্রায় চেচিয়েই বলল,
“আল্লাহ!!১১টা বাজে!
রিদির চেচানোতে তীব্র রাগী সুরে বলে,
ডাকাত পড়ে নি!! চেঁচাচ্ছেন কেন??রোজ ঘুমাচ্ছে!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৮

রোজ বাবার কোলে নড়ে চড়ে উঠে আবারো ঘুমিয়ে পড়ল!!এদিকে রিদি উঠে অসহায় মুখে তাকায় ঘড়ির দিকে!এতো সময় ঘুমানো!!! এসব মানা যায়!!কি ভাবছে সবাই!!এখন তাঁদের সামনে কিভাবে যাবে!!
রিদিকে গভীর ভাবনায় দেখে তীব্র ভু কুঁচকে তাকাল রিদির দিকে। পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসল।তার এসবে কি!!সে তো আজ বৌ কে মন ভরে দেখেছে। যেন এতোটা দিনের অভুক্ত চোখ তার খাদ্য খুঁজে পেয়েছে। আবার ইচ্ছে করেই এসির পাওয়ার কমিয়ে রুম ঠান্ডা করেছে যেন রিদি তার বুকে মিশে যায়।

আপনাতেই আমি পর্ব ৭০