আপনাতেই আমি পর্ব ৮১

আপনাতেই আমি পর্ব ৮১
ইশিকা ইসলাম ইশা

দিয়ার ঙ্গান ফিরে পিটপিট করে চোখ খুলেই প্রথমে নজরে আসল মায়াময়ী একটা চেহেরা।তার হাত ধরে বসে আছে।চোখে টলটলে জল।দিয়া ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দেয় মায়াবী মুখটার দিকে। রিদি দিয়াকে দেখে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না।চট করে জরিয়ে ধরলো দিয়াকে।
আম্মু……..

আম্মু!! আম্মু কথাটাই কি আছে?দিয়ার শরীর ছলাৎ করে উঠলো।বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।সে কি বেঁচে আছে!এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন!!!
তুমি আমার আম্মু তাই না!তুমি আমার মা!
রিদির কথায় দিয়া নড়েচড়ে উঠলো।ধীরে ধীরে উঠে বসল। আশেপাশে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।দিয়া সোজা তাকালো আদিল খানের দিকে। আদিল খাঁন মাথা নাড়িয়ে কিছু বুঝাতেই দিয়া চমকে তাকালো রিদির দিকে।মায়া মায়া অসম্ভব সুন্দর একটা মুখ। সেই মায়াবী মুখের ডাগর ডাগর চোখের পানি আজ বাঁধাহীন ঝরছে।দিয়ার তবুও যেন বিশ্বাস হলো না।এটা কিভাবে সম্ভব!!
হাত বাড়িয়ে রিদিকে ছুতেই রিদি ঝাঁপিয়ে পড়ল তার বুকে।দিয়া চমকালো ভরকালো। মূহূর্তেই আকরে ধরল মেয়েকে।চোখ মুখে অসংখ্য চুমু একে দিল।মা মেয়ে দুইজনেই কাঁদছে!এমন একটি সময় কখনো আশা করেছিল কেউ।দুইজনের মধ্যে কেউ ভেবেছিল জীবনে এমন কোন দিনও আসবে।আজ যেন অসম্ভবকেও ও সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘুমন্ত মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে দিয়া। কান্নার পর স্বভাব মত রিদি মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে গেছে। দিয়া পারলে ছোট বাচ্চার মতো কোলে নিয়ে আদর করতো। কিন্তু তা তো সম্ভব না।মেয়েটা বেশ মায়াবতী তার।একদম মায়ার সাগর।দিয়া রিদিকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার মাঝেই রুমে ঢুকে নীর,
আন্টি রিদু পি!!!
নীরের কথায় দিয়া চটপট রিদিকে আগলে নিল।যেন নীর ছিনিয়ে নিবে।এতো বড় মেয়েকে কি আর আগলানো যায়। তবুও দিয়া নীরের দিকে চেয়ে আগলে নিল।
কে তুমি????

নীর দিয়ার শক্ত কথায় হচকচিয়ে তাকাল।আমতা আমতা করে বলল,
আসলে আমি!!
খবরদার আমার বাচ্চার আশেপাশে আসবে না।কে তুমি??
নীর কিছু বলার আগেই সেখানে প্রবেশ করে আদিল খাঁন। দিয়ার কথায় অবাক হয়ে বলে,
এমন করছিস কেন দিয়া?
দিয়া বিরক্ত নিয়ে তাকালো আদিলের দিকে।সে বাবার উপর ভরসা করছে না।
আমার মেয়ে ঘুমাচ্ছে তোমরা ডিস্টার্ব করো না যাও!!
আদিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

দিয়া পাগল হস না।রিদিকে ডেকে তুলে দে।
আদিল আরো কিছু বলার আগেই দিয়া কিছুটা রেগে বলল,
কি সমস্যা?মেয়েটা আমার ঘুমাচ্ছে তোমাদের সহ্য হচ্ছে না। বেরিয়ে যাও!
আদিল আগে কিছু বলবে তখনি তীব্রতা কে নিয়ে রুমে ঢুকে তীব্র।অনেকক্ষন বাবার কোলে থাকলেও এখন তার মা চাই!তীব্র সবার দিকে একবার তাকিয়ে পরিস্থিতি বুঝল।তবে মেয়ে তার ভীষণ জেদি। কান্না শুরু করলে থামানো মুশকিল বিষয়।
দিয়া এতোক্ষণ অবাক হয়ে সুদর্শন তীব্র আর কিউটি তীব্রতার দিকে তাকিয়ে ছিল।দুইজনের নীলাভ চোখ দেখে অবাক হয়েছে বেশ।
কে তুমি?
তীব্র কিছু বলার আগেই আদিল খাঁন বলল,

তীব্র চৌধুরী।আর এই হচ্ছে আমার নাতনির মেয়ে আদুরে রাজকন্যা তীব্রতা চৌধুরী রোজ।রিদির মেয়ে আর বর।
দিয়া চমকে উঠলো।হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো সচ্ছ মায়া ভরা মুখের দিকে।তার নাতনি!!মানে এই বাচ্চাটা তার বাচ্চার বাচ্চা।দিয়ার হিসাব গুলিয়ে উঠলো।মানে তার মেয়ের ও বাচ্চা।দিয়া ঘুমন্ত মেয়ের দিকে চেয়ে আবার তাকালো তীব্রতার দিকে।তীব্রতা মাকে দেখে উসখুস করছে বাবার কোল থেকে।হাত বাড়িয়ে মা মা করছে।তীব্র মেয়ের মনোভাব বুঝে বিছানার এক সাইডে নামিয়ে দিল।রোজ হামাগুড়ি দিয়ে মায়ের কাছে এসে দুহাতে মায়ের বাহু ধরে আ উ করতেই রিদি ঝট করে উঠে বসল।রিদির ঝট করে উঠে বসায় অবাক হল দিয়া।রিদি রোজ কে কোলে তুলে বুকে নিল।রোজ মায়ের বুকে মিশে রইল। তুলতুলে শরীরটা নিজের মাঝে আগলে নিতেই চোখ পড়ল দিয়ার দিকে।ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

এটা!!তোর মেয়ে মেয়ে!!
রিদি দিয়ার কথায় মুচকি হাসল।
সেই গর্ভে ৮ মাসের বাচ্চা!এতবছর ঘুরে সেই ৮ মাসের বাচ্চার আবার বাচ্চা!অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে তাই না!
রোজ গোল গোল চোখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।দিয়া নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালেও রোজ মায়ের কাছে লেপ্টে গেল।যার অর্থ সে যাবে না। তীব্র সব জরতা ফেলে বলল,
রোজের খিদে পেয়েছে!ওকে খাওয়াও।আমি সন্ধ্যায় এসে তোমাদের নিয়ে যাব। জরুরী মিটিং আছে।
আদিল খান তড়িঘড়ি করে বলে,
আজকে থাকো!!

তীব্র বেশ ভদ্রতা সহিত বলে,
নানু আমার জরুরি অপারেশন আছে।যেতেই হবে!
আদিল খান ব্যাপার টা বুঝে আর আটকালো না। তীব্র রিদির দিকে চেয়ে রইল।বৌ মা কে পেয়ে তাকে ভুলে গেছে।এই যে যাওয়ার আগে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে সেটা তো আর করতে পারছে না। রোজকার অভ্যাস!যদিও হসপিটালে হলে রিদি রোজ সাথেই যাই তবুও আজ মনে হচ্ছে একটুখানি ছোয়া তার চাই।রিদিকে ডাকতে তার সমস্যা নাই।এমনিতেই এসব লজ্জার কথা ভাবে না তীব্র। ওর সিস্টেম এ লজ্জা নাই বললেই চলে।হুট হাট সবার সামনে কোলে তুলে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে রিদি এতে ভীষণ লজ্জা পাবে। তাছাড়া মায়ের সাথে সাক্ষাৎ বেশিক্ষণ হয়নি। তীব্র চাই না রিদি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ুক।

তীব্র অসহায় মুখে হাসি ফুটিয়ে বেরিয়ে গেল।সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখা হল আরভি আর আরফিন এর সাথে। বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে তাঁদের।যদিও তীব্র বেশি কথা বলেনি শুধু শুনেছে।
আরফিন ,আরভির কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে আসতেই দেখে লাবিব হাজির।লাবিব তীব্রর রাগী রাগী মুখটা দেখে অবাক হয়ে তাকালো। সকাল সকাল এতো রাগী রাগী ভাব কেন?
এই ভাবে পেঁচার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?চল!
লাবিব বুঝল তীব্রর মুড অফ!
জি বস!
তীব্র বিরবির করে বলছে,

অসহ্য!বাল! মা পেয়ে স্বামী কে ভুলে যায়!বেয়াদব বৌ!ছ্যা!বালের জীবন! তীব্র কথাগুলো বিরবির করে গাড়ির দরজা খুলতেই থেমে যায় তুলতুলে নরম হাতে স্পর্শে।পেছনে না ঘুরে রাগী গলায় বলে,
কি চাই?? ছাড়ুন!
রিদি রোজ কে কোলে নিয়েই একহাতে জরিয়ে ধরলো তীব্র কে পেছন থেকে।রোজ বাবার পিঠের শার্ট খামচে ধরে অ উ করছে। তীব্র মুচকি হেসে পিছনে ঘুরে আগে মেয়েকে কোলে নিল।রিদিকে জরিয়ে ধরতে গেলেই হুট করে বিকট শব্দে চারপাশে স্তব্ধ হয়ে যায় সব।গাছ থেকে পাখিরা ভয়ে উড়ে যায় তাদের নীর ছেড়ে।ছুটে যায় রিদিকে ধরে রাখা তীব্রর হাত।হাত ছেড়ে রিদি লুটিয়ে পড়ে নিচে। তীব্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিচে লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তীব্রর মস্তিষ্ক সচল হল গুলির আওয়াজ রোজের কান্নায়। তীব্র রোজের দিকে একপলক চাইতেই হুট করেই ছুটে আসে লাবিব।

বসসসস!!!
ভাবির গুলি লেগেছে!জলদি হসপিটালে নিতে হবে!
কথাটা বলতে বলতেই আরো দুটো গুলি ছুড়ল লাবিব। ততক্ষণে তীব্র কে ঘিরে রেখেছে গাড রা।
ততক্ষণে ছুটে এসেছে দিয়া।মেয়েকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠলো। তীব্র হুট করেই রোজ কে দিয়ার কোলে দিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে রিদিকে কোলে তুলে নিল।শাট খুলে রিদির পেট বরাবর বেঁধে কোলে তুলে গাড়িতে বসল।লাবিব আরভি ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দিতেই রিদি তীব্রর বুকের সাদা গেঞ্জি রক্তাক্ত হাতে খামচে ধরল।অপর পাশে রোজ কে কোলে নিয়ে উঠে বসলেন দিয়া।রোজ মা মা করে কেঁদেই যাচ্ছে। যদিও তা স্পষ্ট না।

রিদির তখনো ঙ্গান আছে।রোজের কান্না তার বুকে রক্তক্ষরণ করছে।মেয়েটা তার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। রিদি ধীর গলায় তীব্রকে বলল,
রোজ!!তীব্র ! রোজ
তীব্রর চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গিয়ে পড়ল রিদির মুখে। তাৎক্ষণিক তীব্র রিদির নিথর শরীরটা শক্ত করে চেপে নিল।

রক্তে মাখামাখি সাদা গেঞ্জি উপরে কোন মতে একটা শার্ট পড়া। আধঘন্টা হয়েছে রিদিকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া। অপারেশন চলছে। আমির গোছালো ছেলের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে কিছু বলার ভাষা পেলেন না।রিদির প্রতি তীব্র দূর্বল।দি তীব্র চৌধুরী হিসেবে বরাবরই পরাজিত তীব্র রিদির কাছে।তাই তো এখন তাকে দেখে যেকোন মানুষ হয়তো বলবে পাগল পথিক।
আরভি একবার অপারেশন থিয়েটারে থেকে কেবিনে চক্কর দিচ্ছে। কেবিনে নিথর হয়ে পড়ে আছে দিয়া। চোখের সামনে মেয়েকে পেয়েও হারানো সহ্য হল না তার। দিয়ার পাশেই বসে আছে আরফিন। আদিল খাঁন নাতনির শোকে পাথর হয়ে বসে আছে চেয়ারে।

রায়ান স্থির থাকতে পারছে না! আসার পরেই সে চেঁচামেচি করেছে তীব্র কে! তীব্র নিজে সার্জন তবে কেন রিদিকে বাচাচ্ছে না!সে কেন নিজে অপারেশন করছে না।সবাই রায়ান কে কোনমতে বুঝিয়ে থামালেও তীব্র টু শব্দ করে নি।তার চোখে এখনো ভাসছে রিদিকে জরিয়ে ধরার আগেই রিদির পড়ার দৃশ্য টা।
এদিকে নীর সহ সবাই রোজ কে প্রায় আধঘন্টা ধরে থামানোর চেষ্টা করছে।রোজ এটা ওটা দেখে একটু থামলেও আবারো গলা ফাটিয়ে কাঁদছে। এতোক্ষণ কাঁদায় গলা ভেঙ্গে গেছে।নীর উপায় না পেয়ে রোজ কে তীব্রর কাছে আনল।নিস্তব্ধ তীব্র রোজের কান্নায় নড়েচড়ে উঠে করিডোর থেকে আসা মেয়েকে দেখে মনে পড়ল রিদির শেষ কথা।
” রোজ!! তীব্র রোজ!

তীব্র ভারী শরীরটা টেনে দুকদম এগিয়ে সেই অবস্থায় কোলে তুলে নিল মেয়েকে।বাবার কোলে গিয়ে রোজ কান্না থামাতেই টাওয়াল এগিয়ে দেয় নীর।তীব্রর শরীরে তখনো রক্তের দাগ রয়েছে। তীব্র শার্টের উপর দিয়ে নিজের কাঁধে পর্যন্ত টাওয়াল রেখে বুকে জরিয়ে ধরলো রোজ কে। বাবার বুকে রোজ কান্না থামালেও ছোট্ট শরীরটা তখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে।মেঘ রোজকে তীব্রর কোল থেকে কল লাগিয়ে দেখল। অতিরিক্ত কান্নার ফলে গলা বসে গেছে রোজের।খাওয়ানোর চেষ্টা করেও বেশি খাওয়াতে পারে নি। তীব্র বেশ কিছুক্ষণ রোজ কে কোলে নিয়ে বসে থাকার পর দরজা খুলে বের হল একজন নাস ।সবাই নাসটিকে ঘিরে ধরতেই নাসটি ভয়ে ভয়ে একবার তীব্র কে দেখে বলল,
ডক্টর চিকিৎসা করছে ভালো হয়ে যাবে!প্লিজ আমাকে যেতে দিন!

তীব্র টচ করে উঠে দাড়ালো রোজ কে নিয়ে।
তীব্র কে এভাবে উঠে দাড়াতে দেখে তীর,আমির চমকে উঠে এগিয়ে এলো!নাসটিও ভয়ে শুকনো ঢোক বলা যায়না তীব্র কখন কি করে! কিন্তু তীব্র সবাইকে ভুল প্রমাণ করে এগিয়ে গেল করিডর ধরে নিজের কেবিনে।
ঠিক ১৫ মিনিট পর ঘুমন্ত মেয়েকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তীব্র আর রোজের দিকে।রোজের জামা চেঞ্জ করে দিয়েছে তীব্র। এলোমেলো রোজকে সুন্দর পরিপাটি করে খাইয়ে ঘুম দিয়েছে।নিজেও চেঞ্জ করে পরিপাটি হয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ আগের বিধ্বস্ত তীব্র আর এখনকার তীব্রর মাঝে তফাৎ বিদ্যামান।
তীব্র নীরের কাছে রোজ কে দিয়ে ডক্টরস চেঞ্জিং রুমে ঢুকল।একটু পর অপারেশনর পোশাক পড়ে বেরিয়ে এসে দরজার বাইরে থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে ডোর কাডে নিজের কাড রাখতেই দরজা খুলে গেল। আর তীব্র ও রুমে ঢুকে গেল।এদিকে বাইরে সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তীব্রর আচরণে।

আমির তখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বন্ধ দরজার দিকে। সে ভেবেছিল তীব্র হাইপার হবে। বিধ্বস্ত তীব্রকে দেখে আমির প্রথমে তো ভয় পেয়েছিল।আমির মনে হচ্ছে তার রিদির থেকে তীব্রর রাগের টেনশন বেশি হচ্ছে।এই ছেলে আর কি করতে বাদ রেখেছে।
তীব্র ঢোকার ঠিক ১ঘন্টা পর আপারেশন লাইট অফ হয়।এতো বেশি সময় লাগায় সবার মনে আতঙ্ক।লাইট অফ হতেই সবাই দ্রুত দরজার সামনে দাঁড়ায়।আমিরের রিতীমত টেনশনে পা হাত কাঁপছে। আল্লাহ কাছে এতক্ষণে একটা দোয়া করেছে রিদি সুস্থ থাকুক। রোজ, তীব্রর জন্যই যেন রিদি কে ফিরিয়ে দেয়। নয়তো সবটা শেষ হয়ে যাবে।রিদি ছাড়া দুইটা মানুষ কে বাচিয়ে রাখা পসিবল হবে না।

আমিরের ভাবনার মাঝেই ধীর পায়ে বের হয় তীব্র।মাস্ক পড়া গম্ভীর চোখ জোড়া দেখে আমির ভীত হয়।
কেউ তীব্র কে আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস করছে না।সবাই অপেক্ষা করছে তীব্রর বলার। কিন্তু তীব্র কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ কদম ফেলে এগিয়ে গেল তার রুমের দিকে। সবার মনে আতঙ্ক।ঠিক তার কয়েকমিনিট পরেই বের হয় ডঃ মাহমুদ।এখন সবার দৃষ্টি তার দিকে।খারাপ কিছু শোনার ভয়ে কেউ আগ বাড়িয়ে জিঙ্গেস করছে না কিছু।

ডঃ আশিক মাহমুদ মাস্ক খুলে বিস্তর হেসে বলল,
রিদি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার!
আশিকের কথায় সবাই যেন প্রাণ ফিরে পেল। বিশেষ করে আমির।
এতোক্ষণ লাগলো যে?????
ডঃ মাহমুদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
আসলে গুলিটা হাড়ের এমন জায়গায় আটকে ছিল যে বের করা কঠিন হয়ে পড়ছিল।এদিকে রিদির নিশ্বাস ও ধীর গতিতে চলছিল।আমরা তো আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।কারন রিদির হার্টবিট দেখা যাচ্ছিল না। তখনি হুট করেই তীব্র এসে হাজির হলো।এরপর শক দেয়া হল। কিন্তু কাজ হলো না।আমি তো ভয়ে পুরা জমে গেছিলাম। কিন্তু তীব্র হুট করেই রিদি মুখের মধ্যে নিশ্বাস দিয়ে আবারো শক দিয়েই রিদির হার্টবিট দেখা গেল।
আজ পর্যন্ত তীব্রর হাত কখনো কোন অপারেশন করতে কাপে নি। কিন্তু আজ আমি দেখেছি মাস্কের আড়ালে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি আর কম্পিত হাত। এমন ও কখনো দেখবো ভাবি নি।এরপর তীব্র ই গুলিটা বের করে। আর আপনাদের দোয়ায় এখন রিদি শঙ্কামুক্ত।

আমির দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসল। আল্লাহ কাছে কোটি কোটি ধন্যবাদ দিয়ে হাঁটা ধরল তীব্রর রুমের দিকে।তীব্র একরোখা, ভয়ানক জেদি,রাগী একজন মানুষ।সহজে ভেঙে পড়ে না তীব্র।কঠিন থেকেও কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে স্বাভাবিক রাখে।তবে আজ মনে হল তীব্র স্বাভাবিক নেই। তীর কে বলে আমির তীব্রর রুমে গেল। চেয়ারে শরীর এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে তীব্র। একদম নিশ্চুপ নিরবতা পালন করছে কেবিনে।ছেলেকে দেখে ভীষণ ক্লান্ত মনে হলো আমিরের। আমির দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে তীব্রর মাথায় হাত রাখতেই তীব্র ঝট করে জরিয়ে ধরলো বাবা কে।আমির হতবাক, হতভম্ব বিষ্ময় নিয়ে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। লাস্ট কবে!! লাস্ট কবে তীব্র এভাবে তাকে জরিয়ে ধরেছিল মনে পড়ছে না।তীর বাবা ভক্ত হলেও তীব্র ছিল মায়ের ন্যাওটা।মাকেই বেশি ভালোবাসত।হুট করে তীব্রর এমন জরিয়ে ধরায় মনটা প্রফুল্ল হলো আমিরের।রিদি ওর জীবনে না এলে কতোকিছুই কখনো হতো না।
আমির আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে তীব্রর মাথায় হাত রাখতেই তীব্র বাচ্চাদের মতো করে বলে,

আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম বাবা! ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম!যখন ওর হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছিল না।আমার মনে হচ্ছিল আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।আমি ভয় পেয়েছিলাম!!
আমিরের চোখ ছলছল করলেও মুখে হাসি ফুটে উঠল।তীব্র ছোট বেলায় ও তার কাছে কখনো এমন ভাবে বলেনি।আমির ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ,
আল্লাহ মাঝে মাঝে আমাদের পরিক্ষা করে বাবা।তাই ভেঙে পড়তে নেই।

রিদির ঙ্গান ফিরেছে আরো ৪ঘন্টা পরে। শরীর নড়াতেই ব্যাথায় শরীর টনটন করে উঠলো। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।পিটপিট করে চোখ খুলে প্রথমেই নজরে আসল মায়াময়ী একটা চেহেরা। উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তাকে।রিদিকে তাকাতে দেখেই দিয়া জোরেই ডাকল ডক্টর বলে।রিদির মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে সচল হতেই মনে পড়ল তখনকার ঘটনা।দিয়া ফিরে এসেই মেয়ের মুখে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিল।রিদি ধীর কন্ঠে বলল,
আম্মু!!! রো জ!
দিয়া অবাক হলেও মুচকি হেসে বলল,
বাবার কোলে খাচ্ছে!
রোজ ঠিক আছে??
দিয়া আবারো একই ভঙ্গিতে বলল,

হ্যাঁ!রোজ একদম ঠিক আছে।তুই ঠিক আছিস?বেশি ব্যাথা করছে?
তোমরা সবাই আছো না! কিছু….
অর্ধেক কথার মাঝেই প্রবেশ করে আশিক।রিদিকে চেক করে স্যালাইন এ ওষুধ পুশ করে বেশ বেশ কিছুক্ষণ হালচাল জেনে বেরিয়ে যায়।
রিদি ব্যস্ত ভঙ্গিতে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। তীব্র কেন আসছে না।দিয়া মেয়ের ব্যস্ত ভঙ্গি দেখে মৃদু হাসল।রিদির জীবনের প্রতিটা ধাপ সম্পর্কে জেনেছে দিয়া।ছোট থেকে বড় হওয়া ,আমেনার মানসিক অত্যাচার,তীব্রর সাথে দেখা হওয়া,তীব্রর বিহেভিয়ার, আজানা মজনুর সাথে বিয়ে,বিয়ের পর সংসার, পড়াশুনা,তীব্রর সত্য জানা,জেনে মেনে নেওয়া,প্রথম বাচ্চা নষ্ট হওয়া।এরপর রোজ কে কিডন্যাপ করে তীব্র-রিদির বিচ্ছেদ,রোজ কে ফিরে পাওয়া,এক হওয়া, বাবার সত্য জানা আর আজ মায়ের সত্য জানা।

দিয়া যতটুকু মেয়েকে বুঝেছে।এখন রিদির জীবনের প্রতি মূহুর্ত জুরে রয়েছে তীব্র।আর তীব্র তার কথা তো না বললেই না।দিয়া কখনো ভাবে নি রিদিকে কেউ এতোটা এতোটা ভালোবাসতে পারে।দিয়া বিশ্বের সবখানে খুঁজলেও তীব্রর মতো মানুষ পাবে না। তীব্র চৌধুরী।নামের মতোই তীব্র তার ভালবাসা। এমন একটা তীব্র রিদির জীবনে আছে এটা জানার পর মা হিসেবে দিয়া নিশ্চিত। দিয়ার আজ আফসোস হল না।বরং রিদিকে সবচেয়ে সুখী মানুষ হিসেবে দেখছে সে। দিয়া রিদির মাথায় আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,

আপনাতেই আমি পর্ব ৮০

আমি পাঠাচ্ছি তীব্র কে!!
রিদি দিয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হল।দিয়া কিভাবে তার মনের কথা বুঝল?
দিয়া রিদিকে এভাবে অবাক হতে দেখে মুচকি হেসে বলল,
আমি মা তাই সব কথা বুঝি।তুই চিন্তা করিস না।আমি তীব্র কে আসতে বলছি।তবে যাই বল! মেয়ে তোর বড্ড জেদি!বাবা ছাড়া কারো কাছে থাকছে না।আর একটু পর পর মা মা করছে।রোজের মা কথাটা একদম স্পষ্ট।
রিদি মৃদু হাসলো।কারন এখনও তার শরীরে যথেষ্ট ব্যাথা করছে। শরীর অসুস্থ থাকলেও মনে তার দুঃখের লেস মাএ নেই।

আপনাতেই আমি পর্ব ৮২