আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১১

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১১
ইশিকা ইসলাম ইশা

তীব্র চমকালো,থমকালো।কয়েক পা পিছিয়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। তীব্রর অবাক হওয়ার মাঝেই ভেসে এলো কারো মৃদু কন্ঠস্বর,
“রাক্ষস মশাই আমাকে মারবেন না প্লিজ!ওরা আজ অনেক মেরেছে! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! প্লিজ আমাকে আর মারবেন না”
কথাটা বলেই রিদি ঢলে পড়ল তীব্রর বুকে। তীব্র বিষ্ময় হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রিদির দিকে।ঢলে পড়া রিদি কে বুকের মাঝে চেপে ধরতেই হাতে লাগল চিপচিপা ভেজা কিছু। তীব্র হাতটা সামনে আনতেই আবছা আলোয় রক্ত চিনতে ভুল হলো না।
কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক থেমে গেলেও পরক্ষণেই রিদিকে কোলে তুলে নিল তীব্র। অদ্ভুত!! তার শরীর ভারি লাগছে। নিঃশ্বাস কেমন ভারি হয়ে আসছে। কষ্ট হচ্ছে দম নিতে।৪৫ কেজির শরীরটা কোলে নিতেই মনে হচ্ছে দম ফুরিয়ে আসছে। যেখানে তার মতো বডিবিল্ডার ৮০কেজির মানুষ উঠানোর ক্ষমতা রাখে।

বর্তমানে ঘড়িতে বাজে রাত ২:৩০। তীব্র নিবাসের খোলা বেলকনিতে বসে আছে তীব্র। দৃষ্টি তার সামনে চৌধুরী মহলের একটা নির্দিষ্ট রুমের বারান্দার দিকে! সেখানে থেকে মৃদু আলো দেখা যাচ্ছে। তীব্র এক ধ্যানে অনেকক্ষণ ধরে সেদিকে তাকিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনার পর্যায় শেষ করে চুপচাপ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। দুহাত পকেটে রেখে টেবিল থেকে ফোন নিয়ে ডায়াল করল কোনো নাম্বারে।
রিসিভ হতেই তীব্র খুব ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
আজ পার্টির ফুল ভিডিও ফুটেজ চায় আমার।রাইট নাও!!
কথাটুকু শেষ করেই ফোনটা কেটে তীব্র শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো সেই বেলকনির দিকে।চোখ বন্ধ করতেই কানে বাজতে লাগলো রিদির বলা কথা।
“”রাক্ষস মশাই আমাকে মারবেন না প্লিজ!ওরা আজ অনেক মেরেছে! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! প্লিজ আমাকে আর মারবেন না”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তীব্র চট করে চোখ খুলে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।লাবিব ঘুমে কিছুটা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিন্তু বসকে আসতে দেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বস তাকে হুটহাট কার্যক্রমেই মেরে ফেলবে একদিন।এই যে কথা নেই বার্তা নেই ফোন করেই বলল ভিডিও ফুটেজ চাই!ভ্যাগিস তার কাছে আজকের রেকর্ডিং ছিল না হয় এতো রাতে অবার দৌড়াদৌড়ি করা লাগত।তীব্র কে সে রোবট ভাবলেও সে তো আর রোবট না তার তো ঘুম প্রয়োজন।সে তো আর বসের মতো না রাতেও না ঘুমিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসে থাকবে।আবার সকালে দিব্যি তার কার্যক্রম চলতে থাকবে।মাঝে মাঝে মনে হয় বসের মন নাই তো নাই এখন অবার ক্লান্তি ও দেখছে নাই!পারে কিভাবে বাপরে!!তীব্রর সাথে না থাকলে লাবিব কখনো বুঝত না এমন মানুষ ও দুনিয়াই আছে।যার রাগ ঠিক এমন যেন ঠান্ডা মাথায় খুন করে পুলিশকে সেই খুনের আলাদা বিরবন দেই।যেন সে কিছুই করেনি। নিতান্তই সাধু বাচ্চা। চেহেরায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই সে এমন কিছু করতে পারে।আর যখন আরকি বোম ফাটা রাগ হয় তখন ফুঁসতে ফুঁসতে একে একে সব ভাংচুর করা।লাবিব সব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

লাবিবের তীব্রকে নিয়ে ভাবনার মাঝেই তীব্র গাড়ির দিকে না গিয়ে নিশ্চল পায়ে হেঁটে গেলে চৌধুরী বাড়ির দিকে। লাবিব হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে। তীব্র কি ঘুমের ঘোরে হাঁটছে নাকি! চৌধুরী বাড়ির দিকে যাচ্ছে কেন?
এদিকে তীব্র চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজাসুজি হেটে এলো রিদির রুমের সামনে। অনুমতি বিহীন রুমে ঢুকতেই চোখ গেল বিছানায় শায়িত রিদির দিকে।হাতে, পায়ে ব্যান্ডেজ করা রিদিকে দেখে এগিয়ে গেল সেদিকে। কপালে সাদা ব্যান্ডেজ জরানো শ্যামরাঙা মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তীব্র এমন গভীর মনোযোগ দিয়ে রিদিকে দেখছে মনে হচ্ছে যেন রিদির প্রতিটি নিশ্বাস গুনছে। রিদির নিস্তব্ধ প্রতিটি নিশ্বাসের নরচর যেন তীব্রর খরখরে হৃদয় শীতল করছে।আর সেই শীতলতা অনূভব করে হয়তো আরো কিছুক্ষণ এই শীতল মূহূর্তটা অনুভব করতে চাইল তীব্র তাইতো নরচর বিহীন একধ্যানে তাকিয়ে দেখতে লাগলো মায়াবী মুখটা।এই মেয়েটাই নাকি আজ তাকে নিজ থেকে এসে জরিয়ে ধরেছে।ভেবেই ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি খেলে গেল।ইসস !কি মারাত্মক নজরকাড়া হাসি!এই হাসি দেখলে মেয়েরা তার প্রতি আকর্ষিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই!

এদিকে লাবিব ঘুম ঘুম চোখে গাড়িতে এসে বসেছে।এই বসের মনোভাব বুঝা তার কাম্য নয়!কখন কি করতে মনে চায় আল্লাহ জানে! আজব এক কনফিউজড মানুষ বানাইছে আল্লাহ!! লাবিব এর ঘুম আসছে তাই এসে গাড়িতে বসেছে।ঘুমে এখানো তার চোখ নিভু নিভু করছে।
কয়েক মিনিট পর হাম তুলেছে ।একটু পর নিভু নিভু চোখে সামনে কিছু দেখতেই ঘুম উবে গেল লাবিবের।চট করেই উঠতে গিয়ে মাথাটা ঠাস করে লাগল গাড়ির সাথে। উত্তেজনায় খেয়াল নেই সে কোথায়!!
গাড়ি থেকে নেমে শকিং মুখে তাজ্জব হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। তীব্র লাবিব কে হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
গাড়ির দরজা খোল!!!
লাবিব হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে। অবুঝ হয়ে বলল,
জি!!!
তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,
গাড়ির দরজা খুল ইডিয়ট!

লাবিব হচকচিয়ে দরজা খুলতেই তীব্র গিয়ে বসল পিছনে। বিশালদেহী পুরুষের কোলে গুটিয়ে থাকা ঘুমন্ত রিদির দিকে তাকিয়ে চরম অবাক হয়ে তাকালো লাবিব।মনে পড়ল প্রথম দিনের সেই দৃশ্য।ঘৃনিত বস্তুর মতো ছুড়ে ফেলে রেখেছিল এই মেয়েটাকেই ।রিদির বিধ্বস্ত অবস্থা দেখেও যার মনে এতটুকু মায়া হয়নি তাকেই এখন খুব যত্নে নিজের কোলে আগলে রেখেছে তীব্র।এই দৃশ্য এই জীবনে দেখবে কখনো আশা করেনি।বসের এমন পরিবর্তন তাকে ভাবাচ্ছে।বস কি করতে চাইছে??ঠান্ডা মাথায় হুট করেই যে জীবন নিয়ে নেই সে এখন কি ঠান্ডা মাথায় রিদিকে শেষ করতে চাইছে?মাঝে মাঝে তীব্রকে তার সাইকো কিলার টাইপ লাগে!!তবে কি এই নিরীহ মেয়েটাকে মারবে!!এতো ছোট্ট মায়াবী একটা মেয়ে। তীব্র কি করতে চাইছে!!

তীব্র লাবিবকে এভাবে তাকাতে দেখে আবারো বিরক্ত কন্ঠে বলল,
গাড়ি স্টাট দেওয়ার জন্য আলাদা নিমন্ত্রণ করতে হবে?
লাবিব তবুও গাড়ি স্টাট না দিয়ে সাহস করে শুকনো ঢোক গিলে বলল,
বস ভাবি কে দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থ!আজ যা হলো তাতে!মানে অসুস্থ মানুষ মেরে আর কি মজা তাই না!!ছেড়ে দিন বস!! সুস্থ হলে তখন মেরে দিয়েন! অসুস্থ অবস্থায় আপনি তো কাউকে মারেন না বস!!
তীব্র শীতল কন্ঠে অবুঝ সুরে বলল,
মারব কেন?একটাই বৌ আমার!
লাবিব তীব্রর এমন শীতল কথা না বুঝে চমকে উঠে ড্যাবড্যাব করে চাইল তীব্রর দিকে! তীব্র এবার কিছুটা রাগী গলায় বলল,
আর একটা প্রশ্ন করবি তো….

তো পর্যন্ত যেতেই লাবিব গাড়িতে বসে গাড়ি স্টাট দেয়!রিদির জন্য তার বিশাল মায়া হচ্ছে । ছোট আদুরে বাচ্চা লাগে তার রিদিকে।রিদির সমবয়সী তার একটা বোন আছে।আজ বসের মতিগতি তার ঠিক লাগছে না।রাগ কখন করে? শান্ত কখন থাকে?বুঝা মুশকিল!এখনো বসের মতিগতি বুঝতে পারছে না সে। তীব্র করতে কি চাইছে? বাচ্চা মেয়েটাকে মেরে ফেলবে নাকি!বেচারি এমনিতেই ভয় পায় তাকে!এক মিনিট!এক মিনিট!সে তো ডিভোর্স এর সব কাগজ ও জমা করে দিয়েছে।আর তো কোন ভুল করেনি।তাহলে এইই বস কি করতে চাইছে পিচ্চি মেয়েটার সাথে। আল্লাহ তুমি রক্ষা করো আজ! তীব্র রিদির জন্য মনে মনে দোয়া পড়ে নিল বলা তো যাই না তীব্রর মনোভাব!
এদিকে তীব্র লাবিব কে এমন উসখুস করতে দেখে বলল,
কি বলেছি হয়তো বুঝিস নি!একটাই বৌ আমার! রাস্তা দেখে ভালোভাবে গাড়ি চালা! আবারো বলছি,রাস্তা খারাপ দেখে চালা!!

এদিকে লাবিব তীব্রর কথায় ঙ্গান হারাতে হারাতে হারায় নি। তীব্রকে কি ভুতে ধরেছে নাকি! দু দুবার উচ্চারণ করল সে” আমার বৌ”।লাবিবের মাথা ঘুরাতে লাগল!!এই বসের হলো টা কি!!
লাবিবের অবস্থা দেখেও সেদিকে কোন ধ্যান নেই তীব্রর।তীব্র কথাটা শেষ করে সোজা তাকালো তার বুকে ঘুমন্ত শ্যামরানীর দিকে!একহাতে তার বুকের মাঝে শার্ট ধরে ঠিক বুক বরাবর মাথা রেখে তীব্রর কোলে নিশ্চুপ হয়ে ঘুমাচ্ছে।অথচ জেগে থাকলে তীব্র নাম শুনলেই কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়।রাতে দেখেছিল তার উপস্থিতিতে রিদির কম্পিত শরীর।মাথা থুতনিতে ঠেকিয়ে রেখে শরীরটা মৃদু কাপছিলো।তখন ইচ্ছে করছিল টেনে দুটা থাপ্পর বসাতে!সে কি বাঘ,ভাল্লুক নাকি আজব!!এতো ভয় পাওয়ায় কি আছে?অন্যরা তাকে ভয় পেলে তার ভালো লাগে ঠিক কিন্তু এই মেয়েটা!এই মেয়েটা তাকে ভয় পেলে তার রাগ হয়! অদ্ভুত!!

রিদির ঘুম ভাঙল কারো অতনাদ শুনে।হুট করেই এমন বিকট শব্দে ঘুম উবে যায় রিদির। পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে অচেনা জায়গায় দেখে ভয়ে শিউরে উঠলো।ও তো চৌধুরী বাড়িতে….….
রিদির নিয়া আর শোয়েবের করা সকল ঘটনা মনে পড়তেই রিদির পিলে চমকে উঠে।নিজের গায়ে অন্য পোশাক দেখে ভয়ে আরো গুটিয়ে বসল।চোখে এসে জমা বাঁধল অশ্রুকনা।তার মনে আছে সে নিভু নিভু চোখে ঐ রাক্ষসের দিকে এগিয়ে গেছিল।কেন যেন তখন ঐ রাক্ষস কে নিরাপদ মনে হয়েছিল।তবে কি সেই রাক্ষস তাকে না বাঁচিয়ে এদের হাতে তুলে দিয়েছে।কথাটা ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠলো রিদি।ভয় হচ্ছে তার! ভীষণ ভয় হচ্ছে!সব শেষে এই সন্মান টুকুই নিয়েই তো সে বেঁচে আছে!

রিদির হুট করেই মনে হল, তাকে বাঁচতে হবে!এখান থেকে পালাতে হবে। রিদি মনোবল শক্ত করে দূবল শরীর নিয়ে দু কদম এগিয়ে যেতেই আবারো ভেসে এলো সেই চিৎকার।রিদি চমকালো ভয়ে কেঁপে উঠল তার দূর্বল শরীর। তবুও ছেচরিয়ে ছেচরিয়ে কয়েক কদম যেতেই পায়ের ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো।বেশি জোর দেওয়াই পায়ের ক্ষত থেকে রক্ত গড়াতে লাগলো।রিদি পা চেপে ধরে বসে পড়ল।বার বার দোয়া করতে লাগলো আল্লাহর কাছে। হঠাৎ ই কারো পদধ্বনি শুনতে পেয়ে ভয় আরো গাঢ় হলো রিদির। ভয় আর ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল আরো!!

তীব্র কিছুটা চিন্তিত মুখে রিদিকে রাখা কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল।পিছে পিছে লাবিব ও আসছে।তবে চোখ মুখে অবাকতার ছড়াছড়ি।যেন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটেছে তার সাথে। তীব্রর চিন্তিত মুখ দেখে মূলত তার চিন্তিত হওয়ার কথা কিন্তু লাবিব তীব্রর চিন্তিত মুখ দেখে মুচকি হাসছে।সে কখনো ভাবে নি তীব্র কে সে চিন্তিত মুখে দেখবে ।উহু!!না না!!কারো সামনে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত মুখে দেখতে হবে!বাপরে বাপ!!একেই হয়তো বলে পাওয়ার অফ ওমেন!
লাবিবের ভাবনার মাঝেই তীব্র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে।লাবিব এতোই ভাবনায় বিভোর যে তীব্র যে থেমে গেছে এটা মূলত বুঝতে পারেনি। ফলস্বরূপ তীব্রর পিঠে ধাক্কা খেতেই লাবিব হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে। তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,
চোখ কোথায় রাখিস!!
লাবিব আমতা আমতা করে বলে,
সর রি বস!!

তীব্র ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।একটা মেয়ের সামনে যেতে তাকে এতো ভাবা লাগছে এসব ভাবা যায়!!!! তীব্র রুমের দরজা খুলে এক পা ভেতরে রাখতেই হুট করেই মোটা কিছু তার বুকের পাশে আঘাত কর। সম্ভবত ফুলদানি!!পরের বার আঘাত করার আগেই তীব্র হাত পেঁচিয়ে উল্টো ঘুরিয়ে অন্যহাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে আবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনতেই নজরে এলো রিদির ভয়ার্ত রাগী দৃষ্টি।আর রিদির দৃষ্টি পড়ল তীব্রর শান্ত নীলাভ চোখজোড়ায়।সে থমকালো!!ভয় ভুলে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো সুন্দর পুরুষটাকে।যদিও সে জানে না মানুষটা কে!সে শুধু আটকে গেছে সুন্দর পুরুষের নীলাভ চোখজোড়ায়।
তীব্রর দৃষ্টি শান্ত! রিদির ভয়ার্ত ,রাগী দৃষ্টি থেমে এখন চোখে শুধু বিস্ময় ।না আছে ভয়,না আছে রাগ,বা অন্যকিছু।রিদি অবাক হয়ে দেখছে তীব্রর নীলাভ চোখজোড়া।আগে কখনো এমন চোখ সে দেখেনি।এতো সুন্দর!!!এতো সুন্দর! ধবধবে সাদা দাগহীন মুখটা খুবই এক্টাকটিভ।জোড়া ভু!!সরু নাক!!মেয়েদের মতো ঘন সুন্দর পাপরি!! সবচেয়ে অবাক হলো তীব্রর লালচে ঠোঁট দেখে।কে এই মানুষটি? এটা রিদি না জানলেও তার রুপে মুগ্ধ হলো রিদি। তবে কারো সাথে তো মিল খুজে পেল এই চেহারার। কিন্তু কার???

রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্রর লালচে ঠোঁটজোড়া নড়েচড়ে কথা বলল,
আই সয়্যার!!এবার যদি ঙ্গান হারাবেন তো!!!
এই কন্ঠ!!এই কন্ঠ!!রিদির কন্ঠ চিনতে ভুল হলো না। এতোক্ষণে রিদির চোখে মুগ্ধতা দেখলেও মূহুর্তেই তা রূপ নিল আতংকে!রিদির চোখে আতংক দেখে তীব্রর হাতের বাঁধন একটু দৃঢ় হলো!! তীব্র অনূভব করল রিদির কম্পন। মূহুর্তের মধ্যেই তীব্রর শান্ত দৃষ্টির বদল ঘটল।চোখ মুখে ফুটে উঠল রাগের আভাস।
এ্যাই শুনুন!! খবরদার আপনি সেন্সলেস হবেন না!সেন্সলেস হলে নর্দমায় রেখে আসব! আপনার সেন্সলেস হওয়াটা আমার পছন্দ না!

তীব্রর এতো ভালো কথা রিদির হজম হলো না। ঠিক সেদিন রাতের মতো তীব্র কথাগুলো শুনে রিদির কম্পন বাড়ল কয়েকগুণ!রিদি তীব্র ভয়ে তটস্থ হয়ে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হলো না। অতিরিক্ত ভয়, তীব্র নামক আতঙ্ক আর শারীরিক দুর্বলতা মিলিয়ে আবারো ঙ্গান হারালো।
তীব্রর মেজাজ বিগড়ে গেল।রাগে এক ধাক্কায় রিদির ঙ্গানহীন শরীরটা ফেলে দিল তুলতুলে বিছানায়।সাদা শার্ট ভেদ করে আসা রক্তকনা তখন তীব্রর বুকের একপাশে থেকে ঝরতে থাকল। তীব্রর সেদিকে খেয়াল নাই। তীব্রর রাগান্বিত চোখজোড়া তখনো রিদির ঙ্গানহীন শরীরের দিকে। তবে চোখ জোড়া আটকে গেল রিদির পায়ের কাছে সাদা সালোয়ার ভেদ করে আসা রক্তকনার দিকে। তীব্র যতটা রাগান্বিত ছিল এখন রক্ত দেখে আরো রেগে গেল।এই মেয়েকে পারলে সে এখুনি কাঁচা খেয়েই ফেলত!এতো কেয়ারলেস এই মেয়ে!! তীব্র হতদন্ত পায়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে রিদির প্লাজু উঠিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। ঙ্গানহীন শরীরটা তুলে নিল কোলে। মুখটার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখল কিছুক্ষণ।এরপর!!এরপর রুম থেকে বের হতেই দেখল লাবিব বাইরে পায়চারি করছে।রিদিকে ঙ্গানহীন দেখে লাবিব হচকচিয়ে তাকাল।

বস ভাবি!!ভাবির কি ঙ্গান ফিরেনি!
তীব্র কন্ঠে একরাশ বিরক্তি ঢেলে বলল,
আমাকে দেখে ঙ্গান হারিয়েছে!!
লাবিব চোখ বড় বড় করে আহাম্মক এর মতো তাকাল। তবে কিছুই বলল না। কিছুদূর হেটে যেতেই লাবিব আবারো বলল,
বস ওদের কে কি করব??
তীব্র রিদির নিথর দেহটা আগলে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকালো শোয়েব আর নিয়ার দিকে।নিয়া কয়েকটা থাপ্পরে বেহুঁশ হয়ে আছে।আর শোয়েবের দুহাতের তালুতে দুইটা চাকু গেঁথে দেওয়া হয়েছে খুব দুদক্ষ হাতে করা কাজটি তীব্রর।সেই হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পুরো টেবিল লাল রং এর রক্তে ছেয়ে আছে। তীব্র রিদিকে কোলে করে এগিয়ে আসল।
শোয়েব নিভু নিভু চোখে দেখতে পেল রিদিকে তীব্রর কোলে।যদিও তার এই সময় আল্লাহর নাম নেওয়া উচিত তার। তবুও সে সব ভুলে গেল। ব্যাথা ভুলেএখন তার চোখে বিস্ময়!!রিদি তীব্রর বুকে!!তবে কি রিদির জন্যই!!রিদি আর তীব্র চৌধুরী!!ব্যাথায় কাতর দেহটা এইটুকু ভেবে আতংকিত হল!
তীব্র রিদিকে কোলে করেই বসল ওদের সামনের চেয়ারে। ছোট্ট বাচ্চাটির মতো বুকে চেপে ধরে রাখল রিদিকে।ততক্ষণে দুজন লোক নিয়ার ঙ্গান ফিরাতে সক্ষম হয়েছে। শোয়েব নিভু নিভু চোখে রিদির দিকে তাকাতেই তীব্র রিদির মুখটা নিজের বুকে চেপে ধরে আড়াল করে ঠাণ্ডা কন্ঠে বলে,

এদিকে তাকাস কেন?? যতটুকু হায়াত আছে ওটাও থাকবে না!!
শোয়েব ভোরকে গেল সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিথর হয়ে পড়ে রইলো। তীব্র এবার তাকালো নিয়ার দিকে। বিরক্তকর কন্ঠে বলল,
মেয়ে মানুষ আমার কোন কালেই পছন্দ না।তবে এটাকে আমার ভাল্লাগে!দেখ!! কি সুন্দর করে বুকে মিশে আছে।কলিজা একদম ঠান্ডা করে দিচ্ছে এভাবে থেকে। কথাটা বলেই তীব্র মুখ নিচু করে বুকের উপর ঘুমন্ত মায়াবী পরিকে দেখল।ইসস কি মায়া!!
নিয়া তীব্রর যেন আকাশ থেকে পড়ল।বিশ্বাস হল না। অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখল রিদিকে আদুরে বাচ্চার মতো কোলে তুলে বসে আছে তীব্র!
তীব্র ফ্রেশ মুডে তাকাল নিয়ার অবিশ্বাস্য মুখের দিকে,খুব শান্ত আর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
ঐ যে বললাম মেয়ে মানুষ আমার কোন কালেই পছন্দ না তবে এইটারে কোন মতে একটু পছন্দ হয়েছে!!যেই আমার পছন্দ হয়েছে ওমনি তোমরা এর দিকে বাম হাত বাড়িয়েছে!! কেন? বিষয়টি আমার একদম পছন্দ হয়নি! আর যেটা আমার পছন্দ না তার অস্তিত্ব ও আমি আমার আশেপাশে রাখি না।
নিয়া চমকে উঠে।ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায়।

তীব্র আবারো বলল,
সে যাই হোক।বৌ কে নিয়ে আসলাম তোদের দু চারটা থাপ্পড় মারার জন্য। এতো খাতির যন্ত করলা তোমরা আমার বৌয়ের। কিন্তু এখন দেখছি এই বৌ বর কে দেখেই অঙ্গান।কি আর মারবে!!আমি হতাশ!!তবে চিন্তা করো না আমি আছি না!!
তীব্রর হেয়ালি করা দেখ নিয়ার জান যাই যাই অবস্থা।আকুতি মিনতি করতে চাইল কিন্তু ভয়ে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হল না।আড় চোখ একবার শোয়েবের দিকে তাকালো।রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে শোয়েবের হাত!যা দেখে ভয়ে আরো মিইয়ে গেল।
তীব্র রিদিকে কোলে তুলে লাবিব কে বলল,
এই দুটার ব্যবস্থা করে ফিরবি!!আমি বৌ নিয়ে বাসায় যাচ্ছি।
লাবিব বাঁকা হাসল,
ওকে বসস!!
তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১০

ছ্য্য্য্যা বালের জীবন!!একটা বৌ ভাগ্যে জুটল মাইরি বর দেখেই ঙ্গান হারায়!!
লাবিব হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।বেচারা একদিনে যে তীব্রর আর কতো রুপ দেখবে ।বৌ,বৌ এতোবার করছে…যেন তীব্র বৌ পাগলা।আদো কি তাই!!নাকি এসবের আড়ালে চলছে অন্য কোন খেলা।

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১২