আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১২
ইশিকা ইসলাম ইশা
চারদিকে তখন ফজরের আজান দিয়েছে।নাজমা চৌধুরী নামাজ সেরে রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলা উঠে আসে। দোতলায় লম্বা করিডরে কারো পায়ের শব্দে গলায় ঝুলিয়ে রাখা চশমা পড়তে পড়তে সামনে তাকিয়ে দেখল কেউ নাই।নাজমা চৌধুরী মনের ভুল ভেবে লম্বা করিডর ধরে এগিয়ে গেল উদ্দেশ্য রিদির রুম।
রাতে পড়ে গিয়ে কি আঘাত টাই না পেয়েছিল মেয়েটা।ভ্যাগিস লাবিব দেখেছিল!রাতে যখন নাজমা চৌধুরী রিদিকে নিজের আশেপাশে পেলেন না।তিনি ভাবলেন তীব্র কে দেখে হয়তো রুমে চলে গেছে। কিন্তু খানিক পর রুমে গিয়ে রিদিকে না পেয়ে খুঁজতে নিচে নামতেই সোফায় রক্তাক্ত রিদিকে দেখে অনেক ঘাবরে গেছিলেন তিনি।পাশে দাঁড়ানো ছিল লাবিব সেই ই বলল রিদি পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে আর ঙ্গান হারিয়েছে।শরীর থেকে অনেকটা রক্তও বের হয়েছে রিদির।মেয়েটা যে কেন তার সাথে সাথে থাকে না। ঙ্গান ফিরুক আচ্ছা মতো বকবো আজ!!নাজমা চৌধুরী সাথে সাথে ডক্টর কে আসতে কল দেয়।
নাজমা চৌধুরী নিজের মনে কথাগুলো ভেবে রিদির রুমে ঢুকেই বিচলিত হয়ে উঠলেন।রিদিকে বিছানায় নেই । ওয়াস রুমে ঢুকে দেখলেন সেখানেও নেই। বেলকনিতেও নেই। কোথায় গেল মেয়েটা??নাজমা চৌধুরী রিদির রুম থেকে বের হয়ে সামনে তাকাতেই তীব্রর রুমের দরজা খোলা দেখে এগিয়ে গেল সেদিকে। তীব্রর রুমের দরজা কখনো খোলা থাকে না। কৌতূহল বশত রুমে ঢুকতেই নজরে আসল তীব্র। তীব্র কে দেখে নাজমা চৌধুরী তেমন একটা প্রশ্ন করলেন না। তীব্র কে প্রশ্ন করেও আজকাল কোন উত্তর পায় না।তবে রুপের সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলাটাও জরুরি।রূপ তীব্রর জন্য অপেক্ষা করছে ।মেয়েটার কথা ভেবেই নাজমা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তীব্রর সাথে কথা বলবেন।তবে এতো সকাল সকাল তিনি তীব্রর সাথে কোন তর্কে যেতে চাইছেন না।রুপ বা বিয়ে নিয়ে কোন আলোচনা করলেই তীব্র হয়তো নিশ্চুপ থাকবে নয়তো ইগনোর করবে।নাজমা চৌধুরী তীব্রর বিশাল বড় মাস্টার বেডরুমে কয়েক কদম এগিয়ে আসতেই থেমে যায়। তীব্র একটু ঝুকে যাওয়াই নজরে আসে রিদি কে।রিদিকে তীব্রর সাথে দেখে থেমে গেছে মূলত।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীব্র রিদির ললাটে গাঢ় চুমু একে উঠে দাঁড়াল।সামনে ঘুরে নাজমা চৌধুরীর বিস্ফোরিত মুখটা দেখেও বিচলিত হল না। বরং খুব স্বাভাবিক ভাবেই রিদির গায়ে কম্বল মুড়িয়ে দিতে দিতে বলল।
বৌটার বয়সটা কম!!সবেই ১৬ বছর ৯ মাস!সমস্যা নাই আমার এতেই চলবে!
নাজমা চৌধুরী বিষ্ময়ে হা হয়ে আছে!!তার বলার ভাষা হারিয়ে গেছে। সকাল সকাল তীব্রর দেওয়া চমক, তীব্রর আচরন, তার উপর ওর কথা!নাজমা চৌধুরী পুরাই স্তব্ধ হয়ে আছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না!সে কি এখুনি যা দেখল, যা শুনল তা কি সত্যি!!
অসম্ভব!!!
তীব্র কিঞ্চিত ভু উঁচিয়ে তাকালো দাদির দিকে। নাজমা চৌধুরী হুট করেই বাস্তবে ফিরে যেন।কিছুটা চেঁচিয়ে বলে,
এসব কি তীব্র?তুমি রিদিকে এখানে কেন এনেছো?কি করতে চাইছ তুমি মেয়েটার সাথে!! নাজমা চৌধুরী কন্ঠে ভয়।
বাসর!!!
নাজমা চৌধুরী তীব্রর সোজাসুজি কথায় তাজ্জব হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো। তীব্র দাদির মুখের দিকে চেয়ে বলল,
বিয়ে হয়েছে অনেক মাস হলো এবার ফুল সজ্জা সেরে ফেলা উচিত!! বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এতো দূরত্ব না থাকায় ভালো!!তাই না দাদি!!
তীব্রর কথায় নাজমা চৌধুরীর মাথা ঘুরাতে লাগল। হয়েছে কি এই ছেলের??নাজমা চৌধুরী নিজেকে সামলে গম্ভীর আর কড়া গলায় বলল ,
তোমার মনোভাব বুঝতে ব্যর্থ আমি তীব্র!!
তীব্র নাজমা চৌধুরীর থেকে দৃষ্টি স্থির দৃষ্টিতে তাকালো রিদির দিকে। ঘুমন্ত রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,
আমিও বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি!!
নাজমা চৌধুরী তীব্রর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে কিছু বুঝতে পারছে না তীব্রর মনোভাব। তীব্রর সবসময়ের শান্ত দৃষ্টি বোঝা তার ধারন ক্ষমতার বাইরে। তীব্র একটু চুপ থেকে বলল,
আমার বৌ লাগবে!বৌ চাই
নাজমা চৌধুরী হতভম্ব!কিংকতব্যতায় বিমুখ! তীব্র দাদির হতভম্ব হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষনেই তীব্র বাঁকা হাসল। নাজমা চৌধুরী বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,
তুমি মজা করছ তীব্র!!!
তোমার আমার সম্পর্ক মজা করার হলেও মুড এখন আমার সিরিয়াস!
নাজমা চৌধুরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
তবে কি এই সম্পর্ক তুমি মেনে নিচ্ছ!!
তীব্র তাৎক্ষণিক কিছু না বলে ঘাড় ঘুরিয়ে রিদিকে দেখল। পিটপিট করছে রিদির চোখের পাতা হয়তো ঙ্গান ফিরছে। তীব্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিদির দিকে। পিটপিট করতে থাকা কাঁপা কাঁপা ঘন পাপড়ি আলা চোখ গুলো দেখতে ভালো লাগছে তীব্রর। তীব্রর দেখার মাঝেই রিদি চোখ খুলে তাকালো।হালকা নড়েচড়ে পিটপিট করে আবারো তাকতেই নজরে আসল সুদর্শন চেহেরা। তীব্র কে সামনাসামনি এই প্রথম দেখল রিদি। তীব্র হা করে তাকিয়ে থাকার মতোই সুন্দর।কালো শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম খোলা তাতে পুরুষালী বুকের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। এলোমেলো চুল ছড়িয়ে পড়ে আছে কপাল বরাবর। শার্টের হাতা গুটানো তাই সাদা হাতে চকচক করছে কালো ব্যান্ডের ঘড়ি। একহাত পকেটে গুজে তার নিজস্ব স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছে।
রিদি প্রথমে সুদর্শন পুরুষকে চিনতে না পারলেও মস্তিষ্ক জোর দিতেই সব মনে পড়ল।সাথে সাথে চেহেরায় নেমে এলো কালো মেঘের ছায়া।মারের ভয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল ছোট্ট মুখটা।ইনিই তীব্র চৌধুরী?
যে স্বয়ং তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তীব্র রিদির বদলে যাওয়া ভয়ার্ত মুখটা আর কম্পিত শরীরটা বেশ কিছুক্ষণ দেখে বলল,
খবরদার এতো কাঁপা কাপি করবেন না আমার সামনে!!আপনার কাঁপা কাপি আমাকে উম্মাদ করছে।
ও কি কথা !!থামছেন না কেন??আপনি কি চাইছেন আমি কন্ট্রোললেস হয়ে যায়!!
রিদি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আছে তীব্রর দিকে তীব্রর কথা শুনলেও বুঝতে সময় লাগছে তার।
আপনি কি চাইছেন আমি আপনার সাথে বাসর টা সেরে ফেলি!!
এবার যেন রিদির টনক নড়ল।ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। চেষ্টা করেও নিজেকে সামলাতে না পেরে ভয়ে হু হু করে কেঁদে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
বিশ্বাস করুন!আ মি কাঁপতে চাইছি না!আমার ভয় করছে?আমাকে মারবেন না!
রিদির অবস্থা করুণ!এই কথাটুকু বলতেই হাঁপিয়ে উঠেছে।যেন বিশাল বড় রচনা বলে শেষ করল।
তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ এরপর শীতল কন্ঠে বলল,
বাসর বুঝেন ম্যাডাম!!!
এমন শীতল কন্ঠে কথাগুলো শুনে রিদির রুহ কেঁপে উঠলো। চট করেই তাকালো তীব্রর দিকে।তীব্রর চোখে গম্ভীর কিছু আছে।রিদি অস্বস্তি নিয়ে মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে বলল,
আমি দাদির কাছে যাব!!
তীব্র কুটিল হাসল!বৌয়ের এমন অবাকতা দেখে সে সিউর বৌ সব বুঝে। যাক ততোটাও অবুঝ নই।
নাজমা চৌধুরী চরম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মূলত তিনি এতটা অবাক কোনদিন হয়নি।তিনি তীব্রর এমন বিপরীত আচরণে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।রিদির কান্না দেখে ধ্যান ভাঙল তার।ছুটে এলো রিদির কাছে।দাদিকে পেয়ে রিদি হু হু করে কেঁদে উঠলো।
কাদিস না রিদি!!আমি আছি তো!!আমার সোনা বাচ্চা!!কাদিস না।
মেয়েটার সাথে এসব কি ধরনের কথা বলছ তুমি ন??
তীব্র ভাবলেশহীন ভাবে উওর করল,
বৌয়ের সাথে এসব কথা বলব না তো কার সাথে বলব!! তাছাড়া বেশি গভীরে তো যাই নি। বাসর নিয়ে আরো গভীর আলোচনা আছে!!তোমার শুনতে সমস্যা হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে রাখো। আগেই আলোচনা করে রাখি বৌ আমার যা নাজুক!! আমার ২৮ বছরের ভাজিনিটি বলে কথা!!সহ্য তো করতে হবে!!হাহ এই বৌ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি…..
নাজমা চৌধুরী থ!!! তীব্রর ভাবসাব এমন যেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় চিন্তা এটা!
এদিকে তীব্র বলেই রিদির কান্নারত মুখটা দেখল।দাদির কোমর পেঁচিয়ে ঝাপটে ধরে আছে আর ভ্যা ভ্যাঁ করে কাঁদছে !!হয়তো তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়বস্তু বুঝে নি!!হয়তো তীব্রর ভয়ে এতটা ভয়ার্ত যে শুনেই নি!!তীব্র হাসল!! বাঁকা হাসল!!ইসস এই হাসি যদি একবার রিদি দেখত!! নিশ্চিত এই সুদর্শন পুরুষের হাসিকে সবচেয়ে সুন্দর হাসি বলে আখ্যায়িত করত।তবে আফসোস বেচারি কেঁদেই কুল পায় না!!!তীব্র রিদির মায়া মায়া মুখটা দেখে চিন্তিত মুখে ধীর পায়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
বৌ আমার কিন্তু তোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।এটা আমার পছন্দ হচ্ছে না!!এমন আষ্টেপৃষ্ঠে তো আমাকে জরিয়ে ধরতে দেওয়া দরকার!! ভীষণ দরকার!!
নাজমা চৌধুরী হতভম্ব!!তবে মনে মনে তিনি আদরের নাতিকে অসভ্য বলতে ভুললেন না।
একদম দাদার মতোই হয়েছে!! লাগামহীন!!
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ১১
নাজমা চৌধুরী তীব্রর ব্যবহারে বেশ চিন্তিত হলেন।রিদি তীব্রর নাম শুনলেই যেখানে ভয়ে কাঁপতে থাকে সেখানে তীব্রর কথা বার্তা শুনে এইটুকু বুঝেছে তীব্র মজা করছে না। আবার রুপ!!মেয়েটা সেই ছোট থেকে ভালোবাসে তীব্র কে!! তার কাছে তিনজনেই তার খুব আদরের!! একটার জন্য অন্যটা কষ্ট পাক না
তা হতে দেওয়া যাবে না।তার রিদির সাথে কথা বলতে হবে।সে কি চায়!!