আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৪
ইশিকা ইসলাম ইশা
ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে বসে আছে রিদি।মনের ভিতরে চলছে তুফান ঝর! দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগছে সে।
কাল রাতে যখন জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল কেক কাটা হয়েছে। তখন ছোট অনেক বাচ্চা ছেলে মেয়ে সেই কেক মাখামাখিও করেছে। দৌড়াদৌড়ি করার সময় রিদির জামায় ও বেশ খানিকটা কেক লেগে গেছে।তাই সাইডে ওয়াসরুমে ঢুকে জামা পরিস্কার করতেই ভেসে এলো কারো গোঙানির আওয়াজ!রিদি ঘাবরে গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে দ্রুত নিজের জামা পরিস্কার করতেই ভেসে এলো কারো মৃদু চিৎকার!!রিদি এবার ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকালো।এপাশে মানুষ কম থাকায় রিদির ভয় বাড়ল।ঝটপট ওয়াসরুম থেকে বের হতেই পিচ্ছিল কিছুর সাথে স্লিপ করে ধপ করে পড়ল ফ্লোরে।
ব্যাথা পেয়ে রিদি চোখ মুখ খিচে উঠতেই থমকে গেল লাল রক্ত দেখে।সাদা ফ্লোর এ লালঠে রক্ত ফ্লোর কে রাঙিয়ে তুলেছে যেন!রিদি আঁতকে ঝটপট উঠার চেষ্টা করতেই বুঝল পায়ে বেশ খানিকটা আঘাত পেয়েছে। তবুও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পেছনে দিকে যেতেই দেখল কেউ খুব ক্ষোভ সমিত কুড়াল দিয়ে নিচে কিছুকে যেন টুকরা করতে চাইছে।রিদি আবছা আলোয় নিচে তাকাতেই মানব দেহের খন্ডিত টুকরা গুলো দেখে ভয়ে চিৎকার করতে চাইলেই গলা দিয়ে জোরে কোন শব্দ বের হল না ।কান্নাভেজা কন্ঠে মৃদু আওয়াজ হলো ব্যাস।সেই আওয়াজ টুকুই হয়তো পৌছাল মানুষটার কানে।থেমে গেল মানুষটার হাত।
রিদি ভয়ে দৌড়াতে চাইলেও এমন নির্মম আর ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে পা বরফের মতো জমে গেছে।হুট করেই লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরতেই রিদির দুনিয়া ঘুরে উঠল। হাত,পা থরথর করে কাঁপতে লাগল। স্তব্ধ হয়ে থপ করে বসে পড়ল মাটিতে। নিঃশ্বাস আটকে আসল যেন কেউ শক্ত হাতে গলা চেপে ধরেছে।
অপর ব্যাক্তিটি রিদিকে দেখে হাতের মুঠোয় ধরে রাখা কুড়ালটা ছেড়ে দিল। রক্ত লাল হিংস্র চোখের লাল আভা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করল।কয়েক কদম এগিয়ে আবারো থেমে গেল।রিদির ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া দেখে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আ প নি?? আপনি??
রিল্যাক্স!!কুল ডাউন!!লিসেন্ট টু মি!
রিদি অনেক কষ্টে উক্ত কথা টুকুই বলতে পারল।আরো বলতে চাইছে কিন্তু গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। অতিরিক্ত ভয় বা শকড্ হলে কোন কথা বের হয় না।রিদির অবস্থা বেগতিক দেখে এগিয়ে এলো ব্যাক্তিটি। দ্বিধাহীন বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে পরপর চুমু বসাল মাথায়!
শান্ত হন!!কিছু হয়নি!!
রিদি বুকের ভেতর থেকেই বলল,
আপনি???
আমিই!আমি! প্লিজ প্লিজ শান্ত হন।
রিদির পা, হাত তখনো কাঁপছে।হুট করেই রিদি জোরে কেঁদে উঠলো। কেন কাঁদছে?কান্নার কি কারণ? জানে না।
ব্যাক্তিটি রিদির কান্না শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেল। তাই কাঁদতে মানা করল না। শকড্ হলে অনেক সময় ব্রেন এ চাপ পড়ে ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
হুট করেই রিদির কান্না থেমে গেল।ঝট করেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।কোন কথা ছাড়াই ছুটল কোথাও। তীব্র রিদিকে আটকালো না। বরং রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ঘাসের উপর শরীর এলিয়ে দিল।
ঠিক তখনি ছুটে এলো লাবিব। তীব্র কে ঘাসের উপর হাত পা মেলে শুয়ে থাকতে দেখে লাবিব ভয় পেয়ে ছুটে এলো। উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
বস!!বস আপনি ঠিক আছেন!!
কিছুক্ষণ পরেই তীব্র শান্ত কন্ঠে বলল,
আমি ঠিক নেই।
কি হয়ছে বস??মির ভাইকে……..
শোন!!তোর ভাবিকে সহিসালামত বাসায় দিয়ে আসবি!
কিন্তু!!!
কিন্তুর আর প্রয়োজন নেই!যা!
তীব্রর আগাগোড়াহীন কথায় লাবিবের মাথা ঘুরে উঠল।তবে প্রশ্ন করা বা কিছু বলার সাহস করল না।
এদিকে লাবিব যেতেই তীব্র গেয়ে উঠল,
“”””তোমার মাঝে ডুবি ভাসি
নিজের চেয়ে আরো বেশি,
ভালোবাসি কেন বোঝোনা”””
লাইন টুকু গেয়েই দূর ঐ আকাশের পানে চেয়ে রইলো।
লাবিব গাড়ি চালাচ্ছে ধীর গতিতে।খুব সাবধানে।যেন কোন ভাবেই ভাবির কোন ক্ষতি না হয়।গাড়ি চালাতে কোন ভুল না হয়।মূখ্য বিষয় ভাবির সেফটি।
এদিকে রিদি মাস্ক পড়া ড্রাইভার এর দিকে তাকিয়ে আবারো বাইরে তাকালো। মনের ভেতর চলছে ঝর তুফান। কিছু জিনিস চোখের সামনে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না।বার বার মনে হচ্ছে এটা হবার না।এটা কখনো সম্ভব না।হয়তো স্বপ্ন!!
এই পোলা!!এতো আস্তে চালাও ক্যা? চালাইতে পারো না নাহি??
লাবিব হচকচিয়ে বলল,
পারি তো!!
তই এতো আস্তে চালাও ক্য?আমরা কি সকালে পৌছামু??
জি দাদি চালাচ্ছি….
বস যে বলেছে ভাবির যেন এতটুকু ও কষ্ট না হয় (বিরবির করে)
কি কইলা???
না না কিছু না!!!
একখান কত কও! মজনু মিয়া কোনে গেছে??
ব….
মানে ভাইয়ের জরুরি কাজ ছিল!!
বুঝছি!বুঝছি!!
লতিফা বেগম ত্যাছড়া চোখে তাকাল রিদির দিকে।রিদির ভাবভাব ভালা ঠেকছে না তার কাছে!হইলো কি ম্যাইয়ার??
আমারে এমনে টানতাছোস ক্য?কি হয়ছে?কইবি তো??এই ছেমরি!!
রিদি লতিফা বেগম কে টেনে ঘরে এনে রেগে বলল,
তুমি জানতে তাই না!!
আরে ছেমরি কিতা জানতাম??
তুমি জানতে মজনু মিয়া কে??
লতিফা বেগম চমকে উঠলো! আমতা আমতা করে বলল,
মানে কি হয়েছে বুঝলাম না!!কিয়ের কথা কস??
নাটক করবে না দাদি!!তুমি জানতে তাই না!তুমি সব জানতে!!
কিয়ের কথা কস আ…..
রিদি চেঁচিয়ে উঠলো,
“”তুমি জানতে মজনু মিয়া আসলে তীব্র চৌধুরী!””
লতিফা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
হ জানতাম!!
রিদি অবাক হয়ে বলল,
তুমি জানতে!!
হ! জানতাম!
আমাকে কেন বলো নি!!
বললে কি করতি তুই?
কি করতাম মানে?ওনাকে কখনো এখানে থাকতে দিতাম না।
পোলাডা তোরে ভালোবাসে রিদু!!
তুমি পাগল হলে দাদি!!তুমি জানো ওনি কে??ওনি তীব্র চৌধুরী!যার মধ্যে ভালোবাসা নেই!ওনি ভালোবাসতে জানে না!আমার মতো একটা কাকতাড়ুয়া কে তো নাই নি। ওনার কাছে তো আমি ওনার পা স্পর্শ করার ও যোগ্যতা রাখি না!
তই তোর জন্য কেন এহানে পইড়া আছে??
আছে হয়তো কোন উদ্দেশ্য!!ওনি কেমন তুমি জানো না দাদি দুটো খুন……..
বৌয়ের লাগি আনায়াসে দু চারটা খুন করা যায়।তাতে কি হয়ছে???
মানে তুমি????
হোন রিদু!দুনিয়া থাইকা পাপ কিছুটা কমলে এতি সমস্যা কোতি?তোর বাপেও কম না হেইডা মনে রাখিস!!
দাদি তুমি!!! তুমি জানো ওনি খুন……
না!আমি জানি না।তই যদি কইরা থাহে তই পাপ বিনাস ই করছে!!হোন রিদু!দুনিয়াই হকল মানুষ এক না! সবাই ভালবাসা জাহির করতে পারে না।আবার অনেকে সহজেই কইয়া দেয় ভালাবাসে।ভালবাসে কইলেই কি হেইডা ভালাবাসা হয়!হয় না!
তুমি ওনার নিষ্ঠুরতা জানো না দাদি! তাছাড়া তীব্র চৌধুরী ওনি!হাজার হাজার মেয়ে তার অপেক্ষায়।রুপ আপুর মতো নজরকাড়া সুন্দরীদের ওনার সাথে মানাই দাদি! আমাকে কখনোই ওনার পাশে মানায় না।আমাকে ওনি কখনোই ভালবাসে না দাদি। জানি না ও বাড়ির সাথে আম্মুর কি সম্পর্ক!!কেনই বা ওনি কোন চাপে পড়ে আমাকে বিয়ে করেছেন।….
তই তোর জন্য যে এইহানে পইড়া আছে তার বেলায়!কি দরকার ওর এইহানে পইড়া থাকনের। আলিশান বাড়ি রাইখা এমন কুটিরে থাকতাছে কেন?ওর বাড়ির কাজের লোক ও তো এমন ঘরে থাহে না।মাটির স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে হেই পইড়া আছে কেন?তুই বাঁচলেই ওর কি?মরলেই ওর কি?ক????
হুনছি হের অনেক ক্ষমতা!হেই চাইলেই তোর বাপরে সোজা করবার জন্য সময় নিবে না।ত হেই এই ছন্মবেশে ঘুরতাছে কেন?
শোন রিদু হেই যাই করতাছে সব তোর জন্য করতাছে!!
আমি চাই না ওনি আমার জন্য এইখানে পড়ে থাকুক।
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৩
তই তুই কি চাস??
চলে যাক এখানে থেকে!!
তুই কবে এতো পাষাণ হইলি রিদু??
আমি!!আমি যা বলছি তাতেই ওনার ভালো!!
লতিফা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই নাতনীরে বুঝানো তার সাধ্য নেই।তাই হামি তুলে বলল,
তোর ভালো তুই রাখ!নাত জামাই নিজের ভালো নিজে বুইঝা নিবো নে। তাছাড়া যার বৌ সেই ই সামলে নিবে!এই বয়সে আর চিন্তা করা উচিত না। বয়স হয়েছে এখন বেশি চিন্তা করলে বেশি দিন আর বাঁচবো না!পরে তোর নাতি নাতনির মুখ আর দেখতে পাবো না!এখনো আমার বয়সী বা কতো?এতো তাড়াতাড়ি মরলে চলবো!যাই এখন একটা ঘুম দিই।বেশি চিন্তা কইরা চামড়া ঝুইলা যাইচাছে……