আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫২
ইশিকা ইসলাম ইশা
সকাল ৯ টার বাজতে ১০ মিনিট বাকি।রিদি লিফট থেকে দৌড়ে ঢুকল অডিটোরিয়াম রুমে।তবে ঢুকেই থম মেরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।পুরো ক্লাস রুমে নজর বুলিয়ে তার চক্ষু চড়কগাছ। ডক্টরেট ক্লাস আজ বিশ্বসেরা সুন্দরীদের ক্লাস লাগছে।রিদি রুমে নজর বুলিয়ে এলিকে খুজে দেখল উপরের বেঞ্চ থেকে হাত নাড়িয়ে ডাকছে তাকে।রিদি ভীর ঠেলে উপরে উঠে বসল এলির পাশে।এনি রিদির দিকে তাকায়ে বলল,
আজ তুমি ছাড়া সবাই প্রায় বিশ্বসেরা সুন্দরী হয়ে এসেছে??
রিদি ফ্যালফ্যাল করে এনির দিকে তাকিয়ে বলল,
আমি বিবাহিত এনি!!
তো কি হয়েছে?এখানে অনেকে আছে বিবাহিত!!
রিদি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
হাহ…সবার হাজবেন্ড কি আর তীব্র চৌধুরী হয়!
কি ভাবছ??
না কিছু না! আচ্ছা স্যার বলে খুব কড়া তো সবাই এমন সেজে গুজে আসছে যে!তুমি কি কখনো দেখেছো স্যার কে??
না।স্যার সবসময় শেষ বর্ষের ক্লাস নেই।তবে এবার প্রথম বর্ষের ক্লাস নিবে দেখে সবাই অবাক,খুশি আবার কেউ কেউ স্তম্ভীত!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তুমি বাংলা বেশ ভালো বলো এনি।
জন্ম এখানে হলেও বাবা মা বাংলাদেশি তাই বাংলা আয়ত্ব করে নিয়েছি।
বাংলাদেশে কখনো যাও নি??
দাদু মারা যাবার সময় একবার গেছিলাম তখন আমি ছোট!
ওহহহ!!
ওদের কথার মধ্যেই একজন ছেলে হতদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে বলল,
সবাই নিজের জায়গায় বসো স্যার চলে এসেছে!সবেই স্যারের গাড়ি ঢুকল হসপিটালের গেটে।
মূহুর্তের মধ্যেই চারদিকে নিশ্চুপ হয়ে গেল।কারন এখানকার প্রধান তাদেরকে আগেই বলেছিল ভদ্রতা বজায় রাখতে।
ঠিক ৫ মিনিটের মাথায় সেখানে প্রবেশ করে সুট বুট পরিহিত সুদর্শন একটা পুরুষ। কানাডিয়ান পুরুষটি আসলেও সুন্দর বটে।সব মেয়েরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তবে ছেলেটার চেহেরায় কিছুটা বিরক্তি।কয়েকপলক সার্জারি বইটার দিকে তাকিয়ে চোখমুখ কুঁচকে নিল।যে অখাদ্য কিছু দেখেছে।
রিদি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে চারপাশে তাকালো।সবাই ফিসফিস করছে।রিদি একটু চুপ থেকে এনির দিকে তাকিয়ে ভু কুঁচকালো।মেয়েটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রফেসার লিয়ামের দিকে।রিদি নিজেও তাকালো লিয়ামের দিকে। কিন্তু এমন কোন স্পেশাল কিছু পেল না।
প্রফেসর লিয়াম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।তখনি ঠকঠক আওয়াজ তুলে প্রবেশ করল সাদা এপ্রোন গায়ে জরানো লম্বা সুঠামদেহী একজন পুরুষ। গম্ভীরমুখখানা এক ধরনের আভিজাত্য ঘেরা।নিলাভ চোখজোড়ায় ভরপুর কনফিডেন্স আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিধার ।পুরুষটি প্রবেশ করতেই প্রফেসর লিয়াম মাথা ঝুঁকিয়ে কনিশ করল।
গুড মর্নিং ডিটিসি!!!
মর্নিং!!!
গম্ভীরমুখখানায় মনিং কথাটাও আরো বেশি গম্ভীর শুনালো।
প্রফেসর লিয়াম এবার মাইক নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে ইংলিশ এ বলল,
হ্যালো ডেয়ার স্টুডেন্ট।তোমরা হয়তো জানো ডিটিসি কখনো ১ম বষের ক্লাস নেন না। সার্জারির শেষ বছরের ক্লাস আর প্রাকটিক্যাল নেন।তবে তোমরা অনেক লাকি বলতে পারো ডিটিসি এবার ১ম বষের ক্লাস নিবেন।আর তার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমাকে পাবেন।ওনি আমার প্রিয় ডক্টরদের মধ্যে অন্যতম।তাই…….
(বাংলায় লিখলাম)
লিয়ামের কথায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
স্টপ লি……
লিয়াম মাথা নাড়িয়ে ওকে বুঝাতেই।ডিটিসি এগিয়ে এসে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে ইংলিশ এ প্রথমেই বলল,
ফাস্ট অফ অল এটা ক্লাস।আপনারদের মেকাপ সেট না। আমার ক্লাসে ঢুকতে হলে অবশ্যই মিনিমাম সভ্যতা বজায় রেখে ঢুকতে হবে নয়তো ক্লাস করার দরকার নেই।আর বাই এনি চান্স যদি আমি কোন কারন বশত রুম থেকে বের করে দিই।দেন আপনাদের আর কোন চান্স নেই আমার ক্লাস করার।আমি আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
ডিটিসির কড়া কথায় পুরো ক্লাস নিশ্চুপ হয়ে যায়। দাম্ভিকতা আর ভেতরের দক্ষ ডক্টর এর কড়া কথায় কেউ কেউ ফিদাহ বলা যায়।
ডিটিসি উরফে আপনাদের তীব্র এবার আভচোখে বৌয়ের দিকে তাকালো।বৌয়ের দিকে তাকাতেই শক্ত, কঠিন মুখাবয় নরম হয়ে এলো।তার বৌ টা কেমন শকড্ হয়ে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা এই বৌ আবার ঙ্গান ট্যান হারাবে নাকি।সে কি বেশিই সারপ্রাইজ করল! তীব্র আড়চোখে বেশ কয়েকবার বৌ কে দেখে সার্জারি দুটো টপিক শেষ করল।
কারো কোন প্রশ্ন থাকলে করার সুযোগ দিয়ে আবারো তাকালো বৌয়ের দিকে। নিশ্চুপ নিরবতায় শুধু খাতা কলমের খচখচ আওয়াজ ছাড়া কোন শব্দ শোনা গেল না। তীব্র চিন্তিত মুখে বৌটার দিকে তাকালো।কিছু একটা ভেবে গলা পরিষ্কার করে ইংরেজি ভাষায় বলল,
২ মিনিট সময়!আপনারা চাইলে পাশের জনের সাথে কথা বলতে পারেন!
এনি সুযোগ পেয়েই রিদির দিকে তাকালো।রিদি কেমন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।এনি রিদিকে কয়েকবার ডাকতেই রিদি বলল,
কিছু বললে??
তুমি কি সবটা বুঝতে পেরেছ?? তুমি তো আজ কোন কিছুই নোট করোনি!!
রিদি শান্ত স্বরে বলল,
শরীর একটু খারাপ লাগছে এনি!আমি তোমার থেকে তুলে নিব!!
এনি চিন্তিত মুখে বলল,
তুমি কি ঠিক আছো??
রাদি ক্লান্ত গলায় বলল,
আমি ঠিক আছি!!
২ মিনিট শেষ হতেই সবাই কথা বন্ধ করে দেয়।কারো কোন প্রশ্ন না থাকাই ডিটিসি আর লি বেরিয়ে যায়।
ক্যাফেটেরিয়ার একটা টেবিলে বসে আছে রিদি।মন, মস্তিষ্ক তার যুদ্ধ করছে।মনে পড়ল অনেক আগের কথা।রুপের আত্মহত্যা করার পর রুপকে নিয়ে তীব্র একটা রুমে গেছিল। সেখানে থেকে রুপকে বের করেছিল ব্যান্ডেজ আর স্যালাইন সমিত।তখন যদিও বিষয়টি তার মাথায় আসে নি তবে আজ সবটা ক্লিয়ার লাগছে।মানে তীব্র চৌধুরী ডিটিসি মানে ডক্টর তীব্র চৌধুরী।হাহ…কি ধুরন্ধর এই লোক!!কাল রাতেও বলল না তাকে কিছু।
এই রিদি!! চারদিকে আবহাওয়া লক্ষ করেছ??
এনি চেয়ার টেনে বসতে বসতে কথাটা বলে মুচকি হাসল।রিদি কিছুটা অবুঝ মনেই বাইরে তাকিয়ে দেখল। সব তো ঠিক ই আছে তাহলে???
এনি রিদির মনের কথা বুঝতে পেরে বলল,
আরে আমি ঐ আবহাওয়ার কথা বলছি না। আশেপাশের আবহাওয়ায় কথা বলছি।পুরো হসপিটাল জুড়ে ডিটিসি কে নিয়ে চর্চা চলছে।তার এটিটিউড, ভাবভঙ্গি,চলার স্টাইল, নীলাভ বর্ণের চোখ, ড্রেসআপ,কথার ধরন,সব মিলিয়ে সবাই প্রায় ফিদাহ!!
রিদি এনির কথায় আশেপাশে তাকিয়ে দেখল আসলেও সবাই ফিসফিস করে কিছু বলাবলি করছে।যদিও রিদি এদের ভাষা খুব একটা আয়ত্ব করতে পারেনি তবে ডিটিসি নাম বারবার উল্লেখ হওয়াই বুঝতে অসুবিধা হলো না বুঝতে তাঁদের চর্চার বিষয় কি!
তুমি কি ফিদাহ নও??
এনি রিদির কথায় মুচকি হেসে বলল,
সত্যি বলতে আমিও এমন পুরুষ খুব কম দেখেছি। চেহেরায় একটা বাঙ্গালী ভাব আছে তবে ওনার নিলাভ চোখ জোড়া সত্যি আর্কষনীয়।কি বলো??
রিদি বিরবির করে বলল,
হাহ শুধু আকষনীয় না মারাত্মক ক্ষতিকর ও বটে!!
আচ্ছা তোমার কেমন লেগেছে বলো?? যদিও তুমি ম্যারেড!!
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
শকড্!!
কিহ??তুমি শকড্!!বাপরে..….. বাঙালি কিন্তু স্বামীর প্রতি খুব লয়াল থাকে।তোমাকে দেখে বোঝা যায়।তবে এমন হ্যান্ডু ছেলে হলে কি আর করার!!!বলেই হাসল!!
রিদি মুচকি হেসে ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা এলিয়ে দিল টেবিলে। অতিরিক্ত ভয় বা শকড্ হলে এখন আর সেন্সলেস হয় না সে।এটার জন্য কাউন্সিলিং করেছে ডক্টরের সাথে। মেডিসিন আর তীব্রর কেয়ারে রিদি এখন সুস্থ।
রিদিকে ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা এলিয়ে দিতে দেখে এনি চিন্তিত মুখে বলল,
তোমার শরীর কি বেশি খারাপ করছে রিদি?
না শুধু একটু………….
আহহহ………
হুট করেই কেউ রিদিকে হ্যাঁচকা টানে কোলে তুলে নিতেই রিদি ভয়ে আহহ করতেই তীব্র কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
রিল্যাক্স!!!
রিদি চমকে উঠে তাকালো তীব্রর দিকে।মুখে মাস্ক আর মাথায় ক্যাপ পরিহিত তীব্র দেখে চেনার উপায় নেই এটা বর্তমান চর্চাপদ প্রাপ্ত ডিটিসি।রিদি খানিকটা রেগে বলল,
আপনি??
তো!!!
বলেই রিদিকে নিয়ে হাটা ধরতেই এনি ছুটে এসে বলল,
রিদিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?কে আপনি??
রিদি এনির চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
ডোট ওয়ারি এনি।ওনি আমার স্বামী!!কথাটা বলতেই লম্বা কদমে হেঁটে রিদিকে নিয়ে চলল তীব্র।এনি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। কেউ কেউ তো ওদের ভালবাসা দেখে মুচকি হাসছে কেউ কেউ হাত তালি দিচ্ছে।তবে বাংলাদেশ হলে নিশ্চিত হ্যাঁচকা টানে কোলে তোলার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যেত!
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫১
রিদি তীব্রর এমন কান্ডে লজ্জা পেল না।কারন এমন কান্ডের সাথে পূর্বপরিচিত সে।তবে আজ চোখ মুখ শক্ত করে রইল।বেশি রাগ হলে রিদি নিশ্চুপ হয়ে যায়।আজ অতি শকড্ এ নিশ্চুপ সে। তীব্র একপলক রিদিকে দেখে লিফট এর কাছে আসতেই লিফট খুলে যায়। তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই নিশ্চুপতা তার মেজাজ খারাপ করছে। সহ্য হচ্ছে না তবে রিদিকে কিছু বলল না।