আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৭৪
ইশিকা ইসলাম ইশা
পুত্রদের কান্নার শব্দে রিদি তাড়াতাড়ি রুমে আসল।এরা ঘুমাই না আধঘন্টার বেশি।রিদি কোলে তুলে নিতেই দুইজনে শান্ত হয়ে গেল।রিদি দুজনের সাথে কিছুক্ষণ খেলা করে নাজমা চৌধুরী আর লতিফা বেগমের রুমে গেল। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসল তখন ঘড়িতে প্রায় ১০ টা বাজে।সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভর করে এই সময়।আজ ছেলেরা তাকে জ্বালিয়ে মারবে এটা নিশ্চিত।বাবা ছাড়া তাদের ঘুম আসে না যে।
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুই পুত্র কে খাইয়ে দিল।দুইজনে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেই রিদিও চোখ বন্ধ করলো।একহাতে ছেলেদের বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমের দেশে পারি জমাল।
রাত বাজে প্রায় ১ টার কাছাকাছি।রিদি ঘুমের ঘোরেই বুকে থাকা ছেলেদের খোঁজ করে যখন দেখল তারা কেউ নেই তখনি ধরপড়িয়ে উঠে বিছানার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সাথে বেশ অবাক ও হলো তীব্র কে এই মধ্যে রাতে এখানে দেখে।
তীব্র ছেলেদের সাথে খেলতে ব্যস্ত।এটা প্রায় হয়।হুট করে রাতে ছেলেদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে দুই পুত্রের সাথে বেশ জমিয়ে খেলাধুলা করে তীব্র।রিদি অপলকে চেয়ে দেখল সেই দৃশ্য। তীব্রর চেহেরায় স্পষ্ট খুশির ঝলক।যেন কয়েক ঘন্টা না কয়েক বছর যাবৎ পুত্রদের থেকে দূরে সরে ছিলেন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমার জান বাচ্চা!পাপাকে মিস করেছিলেন??পাপা আপনাদের এতো এতো মিস করেছি।তীব্রর কথায় দুইজনে পা ,হাত নেড়ে আ,উ করছে।যেন তীব্রর কথার উওর দিচ্ছে। তীব্র ও ছেলেদের আ,উঃ বুঝে কথা বলছে।বেশ কিছুক্ষণ খেলার পর দুই পুত্র এবার আইকাই করে উঠে।মানে তাঁদের এখন খাবার চাই। তীব্র ছেলেদের অভিব্যাক্তি বুঝে তাকালো রিদির দিকে।রিদি এতোক্ষণ চুপচাপ বাবা ছেলেদের খুনশুটি দেখলেও এবার বুঝতে পারল তাঁদের এখন খাবার চাই।রিদি একজনকে নিয়ে খাওয়াতেই তীব্র অপর জনকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করল।নয়তো এবার গলা ফাটিয়ে কাঁদবে।
রাত তখন বাজে প্রায় আড়াইটা।দুই ছেলেকে খাওয়ানোর পর এখন দুইজনেই ঘুমিয়ে আছে।রিদি ওয়াসরুম থেকে বের হলো মিনিট বিশেক পর।এখনো তীব্রর মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আর সহ্য হচ্ছে না।ওয়াসরুমে বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর রুমে এসে দেখল তীব্র ছেলেদের নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াই। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে।ঠিক মনের ভেতরে চলা অন্ধকারের মতোই গভীর।যেন কোথাও কোনো আলোর পথ নেই।রিদির এতো অন্ধকার আর সহ্য হলো না।বেলকনি থেকে রুমে এসে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত ছেলে আর তীব্র কে দেখল।হুট করেই তীব্রর বুক থেকে ঘুমন্ত দুই ছেলেকে একে একে বিছানায় শুইয়ে নিজে শুয়ে পড়ল তীব্রর বুকে।তীব্রর গলায় মুখ গুঁজে হু হু করে কেঁদে উঠলো। তীব্র হালকা নড়েচড়ে রিদিকে সরাতে চাইলে রিদি আরও শক্ত করে ধরল তীব্রকে।রিদির কান্নাকাটিতে তীব্রর গলা ভিজে ছিপছিপে হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তীব্র রিদিকে সরাতে না পেরে গম্ভীর গলায় বলল,
কি চাই!!!
আপনাকে!!
ছাড়ুন!!
উঁহু!!!ছাড়ব না! প্লিজ তীব্র আর সহ্য হচ্ছে না আপনার অবহেলা।আমি আর পারছি না।মাফ করে দিন প্লিজ….সরি,সরি……
আমার মতো খুনির সাথে কেন থাকবেন?আপনার হয়তো আমার মতো খুনির সাথে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে।তাইতো আপনাকে মুক্তি……..
বিছানার এক কোনায় বসে হেঁচকি তুলে কাঁদছে রিদি। তীব্র রিদিকে কাঁদতে দেখে বিরস মুখে ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখল রক্ত বের হচ্ছে। জঙ্গি বিল্লির মতোই পুরো ১৫ মিনিট ঠোঁটের উপর অত্যাচার চালিয়ে এখন আবার নিজেই হেঁচকি তুলে কাঁদছে। তীব্র পাশ থেকে টিস্যু নিয়ে ঠোঁট মুছে বলল,
কামড়ে কুমড়ে রক্ত বের করেছেন।তাহলে আবার কাঁদছেন কেন?মন ভরে নি!
রিদি রেগে বলে,
না ভরে নি।আপনি যখন ৩০ মিনিট ধরে আমাকে কিস করেন তখন আমি কিছু বলি!
হেঁচকি তুলে কাঁদার কারনে রিদির কথা আটকে আটকে আসছে। তীব্র তা দেখে বলল,
রাইট!আমি কিস করি।এভাবে কামড়ে রক্ত বের করি না।কিস টাও তো ঠিকঠাক করতে পারলেন না।
রিদি কটমট দৃষ্টিতে তাকালো তীব্রর দিকে।মনে মনে তীব্র কে শ খানেক গালি দিয়ে বলল,
আপনি যে পুরো শরীর কামড়ে………
হুস!হুস!!এসব কি কথা বাচ্চারা শুনতে পাবে!!
রিদি রাগ ভুলে ফ্যালফ্যাল করে একবার তীব্র তো একবার বাচ্চাদের দিকে তাকালো। তীব্র রিদিকে এভাবে তাকাতে দেখে সোজা হয়ে শুয়ে বলল,
আমার বাচ্চারা এডভান্স!ওরা সব বুঝে!!তাছাড়া আপনার কান্নায় ওদের ঘুমে ডিস্টার্ব হচ্ছে।
রিদি তীব্রর এমন কথায় হুট করেই রাগটা তরতর করে বেড়ে গেল। অভিমান আর অভিযোগ গুলোও এক পারদ বেড়ে গেল।রিদি বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল।রাগ,দুঃখ, কষ্ট,মান, অভিমান মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতিতে রিদির চোখ বেয়ে টুপটাপ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আলমারি থেকে একটা কম্বল,বালিশ আর মাদুর নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে মাদুর বিছিয়ে বালিশ আর কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়ল।কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর মাথা ব্যাথাটা তীব্র বেগে বেড়ে যেতেই রিদি চোখজোড়া বন্ধ করে নিল। ইচ্ছে করছে মাথাটাকে দেওয়ালে বাড়ি মারতে।রিদি চুল ঘামচে ধরে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখল। তীব্র যন্ত্রনায় হুট করে আরাম অনুভব করতেই রিদি চোখ পিটপিট করে দেখল পরিচিত অবয়ব। চুলের মাঝে পুরুষালী আঙ্গুলের মোলায়েম স্পর্শে রিদি আরাম অনুভব করলেও কিছুক্ষণ আগের কথার রেশ টেনে ঠোঁট উল্টে কেঁদে বলল,
নিব না আদর!!আপনি আমাকে বকেছেন!
রিদির এমন বাচ্চামি দেখে তীব্র মৃদু হাসল।এই যে ঠোঁট উল্টে নাক ফুলিয়ে ফুপাচ্ছে।দেখতে বেশ আদুরে লাগছে।
ঠিক আছে নিয়েন না!আমি চলে যাচ্ছি!
তীব্র উঠার জন্য নড়াচড়া করতেই রিদি ঝট করে তীব্রর গেঞ্জির কলার টেনে ধরলো। তীব্র ভু কুঁচকে বলল,
কি??
বলব আর ওমনি চলে যেতে হবে??
তো কি করব??
রিদি তীব্রর বুকে মাথা রেখে দুহাত তীব্র কে ঝাপটে ধরে বলল,
আদর করুন!
অর্ডার করছেন??
উঁহু! ভালোবাসা চাইছি।
ভালোবাসি না তো!
রিদি আবারো ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে উঠলো,
আমাকে মাফ করে দিন না প্লিজ!আমি আর পারছি নাতো। বিশ্বাস করেন!!আর সম্ভব হচ্ছে না এই দূরত্ব সহ্য করা।হয়তো আমাকে আপনার বুকে বাঁচতে দিন নয়তো মেরে ফেলেন।আর… আর পারছি না……উমমমম……
তীব্রর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রেগন্যান্সি আর রিদির সুস্থতা বিবেচনায় এতো মাসের ধরে রাখা ধৈর্য ভেঙ্গে গেছে। তীব্র কখনো রিদিকে দূরে সরিয়ে রাখেনি। হ্যাঁ দূরত্ব অনূভব করিয়েছে তবে ছেড়ে দেয়নি।প্রতি রাতে গভীর ঘুমে মগ্ন থাকা রিদির বুকের আশ্রয় না পেয়ে ঘুমাইনি। সারাদিন নজরে নজরে রেখেও দূরত্ব বজায় রেখেছে। কিন্তু মধ্যে রাতে গভীর ঘুমে মগ্ন থাকা রিদির ছোট্ট বুকেই তার সকল অস্থিরতা দূর করেছে।শরীরের ঘ্রাণ শুঁকে পেয়েছে বিশাল স্বস্তি।এই শান্তি,এই স্বস্তি সবটা এই নারীর মাঝেই রয়েছে। দুনিয়ার কোথাও এই সুখ,শান্তিটুকু নেই। তীব্র চৌধুরী নিজের এই শান্তি, স্বস্তি থেকে দূরে থাকবে এটা মানা যায়!! তীব্র গভীর জলের মাছ যা রিদির ধারনার বাইরে।
সময় স্রোত বয়ে চলছে আপন ধারায়।তাদের থামিয়ে রাখার সাধ্য কারো নেই।দেখতে দেখত ৬ টা বছর পেরিয়েছে।এই কয়েক বছরে সবার জীবনেই পরিবর্তন এসেছে।কেউ পেয়েছে,কেউ হারিয়েছে,কেউ মেনে নিচ্ছে, কেউ মানিয়ে নিচ্ছে।এভাবেই হয়তো সুখে থাকা যায়।সবার চেষ্টা শুধু ভালো থাকার,একটু সুখে থাকার।
সেই ফুলতলি গ্রামের মির্জা বাড়িতে তীব্রর সেই মাঝরাতের বিয়ের পর আবারো বিয়ের সানাই বাজছে।পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে সুন্দর করে।বাড়ির ছোট ছেলে রিদ মির্জার বিয়ে বলে কথা।বড় ছেলে বিদেশিনী বিয়ে করাই ছোট ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই করেছে রিদির চাচা।যদিও বিয়েটা রিদের নিজের পছন্দের মানুষটির সাথে তবুও ছোট ছেলের বিয়েতে কোনো কমতি রাখেন নি তিনি।
গেস্ট থাকার জন্য বাগানের দিকে ঘর করেছে লম্বা করে বেশ কয়েকটা। তাছাড়া মির্জা নিবাস তো আছেই।
মির্জা বাড়ি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই সাজানো হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনে পুরো বাড়ি ভর্তি মানুষ।রিদিরা এসেছে বিকেলের দিকে।তীর,মীর,লাবিব সহ পুরো চৌধুরী পরিবার এসেছে বিয়েতে। ভাইয়ের বিয়েতে রিদির অনেক আগে থেকেই আসার কথা থাকলেও হাজারো ব্যস্ততার কারণে হয় নি।তাই এসে থেকেই কাজে লেগে পড়েছে।কাল হলুদ সন্ধ্যা।তাই মেহমানে চারদিক ভর্তি হয়ে আছে।রিদের মামা,খালারা সব মিলিয়ে বড় একটা পরিবার।
হল রুমের একপাশে সব মেয়েরা হলুদ সন্ধ্যা নিয়ে আলোচনা করছে।কে কি পড়বে??কিভাবে সাজবে?রিদি সহ চৌধুরী বধূরাও তাতে মতামত দিচ্ছে।
এদিকে হল রুমের দরজার একপাশে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে একসাথে খেলছে।হঠাৎ করেই রিদের মামাতো বোন ময়নার নজর পড়ে ৫ বছরের দুটা ছেলের উপর। দুইজনেই সেম সেম পোশাক পড়া। ধবধবে ফর্সা একদম বিদেশিদের মতোই সুন্দর।কাপড় থেকে প্রায় সবকিছুর মিল দেখেই বোঝা যায় তারা জমজ বাচ্চা।পড়নে থ্রি কোয়ার্টার ব্লু জিন্স প্যান্ট সাথে আকাশি রঙের টি শার্ট। সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে এলোমেলো ভাবে।ঘুম ঘুম চোখ মুখে বিরক্তির ছাপ।এতো কোলাহল হয়তো পছন্দ না।নাকি অন্য কারন!!!তবে দুইজন একটা ফুটফুটে সুন্দর গোলাপি ফ্রগ পড়া ৪ বছর বয়সি বাচ্চা মেয়ের দু হাত ধরে খুঁজে চলছে কাউকে। বাচ্চা মেয়েটির চোখে স্পষ্ট পানি।কাঁদছে !! কিন্তু দুইজন ছেলের মুখে স্পষ্ট বিরক্তি।দুইজন একটু পর পর মেয়েটার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর কি যেন বলছে।আবার ভীর ঠেলে সাবধানে নিয়ে আসছে মেয়েটাকে।যেন ভীর থেকে প্রটেক্ট করছে ছোট্ট পরিটাকে। আবার পিছে ফিরে কাউকে দেখছে।ময়না বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের দেখার পর রিয়ার মেয়ে মনিকে বলল,
এই মনি!!দেখ দেখ বিদেশি বাচ্চা!তিনটাই কেমন সাদা ফটফটা।আর দেখতেও অনেক সুন্দর!
মনি খালার কথায় আশেপাশে তাকিয়ে দেখল।বাচ্চাদের দেখে মনি চটপট উঠে বলল,
আল্লাহ এরা এখানে কেন?রিদু খালা কোথায়??তুমি কি রিদু খালাকে দেখেছ??
ময়না হতবাক হয়ে বলল,
রিদিকে তো উপরে যেতে দেখলাম খালার সাথে!
মনি একছুটে দৌড়ে উপরে উঠে গেল।ময়না হতবাক হয়ে তাকালো মনির যাওয়ার দিকে। ততক্ষণে অনেকেই ঘিরে ধরেছে ওদের।হয়তো সবাই বিদেশি মনে করে দেখছে।ময়না উৎসুক হয়ে এগিয়ে গেল সেদিকে।তখনি শুনতে পেল স্পষ্ট বাংলায় ছেলে দুইটার মধ্যে একজনের কথা,
বোন কাঁদছে!!আমাদের যেতে দিন।আমরা আম্মুকে খুঁজছি!!
ময়না তাকালো ওদের দিকে।মেয়েটা ফিচফিচ করে কাঁদছে।ছেলে দুইটার চেহেরায় রাজ্যের বিরক্তি তবে কথায় স্পষ্ট এক ভদ্রতা।এই টুকু বাচ্চার বড়োদের মতো আচরণ দেখে ময়না সত্যি অবাক হলো।সবাইকে সরিয়ে যার যার কাজে পাঠিয়ে দিল।লোকজন কমতেই ছেলেদুটোর একজন বলল,
আপনাকে ধন্যবাদ মিস!!!
ময়না ফিক করে হেসে উঠে বলল,
মিস নয় মিসেস!আই এম ম্যারেড!! আচ্ছা তোমাদের নাম কি??
“তাহিয়ান চৌধুরী তূর্য”
বাহ খুব সুন্দর নাম তো!!আর তোমার??
“রিদওয়ান চৌধুরী রৌদ্র ”
বাহ বেশ সুন্দর তোমাদের নাম।একদম রাজকীয় নাম।তা এই পিচ্চি মেয়েটার নাম কি??
মেয়েটা দুই ভাইয়ের হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“তুশমিতা আফরোজ তৃপ্তি ”
তোমাদের নাম কে রেখেছে?একদম মিলিয়ে মিলিয়ে সুন্দর সুন্দর নাম। বাচ্চারা কিছু বলল না।ময়না ওদের ভাব দেখৈ বুঝল হয়তো জানে না।তাই বলল,
তোমার আম্মুর নাম কি??বলো আমি খুঁজে দিচ্ছি?
“রিদিতা তীব্র চৌধুরী ”
কিহহহহহ???
ময়নার এমন জোরে বলায় তৃপ্তি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল।তখনি হতদন্ত হয়ে ছুটে এলো দুইজন রমনি।ময়না তাকালো দুজনের দিকে রুপকে দেখে বলায় যায় মেয়েটা রুপের বাচ্চা।রুপের মতোই সুন্দর।রুপ মেয়েকে কোলে নিয়ে শান্ত করতেই।রিদি হাঁটু গেড়ে বসল ছেলেদের সামনে,
তোমরা এখানে কেন?এতো তাড়াতাড়ি ঘুম হয়ে গেল?
তিতু কান্না করছিল!মামনির কাছে যাবে বলে।তাই বড় পাপা আমাদের নিয়ে আসতে বলল।
আচ্ছা!! ছোট্ট বোন কোথায়?ও উঠেছে??
হুম!পাপার কোলে আছে।
সরি আমার বাবারা আমি ফোনের দিকে একদম খেয়াল করি নি।
ইটস ওকে আম্মু!!
আম্মু!!!ময়না রিদির দিকে বিষ্ময় নিয়ে তাকালো।এতো সুন্দর ছেলে রিদির।
রিদি টপাটপ ছেলে দুটোর গালে চুমু দিতেই ওদের গম্ভীর বিরক্তকর চেহেরায় হাসি ফুটে উঠল।কি সুন্দর সেই হাসি!!যেন বহু প্রতীক্ষিত এই আদরটুকু।ওরা সবাই বাগানে তৈরি ঘরের দিকে যেতেই মনি ছুটে আসল।ময়না মনিকে দেখে বলল,
সিরিয়াসলি মনি!ওরা রিদির ছেলে??
হ্যাঁ!!
রিদির হাজবেন্ড কি করে??কে ওনি?
মনি ময়নার মুখটা দেখে মুচকি হেসে বলল,
সবচেয়ে হ্যান্ডসাম, সুন্দর আর ড্যাশিং আঙ্কেলটা রিদুখালামনির স্বামী।রিদু খালামনি আর আঙ্কেল দুইজনেই ডক্টর।
কিহহহহ???মজা করছিস??
এমা মজা করব কেন? আঙ্কেল তো রিদু খালামনিকে বিয়ে করতে অধেক রাত পর্যন্ত মানুষকে জাগিয়ে রেখে দাওয়াত খাইয়ে আবার গিফটও দিয়েছে।পুরো গ্রাম উপস্থিত ছিল রিদুমনির বিয়েতে।তুমি তো দেশে ছিলে না তাই জানো না। আচ্ছা আমি আসছি রিদু খালামনির ফোন বাজছিল।ফোনটা ফেলেই চলে যাচ্ছে।সেটা দিতেই দৌড়ে আসছিলাম।
ময়নার মনির কথা যেন বিশ্বাস হলো না। মির্জা বাড়ির গেট পেরিয়ে কিছুদূর তাকাতেই নজরে এলো এক থেকে ডের বছরের একটা বাচ্চা কোলে দাড়িয়ে আছে মনির তথাকথিত সেই সবচেয়ে হ্যান্ডসাম, সুন্দর আর ড্যাশিং মানুষটা।পড়নে তার কালো শার্ট প্যান্ট।দেখতে দেখার মতোই সুন্দর।যেন কোনো ফ্লিমের হিরো।তার তার বুকেই লেপ্টে আছে বাচ্চাটা।রিদি সেখানে পৌঁছাতেই লোকটা মুচকি হেসে বাচ্চাটাকে এগিয়ে দিল।হাসিটা!!হাসিটা ঠিক জমজ দুই বাচ্চার মতোই সুন্দর।মানে নিঃসন্দেহে বাচ্চার বাপ সে।
মাকে দেখেই কোলে থাকা বাচ্চা অভিমানে কেঁদে উঠলো।রিদি মেয়েকে আদর করতেই কিছুক্ষণে থেমে গেল।
ময়না শুধু তাকিয়ে দেখল সবটা।রিদিকে শেষ বার দেখেছিল যখন রিদির বয়স ১৪ বছর।সেবার দেশের বাইরে যাবার আগেই দেখা করতে এসেছিল।এরপর আর রিদির খবর সেভাবে না পেলেও শুনেছিল বিয়ে হয়েছে।তারপর আর কোনো খোঁজ করা হয় নি।তবে মেয়েটা যে এতো ভালো আছে সেটা তার ধারনার বাইরে।অভাগী মেয়েটার কপালে এমন রাজকীয় সুখ দেখে তিনি খুশি হয়েছেন।
রাতে খাবার টেবিলে বসে আছে বাড়ির সবাই। তীব্র খাওয়ার ফাঁকে মেয়ের মুখে সাদা পোলাও আর ঝোল ঝরানো মাংস নিয়ে মুখে দিচ্ছে।মেয়েটা খাচ্ছে আর একটু পরপর এঁটো মুখে বাবার গালে চুমু দিচ্ছে আবার বাবাকে দেখাচ্ছে আর বলছে,
পাপা তুমু তুমু!!
তীব্র মেয়ের কথায় সম্মতি দিয়ে বলছে,
হ্যাঁ প্রিন্সেস আমি দেখেছি আপনি চুমু দিয়েছেন!!
সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে বাবা মেয়ের কান্ড দেখছে।কি সুন্দর সেই দৃশ্য!!বাবারা বুঝি মেয়ের ক্ষেত্রে একটু বেশি দূর্বল হয়।ময়না মুচকি হেসে বলল,
মাশাআল্লাহ!!তোর মেয়ে সত্যি হৃদয়স্পর্শী!মায়ারাজ্য!ছেলেদুটা দারুন হলেও মেয়েটা একদম আলাদা।একটা মায়ার খনি।বাবার মতোই নিলাভ চোখের মনি।পুরো আদল তোর তবে রং তোদের সবার চেয়ে আলাদা।একদম কাঁচা হলুদ আর দুধ মেশানো রং ।জানিস এমন রং খুব কম মানুষের হয়।
রিদি ছেলেদের খাইয়ে দিতে দিতে মৃদু হাসল। হ্যাঁ এটা সত্যিই যে তার মেয়ের রং টা একদম আলাদা।মেয়ে হওয়াতে তীব্রর সেকি খুশি।সব ছেড়ে ছুড়ে মেয়েকে দেখাশোনা করত।কাজ ব্যাতিত ১ সেকেন্ড ও বাইরে ব্যয় করত না।আর এখন তো মেয়ে বড়ো হয়েছে।পাপা বলতে পাগল এই মেয়ে।কখনো কখনো তো এতো জেদি হয়ে উঠে পাপা পাপা কাঁদতে শুরু করলে তীব্রকে সব ফেলেই মেয়ের কাছে ছুটে আসতে হয়।সেবার তো মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গেছিলো তীব্র কানাডা গেছিল কাজে কিন্তু মেয়ের কান্নায় অস্থির হয়ে কাজ ফেলে হেলিকপ্টার করে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।এরপর তীব্র মেয়েকে রেখে দূরে কোথাও যায় না।মাঝে মাঝে তো অফিসে না গিয়ে বাসায় বসেই কাজ করতে হয়।রিদির হসপিটালের কাজ থাকলে তো তীব্র মেয়ে রেখে কোথাও যাই না। বলতে গেলে বাবা মেয়ে দুইজন ই পাগল একে অপরের জন্য।
রিদি ছেলেদের খাইয়ে দিয়ে ডায়নিং টেবিল থেকে একটু দূরে তাকালো।যেখানে তীর মেয়েকে এটা ওটা দেখিয়ে যাচ্ছে আর রুপ সেই সুযোগে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে।তীর আর রুপের মেয়ে “তুশমিতা চৌধুরী তৃপ্তি”। তূর্য আর রৌদ্র যখন ৬ মাস তখন রুপ তীর কে প্রপোজ করে।সেই ঘটনার পর থেকে রুপের মনে তীরের জন্য অচেনা অনূভুতির জন্ম দেয়।দুইজনে সময় নেয় ।এরপর রুপ নিজ থেকেই তীর কে প্রপোজ করে।শুরু হয় তাদের পথ চলা।বিয়ের বছর পেরুতেই রুপের গর্ভে তৃপ্তি আসে।শুরু হয় ছোট্ট মেয়ে নিয়ে তাদের জীবন। প্রিয় মানুষকে না পেয়ে কোথাও হয়তো সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব হয় তবে সে ভালো আছে।তীরের মতো একটা মানুষ পেয়ে সে খুব ভালো আছে,সুখে আছে।
রাতের খাবার শেষ হতেই সবাই এদিক ওদিক নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।কেউ কেউ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তো কেউ কেউ অনেক বছর পর এমন দেখা সাক্ষাৎ হয়ে গল্প জুড়ে বসেছে।রিদিকে পেয়ে রিদের কাজিনরাও ঘিরে ধরেছে। তাঁদের প্রেম কাহিনী শোনার জন্য।রিদি অবাক হয়ে বলে,
আমাদের প্রেম কাহিনী!!
ময়না উৎসাহ দিয়ে বলল,
হ্যাঁ! হ্যাঁ বল না প্লিজ!!
রিদি মনে মনে বলল,
প্রেম কাহিনী নাকি অত্যাচার কাহিনী হু!!!মুখে বলল,
আসলে তেমন কিছু নেই বলার মতো!!!
হুট করেই মনি এসে বলল,
আরে নেই মানে!!আমি ছোট ছিলাম তবে আমার স্পষ্টভাবে মনে আছে রিদিমনি আর তীব্র আঙ্কেল এর বিয়ের কাহিনীটা।উফফফ!!!এখন সেই ঘটনা মনে পড়লেই বোঝা যায় রিদিমনিকে কতোটা ভালোবাসে ওনার মজনু মিয়া!গ্রামে তো এখনো সেই বিয়ে নিয়ে চর্চাও হয়।এমন বিয়ে সাত জন্মে কেউ করেছে কি না আমার তো সন্দেহ!!আমার কথা বিশ্বাস না হলে আম্মূকে প্রশ্ন করতে পারো!!আম্মু ও তো মাঝে মাঝে আমাকে এসব বলে আর হাসে!!
ময়না লাফিয়ে উঠে বলে,
সত্যি!! এখুনি রিয়ার থেকে শুনবো!এই রিদু তো আর বলবে না লজ্জায়।বলেই গটগট করে চলে যেতেই রিদি মনির কান ধরে বলে,
খুব বড় হয়েছো তাই না!! দুষ্টু মেয়ে!!
মনি খিলখিল করে হেসে রিদিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
সত্যি রিদুমনি!!আমার খুব ভালো লাগে তখনকার ঘটনা মনে পড়লে।তখন না বুঝলেও এখন বুঝি। তীব্র আঙ্কেল কিভাবে পুরো গ্রাম কে একজায়গায় করে জোর করে দাওয়াত খাইয়েছিল।রিদি নিজেও সেসব স্মৃতিচারণ করে হাসে। অনেকদিন পর প্রিয় রিদুমনিকে পেয়ে মনি কথার ঝুড়ি নিয়ে বসেছে।দেখতে দেখতে সময় পেরিয়েছে ১১ টার কাছাকাছি এতো দেরি হয়েছে!!যদিও মেয়ে নিয়ে তার চিন্তা নাই। তবে ছেলে দুটো তাকে ছাড়া ঘুমাই না। যদিও ছেলেরাও বাবা ভক্ত।রিদি চটপট উঠে মিজা বাড়ির প্রাঙ্গণ পেরিয়ে বাগানের দিকে বানানো বাড়ির দিকে যায়। সেখানে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হালকা শীত হলেও নতুন ঘরে গরম বেশ।রিদি রুমে ঢুকতেই দেখল এসির রিমোট নিয়ে দুই ভাই কি যেন করছে।
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৭৩
তোমরা কি করছো??
তূর্য, রৌদ্র মাকে দেখে একছুটে এসে মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
আম্মু গরম!!এসি চালু হচ্ছে না!!
তোমাদের পাপাই কোথায়??
পাপা রোজ কে নিয়ে ছাদে গেছে!
ওকে তোমরাও ছাদে যাও আমি আসছি!!আজ ছাদে ম্যাজিক হবে।তবে দৌড়াবে না ধীরে ধীরে উঠবে।
দুই ভাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল,
ওকে আম্মু!!!
