আমরণ প্রেমতৃষ্ণা গল্পের লিংক || তানহা ইসলাম বৈশাখী

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১
তানহা ইসলাম বৈশাখী

“-বাসর করবি? অনেক শখ বাসর করার? নাচতে নাচতে বিয়ে করেছিলি না? এবার দেখাবো তোকে বিয়ের মজা। প্রতিটা পদে পদে টের পাবি ইউভান প্রার্থ চৌধুরী কি জিনিস। আই সোয়ার (swear) আই এম গোয়িং টু মেক ইউর লাইফ হেল (HELL)।
প্রার্থর স্বর তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। সে এক প্রকার চিৎকার করে উঠছে তার সামনে খাটে বসে থাকা মেয়েটির উপর। বাসর ঘরে সাজানো ফুল রাগে ক্ষোভে ছি*ড়ে টু*করো টু*করো করে ফেলছে সব।
কিন্তু খাটের উপর লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে থাকা পুষ্প নামক মেয়েটির কোন নড়চর দেখা যাচ্ছে না। সে জানতো এমন কিছুই হবে।তাই তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই। প্রার্থ উন্মাদের মতো সব ফুল ছিড়ে ছুরে ফেলছে ফ্লোরে।
পুষ্প একইভাবে বসে আসে। প্রার্থর দিকে না তাকিয়েই খুবই স্বাভাবিক ভাবে বললো।
“-আপনি এমনিতেও আমার জীবন জাহান্নাম করে দিচ্ছেন। আর করতে হবে না। আমি ইতিমধ্যেই আপনার দেওয়া জাহান্নামে পুড়ে মরছি। আর কত মারতে চান?

প্রার্থ এবার পুষ্পের সামনে এসে তার চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরলো। ক্ষোভে লাল হয়ে আছে কালো বর্নের চোখ দুটো। নাকের ডগা ফুলে ফেপে উঠেছে। ঝুটি করা বড় বড় বাবড়ি মতোন চুলগুলো কপালজুরে ছেয়ে আছে অগোছালো ভঙ্গীতে। তীব্র রাগে দাতে দাত চেপে বললো।
“-হাজারবার মারবো। তিলে তিলে শেষ করবো তোকে। আমাকে বিয়ে করার ফল হাড়ে হাড়ে টের পাবি তুই।
পুষ্প এখনও স্বাভাবিক। প্রার্থর চোয়াল ধরে রাখা অবস্থায় একটু মুচকি হাসে সে।সে হাসিতে ঠোট বিসৃত হতে পারে না।প্রার্থর চোখে চোখ রেখে বললো।
“-আপনি হাজারবার মা*রলে আমি হাজারবারই ম*রবো। আপনি তিলে তিলে শেষ করলে আমি তিলে তিলেই শেষ হতে রাজি। আমিও একটু দেখি ভালোবাসার মানুষের দেওয়া কষ্টটা কতটা সুখকর হয়! আপনি চাইলে একেবারেও মেরে ফেলতে পারেন মিস্টার ইউভান।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“-তোর এই সো কলড ভালোবাসাটা না অন্য কোথাও দেখা। আ’ম নট ইন্ট্রেসটেড
বলেই হিংস্র ক্ষুব্ধ থাবা ওয়ালা হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয় প্রার্থ। সে বুঝতে পারছে পুষ্প শক্ত হয়ে গেছে। যে সে শক্ত নয়। এমন শক্ত যাতে এত আঘাত করার পরেও সেখানে ঘা হচ্ছে না।তাকে আর কোন কথা দ্বারা আঘার করে ছিন্নভিন্ন করা যাচ্ছে না।
কিন্তু প্রার্থ নিজেকেও কোনমতে শান্ত করতে পারছে না। শুধুমাত্র মায়ের আরজিতে জোর করে বিয়েটা করেছে সে। নিজের মনের সম্পুর্ন খেলাফ হয়ে তাকে বিয়ের আসরে বসতে হয়েছে।
রুমের এদিক থেকে ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে উন্মাদের মতো। পুষ্পকে সে কিছুতেই বউ হিসেবে মানবে না, মানতে চায় না।

তবে পুষ্প এখনো স্বাভাবিক। এতগুলো কথা, আঘাত কোনটাই যেন তাকে ছুতে পারেনি। প্রার্থ আবারো বললো।
“-বের হ। এক্ষুনি বের হবি রুম থেকে। তোকে আর টলারেট করতে পারছি না। আউট!
ভালোবাসার আনলে পুড়ে শক্ত কয়লা হয়ে যাওয়া মেয়েটি ক্রুদ্ধ অক্ষি মেলে চাইলো তার দিকে। নিজের অধিকার বজায় রেখে শক্ত কন্ঠে বললো।
“-এটা এখন আর আপনার একার রুম নেই। এটা আমার আর আপনার রুম। মানে রুমটা আমাদের। আপনার যদি আমাদের রুমে থাকতে মন না চায় বা আপনি থাকতে না চান তাহলে আপনি চলে যেতে পারেন।
“-যাবি তো তুই। এই ঘর থেকে প্লাস আমাদের সবার জীবন থেকে।
“-যদি তারিয়ে দিতে পারনে তাহলে দিয়েন।
“-তাড়িয়ে দিলে তো নির্লজ্জের মতো এখানেই চলে আসবি। তাড়িয়ে দেব না। পারমানেন্ট ব্যবস্থা করবো।
টলটল করা অক্ষিপট নিয়ে বিদ্রুপ স্বরুপ হাসে পুষ্প। মেঝের দিকে তাকিয়ে বলে।

“-এতটা ঘৃণা?
“-এর থেকেও বেশি।
“-আমার অপরাধ?
“-আমাকে ভালোবাসা, আমাকে বিয়ে করা।
পুষ্প হেসে হেসে জবাব দেয়।
“-আগে জানতাম না ভালোবাসা এতটা ঘৃণা জন্ম দেয়। তবে এটা জানা ছিলো যে- ‘যে ভালোবাসা না চাইতে পাওয়া যায় সেই ভালোবাসার প্রতি কোন মোহ থাকে না।
“-তোর ভালোবাসা চেয়েছে কে? যেখানে তোর ভালোবাসা প্রয়োজন সেখানে ঢাল। আই ডোন্ট নিড ইউর সো কলড লাভ।

“-যেদিন চাইলেও পাবেন না সেদিন বুঝবেন ভালোবাসা কাকে বলে।
“-আমার জানা আছে ভালোবাসা কাকে বলে। কখনো চাইবো না তোর ভালোবাসা।
“-বুঝিয়েন কিন্তু চৌধুরী সাহেব। ঘৃণা থেকেও কিন্তু প্রেম জন্মায়। কে বলতে পারে হয়তো এমন এক দিন আসবে যেদিন আপনি আমার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য আমার মতোই তড়পাবেন অথচ সেদিন আমাকে পাবেন না।
“-নাউ স্টপ দিস ননসেন্স।আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেয়ার এনিথিং এলস। চুপচাপ বেড়িয়ে যা রুম থেকে। আমি ক্লান্ত তোর নাটক দেখে দেখে।
পুষ্প তার পাশের জায়গা দেখিয়ে বললো।
“-তো শুয়ে পড়ুন না জায়গা আছে তো।
প্রার্থর রাগ বাড়ছে। দুহাত শক্ত করে মুঠো করে রাখলো রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
“-তোর কি মনে হয় আমি তোর পাশে ঘুমাবো? হয়তো বের হ নয়তো সোফায় যা।
পুষ্পও ঠিক একই ভাবে বললো।
“-তো আপনার কি মনে হয় আমি বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো বলবো ‘চৌধুরী সাহেব আপনি উপরে শুয়ে পড়ুন আমি নিচে শুয়ে পরছি’।
এরকম কিছু আমার কাছে আশা করে থাকলে না সেটা ভুলে যান। কারন আমি আমার অধিকার কখনোই ছারবো না মিস্টার ইউভান চোধুরী।

পুষ্পর এমন প্রতিবাদী রুপ আগে কখনো দেখেনি প্রার্থ। আগের সেই ভোলাভালা, ন্যাকা মেয়েটাকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না এই পুষ্পের মাঝে। আগে কেউ একটা শক্ত কথা বললেই প্রার্থর কাছে এসে বিচার দিতো। এসে কাদো কাদো হয়ে বলতো, ” প্রার্থ ভাই ও আমাকে এগুলো বলেছে। তুমি কিছু বলো ওদের।”
এখন আর সেই পুষ্পটা নেই। নতুন রুপে আবিষ্কার করা এক অন্য পুষ্পকে দেখছে যেন। যার চেহারা এখন বাচ্চাদের মতো লাগে না। গম্ভীর্যতা এসে ভর করেছে বাচ্চা বাচ্চা মুখটিতে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক রমনী মনে হচ্ছে তাকে।
প্রার্থ আর কথা বাড়ালো না। এই নতুন পুষ্পকে ও যত যাই বলুক সে তার মুখের উপর জবাব দেবে এটা বোঝা শেষ তার। তাই কথা না বাড়িয়ে চলে গেল ওয়াসরুমে। ওকে অন্যভাবে সায়েস্তা করতে হবে। এভাবে কিছুই হবে না।
প্রার্থ ওয়াসরুমে চলে গেলে পুষ্পও কাথা মুড়ো দিয়ে বিয়ের শাড়ী গহনা পড়া অবস্থায়ই শুয়ে পরে। ভেতর থেকে ভারি একটা শ্বাস বের হয়। নিজেকে ভীষন অসহায় লাগছে। তার সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ। ভালোবসার পরিবর্তে ভালোবাসা অর্জন করতে হবে তাকে। নিউটনের তৃতীয় সুত্র অনুযায়ী তো প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। তবে এক্ষেত্রে সেটা কেন হচ্ছে না? কেন ভালোবাসার পরিবর্তে শুধু ঘৃণাই পেয়ে যাচ্ছে সে। এই ঘৃণাটুকুকে কি কখনো ভালোবাসায় পরিনত করতে পারবে ?

এসব ভেবে বুক আরো ভারি হয় তার। চোখের কর্নিশ বেয়ে আপনাআপনিই অশ্রুকণারা গড়িয়ে পরে।
প্রার্থ ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়েই দেখলো বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে সুয়ে আছে পুষ্প। ওকে দেখে জলে ঠান্ডা হওয়া মেজাজটা আবার গরম হয়ে উঠে। হাতে থাকা তোয়ালেটা ছুড়ে মারে ফ্লোরে। বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে গাড়ীর চাবিটা নিয়েই বেড়িয়ে পড়ে রুম থেকে। আপাতত উদ্দেশ্য একটু শান্তির খোজ করা। যেখানে ও এসব ঝামেলা, দুঃখ ভুলে একটু শান্তিতে সময় কাটাতে পারবে। তার যে শান্তি নামক জিনিসটার ভীষন প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় পাবে এই মহামূল্যবান জিনিসটা। জীবনে যত যাই করছে কোনকিছুতেই তার শান্তি নিবদ্ধ নেই। উল্টে অশান্তির ঝড় বয়ে চলে মনে।
তবে একটা কথা বলা যায়। দেবদাসের মতো তার জীবনেও সুখের একটা ঠিকানা আছে। দুঃখ ভুলানোর একটা জায়গা আছে। আপাতত সেই ঠিকানাটাতেই যাবে সে।

নতুন উদীয়মান সূর্য। সাথে কারো জীবনের নতুন পথচলা। বিয়ের পরের প্রথম ভোর তো প্রতিটা মেয়ের জীবনেই স্পেশাল থাকে। নতুন পরিবারে আসা, নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়া, তাদের সাথে মিশে যাওয়া সবকিছুই একটা সদ্য বিবাহিত নারীর জন্য খুবই স্পেশাল।
তবে পুষ্পর জীবনে বিয়ের এই প্রথম ভোরটা একটু বেশিই স্পেশাল। এই যেমন তাকে তার শশুড় বাড়ি নতুন করে দেখতে হবে না। মানুষজনের সাথে নতুনকরে পরিচয় করতে হবে না। সবাই তো তার পূর্বপরিচিত। আপন খালার বাসা। ছোট বেলা থেকেই আসা যাওয়া। আর কত পরিচিত হবে?
কিন্তু এই ভোরটা আরো বেশিই স্পেশাল হলো তার শূন্য বিছানাটা দেখে। বিয়ের রাতেই বর নেই বউয়ের পাশে। বউকে বাসরঘরে ছেড়ে বর গিয়েছিলো নিজের দুঃখ ভুলতে। এরকমটা কি কারো সাথে হয়? হয় না তো! এজন্যই তো পুষ্পর কাছে বিষয়টা স্পেশাল। কারো সাথে এমন হয়না শুধু পুষ্পর সাথে হয়। স্পেশাল হবে না!
রিক্ত চোখে শুন্য বিছানাটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ। এখন আর চোখে জল আসছে না। পুষ্প তো আগে থেকে প্রস্তুত হয়েই এসেছিলো। সে তো জানতো এখানে টিকে থাকতে হলে তাকে হাজার হাজার অশ্রুকণা বিষর্জন দিতে হবে। এখন কয়েকফোটা জল নাহয় বাচিয়েই নিলো।

নতুন লাল রংয়ের একটা জামদানি শাড়ী জরিয়ে রুম থেকে বের হলো পুষ্প। বাড়ির পরিবেশ থমথমে। মনেই হচ্ছে না যে কাল এবাড়িতে একটা বিয়ে হয়েছে। বাইরের ড্রয়িংরুম পুরো ফাকা। এখন ভোর হওয়ায় কেউ ঘুম থেকেই উঠেনি। পুষ্প কোথাও না তাকিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে। আগে আদা দিয়ে এককাপ চা করতে হবে। সকালে আদা চা না পেলে তার বড় আম্মুর দিনই শুরু হয় না। তাই আগেই গেল চা বানাতে।
ড্রয়িংরুম পেরিয়ে রান্না ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেল ভেতরে পুষ্পর দ্বিতীয় শাশুড়ী কে। মানে চাচী শাশুড়ী যাকে বলে। প্রার্থর চাচা আহনাফ চৌধুরীর স্ত্রী অহনা বেগম। তিনি চা বানাচ্ছেন। পুষ্প ভেতরে ঢুকে আগে চাচী শাশুড়ীকে সালাম দিলো।
এ বাড়িতে কত আসা যাওয়া ছিলো পুস্পর। চঞ্চল চিত্তে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াতো আগে। এখন কি আর সেই পুস্প হয়ে থাকা যাবে! এখন তো বাড়ির বউ। সালাম তো দিতেই হয়।
অহনা বেগম পুষ্পকে একপল দেখে সালামের উত্তর নিলো। মুখে কোন হাসি নেই। কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললো।

“-উঠে পড়েছো তাহলে। আমি আরো ভাবলাম আগেকার মতো তোমাকে দশটার সময় টেনে তুলতে হবে।
“-আগের পুষ্প আর এই পুষ্পের মধ্যে বিস্তর ফারাক আন্টি। আগে ফুল প্রার্থ ভাইয়ের খালাতো বোন ছিলো। এখন পুষ্প প্রার্থ ভাইয়ের স্ত্রী। সম্পর্ক বদলে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষের আচরনও বদলে যায়।
অহনা বেগম গলায় খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললো।
“-হয়েছে বুঝেছি। আগে বলো তোমার স্বামী কোথায়? ও উঠলে ওর কফি দিয়ে আসো। আমি পূর্নি আপার কাছে যাচ্ছি। চা দিয়ে আসি আপাকে।
পুষ্পর হ্যা না উত্তর দেওয়ার আগেই সদর দরজায় কলিং বেলের শব্দ হলো। দুজনেই রান্না ঘর থেকে বাইরে বের হলো। এত সকালে কে আসলো আবার? অহনা বেগম দরজা খুলতে যেতে চাইলে পুষ্প তাকে বাধা দিয়ে নিজে খুলতে গেল।

দরজা খুলতেই ওপাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো প্রার্থ নামক পাষণ্ড পুরুষটিকে যে তাকে বিয়ের রাতে একলা ঘরে রেখে কোথাও চলে গেছে।
প্রার্থর শরীর টলছে। দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই হয়তো পরে যাবে।
অহনা বেগম এগিয়ে আসলেন ওদের দিকে। প্রার্থকে বাইরে থেকে আসতে দেখে তিনি ভ্রু কুচকে শুধালেন।
“-প্রার্থ তুই রাতে বাড়িতে ছিলিনা? কোথায় ছিলি? আবারও সেই বারে গিয়েছিলি। মদ খেয়ে এসেছিস?
প্রার্থ কিছু না বলে হাটা ধরলো ভেতরে যাওয়া জন্য। বিধিবাম মাল খেয়ে টাল হয়ে থাকায় পড়ে যেতে নিলো। সাথে সাথে পুষ্প এসে তার এক বাহু চেপে ধরলো।
অহনা বেগম নাক সিকোয় তুলে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো।

“-ও রাতে বাড়িতে ছিলোনা? তুমি থাকতে ও বাড়ির বাহিরে কেন থাকলো? তুমি তো স্ত্রী এখন প্রার্থর , তাহলে মদের ওখানে যাওয়া থেকে আটকাতে পারলে না কেন স্বামীকে?
পুষ্পর নির্লিপ্ত জবাব।
“- স্ত্রী হিসেবে মানলে তো আটকাবো তাকে। আমার মর্যাদাটা উনার কাছে তুচ্ছ। আমি বলা না বলা উনার কাছে একই কথা।
পুষ্পর কথার ভেতর যেন কত শত দুঃখ লুকিয়ে। অদ্ভুত এক খামের ভাজে খুব স্বযত্নে লুকিয়ে রেখেছে সেই দুঃখগুলো। পুষ্পর চেহারার দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলেন না অহনা বেগম। শুধু আদেশ দিলেন
“-ঘরে নিয়ে যাও ওকে। আমি টক গুলিয়ে আনছি। খাইয়ে দিও। আজ তোমাকে রান্না করতে হবে না।
পুষ্প প্রার্থকে ধরে ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিজেদের রুমের সামনে নিয়ে গেল। আচমকা প্রার্থ পুষ্পকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। টলতে টলতে বলে।

“-চন্দ্রমুখী হতে এসেছিস? দেবদাসের জন্য চন্দ্রমুখী হতে চাস?
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ায় মেয়েটা কিছুটা পিছিয়ে গেল কিন্তু আবারও এসে প্রার্থকে ধরলো। চোখ, মুখ শক্ত রেখে শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো।
“-আপনি কোনো দেবদাস নন যে আমি চন্দ্রমুখী হতে যাবো। আপনি প্রার্থ আমি পুষ্প।
পরপর খানিকটা নিভু নিভু কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বললো।
“-আমি তো আপনার ফুল হতে চাই প্রার্থ ভাই। আমাকে আগের মতো ফুল করে নিন না।
প্রার্থ ওকে আবার সরিয়ে দিলো। ধমকের সুরে বললো।
“-ফুল হওয়ার অধিকার নেই তোর। সেই অধিকার হারিয়ে ফেলেছিস তুই। আর কখনো ফুল হতে পারবি না। ফুল হওয়ায় কোন যোগ্যতা নেই তোর মাঝে।
ততক্ষনে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়েছে দুজন। প্রার্থ ধুপ করে অগোছালো হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। পুষ্প ওর পা থেকে জুতোটা খুলে দিয়ে পা টা খাটের উপরে তুলে দিলো। প্রার্থ আর কিছুই বলতে পারবে না। সে বেহুস। পুষ্প কিছুক্ষন তার শ্যামবর্নের সুন্দর স্নিগ্ধ মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো নির্বিশেষ । চোখ থেকে বেয়ে পরলো একফোটা নোনা জল।

প্রার্থর শিয়রের পাশে বসলো আলগোছে। কপালজুরে ছড়িয়ে থাকা বড় বড় চুলগুলোকে নিজের হাতে পিছনে ঠেলে দিলো। ওমন মায়াভরা কৃষ্ণবর্ণের ছেলেটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষন। সারারাত জাগার ফলে চোখদুটো ফোলা ফোলা হয়ে আছে। চোখের পাপরিগুলো কি সুন্দর হয়ে লেপ্টে আছে চোখটায়। শ্যাম বর্ণের মানুষের ভ্রু আর চোখগুলো গুলো মনেহয় একটু বেশিই সুন্দর হয়। যেমন প্রার্থর চোখের দিকে তাকালে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে হয়। চোখের সৌন্দর্যই হয়তো মানুষের সর্বনাশ ডেকে আনে।
ঘুমন্ত প্রার্থর দিকে মুগ্ধের ন্যায় চেয়ে থেকে কন্ঠে অসহায়ত্ব নিয়ে বললো।

“-আপনাকে কেন এত ভালোবাসি প্রার্থ ভাই? আপনার সৌন্দর্য দেখে? কিন্তু সবাই তো বলে আপনি শ্যামবর্ণের। আপনার পাশে নাকি আমার মতো ফর্সা মেয়েদের মানায় না। তাহলে কেন আমার আপনাকেই চাই? আপনি রকস্টার বলে? কিন্তু আমার তো রকস্টার প্রার্থ ভাই পছন্দ নয়। আমি তো আপনার গায়ক হওয়ার আগে থেকেই আপনাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস করুন আমি আমার অবাধ্য মনটাকে হাজারবার বুঝিয়েছি যে প্রার্থ ভাই তোর কখনো হবে না। মরিচিকার পিছনে ছুটিস না। শেষে ধোকা ছাড়া কিচ্ছু পাবি না। তবুও পাষাণ মনটা শুধু আপনার প্রেমতৃষ্ণায় কেন ভুগে? যখনই সরে আসতে চাই তখনই মন বলে উঠে ‘তুই পারবি পুষ্প, পাষান পুরুষটার বুকে একদিন তোর নাম ঠিকি লিখতে পারবি।’ তখন আমার সকল আত্মসম্মান ভুলে গিয়ে আপনাকে পাওয়ায় তৃষ্ণায় ছুটে চলি। এতটা বেহায়া কেন করলেন আমাকে?

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২