আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৫
তানহা ইসলাম বৈশাখী
বিছানার উপর এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জামাকাপড়। সেখান থেকে খুব পক্কতার সাথে একটা একটা করে জামা ব্যাগে ভরছে পুষ্প। বেশিরভাগই রয়েছে শাড়ী। বিয়ের পরে শাড়ী পরবে বলে সব শাড়ী কিনে এনেছিলো এবাড়িতে। অন্য জামাকাপড় হবে দু একটার মতো। আর সব নতুন নতুন শখের শাড়ী।
শাড়ীগুলো সব লাগেজে ভরে চেনটা টেনে দিলো পুষ্প। ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো ভারি দীর্ঘ শ্বাস। ধপ করে খাটের এক পাশে বসে পড়লো। ভেতর থেকে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে। আজ তাকে চলে যেতে হবে এবাড়ি থেকে। মনে পড়ে গেলো কাল রাতের সেই ঘটনা।
নিজের চোখকে বাধ মানাতে পারলো না। দুচোখ বেয়ে বর্ষন শুরু হলো।
কাল ছিলো প্রার্থর জ্বরে পড়ার চতুর্থ দিন। এবং অবিশ্বাস্য ব্যাপার এই চারদিনের মাথায় প্রার্থ একদম সুস্থ হয়ে গেছে। যে ছেলের সাতদিনের আগে কোনদিন জ্বর কমেনি সে ছেলে চার দিনে সুস্থ হয়ে গেলো ব্যাপারটা সবার কাছেই খুব আশ্চর্যের এবং খুশিরও। পূর্নিমা বেগমের মুখ থেকে তো পুষ্পর নামই সরছে না। তার ছেলের এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার পেছনে তো পুষ্পই ছিলো। সকাল থেকে রাত অব্দি পুষ্প খেটেছে শুধু প্রার্থর পেছনে। সকালের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে রাতের জলপট্টি। সব করেছে। মাথা ধুয়িয়ে দেওয়া, টাইম মতো ওষুধ খাওয়ানো, খাবার খেতে ইচ্ছে করেনি বলে নতুন নতুন ডিস তৈরী করে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছে। এসব করেছে পূর্নিমা বেগমের সাহায্যে। তাকে সামনে বসিয়ে সব করেছে যাতে প্রার্থ কোন কিছুতে বারোন করতে না পারে। নিজে অসুস্থ থাকা সত্তেও সে প্রার্থর সেবা করেছে। কিন্তু পাষণ্ড পুরুষটার মন কি একটুও নাড়াতে পেরেছে সে? মনে হয় না। পারেনি। পারলে তো আর কাল রাতে এত অপমানিত এত লাঞ্ছিত হতে হতো না।
কাল সন্ধ্যার দিক থেকেই প্রার্থ মোটামুটি সুস্থ। তবুও রাতে পুষ্পই প্রার্থকে খাইয়ে দিয়েছে পূর্নিমা বেগমের কথায়। এরপর রাতে যখন পুষ্প নিচের সব কাজ শেষ করে ক্লান্ত হয়ে রুমে ফিরেছে তখনই শিকার হয়েছে প্রার্থর হিংশ্রতার।
পুষ্প রুমে ঢুকতেই প্রার্থ তার হাত টেনে দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরে।
রাগে রি রি করতে করতে বলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“-সুযোগ নিচ্ছিস? অসুস্থ করে তার সুযোগ নিচ্ছিস? কাছে আসার বাহানা খুঁজছিস? কি ভেবেছিলি? প্রার্থ অসুস্থ হলে তার সেবা করে তার মন পেয়ে যাবো। এটাই ভেবেছিলি তো? রোজ রোজ মাকে সামনে বসিয়ে রেখে সুযোগের সৎ ব্যাবহার করে কাছে আসার চেষ্টা করেছিস তুই। মনে রাখিস প্রার্থ কখনো তোর জালে ফাসবে না।
হঠাৎ যে পুষ্প এমন কিছুর মুখোমুখি হবে তা কখনো বুঝতে পারেনি। প্রার্থ তার দুই বাহু ধরে চেপে আছে। হাতদুটো ব্যাধায় বিষিয়ে উঠেছে। তার থেকেও বেশি ব্যাধা লাগছে মনে। নাজুক মনে হুটহাট এমন ব্যাথা পেলে ভীষন কষ্ট লাগে। কিছু না করেও এমন অপবাদ কে সহ্য করে? কার এত ক্ষমতা আছে মিথ্যে অপবাদ সহ্য করার? অনেকের থাকলেও পুষ্পর সহ্য হলো না। সবকিছু এত সহ্য করা যায় না। এত অপমান, অপবাদ, লাঞ্ছনা পুষ্পর সহ্য হলোও না।
প্রার্থর বুক বরাবর হাত রেখে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তাকে। অশ্রুসিক্ত নয়নে বাঘীনির ন্যায় বাক্য ছুড়লো।
“-আপনি পাগল। অসুস্থ মন মানসিকতা নিয়ে বাস করেন আপনি। আপনাকে ভালোবাসা আমার চরম ভুল ছিলো। আগে তো এমন ছিলেন না আপনি। তাহলে এখন কেন হলেন? এরকম অমা*নু*ষি*ক রূপটা আগেই দেখিয়ে দিতেন। তাহলে না মন দিতাম আপনাকে না মন ম*র*তো আপনার কারনে।
আমার সেবা, আমার পরিশ্রম, আমার কষ্ট শুধু সুযোগে সৎ ব্যাবহার মনে হলো আপনার কাছে? ঠিকাছে থাকেন আপনি আপনার নিচু মন মানসিকতা নিয়ে। কারন আমি আমার তরফ থেকে একটুও সাফাইও গাইবো না। যে অবুঝ তাকে বোঝানো দ্বায়। যে একটা সাইকো তাকে সুস্থ করা যায় না।
পুষ্পর কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রার্থ আবারো তাকে দরজার সাথে ঠেসে ধরলো। পুষ্পর করা অপমান এবার তার গায়ে সহ্য হলোনা। চোখদুটো রক্তিম আভায় ছেয়ে গেলো। চুলগুলো সব কপালের উপর এবড়োখেবড়ো হয়ে পরেছে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পুষ্পর চোয়াল শক্ত হাতে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“-তাহলে কেন পড়ে আছিস এই সাইকো, অমানুষ, অস্বাভাবিক মানুষের কাছে? ছেড়ে যাচ্ছিস না কেন?
পুষ্প নিজের চোয়াল থেকে প্রার্থর হাত ছাড়িয়ে বললো।
“- ছেড়ে তো যাবোই। কিন্তু আমি চেয়োছিলাম ছেড়ে যাওয়ার আগে আপনার মনে একটু দাগ কেটে যাবো। কিন্তু আমি তো ভুলেই বসেছিলাম যাদের মন নেই তাদের মনে দাগ কাটা যায় না। আপনার সাথে আমার সম্পর্কের ইতিটা এখানেই ধরে নিন। এতদিন ধরে যে সম্পর্কটাকে আমি ধরে বেধে রেখেছিলাম সেটাকে আমি ছেড়ে দিলাম। আপনি মুক্ত সাথে আমিও। নিজে থেকে আর কোনদিন ফিরবো না আপনার কাছে। বেস্ট উইসের ফর ইউর লোনলি সাইকো লাইফ মিস্টার ইউভান প্রার্থ চৌধুরী।
প্রার্থ একই স্বরে বললো।
“-কিপ ইউর বেস্ট উইশেস টু ইউরসেল্ফ। ইউ নিড ইট মোর দ্যান মি।
“-ওকে লেট’স সি।
কথা শেষেই পুষ্প আবার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো প্রার্থকে। দরজা খুলে ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো রুম থেকে। পায়ের ব্যাথাটা তুলনামূলক কম ছিলো। একপ্রকার দৌড়েই চলে যায় পাশে প্রিয়ার রুমে।
প্রিয়া অনেকক্ষণ তাকে জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে? কেন কাঁদছে? এভাবে কেন রুম থেকে এলো? প্রার্থ ভাই কি বলেছে? নানা ধরনের প্রশ্ন করছিলো। শেষে পুষ্প নিজেকে সামলিয়ে বললো।
“-কাল সকালেই আমরা এবাড়ি থেকে চলে যাবো তাতে যাই হয়ে যাক। এখানে আর নয়।
প্রিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো।
“-কিন্তু কেন? কালকেই কেন? আমাদের তো কয়েকদিন পরে এমনিতেই বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো। আম্মুর ছুটি হলেই প্রার্থ ভাইকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো।
“-সব ক্যান্সেল। আমরা কাল যাবো মানে কালকেই যাবো। তুই থাকতে চাইলে তুই থাক। আমি চলে যাচ্ছি সকালে।
“-বুবু কি হয়েছে খুলে বলবে আমাকে? প্রার্থ ভাই আবার কি বলেছে?
“-কিছু না। উনি উনার মানসিকতা অনুযায়ী কথা বলেছে ব্যাস আর কিছু না।
“-কিন্তু কি বলেছে সেটা তো বলো।
“-আমাদের মাঝের কথা আমাদের মাঝেই থাক প্রিয়ু। জানতে চাস না আর এ বিষয়ে।
“-ঠিকাছে বলো না কিন্তু এখন যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বুবু। ভাই কেমন হয়ে গেছে তুমি তো জানোই। তার কথা গায়ে নিও না তো। ভাইকে টাইট দিতে হবে বুঝেছো। নাহলে আর ঠিক করা যাবে না।
“-আমি ঠিক করতে চাইও না। উনি এভাবেই থাকুক। আস্তে আস্তে ঘৃণারা জেকে ধরুক আমাকে। কখনো তার জন্য প্রেম না আসুক মনে। না পাওয়ার শহরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেওয়ায় উত্তম। একা বেচে থাকাই সব থেকে সহজ মাধ্যম।
“-কি হয়েছে বুবু। এমন কথা কেন বলছো? খুলে বলো না আমাকে।
“-কিশরী বয়সের প্রেম তো তাই প্রেমটা মনের ভেতর এমন গেধে গেছে বুঝলি । না পারছি এটা ধরে রাখতে না পারছি উপড়ে ফেলতো। এখনকার মতো যদি একটু বুঝদার হতাম তাহলে কখনো মনে ভালোবাসা পুষতাম না। ভুল যখন করেছি ভুলের মাশুল তো দিতেই হবে।
বোনের এমন বেদনাদয়ক কথায় প্রিয়ার নিজেরই কান্না চলে আসছে। বসা অবস্থায় বোনকে জরিয়ে ধরে বললো।
“-কেদোনা বুবু। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি এখন যেতো পারবে না এখান থেকে। ওই ছানার বাচ্চাও এবাড়িতে। তুমি তো জানোই প্রার্থ ভাইয়ের প্রতি কেমন ছুঁকছুঁক ভাব তার। তুমি গেলেই দেখবে সুযোগ নিবে।
“-তাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। সে নিজেকে বাচিয়ে রাখতে জানে। ওসব মেয়ে তার মনে ঢুকতে পারবে না।
প্রিয়া অনেক বুঝিয়েও পুষ্পকে টলাতে পারেনি। সে কাল সকালে যাবে মানে যাবেই। পারলে রাতেই চলে যাবে কিন্তু সম্ভব না। এত রাতে বাড়ি গেলে সবাই সন্দেহ করবে। আর পুষ্প কাউকে তাদের এমন সম্পর্কের কথা জানাতে চায় না। যে সম্পর্কের মাঝে কোন বিশ্বাস নেই ভালোবাসা নেই আছে কেবল হিংস্রতা এবং অবহেলা। সম্পর্ক কখনো একদিক থেকে সামলালে তা টিকে থাকে না। দুদিক থেকে দুজনকে সমান ভাবে আগলে রাখতে হয় সম্পর্কের বন্ধন। পুষ্পদের মাঝে তো শুধু পুষ্প একাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার। প্রার্থ তো শুধু ভাঙার প্রয়াস চালাচ্ছে। এমন সম্পর্ক কখনো টিকে থাকতে পারে না।
কালকের সম্পূর্ন কথা মনে আসতেই আবার মন ভেঙে আসতে চাইলো কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো সে। আর না। এত কষ্ট করে এত কান্নাকাটি করে কি হবে? কিছুই হবে না। যারা সব ঠিক হওয়ার আশায় দিনের পর দিন বসে বসে কান্না করে তাদের জীবন ওই এক জায়গায় থেমে থাকে। পুষ্প এক জায়গায় থেমে থাকতে চায় না। এসব পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতো চায়। সব ঠিক হওয়ার আশায় বসে থাকলে চলবে না।
বিছানা থেকে উঠে লাগেজটা নিচে নামালো সে। সকালে রান্নাবারা শেষ। খাওয়া দাওয়ার পালা শুরু হয়নি এখনো। পুষ্প রান্না শেষ করেই উপরে চলে এসেছে জামা কাপড় গোছাতে। প্রিয়াকেও বলে এসেছে সব রেডি করতে। বাড়ির কেউই জানেনা যে সে আজ যাবে। এখন নিচে গিয়ে সবাইকে জানিয়ে বিদায় নিবে। আগেই কাউকে জানায়নি কারন আগে বললে তারা যে করেই হোক রেখে দিতো। এখন সব রেডি থাকলে কোন বাহানাই চলবে না। বিদায় নিয়েই সোজা বাড়িতে চলে যাবে। সকালের নাস্তাও বাড়িতে গিয়ে করবে ভেবে রেখেছে।
প্রিয়া নিজের জামাকাপড়, জিনিসপত্র ভর্তি লাগেজ নিয়ে সিড়িঁ দিয়ে নিচে নামছে। ভারী ব্যাগ নিয়ে সিড়িঁ নামতে কষ্ট হচ্ছিলো মেয়েটার। তাই আস্তে ধীরেই নামার চেষ্টা করছে। অন্ত নিচেই ছিলো। প্রিয়াকে লাগেজ নিয়ে নামতে দেখে ভ্রু কুচকে গেলো তার।
এমনিতেই দুদিন ধরে প্রিয়ার সাথে কথা বলে না অন্ত। যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে তাকে। প্রিয়াকে দেখলেই তার বুকে ঝড় বয়ে যায়। মনের ভেতর বারি খায় এক বাক্য ” তুই যাকে ভালোবাসিস সে অন্যকাউকে ভালোবাসে। তুই যাকে পেতে চাস সে অন্য কাউকে পাওয়ার নেশায় মরিয়া।”
এই দুনিয়ায় কত মানুষ আছে যারা এক পাক্ষিক ভালোবাসার শিকার। আর একপাক্ষিক ভালোবাসা কত কষ্টের সেটা অন্ত খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে।
পুষ্প আপুও তো প্রার্থ ভাইকে একপাক্ষিক ভাবে ভালোবাসে। তারও মনেহয় এই একই কষ্ট।
কি অদ্ভুদ! অন্তর ভাই কষ্ট দিচ্ছে পুষ্পকে। পুষ্পর বোন কষ্ট দিচ্ছে অন্তকে। মনেহয় শোধবোধের খেলা চলছে। এর শোধ ও তুলে নিচ্ছে ওর শোধ এ তুলে নিচ্ছে। মাঝখান থেকে ধুকে ধুকে মরছে পুষ্প আর অন্ত।
অন্তর এসব ভাবনার মাঝেই প্রিয়া ড্রয়িংরুমের সামনে এসে দাড়াঁলো। অন্ত কথা বলতে না চাইতেও কথা বললো। কপাল গুটিয়ে বললো।
“-ব্যাগপত্র নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
প্রিয়া তাকালো তার দিকে। দুদিন পরে মনেহয় ঠিকঠাক চেহারা দেখতে পেলো। দুদিন ধরে তো সামনেই আসে না অন্ত । প্রিয়া তো শুধু ভয়ে ভয়ে ছিলো কাউকে কিছু বলে না দেয় আবার। কিন্তু সে কাউকেই কিছু বলেনি। অন্তর চেহারা দেখে তো মনে হয় না যে ওইদিনের কথা এখনো মনে রেখেছে সে। তাই প্রিয়া নির্দিধায় অন্তর কথার উত্তর দিয়ে বললো।
“-বাসায় যাচ্ছি ভালো থেকো। আর জালাবো না তোমাকে।
অন্ত হুট করে উঠে দাঁড়ালো বসা থেকে। চিন্তিত গলায় বললো।
“- কেন? কি হয়েছে তোর? তোর কলেজও তো এখনো খুলেনি। এখন কেন যাবি?
“-এমনিই চলে যাচ্ছি। তোমাদের বাসায় আর কতদিন থাকবো? অনেক জ্বালাই তো তোমাদের। তাই চলে যাচ্ছি।
অন্ত একটু এগিয়ে গেলো। সে যতই প্রিয়াকে এড়িয়ে চলুক সারাদিন বাড়িতে থাকলে একটু চোখের দেখা অন্তত দেখা যায়। না থাকলে তো একদম শূন্য শূন্য লাগবে। যাওয়ার কথা শুনেই মন কেমন করে উঠছে। অন্ত কন্ঠ নরম করে বললো।
“-কে কি বলেছে তোকে? আমি কিছু করেছি? কেউ বকেছে?
“-উহুম। কে বকবে?
“-তাহলে হঠাৎ চলে যাচ্ছিস কেন? বল না কি হয়েছে? আমি ঠিক করে দিবো। তবুও এখন যাস না।
প্রিয়া গোমড়া মুখে বললো।
“-আমি তো সবসময় তোমার পেছনে লেগে থাকি। তোমাকে নাকি জ্বালাই সারাক্ষণ। তাহলে এখন যেতে দিতে চাইছো না কেন?
“-তুই বুঝলে তো হতোই। এখন যেতো বারন করছি তোর ভালোর জন্য। তুই বাড়িতে গিয়ে একা একা কি করবি? এর চেয়ে তুই এখানেই থাক আরো কদিন পুষ্প আপুর সাথে।
প্রিয়া তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো।
“-আমি একা নই তোমার পুষ্প আপুও যাচ্ছে।
অন্তর কপাল আবারও কুচকে এলো। চিন্তিত স্বরে বললো।
“-পুষ্প আপুও যাবে। কিন্তু কেন? কি হয়েছে? এখন তো আপুর যাওয়ার কথা নয়। ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েছে?
“-জানি না। আমাকে বলেনি ওইভাবে কিছু। শুধু বললো বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন যাওয়া হয় না তাই।
এমন সময় উদয় হলো সানা। সোফায় আয়েশ করে বসে বললো।
“-ফাইনালি যাচ্ছো তোমরা।
প্রিয়া নাম মুখ কুচকে বললো।
“-হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ‘ফাইনালি যাচ্ছো’। এটা আমার বুবুর শশুর বাড়ী প্লাস আমাদের বড়আম্মুর বাড়ি। ফাইনালি যাচ্ছো কথাটা কোত্থেকে আসছো?
সানা চিল মুডে ভাব নিয়ে বললো।
“-চিল বেবি! তোমাদের তো আমি তাড়িয়ে দিচ্ছি না তোমরা যাচ্ছো তাই বললাম।
“-কেন বলবে শুনি। তুমি কে…..
কথা শেষ করতে পারলো না প্রিয়া। তার আগেই পুষ্পর কর্কশ শব্দে থেমে গেলো। পুষ্প রাগান্বিত হয়ে বললো।
“-কি হচ্ছে প্রিয়ু? তুই সানা আপুর সাথে এভাবে কেন কথা বলছিস? তোকে না বারন করেছি কারো সাথে এভাবে কথা বলবি না। সে যেই হোক। কথা ভালো করে বলবি।
প্রিয়া রাগ করে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বুবুর উপর আর কিছু বললো না।
পুষ্পর একহাতে ব্যাগের হাতল ধরা অন্য হাতে এলাচি। অন্ত পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে বললো।
“-আপু তোমরা এই সময়ে বাসায় কেন যাচ্ছে। কি হয়েছে কিছু না বলে এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলে?
“-কিছু হয়নি অন্ত। মাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। বাড়িটাকেও অনেক মিস করছি তাই যাচ্ছি। চিন্তা করিস না এমনি আর কিছু হয়নি। তাড়াতাড়িই চলে আসবো। নিজের খেয়াল রাখিস।
সানা বললো।
“- সাবধানে যেও। অনেক দিন থেকে এসো। এখানকার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। আমি দেখে নেবো।
পুষ্প মুখে কৃত্তিম হাসি ঝুলিয়ে বললো।
“-অবশ্যই। যদি পারো আমার অবর্তমানে আমার কাজগুলোও করে দিও।
“- সিউর।
এমন সময় দেখা গেলো পূর্নিমা বেগম আসছেন প্রার্থর হাত ধরে। প্রার্থ সকাল থেকে মায়ের রুমেই ছিলো। বাইরে যায়নি এখনো। মায়ের সাথে খাওয়া দাওয়া করেই বের হবে। পূর্নিমা বেগম আসার সময়ই শুনলেন পুষ্পর বাড়ি যাওয়ার কথা। তিনি চিন্তিত হয়ে বললেন।
“-পুষ্প। মা কি হয়েছে। তুই বাড়িতে কেন যাচ্ছিস হঠাৎ। প্রার্থ কিছু বলেছে তোকে।
পুষ্প তার কাছে এসে বললো।
“-এমন কিছুই না বড়আম্মু। বাড়ির কথা অনেক মনে পড়ছে। আম্মুর আব্বুকেও দেখতে ইচ্ছে করছে। এখন যাই কদিন পরে আবার আসবো।
তিনি মানলেন না পুষ্পর কথা। উদ্বেগ হয়ে বললেন।
“-তুই মিথ্যে বলছিস। আমি জানি তোদের দুজনের মাঝেই কিছু হয়েছে। প্রার্থও আজ সকাল থেকে কেমন কেমন হয়ে আছে। আমাকে তোরা কেউ কিছু বলছিস না কেন? ও প্রার্থ। তুই কি বলেছিস আমার মেয়েকে? ও এখন কেন যেতে চাইছে?
ভদ্রমহিলা উত্তেজিত হয়ে পরছেন। এমনিতেই কথায় কথায় চিন্তা করে শরীরের এই হাল। এখন আবার না অসুস্থ হয়ে যায়। প্রার্থ তাকে সোফায় বসিয়ে বললো।
“-,শান্ত হও মা। এমন করলে অসুস্থ হয়ে পরবে।
পুষ্পও বললো।
“-এমন কিছুই হয়নি বড় আম্মু তুমি শান্ত হও। আমাদের মাঝে কোন কিছুই হয়নি। আমিই উনাকে রাতে বলেছিলাম বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে অনেক তাই আরকি।
“-আমি বিশ্বাস করিনা। প্রার্থ সকাল থেকে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো৷ কিছু জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলছেও না কিছু। ওর তো জ্বরও নেই এখন। ও কেন মন মরা হয়ে আছে। তোদের মাঝে মনোমালিন্যতা হয়ে থাকলে ঠিক করে নে না।
প্রৌঢ়ার কথায় পুষ্প চোখ তুলে তাকালো প্রার্থর দিকে। প্রার্থ পুষ্পের দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখাচোখি হয়ে গেলো দুজনের। প্রার্থ সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো। মায়ের উদ্দেশ্যে বললো।
“-মা আমি তো মাঝে মাঝেই তোমার কাছে এসে শুয়ে থাকি। আজ এভাবে নিচ্ছো কেন। আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি। ও যেতে চাইছে যেতে দাও ওকে। আবার চলে আসবে।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৪
পুষ্পও আবার বোঝালো তাকে যে তাদের সম্পর্ক ঠিক আছে। কোন মনমালিন্যতা হয়নি তাদের মাঝে। অনেকক্ষণ বোঝানোর পর মানলো সে। তবে বলে দিলো দুদিনের বেশি যেন না থাকে। পুষ্প না খেয়েই যেতে চেয়েছিলো কিন্তু পূর্নিমা বেগম মানলেন না। না খেয়ে যেতে দিবে না। নিজের হাতে দুইবোনকে খাইয়ে দিয়েছেন। প্রিয়াকে রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু পুষ্প সেখানে একা থাকবে সারাদিন তাই আর আটকাতে পারলেন না।
পুষ্পদের একা একাও যেতে দেননি তিনি। বলেছে খাওয়া দাওয়া শেষে প্রার্থ নিজে গিয়ে যেন দিয়ে আসে।