আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৫ (২)
তানহা ইসলাম বৈশাখী
পুষ্প প্রিয়া গাড়িতে বসে আছে। দুজনেই ব্যাক সিটে বসা। দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। পূর্নিমা বেগমের জন্যই প্রার্থর সাথে যেতে হচ্ছে তাদের।
প্রার্থ বাগানের দিক থেকে হেটে আসছে এই দিকে। গায়ে সাদা রংয়ের একটা শার্ট ইন করে পরা। শার্টের বাম পাশে আবার লম্বালম্বি একটা কালো দাগ। বেশ মানিয়েছে তাকে শার্টটায়। শার্টের হাতা দুটো কুনুই অব্দি ভাজ করা। চুলগুলো সব পেছনে ঠেলে দেওয়া কিন্তু বড় বড় হওয়ায় বাতাসের দমকায় তা আবার কপালে এসে পড়ছে। হাত দিয়ে আবার পেছনে ঠেলে দিচ্ছে সেগুলো।
পুষ্প একবার তাকিয়ে দেখলো তাকে। এরপর আবার চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
প্রার্থ গাড়ির সামনে এসে দেখে দুজনেই পেছনের সিটে বসা। শক্ত পেশিবহুল হাতে পেছনের দরজাটা খুলে ফেলে। গম্ভীর্যতার সাথে উচ্চারন করে।
“-এম আই ইউর ড্রাইভার?
পুষ্প তার কোলে থাকা এলাচিকে দেখতে ব্যাস্ত। এদিকে তার কোন হেলদোল নেই। প্রার্থকে পুরোপুরি ইগনোর করছে সে। প্রিয়া প্রার্থর দিকে তাকিয়ে বললো।
“-তা কেন হবে?
প্রার্থ কটমটিয়ে বললো।
“-তাহলে দুজনেই পেছনে কেন বসে আছিস? সামনে আয়।
“-আমি কেন যাবো? তোমার বউকে নিয়ে সামনে বসাও। আমি এখানেই বসবো।
প্রার্থ তাকালো পুষ্পর দিকে। পুষ্প একইভাবে বসে। তার কোন নড়চড় নেই। ওকে ইগনোর করতে দেখে চোয়াল শক্ত হলো প্রার্থর। ধারালো চোয়ালে শশকের ন্যায় বাক্য ছুড়লো।
“- সামনে আসতে বলেছি না তোকে? সামনে আয়।
প্রার্থ যে পাশের দরজা খুলেছিলো সে পাশে ছিলো পুষ্প। তারপরেই ছিলো প্রিয়া। সে রাগে তার পাশের দরজা টা খুললো। বিড়বিড় করে বললো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- ধুর ভাল্লাগে না। তোমাদের স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ার মাঝে আমাকে কেন ফাসাচ্ছো বলো তো?
প্রিয়া ধুপধাপ পায়ে গিয়ে বসলো সামনের সিটে। প্রার্থ বসে পরলো ড্রাইভিং-এ।
প্রার্থ গাড়ি স্টার্ট করার আগে একবার রিয়ারভিউ মিররে তাকালো। ছোট্ট মিররটাতে ফুটে উঠেছে এক জোড়া নিখুত সুন্দর অক্ষিপট। যে অক্ষিতে ব্যাস্ততা। নয়ন জোড়া ঘুরে ফিরে দেখছে তার কোলে বসা প্রানীটিকে। ওই নিখুত চোখগুলোকে তার কাছে ভোরের শিশিরে ভেজা পুষ্পের ন্যায় স্নিগ্ধ লাগছে। কোমল, সুন্দর, নিখুত এবং আকর্ষণীয়।
হঠাৎ ওমন আকর্ষণীয় ও সুন্দর লাগার কারণ কি? উত্তর তো প্রার্থরও অজানা।
সেই যে গাড়িতে উঠে বসেছে। এখনো ওই মিররেই তাকিয়ে। গাড়ি স্টার্ট করার নাম গন্ধ নেই। প্রিয়া চোখ মুখ কুচকে প্রার্থকে ডাকলো।
“- কি দেখছো ভাই? গাড়ি কখন চালাবে বাসায় কখন যাবো? বসে আছো কেন?
প্রিয়ার ডাকের শুরুতে পুষ্পও তাকালো আয়নাটার দিকে। পুষ্পর তাকানো দেখে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে আনলো প্রার্থ। এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো।
“-চুপচাপ বসে থাক।
সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট করলো। তুরন্ত গতীতে ছুটে চললো সাদা রংয়ের গাড়িটি।
পুষ্প বাঁকানো ভ্রু আরো খানিকটা বাঁকিয়ে তাকিয়ে রইলো আয়নার দিকে। তার মনেহচ্ছে আয়নায় প্রার্থ তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আবার মনে হচ্ছে না তাকায় নি। এটা হয়তো তার চোখের ভুল। মনে মনে দেনামনা করে চললো। তাপর ভুলিয়ে নিলো এমন কিছুই হয়নি। শুধু শুধু আজাইরা জিনিস ভেবে লাভ নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পুষ্পদের বাড়ির সামনে এসে পৌছালো। দুবাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই খুব বেশি সময় লাগলোনা। ত্রিশ মিনিটের মাথায় পৌছে গেলো তারা। একদম গেটের সামনে এসে থেমেছে গাড়িটি।
পুষ্পদের বাড়ি প্রার্থদের বাড়ির মতো ওতো বড় নয়। ছোটখাটো দুতলা একটা বাড়ি।
গাড়ি থামতেই তিনজন গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। প্রার্থ গিয়ে ডিকি থেকে পুষ্পদের ব্যাগগুলো বের করলো। প্রিয়ার হাতের কাছে ব্যাগ দিয়ে বললো।
“-নে ধর।
প্রিয়া একটা ব্যাগ পুষ্পকে দিয়ে একটা নিজে ধরলো। প্রার্থকে বললো।
“-তুমি ভেতরে যাবে না।
“-না। তোরা যা।
পুষ্প ওদের সামনেই এলাচিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। প্রিয়ার জন্যই দাড়িয়ে আছে। প্রিয়াকে ডেকে বললো।
“-চল। দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
প্রিয়া বললো।
“-তুমি যাও বুবু। আমি একটু পরে আসছি?
“-কেন?
“-আহা! যাও না। আমি আসছি তো।
পুষ্প আর কোন বাক্য ব্যায় না করে হাটা ধরলো ভেতরের দিকে। শাড়ীর আচলটা কাঁধ পেচিয়ে সামনে এনে ধরলো এক হাতে। হাতের মাঝে এলাচি। অন্য হাতে ব্যাগ নিয়ে হাটছে। প্রার্থ পুষ্পর দিকেই তাকিয়ে ছিলো অনেকক্ষণ যাবত। এখনো তার যাওয়ার পথে একইভাবে তাকিয়ে রইলো।
দূরে কোথাও থেকে ভেসে এলো পাকিস্তানি গান। সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে গানের শেষের কিছু লাইন। গান চলছিলো অনেকক্ষণ ধরেই। কিন্তু তার কানে এসে লাগছে এখন। পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থেকেই শুনতে পেলো কিছু লাইন।
Azz roazu saaney dilbar myaaney
Dilbar myaaney
Boazu nundebaaney dilbar myaaney
Dilbar myaane
Azz roazu saaney dilbar myaaney
Dilbar myaaney
Boazu nundebaaney dilbar myaane
Dilbar myaaney…
(Ishq)
শেষের এই কয়টা লাইন বাজতে বাজতে শেষ হয়ে গেলো গানটা। পুষ্পও চলে গেছে ভেতরে। প্রিয়া ডাকলো শক্ত কন্ঠে।
“-ভাই!
“-হু?
প্রার্থ অপ্রস্তুত ছিলো। প্রিয়া হঠাৎ ডাকায় ধ্যান ভাঙলো তার। প্রিয়া আবার বললো।
“-কি ভাবছিলে তুমি?
প্রার্থ নিজেকে স্বাভাবিক করলো। বললো গম্ভীর হয়ে।
“-কিছুনা। তুই বল কি বলবি। ভেতরে গেলি না কেন?
প্রিয়া সরাসরি পয়েন্টে আসলো না। প্রথমেই প্রশ্ন ছুড়লো।
“-আমার বুবু কি দেখতে খুব খারাপ?
প্রার্থ দুহাতে চুলগুলো ঠেলে বললো।
“-মেইন পয়েন্টে আয়। যা বলার সোজাসুজি বল।
“-ঠিকাছে তাহলে সোজাসুজিই বলি। আমার বুবুকে নিয়ে তোমার কেন এত সমস্যা জানিনা। কিন্তু তুমি কি হারাচ্ছো সেটা তুমি পরে বুঝবে। তখন তুমি হাজার আফসোস করলেও হারিয়ে যাওয়া মানুষটা ফিরে পাবে না। এখনও সময় আছে। বুবুকে আগলে নাও। আমার বুবু যত্নের পাগল, ভালোবাসার পাগল। তাকে একটু যত্ন করে আগলে নিলে তোমার দেওয়া শত কষ্টও ভুলে যাবে কিন্তু বুবুর মন শক্ত হয়ে গেলে তাকে কস্মিনকালেও পাবে না তুমি।
প্রার্থ কিছুক্ষণ স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ সরু করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে কর্কশ শব্দে বললো।
“-বেশিই পাকা পাকা কথা শিখেছিস। বাড়িতে যা।
প্রিয়া নাক মুখ কুচকে বললো।
“-আমার কথা তোমার কাছে পাকা পাকা লাগছে? আমি তোমাকে বুঝাতে চাইছি…..
“-ভেতরে যা। আর হৃদয়ের থেকে দূরে থাকবি।
প্রিয়াকে আদেশ দিয়েই সরে গেলো সেখান থেকে। প্রিয়াকে স্তব্ধ রেখে গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়ি ছুটিয়ে চলে গেলো গন্তব্যে।
প্রিয়া ঠিক একই জায়গায় স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ মুখে অবিশ্বাস, ভয়। বুক দুরুদুরু করছে। প্রার্থ ভাই কেন বললো হৃদয় ভাইয়ের কথা? দুরে থাকতে কেন বললো? সব কি জেনে গেলো? কিন্তু কি করে? অন্ত! অন্ত বলেনি তো। হ্যা ও-ই বলেছে। ও ছাড়া আর কারো জানার কথা নয়। যেখানে হৃদয় নিজেই জানে না প্রিয়ার অনুভুতি সম্পর্কে সেখানে প্রার্থ ভাই কি করে জানলো? নিশ্চয়ই অন্ধের বাচ্চা বলেছে।
মনে মনে এসব ভেবেই শরীর হিম হয়ে আসে। ভয় কাজ করে ভেতরে। প্রার্থ ভাই তাহলে জেনে গেলো। এখন কি হবে? প্রেম হওয়ার আগেই তো সব শেষ হয়ে যাবে।
পুষ্পদের বাড়িটা অনেকটা পুরোনো। তার দাদার নির্মান কৃত বাড়ি এটা। দেওয়ালের রঙগুলোও চটে গেছে বাইরে থেকে। তবে ভেতরটা এখনো বেশ সুন্দর। বাড়িতে বর্তমানে কেউ নেই প্রিয়া আর পুষ্প ছাড়া। পূর্নতা বেগম স্কুলে আর প্রত্যয় সাহেব অফিসে আছেন এসময়ে। পুষ্পদের কাছে বাড়ির এক্সট্টা চাবি ছিলো। সেটা দিয়েই দরজা খুলেছে। বাড়িতে এসে সোজা চলে গেছে নিজেদের রুমে। উপরতলায় পাশাপাশি দুটো রুম। পুষ্পর কাছে বাড়িটাকে আজ নতুন নতুন লাগছে। বিয়ের আগে কতো খালার বাসায় থেকেছে তখন বাড়ি আসলে এরকম লাগেনি। মনে হয়েছে ওবাড়িতে আরো কয়েকদিন থাকলে ভালো হতো। আর এখন মনে হচ্ছে কতদিন পর সে এখানে এলো। এ বাড়িটারই দরকার ছিলো তার। নিরিবিলি একান্তে সময় কাটাবে এখানে। কারো কোনরকম বাজে কথা শুনতে হবে না। নিজের মতো করে চলবে। এইযে এসেছে ওবাড়ি যাওয়ার নামও নিবে না আর। বিয়ে হলেই বোধহয় বাবার বাড়ি মেয়েদের কাছে শ্রেষ্ঠ মনেহয়।
নিজের ঘরে ঢুকে আলাদা একটা প্রশান্তি অনুভব করছে পুষ্প। চারপাশ চেয়ে চেয়ে দেখছে। রুমের সবকিছু ঠিক ঠিক জায়গায়ই আছে। পরিষ্কারও হয়ে আছে সব। তার মা যে সব পরিষ্কার করে রেখেছে তা রুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সব জিনিস ছুয়ে ছুয়ে দেখলো আবার। জানালার পাশেই তার পড়ার টেবিল। সেখানে উপন্যাস বই রাখা অনেকগুলো। সে আবার উপন্যাস পড়তে ভালোবাসতো খুব। উপন্যাসের নায়কদের বর্ননা পড়তো আর প্রার্থ ভাইয়ের সাথে তাকে মিলাতো। এত প্রেম পিরিতির গল্প পড়ে পড়ে নিজেই প্রেমে পড়ে গেছে। সে কি যে সে প্রেম? একেবারে মান ইজ্জত খোয়ানো প্রেম। কাঠালের আঠার মতো লেগে গেছে একদম। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই আঠা চিরতরে মুছতে হবে। আপাতত সেই প্রয়াসেই ব্যাস্ত সে। যে আঠা তার মান সম্মানে আঘাত করবে সে আঠা চিরতরে মুছে ফেলায় শ্রেয়।
পুষ্প গিয়ে বসলো তার বিছানায়। কি সুন্দর গুছানো রয়েছে বিছানাটা। মন চাচ্ছে অনেকদিন বাদে একটু শান্তিতে শুয়ে থাকতে। করলোও তাই। ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বার না করেই গিয়ে একটু শুয়ে পড়লো। একটু শান্তি চাই তার। মানসিক শান্তির খুব অভাব।
বিছানায় শোয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুৃমেরা এসে জাপটে ধরলো তাকে। তলিয়ে গেলো শান্তির রাজ্যে। কতদিনের ক্লান্ত শরীরটা এই অসময়েই একটু আয়েশ পেয়েই ছেড়ে দিলো। তলিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে।
তুরন্ত ছটফটে মেয়ে প্রিয়া। ছোট ছোট জিনিসেই ছটফট করে উঠে। একটু আগে এতবড় কান্ড হয়ে গেলো। এখন তো জান যায় যায় অবস্থা। নিজের রুমের মাঝেই এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারি করে যাচ্ছে। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রার্থর কথাগুলো। ওই ছোট্ট একটা বার্তাই যথেষ্ট তার ঘুম হা*রা*মের জন্য। মনের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। মনে আসছে একটাই নাম। সেটা হলো অন্ত। ওকে সামনে পেলে খেয়োই ফেলবে ভাব। মেয়েদের মতো পেটে কথা হজম হয় না। ছেলেরাও নাকি এত পেট পাতলা হয়? ছিঃ! শা*লা সব বলে দিয়েছে ভাইকে। দোষটা প্রিয়ারই। সে কেনো বলতে গেলো সব তাকে। সাহায্য চাওয়ার জন্য দুনিয়ায় কি আর কেউ ছিলো না? ওই অন্ধকেই কেন বাছতে হলো? নিজের উপরই এখন রাগ হচ্ছে।
প্রিয়ার পায়চারি করার মাঝেই তার ফোনটা ভাইব্রেশন মুডে বেজে উঠলো। ফোনটা হাতেই ছিলো তার। অন্তকে কল করবে ভেবেছিলো। ফোনটাকে সামনে ধরতে দেখলো অন্তই কল করেছে তাকে। প্রিয়া নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে ফোনটা রিসিভ করলো। নিজে আগে থেকে কিছু বললো না। ওপাশ থেকে অন্ত শান্ত গলায় বললো।
“-প্রিয়া! বাড়িতে পৌছেছিস? কিছু ফেলে গেছিস কি?
প্রিয়া দাতে দাত চেপে বললো।
“-হুম।
ওর হুম শুনে ভাবলো সত্যিই কিছু ফেলে গেছে বোধহয়। যাক এই ছুতোয় ওকে একবার দেখে আসবে কাল। আবার কবে আসবে কে জানে। অন্তর তো একদিনও ভালো লাগে না প্রিয়াকে না দেখলে। এ কেমন রোগে যে পড়লো ছেলেটা।
সে খুশিমনে বললো।
“-ঠিকাছে বল কি রেখে গেছিস? আমি কাল গিয়ে দিয়ে আসবো।
হঠাৎই প্রিয়ার স্বর বদলে গেলো। ক্ষিপ্ত হয়ে বললো।
“-তোমাকে ফেলে এসেছি অন্ধের বাচ্ছা। তোকে হাতের কাছে পেলে কুটিকুটি করে কা*ট*তাম আমি। পেটে কথা হজম হয় না, তাই না?সামনে পেলে ওই পেট আমি ফাটিয়ে দিতাম। আমার সাথে এমন কেন করলে তুমি?
অন্ত বুঝলো না প্রিয়া কেন এসব বলছে। সে কপাল গুটিয়ে বললো।
“-আমি কি করেছি? কি বলছিস তুই?
“-তুমি কি করেছো বলছো আবার। লজ্জা করে না। আমার এমন সর্বনাশ করেও বলছো, কি করেছো?
“-হ্যাঁ তো বল কি করেছি আমি। আমার তো জানা নেই আমি এমন কি করেছি তোর সাথে যাতে তোর সর্বনাশ হয়ে গেলো। আমি তো কখনো তোকে ছুয়েও দেখিনি।
“-অসভ্য! তুমি ভাইকে সব বলে দিয়েছো কেন? আমি হৃদয় ভাইকে ভালোবাসি সে কথা প্রার্থ ভাইকে কেন বলেছো?
অন্তর রাগ হলো। দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো। শান্ত স্বরেই বললো।
“-আমি এসব নিয়ে কিছুই বলিনি কাউকে। তোর ভুল হচ্ছে কোথাও।
“-তুমিই বলেছো। তুমি না বললে ভাই কি করে জানলো? আমি তো আর কাউকে বলিনি একথা।
অন্ত চেতে গেলো। প্রিয়ার মুখে হৃদয়ের কথা শুনলেই তার রাগ হয়। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্যকারো নাম শুনলে কার না রাগ হয়। নিদারুণ শান্ত ছেলেটাও রেগে গেলো। চেচিয়ে বললো।
“- হ্যাঁ বলেছি। আমিই বলেছি সব। কি করবি তুই? তুই কেন বুঝতে পারিস না আমাকে? দুনিয়ার সবকিছু তোর চোখে পড়ে কিন্তু আমার ফিলিংসগুলো তোর চোখে লাগে না। তোর চোখে লাগে শুধু হৃদয়কে। সারাদিন হৃদয় ভাই, হৃদয় ভাই, হৃদয় ভাই। কেন? ও সুন্দর বলে? রকস্টার বলে? আর আমি! আমি তো কালো। আমাকে তো কেউ খুজেই পাবে না। তাই বলে কি আমি মানুষ না? আমার ফিলিংস হার্ট হয় না। আমার কষ্ট হয় না?
প্রিয়া প্রথমে ভয় পেলো অন্তর ক্ষেপে যাওয়ায়। অন্ত তো এভাবে কখনো রাগ করে না। হঠাৎ শান্ত মানুষ রেগে গেলে ভয়ই হয়। কিন্তু প্রার্থর সব কথা শুনে আবারও রাগ হলো। রাগে ক্ষোভে কান্না চলে আসলো। অতিরিক্ত রাগ সামলাতে না পেরে কেঁদে দিলো মেয়েটা। কেঁদে কেঁদে জোর গলায় বললো।
“-কেন করলে তুমি এমন? তোমাকে কালো বলেছিলাম বলে? তাই বলে এভাবে ক্ষতি করলে আমার? আমি শুধু মজা করে দুটো কথা বলেছি বলে একেবারে গায়ে লাগিয়ে নিলে? তোমার মাথায় ঘিলু নেই? তুমি কালো না শ্যামলা বুঝতে পারো না?আমি কিছু বললাম বলে হার্ট হয়ে গেলে? যার জন্য আমারও এত বড় ক্ষতি করলে?
প্রিয়ার কান্না দেখে অন্ত মলিন হয়ে আসলো। বিদ্রুপ সরূপ হেসে হেয়ালি গলায় বললো।
“-তুই কখনো আমায় বুঝলিই না রে প্রিয়া। আমার অনুভুতি, আমার কেয়ারসের কোন মূল্যই নেই তোর কাছে। ঠিকাছে তুই কাঁদিস না। আমি আর কখনো তোকে জ্বালাবো না। তোর সর্বনাশের কারণও হবো না। তোর আর হৃদয়ের মাঝের কাটাও হবো না। ভুলতে পারলে ভুলে যাবো। ভালো থাক।
প্রিয়ার কিছু বলার আগেই অন্ত ফোন কেটে দিলো। ফোনটা বিছানায় ছুরে মেরে হাত পা ছেড়ে শুয়ে পরলো বিছানায়। চশমা টা খুলে ফেললো চোখ থেকে। এত সুন্দর ছেলেটা। গায়ের সামান্য রং দিয়ে কি কারো সৌন্দর্য বিচার করা যায়? তার সৌন্দর্য তো তার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে আছে। তাহলে মানুষ কেন সবার আগে গায়ের রংটাকেই দেখে?
সুন্দর মুখটায় শুধু বিষাদের খেলা। সিলিংয়ে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় এক চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পরলো এক ফোটা জল।
কী আশ্চর্য! না হওয়া প্রেমিকার বিরহে ছেলেরাও বুঝি কাঁদে। একটা মেয়ে একটা ছেলের অশ্রুর কারনও হতে পারে! কিন্তু আফসোস! যার জন্য এই বিসর্জন সে-ই বুঝলো না তাকে।
রাত প্রায় ১২ টা। প্রার্থ বাড়িতে ফিরলো মাত্র। পূর্নিমা বেগমকে আগেই বলে দিয়েছে ফিরতে রাত হবে। সে যেন খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।
বাড়িতে এখন মানুষ অল্প। সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে। শুধু অন্ত বাদে। তার আজ ঘুম হবে কিনা জানা নেই। প্রর্থকে দরজা খুলে দিয়েছে রুবি।
সে আজ আর নিজের রুমে গেলো না। সোজা চলে গেলো মিউজিক রুমে। অনেকটা ক্লান্ত লাগছে আজ। মাত্র ফিরলোও স্টুডিও থেকে। গান বাজনা করেই ফিরেছে তবুও মিউজিক রুমেই ঢুকলো। ক্লান্ত পায়ে গিয়ে দাড়ালো গিটারের সামনে। মিউজিক রুমটা বানানো হয়েছে একটু অন্য উপায়ে। এখানে গান করলেও বাইরে শব্দ যাবে না সহজে। বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র রাখা সেখানে। জানালার পাশে একটা ঢালাই বিছানা। সেখানে বসে বসেই গানের আসর জমানো হয়।
প্রার্থর আজ কিছুই ভালো লাগছে না। পুষ্পর সাথে খারাপ ব্যাবহার করার করনে এখন নিজেরই কেমন লাগছে। কিন্তু তার তো এমন লাগার কথা না। পুষ্পকে তিলে তিলে মা*রা*র পরিকল্পনা ছিলো তার। কিন্তু মারতে তো পারছে না। উল্টো যেন নিজেই ফেসে যাচ্ছো কোন অদৃশ্য বানে।
কয়েকদিন যাবত পুষ্পর প্রতি মন নরম হচ্ছিলো। সে চায় না আবারো কারো প্রতি তার কোন অনুভুতি আসুক। অজানা অনুভুতি থেকে বাচতে কাল এতটা খারাপ ব্যাবহার করেছে সে। তবে সে কি নিজেও শান্তিতে আছে? মনে হয় না। এখন তো পুষ্পও চলে গেছে এখন তো শান্তিতে থাকার কথা ছিলো তার। তবে কেন এত অশান্তি লাগছে?
ফোস করে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে প্রিয় গিটারটা হাতে নিলো। গিয়ে বসলো জানালারে পাশের ছোট্ট বিছানায়।
পুর্ন মনোযোগ দিলো গিটারে। কিছুক্ষন টুংটাং শব্দ তুলে গান ধরলো
Tune jo na kaha, Main yo sunta raha
Khamkha bewajah, khwab bunta raha
Jane kiski humein, lag gayi hai nazar
Is sheher main na apna, thikana raha
Durr chahat se main
Apni chalta raha
Tune jo na kaha, main yo sunta raha
Dard pehle se hai, khud se phir kiya wada
Khamosh nazrein rahe bezubaan
Ab na pehle si batein hai
Bolo to lab thar tharati hai
Raj ye dil ka na ho bayaan
Ho gaya ke asaar, koi hum pe nayi
Humsafar mein toh hai, humsafar hai nahi
Durr jata raha, Pass ata raha
Khamkha bewaja, khwab bunta raha…
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৫
( গানটা ভালোভাবে উপভোগ করতে ইউটিউবে গিয়ে একবার মন দিয়ে শুনে নিবেন। গানের মাঝে অনেক কথা আছে। যা প্রার্থর ফিলিংসের সাথে মিলে যায়। মন দিয়ে শুইনেন 😇)