আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১২

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১২
জান্নাত সুলতানা

মির্জা বাড়ির সবাই ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে।প্রিয়তা এই প্রথম ভোট দিয়েছে।তাও আবার নিজের ব্যাক্তিগত মানুষ টাকে।আল্লাহ দরবারে রাজনীতি নিয়ে এই প্রথম প্রিয়তা আল্লাহর কাছে দো’আ চেয়েছে নিজের ভালোবাসার মানুষ টার জয় নিয়ে। হ্যাঁ প্রিয়তাও ভালবেসে ফেলেছে।

এই নেতা সাদনান ভাই কে প্রিয়তা ভালোবাসে।হয়তো পবিত্র বন্ধনের শক্তি এটা।একে-অপরকে প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান যত্ন ভালোবাসা সব কিছু প্রিয়তা সাদনান ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছে।ভোট কেন্দ্র থেকে মির্জা বাড়ির সবাই কে মফিজুর মির্জা আর রাহান তাদের দায়িত্ব নিয়ে ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। আর সেটার সম্পূর্ণ টা সাদনান কড়া নির্দেশ দিয়েছে যাতে একটা ফুলের টোকাও কারোর গায়ে না লাগে।যদিও খারাপ কিছু বা বিরোধী দলের লোকেরা কিছু করবে না।সাদনানের ধারণা। তারপরও সে কোনো রকম রিস্ক নিতে চায় না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাড়ি ফিরে সব মহিলা সদস্যদের অস্থিরতা চিন্তা সব শুরু হয়ে।
একটা পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই।দুপুর খাবার সবাই খেলো না।প্রিয়তা রুম থেকে বেড় হচ্ছে না।
শুধু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে।আম্বিয়া মির্জা কে অনেক কষ্টে খাবার খাইয়ে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রুমে পাঠাল।সালেহা বেগম শাশুড়ী সেবা শেষ প্রিয়তার জন্য খাবার হাতে রুমে এলো।প্রিয়তা কে ফ্রেশ করিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো। প্রিয়তা খাবার শেষ সালেহা বেগম এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ভীতু স্বরে বলল,

-“মা আমার ভয়ে হচ্ছে।
কোনো অঘটন হবে না তো?”
-“কিচ্ছু হবে না।
তুই ঘুমা।”
সালেহা বেগম প্রিয়তা কে স্বান্তনার বাণী শোনালেও নিজেও ভয়ে পাচ্ছে।
না চাইতেও কতরকম চিন্তা মাথায় এসে ভর করছে।বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা বিপদ আসতে চলছে। সালেহা বেগম প্রিয়তার মুখের দিকে তাকাল।মেয়ে টার মুখ টা চিন্তায় শুঁকিয়ে এটুকুনি হয়ে গিয়েছে।
প্রিয়তা ঘুমিয়ে পড়েছে তাই তিনি প্রিয়তা কে বিছানায় বালিশে শুইয়ে দিয়ে রুমের দরজা টা চাপিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে গেলো।

ভোট গণনায় প্রতি টা কেন্দ্রে সাদনান এগিয়ে আছে। সাদনান নিজেও উপজেলা পরিষদ ভবনে বসে আছে। ঘোষণা খুব শীগগির দেওয়া হবে। টিভি স্কিনে এমন একটা খবরই ভেসে রয়েছে।সুস্থ ভাবে ভোট হয়েছে কোনো দুর্নীতি করতে পারে নি এবার।পাবলিক নিজের ভোট এবার নিজেরা দিয়েছে।

রাত তখন আটটা। সাদনান স্বাভাবিক। তার পাশেই বসে রয়েছে জাফর মির্জা আর সাদনানের বাপ চাচা। অপর পাশে বিরোধী দলের প্রাক্তন এমপি।চোখে মুখে হিংস্রতা। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভোট গণনা শেষ ঘোষণা দেওয়া হলো।বিপরীত প্রার্থীর চেয়ে দিগুণ ভোট বেশি পেয়ে মির্জা সাদনান শাহরিয়ার জয় লাভ করেছে।
খবর টা টিভি স্কিনে দেখা মাত্র মির্জা বাড়িতে মহিলারা সবাই ভীষণ খুশি হয়।প্রিয়তা খুশি আম্বিয়া মির্জা প্রিয়তা কে ডেকে হাসি মুখে বলল,

-“নাতবউ। আমার নাতির জন্য বিশেষ কিছুর আয়োজন কর।”
সবাই অবাক। তবে খুশির মধ্যে এমন ভালো মূহুর্ত খুশিটাকে দিগুণ করে দিলো।প্রিয়তা লজ্জা পেলো। লিভিং রুম থেকে রুমে চলে এলো।তবে ভয় এখনো কাটে নি।
যতক্ষণ না সাদনান ভাই ঠিকঠাক বাড়ি ফিরছে ততক্ষণে প্রিয়তা শান্তি পাচ্ছে না।

তবুও প্রিয়তা কিছু ভেবে সাদনানের ব্যালকনির সব গাঁদাফুল গোলাপ ফুল,কাঠগোলাপ বেলি ফুল সব ফুল ছিঁড়ে নিলো।নিচে কাজের লোকের সাহায্য বাগান থেকে ফুল আনাল।আর রুমে আগে থেকে কিছু সুগন্ধি যুক্ত ক্যান্ডেল ছিল সেগুলো দিয়ে রুমে টা সাজিয়ে নিলো।বিয়ের পর সাদনান প্রিয়তা কে তিন টা শাড়ী দিয়েছে। সেখান থেকে একটা শাড়ী পড়ে সেজেগুজে তৈরী হবে এমনটাই মনস্থির করলো।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে সারা’র ফোনে কল এলো।রাহানের নম্বর থেকে। সারা অবাক হলো। এমন সময় রাহানের ফোন অপ্রত্যাশিত। তাই ভাবুক হলো।ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“হ্যাঁ রাহান ভাই!”
-“শোন সাদনানের গুলি লেগেছে।
হসপিটাল নিয়ে এসছি।”
সারা’র পাশেই রাহানের মা বসে ছিল। তিনি তৎক্ষনাৎ এক চিৎকার দিলেন।সারা’র হাত থেকে ফোন টা ঠাশ করে সোফায় পড়ে গেলো।

রান্না ঘর থেকে সুফিয়া বেগম, সালেহা বেগম, কাজের লোক সবাই লিভিং রুমে এসে জড়ো হলো।
রাহান কতক্ষণ হ্যালো হ্যালো বলে।পুরো কথা তো সে বলে নি।ফোনের এপাশ হতে কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু সোরগোল এর আওয়াজ আসছে তাই ফোন কেটে দিলো।
সারা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রাহানের মা ততক্ষণে কথা খানা সবাই কে বলে দিয়েছে।
সবাই ছুটলো বাড়ির বাহিরে।

সদর দরজার কাছে যাওয়া মাত্র রাহানের বাবা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।
মূলত তিনি খবর পাওয়া মাত্র চলে এসছে।
-“ভাইজান ভাইজান আমার ছেলে!”
সালেহা বেগম ভীতু স্বরে বলে উঠলো।
সুফিয়া বেগম জা কে আগলে রেখেছে।
রফিক আহমেদ আশ্বাস দিয়ে বলল,

-“ভাবি ভয় পাবেন না।
সাদনান ঠিক আছে।গুলি হাতের বাহুতে লেগেছে। আর সাথে সাথে হসপিটাল নেওয়ার জন্য রক্তক্ষরণ বেশি হয় নি।”
-“আমি যাব!”
সুফিয়া বেগম অনামিকা বেগম সারা মাইশা সবাই যাবে বলে জানাল।রফিক আহমেদ নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,

-“তুমি বাড়িতে থেকে যাও ওদের কে নিয়ে। আম্মা বাড়িতে। আর প্রিয়তা তো জানে না এসব?”
-“কি জানার কথা বলছেন বাবাই?”
অনাকাঙ্খিত ভাবে এখান প্রিয়তার উপস্থিতিতে সবাই ভড়কালো। প্রিয়তা সবাই কে সদর দরজায় দাঁড়ানো দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এসে বিনয়ের সাথে জিগ্যেস করলো,
-“কিছু কি হয়েছে?
সবাই কে চিন্তিত দেখাচ্ছে!”

প্রিয়তার কোনো প্রশ্নের জবাব কেউ দিলো না।কি বলবে?সারা চোখ ফুলে আছে। সালেহা বেগম এর চোখে পানি একে একে প্রিয়তা সবার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠল প্রিয়তা।
সারা কে অস্থির আর ভীতু স্বরে জিগ্যেস করলো,
-“কি হয়েছে সারা?
সবাই কান্না করছে কেনো?
কি হলো বল!”

সালেহা বেগম ততক্ষণে আরো জোরে কেঁদে দিয়েছে। রফিক আহমেদ বিরক্ত হলো সব মহিলাদের উপর। আবার পরক্ষণেই ভাবে মায়ের মন। সন্তানের কিছু হলে মায়েদের মন অস্থির হয়ে যায়।
প্রিয়তা একে একে সবাই কে জিগ্যেস করতে লাগলো।কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
প্রিয়তার কোনো এক অজানা কারণেই বুকের ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখ দিয়ে সমানতালে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। প্রিয়তা শেষ রফিক আহমেদ কে জিগ্যেস করার জন্য উদ্যত হতেই সারা বলে উঠলো,
-“প্রিয় ভাইয়ার গুলি লেগেছে।”

সারা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো।ফ্যালফ্যাল করে সারা’র দিকে তাকিয়ে পাগলের ন্যায় বাড়ি থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।পেছনে পেছনে সবাই এলো।সারা গিয়ে প্রিয়তা কে আগলে নিলো।
প্রিয়তা তখনো পাগলের মতো কিছু বলছে আর কান্না করছে। সালেহা বেগম গিয়ে প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে নিজেও কাঁদতে লাগলো।সারা রফিক আহমেদ কে বলল,
-“বাবাই গাড়ি।”
রফিক আহমেদ সম্মতি দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
ফিরে এলো গাড়ি নিয়ে।
প্রিয়তা পেছনের সিটে বসে গেলো।সাথে সালেহা বেগম সুফিয়া বেগম বসলো।
রফিক আহমেদ গাড়ি স্টার্ট করলেন।

প্রিয়তারা যখন হসপিটাল পৌঁছাল তখন রাত দশ-টার বেশি সময় বাজে।
প্রিয়তা গাড়ি পার্কিং করার পরপরই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে হসপিটালের ভেতর চলে এলো।লিফট অফ সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সালেহা বেগম এসে হাত টেনে ধরে বলল,
-“পাগলামি করিস না প্রিয়।
তুই পাঁচ তলায় সিঁড়ি বেয়ে আর দাঁড়াতে পারবি?”

প্রিয়তা কিছু বলার আগেই লিফট ওপেন হলো সবাই লিফটে করে পাঁচ তলায় যাওয়া মাত্র সেখানে পুলিশ আর অনেক মানুষ সাথে সাংবাদিক তো আছেই।কিছু কিছু মানুষ গুঞ্জ শোনা যাচ্ছে। এমপি কে এখানে হসপিটাইলেস করা হয়েছে। সেইজন্য এতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
একটু এগিয়ে যেতেই মানুষের ভীড় কমে এলো।

মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা জাফর মির্জা একে একে সবার দেখা মিলে।।আয়ান বোন কে এভাবে দেখে বুকের ভেতর ধক করে উঠল।দুই বোন তার ভীষণ আদুরে। এরমধ্যে ছোট বোন কে আয়ান সব সময় একটু বেশি ভালোবাসে।তাই বোনের এমন অবস্থায় দেখে বুকের ভেতর মুচড় দিলো। এগিয়ে এসে বোন কে আগলে নিলো। সাদনান কে কেবিনে দেওয়া হয় নি এখনো। বিপদমুক্ত রয়েছে। অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।
আয়ান জানাল।তবে খুব দ্রুত দেখা করা যাবে ডক্টর জানিয়েছে। প্রিয়তা ভাইয়ের মুখ থেকে এসব কথায় একটু শান্ত হলো।কান্নার বেগ কমে এলো।তবে সাদনান কে দেখা না পাওয়া পর্যন্ত সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।

সাদনানের জ্ঞান ফিরল সাড়ে এগারো টা নাগাদ। এক-এক করে সবাই দেখা করল।
প্রিয়তা এক কোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সবাই যাওয়ার পর সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“দরজা বন্ধ করে এসো।”
প্রিয়তা তাই করলো।

দরজা বন্ধ করে এগিয়ে গেলো।সাদনানের ডান হাতে গুলি লেগেছে। সাদনান বা হাত বাড়িয়ে প্রিয়তা কে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দিলো। যার ফলে নিজের ক্ষতস্থানে ব্যথা লাগে। নাক মুখ কুঁচকে নিলো। প্রিয়তা অস্থির হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে করতে বলল,
-“কি করছেন ব্যথা লাগবে।
ছাড়ুন আমি পাশে বসছি।”
-“পোষাবে না।
এভাবে থাকো।”
সাদনান ঘোরলাগা কণ্ঠে জানালো। বউয়ের মুখপানে তাকিয়ে সে বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে যে এতোক্ষণে কেঁদে কুদে অস্থির ছিল।

সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় দরজায় কেউ নক করলো।
প্রিয়তা সাদনানের বুকের উপর থেকে ওঠে নিজে কে ঠিকঠাক করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই রাহান এলো।
রাহান ফোন সাদনানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“তোর কথা মতো কাজ হয়ে গিয়েছে।”

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১১

সাদনান রহস্যময় হাসি হাসলো।প্রিয়তা ড্যাবড্যাব করে দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি নিয়ে কথা বলছে?ফোনের স্কিনে কি রয়েছে এমন যে সাদনান ভাই এমন অদ্ভুত হাসি হাসলো?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান রাহান কে বলে উঠলো,
-“গুড জব।
আমি এর সাথে সাক্ষাৎ সেরে নেব।”

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৩