আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২১

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২১
জান্নাত সুলতানা

-“হাসবেন্ড আমি তোমার।
তোমাকে নিয়ে অশ্লীল চিন্তা আমার জন্য হালাল।”
হঠাৎ সাদনানের কণ্ঠে প্রিয়তা চোখ বড়ো বড়ো করে পেছনে তাকিয়ে সাদনান কে দেখে অপ্রস্তুত হলো।নড়েচড়ে বসলো।সাদনান একটা হালকা আকাশী রঙের টাওয়াল কোমড় পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। কাবাড থেকে সাদনানের ড্রেস এনে সাদনানের হাতে দিয়ে মিনমিন করে বলল,

-“ওগুলো বেশি পাতলা।
আপনি জানেন আমি এমন শাড়ী পড়ি না।”
-“তাতে কি!আগে পড়তে না এখন পড়বে।তাছাড়া আমি তো বাইরে পড়ার জন্য আনিনি।শুধু আমার সামনে আমি যতক্ষণ থাকব।তখন পড়বে।”
সাদনান কথা বলতে বলতে নিজের কাপড় পড়ে নিলো।প্রিয়তা ততক্ষণে সব শপিং ব্যাগ কাবাডে তুলে রাখতে নিয়েছে।সব গুলো রাখা শেষ লাস্ট একটা ব্যাগ রাখার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার হাত টেনে ধরলো।প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের দিকে তাকালো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাদনান ব্যাগ টা নিজের হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে টেনে বিছানায় বসিয়ে একটা সাদা পাতলা শাড়ী প্রিয়তার হাতে দিলো।প্রিয়তা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই সাদনান আদেশের স্বরে বলে উঠলো,
-“এটা পড়ে এসো। ফাস্ট।”
প্রিয়তা লজ্জা পাচ্ছে। তবে লজ্জা ছাপিয়ে বলল,
-“একটু পর বাহিরে যেতে হবে!”
-“যেতে হবে না।
আমি আছি। তুমি পড়ে এসো।”

সাদনান প্রিয়তা কে ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে নিজে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।প্রিয়তা শাড়ী হাতে বসে রইলো।মন চাচ্ছে পড়ে আসার জন্য। কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে ছিঃ এমন শাড়ী পড়া যায় না-কি? শরীরের ভাঁজ সব অনায়েসে নজরে পড়বে।
দোনোমোনো করে প্রিয়তা শাড়ী আলমারিতে তুলে রাখে।নিচে গিয়ে দেখলো সাদনান সোফায় বসে ফোনে স্ক্রল করছে আর কাজের লোক ডাইনিং টেবিলে খাবার দিচ্ছে। প্রিয়তা কে নিচে নামতে দেখে সালেহা বেগম বলে উঠলো,

-“তুই মাথা ব্যথা নিয়ে নিচে আসার কি দরকার ছিল?
আমি সাদনান এর কাছে খাবার দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিতাম।”
সাদনান মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠলো। কারণ সাদনান নিচে এসে জানিয়েছে প্রিয়তার মাথা ব্যথা তাই খাবার রুমে নিয়ে যাবে।তবে ভাবভঙ্গি এমন করল যেনো কিচ্ছু করে নি।গম্ভীর হয়ে বসে কিছু ভাবতে থাকে।প্রিয়তা সাদনানের দিকে আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে সালেহা বেগম এর সাথে কথা বলতে বলতে রান্না ঘরে চলে গেলো।

খাবার শেষ সাদনান আগে রুমে চলে গিয়েছে। প্রিয়তা সবার সাথে আড্ডা দিয়ে রুমে এলো।বিয়ের সময় বেশি নেই।একদিন মাত্র। কাল বিকেলে হলুদ সেই সুবাদে সব মেয়েরা কি করবে কি পড়বে সব ঠিকঠাক করে নিলো।তিন্নি কবিরও কাল চলে যাওয়ার কথা থাকলেও সবাই যেতে দেয় নি।এই সাপ্তাহ পুরোটাই কবির তিন্নি এখানে থাকবে।এমনটাই সবার আবদার।আয়ান মাইশা সওদাগর বাড়ির সবাই কাল আসবে।প্রিয়তা ভীষণ খুশি খুশি লাগছে অনেক দিন হয় মা বাবা ভাই কে দেখে না।এ-তো সবের ভীড়ে ঘন্টাখানিক আগে রুমে হওয়া সব বেমালুম ভুলে গেলো প্রিয়তা।

রুমে এসে প্রিয়তার ভ্রু কুঁচকে এলো।পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার বিরাজ করছে।
পা টিপে টিপে রুমে এসে প্রিয়তা লাইট অন করে।সাদনান চোখের উপর এক হাত ভাঁজ করে শুয়ে আছে। বোঝার উপায় নেই ঘুমিয়েছে না-কি সজাগ।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ডাকলো সাদনান কে।কিন্তু না কোনো নড়চড় নেই মানুষ টার।

-“শুনছেন?”
বারকয়েক ডাকার পর সাদনান চোখ বন্ধরত অবস্থা বলে উঠলো,
-“অনেক রাত হয়েছে।
শুয়ে পড়ো।”
প্রিয়তা মনঃক্ষুণ্ন হলো। এগিয়ে গিয়ে কাবাড থেকে রাতের পোশাক নিতেই হঠাৎ শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে দৃষ্টি পড়তেই থমথমে খেলো। সাদনানের অভিমানের কারণ টা ভালোই বুঝে এলো।আচ্ছা মানুষ টা অভিমান করেছে না-কি রেগে গেলো?

প্রিয়তার বুঝে এলো না।রাতের ড্রেস আগের স্থানে রেখে ব্যাগ হতে ফিনফিনে পাতলা সাদা একটা শাড়ী আর একটা ব্লাউজ নিলো।যার গলা টা অনেটাই বড় সাথে হাত গুলো ছোট। ফ্রেশ হয়ে সুন্দর করে শাড়ী টা পড়ে নিলো।শাড়ী পড়া টা বেশ আয়ত্তে এসেছে এখন।প্রায়শই পড়তে হয়।অন্য কেউ ক’দিন পড়িয়ে দিবে!তাই অনেকটাই কষ্ট করে শাড়ী পড়া টা শিখে নিয়েছে।

কিন্তু শাড়ী টা বেশ পাতলা হওয়ার ধরুণে শাড়ী পড়ার পরেও কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কুঁচি ঠিক করে হাতে এক জোড়া চুড়ি তুলে নিলো।হাতের দিকে তাকিয়ে চুড়ি পড়ায় মনোযোগী হতেই এক জোড়া দানবীয় হাত সেটায় বাঁধা হলো।প্রিয়তার হাত থেকে চুড়ি গুলো সাদনান নিজের হাতে নিলো।আলতো হাতে বউ কে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিলো প্রিয়তা চুপটি করে সাদনানের বুকের সঙ্গে লেপ্টে রইলো।সাদনান চুড়ি পড়া শেষ বউ কে কোলে তুলে নিলো। প্রিয়তা সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-“আপনি রেগে ছিলেন?”
-“একদম না।
আমি জানতাম আমার জান আমার কথা রাখবে।”
সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ব্যালকনিতে এলো।
নিচে বসে বউ কে কোলে বসাল।শক্ত খসখসে হাত প্রিয়তার শাড়ির ভাঁজ গলিয়ে পেটে রাখলো।প্রিয়তা শান্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঝড় বইছে। যার সূত্রপাত এই সুদর্শন পুরুষের ছোঁয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে।

সাদনান এক দৃষ্টিতে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আবছা আলোয়ে শরীরে ফিনফিনে শাড়ী।ব্লাউজের গলা বেশ বড়ো।যার ফলস্বরূপ আবেদনময়ী লাগছে। একবার গভীর হতে গভীর স্পর্শ দেওয়ার ইচ্ছে জাগে মনে।প্রিয়তার শরীর মূদু কম্পন অনুভব করে যা সাদনান কে বউয়ের দিকে আরো আকৃষ্ট করে।কোমড়ে রাখা একটা হাত আস্তে আস্তে পেট হতে গালে চলে আসে। প্রিয়তা সাদনানের ঘাড়ে নিজের হাত দিয়ে খামচে ধরে।
সাদনান বউয়ের অধর কোণে বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়ে বলে উঠলো

-“আই ওয়ান্ট এ কিস!”
সম্মতির অপেক্ষা করে না সাদনান ।প্রিয়তার অধর আঁকড়ে ধরে।কোলে তুলে ফের রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বিশেষ মূহুর্তে প্রিয়তা অনাকাঙ্খিত এক আবদার জুড়ে বসলো,
-“আমিও মাতৃত্ব স্বাদ গ্রহণ করতে চাই।”

হঠাৎ এরূপ আবদার এমন মূহুর্তে সাদনান থমথমে খেলো। কানে যেনো কথা টা ঝংকার তুলল। সবে তো আঠারো বছর চলে।তারউপর শরীরের যা অবস্থা। কি করে সব সামলে উঠবে তার বউ?যদি কিছু হয়ে যায়?অধর স্পর্শ করে প্রিয়তার ললাটে। জড়িয়ে ধরে বউ কে।শান্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
-“সেটা আল্লাহ চাইলে অবশ্যই।

কিন্তু আ’ম সো সরি জান।আমি তোমায় নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”
প্রিয়তা হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু সাদনান সেটার সুযোগ দিলো না। বউয়ের অধর আঁকড়ে ধরে পুরোপুরি নিজের আয়ত্তে নিয়ে হারিয়ে গেলো ভালোবাসার অতল সাগরে।

“দু’মিনিট টাইম।
ফাস্ট ব্যালকনিতে এসো।”
এমন একটা ম্যাসেজ রিধির ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে। রিধির ঘুম চোখ খুলতে পারছিল না।কিন্তু ম্যাসেজ দেখার পর ঘুম উড়ে গেলো।বিছানা ছেড়ে নেমে এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই রাস্তায় বড় একটা গাড়ি দেখা মিলল।গাড়ির ভেতর থেকে এক জোড়া চোখ রিধি কে দেখছে।কিন্তু রিধি কিচ্ছু দেখতে পেলো না। ফোন হাতে টাইপিং করলো,

“কোথায় আপনি?
দেখি না কেনো আমি?”
“তুমি দেখতে হবে না।আমি তোমায় দেখছি।”
রিধির ম্যাসেজ সেন্ট হওয়ার সাথে সাথে ওপাশ হতে রিপ্লাই এলো।এর পরপরই আরো একটা ম্যাসেজ এলো,
“বাই দ্য ওয়ে ওড়না কোথায় তোমার? ভাগ্য ভালো কেউ নেই এখন। নেক্সট এমন না হয় যেনো।যাও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো”
গাড়ি টা স্টার্ট হওয়ার সাথে সাথে আবার ঘুমিয়ে পড়ার একটা বার্তা দিলো।রিধি মুচকি হেঁসে রুমে চলে এলো।অনুভূতিরা এখন মুক্ত যখন তখন ডানা ঝাপটায়। বাঁধা ছিল যে এতো বছর। এখন তারা মুক্তি পেয়ে আরো প্রখর হচ্ছে।

-“কিছু দেখলেন?”
তিন্নি কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো। কবির দৃষ্টি রাস্তায় থাকা গাড়ির দিক হতে ফিরিয়ে তিন্নির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলো,
-“এটা সুন্দর ছিল।”
-“ইশ।

দেখলেন ওয়াজিদ ভাই কত ভালোবাসে রিধি আপুকে।রাত সাড়ে বারো টা বাজে আপু কে দেখতে কত টা পথ জার্নি করে চলে এসছে!আর আপনি আমায় সামন্য ব্যালকনিতে নিয়ে আসেন না।”
কথা গুলো তিন্নি অভিমানী স্বরে বলল।কবির বউয়ের অভিমানের কারণ জানে।তবে বউ কে এক হাতে আগলে নিয়ে জানাল,

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২০

-“আজও আনতাম না।
শুধু গার্ড আজ গার্ডেনে নেই সেইজন্য আসতে পেরেছো।আর এতে করে আমি যদি খারাপ হই আমার ভালোবাসা কম হয় তবে তাই হোক।”
তিন্নি কবিরের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।এই পুরুষ এমন কেনো?তিন্নির বুঝে আসে না। না-কি সব পুরুষই এমন নিজের ভালোবাসার মানুষ নিয়ে!একটু বেশি সেনসিটিভ!

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২২