আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৪
জান্নাত সুলতানা
ভালোবাসা সত্যি অদ্ভুত।ভালো সবাই বাসলেও পূর্ণতা ক’জন দিতে পারে?একদম শেষ পর্যন্ত লড়াই করে নিজের ভালোবাসা কে ক’জন নিজের করার সবরকম চেষ্টা করতে পারে?হয়তো সবাই পারে না। আবার অনেকই পারে। তাদের মধ্যে রাহান একজন শতশত বাঁধা অতিক্রম করে জীবনের সাথে অনেক টা যুদ্ধ করে সে নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে আজ নিজের করে পেয়েছে।
আজ নিজে কে পূর্ণ মনে হচ্ছে। বুকের বা পাশের রমণী টা আজ তার ঘরে একই সাথে বসে আছে।এখন আর কোনো ভয় নেই।কেউ দেখা ফেলবে এমন কোনো আতংক নেই।সারা বিয়ের সাজ ছেড়েছে ফটো তোলার পরপরই।গায়ে এখন ফিনফিনে পাতলা সাদা মাঝে মিষ্টি কালার সংমিশ্রণে একটা শাড়ী। কোমড় সমান চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া অধরে লাল টকটকে লিপস্টিক মাখা।চোখে গুলো সুন্দর করে সাজানো।চুল থেকে মাতাল করা এক স্মেল আসছে। রাহান চোখ বন্ধ করে নাক ঘষে ঘাড়ে।চুলের ভাঁজে নাক নিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে নেশাময় কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“কি করবো?
পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
সারা’র নিজেও চোখ বন্ধ করে ছিল।হঠাৎ রাহানের কথা শুনে চোখ খুলে নিলো।শরীর জুড়ে প্রথম বারের ন্যায় কোনো পুরুষের এতো টা সন্নিকটে এসে অবস্থা নাজুক। সরে বসার চেষ্টা করে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করে। তবে কোনো টাতেই সফল হয় না।রাহান চেপে ধরে নিজের সাথে বসে আছে। সারা কিছু টা মজার ছলে বলে উঠলো,
-“এখন বললেন পাগল হয়ে যাচ্ছেন! তো দূরে থাকুন।”
-“এই মেয়ে একদম হেয়ালি করবে না।
আই ওয়ান্ট ইউ ইমমেডিয়েটলি।অল বাই ইউর সেল্ফ।”
সারা কিছু বলার আগেই রাহান সারা কে ঝট করে কোলে তুলে নিলো।সারা দুই হাত এগিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো রাহানের। রাহান বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো,
-“অনেক সাধনার ফল তুমি সুন্দরী।
যা এতো দিন দেখার সাধ্য থাকলে ছুঁয়ে দেখার উপায় ছিল না।আজ থেকে রোজ ছুঁয়ে দেখা যাবে।”
সারা কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাহান একটা রিং সারা’র হাতে পড়িয়ে দিলো।
সারা’র হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বলে উঠলো,
-“আই ওয়ান্ট ইউ অল টু মাইসেল্ফ।
ক্যান আই?”
-“ইয়েস।”
ইশ রাহান বুঝি আর দেরী করে বউয়ের অধর চেপে ধরে ঝটপট।
অতঃপর দুই ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা উজাড় করে একে-অপরকে ভালোবাসতে মত্ত হলো।রাত যত গভীর হলো দু’টো মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিক ততটাই ভারী হলো।
কবির গাড়ি থেকে নামলো আগে। ঘুরে গিয়ে ওপাশের দরজা খুলে বউ কে গাড়ি থেকে ধরে নামালো।ড্রাইভার দৌড়ে এলো।কবির নিজের হাতের চাবি ড্রাইভার কে দিয়ে গাড়ি গ্যারেজে রাখতে বলে এগিয়ে এসে কলিং বেল চাপলো।কালাম খান সদর দরজা খুলে ছেলে বউ কে দেখে অবাক হলো।
বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
-“সন্ধ্যায় এলেমা আমি।
তখন তো বলো নি আসবে?”
-“ওর না-কি ভালো লাগছে না।
তোমার জন্য মন কেমন করছে।তাই এই রাতবিরেত চলে এসছি।”
-“সবাই আসতে দিলো?”
-“অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করিয়েছে তিন্নি।”
কালাম খান আর কিছু বলল না।তিন্নি কে ধরে নিয়ে বাড়ির ভেতর এলো।তিন্নি লম্বা শ্বাস নিলো।অনেক দিন পর নিজের ঠিকানায় এসে মনের মধ্যে আলাদা একটা শান্তি লাগছে।
ভাবতেই মন ভালো হয়ে যা নিজের একটা ঠিকানা হয়েছে।একটা বাড়ি আছে। পরিবার হয়েছে। দিনশেষে মানুষ গুলো তাকে ভালোবাসে।
মির্জা বাড়ির যেনো আনন্দের শেষ নেই।প্রিয়তা কনসিভ করেছে কথা টা সবাই জানা মাত্র হইহই পরে গেলো।সওদাগর বাড়ির সবাই মির্জা রয়েছে। তারা সবাই বেশ খুশি।তাদের আদরের ছোট প্রাণ টা মা হবে। শফিক সওদাগর মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে থাকে।মিতা সওদাগর স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে বলল উঠলো,
-“আমার মেয়ে টা এভাবে যেনো সব সময় সুখী থাকে।”
প্রিয়তা আম্বিয়া মির্জার পাশে বসে আছে। সাদনান একটু দূরে সিঁড়ির কাছে রেলিঙে হেলান দিয়ে ট্রাউজার এর পকেটে দুই হাত রেখে লিভিং রুম পর্যবেক্ষণ করছে।রাত অনেক টাই হয়েছে। খাবার খাওয়া শেষ।কিন্তু আড্ডা যেনো আজ শেষ হওয়ার নাম-ই নিচ্ছে না।সাদনান মনে মনে সবার উপর বিরক্ত হলো।
প্রিয়তা রাতের খাবার টা ঠিকঠাক খেতে পারে নি। সুফিয়া বেগম দুধের গ্লাস হাতে প্রিয়তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সাদনান মায়ের দিকে একপলক তাকলো।সুফিয়া বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা কে বলল,
-“এখন রুমে যা।
রেস্ট কর গিয়ে। আর হ্যাঁ এটা নিয়ে যা।শোয়ার আগে খেয়ে নিবি।”
প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে তাকালো শাশুড়ীর দিকে। আয়ান বোনের দৃষ্টি বুঝতে পেরে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আগে না খেলেও এখন থেকে খেতে হবে।”
সবার জোরাজুরিতে প্রিয়তা দুধের গ্লাস নিয়ে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলো।
সাদনান আগেই রুমে চলে এসছে। প্রিয়তা রুমে এসে দুধের গ্লাস সেন্টার টেবিলের উপর রেখে কাবাড থেকে রাতের পোষাক নিয়ে ওয়াশ রুম গেলো।সাদনান পুরো টা সময় সোফায় বসে বউয়ের সব কার্যকলাপ অবলোকন করে।অতঃপর বেরিয়ে আসে রুম হতে।লিভিং রুমের সবাই তখন যার যার রুমে চলে গিয়েছে। কিচেনে শুধু একজন কাজের লোক সব গুছিয়ে রাখছিল।সাদনান কে কিচেনে দেখা মাত্র তিনি বলে উঠলো,
-“ছোট সাহেব কিছু লাগবো?
আমারে কন।আম,,,
-“না খালা।
আপনি যান।আমি নিজে পারবো।”
সাদনানের আদেশ পেয়ে তিনি বিনাবাক্য রান্না ঘর ত্যাগ করে। সাদনান আগে একটা ক্যাবিনেট খুলে সেখান থেকে একটা স্যুপ এর প্যাকেট বের করে।
সেটা রান্না করে একটা বড়ো কাপে নিয়ে রুমে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই নজরে পরে প্রিয়তা গায়ে একটা মোটা ওড়না পেঁচিয়ে রান্না ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে সাদনান এর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“আমি জানি আপনি এসব আমাকে গিলানোর জন্য করেছেন।
কিন্তু এই মূহুর্তে কিচ্ছু খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
প্রিয়তার থমথমে কণ্ঠ শুনে সাদনান হেঁসে দিলো।অতঃপর এক হাতে প্রিয়তার বাহু টেনে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-“কিন্তু খেতে হবে।
ইউ নো না!না আমার একদম পছন্দ নয়।”
প্রিয়তা কিছু বলতে পারে না।
সাদনান রুমে এনে বউ কে বিছানায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসলো।প্রায় অর্ধেক টা স্যুপ খাইয়ে দিলো।প্রিয়তা নাকমুখ কোঁচকালো।তবে ভালো লাগলো আবার পেটেও ক্ষুধা তাই খেয়ে নিলো।সাদনান স্যুপরে বাটি রেখে দুধের গ্লাস সামনে ধরলো।প্রিয়তা মুখ ভোঁতা করে গ্লাস হাতে ঢকঢক করে অর্ধেক গ্লাস খালি করে দিলো।পরপরই মুখ হতে গ্লাস সরিয়ে ওয়াক করে সব সামনে দাঁড়ানো সাদনানের উপর ঢেলে দিলো।সাদনান চোখ ছোট ছোট করে বউয়ের দিকে তাকালো।
প্রিয়তার মুখ ভয়ে ফাটা বেলুনের ন্যায় চুপসে গিয়েছে। সাদনানের হাসি পেলো।তবে হাসলো না। এখন হাসলে বউ তার আহ্লাদে গদগদ হয়ে যাবে। আর খাবে না সে জানে।তাই হাসি টুপ করে গিলে নিলো। থমথমে কণ্ঠে কাবাড এর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আদেশের স্বরে বলল,
-“পুরো টা শেষ করো।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেনো গ্লাস খালি দেখি।
আর খবরদার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করবে না।”
প্রিয়তা সাদনানের কথায় থমথমে খেলো।কি ভয়ংকর মানুষ।মনের কথা বুঝে যায়।
সাদনান ওয়াশ রুমে চলে গেলে প্রিয়তা অনেক টা কষ্ট করে দুধ টা খেয়ে নিলো।ফেলে দেওয়ারও উপায় নেই। ওয়ার্নিং দিয়ে গিয়েছে।বাধ্য হয়ে খেতে হলো।
সাদনান ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এলো পাঁচ সাত মিনিট এর মধ্যে। এসেই দেখলো বউ তার শুয়ে পড়েছে। সাদনান লাইট অফ করে নিজেও এসে প্রিয়তার পাশে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা সাদনানের বুকে মাথা রেখে।গেঞ্জির বোতাম খুলতে নিলেই সাদনান বাঁধা দিলো। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
ড্রিম লাইট এর স্বল্প আলোয়ে বউয়ের ভ্রু কুঁচকানো দেখে সাদনান প্রিয়তার কপালে অধর স্পর্শ করে মূদু কণ্ঠে বলল,
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৩
-“কাল ডক্টর এর কাছে যাব।
টেস্ট করবো।এখন আর কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছি না জান।”
-“কিচ্ছু হবে না।
আপনি বেশি বুঝেন।”
প্রিয়তা নিজেই সাদনান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাদনান বুঝি বউয়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে!অগত্যা নিজেও বউয়ের পাগলামিতে সঙ্গ দিলো।