আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৮
জান্নাত সুলতানা
সাদনান ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রিয়তা সেদিকে তাকিয়ে আছে।পুরুষ টার গায়ে গাঢ় নীল রঙের টি-শার্ট। সব সময় পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা কুচকুচে কালো অল্পস্বল্প ভেজা চুল গুলো ভ্রু জোড়ার উপর এসে পৌঁছেছে। চোখের লম্বা ঘন পাপড়ি গুলো চোখ বন্ধ থাকায় দারুণ দেখতে লাগছে। সরু নাকটার নিচে সব সময় খবরদারি করতে থাকা চিকন পাতলা অধর জোড়া আপাতত বন্ধ আছে।
প্রিয়তা পাশের দোলনায় বারকয়েক তাকিয়ে কিছু সময় লাগিয়ে সব পর্যবেক্ষণ করলো।তারপর নিজের হাত টা সাদনানের গালে রাখলো।সাদনান প্রিয়তার চেয়ে একটু বেশি ফর্সা। কিন্তু ছেলে যেনো বাবার কার্বন কপি হলে গায়ের রং টা মায়ের মতো হবে বলে প্রিয়তার মনে হচ্ছে।
প্রিয়তার হাতের স্পর্শে সাদনান নড়েচড়ে প্রিয়তার হাত টা টেনে ধরে জড়িয়ে নিলো বুকে।একবার পিটপিট করে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুম জাড়ানো কণ্ঠে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“আমার জান।
এতো দেখো না।নিজে কে সামলাতে পারলে আমাকে কিন্তু পারবে না। আর আমি এখন বেসামাল হতে চাইছি না।”
প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।ঘুমিয়ে গিয়েও শান্তি দিচ্ছে না। অদ্ভুত লোক।
-“না আব্বা কাঁদে না।
মা চলে আসবে।”
কিসের কি মেয়ে তার ঠাশঠাশ করে গলা ফাটিয়ে কেঁদে চলছে।সাদনান অনেক্ক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। সাদনানের এবার নিজে কে বড্ড অসহায় লাগলো।প্রথমে কাঁদে নি বলে কত কি করতে হলো।আর এখন বেশি কাঁদার জন্য মনে হচ্ছে ডক্টর দেখাতে হবে। প্রিয়তা এখন নিচে আছে।
ছেলে বাবু টা সারা’র কাছে রয়েছে। প্রিয়তা শরীর ভীষণ দুর্বল। যদি প্রিয়তার মতে সে সুস্থ। কিন্তু সাদনান কিছুতেই তা মানতে রাজি নয়।প্রিয়তা কে কিছু করতে হয় না।শাশুড়ী, চাচী শাশুড়ী, ফুপি শাশুড়ী সবাই যেনো শাশুড়ী নয় মায়ের মতো আগলে সেবাযত্ন করছে।যদিও আগে প্রিয়তা নিজে কে এ বাড়ির বউ কম মেয়ের মতোই থেকেছে। কিন্তু এখন সব কিছু যেনো দিগুণ হচ্ছে। কত আদর যত্ন ভালোবাসে সবাই। আর এখন তো আম্বিয়া মির্জাও আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়েছে। হবে না বা কেনো নাতির ঘর আলো করে দুই দুই টা জীবন্ত পুতুল এনে দিয়েছে যে।নাতির জীবন পূর্ণ হয়েছে। এতেই তিনি প্রচুর খুশি।
এখন প্রায় বেলা বারোটা বাজে। প্রিয়তা কে খবর পাঠানো হয়ে গিয়েছে।নিশ্চয়ই কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। তাছাড়া বাড়িতে কতবড় অনুষ্ঠান। ছেলেমেয়ের আকিকা দিয়ে নাম রাখবে আজ।অবশ্যই আরো আগেই রাখতো কিন্তু প্রিয়তা অসুস্থ বিধায় এতো দিনে এসে রাখছে।
সাদনান মেয়ের দিকে কতক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থেকে রুম হতে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই প্রিয়তা রুমে প্রবেশ করলো।গায়ের ওড়না সোফায় রাখে।সাদনান এগিয়ে এসে প্রিয়তার বরাবর দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
-“বারণ করেছিলাম নিচে না যাওয়ার জন্য।
বাবু কখন থেকে কান্না করছে।”
প্রিয়তা মেয়ে কে কোলে নিতে নিতে সাদনান এর কথা কে সম্পূর্ণ এড়িয়ে বলল,
-“সবাই চলে এসছে।
আপনি গোসল করে রেডি হয়ে নিন।মা বলেছে একটু পর এসে ওদের শরীর মুছিয়ে দিবে।”
সাদনান কিছু সময় বউয়ের মুখপানে তাকিয়ে রইলো।আগের মতো আর হ্যাংলা পাতলা নেই সাদনানের ছোট জান।এখন অনেক টাই শরীরের পরিবর্তন এসছে।সাদনান কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সাদনান মুচকি হাসলো তারপর ঝুঁকে বউয়ের ফোলা ফোলা গালে টুপটাপ কয়েকবার চুমু খেয়ে পাশ থেকে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা ফ্যাল ফ্যাল করে সাদনান এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
কিছু সময় পর মুচকি হেঁসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা থমথমে খেলো।মেয়ের মুখ হতে আঙ্গুল বের করে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
-“বাপকা বেডি।
বাপ কাহিনি করবে মেয়ে সেসব দর্শক হয়ে এনজয় করবে।”
পুরো বাড়ি রমরমা পরিবেশ।
রিধি ওয়াজিদ ছাড়া সবাই উপস্থিত রয়েছে আজ।মাইশার ছেলে মিশান মায়ের কাছ ঘেঁষে বসে আছে। ছোট সায়রা কে মিশান এর নিকট দারুণ মায়াবী লাগে। যেনো জীবন্ত পুতুল একটা।বাবা-র মতো ধবধবে সাদা কুচকুচে কালো চুল।গোলাপি ঠোঁট। এমন মানুষ তো সে টিভিতে দেখেছে। কার্টুন নাম এদের। কিন্তু তার মা বলেছে ওর নাম সায়রা।আর মিশান এর বোন হয়।কিন্তু মিশান মানতে রাজি নয়।ছোট মামা বলেছে সায়রা ওর বউ।কিন্তু এটা কাউ কে সে জানায়নি। মনে মনে রেখেছে। চার বছর এর মিশান যথেষ্ট বড় হয়েছে। কিছু টা গম্ভীর।
রাত প্রায় অনেক টা হয়েছে।খাবার শেষ হতে অনেক সময় বাকি।সবাই খাওয়ার পর বাড়ির মহিলারা খেতে বসছে।যদিও প্রিয়তা কে খাবার খেয়ে নেওয়ার জন্য অনেক বার সবাই বলেছে কিন্তু খায় নি প্রিয়তা।সাদনান ছেলে কে নিয়ে উপরে রুমে চলে গিয়েছে। মাইশা আগে খেয়ে নিয়েছে সেইজন্য সায়রা কে কোলে নিয়ে বসে আছে।
প্রিয়তা খাবার শেষ হতে হতে সায়রা ঘুমিয়ে পড়লো।প্রিয়তা মেয়ে কে নিয়ে উপরে রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।
সাদনান মাত্রই ছেলের কে দোলনায় শুইয়ে বিছানা ঠিকঠাক করছিল।আর তক্ষুনি প্রিয়তা রুমে এলো।মেয়ে কে দোলনায় শুইয়ে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই সাদনান বলে উঠলো,
-“ওকে বিছানায় দাও।”
প্রিয়তা কোনো প্রতিত্তোর করে না।মেয়ে কেও দোলনায় রেখে কাবাড থেকে রাতের পোষাক নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। সাদনান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। হঠাৎ আজ হলো কি?
সব সময় মেয়ে কে বিছানায় রাখে।মেয়ের প্রতি যেনো প্রিয়তার ভালোবাসা একটু বেশি। হয়তো মেয়ে তার এ ক’দিনে অনেক টা কষ্ট পৃথিবীতে আসার পর পেয়েছে সেইজন্য মেয়ে কে যতটা পারে নিজের সাথে সাথে রাখে।যদিও ছেলে কেও সে একই নজরে দেখে তবে রাতে মেয়ে কে সে নিজের সাথে বিছানায় রাখে। আর আজ হঠাৎ দোলনায়?
সাদনান বেশি কিছু না ভেবে দরজা বন্ধ করে এলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত বাজে বারোটার বেশি। প্রিয়তার রাতের ঔষধ আছে। সেগুলো বেড় করে নিয়ে সোফায় বসতেই প্রিয়তা ওয়াশরুম হতে বেরিয়ে এলো।গায়ে তার কালো একটা লং নাইটি।সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। আজ অনেক দিন বাদে প্রিয়তা এগুলো পড়লো।প্রেগন্যান্সির সময় ঢিলাঢালা গেঞ্জি পড়তো।কাল রাতেও তাই পড়েছে।
সাদনান মনে মনে বারকয়েক নিজে কে শাসিয়ে নিলো।মাত্র তো এক মাস হয়েছে সুস্থ হয়েছে মেয়ে টা।যদিও পুরোপুরি সুস্থ এখন হয় নি।যতটা সম্ভব বউ কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।সাদনান চায় না ওর জন্য বউ তার কষ্ট পায়।
-“এদিকে এসো।
ঔষধ খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি একটা জরুরি কল রয়েছে সেটা শেষ করে আসছি।”
-“মিথ্যা বলছেন আপনি।
আপনার এসিস্ট্যান্ট সন্ধ্যায় সব মিটিং টাইম ঠিক করে নিয়েছে।”
সাদনান চোর ধরে পরে গেলো যেমন ভাব করে সাদনানের মুখভঙ্গি এখন তেমন ভাব করে রেখেছে। প্রিয়তা ততক্ষণে ঔষধ খেয়ে পানির গ্লাস সেন্টার টেবিলে রেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল বিনুনি করে নিলো।হাত পায়ে রাতের কিছু প্রসাধনী ব্যবহার করতে লাগলো।
সাদনান এর এপর্যায়ে এসে নিজে কে সামলনো দায় হয়ে পড়লো।আস্তে করে ঢোক গিলে এগিয়ে গিয়ে বউ কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উন্মুক্ত ঘাড়ে লম্বা সরু নাকটা ঘষতে লাগলো।
প্রিয়তা এসবে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু আজ অনেক দিন পরে মানুষটার এমন স্পর্শে শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে ভালোবাসার মানুষ টার স্পর্শ গুলো অনুভব করতে লাগলো।প্রিয়তা চোখ বন্ধরত অবস্থায় বলে উঠলো,
-“ভালোবাসি মন্ত্রী সাহেব।”
সাদনান বউয়ের সম্মতি পেয়ে আরো কিছু টা চেপে ধরলো বউ কে নিজের সাথে।অতঃপর আস্তে আস্তে টুপটাপ বৃষ্টির ন্যায় চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো বউয়ের গাল, গলা, ঘাড়ে।
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৭
তারপর নিজের দিকে ফিরিয়ে বেশ কিছু সময় ধরে নিজের ওষ্ঠদ্বয় দিয়ে বউয়ের ওষ্ঠদ্বয়ে রাজত্ব চালালো। সময় নিয়ে ছেড়ে দিয়ে বউ কে পাঁজা কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের সম্পূর্ণ ভর প্রিতার উপর ছেড়ে দিয়ে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“সরি জান।”