আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ১৫
অবন্তিকা তৃপ্তি
আকাশটা তখন ধীরে ধীরে রক্তিম হচ্ছিলো। অদিতি-ধ্রুবর ওই বন্ধ অন্ধকার ঘরটায় পূর্ব দিক হতে জানালা পেরিয়ে এক ছটাক আলো ছিটকে আসে। আলোটা সরাসরি ধ্রুব-অদিতির মুখের উপর লেপ্টে গেল যেন। আজ আলোরাও প্রেমের পক্ষে; ধ্রুব-অদিতির পক্ষে। ইমন পাশে হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে; আলো গায়ে মেখে ধ্রুব, ও ধ্রুবর বুকের মধ্যে পরে থাকা অদিতিকে দেখতে স্বর্গীয় লাগছিল। ইমন বিড়বিড় করে মৃদু হেসে নিজের অজান্তেই বলে উঠলো—‘অ্যা..অ্যামেজিং!’
হঠাৎ করে ধ্রুবর কলার থেকে ধীরে ধীরে অদিতির হাতটা মাটিতে পরে গেল। ধ্রুব যেন চমকে উঠলো। দ্রুত অদিতির মুখ বুক থেকে সরিয়ে দুহাতের আজলায় তুলে ধরলো। অদিতির চোখ নিভু-নিভু; জ্ঞান হারাবে যেকোনো সময়। ইমন এদের জড়াজড়ি দেখে ভীষণ অপ্রস্তুত বোধ করেছিল। ও পাশ থেকে একসময় গলা পরিষ্কার করে; বললো—‘ধ্রুব আমাদের মনে হয় হাসপাতাল যাওয়া উচিত; ভাবি জ্ঞান হারাচ্ছে সম্ভবত।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ধ্রুবর এবার টনক নড়ল! অদিতি ততক্ষণে অজ্ঞান হয়ে গেছে। ধ্রুব এরপর আর একটুও দেরি করলো না। সঙ্গেসঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে কোলে তুলে নিলো নিজের শক্ত-পোক্ত দুহাতে। অদিতির হাত-দুটো ধ্রুবর গলা জড়িয়ে ধরলো না; বরং নেতিয়ে পড়ল নিচের দিকে। ধ্রুব সেটা দেখে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানল। ওর কিছু ভালো লাগছে না। চারপাশ ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলতে মন চাইছে। ধ্রুব আজ সহ্য করছে; কাল থেকে ওদের ধ্রুব ইয়ামিনকে সহ্য করতে হবে!
ওই বা/স্টার্ডগুলোর কপালে কি নাচছে; সেটা হয়তো ওরা আন্দাজও করতে পারছে না।
ক্লিনিকে অদিতিকে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। রাত পেরিয়ে তখন সকাল ১০-টা! এখন অনেকটাই সুস্থ অদিতি। মাথায় তেমন ম্যাজর আঘাত লাগেনি: দেয়ালে ধাক্কা খাওয়ার কারনেই এই র//ক্তের উৎপত্তি।
ধ্রুব সেই ফজরের পর থেকে কেবিনের বাইরে বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছে; ওর চোখ-দুটো জানালার বাইরে।।
ধ্রুব সেই ফজর থেকেই এভাবেই বসে আছে। এখানে আসার পর থেকে একবারও অদিতির মুখোমুখি হয়নি; উঠেওনি জায়গা থেকে। মাঝেমধ্যেই যখন অস্থির হচ্ছে- তখনই সিগারেট ধরাচ্ছে। এই নিয়ে পাঁচটা সিগারেট শেষ হয়েছে।
ধ্রুবর পাশে এসে ইমন বসলো। ধ্রুবর এমন শান্ত হয়ে বসে থাকা অদ্ভুত ঠেকলো ইমনের কাছে। ইমন একটাপর্যায়ে কাচুমাচু হয়ে বললো—‘ধ্রুব; ভাই তুই ঠিক আছিস?’
ধ্রুব জোরে শ্বাস টানল, শ্বাসের সঙ্গে যেন নিজের প্রতি অভিমান-অভিযোগ আর সমস্ত রাগ বেরিয়ে এলো! ও চুপ; দুহাতে মুখ চেপে ধরে ঘষলো। ইমন স্পষ্ট লক্ষ্য করছে; ধ্রুবর গা এখনো কাপছে; হাতে শিভারিং হচ্ছে ভীষণ। ইমনের নজরে এসব পরলে ইমন চিন্তিত ভঙ্গিতে ধ্রুবর হাত চাপলো; বললো—-‘তোর এখন মেডিসিন নেওয়া উচিত ধ্রুব। তোর হাত কাঁপছে।’
ধ্রুব ইমনের হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয়ে গা-ছাড়া ভাবে বলল—-‘আ’ম ফাইন।’
ইমন ফ্যালফ্যাল চোখে ধ্রুবকে দেখে।নিজে এতটা অসুস্থ ; অথচ চিন্তা করে যাচ্ছে অদিতিকে নিয়ে। অনেকক্ষণ পর কি মনে করে ধ্রুব এবার নিজে থেকে হঠাৎ বলে বসলো——-‘ য..যদি আজ ওর কিছু হয়ে যেত; আমি কি করতাম ইমন?’
ধ্রুবর কণ্ঠটা যেন কেঁপে উঠলো। গলায় যেন কিছু জমে আছে। বারবার ঢোক গিলছে ধ্রুব; ওর গলার অ্যাডমস-অ্যাপল নামছে-উঠছে বারবার। ইমন ধ্রুবকে এভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে হাত রাখল ওর কাঁধে। ভরসা দিয়ে বললো—‘কিন্তু কিছু হয়নি রাইট? তুই প্লিজ, এবার একটু নরমাল হ ভাই!’
ধ্রুব আবারও অস্থির ভঙ্গিতে মুখটা দুহাতে চেপে ধরে ঘষলো, তারপর থেমে থেমে বলল ——-‘আমার লাইফে আমি যখনই কিছু মন থেকে চেয়েছি; ওগুলা আমার লাইফ থেকে ভ্যানিশ কেন হয়ে যায়, ইমন? অ্যাই ওয়াজ ইন ডার্ক; ও আমার লাইফের একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। আমি ধীরে ধীরে রিককোভারি করছিলাম। কিন্তু আবার আমার লাইফ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আজ আমার শত্রুতার জন্য অদিতির উপর হা/মলা হয়েছে। অদিতি এসব ডিজার্ভ করেনা। আমি ওর লাইফে আসায় ওর উপর হা/মলা হয়েছে। তুই বুঝতে পারছিস; অদিতির মতো মেয়ে আজ আমার জন্যে এতটা সাফার করছে। সবকিছুর মূলে আমিই! অ্যাম অ্যাই রং পারসন ফর হার, ইমন?’
ইমন হতভম্ব। যে ধ্রুব ইয়ামিনের জন্যে পুরো একটা ভার্সিটি পাগল; সেই ছেলে নিজেকে একটা অজপাড়া গ্রামের অদিতির যোগ্য মনে করছে না। ইমন নিজেকে সামলে বললো;——-‘তোর দুজন পারফেক্ট কাপল হবি। আর গতরাত যা হয়েছে এসব ভাগ্য ধ্রুব। তোর এতে দোষ নেই।’
ধ্রুব মানেনা; বলে যায় শুধু—-‘ওর কিছু হলে আমি নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারব না। আমি আজ ওর সামনে দাঁড়াতে পারছিনা। তুই বুঝতে পারছিস সিচুয়েশনটা, ইমন? ওই শু/য়ো/রের বাচ্চাগুলো আমার কনফিডেন্ট; আমার মুখ অদিতির সামনে কতটা ছোট করে ফেলেছে।’
ইমন কি বলে ধ্রুবকে বোঝাবে বুঝতে পারছে না। সত্য বলতে; ঘুরেফিরে সবকিছুর মূলে ধ্রুবই।ধ্রুব এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছে; যেখানে ওর শ/ত্রুর সংখা নেহাত কম নয়। আজ অদিতির মতো একটা সাধারণ, নির্ঝঞ্ঝাট মেয়ের উপর হা/মলা হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। ইমন তবুও বন্ধুর খাতিরে বলে——‘তুই অযথা ভাবছিস; ধ্রুব। এসব আগে থেকেই লেখা ছিলো কপালে। তুই নাস্তিক নস যে, কপালের লেখা বিশ্বাস করবি না।’
ধ্রুব শোনে! ওর মন তখন কঠিন কিছু হিসেব কষতে ব্যস্ত! যেন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে: বড় কিছু ঘটানোর। ওর চোখ-দুটো তখনও অদিতির কেবিনের দিকে চেয়ে রয়েছে অপলক! ধ্রুব এখনো একবারও মেয়েটার মুখোমুখি হয়নি। ও আজ যেভাবে ওই মেয়েকে স্পর্শ করেছে; তাতে হয়তো ওকে চুড়ান্ত খারাপ; চরিত্রহীন মনে করেছে অদিতি। ধ্রুব লজ্জা; আর নিজের এমন বোকামোর মতো কাজে নিজেই চুড়ান্ত বিরক্ত এবং রাগান্বিত। অদিতিকে এভাবে ওর অসহায় অবস্থায় ছোঁয়াটা উচিত হয়নি। ও সিউর; আজকের পর ওই মেয়ে লজ্জায় আর ওর সামান এসে দাঁড়াবে না।
অদিতির কেবিনের ভেতরে তানিয়া; আর দুটো মেয়ে। ওদের ধ্রুব ফোন করে আনিয়েছে।অদিতি বেডে শুয়ে আছে; সেলাইন চলছে। ওর পাশে বসে আছে তানিয়া। নানাকিছু বলে ওর মনটা শান্ত রাখার চেষ্টা করছিল ওরা। অদিতি ওদের কথা শুনে; তেমন মনোযোগ না দিয়েই হু-হা করছে শুধু।একসময় তানিয়া কথা থামিয়ে, ওর দিকে চাইলো। বিব্রত ভঙ্গিতে বললো—-‘অদিতি; একটা কথা বলার ছিলো।’
অদিতি সিলিং ফ্যানের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থেকে জবাব দিল—-‘বলো।’
তানিয়া গলা পরিষ্কার করে, দোনামোনা গলায় বললো——‘আজকের ঘটনাটা তোমার ফ্যামিলিতে জানিও না। ওনারা হয়তো ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখবে না।তাছাড়া ধ্রুব বলেছিলো…’
তানিয়া থেমে যায়। অথচ তখনমাত্রই অদিতি কান পেতে, মনোযোগ দিয়ে শুনতে চেয়েছিল, কি বলেছে ধ্রুব? তানিয়া থেমে গিয়ে বললো—-‘তোমার ছুটি মঞ্জুর করেছে ভার্সিটি। তোমার যা লাগে এ কদিন আমাকে বলিও।’
অদিতি তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাল না। চুপচাপ শুয়ে থাকল বিছানায়। ওর চোখে ভাসছে গতরাতটা। অদিতি অপহরণ হয়েছিল। ধ্রুব ওকে বাঁচিয়েছে; ধ্রুবর পাগলামি সব ধীরে ধীরে অদিতির চোখের সামনে ভাসে।ওর গায়ে এখনো সম্ভবত ধ্রুবর পারফিউমের গন্ধ মেখে আছে। অদিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল! ওর গা একটা ছেলে ছুঁয়েছে; অথচ আজ অদিতির খারাপ লাগছে না। বরং বারবার মনে হচ্ছে, ধ্রুব ওর জন্যে আজ কতটা উন্মাদ হয়েছিলো। কিন্তু ধ্রুব কবে থেকে ওকে…
চার ঘন্টা পর অদিতিকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছে। ওকে নিয়ে বেরিয়েছে তানিয়ারা কেবিন থেকে! অদিতির গায়ে চাদর; কপালে ব্যান্ডেজ! মুখটা মলিন হয়ে আছ ওর, হাতে এখনো ক্যানুলা লাগানো। শাড়ি খুলে ফেলে সাধারণ কামিজ পরিয়ে দেওয়া হয়েছে ডাক্তারের কথামত। অদিতি বেরিয়ে আসতেই; ধ্রুব দ্রুত বেঞ্চ থেকে উঠে গেল। অদিতি ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে ছিলো। দুজনের চোখে চোখ পরলো; ধ্রুবর চোখে ছিলো অসহায়ত্ব আর অদিতির চোখে নিরবতা। ওই দুই মিশ্র অনুভূতি দুজনের হৃদয় গিলে নিল; দুজনেই ধীরে ধীরে চোখ নামিয়ে ফেলল।
ধ্রুব আর এগিয়ে গেল না অদিতির দিকে, সেখানেই দাঁড়িয়ে অন্যদিকে ফিরে ক্যাব বুক দিল। ইমন পাশ থেকে দুজনের এসব কাজ-কারবার দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, দুজন লাভারের মধ্যে সে এক অবলা প্রাণী!
ওরা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এসেছে; নিচে নেমে ক্যাবে উঠল অদিতি। ধ্রুব আলগোছে ওর দিকে না চেয়েই গাড়ির দরজা আটকে দিল। তারপর ড্রাইভারের জানালার দিকে মুখ বাড়িয়ে ড্রাইভারকে লোকেশন বুঝিয়ে দিল।ড্রাইবারের সঙ্গে যতক্ষণ কথা বলছিল; ততক্ষণ অদিতি
অপলক চেয়ে ছিলো ধ্রুবর দিকে। যেই ধ্রুবর চোখ পরলো ওর দিকে; সঙ্গেসঙ্গে মেয়েটা দ্রুত ধ্রুবর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছে। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর সরে এসে বাইকের দিকে এগুলো!
ক্যাব থেমেছে হোস্টেলের সামনে। অদিতি নেমে দাঁড়ালো ক্যাব থেকে।
ধ্রুব অনেক আগেই এসেছে এখানে। ইমনকে চলে যেতে বলে, ও বাইক থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে। অদিতির সঙ্গে কথা আছে ওর! ধ্রুব তানিয়াদের ইশারা করলো; চলে যেতে! ওরা অদিতির দিকে একবার চেয়ে হোস্টেলে ঢুকে গেল; অদিতিও ওদের আটকালো না। এমনিতেই মেয়েগুলো ফজর থেকে অনেক করেছে ওর জন্যে। তাই ও একা-একাই হেঁটে যেতে লাগল হোস্টেলের দিকে।
‘অদিতি!’
পেছন থেকে ধ্রুব বড্ড আবেগী কণ্ঠে ডেকে বসলো।অদিতির বুকটা কেঁপে উঠল এই ডাকে! চাদর গায়ে ও ধীরে ধীরে ফিরে তাকাল। ধ্রুব তখন বাইকের সঙ্গে হেলান দিয়ে দুহাত আড়াআড়ি বুকের উপর ভাঁজ করে অদিতির দিকে কেমন করা চোখে চেয়ে আছে। ওই মাতাল-মাতাল চাওনিতে অদিতির হৃদয়টাই নড়ে উঠল যেমন; ও চোখ সরিয়ে ফেলল! অপেক্ষা করল ধ্রুব কিছু বলবে।
ধ্রুব ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল, এগুলো না সামনে। ওর চোখ দুটোতে এখনো মারাত্মক ভয় লেপ্টে আছে। বুকের উন্মাদনা এখনো কমাতে পারেনি। আজ কিছু একটা হয়ে যেতে পারত, ও হয়তো ওই মেয়ের হাসিটুকু হারিয়ে ফেলতে পারত! অনেক, অনেক কিছুই আজ ঘটতে পারত! ধ্রুব সোজা হয়ে দাঁড়াল। ও আজ এলোমেলো-কাহিল ভীষণ। ওর এই কথাটা এখন; এই মুহূর্তে না বললে আজ ও সম্ভবত পাগল হয়ে যাবে।
ধ্রুব ওভাবেই শরীরটা জোরপূর্বক দাঁড় করিয়ে রাখলো; অদিতির ফাঁপা চোখটার দিকে চেয়ে রইল অপলক; অতঃপর অদিতিকে অবাক করে দিয়ে একপর্যায়ে চুড়ান্ত বিধ্বস্তের ন্যায় বলে উঠলো—‘অ্যাই লাভ ইউ!’
অদিতি ভীষণ অবাক হয়ে মাথা তুললো! ওর চোখ-দুটো ধ্রুবর চোখে! ও জানত! আজ রাতে যা হয়েছে; তাতে ও যা জানার জেনে গিয়েছিল।কিন্তু তাই বলে এত তাড়াতাড়ি…
ধ্রুব হাত ছাড়লো বুক থেকে; ধীরে পায়ে এগুচ্ছে। অদিতি ধ্রুবর দুই চোখের দিকে অপলক চেয়ে আছে। মানুষটা এক রাতেই এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে?চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
ধ্রুব ধীর পায়ে এগিয়ে এলো অদিতির মুখোমুখি। অদিতি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।এমন একটা মুহূর্তে কি বলা উচিত ওর? ও তো তেমনি অনুভব করে এই মানুষটার জন্যে! কিন্তু ও অদিতি, ভালোবাসা ওর জন্যে পা/প। ও যা-তা বলা শুরুলো—-‘ আ..আপনি ভুল করছেন!’
‘হুশশ!’ —- ধ্রুব হিসহিসিয়ে উঠল!
অদিতি থেমে গেল; কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলল। ধ্রুব কথা বাড়াল না; অতিরঞ্জিত কিছুই বলল না। শুধুমাত্র অদিতির কপালের ওই সাদা ব্যান্ডেজটায় হালকা ভাবে আঙুলে ছুয়ে, অদিতির গোলগাল-সরল ওই মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো। ব্যান্ডেজটা ছুয়ে দিতে দিতে শুধু বলে গেল নিজের কথাগুলো——‘কিচ্ছু এক্সপ্লেইন করবো না; কিচ্ছু বোঝাতে যাবো না আজ; না তোমার কাছে কিছু শুনবো। শুধু এটুকু বলবো, আমার পক্ষে আর হচ্ছে না। আমি পারিনি আর আটকে রাখতে এসব! যদি আজকের রাতটায় কিছু একটা….
ধ্রুব থামে, কথাগুলো আর বের করতে পারলো না। ওর গলা কাঁপছে! রাতের স্মৃতিটুকু ভুলতে চাইছে যত ততই যেন চোখের সামনে সেগুলো হানা দিচ্ছে।
অদিতি তখনও চেয়ে আছে; ওর চোখ এলোমেলো না আজ! ও নির্নিমেষ দেখে যাচ্ছে পাগল-ক্ষ্যাপাটে ধ্রুবকে, যাকে আজ রাতে অদিতি ভেঙ্গেচুরে দিয়েছে।
ধ্রুব একটু থেমে ঢোক গিলে অন্যদিকে চেয়ে। পরপর অদিতির দিকে ফিরে চায়! এবার আর জড়তায় নয়; বরং স্পষ্ট গলায় বলে বসে ——‘আজকের রাতটা আমি কখনো ভুলবো না; তেমনি আমি তোমাকেও কোনোদিন ভুলতে দিব না। ফ্রম নাও; ধ্রুব ইয়ামিন ইজ বুকড টু দিস অদিতি হায়াত; ফরএভার ফরএভার!
আমার কথা শেষ; এখন তুমি চাইলে সবসময়ের মতো ছুটে পালিয়ে যেতেই পারো।’
অদিতির কানের কাছে তখনও ভেসে যাচ্ছে—-‘ধ্রুব ইয়ামিন বুকড টু অদিতি; ফরএভার ফরএভার।’
তারপর..তারপর হঠাৎ অদিতির ভয় বেড়ে গেল। ধীরে ধীরে মনের প্রজাপতিগুলো পিষে গেল। চোখে ভেসে আসতে লাগলো, অদিতির বাবা, একটা সালিশ; গ্রামের কজন মানুষ; আর একটা পরিবারের দুর্বিসহ জীবন! ও এই ঢাকা শহরে কেন এসেছিল;আর কি করে যাচ্ছে এখন?
ধ্রুবর হাতটা তখনও অদিতির ব্যান্ডেজ ছুয়ে ছিলো। অদিতি আচমকা পিছিয়ে গেল; ধ্রুবর আঙুল ব্যান্ডেজ থেকে সরে যেতেই ধ্রুব তাকালো ওর দিকে। অদিতি ধ্রুবর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে পেছাচ্ছে, ওর মুখটা ভয়ার্ত! ও এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে চাপা স্বরে বিড়বিড় করতে লাগলো——‘ এটা হয়না… সম্ভব না! আমার কাউকে ভালোবাসার অধিকার নেই! নেই, ক…কিচ্ছু নেই।’
আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ১৪
ধ্রুব সেসব শুনতে পায়না। ও অদিতির দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রয়েছে। অদিতি পেছাতে পেছাতে একর্যায়ে ঘুরে গিয়ে দৌড়ে হোস্টেলের গেইটে ঢুকে গেল। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল! এই রিয়েকশনটাই তো ও আশা করেছিল।