আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৩

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৩
অবন্তিকা তৃপ্তি

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি! আজ খাদ্যমন্ত্রী সৌরভ ইয়ামিনের মুক্তির দিন! আজ আদালত থেকে বিনাশর্তে মুক্তি পেয়েছেন উনি। আদালত থেকে; মাথা উঁচু করে, বুক চওড়া করে বেরিয়ে আসতেই পুরো জায়গা-জুড়ে কোলাহল লেগে জেল একপ্রকার! চারপাশে পুলিশের ঘেরাও; সাংবাদিকরা উৎ পেতে আছে রীতিমিত।! সৌরভ বেরিয়েই সাংবাদিক আর জনগণের ভিড়ে আটকা পরে গেলেন। পুলিশ এত মানুষের ধাক্কাধাক্কি সামলানোর চেষ্টা করার জন্যে লাঠি উঁচাতেই, সৌরভ চোখের ইশারায় তাদের থামালেন। পুলিশ সদস্যগণ একপাশে সরে গেল!

সৌরভ সাংবাদিকদের দিকে তাকালেন! একজন সাংবাদিক শুরুতেই বললো———‘স্যার, আপনার মানি লন্ডারিং-এর মিথ্যা মামলার পেছনে কারা থাকতে পারে? আপনি কাকে সন্দেহ করছেন?’
সৌরভ মুচকি হাসলেন, চোখের ভেতরে কিছু একটা তো ছিলোই; জবাব এলো —-‘সন্দেহ আছে! তবে এখন সেটা বিশ্বাসে বদলে গেছে। বাকিটা আপনারা খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন!’
সাংবাদিকদের মাঝে এ-কথা শোনামাত্রই সাড়া পড়ে গেল! একজন এগিয়ে এসে বলল———‘স্যার, শোনা যাচ্ছে, আপনার ছেলের হাত আছে আপনাকে মুক্ত করতে! তাহলে কি ধরা যায়, তিনি রাজনীতিতে আসতে চলেছেন?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ধ্রুব দূরে বাইকের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কালো সানগ্লাস চোখে,আরেক হাতে সিগারেট ফুকছে; তো আরেক হাতে কোকাকলার ক্যান! ঠোঁটে তার সেই চিরচেনা উদাসীনতার ছাপ! সৌরভের তাকানো তার গায়েই লাগলো না যেন।
সৌরভ ধ্রুবর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে চোখ সরালেন, তারপর জবাবে বললেন——‘আমার ছেলে আমার সব! আমি আজও টিকে আছি, কারণ আমার ছেলে পাশে ছিল! আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, কিন্তু আমার ছেলেকে নিয়ে নয়! ওর এই জগতের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। ওর জগৎ আলাদা!’

এক মুহূর্তের জন্য সবাই চুপ হয়ে গেল, সৌরভের কণ্ঠে যে দৃঢ়তা, তাতে আর কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করার সাহস পেল না। সৌরভ পুলিশের দিকে তাকালেন, সঙ্গে সঙ্গেই তার ইশারায় পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হলো।সাদা পাঞ্জাবি পরে যেমন রাজার মতো কারাঘরে এসেছিলেন; তেমনই সম্মান নিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে মার্সিডিজের দরজা খুলে গাড়িতে বসলেন।
সৌরভ গাড়িতে বসতেই বাকি-টুকু সিগারেট রাস্তায় ফেলে দিল ধ্রুব! কোকের বোতল পাশে থাকা সৌরভের দলের এক ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো! তারপর গাড়ির আগে চলল বাইক নিয়েক আর পেছন পেছন সৌরভের গাড়ি এগোল!

বাড়ির দরজায় এসে সৌরভ নামলেন, সাদা পাঞ্জাবির বোতাম ঠিক করলেন! ‘ ইয়ামিন বাড়ি’ এর সামনে এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন। ধ্রুব সানগ্লাস খুলে বুকের খোলা শার্টের মধ্যে ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল! সৌরভের পাশে দাঁড়াল গম্ভীর মুখে! মুখে কোনো ভাবান্তর নেই, যেন সবকিছুই তার কাছে নিতান্ত স্বাভাবিক!
তারপর বাপ-ছেলে একসঙ্গে ঢুকলো সদর দরজা দিয়ে।ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই সৌরভের শুরুতেই চোখ গেল তৃণার দিকে!তৃণা সোফায় বসে আছে, চোখেমুখে ক্লান্তি, অভিমান! সৌরভ ধীরপায়ে এগিয়ে গেলেন। তৃণা উঠে সৌরভের দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়াল আস্তে করে, ওর চোখে জল!
সৌরভ তৃণার পাশে দাঁড়াতেই তৃণা উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো—-—‘শান্তি আপনি এখন? রাজনীতি আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে না? আর কিছু পাওয়ার আশা আছে এখনো? বলুন আমাকে? নেক্সট কোন কারাঘরে যেতে মন চাইছে?’

তৃণা কথা বলতে বলতে একসময় ফুপিয়ে উঠল! সৌরভের পাঞ্জাবির বুকের অংশ মুষ্টিতে চেপে মাথাটা হেলিয়ে দিয়েছে কঠোর-কঠিন বুকের উপর! সৌরভ আড়চোখে ছেলের দিকে তাকালেন। ধ্রুব তখন ডাইনিং টেবিলের সামনে জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢালছে। ওর এসবে মন নেই একবিন্দুও; ইচ্ছেও নেই নিজের বাবার অন্য নারীর সঙ্গে মান-অভিমানের গল্প শুনতে! ফেডআপ ধ্রুব এসবে!
সৌরভের ইচ্ছে করছিল তৃণাকে বুকের ভেতর শক্ত করে চেপে ধরতে! কিন্তু সে অধিকার কি আর তাঁর আছে? তিনি তৃণার মাথায় হাত রেখে আবারও ধ্রুবর দিকে তাকালেন। ধ্রুব তখন শিষ বাজাতে বাজাতে নির্বিকার মুখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।

ধ্রুব যেতেই, সেই মুহূর্তে আর কোনো বাধাই সৌরভের সামনে রইল না! তিনি দুহাতে তৃণাকে টেনে বুকে আগলে নিলেন। আশকারা পেয়ে এবার সৌরভের শক্ত কাঁধে মাথা রেখে তৃণা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
সৌরভ আস্তে করে স্ত্রীর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন——‘থামো, মানুষ আছে বাসায়! কী ভাববে ওরা?’
তৃণা বুকের পাঞ্জাবি মুঠো করে ধরে অশ্রু ভেজা চোখ তুলে সৌরভের দিকে তাকাল; নাক টেনে সমস্ত রাগ ঝেড়ে বললো—‘আমি চাইনি আমার জীবন এভাবে কাটুক! আমি চাইনি আপনি আমার সংসারে থেকেও না থাকুন! আপনি আপনার ছেলেকে ভালোবাসেন; আমি মানি সেটা। বিশ্বাস করুন; আমি ওমন সিনেমার মতো সৎ মা কোনোদিন হতেও চাইনি। কিন্তু আমি কি মানুষ নই? আমার কি ইচ্ছে হয়না একটা স্বাভাবিক দাম্পত‍্য-জীবনের? মাঝে মাঝে আফসোস হয়, কেন আমি আপনার আগের বউ হলাম না! কেন আপনি শুরুতেই আমাকে বিয়ে করলেন না? কেন, কেন সৌরভ?’
সৌরভ চুপচাপ শুনলেন সব-টুকু অভিযোগ! একটুও বিরক্তি নেই, নেই কোনো নিজের ব্যক্তিগত অভিযোগ-চাওয়া! শুধু তৃণার মাথায় হাত রেখে বললেন——‘তোমাকে আমি এ বাড়িতে আনব! ক’টা দিন অপেক্ষা করো। ধ্রুব হয়তো একদিন আমাকে বুঝবে। সে দিন আসছে সামনে!’

গোসল শেষ করল ধ্রুব! আজ প্রায় দুদিন পর; গায়ে একটু পানি ঢাললো। সারাদিন ডিওডোরেন্ট দিয়েই চলা ধ্রুবকে আজ বাধ্য হয়ে গোসল করতেই হলো! কারণ, একরোখা এক মেয়ে আছে এখন ওর জীবনে! যে ধ্রুবকে একদিন গোসল না করলে; একদিন খাওয়ায় অনিয়ম করলে চোখ রাঙায়! ধ্রুব টিশার্টটা হাতে নিয়ে উদোম গায়ে আয়নার সামনে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে রইল! একেবেকে নিজেকে দেখতে লাগলো আয়নায়!হঠাৎ খালি বুকের পাশটায় আঙ্গুল চেপে ধরে আয়নায় ভ্রু বাকিয়ে চেয়ে হালকা হাসল; বলল ——-‘ইচ্ছে করছে নিজের এই অবস্থাতে তোমাকে জাস্ট চেপে ধরতে! কবে বউ হবে আমার; গড নউজ! অ্যাম বিং সো মাচ ডেসপারেট; মিসেস ধ্রুব!’
বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ধ্রুব! বিয়ে; এই জীবনে বোধহয় ওর কপালে বিয়ে-টিয়ে আর লেখা নেই। ধ্রুব টিশার্টটা পরে নিল! তারপর এক লাফে বিছানার বালিশে উদোম হয়ে শুয়ে পড়লো! বালিশে মুখ চেপে একহাতে বিছানায় শুয়ে ফোন ডায়াল করল—— অদিতি নাম্বার! রিসিভ হচ্ছে না! একবার… দু’বার…তাও না।
ধ্রুব এবার টেক্সট পাঠাল——‘Hi! Receive the call!’

আবারও অপেক্ষা, কোনো রিপ্লাই নেই! ধ্রুব এবার সত্যিই বিরক্ত হলো! বালিশে মুখ চেপে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল। দুইদিন ধরে একটুও কথা হয়নি অদিতির সঙ্গে! অথচ আজ যখন সে নিজে থেকে ফোন করল, তখন এই মেয়েটি কলই ধরল না? এই চুপচাপ অবস্থা, এই নিরবতা বিয়ের আগেই; না জানি এই মেয়েকে বিয়ে করলে ধ্রুবকে কতটা পুড়তে হয়! ওহ গড! ধ্রুবর ভাবতেই ভয় লাগছে।
অশান্তি হচ্ছে ভীষণ! অদিতির সঙ্গে কথা বলাটা দরকার। ধ্রুব বালিশ থেকে মাথা তুলে উঠে বসল। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর, ধ্রুব আবার ফোনটা হাতে তুলে নিল। শেষবারের মতো তর্জনী দিয়ে স্ক্রিন সোয়াইপ করল, তখনই—ফোনের স্ক্রিনে এক চমকালো —-‘Dhruv’s Enamorada’ is calling……….

ধ্রুব যেন চমকে গেল। এখন এই মেয়েটাকে সে একটা ধমক দিবে! ধ্রুব কোনরকম নিজের ক্ষোভ চেপে রেখে কল রিসিভ করলো————‘হ্যাই! কল করার সময় ফাইনালি তোমার হলো? প্রাইম মিনিস্টার হওয়া উচিত তোমার, এত বিজ….’
বরাবরের মতো এবার সালাম এলো না! বরং পরিচিত নয়, বরং আরও ছোট একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো ওপাশ থেকে—‘দুলাভাই, আমি আমি ইফাজ।’
ধ্রুব এই নাম শোনা-মাত্রই এক মুহূর্তেই সোজা হয় বসল, ভ্রু কুঁচকে গেল তার——‘ইফাজ?’
ইফাজ ভয়ে-ভয়ে হঠাৎ কোনো আনুষঙ্গিক আলাপে না গিয়েই বলে উঠলো——-‘দুলাভাই, আপুর আকদ হয়ে যাবে আগামীকাল! আপু কাদে!’

ধ্রুবর শরীর মুহূর্তের মধ্যে যেন অবশ হয়ে গেল! মনে হলো, মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবী হঠাৎ করে যেন থেমে গেল! মাথার ভেতর একের পর এক বিশাল বিস্ফোরণের মতো শব্দ হচ্ছিল! তার শরীর যেন এই খবরটা এক মুহূর্তে গ্রহণ করতে পারছিল না! সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল, ঠোঁট চেপে ধরে অস্থির গলায় বলল——‘আকদ? কিসের আকদ?’
ইফাজ জবাব দিল আরও নিচু গলায়——-‘আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে! কালকে আকদ হবে!’
ধ্রুবর মেরুদণ্ড বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল! তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল যেন! সমস্ত পৃথিবী এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল, আর সে শুধু শুনছিল, দুনিয়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর শব্দ—আকদ!
কিন্তু…কিন্তু অদিতি বাড়ি গেছে কখন? ওর সঙ্গে তো পরশু কথা হয়েছে! তখন তো কিছুই বলল না। পরশু….ওহ গড! ধ্রুব মাথার চুল মুষ্টি করে চেপে ধরল! পরশু কথা হয়েছে! গতকালকে তো অদিতির কল এসেছিলি! মামলার কাজে এত ব্যস্ত ছিলো; ধ্রুব কল রিসিভ করতে পারেনি। শিট…শিট….শিট!

ধ্রুব ব্যস্ত গলায় বলল ———‘তোমার আপু কোথায়? ও ঠিক আছে? বিয়েতে ও রাজি?’
‘না, দুলাভাই! আপু রাজি না; কাঁদছে শুধু! আব্বু ওকে জোর করেই বিয়ে দিচ্ছে!’ ——- ইফাজ জবাব দিল!
ধ্রুবর নিশ্বাস ভারী হয়ে গেল। যেন তার শিরায় আগুন ঢেলে দেওয়া হয়েছে! তার মনে একটাই প্রশ্ন—অদিতি কি ওর কথা তোফাজ্জল হায়াতকে একবারের জন্যেও বলেনি?পরমুহূর্তে ধ্রুবর মনে পরে; বলার কথা আসছে কোথা থেকে? ধ্রুব ওকে প্রপোজ করার সময়ই বলেছে—- যা করার ও করবে। অদিতি শুধু ভালোবাসবে; ব্যাস!’
ধ্রুব নিজেকে সামলে বললো——-‘তোমার আপুর কাছে ফোনটা দাও!’
ইফাজ ভয় পেয়ে গেল;———‘পারব না দুলাভাই! আব্বু নিষেধ করেছে!’

ধ্রুব দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো! তারপর বলল———‘ইফাজ, শোনো বাচ্চা! আমি আসছি! এক্ষুনি আসছি! তুমি তোমার আপুকে একা রেখো না! যা কিছু হোক, ওকে একদম একা রেখো না! আমি সব ঠিক করে দেব! ওকে বেবি?’
ইফাজ মাথা নাড়ল! ধ্রুব ফোন রেখে দিল, তারপর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে দরজা খুলে নিচে নেমে এল!
নিচে এসে, সৌরভ ইয়ামিনের সামনে দাঁড়িয়ে একপ্রকার হাঁপাতে সৌরভ টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে অবাক হয়ে হাপাতে থাকা ছেলের দিকে তাকালেন; ———‘ কি ব্যাপার? কি হয়েছে তোমার?’
টিভির খবরের সাউন্ড ডাইরেক্ট কানে এসে লাগছিল! ধ্রুব রেগে সোফার উপর থেকে রিমোট নিয়ে ঠাস করে টিভি বন্ধ করে দিল! রেগে বললো —-‘তুমি এখানে দেশের নিউজ দেখছো! আর ওদিকে আমার দিন-দুনিয়া ভেসে যাচ্ছে, খবর আছে তোমার? এক্ষুনি, আমি জাস্ট এক্ষুনি অদিতির বাড়ি যাব! তুমি আমার সঙ্গে যাবে, আর বিয়ের কথা ফাইনাল করবে! ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?’
সৌরভ ইয়ামিন ধীর-স্থিরভাবে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অবাক হয়ে বললেন ——‘আমি গেলে সব সমাধান হয়ে যাবে?’

ধ্রুব উত্তেজিত হয়ে বলল——‘তুমি যা ইচ্ছে করো! কিভাবে মানাবে, ইটস অল আপ টু ইউ! আমি তোমাকে জেল থেকে বের হতে হেল্প করেছি; এখন আমার হেল্প করো! আই নিড অদিতি অ্যাজ ম্যাই ওয়াইফ!’
সৌরভ চুড়ান্ত হতাশ! পাশেই তৃণা ধ্রুবর বেফাঁস কথায় লজ্জায় রান্নাঘরের দিকে এগিয়েছে। ধ্রুবর সেসব ভ্রুক্ষেপ নেই! সৌরভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন——-‘কবে যেতে চাও? কাল যাই? আজ মাত্র এলাম।’
ধ্রুব সোফার উপর হাত দুটো দিয়ে থাবা দিয়ে চোখ রক্তিম করে বলল—‘নো, আমি এখনই যাব।যে কাপড়ে আছো, ওই কাপড়েই চলো! আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি! একসঙ্গে যাব!’
সৌরভ ধীরেসুস্থে বললেন——‘আরে! মেয়ের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি; খালি হাত যাব? কিছু কিনে আনতে দাও! আর আংটি লাগবে না?’

ধ্রুব বলল——‘আংটি আছে আমার কাছে, মায়ের! ওটা দিয়েই দেব! উঠবে তুমি?’
সৌরভ এবার এক সেকেন্ড সময় নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে নিলেন। তৃণার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললেন——-‘তোমার অদিতি চাই? আমারও তোমার ছোট মা চাই! আমি তোফাজ্জলকে জোর করে মানাতে পারি; কিন্তু আমারও শর্ত থাকবে তখন!’
ধ্রুব বাঁকা চোখে তাকাল, পরপর কিছু একটা বুঝতে পেরে দ্রুত বলে ফেলল———‘অসম্ভব! আমার মায়ের ঘরে—‘
সৌরভ হালকা হাসি দিয়ে আবার সোফায় বসে গেলেন, যেন কোনো কিছুই ঘটছে না! তার মুখের অভিব্যক্তি গম্ভীর হয়ে গেল; বললেন—-‘তাহলে ভুলে যাও অদিতির কথা! তোফাজ্জলকে মানানো এমনিতেই সম্ভব নয়!’
ধ্রুব ভ্রু কুচকে তৃণার দিকে তাকাল! তৃণাও বড়বড় চোখে সৌরভের দিকে তাকিয়ে আছে; নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না সৌরভ এ কথা নিজে ধ্রুবকে বলেছেন।
ধ্রুব চোখ উল্টে ফেললো; হতাশ শ্বাস ছেড়ে বললো——-‘ওকে, ফাইন! তুমি এনে রাখো তোমার বউকে! কিন্তু সে আমার মায়ের ঘরে শোবে না! এটার ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজ!’
সৌরভ হাসতে হাসতে তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন——-‘যাও…শাড়ি পরে নাও! ছেলের জন্যে মেয়ে দেখে আসি!’

অদিতি বদ্ধ রুমের বেডের কাঠ ঘেষে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসেছিলো। বারবার নরম-দুর্বল শরীরটা কেপে-কেপে উঠছে! একসময় হাঁটু থেকে মাথা তুলে তাকাল। এই অদিতিকে চেনাই যাচ্ছে না! চোখ-মুখ ফুলে কি এক ছন্নছাড়া অবস্থা! ধ্রুব ইয়ামিনের নরম-কোমল প্রেমিকা তো এমন নাই কোনোদিন। বরং ছন্নছাড়া শব্দটা তো ধ্রুবর জন্যে স্বয়ং…
অদিতি দুহাতে ব্যস্ত-ভঙ্গিতে চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল! ইফাজকে বলেছিল কোথাও ওর ফোন আনার জন্য। কিন্তু ও কোথায় গেছে, কে জানে? ধ্রুবকে জানানো দরকার। এই বিয়ে তো সে করতে পারবে না!
কিন্তু ধ্রুবকে বিয়ে করা কি আদৌ সম্ভব? অদিতি…ও তো একসময় ধ্রুবকে বলেছিল, বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তাদের মধ্যে কিছুই সম্ভব নয়। তবুও কেন ধ্রুব বুঝল না? কেন অদিতি নিজের প্রেমে এত গভীরভাবে ফাসিয়ে দিল। এখন এই যন্ত্রণা কাকে বোঝাবে? কাকে বলবে?

তোফাজ্জলের সামনে ধ্রুবর নাম নেওয়ার সাহস কোনোদিনই ছিল না অদিতির। তোফাজ্জল যদি জানতেন, জবাই করে ফেলতেন অদিতিকে। তবুও যা জেনেছেন; তাতেও এখন অব্দি কম লাঞ্ছনা সহ‍্য করতে হয়নি। টেনে-হিচড়ে শহর থেকে গ্রামে এনেছেন। বন্দী করে জোর করে বিয়ে করিয়ে মাথা থেকে বোঝা হালকা করতে চাইছেন। অদিতিকে বিয়ে দিয়ে জমজম পানিতে গোসল করে হারাম প্রেমের পাপ থেকে তোফাজ্জল নিজেকে মুক্ত করবেন।
হারাম প্রেম…হারামই তো। অদিতিকে বারবার বলা হয়েছে; শহরে কিছু করিস না; ছেলে-পেলেদের থেকে দূরে থাকিস। অথচ কি করল অদিতি? জড়িয়ে গেল প্রেমে? মুখ কালো করে দিল সবার? এই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত কি করে করবে ও? কি করলে গা থেকে ধ্রুব ইয়ামিনের প্রেমের এফেক্ট মুছা যাবে?

ভাবতে ভাবতে অদিতি দুহাতে মুখ ঢেকে আবারও কেঁদে ফেলল। কান্নার মাঝে হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল। অদিতি দ্রুত চোখ-মুখ মুছে দরজা খুলল। ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল ইফাজ, মাথাটা নিচু করে, অপরাধীর মতো। তার হাত খালি, কিছুই আনেনি। অদিতি ভাঙা গলায় বলল,——‘ফোন পাসনি?’’
ইফাজ হতাশ মুখে ফিসফিস করে বলল,——‘আমি দুলাভাইকে বলে দিয়েছি, তোমার বিষয়ে। সে সম্ভবত আসছে।’’
অদিতি লম্বা করে শ্বাস নিল। ধ্রুব আসছে! অদিতি জানে; ধ্রুব পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা তিন ঘণ্টাতেই পেরিয়ে আসবেই! ধ্রুব এলে, এবার নিশ্চয়ই কিছু ভালো কিছু হবে। ইফাজ কথাটা বলে মাথাটা নিচু করে চুপচাপ ঢুকে গেল অদিতির রুমে। অদিতি দরজা বন্ধ করে ফিরে তাকাল। কান্না এখনও গলায়, বলল——‘তুই এখানেই থাকবি?’’
ইফাজের মুখে অন্ধকার। ও নিচু গলায় বলল———‘দুলাভাই আমাকে বলেছে, তোমার কাছে থাকতে। তো, থেকে যাই? শব্দ করব না, প্রমিজ!’’

অদিতির চোখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। এত ভালোবাসা, অথচ কেন ধ্রুবকে কি দিয়েছে ও? বাবার সামনে ওর নাম মুখে বলার সাহস হয়নি? এটাকে প্রেম বলে না! এটাকে কিছুই বলে না। কিচ্ছু না….
তখন আবার দরজায় আবার টোকা পড়ল। অদিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে দিল। ওপাশে ফাহিমা। তিনি অদিতির ভেজা চোখ দেখে, সঙ্গেসঙ্গে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। হাতে এনগেজমেন্টের শাড়ি ও জুয়েলারি। ওসব নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন———‘আমার মন বলে, তুই প্রেম করেছিস অদিতি! এখনো সময় আছে বল। ছেলেটা কে? নাম কি?’
অদিতি মাথা নিচু করে ফেলল। ফাহিমা খ্যাকরে উঠে বললেন——-—‘তোর চোখ-মুখ বলছে তুই প্রেম করেছিস! এখন কেঁদে আমাদেরও কি পাপের ভাগীদার করছিস? হ্যারে,তোর বাপের সম্মান একবারের জন্যেও ভাবলিনা? তোর বাপ কি? কি করে? তুই জানস না? হারামি মেয়ে আমার গর্ভ থেকেই জন্ম নিতে হলো?’

ফাহিমা একটু থেমে, জল চোখে নিয়ে বললেন———‘ক্যান করলি এটা তুই? তোরে আমার শহরে পড়তে পাঠানো ভুল ছিল? তোর বাপের সামনে আর কত ছোট করবি আমাকে? তোর বাপ নাহয় তোদের কড়া শাসন করে? এই এই, আমি তোদের কোনোদিন কোনও কিছুতে মানা করছি? যা চাইছিস; বাপরে লুকিয়েও দিয়েছি। দেইনাই? বল আমারে, দেইনাই আমি? তাও কোন পাপের শাস্তি তুই আমারে দিলি?’

ফাহিমা আই যাই বলুক, অদিতি সেগুলো সহ্য করল। সে শুধু চুপ ছিল, নিজের শাড়ি ও জুয়েলারি সরিয়ে বিছানায় বসল; মাথাটা সেভাবেই নামিয়ে নিচু গলায় শুধু বললো ———-‘স…সব পা..পাপ আমার মা। আমি দ..দোষী! তোমরা ক..কেউ নও!’
ফাহিমা এ কথা শুনে আবারও বললেন উঠলেন————-‘তুই তোর বাপের সম্মানের কথা একবারও ভাবলিনা! হারাম কাজ তো হারামই! লোক জানজানি করার আগে তোরে বিদায় করলেই তোর বাপ বাঁচে। ছিহ! তুই শেষ পর্যন্ত এমন একটা কাজ করেছিস, আমি ভাবতেও পারছি না। ছেলের হাতের গাজরা পড়ল? ছেলে তোর হাত ধরে? চিন্তা করতেই আমার লজ্জা হচ্ছে! ওই ছেলের মুখ দেখলে তোর বাপ খু*ন করত, খু*ন. মুখ না দেখায় ছেলে বেচে গেছে।’
অদিতি কান্নাভেজা মুখে, গিলে নিলো সব কথা-টুকু। ফাহিমা শান্ত গলায় আবার বললেন——-‘ছেলেটা কে অদিতি? আবার বলতেসি, নাম বল আমারে!’
অদিতি তাকাল, ভাঙা গলায় বলল———‘আমার কেউ নেই। কেউ নেই! তোমরা এখন আমাকে যতই বলো, আমার উত্তর একই থাকবে। বিয়ে তো করছি তোমার পছন্দের ছেলেকে! তবুও ছেলের নাম বারবার জানতে চেও না। ভালো লাগে না আমার।’

ফাহিমা এই কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। চেঁচিয়ে বললেন———‘ম*রে যেতে পারিস না তুই কলঙ্কিনী!’
এ বলে ফাহিমা ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। অদিতি চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়াল; বিড়বিড় করে বললো ———‘বিয়েটা হয়ে যাক; ম…মরে যাব। তোমাদের পাপ শেষ হবে আমার লা..লা শ দেখে!’
ফাহিমা ঘর থেকে বেরুতেই দেখেন , তোফাজ্জল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনেছেন এতক্ষণ। ফাহিমা ঢোক গিললেন! সামনে আসতেই, তোফাজ্জল তার দিকে তাকালেন। স্ত্রীর দিকে চেয়ে শান্ত হয়ে বললেন———‘তোমরা মা-মেয়ে মিলে এসব লোক জানজানি করতে চাচ্ছো? তোমাদের এসবের কারণে, এই বিয়ে না হলে তোমার ও হারামি মেয়েরে আমি খু*ন করতে বাধ্য হব।’
এ বলে তিনি রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। ফাহিমা মুখে কোনো কথা না বলে শুধু এক-দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

তোফাজ্জল উঠোন পেরিয়ে বাড়ির বাইরে বেরুতেই দেখলেন, উঠোনের সামনে দুটো মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে! তিনি থামলেন; ভ্রু কুঁচকে তাকালেন গাড়ির দিকে!
একটু পর গাড়ি থেকে সৌরভ নামতেই তোফাজ্জলের মুখে মুহূর্তেই হাসি নেমে এলো! তিনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন! সৌরভের পাশে নামল শাড়ি পড়া, তৃণা আহমেদ।
‘আরে সৌরভ যে…’——তোফাজ্জল দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সৌরভকে জড়িয়ে ধরলেন! সৌরভও হেসে ম্যানলি ভঙ্গিতে হেসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে।
তোফাজ্জল সৌরভকে দেখে যতই খুশি হয়েছেন; সেটুকুর মধ্যে মুহূর্তেই ভাটা পরে গেল। পরের মুহূর্তে গাড়ির সামনের সিট থেকে নেমে এলো স্বয়ং ধ্রুব ইয়ামিন! আজ আর ময়লা শার্ট নেই! সুন্দর ইস্ত্রি করা শার্ট, চোখে সানগ্লাস! হাতে ওয়াচ, পায়ে ব্র্যান্ডেড শু! পুরো দস্তুর তরুণ হয়ে এসেছে মেয়ে দেখতে! তার পাশে একে একে ধ্রুবর থ্রি ইডিয়টের দল; সুমন; রাজন; ইমন এসে দাঁড়াল!

ধ্রুব তোফাজ্জলের দিকে তাকিয়ে; সানগ্লাস চোখ থেকে নামিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল———‘হ্যাই আংকেল! ভালো আছেন?’
তোফাজ্জল ধ্রুবকে দেখেই মুহূর্তে রেগে গেলেন! সৌরভের দিকে তাকিয়ে বললেন———‘তুই তোর ছেলেকে নিয়ে এসেছিস? ও আমার সাথে গাদ্দারি করেছে, এটা বলার পরেও?’
সৌরভ মুচকি হেসে তোফাজ্জলের কাঁধে হাত রাখলেন——-‘আরেহ! কী জন্য এত গম্ভীর হচ্ছো? সবসময় বাড়ি আয়, বাড়ি আয় বলে এখন এসব? বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাও তো আগে আমাদের?’
তোফাজ্জল যেন মুহূর্তেই লজ্জায় পড়ে গেলেন! দ্রুত বললেন———‘আমি তো ভুলেই গেছি! আয়, আয়, বাড়িতে আয়! কই, অদিতির মা? দেখো কে এসেছে!’

তোফাজ্জলের সঙ্গে বাড়ির ভেতর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সৌরভ পেছনে ইশারা করতেই লোকেরা গাড়ি থেকে বোঝাই করে মিষ্টি, চিপস, সফট ড্রিংকস নিয়ে এগিয়ে এলো। ধ্রুব যত এগোচ্ছে, তত বারবার তার চোখ চুপি চুপি খুঁজছে অদিতিকে। সে এক ঝলক দেখতে চাইছে তার প্রাণ-ভোমরাকে! জাস্ট একবার…!
ইফাজ যখন ধ্রুবকে উঠোনে দেখতে পেল, তখন এক মুহূর্তের জন্য ধ্রুবর দিকে ছুটে যাওয়ার জন্যে এগুলো! ধ্রুবও ইফাজের দিকে তাকাল! কিন্তু পরমুহূর্তে ইফাজ তোফাজ্জলকে দেখতে পেয়ে থেমে গেল। মুহূর্তেই চোখ-মুখ বদলে গেল ইফাজের। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল এটা দেখে। একবার বিয়ে হয়ে গেলে; এই ইফাজ নামক শালাবাবুকে ধরে ধরে এই পৃথিবীর সব রিমোট কন্ট্রোল কার, বিডির সবচেয়ে বেস্ট ক্যামেরা একে গিফট দিবে ধ্রুব। এত লক্ষ্মী একটা ছেলে!
ফাহিমা তখন মাথায় আঁচল দিয়ে বাইরে এসে দেখলেন বাড়িতে মেহমানদের ভিড়। প্রথমে বিস্মিত হয়ে তাকালেন, কিন্তু তারপর এক মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
তৃণাকে প্রথমে চিনতে ফাহিমা চিনতে পারেনি। সেটা দেখে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে তৃণা নিজেই নিজের পরিচয় দিলেন——‘আমি তৃণা আহমেদ, সৌরভের স্ত্রী!’

ফাহিমা মৃদু হেসে বললেন ———‘ ওহ! আসলে সৌরভ ভাইয়ের প্রথম স্ত্রীকেই চেনা হয়েছিল আমার। আপনাকে আমাদের বাড়িতে দেখে ভালো লাগছে। আসুন, আসুন!’
তৃণা হাসল! তৃণাকে সঙ্গে নিয়ে ফাহিমা ভেতরের ঘরে চলে গেলেন।
সৌরভ পুরুষদের নিয়ে বসার ঘরে গিয়ে বসলেন, ধ্রুব পাশে বসে। তার চোখ তখনও বারবার অদিতির খোঁজে চলে যাচ্ছিল। কোথায় ও? নির্ঘাত কাঁদছে! ছিচকদুনে তো একটা!
ভেতর থেকে ফাহিমা সেমাই, পিঠা, সরবত নিয়ে এসে সামনে রাখলেন। সৌরভ পিঠার একটা টুকরো তুলে নিতে নিতে বললেন——-‘মেয়ের বিয়ের জন্য তো ভালোই আয়োজন করেছো! বাড়িটা বেশ সুন্দর লাগছে!’
তোফাজ্জল মুচকি হাসলেন; তাল দিয়ে বললেন——-‘এখনো মাত্র শুরু! মেঝো মেয়েটা তো….. এখন একটাই মেয়ে আমার; ওর বিয়েতে খরচা করবো না তো কি করব!’
ধ্রুব ভ্রু কুচকে তাকাল এ কথা শুনে! ওর তাকানো দেখে সৌরভ চোখের ইশারায় ছেলেকে ঠান্ডা থাকে বললেন! ধ্রুব থামল; সামলালো নিজেকে!

সৌরভ একটু চাপা গলায় এবার বিষয়টাকে গম্ভীর করে বললেন——-‘তোফাজ্জল, আমি আজ তোমার কাছে একটা দাবি নিয়ে এসেছি। আশা করি, তুমি রাখবে!’
তোফাজ্জল একটু বিভ্রান্তি নিয়ে তাকালেন; হাসার চেষ্টা করে মাথা নেড়ে বললেন——-‘বলো, কী দাবি? আমি চেষ্টা করব রাখতে!’
সৌরভ ধ্রুবর কাঁধে হাত রেখে, গম্ভীর গলায় বললেন——‘এটা আমার ছেলে ধ্রুব! হয়তো একটা দুর্ঘটনার কারণে তুমি ওকে চিনো! ও এবার ইউনিভার্সিটি শেষ করেছে! আমার ব্যবসা ও-ই সামলাবে! আমি আমার রাজনীতি নিয়েই ঠিক আছি!’
তোফাজ্জল ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আবার সৌরভের দিকে ফিরলেন। সৌরভ একটি বড় নিশ্বাস নিয়ে বললেন——-‘আমি আমার ছেলের জন্য তোমার মেয়ে অদিতির হাত চাইতে এসেছি! আমি চাই, তোমার মেয়ে আমার বাড়ির বউ হোক!’
তোফাজ্জলের মাথায় যেন বজ্রপাত হলো! অবিশ্বাস নিয়ে তিনি তাকালেন ধ্রুবর দিকে!
ইফাজ এ কথা শোনামাত্রই চোখ বড় বড় করে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইল! তারপর মুহূর্তের মধ্যে সে এক দৌড়ে চলে গেল অদিতির ঘরের দিকে!

তোফাজ্জল অবিশ্বাস নিয়ে বললেন——-‘অসম্ভব! এ দাবি আমি মানতে পারব না!’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে, শ্বাস আটকে বসে রইল! সৌরভ আবারও বললেন —-‘প্লিজ তোফাজ্জল! আমি কখনো তোমার কাছে কিছু চাইনি! আমার ছেলের কথা ভাবো একবার। ওর মা মারা যাওয়ার পর ওকে আমি এখনো কিছু দিতে পারিনি! আমার কাছে ও-ই সব! কখনো ও আমার কাছে কিছু চায়নি। ওর জন্যে তোমার মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। সরল- ভালো তোমার মেয়েটা। ছেলেটার একটা হিল্লে করলে আমার আত্মা শান্তি পাবে তোফাজ্জল! আমাকে দয়া করো! দয়া করে, আমার ছেলেকে তোমার মেয়েটাকে দাও!’

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩২

তোফাজ্জল আর কথাই শুনলেন না। এক লম্বা শ্বাস ফেলে হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। ধ্রুবর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে; পরপর মুখ ঘুরিয়ে বললেন——-‘আমার মেয়ের বিয়ে কাল! দাওয়াত খেতে আসায় আমি ভীষণ খুশি হয়েছি! আমাকে আর এসব বলে লজ্জা দিও না, সৌরভ! তোমরা বসো; আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি!’

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৪