আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৪০
অবন্তিকা তৃপ্তি
ধ্রুব অদিতির দিকে চেয়ে চোখ টিপে, দুষ্টু ইঙ্গিত দিয়ে বলল—‘নাও ইয়েস ম্যাই টার্ন!’
বলেই আস্তে করে ধ্রুব তার বধূর গায়ের শাড়ির আঁচল ফেলে দিল! লজ্জায় দু-চোখ বন্ধ করে নিলো অদিতি।
বাকিটা দুপুর কাটল; ভীষণ আদরে-সোহাগে! বখাটে ধ্রুব ইয়ামিন; ধীরে ধীরে নিজের একজীবনে জমিয়ে রাখা আদর-টুকু ঢেলে দিয়ে লাগলো নিজের স্ত্রীর প্রতি! আর গ্রামের ছাপোষা মেয়ে অদিতি হায়াতও তৃষ্ণার্তের ন্যায় বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বামীর ওটুকু আদর শুষে নিতে লাগলো নিজের মধ্যে অবলীলায়, অথচ লাজে রাঙা হয়ে!
দুপুর গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা ছেয়েছে আকাশ জুড়ে, ধ্রুব-অদিতির সুখ নিদ্রা তখন ভাঙল! অদিতি তখনও ধ্রুবর বাম হাতের উপর মাথা রেখে ডান হাতটা ওর নরম-কোমল দুহাতে চেপে গভীর ঘুমে মগ্ন।
ধ্রুব তখন ধীরে ধীরে চোখ খোলে! চোখ-দুটোতে হাত দিতে যাবে বিরক্ত ভঙ্গিতে, অথচ হাত বাধায় পেল। মাথাটা এলিয়ে পাশে তাকালে দেখে এই তামাম দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর একটা দৃশ্য!ধ্রুব ইয়ামিনের পাশে তার বহু আকাঙ্ক্ষিত; শখের বধূ শুয়ে আছে। কাঁথা দিয়ে মসৃণ-উন্মুক্ত শরীর ঢেকে রাখা অদিতির দিকে নজর পরলো। পরপর ধ্রুবর মনে পড়লো; আজ দুপুরের একের পর এক দৃশ্য!
অদিতির ড্যান্স, ওর কাঁপা হাতের ছোয়া; শেষ সময়ে লাজুক অদিতির অস্থির কান্না, আর ধ্রুবর প্রতি অদিতির এক আকাশ আবেগ! পুরোটাসময় যেন স্বপ্নের মতো ছিল ধ্রুবর কাছে। ধ্রুব কখনও ভাবেনি; এক জীবনেও ওরও নিজেরও কেউ হবে। কেউ ওকে ভালোবাসবে; ও যেমন তেমনভাবেই ওকে গ্রহণ করবে, যত্ন নিবে। হয়তো সারা জীবনে অভাগার ন্যায় বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ানো ধ্রুবর প্রতি খোদার দয়া হয়েছিল কখনো, তাই না চেয়েও তোফাজ্জল হায়াতের এই ভদ্র কন্যা এখন ওর ঘরে ওর বিছানায় শুয়ে আছে; ওর-ই আদর-ভালোবাসার চিহ্ন বহন করে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
এসব কথা ভেবেই হঠাৎ লাজুক ভঙ্গিতে হেসে ফেলল ধ্রুব! এই একটা দুপুর বা রাত যাই বলুক, এই একটা সময়ের জন্যে ধ্রুব কত জনম অপেক্ষা করেছে, কত সাধনা করেছে; কত রাত ছটফট করেছে—- এটা কেবল ওই জানে। এই ঘুমিয়ে থাকা অদিতির ক্লান্তিতে ভেজা এই মুখ-টুকু ওর কত আগ্রহের বিষয়, ওর কত সাধনার ফল— এটা বোধহয় একমাত্রই ধ্রুব ছড়া কেউ জানেনা, কেউ বুঝবেও না কখনো!
ধ্রুব আলতো করে মাথাটা বালিশে এলিয়ে অদিতির দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকাল! তারপর তাকাল অদিতির দুহাতের ফাকে চেপে রাখা ওর হাতের দিকে। হাসলো আবারও ধ্রুব! কতটা ভালো লাগছে এই মুহূর্তে ওর সেটা মুখে বা শব্দে কিছুতেই প্রকাশ করা কখনোই সম্ভব নয় ধ্রুবর জন্যে। এই জন্যে পুরুষ হওয়া লাগে; প্রেমিক পুরুষ!
অদিতির চুল-গুলো এলোমেলো হয়ে মুখে ছড়িয়ে রয়েছে। অবাধ্য ও দুষ্টু চুলগুলোকে বাধ্য করতে, ধ্রুব আলগোছে অদিতির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো! তারপর কিছুটা এগিয়ে এসে চুল গুছিয়ে সরিয়ে দিল বড় আদরে-,যত্নে! সঙ্গে কণ্ঠে অসম্ভব মায়া নিয়ে ডাকলোও ধ্রুব———‘অদিতি; সোনা? উঠো? সন্ধ্যা হচ্ছে!’
অদিতির ঘুমটা বোধহয় তখনই ছুটল! ও পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাল! ধ্রুব ওর ঘুমন্ত চোখ-দুটোর দিকে চেয়ে নিজেও সামান্য ফিরতি হাসল! অদিতি ঘুম ভেঙে শুধু একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল ধ্রুবর ওই মারাত্মক ঠোঁট এলিয়ে হাসার দিকে! ধ্রুব মুখ ঝুকিয়ে ওর ঠোঁটের কোণে আরও একবার চুমু খেলো; অদিতি লজ্জায় চোখ বুজে ফেলল! ধ্রুব মৃদু হেসে ডাকল——-‘উঠে যাও? আরো ঘুমুতে ইচ্ছে করছে?’
অদিতি চোখ খুলে দুদিকে মাথা নাড়ল; অর্থাৎ না! কিন্তু মুখে অদিতি কিছুই বলল না। শুধু আলগোছে ধ্রুবর হাতদুটো টেনে মেলে দিয়ে; ওকে জড়িয়ে ধরে ধ্রুবর নগ্ন বুকে নাক ঘসলো! ধ্রুবও ওর হাতের ম্যাসালের মধ্যে আগলে নিলো অদিতির নগ্ন পিঠ; সঙ্গে অপর হাতে কাথাটা ভালো করে মেলে দিল অদিতির পিঠের উপর।
তারপর কেমন দুষ্টু ইঙ্গিতে বলল———‘আমাদের তো অদিতি; বাসর রাত নাহয়ে বাসর দুপুর হয়ে গেল! ইউনিক কাপলের ইউনিক বাসর, হা?’
বলে হেসে ফেলল ধ্রুব! অদিতি লজ্জায় শেষ! ও অস্থির লজ্জায়; পরপর ধ্রুবর বুক থেকে মাথা তুলে সরে গেল বালিশের উপর! কাথা দুহাতে বুকের উপর চেপে ধরে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো কিছু। ধ্রুব হয়তবা সেটা বুঝল। ও ওভাবেই দেখতে লাগল; অপেক্ষা করতে লাগল অদিতি মুখে কিছু বলুক।
অদিতি আশেপাশে কিছু না পেয়ে; ধ্রুবর দিকে অসহায় চোখে তাকাল। ধ্রুব ভ্রু উচালো তখনই———‘কি? কিছু বলবে?’
অদিতি লজ্জায় চোখ নামিয়ে অস্ফুটে বলার চেষ্টা করল——-‘আ-আমার শা-শাড়িটা দিন প্লিজ!’
ধ্রুব তখনও বাম ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে রয়েছে। ধ্রুবর হুডেড চোখের ওমন দুষ্টু ইঙ্গিতে একপ্রকার মুষড়ে গেল অদিতি। কাথাটা দিয়ে চোখ-মুখ ভালো করে ঢেকে ল্যাপ্টে গেল একদম বিছানার সঙ্গে। ধ্রুব মৃদু হেসে কাঁথার উপরেই অদিতির কপালে চুমু খেলো। অদিতি চোখ বুজে হাসফাস করে উঠল যেমন। ধ্রুব কোনোরকম পাশে থাকা একটা টাওয়াল ঝটপট কোমরের নিচের অংশে প্যাচিয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে, কাবার্ড থেকে নতুন সুতির শাড়ি বের করে বিছানার উপর রাখল। নিজেও ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল———-‘শাওয়ার নিতে যাচ্ছি। কাঁথার ফাকে আর লুকিয়ে দেখতে হবে না আমাকে। উঠে পড়ো।’
অদিতি চোরের মতো ধরা পরে জিহ্বা কামড়ে ধরে চোখ খিঁচে ফেলল! ইশ, সে বুঝে গেছে! বাথরুমের দরজা আটকানোর শব্দ কানে আসলো, অদিতি কাঁথা সরালো মাথার উপর থেকে। মৃদু হেসে বিছানার উপর ধ্রুবর বের করে দেওয়া রাখা শাড়ির দিকে তাকাল; শাড়িটার রং গাঢ় লাল!
অদিতি আশেপাশে পুরনো শাড়ি-টাও আবার খুঁজলো;পেল না। তাই কাঁথাটা গায়ে প্যাচিয়ে নিয়েছে যখন, ধ্রুব তখন দরজা খুলে বেরিয়েছে। গায়ে স্রেফ টাওয়াল জোরানো। অদিতি ওকে দেখেই আঁতকে উঠে দু কদম সরে ফাঁকা ঢোক গিলে ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব রীতিমত তাজ্জব ভঙ্গিতে হা করে কাঁথায় আপাদমস্তক প্যাচানো অদিতিকে দেখছে। হতবম্ব গলায় ধ্রুব বলল——-‘এ কি হালত তোমার? কাঁথা প্যাচিয়েছো কেন?’
অদিতি ফাঁকা ঢোক গিলে আবারও। ধ্রুবর সামনে ওভাবে দাড়িয়ে আছে? খোদা, মাটি ফাঁক হোক, ও ভূগর্ভে আশ্রয় নিক! অদিতি মাথাটা নামিয়ে নিলো; জবাবে অস্ফুটে বলল———‘পু-পুরনো শাড়ি পাইনি। নতুন শাড়ি নষ্ট করব?’
ধ্রুব তখনও অবাক; বলল——‘পুরোনোটা আমি বাথরুমে ভিজিয়ে রেখে এসেছি। বুয়া ধুয়ে দিবে।’
অদিতি কম্বল প্যাচিয়ে ওভাবেই হাসফাস ভঙ্গিতে বলল——‘আপনি ওদিকে ফিরুন প্লিজ। আমি বাথরুমে যাব।’
ধ্রুব শুনে না যেমন।ততক্ষণে ওর অবাক হওয়া চোখে ধীরে ধীরে দুষ্টুমি খেলে গেল। হুডেড চোখ দুটো আরো ছোট করে; ভ্রু কুঁচকে ধীর পায়ে এগুচ্ছে, এক পা; দু পা; তিন পা করে!
ধ্রুব যত এগুচ্ছে; অদিতির গলা ততই শুকাচ্ছে। আজকের এমন একটা দুপুরের পরও অদিতির লজ্জা কমে ভয় বেড়ে গেছে কেন যেন। অদিতি মাথাটা নামিয়ে রেখেছে; চোখ তখনও ওর ধ্রুবর এগুতে থাকা পায়ের দিকে, ও নিজেও কম্পিত ভঙ্গিতে পিছিয়ে গেল দু কদম! তারপরেই পিঠের সঙ্গে পেল দেয়ালের সংঘর্ষ; ঢোক গিলে থেমে যেতে হলো অদিতিকে।
ধ্রুব ধীর পায়ে এগিয়ে অদিতির সামনে এসে দাঁড়াল। যেহেতু ধ্রুব অদিতির থেকে অনেক লম্বা; তাই দেখা যায় যখনই অদিতির সঙ্গে ধ্রুব কথা বলে ওকে ঝুঁকতে হয়। এবারেও তাই হলো। ধ্রুব ঝুঁকে মুখটা অদিতির মুখের দিকে নিতেই; জেন্টস শ্যাম্পুর কড়া সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো অদিতি। ভেসে গেল ও! ধ্রুব মুখটা বাড়িয়ে অদিতির নরম-লাল টুকটুকে গালে চুমু খেতেই; দুহাতে কাঁথা খামচে ধরে চোখ বুজলো অদিতি; অস্ফুটে বলার চেষ্টাও করল কিছুর————-‘আ-আজ আর না।’
ধ্রুব ভ্রু কুচকালো, বুঝল না অদিতির কথার অর্থ শুরুতে। গাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে ওভাবেই ভ্রু কুঁচকে অদিতির দিকে চেয়ে বললো————‘কি আর না?’
অদিতি কিছু বলার আগেই কিছু একটা ভেবে আচমকা হেসে ফেলল ধ্রুব! হাসতে হাসতে বলল————‘এটুকুটেই কাহিল? বাকি রাত তো এখনও পরেই আছে।’
ধ্রুব কথাটা বলামাত্রই অদিতি ভয়ার্ত চোখে তাকাল! ধ্রুব হাসল ওই তাকানো দেখে! মৃদু হেসে অদিতিকে কাঁথাসহ পাজকোলে তুলে নিতে নিতে বলল——-‘ডোন্ট ওয়ারি! যেটুকু তুমি হ্যান্ডেল করতে পারবে; ওইটুকুতেই আমিও পুষিয়ে নেব। স্বামী তোমার, কোনো পশু নই।’
অদিতি মুগ্ধ চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রইলো! এবার বোধহয় আরো একবার অদিতি এই বখাটে; যে এখন বখাটে নয় তার প্রেমে একদম ক্ষতবিক্ষত করে ফেলল নিজের একটুখানি হৃদয়! ধ্রুব ওকে ওভাবেই কোলে নিয়ে বাথরুমে রেখে আসলো। যেতে যেতে বলল——-‘শাওয়ার নিয়ে আসো! আমি বাইরে আছি।’
ধ্রুব যাওয়ার আগে কাঁথায় প্যাকেট করা অদিতির কপালে চুমু খেতেও ভুললো না।
রিসিপশনের দিন এগিয়ে আসছে। আগামীকাল ধ্রুব-অদিতির রিসিপশন! ধ্রুব চেয়েছিলো কদিন পর রিসিপশনের ডেট ফেলত; কারণ সৌরভ ইয়ামিন অসুস্থ! কিন্তু সৌরভের এক কথা—- উনি তোফাজ্জলকে কথা দিয়েছেন। যা বলেছেন, তাই হবে। আজ অব্দি তার কথার নড়চড় হয়নি, তাহলে আজকেও হবে না। তাছাড়া উনি অসুস্থ; পঙ্গু হননি এখনো।
ইয়ামিন বাড়িতে বিশাল তোড়জোড় চলছে। ধ্রুবর রুমে অদিতি মেরুন রঙের একটা ভারি লেহেঙ্গা পরে আয়নার সামনে বসে আছে। ওকে সাজিয়ে দিচ্ছে বাহির থেকে আনা কিছু মেকআপ আর্টিস্ট! ধ্রুব যে কতবার এই রুমে আসতে চেয়েছে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার বাইরে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অগ্যতা ধ্রুব অন্য রুমে গিয়ে রেডি হয়েছে।
সাজানো শেষ হতে হতে লেগে গেল প্রায় তিন-তিনটে ঘণ্টা; সঙ্গে ওদিকে ধ্রুব দিল নিজের ধৈর্য্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষা। এতটা ঘণ্টা ধ্রুব রীতিমত মুখটা তেতো করেই রেখেছিল। মেকআপ আর্টিস্ট সাজানো শেষে আয়নায় অদিতির দিকে তাকাল! অদিতি নিজেও নিজের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। কখনো ওমন ভারি সাজ সাজে নি ও। তাই বোধহয় আজ ওকে এই সাজে মারাত্মক দেখাচ্ছে। অদিতি আয়নায় তাকিয়ে গলার চোকার ঠিকঠাক করতে করতে মৃদু হাসল। একজন মেকআপ আর্টিস্ট এবার কিছুটা দোনামোনা করে বলল———‘ম্যাম আপনার গলায় লাভ বাইট দেখা যাচ্ছিল।আমরা এখন কালার কারেক্ট করে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে দিয়েছি। একটু খেয়াল রাখবেন প্রোগ্রামে।’
অদিতি চমকে উঠে আয়নায় নিজের গলার দিকে তাকাল। এতক্ষণে গলার ওই চিহ্নের দিকে ভালো করে খেয়াল করা হলো বোধহয়! কিন্তু এখনও তো বোঝা যাচ্ছে ওই দাগ-টুকু, বিবাহিত যে কেউ ধরে ফেলবে। এই ধ্রুব কি আদৌ পাগল? এভাবে কেউ লাভ টর্চার করে? যখনও কাছে আসে সে; অদিতির গলা আর গলা থাকে না। রীতিমত ধ্রুবর অত্যাচারে জর্জরিত হয় ওই স্থান-টুকু! কতবার ধ্রুবকে বলেছে ও; একটু বুঝেশুনে কিস করতে। অথচ ধ্রুব; তার ওই এক কথা—— সে বুঝেই কিস করে, অদিতির স্কিনে প্রবলেম তাই দাগ বসে যায়। আজকে এত মেহমান আসবে; ওরা কেউ দেখে নিলে? অদিতির মুখটা শুকিয়ে গেল একদম।
সাজানো শেষ হওয়ার আগে আবারও দরজায় টোকা এলো;দরজার নব ঘুরিয়ে ধ্রুব ডাকছে———‘অদিতি; শেষ হলো তোমার?’
অদিতি হতাশ চোখে তাকালো আর্টিস্টের দিকে; ওরাও এবার বিরক্ত সম্ভবত! অদিতির ওদের বিরক্ত হওয়া মুখের দিকে চেয়ে নিচু গলায় বলল———‘আপনাদের শেষ হলে; দরজা খুলে দেই?’
মেকআপ আর্টিস্ট এবার হেসে ফেললেন, বললেন ———-‘আপনার হাজবেন্ড আসলেই আপনার উপর ফিদা। তিন ঘণ্টার সাজে তিনশোবার এসে ডেকে গেছেন।’
অদিতি লজ্জায়; ইতস্তত ভঙ্গিতে হাসল! এই লোককে নিয়ে অদিতি আর পারছেই না, এটা ওদের কিভাবে বলবে। মেকআপ আর্টিস্টরা নিজেদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজার ওপাশে ধ্রুব দাড়িয়ে আছে। কালো রঙের স্যুট পরা; ওল ব্ল্যাক ম্যান!
মেকআপ আর্টিস্টদের দরজার সামনে দেখে ধ্রুব মাথা নিচু করে সরে দাঁড়াল; জায়গা করে দিল ওদের যাওয়ার। ওদিকে মেকআপ আর্টিস্টরা ধ্রুবকেই দেখে যাচ্ছে হা করে। এই মেয়ের হাজবেন্ডটা তো আসলেই জোস; এত্ত হ্যান্ডসাম। এখন তো ওদের মেয়ের ওই গলার লাভ বাইটের উপর হিংসা হচ্ছে। কেন যে সবসময়ই সুন্দর ছেলেগুলোই হাত থেকে ফস্কে যায় কে জানে।
মেকআপ আর্টিস্টরা চলে যেতেই; ধ্রুব দরজা খুলে ঢুকলো ভেতরে। অদিতি আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে। ধ্রুবকে দেখে ও ঘোমটা ঠিক করে উঠে দাঁড়াল! ওদিকে ধ্রুব তো রীতিমত হা! জীবনের প্রথম ও অদিতিকে ওতো ভারি মেকআপে দেখছে। বিয়ের দিনও অদিতি ভীষণ সিম্পল সেজেছে। আজ তৃণা একপ্রকার যুদ্ধ করে বাড়িতে মেকআপ আর্টিস্ট ডেকেছেন। ধ্রুব শুরুতে রাজি ছিলো না। কিন্তু এখন অদিতিকে দেখে ওর চোখের পলক-টুকুই পড়ছে না। ধ্রুব আস্তে করে পেছন ঘুরে দরজা লক করে দিল। তারপর আবারও ঘুরে তাকাল অদিতির দিকে। দরজা লক করার শব্দে হাসফাস করে উঠল যেন অদিতি। মাথাটা নামিয়ে নিলো লাজুক ভঙ্গিতে।
ধ্রুব ধীর পায়ে এগুলো; আবারও সময় নিয়ে এক পা, দু পা করে করে; শব্দ হচ্ছে জুতোর! অদিতি আবারও ধ্রুবর পায়ের দিকে চেয়ে রয়েছে; ধ্রুবর হাঁটার ভঙ্গি দেখে অদিতির নিজের হঠাৎ অস্থির লাগছে; হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে।
ধ্রুব সামনে এসেই এক মুহূর্ত দেরি না করে, সোজা লেহেঙ্গার ফাকে আঙুল গলিয়ে অদিতির কোমর টেনে একদম নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো তার সাজে সজ্জিত বধুয়াকে! অদিতি চমকে উঠে ধ্রুবর বুকে হাত রাখলো। ধ্রুবর বুকের উপর লেপ্টে যাওয়া মেহেদী রাঙা হাতটা ধ্রুব মাথা নিচু করে দেখল তুষ্ট হয়ে। তারপর মাথাটা তুলল; অদিতি তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে লাজুক চোখে!
ধ্রুব মাথাটা ঝুঁকে বধূর কপালে চুমু খেলো বহু ধৈর্য্য নিয়ে। তারপর বধূর কানের লতিতে চুমু খেয়ে বলল————‘লুকিং লাইক অ্যা এঞ্জেল! ধ্রুব’স এঞ্জেল!’
কানের কাছে ওমন শিরশিরানি অনুভূতিতে শিউর উঠে ধ্রুবর বুকের কোট খামচে ধরল অদিতি, বলবে না বলবে না করেও অস্ফুটে বলে ফেললো——-‘আ-আপনাকেও কালো স্যুটে ভালো দেখাচ্ছে।’
ধ্রুব অবাক, কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে নিজের দিকে চেয়ে দেখে আবারও জিজ্ঞেস করলো——‘আসলেই ভালো লাগছে আমাকে? স্যুট পড়া হয়নি কখনো আমার। ইমন বললো, ভালো ড্রেসআপ করলে বৌরা নাকি পটে; অ্যাই মিন ইমপ্রেস হয়। তাই ট্রাই করলাম।’
অদিতি হেসে ফেলল ধ্রুবর ওমন বাঁচন-ভঙ্গি দেখে। ধ্রুবর কোট হাত বাড়িয়ে ঠিকঠাক করে দিয়ে বলল———‘হু, মানুষ লাগছে এখন।’
ধ্রুব ভ্রু কুচকালো———‘হেই, মানুষ লাগত মানে? আগে কি লাগতো?’
অদিতি হেসে টিটকারি করে বলল——-‘বখাটে!’
‘হোয়াট ননসেন্স, আমি মোটেও বখাটে ছিলাম না কোনদিন। এ জীবনে কাউকে র্যাগ দেয়নি; ইফটিজিংও করিনি। বখাটে মানে বুঝো?’———ধ্রুব ইয়ামিন নিজের ইমেজ ঠিক রাখতে বৌর সামনে সাফাই গাইছে যেমন।
অদিতি জবাব বলল———‘মারামারি তো করতেন। মিথ্যা বলবেন না, আমি দেখেছি।’
ধ্রুব হার মানে না, ও উত্তরে বললো———‘আমার কাজে পা দিলে, মারব না? আর এগুলোকে মারামারি বলেন। মেডিসিন দেওয়া বলে।’
অদিতি হেসে কুটিকুটি হয়ে গেল———‘আপনি আর আপনার লজিক।’’
ধ্রুব চুপ করে অদিতির হাসির দিকে চেয়ে রইলো! অদিতি হাসছে তখনও! ধ্রুবর কি হলো কে জানে। ভেতর ভেতর হঠাৎ একটা স্বামী-স্বামী অনুভূতি উতলে উঠল যেন। নিজের বধূর নেশায় আবারও পড়লো, বরাবরের মতোই। ঘোরে পরে, আলগোছে অদিতির গলার দিকে মুখ বাড়িয়ে আচমকা নেক কিস করে বসলো। হাসি থামিয়ে চমকে উঠে অদিতি! চোখ বড়বড় করে তাকাতেই, অনুভব করে নিজের গলায় অপর মানুষের দাঁতের স্পর্শ, যাকে অদিতি কবুল বলেছে; দিয়েছে এই অধিকার-টুকুও অবলীলায়!
আবারও ওই অসহ্য; সুখকর অনুভূতি খেলে গেল পুরো দেহ জুড়ে! হরমোনদের জ্বালাতনে দুজনেই অতিষ্ট! ধ্রুব ঘনিষ্টতা আরও বাড়াতেই, অদিতির মনে পরে গেল; মেকআপ আর্টিস্টের কথা। চমকে উঠে চোখ খুলে দুহাতে ঠেলে দিল ধ্রুবকে——-‘ধ্রুব এ-এখন না।’
বারবার ওভাবে ঠেলছিল অদিতি, ধ্রুব এক সময় বিরক্ত হয়ে সরে গিয়ে বলল———‘কি? ঠেলছো কেন? কিস করছি জাস্ট! খেয়ে ফেলছি তোমাকে?’
অদিতি লজ্জায় কোথায় চোখ দিবে, কোথায় চোখ মেলাবে তখন ঠাহর করতে পারছে না।ও অস্ফুটে চোখ এলোমেলো ঘুরাতে ঘুরাতে বলল———-‘ও-ওরা ম-মানা করেছে।’
‘কে বলেছে? গড আমার বৌকে আমি কিস করবো না? কি ফালতু লজিক এসব?’—- ধ্রুব চুড়ান্ত বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করল! ওর চোখে-মুখে তাকানো যাচ্ছে না। নাকের পাটা লাল হয়ে পিটপিট করছে।
অদিতি কি বলবে? ও হাতের ইশারায় তখন গলার একপাশে ফাউন্ডেশনের স্তূপ দেখিয়ে বলল———‘ওরা আপনার লাভ বাইটের উপর ফাউন্ডেশন লাগিয়ে দিয়েছে। আরেকবার এমন লাল হলে,সবাই কি ভাববে দেখে?’
টিভি
ধ্রুব চোখ ছোটছোট করে অদিতির গলার ওই পাশের দিকে চেয়ে রইল। তারপর হতাশ গলায় মুখ অন্যদিকে সরিয়ে বিড়বিড় করল———-‘শান্তিমত কিসটাও করতে পারবো না নাকি এখন? এত সফ্ট স্কিন ক্যান?’
অদিতি লজ্জায় হাসফাস করে বললো——-‘এটা স্কিনের দোষ না।’
আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ৩৯
ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বললো——-‘তো কিসের দোষ? আমি তো ক্যাসুয়ালি কিস করেছি। ডিড অ্যাই রাফ টু ইউ?’
অদিতি লম্বা শ্বাস ফেলল! এসব ব্যাপারে ধ্রুব যতবার ডিসকাস করে ওর সাথে; লজ্জায় একপ্রকাশ শ্বাস আটকে বসে থাকে অদিতি। অদিতি কিছু বলবে তার আগেই দরজায় টোকা এলো; ডাকছে ওপাশ থেকে ওদেরকে।
ধ্রুব একবার দরজার দিকে চেয়ে আবারও অদিতির দিকে তাকাল। কিছু একটা মনে পরে গেল ওর; তাই আগেভাগেই বলে ফেলল——-‘লিসেন অদিতি। মেইবি রিসিপশন পর বউদের ওদের বাবার বাড়ি যাওয়া লাগে। কিন্তু আমি আগেই ক্লিয়ার করি; আমি কিন্তু তোমাকে পারমিশন দেইনি। সো ইউ আর স্টেইং উইদ মি; ইন ম্যাই হাউজ!’