আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে সারপ্রাইজ পর্ব 

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে সারপ্রাইজ পর্ব 
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

“আমার আবির ভাই কোথায়?”
“আবির ভাই…..”
” ও আবির ভাই…..”
বন্যা এক নিঃশ্বাসে তিনবার ডেকে অতঃপর থামলো। ঠোঁটের কোণে সিক্ত হাসি ঝুলিয়ে মেঘের অভিমুখে চাইল। মেঘ রাগে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ছে৷ অভিমানে নাকের ডগা ফুলে আছে। মেঘের অভিমানী চেহারা দেখে বন্যার মুখের হাসি প্রখর হলো। পরপর দুবার ভ্রু নাচাতেই মেঘ ভেঙচি কেটে অন্য দিকে মুখ ঘুরাল। বন্যা মুচকি হেসে আবারও প্রশ্ন করল,

” আমার আবির ভাই কোথায়?”
মেঘ কপালে কয়েকস্তর ভাঁজ ফেলে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” আবির ভাই তোর হলো কবে থেকে?”
“তুই যেদিন থেকে আমার ভাসুরের বউ হয়েছিস সেদিন থেকেই ওনি আমার আবির ভাই হয়ে গেছে।”
মেঘ দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
” আবির ভাই শুধুই আমার।”
বন্যা শান্ত কণ্ঠে বলল,
” আমি কি বারণ করলাম নাকি? আমার আবির ভাই তো তোরই।”
“আমার আবির বলবি না। মেজাজ খারাপ হয় আমার।”
“তুই যখন আমার সামনে আমার ভাসুর মানে তোর জামাইকে ভাইয়া বলে ডাকিস৷ তখন আমার কেমন মেজাজ খারাপ হয় বল! আমি তোর ভাইয়াকে ভাইয়া বলে ডাকলে তোর কেমন লাগবে? বলবো?
তানভির ভাইয়া বলে ডাকবো?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেঘ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করল,
” চুপ থাক। আমার ভাইয়া শুধু আমার ভাইয়া৷ বুঝতে পেরেছিস?”
বন্যা একটু সময় চুপ থেকে ফের বলল,
“এই যে তুই রাগ করে অসময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলি আমার ভাসুর আমাকে প্রশ্ন করলে, কি জবাব দিব আমি?”
“তুই বলবি তুই কিছুই জানিস না। আমাকে তুই চিনিস না।”
বন্যা আড়চোখে দূরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
“ঐ দেখ, তোর ভাইয়া আসতেছে।”
বন্যা ঝটপট দূর্বাঘাস থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জামা ঝেড়ে নিল। মেঘের পাশ থেকে ব্যাগটা টেনে দ্রুত গতিতে হাঁটতে শুরু করল। এরমধ্যে মেঘও উঠে দাঁড়াল। বন্যা কয়েক কদম সামনে এগুতেই তানভির বন্যার ঠিক সামনে এসে বাইক থামালো। হেলমেট খুলতে খুলতে গুরুতর কণ্ঠে আওড়াল,

” আমাকে দেখে পালাচ্ছিলে কেনো?”
বন্যা এক পলক মেঘকে দেখে অত্যন্ত কোমল গলায় বলব,
” আপনি যাকে ভাবছেন আমি আসলে সে না।”
সঙ্গে সঙ্গে এক আঙুলে মেঘের দিকে ইশারা করে ফের বলল,
“ঐ যে মেয়েটাকে দেখছেন আমি কিন্তু মেয়েটাকে একদমই চিনি না। মেঘ নামে কাউকে আমি চিনতেই পারি না। আমি হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম। আর হাঁটতে হাঁটতেই এখানে চলে এসেছি।”
তানভির হেলমেটের উপর কনুই রেখে থুতনিতে দুই আঙুল চেপে বন্যার কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। বন্যার কথা শেষ হতেই ঠোঁটে স্মিত হাসি টেনে বলল,
” ও আচ্ছা। এই তাহলে কাহিনী!
তুমি হাঁটতে হাঁটতে ১৪ কিলো চলে এলে অথচ জানোই না কিছু। অচেনা এক মেয়ের সাথে গত ১ ঘন্টা ২৬ মিনিট যাবৎ গল্প করতেছো সেদিকেও খেয়াল নেই। তুমি যে আমার বউ সেটা মনে আছে তো? নাকি আমি কে তাও ভুলে গেলে?”

বন্যা ঘন ঘন পল্লব ঝাপটে ধীর গলায় বলল,
” আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেনো দেখেছি! আপনি কি নাটক করেন?”
“নাহ, একদম না। আমি সিনেমা করি। পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ” প্রেমের নাম বেদনা,
আমার বউ আমাকে চিনে না।”
বন্যা নিঃশব্দে হেসে মেঘের দিকে তাকাল। চাপা স্বরে বিড়বিড় করে বলল,
” আপনার বোন বলেছে, আমি তাকে চিনি না এটা সবাইকে বলার জন্য।”
তানভির কপাল গুটিয়ে মেঘের দিকে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
” এই মেয়ে কে? আমিও তাঁকে চিনি না।
আমি আমার বউকে নিতে এসেছি। যার যার বউ দায়িত্ব তার তার। আল্লাহ! তোমার কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া। আমার বউ আমাকে ভুলে নি।”
মেঘ কপালে কয়েক স্তর ভাঁজ ফেলে বিরক্তির স্বরে বলল,
” কালে কালে কত কি দেখব! এত ঢং নিতে পারছি না।”
মেঘ মুখ ভেঙচিয়ে ভেঙচিয়ে তানভিরদের পাশ কাটিয়ে যেতে লাগল। তানভির মুচকি হেসে আস্তে করে বলল,
” সামনে যাও আপুই। তোমার ঢং স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে তোমার অপেক্ষায়৷ ”
তানভিরের কথা মেঘ শুনলো কি না বুঝা গেল না। মেঘ হাতে থাকা সাইড ব্যাগটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাঁটতে লাগল৷ তানভির বন্যাকে ইশারা দিল বাইকে উঠার জন্য। বন্যা এগিয়ে এসে জানতে চাইল,

” আবির ভাইয়া এসেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“কোথায়? ”
“ভাইয়া আছেন জায়গা মতো। তোমার ভাবতে হবে না। তুমি কেবল আমাকে নিয়ে ভাববে। ভাইয়ার বউ ভাইয়া সামলে নিবে।”
তানভিরের কথায় বন্যা লাজুক হাসল। তানভির আবারও বলল,
” তুমি এখানে এসেছো সেটা আমাকে জানানো দরকার ছিল না?”
বন্যা বাইকে বসতে বসতে বলল,
” মেঘ আমার ফোন নিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল।”
“এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না। একজনের রাগ দশজনের সাথে দেখাবে। এত অভিমান মনের মধ্যে কিভাবে পুষে রাখে আল্লাহ ভালো জানেন।”
বন্যা চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“মেঘ ভাইয়ার উপর খুব রাগ করেছে। আপনি আর ভাইয়া দু’জনেই ওর সাথে অন্যায় করেছেন। একটা সাধারণ বিষয় নিয়ে কেউ এত বাড়াবাড়ি করে?”

” বাড়াবাড়ি করলাম কোথায়? গতকাল ভাইয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল। আমি সব কাগজপত্র রেডি করে দিয়ে এসেছি। ভাইয়া বনুকে এক কাপ কফি করে দিতে বলেছিল। সে ২০ মিনিট লাগিয়ে স্পেশাল কফি করে এনেছে। যেইমাত্র ভাইয়ার মিটিং শুরু হয়েছে ওমনি রুমের টাইলসে স্লিপ খেয়ে কফির কাপ সমেত ভাইয়ার উপরে গিয়ে পড়েছে। কাগজপত্র, ল্যাপটপ, ফোন, মিটিং সব শেষ। সবচেয়ে বড়ো বিষয়, ভাইয়ার হাতে, শরীরে পর্যন্ত গরম কফি পরেছে। তারজন্য ভাইয়া রাগে ধমক দিয়েছিল। একটু জোরেই ধমক দিয়েছিল। তারজন্য গতকাল থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। বাসায় কারো সাথে কথা বলছে না। কান্না করে আব্বুর কাছে বিচার দিয়েছে। মেয়ের আদুরে কান্না দেখে আব্বু ভাইয়াকে যা তা কথা শুনিয়েছেন। আমাকেও ছাড় দেন নি আব্বু। এই দায় কার বলো!”
বন্যা রাশভারি কণ্ঠে বলল,

” আপনার। সব দোষ আপনার।”
“আমি কি করলাম। ভাইয়ার কতটা ক্ষতি হয়েছে বনু সেটা একবারও বুঝার চেষ্টা করছে না। এদিকে আব্বুর ধমক খেয়ে ভাইয়ার মনে হচ্ছে, সে আজও আদর্শ স্বামী হতে পারেনি। তার স্ট্রাগল, ভালোবাসা সবকিছু মিথ্যা মনে হচ্ছে। এই নিয়ে চলছে মান- অভিমান৷ এখানে আমার দোষ কোথায়?”
“আমি শুনেছি, আপনি দু’জনের রাগ কমানোর চেষ্টা করার বদলে তাদের মধ্যে ঝামেলা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।”
তানভীর মৃদুস্বরে বলল,
” আমি তাদের দু’জনকেই খুব ভালোভাবে চিনি। দু’জনেই ভাঙবে তবুও মচকাবে না। একজন অন্য জনকে ছাড়া খাবে না, ঘুমাবে না অথচ তারা এমন ভাব নিবে যেন ১০০ বছরেও তাদের এই রাগ ভাঙবে না।”
“ভাইয়া কি পারবে মেঘের রাগ ভাঙাতে?”
“দেখতে চাও?”
বন্যা ঘনঘন এপাশ ওপাশ মাথা নেড়ে জবাব দিল,
” না না। আমি দেখতে চাই না। শত হোক ভাইয়া আমার ভাসুর হোন।”

রাস্তার পাশে একটা অলকানন্দা ফুলের গাছ। যাতে হলুদ রঙের ফুলগুলো ঝলমল করছে৷ মেঘ যেতে যেতে থমকে দাঁড়াল। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে গাছের কাছে দ্রুত এগিয়ে গেল৷ দুইটা ছবি তুলে যেইমাত্র একটা ফুল ছিঁড়তে যাবে ওমনি দুতলা থেকে একটা পিচ্চি ছেলে চিৎকার করল,
” এই ফুল নিচ্ছে কে?”
মেঘ দ্রুত পায়ে দূরে সরে দাঁড়াল। আমতা আমতা করতে বলল,
” একটা ফুল নেই?”
“না।”
মেঘ মন খারাপ করে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। পিচ্চিটার দিকে চেয়ে আবারও বলল,
” একটা নেই?”
পিচ্চিটা কণ্ঠস্বর ভারী করে চিৎকার করল,
” না না না।”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করতে করতে চলে যেতে লাগল।
মেঘের হাবভাব দেখে পিচ্চিটা ফের ডাকল,
” এই মেয়ে, নিয়ে যাও ফুল। একটাই নিবে কিন্তু!”
মেঘ দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
” লাগবে না।”

মেঘ ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটছে। কিছুদূর যেতেই মনে হলো কেউ তার পিছন পিছন হাঁটছে। মেঘ একটু থেমে পেছন ফিরে তাকালো কিন্তু কোথাও কারো অস্তিত্ব নেই। মেঘ আবারও হাঁটতে লাগল৷ আশেপাশে কোথাও রিক্সার কোনো অস্তিত্ব নেই। মেঘের মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গিয়েছে। এক পা দু’পা হাঁটছে আর বারবার থমকে দাঁড়াচ্ছে। ভয়ে ভয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে আবিরের নাম্বার বের করল। ডায়াল করতে যাবে তখনই মনে হলো, তাঁরা গতকাল থেকে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। সামান্য কারণে কল দিয়ে কথা বলে ফেললে ভালো দেখাবে না। মেঘ ফোন ব্যাগে রেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। খানিক থেমে যখনই হাঁটা শুরু করবে তখনই মেঘের ওড়নাতে টান পড়ল। মেঘ তৎক্ষনাৎ গলার সামনের ওড়না চেপে ধরে আতঙ্কে পিছু ঘুরল। সামনে দাঁড়িয়ে আছে আবির। অনাকাঙ্ক্ষিত সময়, অপত্যাশিত ব্যক্তির উপস্থিতি হৃদয়ে তোলপাড় চালাচ্ছে। অপরিচিত কেউ ভেবে যতটা আতঙ্কিত হয়েছিল, নিজের প্রিয় মানুষটাকে দেখে সেই আতঙ্ক বিলীন হতে সময় লাগল না।। আবির এক হাতের আঙুল দিয়ে ওড়নার মাথা প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে মেঘের গা ঘেঁষে দাঁড়াল। অন্য হাতে থাকা অলকানন্দা ফুলটা মেঘের কানের কাছে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

” ফুলকে যেমন ফুলের সাথে রাগ করা মানায় না,
তেমনি আবির তার মেঘ ছাড়া একদমই বেমানান।”
মেঘের শরীরের শিরা-উপশিরায় বহমান রক্তপ্রবাহ জোরালো হচ্ছে। ভয়, আতঙ্ক সবকিছুর উর্ধ্বে প্রিয় মানুষের স্পর্শ। মনে সাহস পাওয়ার একমাত্র অবলম্বন। মেঘ আড়চোখে আবিরের গালের দিকে তাকিয়ে আছে৷ অবসন্ন রোদে আবিরের ছাপ দাঁড়িগুলো ঝলমল করছে। না চাইতেও গাল স্পর্শ করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু অভিমানেরা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে তাকে। সহসা গাল ফুলিয়ে নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ছেড়ে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে মেঘ বলল,
“আপনি এখানে এসেছেন কেনো?”
” আমার বউকে ছাড়া আমি চোখে আন্ধার দেখি। কি করব বলো!”
“চোখের ডাক্তার দেখান। কালো সানগ্লাসের বদলে সাদা চশমা ধরিয়ে দিবে। তখন খুব ভালো লাগবে।”
আবির ভরাট কণ্ঠে বলতে শুরু করল,
“স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী ঘর থেকে এক পা বের হতে পারে না। সেখানে তুমি আমার রুম থেকে বেরিয়ে দিব্যি টুইটুই করে এখানে চলে এলে।”

মেঘ ইতস্ততভাবে জবাব দিল,
“আমি অনুমতি নিয়েছি।”
” কখন? কিভাবে? আমি কোথায় ছিলাম?”
“স্বপ্নে।”
আবির কপালে ভাঁজ ফেলে ফের জিজ্ঞেস করল,
” আমি কি অনুমতি দিয়েছিলাম?”
মেঘ এবার আবিরের অভিমুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মিহি কণ্ঠে বিড়বিড় করল,
“হুমমম।”
” আমি এত ভালো!”
” আমার স্বপ্নে আপনি বরাবরই সেরা। অভিমান, অভিযোগের আগেই সব বুঝে যান৷ রাগ… সে তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার৷ হাসি ছাড়া আপনার ঠোঁটে কিছুই মানায় না।”
“আর বাস্তবতা?”

“বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনার ঘুম ভাঙে আমাকে ধমক দিয়ে। সারাদিন মুখ গোমড়া করে থাকা আপনার বদভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। হাসি তো দূরের কথা আপনার ঠোঁট থেকে সিগারেটই সরে না।”
আবির অগ্নিচোখে তাকিয়ে চিৎকার করল,
” সিগারেট! আমি কবে সিগারেট খেলাম?”
“এইতো সেদিন। ”
“কবে?”
” মনে নেই।”
আবিরের মেজাজ তুঙ্গে। রাগে কটমট করে বলল,
” সব বিষয়ে মজা করা অন্যান্য। সাধারণ অন্যায় না। মারাত্মক অন্যায়। গত দেড় বছরে যে জিনিস আমি ছুঁয়েও দেখিনি সেটা নিয়ে মিথ্যে বলা আমার একদম পছন্দ না। ”
মেঘ আমতাআমতা করে বলল,
” ইদানীং আপনার ঠোঁটগুলো কালো লাগে। তাই ভেবেছি আবার বোধহয় খাওয়া শুরু করেছেন।”
“আবির কথা দিলে কথা রাখে। আর যদি সেটা মেঘকে দেওয়া কোনো কথা হয় তবে আমৃত্যু সেই কথা রাখবেই রাখবে। এর প্রমাণ আপনি আগেও বহুবার পেয়েছেন, ম্যাম। আর রইল বাকি ঠোঁট কালোর কথা। সে তো অন্য কারণেও হতে পারে।”

“কি কারণে?”
আবির মলিন কণ্ঠে জবাব দিল,
” বউয়ের ভালোবাসার অভাবে, অভিমানের কারণে।”
মেঘ ভেঙচি কেটে বলল,
” সে আপনার বউ আপনাকে ভালোবাসলো কি বাসলো না সেই দায়ভার আমার না। আপনার বউয়ের অভিমান অভিযোগের গল্প শুনে আমার কোনো কাজ নেই। ভালো থাকুন৷”
মেঘ নির্বিকার ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করল। আবির পেছন থেকে আবারও বলল,
“ভালো থাকতে দিলে তো থাকবো। রাগে না হয় দুটো কথা বলেই ফেলেছিলাম তারজন্য এত রাগ!”
মেঘ ঘাড় ফিরিয়ে তেজী কণ্ঠে বলল,
” আপনার ভালোবাসায় আমি অন্ধ হলাম৷ আর অবশেষে আপনি আমাকে অন্ধ বলেই গালি দিলেন। বিষয় ঠিক তেমন।”
আবির হাত দিয়ে মাথা চেপে বলল,

” আমার সত্যি খুব অন্যায় হয়েছে। তোমাকে ধমক দিয়ে আমি মস্ত বড় অপরাধ করে ফেলেছি। প্লিজ ক্ষমা করুন আমাকে। প্লিজ।”
মেঘ আলগোছে ভ্রু কুঁচকে বলল,
” অতিরিক্ত ভাব নেওয়া ছেলে আমার একদম পছন্দ না।”
” তুমি কি চাচ্ছো? আমি মাঝ রাস্তায় কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। তবে কি মাফ করবে আমাকে?”
আবিরের গম্ভীর চাউনিতেই থমকে গেল মেঘ। নিশ্চুপ চোখে চেয়ে থেকে ধীর গলায় বলল,
” না। ”
“তাহলে করছ কেনো এমন?”
” সরি। ”
“কেনো?”
” আমি একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি তাই।”
আবির বলল,
” বুঝতে পেরেছো তাহলে।”
মেঘ ভেজা কণ্ঠে জবাব দিল,
” আপনি গতকাল থেকে আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন না তাই আমার খারাপ লাগছিলো। রাগে যা মন চেয়েছে তাই করেছি।”

“হুমমম। দেখলাম তো। আর একটু হলে আমাকে ইভটিজার বানিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে। আগামীকাল নিউজ হতো,
নিজের সুন্দরী বউকে ইভটিজিং করতে গিয়ে পুলিশের কাছে হাতেনাতে ধরা পরেছেন খান বাড়ির অযোগ্য, লাফাঙ্গা ছেলে সাজ্জাদুল খান আবির।”
মেঘ ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করল,
” আপনি খান বাড়ির অযোগ্য ছেলে?”
“জি।”
“কেনো?”
” কারণ আমার ১৬ বছরের ভালোবাসা, তোমাকে নিজের করে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সবার নিকট বাচ্চামো মনে হয়। আমি আবির সাত সমুদ্র দূরে থেকে নিজের সাথে নিজে লড়াই করে বেঁচেছি। এ সবই এখন অহেতুক। কারণ আমি আজও আদর্শ স্বামী হতে পারি নি। খান বাড়ির রাজকন্যাকে রাজরানীর মর্যাদা দিতে পারি নি। আমি ব্যর্থ, সত্যিই ব্যর্থ।”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে শেষ পর্ব 

মেঘের দুচোখ ছলছল করছে। মনের ভেতর জমে থাকা
অভিমান কখন যে গলতে শুরু করেছে নিজেও বুঝতে পারে নি। আবির দু কদম এগিয়ে মেঘের গা ঘেঁষে দাঁড়াল। গালের নিচ পর্যন্ত গড়িয়ে পড়া চোখের পানি মুছে দিল। মেঘের চোখে চোখ রেখে আবির বলল,
“তোমার মনের কোণে জমে থাকা অভিমান,
আমার নির্ঘুম রাত কাটানোর একান্ত সত্তা।
তুমি আমার অদৃষ্টের সুখধাম,
মায়াবী রাতের পূর্ণিমার চাঁদ।
ভালোবাসি তোমায়, নিজের চেয়েও বেশি।”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে সারপ্রাইজ পর্ব ২