আযদাহা পর্ব ১০ (২)
সাবিলা সাবি
ভেনাস( শুক্রু গ্ৰহ):
ভেনাস (Venus) সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ আর এটি সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে দ্বিতীয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী গ্রহ আর প্রায়ই “পৃথিবীর যমজ” বা “পৃথিবীর বোন গ্রহ” নামে পরিচিত কারণ আকার এবং গঠনগতভাবে এটি পৃথিবীর সাথে অনেকটা মিল রাখে। তবে ভেনাসের পরিবেশ পৃথিবীর থেকে একেবারে ভিন্ন।
ভেনাস পৃথিবীর চেয়ে কিছুটা ছোট, এর ব্যাস প্রায় ১২,১০৪ কিলোমিটার (পৃথিবীর ব্যাস প্রায় ১২,৭৫৬কিমি)।
ভেনাস—একটি অগ্নিময় গ্রহ, যেখানে প্রকৃতি তার চরম রূপে বিরাজমান। আকাশে চিরকালীন ঘন মেঘের আস্তরণ, যা পৃষ্ঠ থেকে সূর্যালোককে রুদ্ধ করে রাখে। বায়ুমণ্ডল এক বিষাক্ত কারাগার; কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা এই বায়ুতে এক ফোঁটা শ্বাস নেওয়ার উপায় নেই। সালফিউরিক অ্যাসিডের মেঘ ঢেকে রাখে আকাশের সবুজাভ-হলদে রঙ। মেঘের নিচে, তপ্ত বাতাসে ভেসে বেড়ায় গরম কণা—প্রতিটি শ্বাসের সঙ্গে শরীরে আগুন ঢোকে।
ভেনাসের পৃষ্ঠ এমন গরম যে, পাথরও এখানে গলে বাষ্প হয়ে ওঠে। তাপমাত্রা প্রায় ৪৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা পৃথিবীর কোনো জায়গায় কল্পনাতীত। এর উপরে দিন-রাতের কোনো প্রভেদ নেই; একবার সূর্য ওঠে তো আবার নামতে কয়েক মাস লেগে যায়। এই দীর্ঘ দিনের শেষে রাতের আসা এক অমোঘ কালো ছায়া। কিন্তু এখানে রাত মানে কোনো শান্তি নয়—কারণ পৃষ্ঠে তেমন ঠাণ্ডা পড়ে।
হ্যাঁ, ভেনাসের এমন বিপদসঙ্কুল পরিবেশে শুধুমাত্র ড্রাগনের মতো শক্তিশালী আর অসাধারণ প্রজাতি টিকে থাকতে পারে। ড্রাগনের শরীরের গঠন, তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা আর আগুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতা এই চরম পরিবেশে টিকে থাকার জন্য পারফেক্ট। তারা আগুনের উত্তাপ আর বিষাক্ত বায়ুমণ্ডলকে সহ্য করতে পারে, কারণ তাদের নিজস্ব শারীরিক রক্ষা-কবচ রয়েছে যা তাদের অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেও সুরক্ষা প্রদান করে।তবে কৃত্রিম উপায়ে এখানে চাদের ব্যাবস্থা রয়েছে এবং দিন থেকে রাত হয় কৃত্রিম উপায়ে।
সেই কারণে, ভেনাস ড্রাগনদের জন্য একটি স্বাভাবিক বাসস্থান, যেখানে তারা স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়ায় এবং নিজেদের রাজত্ব স্থাপন করে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এল্ড্র রাজ্য:
যা ভেনাসের গাঢ় সবুজ প্রকৃতি আর উজ্জ্বল নক্ষত্রমণ্ডলের আড়ালে অবস্থান করে। একটি রহস্যময় এবং শক্তিশালী রাজ্য। রাজ্যের আকাশে উড়ে বেড়ায় বিশাল ড্রাগন, তাদের সোনালী রঙের পাখা ঝলমল করে। এই রাজ্যটির সৌন্দর্য ও গৌরব ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু এর হৃদয়ে বাস করে একটি গোপন অন্ধকার।
এলড্র রাজ্যটি প্রাচীন এক ড্রাগন রাজা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি তাঁর প্রজাদের নিরাপত্তা ও সুখ নিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। কিংডমের উন্মুক্ত প্রান্তর, মণিরঙের ফুল আর ঝর্ণার সুরেলা সঙ্গীতের মধ্যে লুকিয়ে আছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। এখানে প্রতিটি পাথর একেকটি গল্প,প্রতিটি বাতাসে ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যের গন্ধ।
রাজ্যের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে রাজপ্রাসাদ, যেখানে প্রিন্স জ্যাসপার তার শাসন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। তবে সম্প্রতি এল্ড্র রাজ্যে এক নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে; অজানা বিপদ ড্রাগনের মধ্যে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই অশান্তির কারণ, রাজ্যের শান্তি আর সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি।
জ্যাসপার,যে ড্রাগনদের মধ্যে ভিন্নতার রূপ নিয়ে এসেছে,এই অশান্তি প্রশমিত করার জন্য সংকল্পবদ্ধ।
ভেনাসের এল্ড্র রাজ্যের রাজপ্রাসাদের সিংহাসনে অবস্থিত ছিলেন রাজা জেনোথ ড্রাকোনিস, যার দৃষ্টিতে ছিল গভীর চিন্তার ছাপ। বিশাল সিংহাসনটি ধনুকের আকৃতির আর নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি, সেখান থেকে দূরের শাঁখার সুর্য রশ্মি প্রবাহিত হচ্ছিল। এই প্রাসাদের প্রতিটি কোণে ছিল জাদুকরী ফুলের ঝরনা,যা ভেনাসের অদ্ভুত সৌন্দর্যকে আরো উজ্জ্বল করে তুলছিল।
রাজা জেনোথের দুটি পুত্র,জ্যাসপার অরিজিন আর এথিরিয়ন ফায়ারলক, এ মুহূর্তে তার চিন্তার কেন্দ্রে ছিল। জ্যাসপার, এল্ড্র রাজ্যের একমাত্র প্রিন্স, ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় রাজা হিসেবে যে সমস্ত দায়িত্বের ভার ধারণ করতে যাচ্ছিল,সেই চিন্তায় রাজা জেনোথের মনে কিছুটা উদ্বেগ ছিল। তবে অদ্ভুতভাবে, জ্যাসপার সম্পর্কে তার একটি বিশেষ দুশ্চিন্তা ছিল।
ভেনাসের উষ্ণ বাতাসের মধ্যে, রাজা মনে মনে ফিরছিলেন অতীতে, যখন তার ছোট ভাই ড্রাইগনাস, এক শক্তিশালী ড্রাগন, একজন সাধারণ মানবীর প্রেমে পড়েছিল। সেই প্রেমের পরিণতি ছিল বিধ্বংসী।
এই কারণেই জন্মের পর থেকেই জ্যাসপারের মনের গভীরে ভালোবাসার অনুভূতি সম্পূর্ণরূপে মুছে দিয়েছিলেন রাজা। তিনি চাইতেন, তার পুত্র যেন কোনো মানুষের প্রেমে না পড়ে, যেন তার অন্তরের গভীরতায় কেবল শক্তি আর দায়িত্বের ভার থাকে।
ভেনাসের এল্ড্র রাজ্যের রাজপ্রাসাদের অন্তরালে, রাজা জেনোথ ড্রাকোনিস একটি গোপন গবেষণাগারে প্রবেশ করেছিলেন। এখানে,জ্যাসপারের ব্রেইন সফটওয়্যার উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল,যা তার পুত্রের অনুভূতিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিল। রাজা জানতেন, সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা তার পুত্রের জন্য বিপজ্জনক। তাই তিনি নির্মমভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন, যাতে জ্যাসপারের হৃদয়ে কখনো কোনো মানবীর জন্য প্রেমের অনুভূতি জাগ্রত না হয়।
রাজা প্রযুক্তির এক অনন্য সুবিধা গ্রহণ করে, একটি বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে ভালোবাসার লাভ ফাংশনাল ডিলিট করে দিলেন। সেই সফটওয়্যার, যা জ্যাসপারের মনের গভীরে ভালোবাসার অনুভূতিকে সংরক্ষণ করেছিল, তা সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় করে দিলেন তিনি।
এর ফলে, জ্যাসপারের মনের চেতনায় চিরকালীন শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তার হৃদয়ে প্রেমের আলো নিভে গেল,এক নিঃসঙ্গ রাতের অন্ধকারে একটুকরো তারাও হারিয়ে গেল। রাজা জানতেন, এই সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো তার পুত্রের জীবনে কোনো সাধারণ মানবীর আগমন ঘটবে না, কিন্তু তার হৃদয়ে কোনো আবেগের স্পর্শও থাকবে না।
জেনোথ বুঝলেন, একজন রাজা হিসাবে তার পুত্রের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে হলে কখনো কখনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। রাজ্যের শাসন করার জন্য জ্যাসপারকে একজন শক্তিশালী ও অবিচল প্রিন্স হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এই কারণেই তিনি রাজ্যের শান্তি আর নিরাপত্তার জন্য এই অমানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হলেন।
এখন, জ্যাসপার এল্ড্র রাজ্যের ভবিষ্যৎ শাসক হিসাবে যে পথচলার দিকে এগোচ্ছিল, তার মধ্যে কোনো মানবিক অনুভূতির অন্তর্ভুক্তি ছিল না। রাজা জানতেন, এই সিদ্ধান্ত তাকে ভেঙে ফেলবে, কিন্তু সামগ্রিক স্বার্থের জন্য যা প্রয়োজন, তা করতেই হবে। রাজা জেনোথের হৃদয়ে কেবলমাত্র একটিই ভাবনা ছিল—”এখনই সময়, আমাদের রাজ্যকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার!”
ফ্লোরাস রাজ্য:
এল্ড্র রাজ্যের কাহিনী যখন গভীর অন্ধকারে মগ্ন, তখন ফ্লোরাস রাজ্যের রাজকুমারী অ্যালিসা,যে এতক্ষণ বক্তব্য রেখেছিলো তার মুখাবয়বে উত্তেজনা আর হতাশার রেখা স্পষ্ট।
“বাবা, তোমরা আমার সাথে এমন কেনো করলে?” তাঁর কণ্ঠে সজোর ক্ষোভ ছিল। “আমার প্রিন্স পৃথিবীতে গিয়েছে আর আমি এটা জানলাম অন্যজনের কাছে। এ কী অসঙ্গতি, কী বেদনাদায়ক! আমি এই মুহূর্তে পৃথিবীতে যাবো।”
তার কথায় ঝরছে বিরক্তি, কিন্তু ভিতরে চলছিল এক অদৃশ্য যুদ্ধ।
রাজা জারেনের মুখাবয়বে অসন্তোষের ছাপ ফুটে উঠল। তিনি বললেন, “অ্যালিসা, তুমি জানো আমাদের রাজ্যের নিরাপত্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তোমার প্রিয়জনের কাজগুলোতে তোমার মধ্যে কোনও ধরনের অনুভূতি জাগার আগেই আমরা তাকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম। আমাদের জাতি বিপদের সম্মুখীন।”
অ্যালিসা দৃষ্টিতে আরেকবার সংকল্প বদ্ধ হয়ে বলল, “আমি আমার প্রিন্সকে দেখতে চাই। তোমরা যদি আমাকে আটকাও, আমি তখনও যাবো। আমার প্রিন্স একা একা কেনো বিপদের সম্মুখীন হবে।”
ফ্লোরাস রাজ্যের আলো, যেখানে সে রাজকুমারী, কিন্তু তাঁর মন ও হৃদয়ে ড্রাগনের সেই প্রাচীন মানসিকতার অঙ্গীকার রয়েছে।
এল্ড্র রাজ্যের বিয়ের প্রথা অত্যন্ত অভিনব ও আধুনিক। রাজ্যের অভিজাতরা নিজেদের পছন্দের সঙ্গী নির্বাচন করার জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যা যান্ত্রিক মেলবন্ধনের ভিত্তিতে কাজ করে। এই সফটওয়্যারের নাম “কনেক্ট-অ্যান্ড-হারমনি”।
অ্যালিসা আর জ্যাসপারের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই সফটওয়্যারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা যখন নিজেদের সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন, তখন সফটওয়্যারটি তাদের দুটি হৃদয়ের মধ্যে মিলন ঘটানোর জন্য নিরীক্ষণ শুরু করে।
যখন পরীক্ষা শেষ হয়, তখন ফলাফলটি আসে একদম উজ্জ্বল। কম্পিউটারে লেখা হয়: “মেলবন্ধন স্কোর: ১০০%।” এই ফলাফল রাজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে, কারণ এটি প্রমাণ করে যে তাদের সম্পর্কটি কেবল সঙ্গীত ও অনুভূতির জোরেই নয়, বরং একটি অটোমেটেড সিস্টেমের বিচারে সম্পূর্ণ সঠিক।অ্যালিসার কাছে এসব ভালোবাসা হলেও জ্যাসপারের কাছে শুধুই প্রোগ্রামিং, তার ড্রাকোনিসের কথায় আর বংশ বিস্তারের জন্য এই সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছিলো।
রাজা জারেন এবং রাজা ড্রাকোনিস আর রাজ্যবাসী এই ফলাফলকে সম্মানিত করেন আর অ্যালিসাও জ্যাসপারকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেন। এল্ড্র রাজ্যের ড্রাগনরা জানে যে, এই সফটওয়্যারটি শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতি নয়, বরং বংশ বিস্তারে একটি নতুন দৃষ্টান্তও স্থাপন করে।
অ্যালিসার মনোভাব তীব্র ছিল,একপ্রকার সংকল্পে ভরা।ফ্লোরাস রাজ্যের সবাই যখন তাঁর পৃথিবীতে যাওয়ার চিন্তাকে অবহেলা করছিল, তখন সে একটি বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রতিটি কথার মধ্যে যখন নিষেধাজ্ঞার সুর বাজছিল, তখন তাঁর হৃদয়ে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা গাঢ় হচ্ছিল।
আযদাহা পর্ব ১০
“আমার প্রিন্স অরিজিন পৃথিবীতে গেছে,” সে একান্তে বললো। “কেন আমি নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখব? আমার ভালোবাসাকে আমি একা ছাড়তে পারিনা । জ্যাসপারের সাথে দেখা করা আমার জন্য অপরিহার্য।”
রাজ্যের নিরাপত্তা আর শাসক পরিবারের নিয়ম-কানুনের বেড়াজালে ব*ন্দি থাকা অ্যালিসা জানতো, তবে তাঁর মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে ভালোবাসা আর সম্পর্কের জন্য কিছু ঝুঁকি নেওয়া প্রয়োজন। তাই অ্যালিসা সিদ্ধান্ত নেয় সবাইকে উপেক্ষা করে কিছুদিন পরেই পৃথিবীতে যাবে জ্যাসপারের কাছে