আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৩

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৩
সাবিলা সাবি

তিনদিন সময় পেরিয়ে গেছে।তবে আজকের শুরুটা ছিলো একদম অন্যরকম।
ফিওনা সকালে পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার সময় যতই কঠিন হোক না কেন,আজ তার মন অন্য এক জায়গায় আটকে ছিল।অবচেতন মনে সে বারবার কাউকে ভাবছিল,তবে নামটা উচ্চারণ করতে পারছিল না।
পরীক্ষা শেষে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে এলো সে।ক্লান্ত লাগছিল,কিন্তু হঠাৎই সে অবাক হয়ে থমকে দাঁড়ালো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের করিডোরে,এক পরিচিত মুখ অপেক্ষা করছে।
লিউ ঝান!

সাদা শার্ট,কালো কোট আর সেই আত্মবিশ্বাসী হাসি— সে যেন ফিওনার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে।
ফিওনার হৃদস্পন্দন মুহূর্তেই দ্বিগুণ হয়ে গেলো।আশেপাশে অনেকেই ছিল,কিন্তু সে কারও দিকে তাকালো না।
সে দৌড়ে গিয়ে লিউ ঝানের হাত ধরলো,তারপর দ্রুত আড়ালে সরে গেলো।
লিউ ঝান একটু অবাক হলেও হাসল। “কী হলো?তুমি তো এমন করলে যেন ভূত দেখেছো!”
ফিওনা দ্রুত চারপাশ দেখে নিলো।এথিরিয়ন বা অন্য কেউ যদি দেখে ফেলে,তাহলে খবর নিশ্চয়ই জ্যাসপার পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।আর সে খুব ভালো করেই জানে,জ্যাসপার তাকে এত সহজে লিউ ঝানের সঙ্গে দেখলে ছেড়ে দেবে না।
এই কয়দিনে সে জ্যাসপারকে ভালো করে বুঝে গেছে।
জ্যাসপার সহজে কিছু মেনে নেয় না।জ্যাসপার ওভার পসেসিভ।জ্যাসপার বিপজ্জনক।
ফিসফিস করে বললো, “মিস্টার লি, আপনি এখানে কিভাবে? আর কেনো এসেছেন?”
লিউ ঝান মৃদু হেসে বললো, “ফিওনা,আসলে আমাকে আজ রাতেই পৃথিবীতে ফিরে যেতে হবে।তাই ভাবলাম,যতটুকু সময় পাই,তোমার সাথে কাটিয়ে যাই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফিওনা কিছুটা থমকে গেলো। “আজকেই যেতে হবে? এত তাড়াতাড়ি?”
লিউ ঝান একটু গম্ভীর হয়ে বললো, “হ্যাঁ, আমি একটা ইমার্জেন্সি পেশেন্ট রেখে এসেছিলাম।আর যে কেমিক্যাল আমি ব্যবহার করে এখানে এসেছি তার সময়সীমা মাত্র তিনদিন।আজ রাতে সেটার শেষ সময়। আমাকে ফিরতেই হবে।”
এই কয়দিনে লিউ ঝানের উপস্থিতি তার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল।তার চলে যাওয়ার কথা শুনে অজানা এক শূন্যতা গ্রাস করলো তাকে।
একটু নরম স্বরে বললো, “আপনি চলে গেলে কি আবার আসবেন?”
লিউ ঝান গভীর দৃষ্টিতে তার চোখে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। “অবশ্যই,ফিওনা।তোমার জন্য আমি আবার আসবো, যতবার দরকার,ততবার।”

ফিওনা কিছু বলতে গিয়েও বললো না।তার ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল সে বুঝতে পারলো, লিউ ঝান বন্ধু হিসাবে তার মনে আলাদা একটা জায়গা তৈরি করে ফেলছে।
ফিওনা গভীরভাবে লিউ ঝানের চোখে তাকিয়ে থাকলো, কিন্তু মনে মনে নিজেকে বোঝালো— “এটা শুধুই বন্ধুত্ব,এর বাইরে কিছু নয়।”
লিউ ঝান তার জন্য কত কিছু করে,কত যত্ন নেয়,কিন্তু ফিওনা জানে,তার হৃদয়ের কোথাও এই অনুভূতির জন্য জায়গা নেই।সে লিউ ঝানকে সম্মান করে,ভালো বন্ধু হিসেবে দেখে,তবে তার অনুভূতি বন্ধুত্বের সীমানা পেরোয় না।
সে হালকা হাসি দিয়ে বললো, “তাহলে তো আপনাকে আজকের দিনটা ভালোভাবে কাটাতে হবে,মিস্টার লি। যতক্ষণ আছেন,উপভোগ করুন!”
লিউ ঝান তার চোখের ভেতরের ভাবনা বুঝতে পারলো কি না, তা জানে না ফিওনা।কিন্তু তার হাসির আড়ালে থাকা অদ্ভুত কষ্টটা সে নিজেই টের পেলো।

ভার্সিটি থেকে ফিওনা যখন ফ্লোরাস রাজ্যে ফিরে এলো,তখন সবকিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো।কিন্তু সে বুঝতে পারেনি,এক অজানা বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ফ্লোরাস প্রাসাদের ভেতর হঠাৎই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে— বড় রাজকুমারী লিয়ারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন!
ফিওনা দৌড়ে মায়ের কক্ষে ছুটে যায়।লিয়ারা শয্যায় শুয়ে আছেন,তার নিঃশ্বাস ভারী,চোখ বুজে আসছে,আর সারা শরীর ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হচ্ছে— তার ড্রাগনের অংশগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে!
ফিওনা আতঙ্কিত হয়ে পাশের পরিচারিকাদের দিকে তাকালো,কিন্তু কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।এদিকে রাজ্যের ডাক্তারও অনুপস্থিত,অন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে পড়েছেন।
ঠিক তখনই, লিউ ঝান এগিয়ে এলো।
— “আমি দেখছি আন্টির কী হয়েছে,” দৃঢ় কণ্ঠে বললো লিউ ঝান।
ফিওনা হতবাক হয়ে তার দিকে তাকালো।

— “মা তো হিউম্যান না, ড্রাগন!আপনি কি পারবেন তার ট্রিটমেন্ট করতে?”
লিউ ঝান আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বললো, “ফিওনা আমি একজন ডক্টর,আর আমার গ্ৰান্ডফাদার ড্রাগনদের নিয়ে অনেক রিসার্চ করেছিলেন।অন্তত একবার চেষ্টা করতে দাও!এভাবে ফেলে রাখলে বিপদ আরও বাড়বে।আমি আমার ব্যাগে সব প্রয়োজনীয় জিনিস এনেছি,এখনই আনছি!”
সে দ্রুত তার মেডিকেল কিট নিয়ে এলো আর পরীক্ষা করতে লাগলো।
রোগের নাম: ‘ড্রাগনিক ব্লাড ইনস্টেবিলিটি’
পরীক্ষা করে লিউ ঝান বুঝতে পারলো যে লিয়ারা এক অদ্ভুত অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন,যার নাম ‘ড্রাগনিক ব্লাড ইনস্টেবিলিটি’ (Dragonic Blood Instability)। এটি এক বিরল রোগ যা দুর্বলতা থেকে হয়ে থাকে।
এই রোগের লক্ষণ হলো শরীরের ড্রাগনিক অংশ ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া,শক্তি কমে আসা,রক্তের ভেতর ড্রাগনিক শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হওয়া,দীর্ঘসময় এই অবস্থা চললে শরীরের কোষগুলোর ধ্বংস হয়ে যাওয়া
এটি এমন একটি অসুখ যা সাধারণ ডাক্তাররা নিরাময় করতে পারে না,কারণ এতে বিজ্ঞান আর জাদুবিদ্যার সংমিশ্রণ দরকার।
লিউ ঝান গভীর মনোযোগ দিয়ে লিয়ারার রক্ত পরীক্ষা করলো,তার পালস অনুভব করলো,আর কিছুক্ষণ পর বললো,
— “আমাকে কিছু ওষুধ আর কিছু নির্দিষ্ট উপাদান মিশিয়ে একটি ইনজেকশন তৈরি করতে হবে।এতে তার রক্তের শক্তি পুনরায় সঠিকভাবে প্রবাহিত হবে।”
সে তার ব্যাগ থেকে একধরনের বিশেষ তরল বের করলো,যা সে পৃথিবী থেকে এনেছিলো।এটি মূলত এমন একটি মেডিসিন,যা মানব এবং ড্রাগন রক্তের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ফিওনা উদ্বিগ্ন হয়ে বললো, “লিউ ঝান,যদি কাজ না করে?”
— “কাজ করবেই,” শান্ত অথচ আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললো লিউ ঝান।
সে লিয়ারার হাতে ইনজেকশন দিলো।কয়েক মুহূর্ত পর, লিয়ারার শ্বাস স্বাভাবিক হলো।তার মুখের বিবর্ণ ভাব কমে এলো,আর ধীরে ধীরে তার ড্রাগনিক শক্তি ফিরে আসতে লাগলো।
ফিওনা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো।
তার মায়ের অবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
কয়েক মুহূর্ত পর,লিয়ারা চোখ খুললেন।ক্লান্ত কণ্ঠে বললেন, “ফিওনা?”
ফিওনা দ্রুত মায়ের হাত ধরলো।
— “মা!তুমি কেমন অনুভব করছো এখন?”

লিয়ারা ধীরে ধীরে হাসলেন।
— “অনেক ভালো…লিউ ঝান,তুমিই কি আমার ট্রিটমেন্ট করলে?”
লিউ ঝান হাসলো, “আন্টি,আপনি এখন পুরোপুরি সুস্থ না, তবে চিন্তা করবেন না।কয়েকদিন বিশ্রাম নিন,সব ঠিক হয়ে যাবে।”
ফিওনার চোখে জল চলে এলো।
আজ সে বুঝলো,লিউ ঝান শুধু ভালো বন্ধু নয়,বরং একজন সত্যিকারের নির্ভরযোগ্য মানুষ।
তবে সেই অনুভূতিটা শুধুই বন্ধুত্বের,এর বাইরে কিছু নয়।
কিন্তু লিউ ঝান?
সে কি সত্যিই কেবল বন্ধুত্বের জন্য এত কিছু করছে?
এই প্রশ্নের উত্তর তখনই মিলবে,যখন সত্যি কোনো কঠিন মুহূর্ত আসবে।
লিয়ারার শরীর এখন কিছুটা ভালো বোধ করছে।তার চোখে প্রশান্তির ছাপ,কিন্তু তার কণ্ঠে ছিলো এক অদ্ভুত দৃঢ়তা।তিনি ধীরে ধীরে উঠে বসলেন আর লিউ ঝানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— “সত্যিই,আমার মেয়ের জন্য তুমিই সেরা পাত্র।”
লিউ ঝান বিস্ময়ে লিয়ারার দিকে তাকালো।
ফিওনা হতভম্ব হয়ে মাকে দেখলো।
— “মা!”
কিন্তু লিয়ারা একগুঁয়ে কণ্ঠে বললেন,”আমি যা বলেছি,তাই সত্যি।এমন একজন মানুষ,যে আমার মেয়ের জন্য বারবার নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারে,সে-ই তার জন্য উপযুক্ত।”
ফিওনার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো।সে লিউ ঝানের দিকে তাকালো,যে তখনো চুপচাপ ছিলো।
কিন্তু সে জানতো,তার অনুভূতি কী।সে জানতো,তার হৃদয় অন্য কারও জন্য ধুকপুক করে।
তবুও,সে লিউ ঝানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা অনুভব করলো।
ফিওনা ধীরে ধীরে লিউ ঝানের হাত ধরে বললো,
— “আমি আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ,জানেন?পৃথিবীতে আমার মানসিক চিকিৎসা করে আমাকে সুস্থ করেছিলেন, আর আজকে আমার মাকেও সুস্থ করলেন।”
লিউ ঝান ফিওনার হাতের উষ্ণতা অনুভব করলো।তার চোখে একটা প্রশান্ত হাসি খেলে গেলো।
— “ফিওনা,তোমার আর আন্টির জন্য আমি সব সময় থাকবো। এটা কোনো ঋণ নয় এটা আমার ইচ্ছা।কারন আমি একজন ডক্টর আর এটা আমার কর্তব্য”
ফিওনা গভীরভাবে চোখের পলক ফেললো।

আকাশে ছড়িয়ে থাকা ভেনাসের নীলচে-সোনালি আলো ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে।রাতের এই নিস্তব্ধতায় ফ্লোরাস রাজ্যের প্রাসাদ এক অন্যরকম আবহ তৈরি করেছে।
লিউ ঝান ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়েছে।রাতের খাবার শেষে সবাই একসঙ্গে বসেছিল,কথা বলেছিল,কিন্তু এক অদৃশ্য বিষণ্ণতা যেন চারপাশে ছড়িয়ে ছিল।
রাজা জারেন ও লিয়ারা এখন প্রায় সন্তুষ্ট।লিউ ঝান শুধু একজন পৃথিবীর ডাক্তার নয়,সে যেনো পরিবারেরই একজন হয়ে উঠেছে।সিলভার সাথেও তার ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে।
সবাই ধীরে ধীরে বিদায় জানাতে এলো।লিউ ঝান একে একে সবার দিকে তাকিয়ে বিদায় নিলো।
তবে ফিওনা চুপচাপ ছিল।
সে কিছু বলছিল না,শুধু তার চোখের ভাষাতেই যেন কিছু অনুভূতি খেলা করছিল।
অবশেষে,লিউ ঝান বেরিয়ে পড়লো।তবে ফিওনা একাই এগিয়ে দিতে গেলো তাকে স্পেসশিপ পর্যন্ত।
রাতের শীতল বাতাস বইছিল।স্পেসশিপের উজ্জ্বল আলো আকাশের তারা ছাপিয়ে উঠছিলো।
লিউ ঝান ফিওনার পাশে হাঁটছিল,কিছুটা হাসিমুখেই,যেন সবকিছু স্বাভাবিক।
কিন্তু ফিওনার বুকের ভেতর কেমন যেন একটা শূন্যতা জমছিল।
স্পেসশিপের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে লিউ ঝান বললো,

— “ফিওনা,যতদিন না আবার দেখা হয়,ভালো থেকো।আর পড়াশোনাটা চালিয়ে যাও। তুমি খুব মেধাবী,ভুলে যেও না।”
ফিওনা একটু হাসলো।
— “আপনিও ভালো থাকবেন,মিস্টার লি।”
লিউ ঝান কিছুক্ষণ ফিওনার দিকে তাকিয়ে থাকলো,যেনো কিছু বলতে চাচ্ছে,কিন্তু বলা হয়ে উঠছে না।
তারপর,সে পকেট থেকে সেই ছোট্ট টেডিটা বের করলো— যা তারা একসাথে গেম খেলে জিতেছিল।
— “তুমি বলেছিলে,আমি এটা রেখে দিয়েছি।এটা আমার কাছে স্মৃতি। তবে আমার মনে হয়,এটা তোমার কাছেই থাকা উচিত।”
ফিওনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

— “আপনি এটা আমার জন্য রেখে দিয়েছিলেন,তাই না?”
— “হ্যাঁ।কিন্তু আমি চাই,তুমি এটা কাছে রাখো।”
ফিওনা কিছু না বলে টেডিটা হাতে নিলো। একটা হালকা বাতাস বইলো,তার চুল উড়িয়ে দিলো।
স্পেসশিপের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে লিউ ঝান অপেক্ষা করছিল। ফিওনার দিকে তাকিয়ে বলেছিল,
— “তুমি পৃথিবীতে কবে যাবে?”
ফিওনা এক মুহূর্ত ভেবে বলল,
— “মিস্টার লি,আপনি গ্ৰান্ডপাকে জানিয়ে দেবেন,আমার পরীক্ষা শেষ হলেই আমি পৃথিবীতে যাবো।”
লিউ ঝান মৃদু হেসে বলল,
— “আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
তার চোখে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি ছিল,যেন সে নিশ্চিত যে পৃথিবীতে আবার দেখা হবে।
লিউ ঝান ধীরে ধীরে স্পেসশিপের দিকে এগিয়ে গেলো।সে উঠে পড়বে, ঠিক তখনই—
ভয়ংকর গর্জন

“ফিওনা!”
একটা গমগমে আওয়াজ বাতাসে প্রতিধ্বনিত হলো।
ফিওনা আর লিউ ঝান একইসাথে ঘুরে তাকালো।
প্রথমে কিছুটা আবছা,ধোঁয়াশার মতো,তারপর ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠলো—
সামনে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার।
ফিওনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেলো।
—”আপনি এখানে?
জ্যাসপার কোনো উত্তর দিলো না।তার সবুজ চোখ ফিওনার দিকে নিবদ্ধ ছিল,তারপর ধীরে ধীরে সরে গেলো লিউ ঝানের দিকে।
তার পুরো শরীর শক্ত হয়ে আছে,ভ্রু কুঁচকে আছে,যেন প্রচণ্ড রাগ দমিয়ে রাখছে।
ভেনাসে ফেরার সাথে সাথেই সে জানতে পেয়েছিলো—
কেউ একজন পৃথিবী থেকে এসেছে ফিওনার জন্য।
আর সেটা যে লিউ ঝান,সেটা বুঝতে বাকি নেই।
হঠাৎ ঝড় শুরু হলো।
ভেনাস পুরো তাণ্ডব ঘটতে লাগলো।
বজ্রপাত আর ভয়ংকর পরিবেশ।

আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো,বিশাল বজ্রপাতের শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো ভেনাসের আকাশজুড়ে।
ভেনাসের মাটি কেঁপে উঠলো।বাতাস অস্বাভাবিক হয়ে গেলো।
ফিওনার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেলো।সে জানে,এটা জ্যাসপারের রাগের প্রতিচ্ছবি।
তার শক্তি এতটাই প্রবল যে তার আবেগের সাথে সাথে প্রকৃতি প্রতিক্রিয়া দেখায়।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে সামনে এলো।
এক মুহূর্ত—
তিনজন মুখোমুখি হলো।
ফিওনা,লিউ ঝান,আর জ্যাসপার।
চারপাশে বাতাস প্রচণ্ড গতিতে বইতে লাগলো,যেন তিনজনের মধ্যেকার অদৃশ্য সংঘাতের সাক্ষী হতে চাইছে।
ফিওনা শ্বাস আটকে গেলো।
জ্যাসপার তাকিয়ে আছে লিউ ঝানের দিকে,তার চোখ ভয়ংকর।
আর লিউ ঝান?
সে ধীর,স্থির,কিন্তু তার চোখেও একটা দৃঢ়তা আছে।
নিঃশব্দ যুদ্ধের সূচনা
এই মুহূর্তে কোনো কথা বলা হয়নি।
কিন্তু বাতাসে একটা অদৃশ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
তাদের জন্য।
ঝড়ের দাপটে চারপাশ ধুলোয় ভরে গেছে।বাতাসে যেন এক অদৃশ্য বিদ্যুৎ প্রবাহ বইছে।
ফিওনা কপাল চেপে ধরলো।

— “উফ…! এ কেমন অনুভূতি?”
লিউ ঝানও কপাল ছুঁয়ে দেখলো।তার মাথায় প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হচ্ছে।
আর জ্যাসপার?
সে দাঁড়িয়ে আছে,কিন্তু তার চোখ ফাঁকা,বিস্মিত।
যেন কিছু একটা তার স্মৃতির গভীরে ঢুকে পড়েছে।
তিনজনের মস্তিষ্কে আবছা স্মৃতি ফুটে উঠতে লাগলো।
কুয়াশার মতো আবছা দৃশ্য।
তারপর হঠাৎই—
স্মৃতির দ্বার খুলে গেলো।স্মৃতির বিস্ময়কর জাল…
ফিওনা,লিউ ঝান আর জ্যাসপার যেন ১০০ বছর আগের সেই অতীতে ডুবে গেলো।

১০০ বছর পুর্বে……………
ভেনাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাজ্য ছিলো ফ্লোরাক্সিয়া।
আরেকটি রাজ্য ছিলো,যেটি শক্তিতে সমান হলেও নিষ্ঠুরতায় অগ্রগামী— অ্যাস্ট্রাল সাম্রাজ্য।
ভেনাসের আকাশ তখন স্বর্ণালি আলোয় ভরে ছিলো।
সারা রাজ্য আলোয় ঝলমল করছিলো,যেন কোনো মহাযজ্ঞের আয়োজন চলছে।
প্রাসাদের বাগানে…
এক তরুণী ধীরে ধীরে চলছিলো।
তার সৌন্দর্য যেন ভেনাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রকেও হার মানাবে।
তার চোখে ছিলো আকাশের নীলিমার মতো গভীরতা,চুল ছিলো সোনালি,সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলো।
তাকে একবার দেখলে যে কেউ মোহিত হয়ে যেতো।
প্রিন্সেস কায়রা ফ্লোরিস।
ফ্লোরাস রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা।
তার নামই ছিলো সৌন্দর্যের প্রতীক।

ফ্লোরাক্সিয়ার রাজা থাল্ডানের একমাত্র কন্যা ছিলো প্রিন্সেস কায়রা ফ্লোরিস।অপরূপা—তার রূপে বিমোহিত হতো সমস্ত রাজ্য।কিন্তু কায়রার সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি বিখ্যাত ছিলো তার হৃদয়ের কোমলতা।
সেই রাজ্যের প্রহরী,তার বিশ্বস্ত রক্ষক,রাজ্যের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ও সেনাপতি ছিলেন জাইরন ড্রাকভাল।
সে ছিলো নির্ভীক,বুদ্ধিমান ও রাজভক্ত।
একদিন সকালবেলা কায়রা ঘুম থেকে উঠে দেখলো,তার কক্ষের সামনে রাখা একটি চিঠি ও তার প্রিয় ফুল।
চিঠিতে লেখা ছিলো—
আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় এলিজিয়া,
“তোমার হাসির আলোয় জ্বলজ্বল করে আমার অস্তিত্ব।
তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাই।
তুমি যদি কখনো হারিয়ে যাও,আমি তোমাকে খুঁজতে নক্ষত্রের ওপারে চলে যাবো।এলিজিয়া এমন একটি নাম যার অর্থ স্বর্গীয় আর তুমি আমার কাছে স্বর্গীয় সৌন্দর্যের অধিকারিনী।এলিজিয়া,তুমি আমার জন্য সেই প্রথম প্রভাতের সূর্যালোক,যে আলো অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে নতুন দিনের সূচনা করে।তুমি আমার হৃদয়ের সেই গোপন সুর,যা কেবল আমার আত্মা শুনতে পায়।তুমি আমার মহাবিশ্বের কেন্দ্র,আমার অস্তিত্বের কারণ।
“ইতি,

তোমাকে নীরবে ভালোবেসে যাওয়া এক অচেনা হৃদয়।”
কায়রা প্রতিদিন নতুন নতুন চিঠি পেতে লাগলো আর প্রতিদিন তার প্রিয় ফুল কেউ রেখে যেতো।
সে ভাবলো,এই চিঠিগুলো সেনাপতি জাইরন পাঠাচ্ছে।
এতেই তার মনে প্রেম জাগ্রত হলো।
কিন্তু কায়রা জানতো না,এই এলিজিয়া নামের সৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে ছিলো অন্য কেউ।
এদিকে কায়রার বড় ভাই রাজপুত্র আরডান ফ্লোরিস তার বোনের বিবাহ ঠিক করে দিলেন “অ্যাস্ট্রাল” সাম্রাজ্যের প্রিন্স থেরন সোলারিয়াসের সাথে।
থেরন ছিলেন এক নিষ্ঠুর,জেদি,একরোখা,অহংকারী যুবরাজ,যার একমাত্র স্বপ্ন ছিলো কায়রাকে নিজের করে পাওয়া।
কিন্তু কায়রা কিছুতেই এই বিবাহ মেনে নিতে পারলো না।
সে সিদ্ধান্ত নিলো সে পালিয়ে যাবে জাইরনের সাথে দূরে কোথাও।
কিন্তু জাইরন চাইলো না রাজা থাল্ডানের বিশ্বাস ভাঙতে।
সে বললো, “আমি কখনো বিশ্বাসঘাতক হতে পারবো না, প্রিন্সেস।আমি রাজা থাল্ডানের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
কিন্তু কায়রা জানতো না,তার ভাই আরডান সবই টের পেয়ে গেছে আর ষড়যন্ত্র করছে।
আরডান ও থেরন মিলে জাইরনকে হ*ত্যার ফাঁদ পেতে যুদ্ধের ছলনায় তাকে রাজ্যের বাইরে ডেকে পাঠালো।
জাইরন মনে করলো,রাজ্যের জন্যই তাকে যেতে হবে।
কিন্তু এই ষড়*যন্ত্রের কথা কায়রা জেনে গেলো।

সে একাই পলায়ন করলো যুদ্ধক্ষেত্রে,জাইরনকে রক্ষা করতে।
সেখানে জাইরন একাই যুদ্ধ করতে লাগলো।
তার প্রতিটি তরবারির আঘাতে শত্রু সেনারা পড়তে লাগলো, কিন্তু থেরন ও আরডানের বিশাল বাহিনী তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো।
ঠিক সেই মুহূর্তে কায়রা এসে পৌঁছালো!
“জাইরন!”
সে দৌড়ে এলো,যখন থেরন তরবারি চালাতে যাচ্ছিলো জাইরনের দিকে।
“না!”
কায়রা সামনে চলে এলো—
থেরনের তরবারি বিদীর্ণ করে দিলো তার বুক।
রক্তে ভিজে গেলো যু*দ্ধক্ষেত্র।
“এলিজিয়া!”

জাইরনের গর্জন আকাশ কাঁপিয়ে দিলো।তার সাথে সাথে থেরন ও ছুটে গেলো সেখানে।পাহাড়ের নিচে তাকিয়ে দেখলো তার একমাত্র ভালোবাসা হারিয়ে যাচ্ছে।থেরনও নিচে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো এলিজিয়া বলে।আর এলিজিয়াও তখন ব্যাথাতুর চোখে তাকালো থেরনের দিকে।
রাগে,শোকে,প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা জাইরন থেরনের দিকে ছুটে গেলো।
এক আঘাতে সে থেরনকে হ*ত্যা করলো আর আরডানকেও।
এরপর,কায়রার নিথর দেহ পড়ে গেলো পাহাড়ের নিচে।
“আমার দুনিয়াতে থাকার আর কোনো কারণ নেই।”
তারপর নিজের তরবারি নিজের বুকে প্রবেশ করালো জাইরন।
ভেনাস কেঁপে উঠলো…আকাশ কালো হয়ে গেলো।
রাজ্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা সেই রাতেই হারিয়ে গেলো।
রাজ্য পণ্ডিতরা তখন এক ভবিষ্যদ্বাণী করলেন—
“তাদের আত্মা হারিয়ে যাবে না।একদিন,শত বছর পর তারা আবার ফিরে আসবে,অন্য দেহে,অন্য নামে,কিন্তু একই আত্মা নিয়ে।”

ঝড় থেমে গেছে।
ফিওনা,লিউ ঝান,আর জ্যাসপার কাঁপতে কাঁপতে বাস্তবে ফিরলো।
তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে,শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
তাদের হৃদয়ে একই প্রশ্ন—
তাহলে কি আমরাই কায়রা,জাইরন আর থেরনের পুনর্জন্ম?
ভেনাসের আকাশে তখন এক নতুন রহস্যের জন্ম হলো…
আকাশে তখনও বজ্রপাতের আলোয় দিগন্ত চিরে যাচ্ছে।
মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি আত্মা—ফিওনা,লিউ ঝান আর জ্যাসপার—একদৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঝড় থামলেও তাদের মনের ভেতরে যেন এক সুনামী বয়ে যাচ্ছে।
দেবতা আভ্রাহার ভবিষ্যদ্বাণী ছিলো জ্যাসপারই জাইরনের পুনর্জন্ম।
কিন্তু স্মৃতিগুলো আজ এক নিষ্ঠুর সত্য প্রকাশ করলো—
জ্যাসপার আসলে থেরনের পুনর্জন্ম।
আর লিউ ঝানই জাইরন।

এই সত্য প্রকাশের সাথে সাথেই যেন মহাবিশ্বের সকল নিয়ম ভেঙে পড়লো।
ফিওনা আর লিউ ঝান কান্নারত চোখে একে অপরের দিকে তাকালো।
লিউ ঝান ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলো,তার দেহে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে।
তার হাতের চামড়ায় হঠাৎ করে এক গাঢ় নীলচে সোনালী ড্রাগনের ট্যাটু ফুটে উঠলো।
তার ত্বক ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে লাগলো,যেন তার শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এক ভয়ঙ্কর শক্তি যেন তার রক্তের ভেতর প্রবাহিত হচ্ছে।
সে নিজের হাত মুঠো করে ধরলো।
হঠাৎ তার ভিতরে প্রবল এক অনুরণন হলো—
“আমি কি… ড্রাগনে পরিণত হচ্ছি?”
জ্যাসপার এবার সামনে এলো।
তার চোখ ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে উঠছে,যেন ভেতরে লুকিয়ে থাকা স্মৃতির সাথে তার বর্তমান সত্তা এক হতে চাইছে।
তার ঠোঁট কাঁপছে।

“এটা মিথ্যে!এটা সত্য হতে পারে না!”
কিন্তু সব স্মৃতি স্পষ্ট।
কায়রার র*ক্তে তার হাত মুখ ভিজে ছিলো।
কায়রার মৃ*ত্যু তার চোখের সামনে ঘটেছিলো।
সেই-ই তো ছিলো থেরন!
আর এখন,তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লিউ ঝান…
সে-ই জাইরনের পুনর্জন্ম।
নিয়তির পরিহাস।
ভাগ্য কি আবার সেই অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে?
একদা যারা ছিলো শত্রু,আজ তারা নতুন পরিচয়ে দাঁড়িয়ে আছে একে অপরের মুখোমুখি।
ফিওনা আর লিউ ঝান জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে ছিলো, চোখে অবিশ্বাস আর হাজারো প্রশ্নের ছাপ।
লিউ ঝান এগিয়ে এসে কাঁপা কণ্ঠে বললো,
“তুমি… থেরন?আমাদের আগের জন্মে তুমিই আমাদের আলাদা করেছিলে?”
জ্যাসপার থমথমে চোখে তাকিয়ে ছিলো ফিওনার দিকে।

তার মস্তিষ্ক যেন সত্য মেনে নিতে চাইছে না,কিন্তু হৃদয়ের গভীরে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
“না… এটা মিথ্যে!দেবতা আভ্রাহার তো বলেছিলো আমি জাইরন!এটা কীভাবে সম্ভব?”
এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করেই সে ফিওনার হাত শক্ত করে ধরে সামনে টেনে নিলো।
জ্যাসপার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ফিওনাকে নিয়ে এগিয়ে গেলো,তার পেছনে ছুটে এলো লিউ ঝান।
ভেনাসের আকাশ তখনও অস্থির,যেন প্রকৃতি নিজেই এই মহাবিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
দেবতা আভ্রাহার মহা প্রাসাদ তখন এক অদ্ভুত নীরবতায় আচ্ছন্ন।তাঁর চোখে গভীর চিন্তার ছাপ।তিনি ইতিমধ্যে সবকিছু বুঝে গেছেন…
তিনি ধীরে ধীরে সামনে এসে তাদের দিকে তাকালেন।
তার হাতে সেই ভবিষ্যদ্বাণীর পবিত্র গ্রন্থ,যেটিতে তাদের অতীত ও ভবিষ্যৎ লেখা ছিলো।
কিন্তু আজ,দেবতার মুখে কিছুটা শঙ্কা ফুটে উঠেছে…
হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছেন—
ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে।
এই জন্মে সব হিসাব বদলে গেছে…
কিন্তু শেষ পরিণতি কী হবে?
তিনটি আত্মা কি আবারও এক হবে,নাকি পূর্বজন্মের অভিশাপ আবারও তাদের ভাগ্যে লিখিত আছে?

জ্যাসপারের ব্যাকুল কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হলো দেবতা আভ্রাহারের রাজপ্রাসাদে।
“দেবতা আভ্রাহার!আমাদের সব স্মৃতি মনে পড়েছে।কিন্তু আপনি বলেছিলেন আমি জাইরন!তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব?”
দেবতা আভ্রাহার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,যেন তিনি এই মুহূর্তটির জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
তিনি ধীরে ধীরে বললেন, “তুমি থেরন।আমি বলেছিলাম তুমি জাইরন,কারণ তুমি সবুজ ড্রাগন।”
জ্যাসপার হতভম্ব হয়ে গেলো।
“কিন্তু…তাহলে কেন?”
দেবতা এবার গভীর চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ড্রাগনের রঙ কখনো আত্মার পরিচয় নির্ধারণ করে না।প্রতি একশ বছরে একটি সবুজ ড্রাগন জন্ম নেয়।আগের জন্মে জাইরন সেই সুযোগ পেয়েছিলো,আর এই জন্মে তুমি।কিন্তু এর মানে এই নয় যে,তুমি জাইরন।”
ফিওনা আর লিউ ঝান স্তব্ধ হয়ে শুনছিলো।
দেবতা আভ্রাহার এবার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন,যেন মহাবিশ্বের সমস্ত ইতিহাস তাদের সামনে খুলে দিচ্ছেন।
“জ্যাসপার,যখন তুমি জন্মেছিলে,তখন ভাগ্য নিজেও জানতো না তুমি থেরনের আত্মা নিয়ে এসেছো।কিন্তু একদিন যখন তুমি পৃথিবীতে গেলে আর ফিওনার সাথে তোমার দেখা হয়ে গেলো তোমাদের মিলন হলো,সেই দিন থেকেই ভাগ্য তার পথ বদলে নিলো।”
লিউ ঝানের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে এলো।

“তাহলে আমরা… আমরা কীভাবে এখানে এলাম?”
দেবতা আভ্রাহার তার হাতে থাকা পবিত্র গ্রন্থটি খুলে বললেন,
“নিয়তি এলিজিয়া (ফিওনা) আর জাইরন (লিউ ঝান) কে মানব রূপে পাঠিয়েছিলো,যাতে তারা পুনর্মিলন করতে পারে। নিয়তি চেয়েছিলো তারা মানবজীবনে প্রেম করবে,তারপর একদিন তারা আবার ড্রাগন হয়ে ভেনাসে ফিরে আসবে।কিন্তু সব বদলে গেলো…কারণ থেরন (জ্যাসপার) তখন পৃথিবীতে চলে যায় আর জাইরনের আগে সে ফিওনার সাথে জড়িয়ে পড়েছিলো।”
ফিওনার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো।
সে বিস্ময়ে ফিসফিস করে বললো,
“তাহলে আমার প্রকৃত আত্মা ভালোবাসা… লিউ ঝান?”
লিউ ঝান ফিওনার দিকে তাকিয়ে রইলো,তার চোখে হাজারো অনুভূতি।
জ্যাসপারের মুখ কঠিন হয়ে গেলো।
দেবতা আভ্রাহার মৃদু কণ্ঠে বললেন,
“ভাগ্য পাল্টে গেছে,কিন্তু পরিণতি এখনো লেখা হয়নি।”
তিনজনেই অবাক হয়ে দেবতার দিকে তাকালো।
“তাহলে… আমাদের পরিণতি কী হবে?”
প্রাসাদের ভেতর এক রহস্যময় নীরবতা নেমে এলো।
জ্যাসপারের চোখ রাগে জ্বলছিলো।
“দেবতা আভ্রাহার!আপনি কি জানেন ইতিহাস কতোটা ভুল লেখা হয়েছে?এলিজিয়া (ফিওনা) আমার হাতে হত্যা হয়নি!

দেবতা আভ্রাহার চমকে উঠলেন।
ফিওনার চোখ ভিজে উঠলো। সে কাঁপা গলায় বললো,
“হ্যাঁ,দেবতা!আমি নিজেই দেখেছিলাম সেদিন।যখন থেরনের (জ্যাসপার) তলোয়ার জাইরনের (লিউ ঝান) দিকে ছুটে যাচ্ছিলো,আমি জাইরনকে বাঁচাতে এগিয়ে যাই।কিন্তু আমার মৃ*ত্যু হয়েছিলো আমার ভাই আরাডানের হাতে!সে দূর থেকে তলো*য়ার ছুঁ*ড়ে মেরেছিলো!”
জ্যাসপার হতবাক হয়ে গেলো।
লিউ ঝান ধীরে ধীরে ফিওনার দিকে তাকালো,যেন নতুন করে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করছে।
“তাহলে… থেরনের হাতে তোমার মৃ*ত্যু হয়নি?”
ফিওনার গলা কেঁপে উঠলো।
“না,থেরন আমাকে মারেনি।একমাত্র আমিই জানতাম আসল রহস্য।আমার ভাই আরাডান রাজ্যের সমস্ত সম্পদ একাই দখল করতে চেয়েছিলো।তার পরিকল্পনা ছিলো একসাথে আমাকে আর জাইরনকে হত্যা করবে,যাতে আমি সিংহাসনের দাবিদার না থাকি।আর থেরনের সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলো শুধু দাঙ্গা বাধানোর জন্য।সে জানতো,এতে জাইরন আর থেরনের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধবে,আর সে সুবিধা নিতে পারবে!”
জ্যাসপার নিজের মুষ্টি শক্ত করে ফেললো।

“এতদিন ধরে আমাকে ভুল দোষী বানানো হয়েছিলো!”
দেবতা আভ্রাহার চোখে গভীর অনুশোচনা ফুটে উঠলো।
“আমি…আমি জানতাম না সত্যিটা এতদিন লুকানো ছিলো।নিয়তি নিজেই ধোঁয়াশায় ছিলো,কারণ ইতিহাসের পাতায় সত্য কখনো স্পষ্টভাবে লেখা ছিলো না।”
লিউ ঝান ধীরে ধীরে বললো,”তাহলে…যদি ইতিহাস ভুল লেখা হয়,তবে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত কি নতুনভাবে লেখা যেতে পারে?”
প্রাসাদের ভেতরে এক রহস্যময় নীরবতা নেমে এলো। তিনজনেই জানতো, সত্য প্রকাশ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই—এবার কি ভাগ্য তাদের একসাথে থাকতে দেবে? নাকি আবারও কোনো অভিশাপ তাদের আলাদা করে দেবে?

জ্যাসপার তখন প্রশ্ন করলো “দেবতা আভ্রাহার আমি যখন প্রথম আমার অতীত নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম তখন তো আমি সবুজ ড্রাগন আর বাদামী ড্রাগনকেই দেখেছিলাম।তারা একসাথে ছিলো।
দেবতা আভ্রাহার ধীরে ধীরে জ্যাসপারের দিকে তাকালেন। তার চোখে গভীর চিন্তার ছাপ।
“তুমি তোমার এই জন্মের রূপে অতীত দেখেছিলে,তাই তোমার স্বপ্নেও তা বর্তমান জন্মের প্রতিফলন হয়েছে। সবুজ ড্রাগন তুমি নিজে,আর বাদামী ড্রাগন ছিলো এলিজিয়া।কারন অতীতে তোমার আকাঙ্ক্ষা ছিলো এলিজিয়াকে পাওয়া।তাই তুমি একসাথে দেখেছিলে দুটো ড্রাগন।অতীতে জাইরন সবুজ ড্রাগন ছিলো,কিন্তু এবার সে মানবরূপে জন্ম নিয়েছে।তাই তোমার মনে হয়েছে তুমি জাইরন,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তুমি থেরন,যার আত্মা আবার নতুন রূপে ফিরে এসেছে।”

জ্যাসপার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর ধীরে ধীরে বললো, “তাহলে আমি কখনোই জাইরন ছিলাম না।আমার স্মৃতিতে সেই বিভ্রান্তি ছিলো শুধু আমার সবুজ ড্রাগন রূপের কারণে।কিন্তু আমি জানতাম না, নিয়তি আমাকে অন্যভাবে তৈরি করেছে।”
জ্যাসপার তখন দেবতার দিকে আবার ফিরে গেলো।
“দেবতা, তাহলে কি আমার ভালোবাসা ভুল ছিলো? আমি কেনো ফিওনার দিকে এতটা টান অনুভব করি?”
দেবতা আভ্রাহার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “নিয়তি একবার তৈরি হয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তনও হতে পারে। তুমি অতীতে যা ছিলে, তা তোমার বর্তমানকে নির্ধারণ করতে পারে,কিন্তু বর্তমান তোমার ভবিষ্যত তৈরি করবে।ফিওনা এই জন্মে তোমাকে ভালোবেসেছে, কিন্তু সে কি তোমার অতীত জেনে তোমাকে গ্রহণ করবে?”
এই কথায় চারপাশের পরিবেশ যেন হিমশীতল হয়ে গেলো।
ফিওনার মন এখন বিভ্রান্ত।তার অতীত আর বর্তমানের মাঝে সে আটকে গেছে।
সে এবার কি করবে?
সে কি লিউ ঝানকে বেছে নেবে,যে আসলে তার অতীতের ভালোবাসা জাইরন?
নাকি সে জ্যাসপারকে বেছে নেবে,যে তার বর্তমান ভালোবাসা যদিও স্মৃতিতে নেই তবুও,কিন্তু অতীতে তার জীবন ধ্বংসের কারণ ছিলো এই জ্যাসপার?

জ্যাসপারের চোখে স্মৃতির ঝলক ফিরে এলো, কণ্ঠ ভারী হয়ে উঠলো”আমি যেদিন প্রথম আরাডানের সাথে ফ্লোরাক্সিয়া প্রাসাদে গিয়েছিলাম,সেদিনই প্রথম দেখলাম ওকে…এক কন্যা,হাতে ফুলের ঝুড়ি,হালকা বাতাসে তার চুল উড়ছিল। সে নীরবে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো,একবারও পেছনে তাকালো না।”
জ্যাসপার চোখ বন্ধ করলো, যেন সেই মুহূর্তে ফিরে গেলো
“সেদিন… সেদিন আমি প্রথম দেখেই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।তারপর থেকে প্রতিটা মুহূর্ত ওকে ভাবতাম।কিন্তু আমি তো সরাসরি ওর কাছে যেতে পারতাম না,তাই আমার প্রাসাদের এক মেয়ে সার্ভেন্টকে পাঠালাম ফ্লোরাক্সিয়া প্রাসাদে,কাজের জন্য।সে-ই প্রতিদিন ভোরে,ওর কক্ষের সামনে ফুল আর চিঠি রেখে আসতো…আমার নাম না বলে।”
জ্যাসপার গভীর শ্বাস নিলো, চোখে কষ্টের ছায়া
“আমি শুধু চাইতাম,ও জানুক… কেউ একজন তাকে ভালোবাসে গেছে নীরবে,দূর থেকে।”
জ্যাসপারের কণ্ঠ তখন ক্রোধে কাঁপছিল, স্মৃতির ভারে তার চোখের আগুন জ্বলছিল]
“কিন্তু… যখন শুনলাম, সে ভালোবাসে ওই সামান্য সেনাপতি জাইরনকে, আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো! আমি রাজকুমার থেরন! আমি একরোখা, জেদি… যা আমার, তা কারও সঙ্গে ভাগ করি না! তাই সেদিন আমি ঠিক করলাম—জাইরনকে খু*ন করবো!”

(তার চোখে ভয়ংকর প্রতিশোধের ছাপ ফুটে উঠলো)
“আমি গিয়েছিলাম ওকে শেষ করতে… কিন্তু তখনই আরাডন আমাকে অন্য এক বুদ্ধি দেয়। সে বললো, সরাসরি নয়, বরং কৌশলে হত্যা করতে হবে, যেন এলিজিয়া কখনোই জানতে না পারে কেনো মরেছিল জাইরন। আমি তখন বুঝতেও পারিনি যে, আমার প্রিয় এলিজিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু আসলে আরাডনই!”
জ্যাসপার কষ্টে একবার ফিওনার দিকে তাকালো,যেন বলতে চাইলো—আমি জানতাম না,আমি আসল সত্যটা কখনও জানতাম না…
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনার দিকে এগিয়ে এলো।তার গভীর সবুজ চোখে একধরনের দৃঢ়তা ছিলো,যেনো সে এক মুহূর্তের জন্যও তাকে হারাতে চায় না।
“ফিওনা,অতীতে আমি কে ছিলাম আর তুমি কে ছিলে—এটা কি সত্যিই কোনো গুরুত্ব রাখে?এই জন্মে আমি তোমাকে ভালোবেসেছি,তুমিও আমাকে ভালোবেসেছো।এটাই সত্যি। তুমি আমার প্রতি ভালোবাসা এখন ও অনুভব করো,তাই না, হামিংবার্ড?”
ফিওনা হতবাক হয়ে গেলো।তার হৃদয় দ্রুত লাফিয়ে উঠলো।
কিন্তু দেবতা আভ্রাহার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “জ্যাসপার, তোমাকে সত্য মেনে নিতে হবে। এলিজিয়া কেবলমাত্র জাইরনের জন্যই তৈরি হয়েছে।”
জ্যাসপারের রাগ যেন মুহূর্তেই বিস্ফোরিত হলো।সে কঠিন স্বরে বললো, “আপনি চুপ করুন,দেবতা! আমাকে আমার কথা বলতে দিন!”

তারপর জ্যাসপার আবার ফিওনার দিকে ফিরে তাকালো।
“তুমি কি জানো,আসল সত্যটা কী?”
ফিওনা কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো।
“তোমাকে প্রতিদিন সকালে যে চিঠি আর ফুল দেওয়া হতো, সেটার পেছনের ব্যাক্তিটা আমি ছিলাম!জাইরন নয়!আমি তোমাকে ‘এলিজিয়া’,নামটা দিয়েছিলাম।আমার কাছে তুমিই ছিলে সেই নামের উপযুক্ত।কিন্তু যেদিন দেখলাম জাইরন তোমাকে ‘এলিজিয়া’ বলে ডাকে,সেদিন আমি কিছু বলিনি। কারণ নামে কিছু যায় আসে না,আমি শুধু তোমাকে পেতে চেয়েছিলাম!”
ফিওনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেলো।
সে ধীরে ধীরে লিউ ঝানের দিকে তাকালো।তার মন যেন এক মুহূর্তে এক শতাব্দীর স্মৃতি খুঁজে বের করলো।সত্যটা এতদিন লুকিয়ে ছিলো!তাহলে কি তার ভালোবাসা ভুল পথে গিয়েছিলো?নাকি নিয়তি এখনো তাদের জন্য কোনো নতুন পথ তৈরি করছে?

লিউ ঝান তখন ফিওনার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি একদিন হঠাৎ করেই বললে যে আমি তোমাকে ‘এলিজিয়া’ নামটা দিয়েছি,আর তুমি খুব খুশি হয়েছিলে।আমি কিছু বলিনি, কারণ আমি তখনো বুঝতে পারিনি তুমি প্রতিদিন সকালে চিঠি আর ফুল পেতে।তুমি আমাকে কখনো বলেনি যে কারও কাছ থেকে এমন কিছু পেয়েছিলে।”
ফিওনা এবার গভীরভাবে চিন্তা করলো।
জ্যাসপার তখন ফিওনার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো, “আমি তো ভেবেছিলাম তুমি সব জানতে,কিন্তু আসলে তুমি জানতেই না কে তোমাকে ভালোবেসে প্রতিদিন সকালবেলা চিঠি আর ফুল পাঠাতো!”
ফিওনা অবাক হয়ে লিউ ঝানের দিকে তাকালো।তার হৃদপিণ্ড যেন মুহূর্তে থেমে গেলো।
দেবতা আভ্রাহার তখন ধীর কণ্ঠে বললেন,”সত্য সবসময় সহজ নয়,কিন্তু যখন তা সামনে আসে,তখন তা এড়িয়ে যাওয়াও অসম্ভব।”
চারপাশের পরিবেশ তখন যেন থমথমে হয়ে গেলো,শুধুমাত্র তিনজনের দ্রুত শ্বাস নেওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।

লিউ ঝান তখন হঠাৎ করে ফিওনাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “এই জন্যই প্রথম দেখাতেই তোমার প্রতি এক অদ্ভুত টান জন্ম নিয়েছিলো।কারণ তুমি আমার শত বছর পূর্বের ভালোবাসা।”
ফিওনা তার বাহুডোরে স্থির হয়ে গেলো।এতকিছুর পরও লিউ ঝানের স্পর্শে একটা চেনা অনুভূতি জাগলো তার মধ্যে। যেন সে এটাই চেয়েছিল এতদিন।
কিন্তু জ্যাসপারের মাথায় তখন রাগ দপদপ করে উঠলো।তার শিরায়-উপশিরায় আগুন জ্বলে উঠলো,চোখ দুটো রক্তিম হয়ে গেলো।এক ঝটকায় সে লিউ ঝানকে ফিওনার থেকে ছিনিয়ে নিলো আর প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত করতে করতে রাগান্বিত স্বরে বললো

“তুই সাহস কোথা থেকে পেলি আমার সামনে ওকে ছোঁয়ার?” জ্যাসপার গর্জে উঠলো,তার গলায় ভয়ঙ্কর ক্রোধ।
লিউ ঝান রক্তাক্ত মুখেও হাসলো,”কারণ সে আমার ছিলো, প্রিন্স।আগের জন্মেও,এই জন্মেও।”
ফিওনা চিৎকার করে তাদের থামানোর চেষ্টা করলো,”থামুন, প্লিজ!ওনাকে ছেড়ে দিন!”
কিন্তু জ্যাসপার তখন এতটাই রেগে ছিলো যে,দেবতা আভ্রাহার লিউ ঝানকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ছিটকে ফেলে দিলো।আভ্রাহার আকাশে ছিটকে গিয়ে পড়লেন, চারপাশের আকাশ বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলসে উঠলো।
এরপর জ্যাসপার লিউ ঝানের গলা চে*পে ধরে এক ঝটকায় তাকে শূন্যে তুলে ফেললো।লিউ ঝান ছটফট করতে লাগলো, তার মুখ লাল হয়ে উঠলো শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসায়।
ফিওনা আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো, “প্রিন্স প্লিজ!ওকে ছেড়ে দিন,আপনি এটা করতে পারেন না!”
কিন্তু জ্যাসপারের চোখে তখন শুধুই প্রতিশোধের আগুন।
ফিওনা আবার ছুটে এসে লিউ ঝানকে ছাড়াতে গেলে, জ্যাসপার এক ঝটকায় তাকে ছিটকে ফেলে দেয়।
ধপ!

ফিওনার শরীর শূন্যে ভেসে গিয়ে ধাক্কা খায় সাদা মার্বেলের পিলারের সাথে। “উফ!” ফিওনার কপাল ফেটে যায়,র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে। মাথায় তীব্র ব্যথায় সে কপালে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে,চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসে।
এদিকে লিউ ঝান প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেছে।তার শ্বাস ভারী হয়ে আসছে,চোখের পাতা ঢেকে আসছে ধীরে ধীরে।
জ্যাসপার,প্লিজ থামুন!” ফিওনা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো, কিন্তু জ্যাসপারের রাগ তখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
সে এক ধাক্কায় লিউ ঝানকে দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারলো!
ধড়াম!!
লিউ ঝান ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো মেঝেতে,তার শরীরের প্রতিটি অংশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়লো। হাত, পা, মাথা—সবকিছু ভীষণভাবে আ*ঘাতপ্রাপ্ত হলো।
এরপর জ্যাসপার প্রাসাদের চারপাশে দানবের মতো তাণ্ডব চালাতে লাগলো।গর্জন করে সে সিংহাসন উল্টে দিলো, দেয়ালের বিশাল বিশাল পাথর টেনে ভেঙে ফেলতে লাগলো। বিশাল ঝাড়বাতিগুলো মাটিতে পড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো, অগ্নিশিখা দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো।পুরো প্রাসাদ যেন কাঁপতে লাগলো তার ভয়ঙ্কর রাগে।
ফিওনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কপালে হাত রাখলো তার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।এই ড্রাগনটা… এটা কি প্রিন্স?নাকি কিছু একটা ওর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে?

সে অসহায়ের মতো লিউ ঝানের দিকে তাকালো, যে তখনো মাটিতে পড়ে কষ্টে শ্বাস নিচ্ছে।এতসবের পরও,জ্যাসপারের রাগ এখনো কমেনি।তার চোখ দুটো সম্পূর্ণ আগুনের মতো জ্বলছে।
জ্যাসপারের ভেতরে তার বর্তমান জীবনের ড্রাগন প্রিন্স আর অতীতের প্রিন্স থেরনের শক্তি একসঙ্গে মিশে গেছে আজ। তার রাগ, হতাশা,আর প্রতিশোধস্পৃহা যেন সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
সে এক গর্জনে পুরো প্রাসাদ কাঁপিয়ে তুললো,তারপর একটা বিশাল সিংহাসন তুলে লিউ ঝানের দিকে ছুড়ে মারতে উদ্যত হলো।
“তুই আর এই জন্মে আমার থেকে ফিওনাকে নিতে পারবি না!
সিংহাসনটা ঠিক লিউ ঝানের দিকেই ধেয়ে আসছিল,কিন্তু ঠিক তখনই…
জ্যাসপারের পা হঠাৎ জমে গেলো!
সে টের পেলো তার শরীরের শক্তি যেন মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে গেছে।তার পা যেন কোনো অদৃশ্য শিকলে আটকে গেছে, হাতগুলোও শক্ত হয়ে আসছে,এমনকি ড্রাগনের আগুনটাও তার গলার ভেতরেই আটকে গেছে।
“এটা কী হচ্ছে?!” জ্যাসপার গর্জন করে উঠলো,কিন্তু তার শরীর আর নড়তে পারছে না।
ফিওনা অবাক হয়ে দেবতা আভ্রাহারের দিকে তাকালো। দেবতার চোখে এক অদ্ভুত শান্তি,কিন্তু ভেতরে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
“আমি বিশেষ এক ক্যামিকেল ব্যবহার করেছি,জ্যাসপার,” দেবতা শান্ত কণ্ঠে বললেন, “এটা কেবল কিছুক্ষণের জন্য তোমার শক্তি আটকে রাখবে।”
জ্যাসপার প্রচণ্ড জোরে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। তার পুরো শরীর যেন একটা শক্ত পাথরের মতো হয়ে গেছে।
“এই ক্যামিকেল দীর্ঘস্থায়ী নয়,” দেবতা আভ্রাহা গভীর স্বরে বললেন, “কিন্তু এই মুহূর্তে তোমাকে থামানো দরকার।”
ফিওনা তখন দ্রুত লিউ ঝানের কাছে ছুটে গেলো, তার আহত শরীরকে ধরে কাঁপা কণ্ঠে বললো, “আপনি ঠিক আছেন তো?”
লিউ ঝান কষ্টে শ্বাস নিয়ে বললো, “আমি ঠিক আছি ফিওনা।তোমার তো কপাল ফেটে গেছে।
জ্যাসপার তখনো রাগান্বিত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে,কিন্তু তার শরীর একচুলও নড়তে পারছে না।
জ্যাসপার বন্দী,রাগে উন্মত্ত,চিত্কার করে উঠলো
“আমাকে ছাড়ুন,দেবতা! আমি ইতিহাস মানি না! ও আমার হামিংবার্ড!ও শুধু আমার!লিউ ঝান ওকে নিয়ে যেতে পারে না!আমি কারো হতে দেবো না! আমাকে ছেড়ে দিন!”
দেবতা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন
“ফিওনা,আর দেরি কোরো না।ওকে নিয়ে চলে যাও,এখনই!”
ফিওনা কাঁপা কাঁপা হাতে লিউ ঝানকে ধরে উঠে দাঁড় করালো।লিউ ঝানের শরীর ক্লান্ত,ক্ষতবিক্ষত,তবু সে ফিওনার কাঁধে ভর দিয়ে চলতে লাগলো।
দেবতা সংযত স্বরে বললেন “লিউ ঝানের মধ্যে সম্পূর্ণ ড্রাগন শক্তি আসতে সময় লাগবে… কমপক্ষে দশদিন।”
ফিওনা দেবতার দিকে তাকালো, তার চোখে ছিলো ভয় আর দ্বিধা।
“দশদিন…” ফিসফিস করে বললো সে।

লিউ ঝানের শরীরের ওজন তার কাঁধে ভারী হয়ে পড়ছিল, কিন্তু সে শক্ত করে ধরে রইলো।
পেছন থেকে তখনও জ্যাসপারের রাগে ফেটে পড়া চিৎকার শোনা যাচ্ছিল—
“হামিংবার্ড! তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না! তুমি শুধু আমার!”
ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল।
জ্যাসপারের কণ্ঠে যে ব্যথা আর উন্মত্ততা, তা যেন তার হৃদয়ে একটা অদৃশ্য শেকলের মতো জড়িয়ে গেল।
“হামিংবার্ড, তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না!”
ফিওনার কাঁধে ভর দিয়ে লিউ ঝান হাঁটছে, তার শরীর কাঁপছে আঘাতের যন্ত্রণায়। কিন্তু ফিওনার মনে হলো, সেই কণ্ঠস্বর শুধু কানেই নয়, তার আত্মার গভীরেও গেঁথে গেছে।
সে ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে তাকালো।

জ্যাসপার সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে এক অন্ধকার খিদে, হাতগুলো শক্ত হয়ে আছে, যেন শেকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে এখনই। তার রাগ, তার ভালোবাসা, তার অধিকারবোধ—সব মিলিয়ে সে যেন এক দানবে পরিণত হয়েছে।
ফিওনার মনে পড়ে গেল তাদের মুহূর্তগুলো—জ্যাসপারের গভীর দৃষ্টি, তার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি, তার স্নেহপূর্ণ স্পর্শ। কিন্তু সেই স্মৃতির ফাঁক গলে ঢুকে পড়লো আজকের ভয়ানক দৃশ্য।
তার রক্তাক্ত কপাল, লিউ ঝানের বিধ্বস্ত শরীর, এবং জ্যাসপারের রাগের উন্মাদনা।
তার চোখে জল এলো।
সে কি ফিরবে? নাকি সামনে এগিয়ে যাবে?
তার হৃদয় ছিঁড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু সময় নেই।
সে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
“চলুন, মিস্টার লি ” ফিওনা শক্ত কণ্ঠে বললো।
জ্যাসপার চিৎকার করে উঠলো, “ফিওনা!!!”

ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করলো।বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো, কিন্তু সে একবারও পেছন ফিরে তাকালো না। দুচোখের কোণে জল জমে উঠলেও সে শক্ত হাতে লিউ ঝানকে ধরে সামনে এগিয়ে চললো
জ্যাসপার এক ঝটকায় বাঁধন টেনে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলো।”আমি ফিওনাকে ছাড়বো না!”
দেবতা তখন চোখ বন্ধ করলেন,তার চারপাশে একটা সোনালী আভা জ্বলতে শুরু করলো। মুহূর্তের মধ্যেই জ্যাসপার আরও শক্তভাবে আটকে গেল, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে শিকল পরিয়ে দিয়েছে।
ফিওনা আর দেরি করলো না।
সে লিউ ঝানকে ধরে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যেতে লাগলো।
পেছন থেকে ভেসে আসতে থাকলো জ্যাসপারের বিক্ষুব্ধ চিৎকার—
“ফিওনা!আমি তোমাকে কারো হতে দেবো না!তুমি শুধু আমার!”

জ্যাসপারের গর্জনে পুরো প্রাসাদ কেঁপে উঠলো
“দেবতা আভ্রাহার,আমাকে ছেড়ে দিন!আমি ইতিহাস মানি না!ফিওনা শুধু আমার!আমি তাকে অন্য কারো হতে দেবো না!”
তার গলার স্বর বিদ্যুতের মতো প্রতিধ্বনিত হলো পুরো প্রাসাদে। কিন্তু দেবতার বাঁধন শক্ত হয়ে থাকলো,আর ততক্ষণে ফিওনা আর লিউ ঝান বেরিয়ে গেছে।
ঠিক তখনই,যেন পুরো ভেনাস জ্যাসপারের ক্রোধ ও যন্ত্রণার প্রতিফলন দেখালো।
গভীর অন্ধকারে আকাশ বিদীর্ণ করে এক প্রবল ঝড় উঠে এলো,বিজলির চমক আর অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো। ঝড়ের তাণ্ডবে এল্ড্র রাজ্যের ড্রাকোনিস পাহাড় কেঁপে উঠলো।
ড্রাকোনিস আর বাকিরা সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, এমন অশুভ সংকেত আগে কখনো আসেনি।
অন্যদিকে, ফ্লোরাস রাজপ্রাসাদে রাজা জারেন,লিয়ারা ও সভাসদগণ বিস্মিত হয়ে বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলো।

“এটা কীভাবে সম্ভব?”—কেউ একজন ফিসফিস করে বললো।
আকাশ যেন ঘোষণা করছিল—আজকের রাত এক নতুন ভাগ্যের সূচনা।এক রাজপুত্রের হৃদয়ে জন্ম নিয়েছে এক ভয়ংকর তাণ্ডব,যার পরিণতি কারো জানা নেই…
দেবতা আভ্রাহার ধীরে ধীরে জ্যাসপারের কাছে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন। তার স্পর্শ ছিলো শান্তনার,কিন্তু তার কণ্ঠে ছিলো গভীর সতর্কবার্তা।
“জ্যাসপার,শান্ত হও।নিয়তি মেনে নাও।ফিওনাকে লিউ ঝানের হতে দাও,না হলে ইতিহাস বারবার ফিরে আসবে… আর কেউ না কেউ মৃ*ত্যুর শিকার হবে।”
জ্যাসপারের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠলো।তার আগুনঝরা চোখ রক্তিম হয়ে উঠলো,যেন তার ধৈর্যের শেষ সীমা পার হয়ে গেছে।
“দেবতা আভ্রাহার,”—তার কণ্ঠ ছিলো গর্জনের মতো—”আপনি যদি এই কথা আর একবার বলেন,তাহলে আমি ভুলে যাবো আপনি ভেনাসের রক্ষক।প্রথমেই আপনাকেই শেষ করবো!এই বাঁধন আর কতক্ষণ?কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমি মুক্ত হয়ে যাবো!”

তার শরীরে ক্রোধের শক্তি দপদপ করে উঠলো,ভেনাসের আকাশ যেন আরও গর্জন করতে লাগলো।
দেবতা তখন স্থিরভাবে এক পা পিছিয়ে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, কিন্তু তার চোখে ছিলো এক ভয়ংকর দৃঢ়তা।
“জ্যাসপার,তুমি ভুলে যাচ্ছো কার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছো!আমি ভেনাসের দেবতা।ভেনাসের সাম্রাজ্য আমিই রক্ষা করি!চোখ রাঙিয়ে কথা বলার আগে ভেবে দেখো, এই শক্তির আসল ক্ষমতা এখনো তুমি জানো না!”
দেবতার কণ্ঠ যেন বজ্রপাতের মতো প্রতিধ্বনিত হলো, চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠলো।জ্যাসপারের গলায় আটকে থাকা ক্রোধ তখনও মুক্তির জন্য গর্জন করছিলো… কিন্তু এক অনিবার্য যুদ্ধের ছায়া যেন আসন্ন হয়ে উঠছিলো।
জ্যাসপার তখন তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো,
তার চোখে ছিলো একধরনের বিদ্রূপ আর অবজ্ঞা।]
“দেবতা? রক্ষক? হাহ! আপনাকে তো যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে এই আসন পেতে হয়েছে।কিন্তু আমি?”
সে এক ধাপ সামনে এগিয়ে এলো,তার উপস্থিতি যেন পুরো প্রাসাদকে কাঁপিয়ে তুললো।
“আমি ভেনাসের প্রিন্স,জন্ম থেকেই এই আসনে অধিষ্ঠিত। আমার কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি,কারণ আমার র*ক্তেই যোগ্যতা রয়েছে!আগের জন্মেও আমি প্রিন্স ছিলাম,এই জন্মেও আমি প্রিন্স!আমার রাজত্ব আমার র*ক্তের মধ্যে বহমান।”

তার কণ্ঠে ছিলো একরোখা জেদ,তার দৃষ্টি ছিলো ধ্বংসের পিপাসায় জ্বলন্ত।
“আমি পুরো ভেনাস ধ্বং*স করে দেবো,এক ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করবো,আর আপনি?আপনি কিছুই করতে পারবেন না,দেবতা!এমনকি ভেনাসের রাজা,আমার পিতা ড্রাকোনিসও আমাকে আটকাতে পারবে না!কারণ আমার মধ্যে এখন দুটি শক্তিশালী সত্তা এক হয়ে গেছে—একটি বর্তমানের জ্যাসপার,আরেকটি অতীতের থেরন!”
তার চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠলো,চারদিকের আলো ম্লান হয়ে এলো,যেন অন্ধকার আর শক্তির এক নতুন যুগ শুরু হতে চলেছে।
দেবতা আভ্রাহার গভীরভাবে শ্বাস নিলেন,তার চোখে যেন হঠাৎ করে এক নতুন উপলব্ধি এলো।তিনি বুঝতে পারলেন—এটা তারই ভুল।তিনি আগেই অনুমান করতে পারতেন যে, জ্যাসপার কখনো জাইরনের পূনর্জন্ম হতে পারে না।
তিনি ধীরে ধীরে মাথা নিচু করলেন, ভ্রু কুঁচকে গেল।
“থেরন…” তার কণ্ঠে ছিল এক ক্লান্ত সুর,যেন তিনি শতাব্দীর বোঝা বহন করছেন।
“এই ছেলেটা… এই ছেলেটা তো কখনো বদলায়নি!আমি কি করে বুঝতে পারলাম না?জ্যাসপারের ব্যক্তিত্ব থেরনের মতোই একরোখা,জেদি,অহংকারী।সব কিছু নিজের করে নিতে চায়,কাউকে ভাগ দিতে রাজি নয়।আর জাইরন?সে ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। সংযত,স্নেহশীল ত্যাগস্বীকার করতে জানতো…” দেবতা গভীরভাবে একবার জ্যাসপারের রক্তিম চোখের দিকে তাকালেন।

জ্যাসপার এক ঝটকায় তার বাঁধন ছিন্ন করার চেষ্টা করলো,তার চারপাশে লালচে আগুনের স্রোত ঘূর্ণি তুললো।দেবতা আভ্রাহার তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন,কিন্তু এবার তার চোখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট।
“শুনে রাখুন!” জ্যাসপারের কণ্ঠে ছিল প্রবল গর্জন,তার কণ্ঠস্বর যেন পুরো ভেনাসের রাজ্যে প্রতিধ্বনিত হলো।
“আমি ইতিহাসের পাতা পুড়িয়ে ফেলবো,তার সাথে পুড়ে যাবে অতীতও!আমি আর কোনো থেরন নই,আমি জ্যাসপার, অরিজিন প্রিন্স অফ ভেনাস! এখানেই দাঁড়িয়ে আমি ঘোষণা করছি—আমার ভাগ্য আমি নিজেই লিখবো!নিয়তি এবার আমার কথায় চলবে!”
তার চোখের লাল আভা যেন আরও গাঢ় হলো,সিংহাসনের চারপাশে থাকা সব কিছু কেঁপে উঠলো,যেন তার শক্তির সামনে পুরো রাজপ্রাসাদই নতজানু হতে বাধ্য।
“ফিওনা এই জন্মে শুধু আমার!শুধুমাত্র জ্যাসপারের!সে থেরনের ছিল না,কিন্তু সে জ্যাসপারের আছে আর চিরকাল থাকবে!”

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১২

এক ঝাপটায় আকাশ কালো হয়ে এলো,বিদ্যুৎ চমকালো, আর ভেনাসের মাটি পর্যন্ত কেঁপে উঠলো।দেবতা আভ্রাহার বুঝতে পারলেন—আজকের পর থেকে ভেনাস আর আগের মতো থাকবে না।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৪