আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৭
সাবিলা সাবি
বেইজিং শহরের এক নিস্তব্ধ প্রান্তে ছোট্ট পাথরের ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার আর থারিনিয়াস। চারপাশে নগরীর ঝলমলে আলো, দূরে আকাশের দিকে মিশে যাওয়া পুরোনো স্থাপত্য আর ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারগুলো দুই বিপরীত জগতের সংঘর্ষে আলোকিত।নিস্তব্ধ রাতের নিঃসীমতায়, হালকা বাতাস বয়ে চলেছে, তাদের পোষাকের কোলাহলে হারিয়ে যাচ্ছে শহরের মৃদু কোলাহল।
জ্যাসপার ব্রিজের প্রান্তে দাঁড়িয়ে,দৃঢ়তার এক অবিচল চিত্র,চোখের দৃষ্টি সোজা নদীর ওপারে অদেখা লক্ষ্যবিন্দুর সন্ধানে মগ্ন। থারিনিয়াস এক পা পিছনে, তাঁর মুখে রহস্যের ছায়া। আজ সে এমন কিছু খবর এনেছে যা জ্যাসপারের জন্য এক দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, নতুন পরিকল্পনার দ্বার উন্মোচন।
জ্যাসপারের চোয়ালে দৃঢ়তা খবরটি তার হৃদয়ে অনির্বচনীয় তৃপ্তির অগ্নিশিখা জ্বালিয়েছে। এবার তার পরিকল্পনার প্রতিটি ছক কার্যকর হবে। থারিনিয়াসের কণ্ঠস্বরে গভীর গম্ভীরতা, সারা পৃথিবীর রহস্য সেই কথায় বাঁধা। সেই ছোট্ট ব্রিজে দাঁড়িয়ে, দুজন নিয়তির এক অমোঘ খেলায় পরস্পরের সঙ্গী, যে খেলা জ্যাসপারের হাতে সমস্ত পৃথিবী পাল্টে দিতে প্রস্তুত।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“প্রিন্স অরিজিন! লন্ডনের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড.আর্থার ব্লেক যিনি আগামীকাল মিস্টার ওয়াং লির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন। তারা দুজনে মিলে এথিরিয়নকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করতে যাচ্ছেন। আজ রাতেই মিস্টার ওয়াং লি লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন—এখন পর্যন্ত এটাই নিশ্চিত খবর।”
থারিনিয়াসের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে জ্যাসপার বলল, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাকে কী করতে হবে।তবে তুমি, আমি,আর আলবিরা—আমরা ওয়াং লির লন্ডন যাত্রার পূর্বেই ড.আর্থার ব্লেকের কাছে পৌঁছে যাবো।”
থারিনিয়াস মুখে বিষণ্ণ ভাব ফুটিয়ে বলল,“প্রিন্স,আমাদের পরিকল্পনাটি কী?”
জ্যাসপার তার উত্তরে রহস্যময় মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল, “এখনই সব জানতে হবে না, তবে গ্লাস হাউজে ফিরে গিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হবে। আর সেটাই হবে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ।”
এই বলে, গ্লাস হাউজের উদ্দেশ্যে হনহন করে রওনা দিলো জ্যাসপার,থারিনিয়াসকে সঙ্গে নিয়ে, অন্ধকারে হারিয়ে যেতে থাকা রাস্তার সেই গভীর দৃশ্যাবলী এক রহস্যময় অভিসারের সাক্ষী হয়ে রইল।
ফিওনা নীরবে গ্লাসের দেয়াল ভেদ করে গভীর রাতে বাইরে চাঁদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এখানে দাঁড়িয়ে চাঁদটাকে বিশাল রূপোলি থালার মতো লাগে, তার জ্যোৎস্নার শুভ্র আলো পাহাড় আর চারপাশের গাছপালায় মেলে ধরা। মৃদু আলোয় তার চুলগুলো সেই জ্যোৎস্নার আলোয় এক অদ্ভুত মায়াবী আভা ধারণ করেছে। ফিওনার মুখের অভিব্যক্তিতে এক ধরনের প্রশান্তি, এই দৃশ্য তার সমস্ত অস্থিরতাকে ভুলিয়ে দিতে সক্ষম।
কিন্তু হঠাৎ করে প্রকৃতি যেন প্রচণ্ড কোনো শক্তির দ্বারা প্রকম্পিত হলো। পুরো গ্লাস হাউজ ভূকম্পনের মতো দুবার প্রবলভাবে নড়ে উঠল। কিন্তু ফিওনার মুখে কোন আতঙ্কের ছাপ নেই। এখন আর এই কম্পনে সে চমকে ওঠে না, কারণ সে জানে যে এগুলো তাদেরই পদচারণার প্রভাব—বিশাল দেহধারী ড্রাগনদের ভারি পদক্ষেপে পাহাড় বারবার এইভাবে কেঁপে ওঠে, তাদের আভিজাত্য আর ক্ষমতা প্রকৃতির বুকেও গভীর রেখাপাত করে।
জ্যাসপার গ্লাস হাউজে প্রবেশের সাথে সাথেই সমস্ত ড্রাগনরা একত্রিত হলো গুরুতর আলোচনা সভায়। তার অভিজাত উপস্থিতি আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে উঠল।আলবিরা আর থারিনিয়াসসহ উপস্থিত সমস্ত ড্রাগনের চোখে অনিশ্চয়তার ছায়া।
“প্রিন্স,” আলবিরা অধীর আগ্রহে প্রশ্ন করল, “আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?”
জ্যাসপার কিছুক্ষণ নিস্তব্ধভাবে সামনে তাকিয়ে রইলো।তার চেহারায় এক অনমনীয় অভিব্যক্তি ফুটে উঠল, সে বহু কৌশল আর তীক্ষ্ণ চিন্তায় নিমগ্ন। “আজ রাতেই,” জ্যাসপার ধীর অথচ কঠিন স্বরে বললেন, “আমরা লন্ডনে প্রবেশ করব। ড.আর্থারের সাথে আমরা ওয়াং লির সাথে মিটিং এ বসবো যেখানে মিস্টার ওয়াং লি আর চেন শিং তাদের গোপন পরিকল্পনার ছক আঁকবেন।”
থারিনিয়াস কিছুটা দ্বিধায় প্রশ্ন তুলল, “তবে প্রিন্স,ডঃ আর্থার কি আমাদের সেই সুযোগ দেবেন? আমরাতো বিজ্ঞানী নই, আর যদি সন্দেহের বশে বুঝে যান যে আমরা সাধারণ কেউ নই, বরং ড্রাগন…?”
জ্যাসপার থারিনিয়াসের কথায় ক্ষণিকের জন্য স্থির থাকলো, তারপর তীক্ষ্ণ অথচ আস্থাময় এক হাসি তার ঠোঁটে ফুটে উঠল। “তাদের অনুমোদন নেওয়া আমাদের হাতে নেই; তবে তাদের চিন্তাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের ক্ষমতয় আছে ।একবার তাদের ব্রেইনে প্রবেশ করলেই, সব বাধা ভেসে যাবে আমাদের সামনে।”
আলবিরার চোখে ঝলসে উঠল সাহসের অগ্নি,আর সভার সমস্ত ড্রাগনের চোখে ফুটে উঠল এক অমোঘ সংকল্প।
আলবিরার প্রশ্ন থেমে যায়নি। গভীর অনিশ্চয়তায়,সে বলল, “কিন্তু কিভাবে, প্রিন্স? ডঃ আর্থারকে কি সত্যিই আমরা মুঠোর ভেতর এনে ফেলতে পারব?”
জ্যাসপার তার গভীর সবুজ দৃষ্টিতে স্থির হয়ে আলবিরার দিকে তাকালো, “আমার ড্রাগন শক্তির সাহায্যে তাকে হিপনোটাইজ করবো,” তার কণ্ঠে ছিল শীতল সংকল্প, সিদ্ধান্তের প্রতি সামান্যতম দ্বিধাও নেই।
তবে থারিনিয়াস অমনি সতর্কবার্তার সুরে প্রতিবাদ করে উঠল, “প্রিন্স, এ কাজের মধ্যে ঝুঁকি আছে। কিং ড্রাকোনিস নিজেই তো সাবধান করেছিলেন—পৃথিবীতে মাত্র দুবার আপনি এই কৌশল ব্যবহার করতে পারবেন, এর চেয়ে বেশি নয়। মাত্র একবারের ব্যবহারে আপনার শক্তির সীমা অতিক্রম হতে পারে। আপনি জানেন তো,প্রিন্স,এই ক্ষমতার তীব্র প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে; একবার ব্যবহারের পরও আপনি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়বেন। এমনকি, তার পরিণতি কী হতে পারে তা কিং ড্রাকোনিসও অনুমান করতে পারেননি।”
জ্যাসপারের মুখে উদাসীন এক মৃদু হাসি ফুটে উঠল।তার কণ্ঠ আরও দৃঢ়তর হলো, “থারিনিয়াস, আমি আমার ভাইকে মুক্ত করতে যে কোনো সীমা পার হতে পারি। ড্রাগনের সম্মান তো এটাই বলে—যে আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য আত্মদানে দ্বিধা করি না।ভুলে যেও না, আমরা ড্রাগন; আমাদের হৃদয় ওই হিউম্যানদের মতো সেলফিশ নয়”।
জ্যাসপার গভীর,শীতল গলায় বলল, “মন দিয়ে শোনো। আমি, আলবিরা, আর থারিনিয়াস আজ রাতেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। আমাদের অনুপস্থিতিতে হাউজের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি পথ তোমাদের পাহারায় থাকতে হবে। আর ওই মেয়েটি ফিওনা—তার প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখবে।যেনো কোনো অবস্থাতেই সে এই গ্লাস হাউজের সীমা পেরোতে না পারে।” তার মুখের অভিব্যক্তি ছিল কঠিন,তীক্ষ্ণ,এই আদেশে কোনো প্রশ্ন বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।
“আমাদের না ফেরা পর্যন্ত,” সে আরও দৃঢ়ভাবে বলে চলল, “তোমাদের কেউই এই আদেশ থেকে বিচ্যুত হবে না। এই হাউজ, এই পরিসর—এখানেই তার অবস্থান সীমাবদ্ধ থাকবে।”
“যথা আজ্ঞা, প্রিন্স,” মাথা নত করে সম্মান প্রদর্শন করে প্রত্যুত্তর দিলো এক ড্রাগন। তার চোখে ছিল কঠোর সংকল্প আর প্রতিশ্রুতির অটুট আভা। “আপনি নিশ্চিত থাকুন, আমাদের ওপর আপনার ভরসা অটল থাকবে।”
প্রত্যেকের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো এক অভিন্ন প্রতিজ্ঞা। পাহাড়ের এই নিবিড় অরণ্যে,চাঁদের ম্লান আলোয় সেই প্রতিজ্ঞা প্রতিধ্বনিত হয়ে গেল, প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে পড়ল ড্রাগনের অনন্ত আনুগত্য।
জ্যাসপার মাথা হেলিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করল, তার সবুজ দৃষ্টি প্রতিটি ড্রাগনের অন্তরে সঞ্চারিত হলো। হঠাৎ তার চেহারায় এক প্রশান্তির আভা ফুটে উঠল, সে জানে যে তার আদেশ এক মুহূর্তের জন্যও ভঙ্গ হবে না।
আলবিরা,জ্যাসপার,আর থারিনিয়াস তাদের প্রকৃত ড্রাগন রূপ ধারণ করল। এক এক করে পাহাড়ের উপত্যকা থেকে নেমে এসে তারা মাটি থেকে আকাশে উত্থিত হলো। তাদের ডানাগুলির ভীষণ বিস্তৃত আর শক্তিশালী ঝাপটায় চারপাশের গাছপালাও নড়ে উঠল।প্রত্যেকের দেহে সূক্ষ্ম আঁকাবাঁকা আঁচড়ে ভরা তাদের গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য,আর তারা এক এক করে আকাশের দিকে উঠে গেল।
আলবিরার বিশাল রুপালি ডানার ছটায় প্রতিফলিত হলো রাতের জ্যোৎস্না,জ্যাসপার, তার গাঢ় সবুজ রঙের দেহে সূক্ষ্ম সোনালি রশ্মির আভা ধারণ করে, অনির্বচনীয় শক্তির এক প্রতিচ্ছবি। আর থারিনিয়াস, ধূসর ছায়ায় ঘেরা তার দেহ, তার গা থেকে উদ্ভাসিত হচ্ছে এক অজেয় গাম্ভীর্য।
তিনটি বিশাল ড্রাগন একত্রে মহাসমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ছে, আকাশ নিজেই তাদের পথ তৈরি করে দিচ্ছে মহাসমুদ্রের অসীম জলরাশি তাদের প্রতিফলনে পূর্ণ, এই গন্তব্যই তাদের পরম লক্ষ্য—লন্ডন, যেখানে তাদের আগমনে ইতিহাস নতুন করে রচিত হবে।
ফিওনা নিঃশব্দে কিচেন থেকে বেরিয়ে লিভিং রুমের দিকে পা বাড়ালো। চারপাশের শূন্যতা তাকে আরও বেশি অস্থির করে তুলছে। সবকিছুই অস্বাভাবিকভাবে নিস্তব্ধ—প্রায় শূন্য এই বিশাল গ্লাস হাউজ অজানা আতঙ্কে মগ্ন। ফিওনার মনে কৌতূহল আর ভয় একসাথে ঢেউ তুলছে। প্রায় ছায়ার মতো নিস্তরঙ্গ পায়ে সে মূল দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। দরজা খোলার জন্য কৌশল ভাবছে—একটু একটু করে আশার আলো দেখছিল যে সে এবার এই জায়গা থেকে বের হতে পারবে।
ঠিক সেই মুহূর্তেই, পিছন থেকে অ্যাকুয়ারার গভীর আর নিস্তরঙ্গ কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “ফিওনা, এতো রাতে এখানে কী করছো?”
ফিওনা চমকে পিছন ফিরে তাকাল। অস্বস্তি আর লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে উত্তর দিল,“না, দেখছিলাম হাউজটা আজ অদ্ভুত নীরব। সবাই কোথাও চলে গেছে নাকি ।”
অ্যাকুয়ারা তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “প্রিন্স জ্যাসপার, আলবিরা, আর থারিনিয়াস বিশেষ মিশনে গিয়েছে। তবে বাকিরা হাউজেই আছে।”
কৌতূহল সামলাতে না পেরে ফিওনা বলল,“কিসের মিশন?”
“এথিরিয়নকে মুক্ত করতে,” অ্যাকুয়ারার উত্তর তার ভিতর থেকে কোনো অজানা তীব্র ভয়কে জাগিয়ে তুলল।
ফিওনার মনটা অজান্তেই ভারী হয়ে গেল। তারা কি এই বিপজ্জনক পথে গিয়ে তার গ্রান্ডপার কোনো ক্ষতি করে ফেলবে? গ্ৰান্ডপার জীবনের জন্য তার মন আকুল হয়ে উঠল, অনন্ত শূন্যতার দিকে তাকিয়ে সে প্রার্থনা করল, “প্লিজ, ঈশ্বর! আমার গ্ৰান্ডপাকে ওই ভয়ঙ্কর ড্রাগনের হাত থেকে রক্ষা করো।”
ফিওনার নিঃশব্দ প্রার্থনার শব্দ অন্ধকার আকাশের দিকে ভেসে যেতে লাগল।
গাড়ি থামতেই, একে একে গাড়ি থেকে নামলো জ্যাসপার, আলবিরা আর থারিনিয়াস। তারা অন্ধকার রাতের পরিপ্রেক্ষিতে এলিগ্যান্ট পোশাকে জ্বলজ্বল করছে, রাতের গাঢ়তায়ও তাদের অভিজাত রূপ প্রতিফলিত হচ্ছে।
জ্যাসপারের দেহে গভীর কালো রঙের স্লিম ফিট স্যুট, যার নিচে পরিপাটি সাদা শার্ট আর সম্মানের প্রতীক হিসেবে গাঢ় কালো টাই ঝুলছে, হাতে ধরে আছে কিছু ল্যাব নোট, তার গাম্ভীর্যের গৌরব আরও স্পষ্ট করছে।থারিনিয়াসের ধূসর স্যুটের উপর শোভিত বটল গ্রিন টাই তাকে গবেষণায় নিমগ্ন এক উচ্চকোটি বিজ্ঞানীর ছাপ দিয়েছে। হাতে ধরা গবেষণার নোটপ্যাড আর আলবিরা—ধূসর ব্লেজার আর কালো ট্রাউজারে, হালকা সাটিন শার্টের আভিজাত্যে চোখে ধারালো চশমা; তার দৃপ্ত ও চঞ্চল দৃষ্টি অসীম বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
ড.আর্থারের ভবনের সামনে অটল অবস্থানে রয়েছে নিরাপত্তার বলয়। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত গার্ড, সকল গার্ড অভিবাদন জানিয়ে সম্মান প্রকাশ করলেন জ্যাসপারকে।
কিন্তু ডঃ. আর্থারের অনুমতি ছাড়া ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ।
জ্যাসপার দৃঢ় কণ্ঠে, আভিজাত্যের পরতে মোড়ানোঅতুলনীয় সংলাপে বলল,
“মিস্টার আর্থারের কাছে জানিয়ে দিন, গ্রিসের বিখ্যাত সাইনন্টিস জ্যাসপার অরিজিন তাঁর সাথে দেখা করতে চান বিশেষ একটা কাজে।।”
গার্ডরা মুহূর্তেই সংবিৎ ফিরে পেল,আর নিরবধি শ্রদ্ধায় প্রণতি জানিয়ে এগিয়ে গেল ড. আর্থারকে সংবাদ দেওয়ার জন্য।
গার্ডরা অনুমতি নিয়ে ফিরে আসার পর, তাদের আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাহায্যে প্রবেশের আগে জ্যাসপার, থারিনিয়াস,আর আলবিরাকে নিবিড়ভাবে সার্চ করলো। গার্ডদের কার্যক্ষমতা আর প্রযুক্তিগত দক্ষতা দেখে জ্যাসপারের মনে কৌতূহল জন্ম নিল, যদিও তার উদ্দেশ্য ছিল আরও মহতী। মেইন দরজা অতিক্রম করে তারা অন্ধকার করিডোর পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
লিভিং রুমে প্রবেশ করে তাদের চোখে পড়ল এক অত্যন্ত মার্জিত চেহারার পুরুষ—ড.আর্থার ব্লেক।সোফায় বসে তিনি ছিলেন একটি গাঢ় বাদামী রঙের স্যুটে, যার উপরে সাদা শার্ট আর কাঁধে ছিল উষ্ণ কাশ্মীরি সোয়েটার।
জ্যাসপার তাঁর দিকে এগিয়ে গেলো। মৃদু হাসি দিয়ে ড. আর্থার হাত বাড়ালেন। “ওয়েলকাম মিস্টার জ্যাসপার। কাইন্ডলি বসুন আপনারা,” তিনি বললেন, তাঁর গম্ভীর কণ্ঠস্বর একদম নিখুঁত ছিল।
একসাথে বসে পড়ার পর,আলবিরা আর থারিনিয়াসের চোখে ছিল সূক্ষ্ম উদ্বেগ, কিন্তু জ্যাসপার তার দৃঢ়তা বজায় রেখে কথোপকথনের সূচনা করলেন।
“ড. আর্থার, আমি জানি আমাদের উপস্থিতি আপনার জন্য অপ্রত্যাশিত। কিন্তু আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে।”
ড. আর্থার বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাঁদের দিকে তাকালেন, যেন গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত। “কিন্তু আমি যতদূর জানি গ্রিসের এমন নামে কোনো সাইন্টিস নেই, আপনি বোধহয় নতুন কোনো সাইন্টিস আর অবশ্য এটাই হবে কারন ইউ আর লুকিং ইয়াং ম্যান।”
জ্যাসপার স্বচ্ছন্দে হাসলেন, “জী, মিস্টার, আমি নতুন বিজ্ঞানী, আর এরা আমার এসিস্ট্যান্ট, থারিনিয়াস আর আলবিরা।”
ড.আর্থার তাঁর গম্ভীর চোখে তাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। “তো বলুন, কী আলোচনার জন্য এসেছেন আর আপনাদের আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
জ্যাসপার তাঁর বক্তব্যে স্থিরতা আনার চেষ্টা করে বললো, “আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট তাই আপনি আমাকে তুমি করে বলুন সমস্যা নেই, তো আমরা আসলে অত্যন্ত বিশেষ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি। এটা আমাদের দুপক্ষের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানতে পেরেছি আপনি আর মিস্টার ওয়াং লি আর মিস্টার চেন শিং মিলে একটা ড্রাগনকে নিয়ে গবেষনা করছেন ।”
ড.আর্থার চোখ কুঁচকে গেল। “ড্রাগন? সে তো এক রহস্যময় বিষয়, তুমি কিভাবে জানলে?”
জ্যাসপার বিস্ময় আর বিরক্তির সংমিশ্রণে ভরা দৃষ্টিতে ড.আর্থারের দিকে তাকালো। “আমি কিভাবে জানলাম সেটা বড় কথা নয়, তবে এই পরিকল্পনায় আপনি আমাদেরকে সামিল করবেন। আপনার পরবর্তী মিটিংয়ে আমরা আপনার সাথে থাকবো।”
“অসম্ভব!” ড.আর্থার গর্জন করে উঠলেন। “আর তোমার কি যা তা বলছো? ড্রাগন কোথা থেকে আসবে? পৃথিবী থেকে তো ড্রাগন কবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে! কি সব বলছো? প্লিজ, ডোন্ট ওয়েস্ট মাই টাইম এন্ড প্লিজ, লিভ!!”
জ্যাসপার তাঁর স্থির দৃষ্টিতে ড.আর্থারকে লক্ষ্য করে বললেন, “মিস্টার ব্লেক, আপনার কি মনে হয় আমরা সঠিক তথ্য না পেয়েই এখানে চলে এসেছি, আপনি যেভাবে বিষয়টা অস্বীকার করছেন ,তা আপনার বিজ্ঞানের প্রতি অবিচল বিশ্বাসের অভাব নির্দেশ করে ড্রাগনরা বিলুপ্ত নয়; তারা এখনো বিদ্যমান, আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।”
“প্রমাণ?” ড.আর্থার তীব্র ভঙ্গিতে বললেন। “আমি বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য ছাড়া অন্য কিছু বুঝিনা। তোমার কথাগুলো কল্পনার ফসল, এসব মনগড়া বিষয়ে আমি কোনো টাইম ওয়েস্ট করতে চাচ্ছিনা।”
“আপনি যদি আমাদের কথায় রাজি হন” আলবিরা তাঁর কথা বলতে চেষ্টা করলেন,“তাহলে আমরা এই রহস্যের আসল চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারবো। আমাদের হাতে এমন তথ্য রয়েছে যা আপনার গবেষণাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে।”
ড. আর্থার মাথা নাড়লেন, তাঁর চোখে সংশয়। “আমার কাছে সময় নেই। আমি বিজ্ঞানী, আর আমি এমন কিছুতে জড়িয়ে পড়তে চাই না যা বাস্তবে প্রতিস্থাপিত হয়নি। তাই আপনারা আমার কাছে এসে সময় নষ্ট করবেন না।”
থারিনিয়াস ডঃ. আর্থারের দিকে তাকালো, কিছু বলার আগে গভীর শ্বাস নিলো। “আমাদের সম্পর্কে আপনি কি জানেন? আমরা আপনাকে এমন তথ্য দিতে পারি যা পৃথিবীর আর কোনো সাইন্টিস দিতে পারবে না।”
কিন্তু ড.আর্থার তাঁর ধৈর্য হারাতে বসেছিলেন। “আমি আপনাদের এই বিষয়টি নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাইনা এখন বিদায় নিন, আপনার গবেষণা অন্য কোথাও যেয়ে করুন।”
তাদের মধ্যে গম্ভীরতা নেমে এল,আর জ্যাসপার বুঝতে পারলো যে তাঁদের পরিকল্পনার জন্য নতুন কৌশল আবিষ্কার করতে হবে।
“ড.আর্থার,আমার দিকে তাকান,” জ্যাসপার স্থির কণ্ঠে বললো।
ড.আর্থার কিছুক্ষণ ধরে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে থাকলেন, কিন্তু হঠাৎই জ্যাসপারের সবুজ চোখের গভীরতায় এক অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে। সেই চোখ থেকে একটা মৃদু, কিন্তু প্রবল আলোর আভা বেরিয়ে এসে ড.আর্থারের মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ল।
ড.আর্থার প্রথমে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন, কিন্তু অদূরেই তাঁর দৃষ্টিতে এক ধরনের মায়াবী অবস্থা বিরাজ করতে শুরু করল।তাঁর চারপাশের পৃথিবীটা ম্লান হতে শুরু করেছে আর একমাত্র জ্যাসপারই তাঁর পুরো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ড.আর্থার এক অবিনশ্বর স্বপ্নের মধ্যে নিমজ্জিত হলেন। জ্যাসপারের চোখের আভা তাঁর মস্তিষ্কের গভীরে প্রবাহিত হয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনাকে মুছে ফেলতে শুরু করল। এক অদ্ভুত,মায়াবী জাদুর মধ্যে তিনি পড়ে গেলেন,যেখানে শুধুমাত্র জ্যাসপারের শব্দরাই তাঁর জন্য অর্থবহ হয়ে উঠছিল।
“আপনার কাছে যে তথ্য আছে, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” জ্যাসপার বললো ,তাঁর কণ্ঠস্বর দৃঢ়। “আপনি আমাদের পরিকল্পনায় সহায়তা করবেন।আমরা এথিরিয়ন ড্রাগনকে মুক্ত করতে চাই আর আপনি আমাদের এই কাজে সাহায্য করবেন।”
ড.আর্থার,যিনি এখন জ্যাসপারের বশবর্তী,শুধু তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করতে শুরু করলেন। “হ্যাঁ,আমি তোমাদের সহায়তা করব,” তিনি স্থিরতার সঙ্গে বললেন,যেন এটি তাঁর নিজস্ব ইচ্ছা।
“এখন আমাকে আপনার পরবর্তী মিটিংয়ের সময় আর স্থানের বিষয়ে বলুন,” জ্যাসপার জিজ্ঞেস করলো, তাঁর চোখের আলো এখনও ড.আর্থারের মস্তিষ্কে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ড. আর্থার কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন,
“পরবর্তী মিটিং আগামী সপ্তাহে, সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। আমি সেখানে মিস্টার ওয়াং লির সাথে দেখা করব।”
“প্রতিদিনের আপডেট আমাকে জানাবেন,” জ্যাসপার বললো। “এবার আপনি কি আপনার পার্টনার হিসেবে আমাদের নিতে প্রস্তুত ।”
ড.আর্থার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন,তাঁর মনে কোনো সংশয় ছিল না। তিনি জ্যাসপারের নির্দেশনা গ্রহণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন।
জ্যাসপার,আলবিরা আর থারিনিয়াস একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝলো যে তাঁরা প্রথম ধাপে সফল হয়েছে। এবার তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
ড. আর্থারকে হিপনোটাইজ করা ছিল তাঁদের প্ল্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ,আর এখন এই তথ্য তাঁদের কাজে লাগবে।
জ্যাসপার ড. আর্থারের কাছে একটি কার্ড দিয়ে বললেন, “এটি আমার ইমেইল। যোগাযোগের জন্য আপনি এটা ব্যবহার করবেন।”
ড.আর্থার,যিনি এখনও হিপনোটাইজড অবস্থায় ছিলেন, নিঃশব্দে কার্ডটি গ্রহণ করলেন,তাঁর চোখে কোনো ভাবনা ছিল না,শুধু একান্তভাবে জ্যাসপারের নির্দেশনা অনুসরণ করছিলেন।
কিছুক্ষণ পর,জ্যাসপার আলবিরা আর থারিনিয়াসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা গ্লাস হাউজে ফিরে যাও। আমার একটা বিশেষ কাজ আছে, যা আমাকে একা শেষ করতে হবে।”
“ঠিক আছে, প্রিন্স,” আলবিরা উত্তর দিল। তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগের ছোঁয়া ছিল,আপনি সাবধানে থাকবেন?”
জ্যাসপার মাথা নেড়ে বললো, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি সঠিক সময়ে ফিরে আসবো।”
থারিনিয়াস আলবিরার দিকে তাকিয়ে বললো, “আমরা এখনই চলে যাই। প্রিন্সের নির্দেশনায় আমাদের কাজ শেষ করতে হবে।”
থারনিয়াস আর আলবিরা একত্রে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো, যখন জ্যাসপার স্থির দাঁড়িয়ে রইলো।তাঁর মনোযোগ ছিল ভবিষ্যতের প্রতি, যা এখন সম্পূর্ণরূপে তাঁর হাতে। তাঁদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু সে জানতো যে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে সবকিছুই সম্ভব।
আলবিরা আর থারিনিয়াস গাড়িতে উঠে যাওয়ার পর, জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে রইলো সে এক দৃষ্টিতে সামনে তাকালো, তাঁর মনে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে,আর আস্তে আস্তে সেই পথ ধরে এগিয়ে গেলো,যা তাঁকে নতুন পরীক্ষার দিকে নিয়ে যাবে।
মিস্টার চেন শিং এখনো একটি নিঃসঙ্গ কক্ষে বন্দি।কক্ষটি অন্ধকারাচ্ছন্ন আর শীতল, অভ্যন্তরে থাকা কোনো আশার আলো প্রবেশ করতে পারে না। প্রতিদিন কয়েকজন গার্ড তাঁর কাছে খাবার রেখে যায়, কিন্তু তাঁদের মুখাবয়বে কোনো সহানুভূতি বা কথা থাকে না—তারা একদৃষ্টে খাবার রেখে চলে যায়।
অথচ, ওয়াং লি তার সাথে দেখা করতে আসেনি,দিন গড়িয়ে যাওয়ার পরও তাঁর কোনো পদচারণা নেই। চেন শিংয়ের মনে এক ধরনের উদ্বেগ আর অধৈর্যতা দেখা দিতে শুরু করেছে। তিনি জানেন, তাঁর বন্দিত্বের কারণ কেবল একটি—ড্রাগনের শক্তি আর তার সঙ্গে সম্পর্কিত গবেষণা। অথচ, এই মিসিং পিসটি তাঁর জীবনে এক অন্ধকারময় চিত্রের মতো রয়ে গেছে।
দুদিন আগে, যখন গার্ডরা খাবার নিয়ে আসে,চেন শিং তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “ওয়াং লি কোথায়? কেন সে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসছেন না ?” কিন্তু গার্ডরা উত্তর দিতে অস্বীকার করে, শুধুমাত্র চোখে চোখ রেখে চলে যায়।
চেন শিংয়ের মনের মধ্যে একটা পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। সে জানে,যদি তাকে মুক্তি পেতে হয়, তাহলে তাকে নিজেই কিছু করতে হবে। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও, তিনি তাঁর তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত—যেকোনো মূল্যে তিনি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।
গার্ডদের রুটিনের প্রতি নজর রেখেই, তিনি একটি সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।
গভীর রাতের নিঃশব্দতা হঠাৎ করে ভেঙে পড়ে,যখন আকাশে প্রতিধ্বনিত হয় একটি ভয়ংকর গর্জন।আলবিরা আর থারিনিয়াস অনেক আগেই হাউজে ফিরে এসে গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হয়েছে,কিন্তু ফিওনার চোখে ঘুমের পাতলা আবরণও নেই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে গ্লাসের দেওয়াল ভেদ করে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,তার মন কেবল অজানা চিন্তায় ভরে আছে।
হঠাৎ করে, নতুন করে একটি ভূমিকম্পের মতো কম্পন অনুভূত হয়। ফিওনার হৃদয় মুহূর্তের জন্য থমকে যায়, তবে সে চমকায় না। সে জানে, রাতে যখন ড্রাগনরা আসে বা যায়, তখন এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তাদের বিশাল দেহের ভার এই পাহাড়ের স্থলকে নাড়িয়ে দেয়।
ফিওনার মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—গ্ৰান্ডপা ঠিক আছে তো? নাকি বিপদের সম্মুখীন হয়েছে? এই দুশ্চিন্তাগুলি তার মনকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু সে ভাবে কেনো গ্ৰান্ডপা তার খোঁজ করছেন না? তাহলে কি জ্যাসপার তাকে এমন জায়গায় এনে রেখেছে যেখানের খোঁজ পৃথিবীর কেউই পাবেনা।
জ্যাসপার মাটিতে শক্ত গড়নে পা রাখতেই এক ঝটকায় তার বিশাল ড্রাগন রূপ পাল্টে মানব রূপে ফিরে আসে।তবে, সেই মুহূর্তে তার শরীরের অবস্থা ভালো ছিল না।পাহাড়ের চূড়ায় শুয়ে সে ধীরে ধীরে উঠার চেষ্টা করে, কিন্তু তার প্রতিটি সংকল্প শরীরের দুর্বলতার কাছে নতি স্বীকার করছে।
হিপনোটাইজ করার সময় তার শক্তির সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। শ্বাস নেওয়াটাও তার জন্য কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সে অনুভব করে, তার ফর্সা গায়ের রঙ ধীরে ধীরে সবুজে রূপান্তরিত হচ্ছে,তার ড্রাগন অভ্যন্তরের অসীম শক্তির প্রভাব প্রকাশ পাচ্ছে। গলায়, হাতের পায়ে, অস্থিরভাবে ড্রাগনের আঁশের মতো কাঁপুনি অনুভব করে। তার ঘাড়ের ট্যাটুটি সংকেত পাঠাচ্ছে, তাকে সতর্ক করছে। সে জানে,তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে আর সময়ের সাথে সাথে তা আরো খারাপ হতে পারে। তবে, সাহসের অভাব নেই। জ্যাসপার নিজেকে বললো, “আমি ড্রাগন প্রিন্স, আমি দুর্বল হতে পারিনা।কোনো রকম বাধা আমায় থামাতে পারবে না।”
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৬
এক হাতে পাহাড়ের জমিন ধরে সে নিজেকে টেনে তুলতে শুরু করে, তার মনযোগ কেন্দ্রীভূত করে আপাতত নিজের কক্ষের দিকে। ড্রাগনদের মধ্যে তার শক্তির অতিক্রম ঘটিয়েও সে এখনও তার মিশন সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত।
আকাশের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে, জ্যাসপার নিজের ভিতরে রাগ আর সংকল্পের আগুন জাগিয়ে তোলে— “আমি যেকোনো মুল্য আমার ভাইকে রক্ষা করবো, ড্রাকোনিসকে দেয়া কথা আমি রাখবো, পৃথিবীর কোনো দুর্বলতা আমাকে থামাতে পারবেনা”