আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২৭

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২৭
সাবিলা সাবি

আজ বহুদিন পর ফিওনা অরুণমণি প্রাসাদের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। বিকেলের রোদ গোধূলির রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো আকাশ জুড়ে। সূর্যের সোনালি আলো যখন ধীরে ধীরে লালচে হতে শুরু করেছে, তখন সে গভীর দৃষ্টিতে বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলো।
দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দৃষ্টি বুলিয়ে দেখলো, এই বিশাল প্রাসাদ ছাড়া চারপাশে আর কোনো অস্তিত্ব নেই। সবুজ বনভূমি আর রহস্যময় পাহাড়ের ঢালে এক নিঃসঙ্গ নীরবতা বিরাজ করছে। পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এই জায়গাটি শুধু জ্যাসপারের জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

ফিওনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। প্রকৃতি এত সুন্দর, এত বিশাল, অথচ সে ব*ন্দি।
একটা ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো, ফিওনার চুলগুলো উড়িয়ে দিলো হালকা। কিছুক্ষণ আগেও জ্যাসপারের রাগী চোখগুলো ওর সামনে ভেসে উঠছিলো, কিন্তু এখন এই প্রকৃতির মাঝে সে তার অস্তিত্ব ভুলে থাকতে চাচ্ছে।
ফিওনা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিল বারান্দার রেলিং ধরে। বিকেলের শেষ আলো গলে গলে হারিয়ে যাচ্ছে দিগন্তের ওপারে। গাঢ় সবুজ বনভূমির মাঝে অরুণমণি প্রাসাদ এক রহস্যময় দুর্গের মতো দাঁড়িয়ে আছে, যার বাইরের জগতে কোনো অস্তিত্ব নেই। এতদিন পর প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, এখানকার সবুজ পাহাড়, হালকা দুলতে থাকা গাছপালা, নীলচে আকাশ—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি তাকে ঘিরে রেখেছে।
হঠাৎই পেছন থেকে গভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, “প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছো?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফিওনা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো। জ্যাসপার বারান্দার দরজার ফ্রেমে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার সবুজ চোখে একধরনের অদ্ভুত ঝলক।
সে এক ধাপ এগিয়ে এলো, ঠোঁট বাঁকা হাসিতে বললো, “তাহলে কি প্রকৃতির ওপরই বেশি মুগ্ধ তুমি? আমার চেয়ে বেশি?”
ফিওনা কিছু বলার আগেই, জ্যাসপার আরও সামনে এসে দু’হাতে রেলিং ধরে ওর পাশেই দাঁড়ালো। তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, “তোমার চোখে আমি বর্তমানে আমার প্রতি এমন মুগ্ধতা দেখিনি। তবে সমস্যা নেই… আজ রাতেই তুমি আমাকে মুগ্ধ চোখে দেখবে।”
তার কণ্ঠে একধরনের প্রতিশ্রুতি, একধরনের শীতল আত্মবিশ্বাস। ফিওনার শিরদাঁড়া বেয়ে এক ধরনের শিহরণ নেমে এলো। রাত আসছে… কিন্তু সে কি জানে, এই রাত তাকে কোথায় নিয়ে যাবে?

সিলভা নিজের কক্ষে জানালার পাশে বসে ছিল। প্রাসাদের বাইরে সূর্যের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়েছে, তবে তার মন এখনো রাতের আঁধারে আটকে আছে। এথিরিয়ন তাকে ভোরবেলা প্রাসাদে পৌঁছে দিয়ে গেছে,রাজা জারেন তাকে প্রচণ্ড বকা দিয়েছেন, কিন্তু ওর মাথায় কেবল একটাই দৃশ্য ঘুরপাক খাচ্ছে—গত রাতের সেই মুহূর্ত।
জঙ্গলের সেই অভিশপ্ত পথ, চারপাশে গা ছমছমে নীরবতা, আর তারপর…
সিলভা নিজের ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ালো। সেখানে এখনো এথিরিয়নের স্পর্শ লেগে আছে।
“কীভাবে পারলি সিলভা তুই ?” নিজেকেই প্রশ্ন করলো সে।
এথিরিয়নের ঠোঁট ওর ঠোঁট ছুঁয়ে গিয়েছিল, ঝড়ের মতো, দাবানলের মতো। ওর চোখ তখন গাঢ় রাতের চেয়েও অন্ধকার ছিল, আর স্পর্শ… আগুনের মতো গরম।
সিলভা জানালার কাঁচে কপাল ঠেকিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো।
“তুমি ঠিক কি চাও, রিয়ন?”
সে জানে, এথিরিয়ন সহজে কিছুই করে না। সবকিছুর পেছনে ওর একটা উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু সেটা কি?
এই ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো। সিলভা চমকে তাকালো।

থারিনিয়াস, আলবিরার আর অ্যাকুয়ারার সঙ্গে একসাথে খেতে বসেছে এথিরিয়ন। খাবার সামনে থাকলেও তার মন অন্য কোথাও আটকে আছে। এক অদ্ভুত মুচকি হাসি ওর ঠোঁটের কোণে খেলা করছে, আর এটা কেউই অগোচরে রাখেনি।
“কি ব্যাপার, এথিরিয়ন? এত হাসির কারণ কী?” আলবিরা কটাক্ষের সুরে বললো।
“কিছু না,” মাথা নিচু করলো এথিরিয়ন, কিন্তু মুখের হাসিটা ধরে রাখতে পারলো না।
অ্যাকুয়ারা এক চিমটি দিয়ে বললো, “আচ্ছা, তুই কি প্রেমে ট্রেমে পড়েছিস?”
এথিরিয়ন এবার বিরক্ত হয়ে তাকালো। “ননসেন্স! আমি কেন প্রেমে পড়বো?”
কিন্তু আলবিরা, থারিনিয়াস আর অ্যাকুয়ারা সবাই মিলে ওকে খোঁচা দিতে থাকলো। এক পর্যায়ে এথিরিয়নের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। চেয়ার সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো, “তোমরা খুব বিরক্ত করছো!” বলে এক ধাক্কায় দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো।

নিজের কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করলো। কপাল ঘষলো দেওয়ালে, গভীরভাবে নিঃশ্বাস ফেললো। বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো।
সামনের আকাশটা পরিষ্কার, কিন্তু ওর মনের ভেতর এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
বারান্দার শীতল বাতাস শরীর ছুঁয়ে গেলেও এথিরিয়নের শরীরের ভেতর অন্য এক উত্তাপ খেলা করছিল। তার দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে দূরের গাঢ় অন্ধকারের দিকে, কিন্তু চোখের সামনে ভাসছে একটাই দৃশ্য—সিলভার মুখ, তার উষ্ণ নিঃশ্বাস, তার আঁকড়ে ধরা স্পর্শ।
গত রাতের সেই মুহূর্ত…
সিলভা তখন ওর বাহু ধরে অনুনয় করছিল, “আমাকে যেতে দাও, রিয়ন।”
কিন্তু এথিরিয়ন শর্ত রেখেছিল, “তুমি যদি আমাকে চুমু দাও, তাহলে আমি তোমাকে যেতে দেবো।”
সিলভা প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকিয়েছিল, কিন্তু যখন বুঝলো এথিরিয়ন মজা করছে না, তখন বিরক্তিতে চোখ সরিয়ে নিয়েছিল।

“তোমার এই বাজে শর্ত মেনে নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার!”
কিন্তু জঙ্গল গভীর, তারা দু’জনেই ক্লান্ত, আর এই অচেনা পরিবেশে সিলভার নিজেরও ভয় হচ্ছিল।
শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে, বিরক্তির সঙ্গে সিলভা ঠোঁট উঁচিয়ে বললো, “ঠিক আছে! কিন্তু সামান্য চুমু।”
এথিরিয়ন ভেবেছিল এটা একটা খেলার মতো হবে। হয়তো সিলভা কেবল ঠোঁট ছোঁয়াবে, কিন্তু ব্যাপারটা তেমন হয়নি।
সিলভা যখন ওর গালের কাছে এল, তখন এথিরিয়ন মনে করেছিল সময় থমকে গেছে। ওর নিঃশ্বাস গরম, ওর নীল চোখ দুটো স্পষ্টভাবে জ্বলজ্বল করছিল। কিন্তু চুমু দেওয়ার পরপরই সবকিছু বদলে গেলো।
এথিরিয়ন ওর কোমর আঁকড়ে ধরলো, ওর আঙুলগুলো সিলভার চুলের মাঝে ঢুকে গেলো, শক্ত করে চুলগুলো ধরে রাখলো।আর ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো,সিলভা প্রথমে চমকে উঠলেও এক পর্যায়ে সেও ওকে আঁকড়ে ধরলো।

আকস্মিকভাবে এথিরিয়ন অনুভব করলো সিলভার নখ ওর ঘাড়ে গভীর দাগ বসিয়ে দিয়েছে! ব্যথা লাগলেও সে সরে আসেনি, বরং আরও গভীরভাবে ওর ঠোঁটে চেপে ধরেছিল।
এটাই ওর জীবনের প্রথম চুম্বন!
এথিরিয়ন জানতো না একটা স্পর্শ এতটা বন্য হতে পারে, এতটা গাঢ় হতে পারে। তার মনে হচ্ছিল, ভেনাসের সব কিছু ভুলে গেছে সে।
তবে সেই মোহভঙ্গ হয়েছিল যখন আচমকা দূরে কোনো পশুর বিকট গর্জন শোনা গিয়েছিল।
সিলভা দ্রুত সরে গিয়েছিল, ওর ঠোঁট লালচে হয়ে উঠেছিল। হৃৎপিণ্ড ধকধক করছিল দু’জনেরই।
এথিরিয়ন সেরাতে কিছু বলেনি, সিলভাও না।
কিন্তু আজ, বারান্দার বাতাসে দাঁড়িয়ে এথিরিয়ন হাত তুলে নিজের ঘাড় ছুঁলো। সেখানে এখনো সিলভার নখের আঁচড়ের দাগ রয়ে গেছে।
মুচকি হাসলো ও, নিজের মধ্যে এক নতুন অস্থিরতা অনুভব করলো।
“তুমি আমাকে কি করে দিচ্ছো সিলভা।”

সন্ধ্যার আলো ম্লান হয়ে আসছিল, আকাশের নরম কমলা আভা জানালা গলে কক্ষের ভেতরে ছড়িয়ে পড়েছে। ফিওনা সোফায় শুয়ে অলস ভঙ্গিতে ইংরেজি নোবেলের বই পড়ছিল। আজকের দিনটা একটু বেশি শান্ত লাগছে, ঝামেলাহীন।
হঠাৎ…
ফিওনা এক অদ্ভুত অনুভূতি টের পেলো।মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ধীরে ধীরে চোখ তুলতেই দেখতে পেলো—জ্যাসপার ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ঠোঁটে সেই রহস্যময় হাসি।
ফিওনা হালকা উঠে বসলো। কিছু বলার আগেই জ্যাসপার ধীরে ধীরে নিজের গা থেকে কালো রঙের শার্ট খুলে ফেললো।
ফিওনার চোখ বড় হয়ে গেলো!
জ্যাসপারের শক্তপোক্ত বুক, প্রশস্ত কাঁধ আর সুঠাম হাতের উপর দিয়ে আঁকা অসংখ্য ট্যাটু… কিন্তু যা দেখে ফিওনার নিশ্বাস আটকে গেলো, তা হলো ট্যাটুগুলোতে লেখা শব্দগুলো।

“Fiona’s husband” — ওর বুকের বাম পাশে ঠিক হৃদয়ের উপর!
“Alison Fiona” — ওর কাঁধের ঠিক নিচে।
“Hummingbird” — ওর পাজরে।
আর সবথেকে বেশি আতঙ্কিত করলো ওকে—জ্যাসপারের ডান হাতে খোদাই করা নাম, “Fiona”। কিন্তু ট্যাটুটা যেন একদম নতুন, ওখান থেকে এখনো রক্ত ঝরছে!
ফিওনা চমকে উঠলো, গলার স্বর কাঁপলো, “আপনি… এটা করেছেন কেন?”
জ্যাসপার ঠান্ডা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “কারণ তুমি আমার, হামিংবার্ড। আমার শরীরের প্রতিটা অংশে তোমার অস্তিত্ব থাকবে। তুমি যদি আমাকে নিজের বলে মানতে না চাও, তাহলে অন্তত মহাবিশ্ব জানবে যে তুমি কেবল আমার।”
ফিওনার শরীর কেঁপে উঠলো। ও জানতো জ্যাসপার পাগলাটে, কিন্তু এতটা!
“আপনি একদম উন্মাদ!”
জ্যাসপার হেসে বললো, “তোমার জন্য উন্মাদ। কিন্তু চিন্তা করো না, খুব তাড়াতাড়ি তুমিও আমার জন্য পাগল হয়ে যাবে।”

সে এগিয়ে এলো, ফিওনার হাত ধরে ওর হাতে ট্যাটু করা নিজের নামটা দেখিয়ে বললো, “এখন এটা আর কেবল কালির দাগ না, এটা আমার প্রতিজ্ঞা… তুমি আমার, ফিওনা।”
ফিওনা কিছুটা অবাক হয়ে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওর চোখে একটা অদ্ভুত দৃষ্টি—গভীর, বুনো, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইঙ্গিত। ধীরে ধীরে জ্যাসপার ওর দিকে এগিয়ে এলো, হাতে এক অদ্ভুত মেশিন।
“এটা কী?” ফিওনা সতর্ক স্বরে বললো, ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেলো।
কিন্তু জ্যাসপার কোনো উত্তর দিলো না। বরং এক ঝটকায় ফিওনার হাত থেকে বইটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। বইটা মেঝেতে পড়ে গেলো, পৃষ্ঠাগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে গেলো বাতাসে।
“আমি ছাড়া অন্য কিছুতে এত মনোযোগ দিও না, হামিংবার্ড।”
ফিওনার বুক ধক করে উঠলো!

ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্যাসপার ওর ডান হাত ধরে টান দিলো। ফিওনা ছটফট করতে লাগলো, কিন্তু এক মুহূর্তের মধ্যে জ্যাসপার ওর এক হাত হ্যান্ডকাফ দিয়ে সোফার সাথে বেঁধে ফেললো!
“আপনি এটা কী করছেন,? আমাকে ছাড়ুন!” ফিওনা আতঙ্কিত গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।
জ্যাসপার কিন্তু হাসছিল। ওর চোখে ছিল একধরনের পৈশাচিক আনন্দ।
“তোমাকে আমার করে নিচ্ছি।”
ফিওনার আরেকটা হাত শক্ত করে চেপে ধরলো জ্যাসপার। তারপর সেই অদ্ভুত মেশিনটা চালু করলো। গরম একটা স্পর্শ ফিওনার ত্বকে লাগলো, আর সাথে সাথে একটা অসহ্য ব্যথা ছড়িয়ে পড়লো ওর স্নায়ুতে।
“আআআহ! না! প্লিজ, এটা করবেন না!” ফিওনা চিৎকার করে উঠলো, চোখে পানি এসে গেলো।
কিন্তু জ্যাসপার থামলো না।
ওর কব্জির কাছে কালো কালিতে আঁকা হয়ে গেলো—
“Prince’s Hummingbird”

ফিওনার শরীর কাঁপছিল, চোখ অশ্রুসজল। ওর হাত থেকে কিছুটা র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছিলো মেঝেতে।
জ্যাসপার তখন ওর মুখের সামনে এসে বললো, “তোমার চিৎকার করাটা বেশ উপভোগ্য, কিন্তু আমি তো এখনো শেষ করিনি, হামিংবার্ড।”
এরপর ওর হাত সরিয়ে ধীরে ধীরে ফিওনার শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো। ফিওনা আতঙ্কে আবার ছটফট করতে লাগলো, কিন্তু হাত বাঁধা থাকায় ও কিছুই করতে পারছিলো না।
“না… প্রিন্স ! প্লিজ, এবার থামুন!”
কিন্তু জ্যাসপার একটুও দয়া দেখালো না।
ও মেশিনটা আবার চালু করলো, আর ফিওনার নাভির ঠিক নিচে আঁকা হয়ে গেলো—
“Jasper’s Wife”

ফিওনার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। ব্যথায়, আতঙ্কে, আর সেই নামের অগ্নি অক্ষরে বাঁধা পড়ার অনুভূতিতে!
জ্যাসপার গভীর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“এখন তুমি যেখানেই যাও না কেনো, সবার জানা থাকবে তুমি শুধু আমার।”
ফিওনার শরীর জমে গেলো। জ্যাসপার ওর মুখের সামনে ঝুঁকে এলো, ঠোঁটের ওপর শক্তভাবে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মতো গভীর আর বন্য সেই চুমু—ফিওনা ছটফট করতে লাগলো, কিন্তু জ্যাসপারের হাত ওর শরীর আঁকড়ে ধরলো আরও শক্ত করে।
ওর গরম হাত ধীরে ধীরে ফিওনার শরীর বেয়ে নামছিলো, প্রতিটি ইঞ্চি ছুঁয়ে নিজের করে নিচ্ছে। ফিওনার হৃদস্পন্দন থেমে আসছিলো আতঙ্ক আর কিছু অজানা অনুভূতির মিশ্রণে।
হঠাৎ করেই জ্যাসপার থেমে গেলো।
ওর কপাল ফিওনার কপালে ঠেকিয়ে গভীর গলায় বললো, “আজকের রাতের জন্য এনার্জি বাঁচিয়ে রাখো, হামিংবার্ড। এখন কিছু করবো না… যা করার, সেটা রাতেই হবে।”
ফিওনার শ্বাস ধীর, অস্থির। ওর চোখ বিস্ফারিত, ঠোঁট কাঁপছে, আর পুরো শরীর কাঁপছে জ্যাসপারের সেই কথা শুনে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে একপাশে সরে গেলো। মুখে সেই রহস্যময় ঠান্ডা হাসি, যা ফিওনার র*ক্ত জমিয়ে দিচ্ছিলো!

ফিওনা সন্ধ্যায় একবার ঘুমিয়ে পড়েছিল, কিন্তু হালকা ঝাপসা স্বপ্নের ভেতরেও যেন একটা অস্থিরতা কাজ করছিলো। হঠাৎ মাঝরাতে, ঠিক ১১:৩০টায়, ওর ঘুম ভেঙে গেলো। নরম আলো কক্ষের পর্দা ভেদ করে পড়ছিলো, বাইরে রাতের নীরবতা ছেয়ে আছে।
ও ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো, গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হলো। কিছু না ভেবেই পা টেনে টেনে ডাইনিং টেবিলের কক্ষে গেলো, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে ওর শ্বাস এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো।
পুরো কক্ষ সাজানো!

বেলুনের হালকা দুলুনি, মোমবাতির উজ্জ্বল শিখা, ফেয়ারি লাইটের মৃদু আলোয় স্বপ্নের মতো লাগছিলো। সারা ডাইনিং রুম জুড়ে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো, মিষ্টি সুবাস ভাসছে বাতাসে। আর ডাইনিং টেবিল? সেটাও পরীর রাজ্যের মতো সাজানো—সেখানে মোমবাতি, সুগন্ধী গোলাপ আর ঝলমলে সাজসজ্জা ছড়িয়ে আছে।
ফিওনা চমকে এক পা সামনে বাড়িয়েছিল, তখনই ওর কানের কাছে একটা গরম শ্বাসের অনুভূতি হলো।
একটা ঠান্ডা, গভীর ফিসফিস কানে এলো, “হামিংবার্ড…”
ফিওনা মুহূর্তেই সারা শরীর শিউরে ঘুরে দাঁড়ালো।
জ্যাসপার ঠিক ওর পাশে দাঁড়িয়ে, ঠোঁটের কোণে সেই রহস্যময় হাসি, হাতে একটা সুন্দর কেক ধরে আছে। মোমবাতির আলোতে ওর চোখ আরও গভীর আর ধোঁয়াটে দেখাচ্ছে।
ফিওনার বিস্ময়ে বড় বড় চোখের দিকে তাকিয়ে জ্যাসপার ধীরে ধীরে বললো, “সারপ্রাইজ।”
জ্যাসপার কেকটা ডাইনিং টেবিলের মাঝখানে রাখলো, চকলেট কেকের কালো রঙ মোমবাতির আলোয় আরও গাঢ় আর রহস্যময় দেখাচ্ছিলো। কেকের ওপরে চকচকে সাদা আইসিংয়ে লেখা—

“Happy Birthday to Me.”
আর তার ঠিক ওপরে জ্বলছিলো দুইটা সাদা রঙের সংখ্যার মোম— 99।
ফিওনা কেকের দিকে তাকিয়ে প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি, তারপর ধীরে ধীরে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো, “আজকে আপনার জন্মদিন?”
জ্যাসপার কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু গভীর দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকালো, ঠোঁটের কোণে সেই পরিচিত রহস্যময় হাসি।
ফিওনা আবার তাকালো কেকের দিকে, এবার মনোযোগ গেল সংখ্যার দিকে। “কিন্তু… 99 কেনো? আপনার কি ৯৯ বছর বয়স?”
এই কথা শুনে জ্যাসপার হেসে ফেললো। ওর সেই অন্ধকার, তবু মোহনীয় হাসি দেখে ফিওনার মনে হলো,ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি কিছু।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে বললো, “না, এটা আসলে আমাদের দুজনের বয়সের সংখ্যা। একটা আমার বয়সের শেষ ডিজিট, আরেকটা তোমার।

আমার 29-এর 9, আর তোমার 19-এর 9।”
ফিওনা হতভম্ব হয়ে গেলো। এক মুহূর্ত চুপ থেকে কেকের দিকে তাকিয়ে ভাবলো, “এই ড্রাগন প্রিন্সের মাথায় এত আজব আইডিয়া আসে কোথা থেকে?”
ওর বিস্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে জ্যাসপার আবার হাসলো।

১২:০০ AM
জ্যাসপার ধীরে ধীরে কেকের মোমবাতিগুলো ফু দিয়ে নিভিয়ে দিলো। কক্ষভর্তি মোমের আলো এক মুহূর্তের জন্য কেঁপে উঠলো, তারপর আবার নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
ফিওনা কিছুটা ভদ্রতার খাতিরে হাসিমুখে বললো, “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ”
জ্যাসপার ওর দিকে তাকালো, ঠোঁটের কোণে সেই রহস্যময় বাঁকা হাসি। তারপর ফিওনার হাত ধরে কেক কাটলো। প্রথম টুকরাটা তুলে এনে ফিওনার মুখের সামনে ধরলো।
“তুমি প্রথমে খাবে,” গভীর গলায় বললো জ্যাসপার।
ফিওনা একটু দ্বিধা করলো, কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কেকের ছোট্ট টুকরাটা মুখে নিলো। জ্যাসপার সন্তুষ্টির হাসি দিলো, তারপর আরেকটা টুকরা কেটে ফিওনার সামনে ধরলো।
“এবার আমাকেও খাওয়াও,” ফিওনা ভদ্রতার খাতিরেই বললো, কেকটা তুলে নিয়ে জ্যাসপারের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

কিন্তু জ্যাসপার নিলো না।
শুধু বাঁকা হাসলো, সেই হাসি এক অদ্ভুত খেলা খেলার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ফিওনা অবাক হয়ে গেলো। “এটা কী হলো?”
জ্যাসপার ওর দিকে তাকিয়ে ধীরস্থির কণ্ঠে বললো, “আমার গিফট কোথায়, হামিংবার্ড?”
ফিওনা চোখ কপালে তুললো। “গিফট?”
জ্যাসপার মাথা সামান্য কাত করলো,মনে হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকাটা ফিওনার এক মহা অন্যায়।
ফিওনা একটু বিব্রত হয়ে বললো, “আমি তো জানতামই না আপনার জন্মদিন। আগে জানলে নিজেই একটা কেক বানাতাম।”
জ্যাসপার তখন হাসলো, সেই রহস্যময়, অদ্ভুত হাসি। একধরনের হালকা ঠাট্টার ছাপ ওর চোখে।
“উহু, এতো সামান্য কিছুতে চলবে না। আমি খুব দামি উপহার চাই। এমন কিছু, যেটা তুমি ছাড়া আর কেউ দিতে পারবে না।”
ফিওনা এবার পুরোপুরি থমকে গেলো। “মানে?”
জ্যাসপার কোনো উত্তর দিলো না।
পরিবেশটা হঠাৎ করেই গা ছমছমে হয়ে গেলো।
ধীরে ধীরে, জ্যাসপার কেক কাটার ছুরিটা তুলে নিলো।
ফিওনার কপালের ওপর ছুরির ধারালো অংশটা রাখলো, তারপর সেটাকে নামিয়ে আনলো ঠোঁটের কোণের কাছে।
ফিওনা শ্বাস আটকে গেলো।

জ্যাসপার তখন আরও নিচে নামালো ছুরিটা, এবার সেটা ওর গলায় ঠেসে ধরলো—ঠিক কণ্ঠনালীর ওপর।
“বুঝতে পারছো, আমি কী চাই?”—কণ্ঠে নিস্তরঙ্গ ভয়াবহতা।
ফিওনার শরীর কাঁপতে লাগলো। কণ্ঠ শুকিয়ে এলো, কিছুই বুঝতে পারছিলো না।
জ্যাসপার তখন আরও সামনে ঝুঁকে এলো, ফিসফিস করে বললো—
“আমার জন্মদিনে আজকের রাতটাকে… চিরস্মরণীয় করে দাও, হামিংবার্ড।”

জ্যাসপার ফিওনার কোমড় ধরে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো তারপর ফিওনার দুই পায়ের মাঝখানে দাঁড়ালো।
জ্যাসপার ওর সামনে দাঁড়িয়ে গভীর চোখে ফিওনার দিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু যখন ফিওনা হঠাৎ করে পাশে থাকা কেকের বক্সের কালো ফিতাটা তুলে নিলো, তখন সে একটু চমকে গেলো।
ফিওনা ধীরস্থিরভাবে ফিতাটা নিজের চোখের চারপাশে পেঁচিয়ে নিলো, শক্ত করে বাঁধলো।
জ্যাসপার ভ্রু কুঁচকালো। “এটা তুমি কী করছো, হামিংবার্ড? চোখ বাঁধছো কেন?”
ফিওনার কণ্ঠ নরম কিন্তু দৃঢ় ছিলো। “আমি জানি আপনি কী করতে চলেছেন। তবে আমি আর আপনার চোখের দিকে তাকাবো না, কারণ আপনি আবার আমাকে ম্যানিপুলেট করবেন।”
সে এক মুহূর্ত থামলো, তারপর নিঃশ্বাস ফেললো।
“আমি এবার আর আপনার কাছে নিজেকে ধরা দেবো না। এরপরও যদি কিছু করেন, সেটা আমার কাছে…” সে গলা কাঁপিয়ে বললো, “ধর্ষ*ণের মতোই মনে হবে।”

জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো। তারপর তার ঠোঁটে সেই পরিচিত বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো।
সে ফিওনার হাত স্পর্শ করলো, ধীরে ধীরে ওর আঙুলগুলো নিজের আঙুলের মাঝে জড়িয়ে নিলো।
“হাহ…” জ্যাসপার হালকা হেসে বললো, ” ইউ আর সো ফানি গার্ল,vহামিংবার্ড।”
সে সামনের দিকে ঝুঁকলো, ফিওনার ঠোঁটের এত কাছাকাছি যে তার গরম শ্বাস স্পষ্ট অনুভূত হচ্ছিলো।
“তুমি সত্যিই মনে করো আমি তোমাকে জোর করবো?”
ফিওনা চুপ রইলো।
“আমি যা চাই, সেটা আমি এমনিতেই পাই,” ফিসফিস করে বললো সে। “তুমি চাইলে নিজেকে যতবার বাঁধো, শেষমেশ তোমার মনের বাঁধনই কেটে যাবে।”
জ্যাসপার ফিওনার চোখ বাঁধা অবস্থাতেই একপাশে সরে গেলো। তার ঠোঁটে রহস্যময় হাসি খেলা করছিলো।
“ইন্টারেস্টিং গেম, হামিংবার্ড। তবে আমারও একটা শর্ত আছে।”
ফিওনা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলো।

“তুমি চোখ বাঁধাই রাখবে,” জ্যাসপার বললো, “তবে… ওয়েট।”
সে দ্রুত কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো, ফিওনা শ্বাস আটকে শুনতে থাকলো তার পায়ের শব্দ দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পরে আবার সেই পরিচিত শক্তিশালী উপস্থিতি ফিরে এলো।
ফিওনা শুনতে পেলো কিছু ধাতব আওয়াজ, কোনো যন্ত্র চালু করা হচ্ছে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে বললো, “এই ডিভাইসটা আমার ল্যাবের একটা স্পেশাল জিনিস। এটা তোমার হার্টবিট মাপবে, কিন্তু শুধু তাই নয়।”
তারপর সে একটা সরু ধাতব বেল্ট ফিওনার কবজিতে লাগিয়ে দিলো। সেটা নরম, কিন্তু তার ভেতর দিয়ে ক্ষীণ একটা স্পন্দন বইছিলো,মনে হলো কোনো তরঙ্গ ওর ত্বকের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করছে।
“এই ডিভাইসের নাম ‘Aural Pulse Scanner’,” জ্যাসপার বললো। “এটা শুধু হার্টবিট মাপে না, এটা হার্টের ইলেকট্রিকাল সিগন্যালও রেকর্ড করে, স্নায়ুতন্ত্রের রেসপন্স বিশ্লেষণ করে। তোমার শরীরের প্রতিটা প্রতিক্রিয়া আমি শুনতে পাবো।”

ডিভাইসটা চালু হতেই একটা নরম, ধাতবিক শব্দ বাতাসে প্রতিধ্বনিত হলো—থাম্প… থাম্প… থাম্প…
ফিওনার স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের শব্দ পুরো কক্ষে ভাসতে লাগলো।
“শুনতে পাচ্ছো?” জ্যাসপার ফিসফিস করলো। “তোমার নিজের হার্টবিট?”
ফিওনা শ্বাস আটকে গেলো।
“এবার শোনো শর্তটা।”
জ্যাসপার ফিওনার সামনে এসে দাঁড়ালো।
“তোমার চোখ বাঁধা থাকবে, আমি শুধু হালকা স্পর্শ করবো তোমাকে ।”
তার গলার স্বর আরও গভীর হলো।
“যদি তোমার হার্টবিট স্বাভাবিক থাকে, তাহলে আমি আজ আর তোমাকে স্পর্শ করবো না। কিন্তু…”
সে এক মুহূর্ত থামলো, অপেক্ষা করছে ফিওনার প্রতিক্রিয়ার জন্য।
“যদি হার্টবিট বেড়ে যায়, যদি সেটা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি হয়ে যায়…”
তারপর ফিওনার গাল ছুঁয়ে দিলো, ঠিক তখনই স্ক্যানার থেকে একটা দ্রুত ‘বিপ বিপ’ শব্দ এলো।
জ্যাসপার মুচকি হাসলো।

“…তাহলে তুমি নিজে নিজের হাতে চোখের বাঁধন খুলবে, আর আমার চোখের দিকে তাকাবে।”
জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো। “তুমি পারবে তো? নাকি আমি এখনই জয়ী?”
ফিওনা গভীর শ্বাস নিলো।
“যদি চোখ খোলার প্রশ্নই না ওঠে, তাহলে ভয় পাওয়ার কী আছে?” সে মনে মনে নিজেকে বোঝালো। তাই সে ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে রাজি হয়ে গেলো।
জ্যাসপার মৃদু হাসলো।
“ভালো, খুব ভালো। তাহলে শুরু করা যাক।”
তারপর সে ধীরে ধীরে ফিওনার হাতের ওপর নিজের আঙুল রাখলো। প্রথম স্পর্শটা এত হালকা ছিল যে ফিওনা বুঝতেই পারেনি। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার আঙুল সরতে সরতে কনুই পেরিয়ে কাঁধ পর্যন্ত উঠে এলো।
ফিওনা শ্বাস আটকে রাখলো।
থাম্প… থাম্প… থাম্প…
ডিভাইস থেকে ভেসে আসা শব্দ নিস্তব্ধ ঘরটাকে আরও রহস্যময় করে তুললো।
তারপর জ্যাসপার আরও একটু এগিয়ে এলো।
ফিওনার গালের কাছে এসে থামলো সে, একেবারে এত কাছে যে তার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা স্পষ্ট অনুভব করা যাচ্ছিল।
আর তখনই—

বিপ! বিপ! বিপ!
ডিভাইস থেকে হঠাৎ একপ্রকার বিকট শব্দ বেরিয়ে এলো! স্ক্যানারের স্ক্রিনে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে লাগলো— 120… 130… 140…
জ্যাসপার চমৎকার করে হাসলো, তার চোখ চকচক করছিলো।
“ওহ, হামিংবার্ড…” তার কণ্ঠ গভীর হয়ে উঠলো। “এত তাড়াতাড়ি?”
ফিওনা হতভম্ব হয়ে গেলো। এই শব্দ, এই সংখ্যা… সে এত দ্রুত কেন এতটা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে?
তার দৃষ্টি স্ক্রিনের দিকে গেলো, যদিও চোখ বাঁধা ছিল, তবুও সেই উত্তেজনাপূর্ণ শব্দ তার মস্তিষ্কে রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি করছিল।
আর তখনই, সে ধীরে ধীরে নিজের হাত বাড়িয়ে চোখের বাঁধন খুললো।
আলোয় প্রথম ঝাপসা লাগলো, তারপর…
স্ক্রিনের সংখ্যা জ্বলজ্বল করছিলো—148 BPM!

আর তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো জ্যাসপার, ঠোঁটে এক রহস্যময় বিজয়ী হাসি নিয়ে…
জ্যাসপার তখন আবার ও মৃদু স্বরে বললো “আই কান্ট ওয়েট এনিমোর! আমি এখন ও কেকে খাইনি…. এটা বলেই জ্যাসপার কেকের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে কিছুটা কেক তুলে ফিওনার গালে মাখিয়ে দিলো।
ফিওনা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।
“প্রিন্স!” সে রাগে চোখ বড় বড় করে ফেললো, গালে মাখানো কেকটা হাত দিয়ে মুছতে গেলো, কিন্তু তার আগেই জ্যাসপার তার কব্জিটা ধরে ফেললো।
“নো, হামিংবার্ড। এটা তো আমার কেক, আমারই খাওয়া উচিত।”
এটা বলেই সে আস্তে আস্তে ফিওনার গালের ওপর থেকে কেক লেহন করতে লাগলো। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস ফিওনার ত্বকের ওপর স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছিল।
ফিওনার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো, সে অস্বস্তিতে সরে যেতে চাইল, কিন্তু জ্যাসপার তার কোমর ধরে শক্ত করে আটকে রাখলো।

“তুমি এত রেড হয়ে যাচ্ছো কেন?” জ্যাসপার হেসে বললো, চোখে দুষ্টুমি খেলে গেলো।
“থামুন!”
কিন্তু সে তো থামার জন্য আসেনি।
ফিওনা পালানোর চেষ্টা করতেই জ্যাসপার ওকে হেঁচকা টানে নিজের কাছে টেনে নিলো। তারপর শক্ত হাতে তাকে আবারও ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো।
“তুমি বললেই আমি থেমে যাবো, এমনটা কি কখনো হয়েছে, হামিংবার্ড?”
তারপর সে ফিওনার হাত দুটো ধরে, আঙুলের মাঝে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে চেপে ধরলো, ফিওনার শরীর পুরোপুরি টেবিলের ওপর শুইয়ে দিলো।
ফিওনার হৃদস্পন্দন এত দ্রুত হচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল, হার্টবিট মনিটর থাকলে সেটার অ্যালার্মই বেজে উঠতো।
জ্যাসপার তার মুখটা নামিয়ে আনলো ফিওনার খুব কাছে, তাদের মাঝে মাত্র কয়েক ইঞ্চির দূরত্ব।
“তুমি কি জানো, হামিংবার্ড,” সে আস্তে বললো, তার কণ্ঠে একধরনের গভীরতা, “কেক শুধু মুখ দিয়েই খাওয়া যায় না… অনেকভাবে উপভোগ করা যায়।”

তার ঠোঁটে রহস্যময় হাসি, আর ফিওনা জানতো— সে এই খেলায় আটকা পড়ে গেছে…
জ্যাসপার পুনরায় কেকের ক্রিম মাখিয়ে দিলো ফিওনার ঠোঁটে।
ফিওনার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। ঠোঁটে মাখানো কেকের স্বাদ মিলিয়ে গেল জ্যাসপার ঠোঁটের উষ্ণতায়। সে পালানোর চেষ্টা করলেও জ্যাসপারের শক্ত হাত তাকে আটকে রাখলো।
“তোমার লিপস্ এতো সফ্ট কেনো ?” জ্যাসপার গভীর গলায় বললো,মনে হলো কেকের থেকে ফিওনার স্বাদই বেশি উপভোগ করছে।
ফিওনার শ্বাস ভারী হয়ে উঠলো। “প্রিন্স , এটা ঠিক না…”
“কী ঠিক না?” জ্যাসপার হেসে ফিসফিস করলো, “তোমার প্রতি আমার অধিকার দেখানো? নাকি তোমার শরীর আমার ছোঁয়ায় কেঁপে উঠছে, সেটা?”
সে এবার ফিওনার গলার নিচে, কলারবোন বরাবর কেক মাখিয়ে দিলো, তারপর ধীরগতিতে সেটাও খেতে লাগলো। তার হাত ধীরে ধীরে ফিওনার উরু বেয়ে ওপরে উঠছিল, শক্তভাবে তার থাই চেপে ধরলো।
ফিওনা ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু জ্যাসপার হালকা হেসে বললো, “এত অস্থির হচ্ছো কেন, হামিংবার্ড? আমি তো এখনও আসল মজা শুরুই করিনি।”
তার চোখের দুষ্টুমি, ঠোঁটের খেলা, আর হাতের দখলদারি ফিওনাকে পুরোপুরি কাঁপিয়ে দিলো। সে বুঝতে পারলো, জ্যাসপার যা শুরু করেছে, সেটা থামানোর ক্ষমতা তার নেই…
ফিওনা কাঁপতে কাঁপতে জ্যাসপারের দিকে তাকাল। তার নিঃশ্বাস অস্থির, শরীর জ্বলে উঠছে কেকের মিষ্টি ঘ্রাণ আর জ্যাসপারের উষ্ণ ছোঁয়ায়।

“তোমাকে ওপর রোমান্সের ট্রিক্স এপ্লাই করতে আমার বেশ আনন্দ লাগে, হামিংবার্ড,” জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো, তার আঙুলে আরো কেক তুলে ফিওনার গলা বেয়ে ঘাড় পর্যন্ত বুলিয়ে দিলো।
তারপর ধীরে ধীরে সে নিচে নামলো, ঠোঁট ছোঁয়ালো ফিওনার গলায়। প্রথমে একটুখানি স্পর্শ, তারপর গভীর… কেকের মিষ্টি স্বাদ মিশে গেল জ্যাসপারের স্পর্শের উষ্ণতায়।
ফিওনা শ্বাস আটকে ফেললো। “জ্যাসপার, থামুন…” তার কণ্ঠ কেঁপে উঠলো, কিন্তু সেটা প্রতিবাদ না অন্য কিছু, সে নিজেই জানে না।
“থামবো?” জ্যাসপার তার ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে চিবুক ধরে উঁচু করলো, ফিওনার মুখটা তার দিকে তুললো। “তাহলে কেন তোমার হার্টবিট এত জোরে চলছে?”
তারপর, কোনো সতর্কতা ছাড়াই, সে ফিওনার ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। ফিওনা গলার ভেতর একটা চাপা আওয়াজ করে উঠলো, তার হাত দুটো শক্ত করে মুঠো হলো।

জ্যাসপার একবারে থামলো না। সে আরো গভীরে গেল, ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট আটকে নিয়ে একের পর এক মিষ্টি অত্যাচার চালাতে লাগলো, মনে হচ্ছে কেকের থেকেও বেশি মধুর কিছু চাইছে সে।
তার হাত এবার ফিওনার পিঠ বেয়ে নিচে নামলো, কোমরের কাছে এসে থামলো। তারপর… এক ধাক্কায় ফিওনাকে আরও কাছে টেনে আনলো, তাদের মাঝে কোনো ফাঁক রইলো না।
“এখনও থামতে বলবে, হামিংবার্ড?” জ্যাসপার ফিসফিস করলো, ঠোঁট ফিওনার কান ছুঁয়ে থাকলো।
ফিওনার মাথা ঝিমঝিম করছিলো। সে জানে, আজ রাতটা স্বাভাবিক থাকবে না…
জ্যাসপার ফিওনার মুখের খুব কাছাকাছি ঝুঁকে এসে ঠোঁটের ওপর আঙুল বুলিয়ে দিলো ওর প্রতিটা প্রতিক্রিয়া উপভোগ করতে লাগলো। তারপর হালকা হেসে ফিসফিস করে বললো,

“তোমার লিপস আর বেলি বাটন আমার ফেভারিট জিনিস।”
ফিওনার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। জ্যাসপারের কণ্ঠ এতটা গম্ভীর আর মগ্ন ছিল যে, তার সারা শরীরে একটা শিহরণ বয়ে গেলো।
হঠাৎই, জ্যাসপার তার আঙুলের ছোঁয়া সরিয়ে নিয়ে ঠোঁট নামালো ফিওনার নাভির কাছে। সে আস্তে করে তার ঠোঁট ছোঁয়ালো সেখানে, এতটাই ধীরে যে ফিওনার মনে হলো, সময় যেন থমকে গেছে।
“এটা আমার একান্ত সম্পত্তি,” জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো, নাভির নিচে আঁকা ট্যাটুটার ওপর আঙুল চালিয়ে। “তুমি জানো, আমি আমার কোনো জিনিস কারও সঙ্গে শেয়ার করি না কখনো।”
তারপর সে ধীরে ধীরে আবার ফিওনার মুখের কাছে ফিরে এলো, তার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। “তুমি পালিয়ে যেতে চেয়েছিলে, তাই না? কিন্তু এখন বলো, পালাতে চাও?”
ফিওনার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেলো, সে জানতো না কী বলবে। কিন্তু তার দেহের প্রতিটা অংশ যেন আগুনের মতো জ্বলছিলো জ্যাসপারের ছোঁয়ায়…

ফিওনা ভেবেই পায় না—এই পুরুষ তাকে ছুঁলেই কেন তার শরীর জমে যায়? কেনো তার হৃদস্পন্দন উল্টোপাল্টা হতে থাকে? কেন সে বাধা দিতে পারে না… বা হয়তো, সে আদৌ বাধা দিতে চায় না?
তার মনে হওয়ার কথা, সে উঠে দাঁড়াবে, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবে জ্যাসপারকে। কিন্তু তার হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। শরীরের প্রতিটা স্নায়ু জ্যাসপারের ছোঁয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
জ্যাসপার তার মুখের খুব কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বললো, “তুমি ভাবছো, কেনো আমি তোমার ওপর এতটা প্রভাব ফেলতে পারি?”
ফিওনা কিছু বলার আগেই, সে আঙুল বুলিয়ে দিলো তার গলার কাছ থেকে নাভির দিকে, একটানা, শীতল অথচ আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া এক ছোঁয়া।
“তোমার শরীর তোমার মনের থেকেও বেশি সৎ, হামিংবার্ড।”
ফিওনার নিঃশ্বাস আটকে এলো।
সে কী বলবে? কী করবে? তার হাত দুটো উঠে এলেও জ্যাসপারকে সরিয়ে দিলো না।
জ্যাসপার হেসে উঠলো, চোখেমুখে এক রহস্যময় দৃষ্টি।
এটা একটা বেশ ইন্টেন্স ও সেন্সুয়াল মুহূর্ত হবে!
ফিওনা এখনও হতবুদ্ধি হয়ে শুয়ে আছে, চোখে অবিশ্বাসের ছায়া। জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য ওর মুখের দিকে তাকালো, ঠোঁটের কোণে সেই চিরচেনা বাঁকা হাসি। এরপর, সে ধীরে ধীরে কেকের ওপরে সাজানো শক্ত চকলেট বার্কের একটা টুকরো তুলে নিলো।

“আমার তো চকলেট খুব পছন্দ, কিন্তু…” জ্যাসপার নিজের ঠোঁট ভেজালো “…যদি এটা একটু স্পেশাল ওয়ে খাই?”
ফিওনার শ্বাস ধীরে ধীরে ভারী হয়ে উঠছে। সে কিছু বলতে যাবে, কিন্তু তার আগেই জ্যাসপার ওর কোমরে একটা দৃঢ় টান দিয়ে নিজের আরো কাছে নিয়ে এলো।
সে নিখুঁত দক্ষতায় ফিওনার শার্টের এক পাশ সামান্য তুলে ওর কোমরের ঠিক উপরে নাভির কাছে চকলেটের টুকরোটা রাখলো। ঠান্ডা চকলেটের স্পর্শে ফিওনার শরীর শিহরিত হলো, কিন্তু তার আগেই জ্যাসপার নিচু হয়ে এল।
জ্যাসপার প্রথমে নাভির চারপাশে ছোট্ট চুমু খেলো, তারপর তার দাঁতে চকোলেট বার্কটা তুলে নিলো। চকোলেটের স্বাদ ওর জিহ্বায় মিশে যেতে থাকলো, কিন্তু ফিওনার ত্বকের উষ্ণতা ওর আসল আকর্ষণ ছিলো।
ফিওনা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো। সে বুঝতে পারছিলো, তার শরীর ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে।
জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো, “তুমি বাধা দিচ্ছো না, হামিংবার্ড। কিন্তু জানি না, এটা আমার সৌভাগ্য, নাকি তোমার দুর্বলতা?”

ফিওনা শ্বাস আটকে ফেললো। হাত মুঠো করে ধরলো জ্যাসপারের শার্টের অংশ।
সে আঙুলের ডগা দিয়ে ফিওনার নাভির চারপাশে হালকা স্পর্শ বুলিয়ে দিলো‌।
ডাইনিং টেবিলের ওপর সাজানো ছিল প্লেট, কাঁচের গ্লাস, মোমবাতি আর কেক। কিন্তু জ্যাসপারের ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙে গেছে। এক ঝটকায় সে হাত চালিয়ে সব কিছু ফেলে দিলো মেঝেতে। কাঁচ ভেঙে ছড়িয়ে পড়লো, মোমবাতিগুলো উলটে গেল, শুধু কেক আর কেকে কাটার ছুরিটা টেবিলের এক পাশে পড়ে থাকলো স্থির হয়ে।
ফিওনা ধক করে উঠলো। “আপনি …!”

কিন্তু কথা শেষ হওয়ার আগেই জ্যাসপার ওর দিকে ঝুঁকে এলো, এক ঝটকায় ফিওনার শার্টটা খুলে ফেলে দিলো। ফিওনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। ঠান্ডা বাতাস ওর উন্মুক্ত ত্বকে আঘাত করলো, সঙ্গে সঙ্গে ওর শরীর কাঁপতে শুরু করলো। জ্যাসপার ওর দু’হাত ধরে এক ঝটকায় ঘুরিয়ে দিলো, যেন ওর সম্পূর্ণ অধিকার শুধু তারই।
ফিওনার পিঠের ওপর আঙুল বুলিয়ে দিলো জ্যাসপার, তারপর পাশে পড়ে থাকা কেকের এক মুঠো তুলে নিয়ে ওর পিঠের ওপর মেখে দিলো। চকলেট আর ক্রিম ওর ত্বকে লেপটে গেল।
“প্রিন্স…,” ফিওনার গলা শুকিয়ে এলো। ও বুঝতে পারছিলো, সে বাধা দিতে চাইছে, কিন্তু শরীর ওর কথার একেবারে উল্টোটা চাইছে।

জ্যাসপার ওর শরীরের ওপর ঝুঁকে পড়লো। তারপর কামড়ে, চুম্বনে, আর গভীর লে*হনে কেকটুকু ওর পিঠ থেকে মুছে ফেলতে লাগলো। ওর গরম নিঃশ্বাসে ফিওনার শরীর শিহরিত হলো, এক অজানা উত্তাপে ঘিরে ধরলো ওকে।
কিন্তু হঠাৎ, ফিওনার হাতটা এক পাশে থাকা কেক কাটার ছুরির ওপর চলে গেল। ওর আঙুলের ডগা ব্লেডের ধারালো অংশে লেগে গেলো, আর সঙ্গে সঙ্গে রক্ত গড়িয়ে পড়লো।
ফিওনা এক ঝটকায় চোখ বন্ধ করলো, তীব্র ব্যথা অনুভব করলো, কিন্তু ও জানতো—এই যন্ত্রণার মাঝে লুকিয়ে আছে এক ধরনের মাদকতা, এক ধরনের আকর্ষণ, যেটা থেকে পালানো অসম্ভব।
জ্যাসপার খেয়াল করলো ফিওনার আঙুল কেটে গেছে, আর ও ছুরিটা শক্ত করে ধরে আছে। লালচে রক্ত ওর আঙুল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে, টেবিলের কাঁচের ওপর টুপটাপ পড়ে দাগ তৈরি করছে।
এক ঝটকায় জ্যাসপার ওর হাত থেকে ছুরিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। মুহূর্তের মধ্যে ওর চোখের গাঢ় আগুন নিভে গেল, সব আবেগ, কামনা এক নিমিষেই হিমশীতল হয়ে গেল।
“ফিওনা!”

জ্যাসপার ওর হাত নিজের হাতে তুলে নিলো, কিন্তু ফিওনা নড়ল না। ওর নিঃশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হচ্ছিল, চোখের দৃষ্টি ধোঁয়াটে।
র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে জ্যাসপার দ্রুত বললো, “তুমি অপেক্ষা করো, আমি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসি—”
কিন্তু তার আগেই ফিওনা জ্যাসপারের হাত শক্ত করে ধরে ফেললো।
জ্যাসপার থমকে গেল।
ও ফিওনার চোখের দিকে তাকালো—এখানে আতঙ্ক নেই, নেই কোনো ব্যথার ছাপ। বরং একটা ঘোর, একটা মোহাচ্ছন্ন ভাব ওর চোখে জ্বলজ্বল করছিল।
জ্যাসপার বুঝলো… ফিওনা এখন নিজের মধ্যে নেই। ও এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আছে।
ও কি ব্যথার শক পেয়েছে? নাকি অন্য কিছু…?

জ্যাসপার ওর হাতের ওপর নিজের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো,যাতে করে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু ফিওনার চোখে সেই ঘোর এখনও রয়ে গেছে।
“ফিওনা, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?”
কিন্তু ফিওনা কোনো উত্তর দিলো না, শুধু চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো,মনে হচ্ছে জ্যাসপারের অস্তিত্বের গভীরে কিছু খুঁজছে।
ফিওনা তখন হালকা হাসলো, চোখে সেই একই মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টি। গলায় কাঁপন ধরলেও কণ্ঠটা ছিল শান্ত।
“এই সামান্য র*ক্ত দেখে ভয়ের কি আছে? এর চেয়েও নৃশংস র*ক্ত দেখেছি সেদিন,” ফিসফিস করে বললো ও।
জ্যাসপার ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, এক মুহূর্তের জন্য যেন সময় থমকে গেল।
ফিওনা ধীরে ধীরে ওর র*ক্তমাখা হাত তুললো, তারপর জ্যাসপারের গালে ছুঁয়ে দিলো।
র*ক্ত লেপ্টে গেল জ্যাসপারের গালের ওপর, উষ্ণ, আঠালো… লালচে রঙটা ওর ফর্সা ত্বকের ওপর একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
জ্যাসপার নড়লো না।

ফিওনার চোখের দৃষ্টি তখনো অতীতের কোনো গভীর ছায়ার মধ্যে আটকে আছে। ওর আঙুল ধীরে ধীরে জ্যাসপারের গাল থেকে নিচের দিকে নামলো, গলার ওপর দিয়ে বয়ে গেল… তারপর বুক পর্যন্ত ওর র*ক্ত মেখে দিলো।
লাল রঙের আঁচড়ের মতো দাগ পড়ে গেল জ্যাসপারের গায়ে।
জ্যাসপার এবার ধীরে ধীরে বললো, হামিংবার্ড…”
কিন্তু ফিওনা তখনও ওর বুকে আঙুল চালাচ্ছিল, র*ক্ত মাখিয়ে দিচ্ছিলো,মনে হলো কোনো প্রাচীন রীতির অনুসরণ করছে। ওর দৃষ্টি ফাঁকা, শ্বাস ভারী।
জ্যাসপার অনুভব করলো, ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই মেয়েটা আগের সেই ফিওনা নয়। এই মুহূর্তে ও এক অন্য রূপে এসেছে, এক অন্য বাস্তবতার ফিওনা…

জ্যাসপার আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে পারেনি। তার চোখে এক নিষ্ঠুর তীব্রতা ছিল,সময় যেন থেমে গেছে তার জন্য। তার হাত ফিওনাকে আঁকড়ে ধরে, সে তাকে আরও কাছে টেনে এনে, ঠোঁটে এক নিঃশব্দ চুম্বন রেখে দিল। চুম্বন ছিল এক নীরব আঘাতের মতো—তীব্রতার সম্মিলন, যেখানে কোনো মায়া ছিল না, ছিল শুধু এক নিষ্ঠুর ধাক্কা।
ফিওনার হাতের কাটা জায়গায় হাত রাখলে, তার মধ্যে কিছুটা শীতলতা অনুভূত হলো।
জ্যাসপার শার্ট থেকে টাই খুলে ফিওনার হাতে বেঁধে দিলো র*ক্ত পড়া বন্ধ করতে‌
তারপর,নিজের গা থেকে শার্ট খুলে,দূরে ছুড়ে ফেলে দিল, যেন আর কোনো শারীরিক বাধা না থাকে।
জ্যাসপারের শার্ট কক্ষের দূরে রাখা ক্যান্ডেলের ওপর পড়তেই, সেখান থেকে এক ছোট্ট শিখা জ্বলে উঠলো, বাতাসে নেচে ওঠা লাল অগ্নিসূচক তাপের মতো। তার চারপাশে অস্থিরতা ছিল,পৃথিবী নিজেই এক কঠিন সংকটের মধ্যে ডুবে গেছে। শার্টে আগুন লেগে দাউদাউ করে জ্বলতে লাগলো।
এই পৃথিবী ধীরে ধীরে তাদের অস্তিত্ব থেকে মুছে যেতে লাগলো।চারপাশের সবকিছু ফিকে হয়ে এলো—সময়, স্থান, বাস্তবতা, এমনকি আলোও যেন ধূসর হয়ে গেলো তাদের চোখে। শুধু দু’টি অস্তিত্ব রয়ে গেলো, একে অপরের মাঝে হারিয়ে যাওয়া, এক গভীর টানে আটকে থাকা।

ফিওনার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছিল, হৃদয়ের স্পন্দন ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে। জ্যাসপার তাকে নিজের মাঝে আঁকড়ে ধরলো,পৃথিবীর আর কিছুই তাকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বাইরে ঝড় উঠুক কিংবা আগুন জ্বলুক, তারা কেউই তা টের পাচ্ছিল না।
জ্যাসপার তার আঙুলগুলো ফিওনার কাঁধ বরাবর নামিয়ে আনলো, সময়ও এখানে থমকে গেছে। তার ছোঁয়া আগুনের মতো, কিন্তু সেই আগুন ফিওনাকে পোড়ায় না—বরং সে তাতে ধীরে ধীরে গলে যেতে থাকে।
তাদের চারপাশের বাতাস গরম হয়ে উঠছে, কক্ষের মোমবাতির শিখা তীব্র হয়ে জ্বলছে, আর নিচে পড়ে থাকা কাচের টুকরোগুলো ঠাণ্ডা, নির্বাক সাক্ষী হয়ে রইলো এই দহনের।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২৬

তারা দু’জন একসঙ্গে গভীর থেকে আরও গভীরে ডুবে যেতে লাগলো, যেখানে কেবলমাত্র তাদের স্পর্শ, তাদের অনুভূতি, তাদের আকাঙ্ক্ষার জগৎ বিদ্যমান।
এই পৃথিবীর বাস্তবতা তাদের কাছে ফিকে হয়ে গেলো—শুধু তারা দু’জন, একে অপরের মাঝে হারিয়ে গেলো চিরতরে…

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২৮