আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৬

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৬
সাবিলা সাবি

ফিওনা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।বাইরে অসংখ্য তারা ঝলমল করছে,কিন্তু আজ তার মনে হচ্ছে এই আলো শুধুই এক বিভ্রম,এক ধোঁকা।ভেনাস যতই সুন্দর হোক,তার ভেতরে আটকে আছে অদৃশ্য শিকল—একটা নিঃশ্বাস বন্ধ করা বন্দিত্ব।
লিয়ারা পিছন থেকে ফিওনার কাঁধে আলতো হাত রাখলেন। মায়ের স্পর্শে ফিওনা কিছুটা নরম হলো,কিন্তু তার হৃদয়ের ভেতরে যে আগুন জ্বলছে,সেটার উত্তাপ কমেনি একটুও।
“তুমি কি সত্যিই মনে করো,মা,আমি এই নিয়মগুলো মেনে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকব?” ফিওনার গলায় দৃঢ় প্রত্যয়।
লিয়ারা গভীর দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকালেন।একসময় তিনিও এমনই ছিলেন—স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে চেয়েছিলেন,ভালোবাসার জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর খেলায় তিনি হেরে গিয়েছিলেন।

“তুমি যা ভাবছো,তা সহজ হবে না,ফিওনা।ড্রাকোনিস শুধু একজন শাসক নয়,সে এক কঠিন ধাতুতে গড়া শাসনব্যবস্থার প্রতীক,”ফিওনা,এটাই ভেনাসের নিয়ম। এখানে ভালোবাসা আর মানবিক সম্পর্কের চেয়ে শাসন আর আইন বড়।”
লিয়ারার কথা শুনে ফিওনার ক্রোধ যেন আরও বেড়ে গেলো। সে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,”মা,কেমন নিয়ম এটা?যেখানে ভালোবাসাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়?যেখানে ড্রাগনের ইচ্ছা আর স্বাধীনতাকে মূল্য দেওয়া হয় না?আমাদের পৃথিবী এমন নয়,মা।”
ফিওনার কণ্ঠে হতাশা আর ব্যথা স্পষ্ট। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ মুছলো,তারপর আরও বলল,”যদি আমি হাজার অপরাধ করি,তবুও আমার গ্র্যান্ডপা কখনোই আমার সঙ্গে এমন কঠোর আচরণ করতে পারতেন না।পৃথিবীতে এমন কোনো নিয়ম নেই,যা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলোকে কেড়ে নেয়।এখানে তৈরি করা এই নিয়মগুলো আসলে ড্রাগনের সময় আর সুখ কেড়ে নেয়। এমন নিয়মের কোনো মূল্য নেই, মা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফিওনার কণ্ঠ যেন পুরো কক্ষ ভরিয়ে তুললো।লিয়ারা কিছুক্ষণ চুপ করে তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।তার চোখে দুঃখের ছাপ।সে ফিওনার পাশে বসে তার হাত ধরে বলল, “আমি জানি,ফিওনা।তুমি যা বলছো,তা ঠিক।কিন্তু ভেনাসে এই নিয়মের শিকড় অনেক গভীর।ড্রাকোনিস কখনোই নিজের শাসন আর নিয়ম ভাঙতে দেবে না।”
ফিওনা রাগে আর হতাশায় দাঁড়িয়ে জানালার দিকে তাকালো।তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো মায়ের সেই বন্দি জীবনের ছবি।সে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,”তাহলে সময় এসেছে,মা। আমি দেখিয়ে দেবো,এই নিয়ম আর শাসন কেমন করে ভাঙতে হয়।আমি চাই না আর কেউ আমার মায়ের মতো এতটা কষ্ট সহ্য করুক।এবার এসব থামাতে হবে।”
লিয়ারা তার মেয়ের মধ্যে জন্মানো এই আগুনকে অনুভব করলো।সে জানতো,ফিওনার ইচ্ছাশক্তি অসীম।সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু স্বরে বলল,

“তুমি যা ভাবছো,তার জন্য অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হবে, ফিওনা।কিন্তু আমি জানি,তুমি থামবে না।আমি তোমার পাশে আছি।”
মায়ের কথায় ফিওনার চোখে জল চলে এলো।কিন্তু সে দৃঢ় ছিলো।ফিওনার মনে আজ একটাই প্রতিজ্ঞা—ভেনাসের অন্যায় নিয়ম আর শাসন ভেঙে,সত্যিকারের স্বাধীনতার আলো দেখাবে।
লিয়ারা ফিওনার হাতটি নিজের হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বলল, “আমার লিটল প্রিন্সেস,শান্ত হয়ে যাও।তোমার রাগের জন্য পুরো ভেনাস কাঁপাতে হবে না।এখন বরং আসল কথাটা শোনো।”
ফিওনা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,”আসল কথা?এখন আবার কী?”
লিয়ারা ধীর কণ্ঠে বলল,”তোমাকে তো ভেনাসের ভার্সিটিতে যেতে হবে।”

ফিওনা অবাক হয়ে বলল,”কেন?আমি পৃথিবীতে পড়াশোনা করেছি।আর পড়ার দরকার কী?”
লিয়ারা শান্ত গলায় ব্যাখ্যা করল,”তুমি পৃথিবীতে পৃথিবীর নিয়মে পড়াশোনা করেছো।কিন্তু ভেনাসের নিয়ম আর এখানকার বাস্তবতা ভিন্ন।তুমি নতুন ড্রাগন,এখনো নিজের শক্তি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে জানো না।তাছাড়া তলোয়ার চালানো,যুদ্ধের কৌশল,এবং ভেনাসের ইতিহাস ও ড্রাগনদের সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই।এসব শেখার জন্য তোমাকে ভেনাসের ভার্সিটিতে যেতে হবে।সেখানে শুধু পড়াশোনা নয়,প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংও হয়।সব শেখানো হবে।”
ফিওনা বিরক্ত গলায় বলল,”স্কুল বা কলেজ ছাড়াই সোজা ভার্সিটিতে?”
লিয়ারা হেসে বলল,”হ্যাঁ,ভেনাসে এমনটাই নিয়ম। যখন ড্রাগনদের বয়স ১৮ হয়,তারা সরাসরি ভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরু করে।তোমারও সময় হয়েছে।”

ফিওনা একটু ভেবে বলল,”আর যদি না যাই?”
লিয়ারা চোখ বড় করে বলল,”তাহলে তোমার শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কোনোদিন বড় কোনো বিপদ ডেকে আনবে। আর সেটা তোমার জন্যই নয়,ভেনাসের জন্যও ক্ষতিকর হবে।”
ফিওনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”ঠিক আছে।তাহলে কীভাবে যাবো?”
লিয়ারা হাসি মুখে বলল,”তোমাকে কাল আমি নিজে ভর্তি করিয়ে আসবো।সব ব্যবস্থা আমি দেখবো।”
ফিওনা তবুও অনিচ্ছাসত্ত্বেও বলল,”ঠিক আছে।তবে মনে রেখো,আমি ভেনাসের নিয়মটা এখনো পছন্দ করিনি।”
লিয়ারা মাথা নাড়িয়ে বলল “তোমার পছন্দ করার সময় আসবে,লিটল প্রিন্সেস।”

জ্যাসপার নিজের প্রাসাদের ল্যাবে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করছে।তার টেবিল জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি আর পেপার স্ক্রল।প্রতিটি মুহূর্তে তার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা—কীভাবে ফিওনার হারানো স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনা যায়।
এমন সময় দরজার ওপাশ থেকে এথিরিয়ন প্রবেশ করল। কৌতূহল নিয়ে সে জিজ্ঞেস করল,”এত রাতে ল্যাবে?কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করছ নাকি জ্যাসু ভাইয়া?”
জ্যাসপার তার চোখ সরিয়ে বলল,”ফিওনার স্মৃতি ফেরানোর উপায় খুঁজছি।”
এথিরিয়ন অবাক হয়ে বলল,”কোনো‌ সুত্র জানা গেছে?কিছু পেয়েছো?”
জ্যাসপার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”না,এখনো কিছু পাইনি। তবে নিশ্চিত,সেই লকেট ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
এথিরিয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল,”তাহলে সেই লকেটটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছ না কেন?”

জ্যাসপার মাথা নাড়িয়ে বলল,”আমি সিগন্যাল ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছি।কিন্তু সেটা কোনো কাজ দেয়নি।মনে হচ্ছে লকেটটা হয়তো কোনো মাছের পেটেই চলে গেছে,কিংবা এমন গভীরে হারিয়ে গেছে যেখানে সেটা আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।আর লকেট ছাড়া ফিওনার স্মৃতি ফেরানো অসম্ভব।”
এথিরিয়ন চিন্তিত মুখে বলল,”তাহলে এখন কী করবে ভাই?”
জ্যাসপার একটু থেমে গভীরভাবে তাকাল,তারপর দৃঢ় স্বরে বলল, “আমি আবার নতুন করে শুরু করবো।ফিওনাকে আবার আমার প্রেমে ফেলবো।নতুন করে,নতুন ভাবে।এবার তার স্মৃতি না থাকলেও সে আমাকে ভালোবাসবে।আমি ওর হৃদয়ে সেই জায়গাটা আবার তৈরি করবো।”
এথিরিয়ন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,”তুমি জানো,এটা সহজ হবে না।ও তো এখনো তোমার প্রতি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারবেনা।”

জ্যাসপার মৃদু হাসল,”আমি জানি।কিন্তু আমি যে তাকে অনেক ভালোবাসি।তার হৃদয় জয় করতে হলে আমি আবারও আমার সমস্তটা দিয়ে চেষ্টা করবো।এটা আমার জন্য যুদ্ধের মতো।আর আমি এই যুদ্ধে জিতবো।”
এথিরিয়ন তার ভাইয়ের মুখের দৃঢ়তা দেখে মৃদু হাসল,
“ঠিক আছে।আমি তোমার পাশে আছি।তবে ভুল কিছু করো না, জ্যাসু ভাইয়া।একবার যদি আবার তার আস্থা হারাও, তাহলে সে চিরদিনের জন্য তোমার নাগালের বাইরে চলে যাবে।”
জ্যাসপার একমুহূর্তের জন্য থমকাল,তারপর মাথা নাড়ল, “এইবার আমি আর কোনো ভুল করবো না।এবার আমার ভালোবাসা বিশ্বাস সবকিছু দিয়েই ওকে জয় করবো।”
ড্রাকোনিস দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলেছে।তার কালো চামড়ার বুটের নিচে পাথরের মসৃণ মেঝে প্রতিবার ধাক্কা খেয়ে ধাতব শব্দ তুলছে।বাইরের আলো সোনালী,কিন্তু তার মনে যেন এক গভীর অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে।আজকের এই পথচলা শুধুই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নয়—এটা তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
ভেনাস দেবতা আভ্রাহার চেম্বারে প্রবেশ করার আগেই দরজা আপনাআপনি খুলে গেল।ভেতরে দেবতার উপস্থিতি যেন গোটা পরিবেশে এক ভারী শক্তির চাপ তৈরি করেছে।নীলাভ স্ফটিকের সিংহাসনে বসে থাকা আভ্রাহা ধীর,কিন্তু গভীর দৃষ্টিতে ড্রাকোনিসের দিকে তাকালেন।

“আমি জানতাম তুমি আসবে ,ড্রাকোনিস,”দেবতার কণ্ঠে এক অবিচল শক্তি। “আরে আমি জানি,তুমি কেন এসেছো।”
ড্রাকোনিস এক মুহূর্ত থমকে গেলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো। “তাহলে নিশ্চয়ই আপনি জানেন দেবতা,সেই মানবী মেয়ে ফিওনা এখন ভেনাসে।”
আভ্রাহার ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।
“সে এখন কেবল মানবী নয়,ড্রাকোনিস।সে এখন ড্রাগন। ফ্লোরাস রাজ্যের লিয়ারার কন্যা—আর প্রকৃত এলিজিয়া।”
ড্রাকোনিসের চোখ কঠিন হয়ে উঠলো,কিন্তু সে নিজের রাগ প্রকাশ করলো না।
“আমি তোমাকে অনেক আগেই সতর্ক করেছিলাম,” আভ্রাহার ধীরে ধীরে বললেন,যেন প্রতিটি শব্দ ওজনের মতো ভারী হয়ে বাতাসে ঝুলে থাকছে।”একদিন এলিজিয়া তার সত্যিকারের রূপ ধারণ করবেই।”
ড্রাকোনিস গভীর শ্বাস নিলো,তারপর শক্ত স্বরে বলল, “জ্যাসপারকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল।সে বিশ্বাস করে, এলিজিয়া হচ্ছে অ্যালিসা।আর আমি নিশ্চিত করবো,সেই বিশ্বাস কখনো ভাঙবে না।”
দেবতা আভ্রাহার চোখ গভীর হয়ে উঠলো। “সত্য চাইলেই চাপা রাখা যায় না,ড্রাকোনিস।মিথ্যার উপর ভরসা করে ভবিষ্যৎ গড়তে গেলে তা একদিন ধ্বংস হবেই।”

ড্রাকোনিস এবার এক পা এগিয়ে এল।”আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি,” তার গলায় দৃঢ়তা। “খুব দ্রুত জ্যাসপার আর অ্যালিসার বিয়ে সম্পন্ন হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
দেবতা আভ্রাহা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “ড্রাকোনিস, তুমি কি সত্যিই মনে করো, মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে সত্য লুকিয়ে রাখা সম্ভব?এলিজিয়া তার সত্য পরিচয় জানবেই তখন।”
ড্রাকোনিস এবার রাগ চেপে বলল,”আমি সেটাই চাই না! আমি চাই না ও জানুক।ওর জন্মই এক অভি*শাপ আমার ছেলের জন্য।”
দেবতা তখন চোখ বন্ধ করলেন, যেনো ভবিষ্যতের কোনো দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন।
আভ্রাহা কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন,”তুমি কি সত্যিই মনে করো,একটি ভুল সম্পর্কের বাঁধনে বেঁধে তুমি নিয়তি বদলে দিতে পারবে?আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি তবে এখন বুঝতে পারছি নিয়তি চেয়েছে বলেই সেই মেয়ে এখন পৃথিবী থেকে ভেনাসে।”

ড্রাকোনিস এক মুহূর্তের জন্য নিশ্চুপ থাকলো।তারপর ঠান্ডা স্বরে বলল,”আমি যা চাই,তা অর্জন করবোই।”
আভ্রাহার আর কিছু বললেন না,শুধু এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “সাবধান, ড্রাকোনিস।তুমি যা করতে চলেছো,তা কেবল তোমার নিজের ধ্বং*স ডেকে আনবে না—এই পুরো সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে।”
ড্রাকোনিস কোনো উত্তর দিল না।সে পেছন ফিরে এক দৃঢ় পদক্ষেপে চেম্বার ছেড়ে চলে গেল।বাতাসে দেবতার শেষ কথাগুলো ধ্বনিত হলো—
“ভাগ্যকে কখনোই ধোঁকা দেওয়া যায় না, ড্রাকোনিস। এলিজিয়ার সত্য তার কাছে ফিরে যাবে, ঠিক যেমন প্রবল বাতাস সাগরের ঢেউকে তীরে ফিরিয়ে আনে। তুমি যদি সত্যকে রুখতে যাও, তাহলে তা আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়বে।”

পরেরদিন সকালে ফিওনাকে নিয়ে লিয়ারা রওনা দেয়।স্টেলার একাডেমি—ভেনাসের সবচেয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়।ফিওনা যখন মূল ফটকের সামনে এসে দাঁড়াল,তার মনে হলো যেন অন্য এক জগতে প্রবেশ করছে।বিশাল ভবনগুলো কাঁচ ও ধাতব সংমিশ্রণে তৈরি,যেন কোনো মহাজাগতিক শিল্পকর্ম।পুরো ক্যাম্পাসের বায়ুমণ্ডল স্বচ্ছ,কৃত্রিম সূর্যালোক ঠিক পৃথিবীর দিনের মতো উজ্জ্বল,অথচ তাতে সূর্যের প্রখরতা নেই। বাতাসে যেন একধরনের নীলচে আভা ভাসছে,যা আরও বেশি অতিপ্রাকৃত মনে করাচ্ছে।
পথঘাটে শূন্যে ভাসমান তথ্যপ্যানেল,শিক্ষার্থীদের জন্য হোভারিং ট্রান্সপোর্ট,আর দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বিশাল এক স্কাইল্যাব,যেখানে ড্রাগন ভেনাসীয় শিক্ষার্থীরা মহাকর্ষ ও শক্তি নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
ফিওনা থমকে গেল।তার পরিচিত পৃথিবীর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমন ছিল না।এখানে সবকিছু যেন ভবিষ্যতের নয়, বরং তার চেয়েও অনেক বেশি অগ্রসর।
“এটা কি সত্যি কোনো ভার্সিটি?” ফিসফিস করে বলল ফিওনা।
তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লিয়ারা হেসে বলল,”স্বাগতম, স্টেলার একাডেমিতে।এখানেই তুমি জানতে পারবে কে তুমি, আর কী করতে সক্ষম।”

ফিওনা চারপাশে তাকিয়ে দেখল,শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই দেখতে মানুষের মতো,কিন্তু তাদের চোখের গভীরতা, চলাফেরার ভঙ্গি,এমনকি কারও কারও গায়ের হালকা আভা বুঝিয়ে দিচ্ছে—এরা সাধারণ কেউ নয়।সে ফিসফিস করে বলল,”এখানে কি সবাই ড্রাগন?”
লিয়ারা মাথা নাড়িয়ে বলল,”হ্যাঁ,ওরা সবাই ড্রাগন।তবে ড্রাগনদের মধ্যেও জাত আছে। সেটা তুমি ভার্সিটিতে পড়ার মাধ্যমেই জানতে পারবে,কারা কোন রাজ্যের,কী তাদের ক্ষমতা।এখানে এল্ড্র,ফ্লোরাস,অ্যাকুয়ার,শ্যাডো, ইনফার্নাস—প্রতিটি রাজ্যের ড্রাগনরা আসে।প্রত্যেকেরই আলাদা শক্তি, আলাদা বৈশিষ্ট্য।”
ফিওনা অবাক হয়ে চারদিকে তাকালো।হঠাৎ সে দেখল, কিছু শিক্ষার্থীর চোখ গাঢ় লাল,কারও আবার জলরঙা নীল,কেউ কেউ কুয়াশার মতো স্বচ্ছ।কিছু ছাত্রের শরীরের ছায়া যেন দুলে ওঠে,আবার কারও শরীরে সূক্ষ্ম সোনালি আঁশ ঝিলিক দেয় সূর্যের আলোয়।
তার নিজের গায়ের দিকে তাকিয়ে ফিওনা ভাবল—সে কি শুধু সাধারণ ড্রাগন,নাকি তার মধ্যেও এমন কিছু আছে যা সে এখনো জানে না?

লিয়ারা একটু থামল,তারপর গভীর দৃষ্টিতে ফিওনার দিকে তাকিয়ে বলল, “তবে তুমি আলাদা,ফিওনা।তুমি পৃথিবী থেকে এসেছো,আর সবচেয়ে বড় কথা,তুমি অর্ধেক মানবী।”
ফিওনা বিস্মিত চোখে তাকাল,যেন এই সত্যটা তার মনকে নতুন করে নাড়া দিল।”আমি কি তাহলে কখনো সত্যিকারের ড্রাগন হতে পারব না?”
লিয়ারা মৃদু হাসল। “রক্তের মধ্যে যা আছে,তা বদলানো যায় না,তুমি সত্যিকারের ড্রাগন তবে তোমার মধ্যে আছে মনুষ্যত্ব।কিন্তু নিয়তি তোমার হাতে।তোমার ক্ষমতা কীভাবে বিকশিত হবে,কীভাবে তুমি নিজের জায়গা করে নেবে,সেটা শুধু তোমার ওপর নির্ভর করে।”
ফিওনা তখন চারপাশের অন্য শিক্ষার্থীদের দিকে তাকাল। তারা সবাই জন্মগতভাবে শক্তিশালী ড্রাগন,নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন।আর সে?সে ছিল এক সাধারণ মানবীর মতো,অথচ এখন এক নতুন পরিচয়ের মুখোমুখি।
হয়তো এখানে তার পথ সহজ হবে না,কিন্তু সে জানত, একদিন সে নিজের শক্তির সত্যিকারের রূপ খুঁজে বের করবে।

ফিওনা জানালার ধারে বসে ছিল,রাতের ভেনাস এক অন্যরকম সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে আকাশজুড়ে।কাল থেকে তার ক্লাস শুরু,কিন্তু তার মনে এখনো হাজারো প্রশ্ন।এখানে সবাই ড্রাগন,তাদের মনুষ্যত্ব কেমন?তারা কি অনুভব করতে পারে,ভালোবাসতে জানে?নাকি এরা নিছকই শক্তির উপাসক?
তার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ চোখ পড়ল জানালার বাইরে, একটা ছোট ড্রোন বাতাসে স্থির হয়ে আছে,যেন তাকে পর্যবেক্ষণ করছে।ড্রোনটা বেশ উন্নত প্রযুক্তির,কালো ধাতব গায়ে নীল আলো জ্বলছে,মাঝে মাঝে সেটার পাখাগুলো নিঃশব্দে কেঁপে উঠছে।
ফিওনা কপাল কুঁচকে তাকাল।এটা কার?সে এখনো ভেনাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না,কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারছে, এখানে এমন জিনিস স্বাভাবিক নয়।
সে আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে গেল,ড্রোনটা যেন তার গতিবিধি লক্ষ্য করছে।হঠাৎ সেটা একটু দূরে সরে গেল,তারপর আবার ঘুরে জানালার আশেপাশে উড়তে লাগল।ফিওনা কিছুক্ষণ সেটা লক্ষ করল,তারপর মনে হলো, হয়তো এটা ভেনাসের পাহারাদার ড্রোন,যারা রাতের পাহাড় বা আশপাশের পরিবেশ নজরদারি করে।
কিন্তু একটা অস্বস্তি তার মনে খোঁচা দিতে থাকল—এই ড্রোন কি শুধু পাহাড় পাহারা দিচ্ছে,নাকি বিশেষভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে?

ফিওনা বিরক্ত হয়ে জানালাটা ধপ করে বন্ধ করে দিল। ড্রোনের অতিরিক্ত কৌতূহল তার ভালো লাগছিল না।এখানে আসার পর থেকেই সবকিছুই যেন তাকে পর্যবেক্ষণ করছে—মানুষের বদলে ড্রাগন,রাজপ্রাসাদের মতো জীবন,আর এখন এই ড্রোন!
কিন্তু জানালা বন্ধ করার মুহূর্তেই,বহু দূরে এক গোপন কক্ষে, এক স্ক্রিনের সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে মাথা হেলিয়ে বলল,”শিট!এত তাড়াতাড়ি জানালা বন্ধ করা কি খুব জরুরি ছিল,হামিংবার্ড?আরেকটু দেখতে দিতে পারতে তোমাকে।”
তার ঠোঁটের কোণে এক ধরণের রহস্যময় হাসি,চোখে এক ধরণের হতাশা।স্ক্রিনের উপর ড্রোনের ফিড বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু তার মনে ততক্ষণে একটা চিন্তা পাক খাচ্ছে—ফিওনা কীভাবে এত সহজে এড়িয়ে গেল?সে কি কিছু টের পেয়েছে?

সে হালকা হাসল,একগ্লাস পানীয় হাতে তুলে নিয়ে চোখ সরিয়ে নিল স্ক্রিন থেকে।”কোনো সমস্যা নেই… কাল থেকে তো তোমার ক্লাস শুরু হচ্ছে।সামনে অনেক সুযোগ আসবে,হামিংবার্ড।”
তার আঙুল ধীরে ধীরে ডেস্কের উপর ছন্দময় তাল তুলল, যেন সে একটা নতুন খেলা শুরু করার অপেক্ষায় আছে।
জ্যাসপার টেবিলের ওপর এলিয়ে ছিল,চোখ দুটো স্ক্রিনে আটকে,কিন্তু মনটা কোথাও হারিয়ে গেছে।ফিওনার প্রতিটা অভিব্যক্তি,প্রতিটা প্রতিক্রিয়া তার মাথার ভেতর বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।
ঠিক তখনই তার ল্যাপটপের স্ক্রিন ঝলমল করে উঠল—একটা ইনকামিং ভিডিও কল।সে ভ্রু কুঁচকালো,স্ক্রিনের ওপরে নামটা দেখেই বিরক্তি আরও বেড়ে গেল।
কল রিসিভ করতেই অ্যালিসার মুখ দেখা গেল—তার চোখেমুখে সামান্য বিরক্তির ছাপ,মনে হচ্ছে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
“অবশেষে ধরলেন কল!এতক্ষণ কী করছিলেন প্রিন্স?”

জ্যাসপার ক্লান্ত গলায় বলল,”যথেষ্ট জরুরি কিছু না হলে, আমাকে বিরক্ত কোরো না,অ্যালিসা।”
কিন্তু অ্যালিসা যেন তার কথায় কানই দিল না।সে হঠাৎই উৎসাহ নিয়ে বলে উঠল, “আচ্ছা,আপনি বলেন তো,আমার এনগেজমেন্টের জন্য কোন রঙের ড্রেস ভালো হবে? সিলভার না গোল্ডেন?”
জ্যাসপারের বিরক্তি এবার স্পষ্ট হয়ে উঠল।সে এক হাত চুলে চালিয়ে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,”তুমি এই রাতবিরাতে ফোন করেছ এসব বলার জন্য?”
অ্যালিসা যেন বুঝতেই পারল না কেন জ্যাসপার এত বিরক্ত হলো। সে ঠোঁট উল্টে বলল,”এটা কি ছোট ব্যাপার নাকি? আপনি আমার তো হবু বর!নিজের এনগেজমেন্ট নিয়ে এত কম আগ্রহ কিভাবে থাকে কারও?”
জ্যাসপার এক মুহূর্ত চুপ করল,তারপর ঠান্ডা গলায় বলল, “এটা আমার বিয়ে না,অ্যালিসা।এটা রাজ্যের সিদ্ধান্ত।আর আমার জন্য এই এনগেজমেন্টের চেয়ে জরুরি অনেক কিছু আছে।”
অ্যালিসার মুখ শক্ত হয়ে গেল।সে ঠোঁট চেপে ধরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল,তারপর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “আপনার তো কোনো কিছুতেই আগ্রহ নেই,প্রিন্স।আমি জানি না আপনি আদৌ কখনো বদলাবে কি না!”
এই বলে সে কল কেটে দিল,স্ক্রিনে এক মুহূর্তের জন্য তার ক্ষুব্ধ মুখটা ফুটে উঠল,তারপর নিঃসাড়ে মিলিয়ে গেল।
জ্যাসপার মাথা পেছনে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করল।ফিওনার মুখটা আবার মনে পড়ে গেল তার।
“বদলাতে হবে নাকি?”সে নিজেকেই প্রশ্ন করল,কিন্তু উত্তরটা জানা ছিল না তার।

ফিওনা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো,তার দেহ বিশ্রামে থাকলেও মন যেন কোথাও উড়ে চলেছিলো।হঠাৎ,স্বপ্নের মধ্যে সে দেখলো—দুইটি ড্রাগন,একটি সবুজ,অন্যটি বাদামি।তারা একসঙ্গে আকাশে উড়ছিল,বাতাস তাদের ডানা ছুঁয়ে যাচ্ছিলো,যেনো তারা মুক্ত, সুখী।
কিন্তু হঠাৎই দৃশ্য বদলে গেলো।একদল কালো ড্রাগনের ঝাঁক সবুজ ড্রাগনটিকে আ*ক্রমণ করলো,বিশাল নখর ও আ*গুনের আঁ*চড়ে তাকে বি*ধ্বস্ত করতে লাগলো। সবুজ ড্রাগনটি ছটফট করছিল,প্রাণপণে লড়াই করছিলো,কিন্তু সংখ্যায় কম ছিলো বলে পেরে উঠছিল না।
আর তখনই বাদামি ড্রাগনটি এক মুহূর্ত দেরি না করে সবুজ ড্রাগনকে রক্ষার জন্য সামনে এগিয়ে এলো।প্রবল শক্তিতে শত্রুদের ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো,কিন্তু নিজেই ভয়ানকভাবে আহত হলো।এক চিলতে আগুন তার ডানায় লাগলো,তীক্ষ্ণ দাঁত আর নখরে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত হলো।
তারপর,এক চরম আঘাতে বাদামি ড্রাগনটি পাহাড়ের কিনারা থেকে নিচের দিকে পড়ে যেতে লাগলো।বাতাসে ধুলোর ঝড় উঠলো,সমস্ত দৃশ্য যেন ধোঁয়ায় ঢেকে গেলো।ঠিক সেই মুহূর্তে, সে করুণ স্বরে চিৎকার করে উঠলো—

“জাইরন!”
আর ওপরে,সবুজ ড্রাগনটি ধীরে ধীরে আবছা মানব রূপ নিতে নিতে কেঁপে উঠে বললো—
“এলিজিয়া!”
ফিওনা ধপ করে উঠে বসল।বুক ধড়ফড় করছে,শ্বাস দ্রুত হয়ে গেছে।তার মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এলো,
“জাইরন!”
তারপর,মুহূর্তের মধ্যেই সে থেমে গেলো।ফিওনা অবাক হয়ে চারপাশ দেখলো—এ তো তার নিজের কক্ষ,ফ্লোরাস রাজ্যের নরম বিছানা।
কিন্তু এই স্বপ্ন?কেনো সে এমন কিছু দেখলো?কে এই এলিজিয়া?আর জাইরন কে?
স্বপ্নের ভেতরের দৃশ্যগুলো একটার পর একটা তার মাথায় ভেসে উঠছিলো।বাদামি ড্রাগনটির জায়গায় সে নিজেকে ভাবতে লাগলো,আর সবুজ ড্রাগনের জায়গায় জ্যাসপারকে! কিন্তু… এ কীভাবে সম্ভব?
ফিওনা মাথায় হাত রাখলো।গলাটাও যেন শুকিয়ে গেছে। সবকিছু ভীষণ বাস্তব মনে হচ্ছিলো,যেন কোনো ভুলে যাওয়া স্মৃতি হঠাৎ করে ফিরে এসেছে।কিন্তু এমন কিছু তো কখনো ঘটেনি!
তারপর,হঠাৎই একটা প্রশ্ন তার মনে উদয় হলো—

“এসবের সাথে আমার সম্পর্ক কী?কেনো আমি এই স্বপ্ন দেখলাম?এলিজিয়া কে?জাইরনই বা কে?”
কোনো উত্তর ছিলো না,শুধু এক অজানা রহস্য,যা ক্রমেই গাঢ় হতে লাগলো।
ফিওনা ধপ করে উঠে বসার পরও বুকের ধড়ফড়ানি কমছিলো না।স্বপ্নের দৃশ্যগুলো মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো—জাইরন,এলিজিয়া,সেই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ,পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়া…
কিন্তু হঠাৎই সে আরেকটা অদ্ভুত পরিবর্তন টের পেলো।
তার ঘাড়ের ট্যাটুটা হালকা গরম হয়ে উঠলো।
ফিওনা চমকে উঠলো,হাত দিয়ে স্পর্শ করলো জায়গাটা। কিন্তু স্পর্শ করতেই যেন তার সারা শরীরে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো।ব্যথা!এক ধরণের অদ্ভুত ব্যথা ট্যাটু থেকে ছড়িয়ে পড়ছে,যেনো কিছু সিগন্যাল দিচ্ছে!
“এটা…এটা আবার হচ্ছে কেন?” ফিওনা চাপা গলায় ফিসফিস করলো।
সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখার চেষ্টা করলো।ট্যাটুটার গাঢ় নকশা যেন হালকা জলজল করছিলো,ঠিক যেন কোনো এক্টিভ শক্তি এতে জেগে উঠেছে!
আর তখনই তার মাথায় ভেসে উঠলো স্বপ্নের সেই শব্দ…

“জাইরন!”
ফিওনার চোখ বড় হয়ে গেলো।এই নামটা কোথা থেকে এল? আর কেনই বা তার শরীর এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে?
তারপর সে ধীরে ধীরে টের পেলো—এটা শুধুই ব্যথা নয়,এটা যেনো একটা বার্তা!
কিন্তু বার্তাটা কী?কে দিচ্ছে?
ফিওনা বুঝতে পারলো,তার অতীতের সঙ্গে এই ট্যাটুর,এই স্বপ্নের,আর এই নামগুলোর গভীর কোনো সংযোগ আছে। কিন্তু কী সেই সংযোগ,তা জানার জন্য তাকে আরও গভীরে যেতে হবে।
কক্ষের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছিলো।ফিওনা হাত দিয়ে ট্যাটুটার ওপর চেপে ধরলো,মৃদু কাঁপতে কাঁপতে বললো “আমাকে জানতে হবে…স্বপ্নটা কিসের ইঙ্গিত?এলিজিয়া কে?”
ঠিক তখনই,বাইরে কোথাও বজ্রপাতের শব্দ হলো।
একটা ঝড় যেন তার অতীতকে তুলে আনতে চলেছে…

এদিকে জ্যাসপারও গভীর ঘুমে ছিলো,কিন্তু হঠাৎই তার শরীরে একটা তীব্র ধাক্কা অনুভব করলো।
তার ঘাড়ের সবুজ ড্রাগনের ট্যাটুটা যেন জ্বলতে শুরু করলো!
সে তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো। কক্ষের অন্ধকারের মধ্যেও তার গাঢ় সবুজ ট্যাটু জ্বলজ্বল করছিলো,যেন কারও সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চাইছে।
“আবারও?”জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো,নিজের ঘাড়ে হাত বুলিয়ে।
তার মনে পড়ে গেলো,শেষবার যখন এমন হয়েছিলো,তখন সে পৃথিবীতে ছিলো।আর এবার?এবার তো ফিওনা ভেনাসে। তাহলে কি এর সঙ্গে ফিওনার কোনো সম্পর্ক আছে?
সে নিজের হাতের মুঠি শক্ত করলো।
“না,এখানে কিছু একটা ঠিক নেই।”
জ্যাসপার ধীরে ধীরে নিজের ভেতরের ড্রাগন ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করে ট্যাটুর সংকেত বোঝার চেষ্টা করলো।কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না।বরং মনে হলো,কারও উপস্থিতি সে অনুভব করতে পারছে…কারও যার অস্তিত্ব অনেক গভীরে চাপা পড়ে আছে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫

তারপর হঠাৎই মনে পড়ে গেলো দেবতা আভ্রাহার কথা।
“তিনি বলেছিলেন আমি জাইরনের পুনর্জন্ম আর এলিজিয়া হচ্ছে অ্যালিসা।”
“এলিজিয়া?” জ্যাসপার ধীরে ধীরে নিজের মনে কথাটা আওড়ালো।
তার হাত দুটো কাঁপছিলো।যদি অ্যালিসা সত্যিই এলিজিয়া না হয়…তাহলে কি এতদিন সে ভুল বুঝেছে?
সে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।
“কালকেই আবার দেবতা আভ্রাহার কাছে যেতে হবে।”
জ্যাসপার জানে,দেবতা কিছু লুকিয়ে রেখেছে।সে আজ আর বিশ্রাম নেবে না।কাল যে করেই হোক,তাকে সত্যটা জানতে হবে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৭