আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৮
সাবিলা সাবি
আকাশে নিস্তব্ধতা।এক নিঃসঙ্গ চাঁদ তার বিবর্ণ আলো ছড়িয়ে রেখেছে ভেনাসের বুকে।পাহাড়ের ওপরে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।চারদিকে ধোঁয়ার মতো কুয়াশা ভাসছে, যেন অজানা কোনো অতীতে ডুবে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।জ্যাসপার গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে,তার নিঃশ্বাস ধীর,কিন্তু হঠাৎই কপালে শিরশিরে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে।
হঠাৎ,দৃশ্য বদলে যায়—
চারপাশে আগুনের লেলিহান শিখা,মাটিতে গলিত লাভার ধারা,আর তার মাঝখানে তিনটি ড্রাগন!
একটি সবুজ ড্রাগন,একটি কালো ড্রাগন,আর একটি বাদামী ড্রাগন।
ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে।আকাশ কেঁপে উঠছে তাদের বজ্রধ্বনিতে। কালো ড্রাগন রাগে দাউ দাউ করে জ্বলছে,তার পাখাগুলো ছি*ন্নভিন্ন হলেও সে অনড়,যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।বিপরীতে, সবুজ ড্রাগনের চোখে এক দহনশীল অগ্নিশিখা,যেন প্রতিশোধে উন্মত্ত।তাদের সংঘর্ষে পাহাড়ের শৃঙ্গ ধ্বংস হচ্ছে, বাতাসে ধূলি আর ছাই উড়ছে।সবুজ ড্রাগন কালো ড্রাগনের দিকে তেড়ে এসেছে, যুদ্ধ ভয়ঙ্কর!
আগুন আর থাবার আঘাতে আকাশ কেঁপে উঠছে, বাতাসে ধাতব গর্জন!
ঠিক তখন—
বাদামী ড্রাগন ছুটে আসে সবুজ ড্রাগনের দিকে!
সে যেন বাধা দিতে চায়, রুখতে চায় এই ধ্বংস!
কিন্তু…
তার দেহে আচমকা কালো ড্রাগনের থাবার আঘাত!
এক ভুল।
এক ভয়ংকর ভুল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাদামী ড্রাগন আকাশ থেকে ছিটকে যায়,পাহাড়ের কিনারায় তার দেহ দুলতে থাকে সে জোরে চিৎকার করে ডাকে জাইরন বলে।
ঠিক তখনি কালো ড্রাগনের চোখ বিস্ফারিত!
সে মুহূর্তের জন্য সবকিছু ভুলে ছুটে যায় তাকে বাঁচাতে!
সবুজ ড্রাগনও থমকে যায়।
তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে এক আর্তনাদ—
“এলিজিয়া!”
কালো ড্রাগনের গর্জনও একসাথে মিশে যায়—
“এলিজিয়া!”
তাদের একই চিৎকার!
ভয়ংকর পরিণতি
কালো ড্রাগন কিছু না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়ে, বাদামী ড্রাগনকে বাঁচানোর জন্য।
সবুজ ড্রাগনও ছুটে আসে, কিন্তু তার চোখ জ্বলছে ক্রোধে।
সে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে পারে না!
কালো ড্রাগনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে!
কিন্তু…
কালো ড্রাগন আর আক্রমণ করে না।
সে কেবল আহত হয়ে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ে…
তার ডানা দুর্বল, শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
সে তাকিয়ে আছে বাদামী ড্রাগনের দিকে, যার মুখে একরাশ আতঙ্ক।
পরের মুহূর্তে—
কালো ড্রাগন পাহাড় থেকে নিচে পড়ে যায়।
বাদামী ড্রাগনের চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়, যেন তার সমস্ত জীবন এক নিমিষে ধসে গেলো।
সবুজ ড্রাগন সেই দৃশ্য দেখে এক মুহূর্ত থমকে থাকে।
তার শ্বাস ভারী হয়ে আসে।
তার চোখে এক অভিব্যক্তি খেলা করে—
ক্ষোভ, যন্ত্রণা…আর অপরিসীম শূন্যতা।
সে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না।
নিজেই নিজকে হত্যা করে পাহাড়ের নিচে ঝাঁপ দেয়।
সেখানে,শূন্যতার গভীরে,তিনটি ভাগ্য এক বিন্দুতে মিলিত হয়— তিনটি দেহ নিস্তব্ধ পড়ে থাকে,সময়ের গহ্বরে বিলীন হয়ে যায়।
জ্যাসপার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে জেগে ওঠে!অতীতের ছায়া
জ্যাসপার ধীরে ধীরে শ্বাস নেয়।তার দেহ এখনো ঘামে ভেজা, বুক ধড়ফড় করছে।
এই স্বপ্ন—এটা নতুন কিছু নয়,বহুদিন ধরে একই দৃশ্য ফিরে ফিরে এসেছে তার কাছে।
সবুজ ড্রাগন— জাইরন।
বাদামী ড্রাগন— এলিজিয়া।
এরা তো চিরচেনা,কিন্তু…
আজকের স্বপ্নে নতুন এক ছায়া এসেছে!
এক কালো ড্রাগন।
সে লড়াই করছিল জাইরনের সাথে,
কিন্তু যুদ্ধের মাঝেও,সে এলিজিয়াকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিল!
আরও ভয়ংকর এক ব্যাপার…
সেও এলিজিয়াকে “এলিজিয়া” বলে ডাকছিল!
জ্যাসপারের দেহ এক মুহূর্তে জমে গেলো।
এটা অসম্ভব!
দেবতা আভ্রাহার তো বলেছিলেন—
“শুধুমাত্র জাইরন এই নামে ডাকতো তাকে অন্য কেউ না!”
তাহলে এই কালো ড্রাগন কে?
কেন তার কণ্ঠে একই আবেগ?
কেন তার চিৎকারেও ছিল সেই একই আকুলতা?
থেরন…?
হঠাৎ,তার মনে পড়ে গেলো।থেরন!
তাদের একমাত্র শত্রু।…
তবুও আজকের স্বপ্নে সে ঠিক তেমন ছিল না।
সেই কালো ড্রাগনটা লড়াই করেনি,প্রতিহিংসার বদলে সে ছুটে গিয়েছিল এলিজিয়াকে বাঁচাতে।
তাহলে কি… ইতিহাসের পাতায় ভুল লেখা হয়েছিল?
থেরন কি সত্যিই শুধু একজন ভিলেন ছিল?
না কি তার গল্পের আরেকটি অজানা দিক ছিল,যা সময়ের অতলে হারিয়ে গিয়েছিল?
জ্যাসপার ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলো।
সে নিশ্চিত— এই রহস্যের সমাধান তাকে করতেই হবে।
অন্যদিকে……
গভীর রাত।নিঃস্তব্ধতার মাঝে এক ঘরের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো প্রবেশ করছে।ঘরের ভেতর কেউ একজন হঠাৎ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।
তার নিঃশ্বাস ভারী,বুক দ্রুত ওঠানামা করছে।
স্বপ্ন?
না,এটা শুধু স্বপ্ন নয়।এটা ছিল এক ভিন্ন বাস্তবতা— যা সে আগে কখনো দেখেনি,কখনো অনুভবও করেনি!
তার পাশে রাখা টেবিলে এক গ্লাস পানি ছিল,কাঁপা কাঁপা হাতে সেটি ঠোঁটে তুললো।
সে ভাবতে লাগলো…
এই তিন ড্রাগন কারা?
কেন তাদের যুদ্ধ হচ্ছিল আর তারা কেনো আমার স্বপ্নে আসলো?
সবুজ ড্রাগন,কালো ড্রাগন,আর বাদামী ড্রাগন…
আর…
“এলিজিয়া!”
এই নামটা কেন তার মনের মধ্যে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে?
কে সে?
আর… “জাইরন”…
কেন এই নাম শুনে তার বুকের ভেতর চাপা এক কষ্ট অনুভূত হলো?কেন তার মনে হচ্ছে,এই নামের সাথে তার এক গভীর সম্পর্ক আছে?সে জানে না কেন,কিন্তু তার ভেতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে।যেন সে এই নামগুলো ভুলে গেছে,অথচ এগুলো একসময় তার নিজেরই ছিল।
এই স্বপ্ন…এই স্মৃতি…সত্যি তো?
না কি ভুলে যাওয়া অতীত তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে?
সে জানে না।কিন্তু সে একদিন জানবেই।
সকালের প্রথম আলো জানালার পর্দায় নরম পরশ বুলিয়ে দেয়,কিন্তু ফিওনার জন্য সকালটা স্বাভাবিক ছিল না।
গভীর রাত থেকেই ঘাড়ের সেই ট্যাটুতে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে।
প্রতিদিনই হচ্ছে,তবে আজ যেন আরেক ধাপ বেশি।
সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ের সেই জায়গাটা স্পর্শ করলো,যেন কিছু একটা অনুভব করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু এই অদ্ভুত ব্যথার অর্থ কী?কেন এটা প্রতিদিন বাড়ছে?
আর কেনই বা মনে হচ্ছে,এটা শুধুই শারীরিক ব্যথা নয়, বরং এক গভীর কিছু… এক হারানো স্মৃতির ডাক?
এবার আর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়।
ফিওনা দ্রুত তার মায়ের কাছে ছুটে গেলো।
লিয়ারা তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন,কিন্তু মেয়ের উত্তেজিত কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকালেন।
“মা,এটা আর সহ্য করতে পারছি না আমি!”
ফিওনার কণ্ঠ কাঁপছিল।
লিয়ারা অবাক হয়ে তার মেয়ের কথা শুনলেন,তার ব্যথার কথা,তার অদ্ভুত অনুভূতির কথা আর অদ্ভুত স্বপ্নের রহস্যের কথা।
কক্ষের বাতাস ভারী হয়ে গেলো।
এক মুহূর্ত নীরব থাকার পর লিয়ারা গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন।”তুমি এখন ভার্সিটিতে যাও,” লিয়ারা শান্ত কণ্ঠে বললেন।”আমি সন্ধ্যায় তোমাকে দেবতা আভ্রাহারের কাছে নিয়ে যাবো।ওনার কাছেই এর উত্তর আছে।” লিয়ার বুঝতে পারলো বিষয়টি স্বাভাবিক না,খুব বড় কোনো রহস্য জড়িয়ে আছে।
ফিওনার বুকের ভেতর ধুকপুক করে উঠলো।
দেবতা আভ্রাহার!কিন্তু কেন?এই ব্যথার সাথে কি সত্যিই কোনো অতিপ্রাকৃত সত্য লুকিয়ে আছে?ফিওনার মনে হাজারো প্রশ্ন,কিন্তু আজ সন্ধ্যার অপেক্ষা করা ছাড়া তার কোনো উপায় নেই।
সকাল থেকে ক্লাসের চাপ,সঙ্গে ঘাড়ের অসহনীয় ব্যথা—ফিওনার মন আজ ঠিকমতো ক্লাসে ছিল না।
অবশেষে বিরতির ঘণ্টা বাজল।
সে ক্লাসের ব্যাগ কাঁধে ফেলে বেরিয়ে যেতে যাবে,ঠিক তখনই একজন অপরিচিত ছেলে সামনে এসে দাঁড়াল।
“এই পার্সেলটা আপনার জন্য,”ছেলেটা বলল,যেন সে শুধুই একজন বার্তাবাহক।
ফিওনা অবাক হয়ে পার্সেলটা নিলো।
“কে দিয়েছে?”
ছেলেটা কেবল মাথা নেড়ে চলে গেলো,কোনো উত্তর না দিয়ে।
ফিওনা কৌতূহলী হয়ে পার্সেল খুলল।ভেতরে তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার—চাইনিজ ডাম্পলিং আর চাউমিন!
এক মুহূর্তের জন্য সে হতভম্ব হয়ে গেলো।
ভেনাসে এই খাবার কোথা থেকে এলো?
আর এই খাবার পাঠালোই বা কে?
কিন্তু তার ভাবনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেল ক্ষুধা।
না, এখন এসব চিন্তার সময় নয়!
সে খাবারের প্যাকেটটা শক্ত করে ধরে দ্রুত ক্যান্টিনের দিকে ছুটে গেলো,মুখে এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাসের হাসি।
তবে একটাই প্রশ্ন ওর মাথায় ঘুরছিল—যদি ভেনাসে এসব খাবার না থাকে,তাহলে কে জানলো যে এগুলো ওর সবচেয়ে প্রিয়?
ফিওনা ক্যান্টিনে ঢুকতেই লুকাসের মুখে প্রশস্ত হাসি দেখে তার মনে হলো— এটা নিশ্চয়ই লুকাসের কাজ!
সে এক মুহূর্তও দেরি না করে সরাসরি লুকাসের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।”অনেক অনেক ধন্যবাদ!এমন একটা সারপ্রাইজের জন্য!”
লুকাস কিছু বলতে যাবে,কিন্তু ফিওনা তাকে থামিয়ে বলল,
“তবে তুমি কিভাবে জানলে আমার পছন্দের খাবার এগুলো?আর…এগুলো কোথা থেকে পেলে?”
লুকাস এবার পুরোপুরি থ হয়ে গেলো।
তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো,ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল ফিওনার দিকে।”সারপ্রাইজ? কী বলছো তুমি?”
ফিওনা এবার চমকে উঠল।
লুকাসের চেহারা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে,সে সত্যিই কিছু জানে না।
তাহলে কে পাঠালো এই খাবার?ফিওনা এক মুহূর্ত ভাবল।
এই ভার্সিটিতে আর কে থাকতে পারে?তার খুব বেশি পরিচিত কেউ নেই… হঠাৎ এথিরিয়নের কথা মনে পড়লো!কিন্তু সে কেনো পাঠাবে?তাদের মধ্যে তো সেরকম গভীর বন্ধুত্ব নেই!তাহলে?ফিওনা এবার সত্যিই বিভ্রান্ত হয়ে গেলো।
তার সামনে রাখা খাবারের প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে মনে হলো—এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কেউ আছে!
ফিওনা আর বেশি ভাবতে পারল না।তার খিদে পেয়ে গেছে, আর খাবারগুলো দেখতে এতটাই সুস্বাদু যে আর দেরি করা সম্ভব নয়।
সে চপস্টিক হাতে তুলে নিয়ে প্রথমেই ডাম্পলিং মুখে দিলো—নরম আর রসালো স্বাদটা মুহূর্তেই তার জিভে ছড়িয়ে পড়লো।
“উফ!অসাধারণ! একদম পারফেক্ট!”
লুকাস পাশে বসে ফিওনার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছিলো।
সে হাসতে হাসতে বলল, “তুমি এতটা এক্সাইটেড কেন ফিওনা আজকে,এর আগেও তো ক্যান্টিনে অনেক খাবার খেয়েছো?”
ফিওনা মুখ ভরে চাউমিন তুলতে তুলতে বলল,
“হুম…কিন্তু এটা পৃথিবীর চাইনিজ খাবার!ভেনাসে তো এর স্বাদ কখনো পাইনি!”
তার কথায় লুকাসের চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেলো।
“তাই নাকি?তাহলে আমাকেও একটা দাও দেখি!”
ফিওনা শুধু লুকাসকেই নয়,বরং তার আশপাশে থাকা কয়েকজন ক্লাসমেটকেও খাবার দিতে লাগলো।
ফিওনা হাসিমুখে সবাইকে খাবারের ভাগ দিলো। লুকাস, লেনোরা, আর আরও কয়েকজন ক্লাসমেট আশ্চর্য হয়ে স্বাদ নিতে লাগলো।
“দারুণ! পৃথিবীর মানুষ এত সুস্বাদু খাবার বানাতে পারে, এটা জানা ছিল না!” লেনোরা খুশিতে বললো।
“হ্যাঁ! বিশেষ করে এই ডাম্পলিং,ভেতরে এত রসালো আর মসৃণ স্বাদ! আমাদের ভেনাসের খাবারের চেয়ে একদম আলাদা!” আরেকজন যোগ করলো।
ফিওনা মুচকি হেসে বলল,”পৃথিবীর খাবার শুধু সুস্বাদুই নয়,এর পিছনে অনেক ঐতিহ্যও আছে।
যেমন এই ডাম্পলিং,এটা বিশেষ উৎসবে তৈরি করা হয়, আর চাউমিন হলো একটা জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড!”
সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো।খাবারের স্বাদ আর নতুন সংস্কৃতির গল্প তাদের মন ভরিয়ে তুলেছিলো।
কিন্তু ফিওনার মনে তখনো একটা প্রশ্ন ঘুরছিলো—
এই খাবারগুলো কে পাঠালো?
ভেনাসে পৃথিবীর খাবার তো সহজে পাওয়ার কথা নয়…
ক্লাস শেষ করে ফিওনা ব্যাগ নিয়ে মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। বাতাসে প্রশান্তি ছিল, কিন্তু তার মনের মধ্যে অস্থিরতা linger করছিল। মাঠের দিকে পৌঁছানোর আগেই, হঠাৎ করে তার সামনে কেউ একজন এসে দাঁড়াল। সে একটি বোতল এগিয়ে দিল, বোতলের মধ্যে তার প্রিয় ওয়াটারমেলন জুস ছিল।
ফিওনা প্রথমে বোতলটির দিকে তাকালো,তারপর উঁচু কণ্ঠে প্রশ্নটি শুনতে পেলো। “খাবার কেমন ছিলো? আপাতত তোমার এই জুসটা খাওয়ার প্রয়োজন,তাই না?”
ফিওনা বোতলটা হাতে নিলো,চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সে ধীরে ধীরে মুখ তুলতেই দেখতে পেলো—জ্যাসপার!
তার ঠোঁটের কোণে হালকা রহস্যময় হাসি,চোখে চিরচেনা সেই অনুচ্চারিত দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা।
ফিওনা বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এখানে আজকেও?আর…আপনি সেই খাবার পাঠিয়েছেন?আপনি কিভাবে জানলেন ওগুলো আমার পছন্দের?আর আপনি এগুলো পেলেনই বা কোথায়?”
জ্যাসপার এক মুহূর্ত নীরবে তাকিয়ে থাকলো,
তারপর কোমল বিরক্তির সুরে বললো,”উফ,হামিংবার্ড! এত প্রশ্ন একসাথে কেউ করে?নিশ্চয়ই প্রশ্ন করতে করতে গলা শুকিয়ে গেছে।আগে জুসটা খাও।”
ফিওনা ঠোঁট কামড়ে দ্বিধায় পড়ে গেলেও,ওয়াটারমেলন জুসের ঠান্ডা স্বাদ কল্পনা করতেই আর দেরি করলো না। বোতলের মুখ খুলে এক চুমুক দিতেই স্বস্তির একটা শ্বাস ফেললো।কিন্তু ঠিক তখনই জ্যাসপার হঠাৎ হাত বাড়িয়ে বোতলটা ওর হাত থেকে নিয়ে নিলো।
ফিওনা হতভম্ব হয়ে দেখলো,কোনো সংকোচ ছাড়াই জ্যাসপার একই বোতল থেকে এক চুমুক নিয়ে ফেলেছে।
তার চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে গেলো, “আপনি…!”
কিন্তু জ্যাসপার নির্বিকার ভঙ্গিতে বোতলটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “কি হলো?তোমার কি জুস কম পড়ে গেলো নাকি?”
ফিওনা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো,গাল গরম হয়ে উঠছে কিনা সেটা জানার জন্য তাকানোর দরকার ছিল না।
কড়া রোদ মাথার ওপরে তেতে উঠেছে, গরম বাতাস গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে। ফিওনা কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে হঠাৎ শুনলো জ্যাসপারের কণ্ঠ,
“রোদে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে তোমার শরীরের গ্লুকোজ কমে গেছে।তোমাকে এখন গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে।”
ফিওনা ভ্রু কুঁচকে তাকালো, “মানে? এখনই কি গ্লুকোজের’র জুস খাওয়াবেন?”
জ্যাসপার ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি টেনে বললো,”না, অরিজিনাল গ্লুকোজ খাওয়াবো।চলো।”
ফিওনা আরও বেশি অবাক হলো,”কোথায়?”
কিন্তু উত্তর দেওয়ার বদলে জ্যাসপার ওর হাত ধরে এক টান দিলো,ফিওনা কিছু বোঝার আগেই ওকে নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে উঠে গেলো দোতলায়,একটা ফাঁকা ক্লাসরুমের দিকে।
ফাঁকা ক্লাসরুমে ঢুকতেই ফিওনা একধাপ পিছিয়ে গেলো, সন্দিহান দৃষ্টিতে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?”
জ্যাসপার দরজাটা ধীরে বন্ধ করে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো।এক মুহূর্ত চুপ থেকে,চোখে অদ্ভুত এক ঝিলিক নিয়ে বললো,
“পড়তে পড়তে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছো,আর অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলতেও নিশ্চয়ই খুব পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছো,তাই না?”
ফিওনা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।”মানে?”
জ্যাসপার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে বললো,”এই জন্যই তোমার শরীরে এখন গ্লুকোজের দরকার।”
ফিওনা কিছু বুঝতে পারছে না।কথাগুলো কী রসিকতা করে বলছে,নাকি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো অর্থ?তার মন বলছে,জ্যাসপার নিশ্চয়ই বিরক্ত—কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছে না,কারণ ওর চোখে সানগ্লাস।যদি চোখ দেখতে পেতো,তাহলে হয়তো বুঝতে পারতো কথাগুলো রাগে বলছে, নাকি…অন্য কোনো অনুভূতিতে!
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনার দিকে এগিয়ে এলো, যেন সময় থমকে গেছে। ফিওনার হৃদস্পন্দন তীব্র হয়ে উঠলো, যখন সে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো।তার কাঁধে চাপ পড়লো,আর সে ভয় আর উত্তেজনার মিশ্রণে জিজ্ঞেস করলো,“আপনি কি করতে যাচ্ছেন?”ফিওনার কণ্ঠে একটি সংকীর্ণতা ছিল,।
জ্যাসপার তার চোখের গভীরতায় ডুব দিতে দিতে বললো, “গ্লুকোজ খাওয়াতে যাচ্ছি।” বলার সঙ্গে সঙ্গেই জ্যাসপার ফিওনার চোয়াল চেপে ধরে তার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
ফিওনা প্রথমে নিজেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করলো,কিন্তু জ্যাসপারের স্পর্শে তার শরীর এক অজানা আকর্ষণে মোহিত হয়ে গেল।জ্যাসপারের ঠোঁটের স্পর্শে ফিওনার হৃদয় তোলপাড় করতে লাগলো।জীভে গ্লুকোজের স্বাদ পেয়ে ফিওনা যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করলো।ফিওনার ভিতরে এক অদ্ভুত উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়লো। সে যেনো এক মুহূর্তে সব কিছু ভুলে গেলো,কেবল জ্যাসপারের ঠোঁটের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লো।উন্মাদের মতো,সে জ্যাসপারের ঠোঁটজোড়াকে আরো গভীরভাবে চুম্বন করতে লাগলো,যেন মিষ্টি স্বাদের জন্য তাঁর অসীম তৃষ্ণা ছিল।তাঁর প্রতিটি শ্বাস যেন সেই মিষ্টির পরশে ভরে উঠছিলো।
ফিওনার নিঃশ্বাস দ্রুত চলছিল, হৃদস্পন্দন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠেছে। জ্যাসপার তার মুখটি শক্ত করে ধরে রেখেছিল, আর ফিওনা বাধ্য হচ্ছিল তার গভীর, দাবিদার চুম্বনের জবাব দিতে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে, প্রতিরোধের বদলে ফিওনা নিজেই জ্যাসপারকে আরও কাছে টেনে নিল, তার শার্টের কলার মুষ্টিবদ্ধ করে এমনভাবে চেপে ধরল যেন এটি জীবনের একমাত্র আশ্রয়।
জ্যাসপার অবাক হয়ে অনুভব করল ফিওনার প্রতিক্রিয়া। প্রথমে সে ভেবেছিল, ফিওনা নিশ্চয়ই পালানোর চেষ্টা করবে, তার চুম্বন প্রত্যাখ্যান করবে। তাই সে তার শরীরের গ্লুকোজ ব্যবহার করেছিল—একটি চালাকি, যাতে ফিওনা বাধ্য হয় প্রতিক্রিয়া জানাতে। কিন্তু সে যা প্রত্যাশা করেনি, তা হলো ফিওনার উন্মাদনার মতো সাড়া।
ফিওনার ঠোঁট নরম অথচ দাবিদার, যেন এতদিন ধরে লুকিয়ে রাখা তৃষ্ণা এক মুহূর্তেই ভেঙে পড়েছে। তার নখ জ্যাসপারের ঘাড়ে গভীরভাবে বসে যাচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আসা নিঃশ্বাসে তার শরীর কাঁপছে।
জ্যাসপারের রক্ত গরম হয়ে উঠল। এই অনুভূতি তার জন্য নতুন নয়, তবু আজকের মুহূর্তটা অন্যরকম। সে তার সমস্ত নিয়ন্ত্রণ শক্ত করে ধরে রেখেছে, কিন্তু ফিওনার আচরণে বুঝতে পারল, সে ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।
ফিওনা তার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জ্যাসপারকে আঁকড়ে ধরেছে, যেন তার অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দু এখন এই পুরুষটি। তার জীভ স্পর্শ করল জ্যাসপারের, মধুর স্বাদে যেন নিজেই তলিয়ে যাচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য ফিওনার মনে হলো, সে যদি এই মুহূর্তে মরেও যায়, তাতেও কিছু যায় আসে না।
জ্যাসপারও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না। তার আঙুল ফিওনার কোমরে চেপে বসলো, সে আরও গভীর করে ফিওনাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।
কিন্তু ঠিক তখনই—
হঠাৎ,বাস্তবতা তাকে আঘাত করল।জ্যাসপারের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল,কপালের শিরাগুলো টান টান হয়ে গেল।
না,এটা চলতে দেওয়া যাবে না!
এক ঝটকায় জ্যাসপার ফিওনাকে ঠেলে দিল না ঠিকই,তবে
তার আঙুল এখনো ফিওনার চোয়ালে স্থির,ফিওনা তখনো বিভোর,তার চোখ আধখোলা,নিঃশ্বাস দ্রুত চলছে।
“রিল্যাক্স হামিংবার্ড,”জ্যাসপার ফিসফিস করে বলল,
কণ্ঠে সামান্য কাঁপুনি।
ফিওনার দৃষ্টি তখনো ঝাপসা, তার ঠোঁট লাল হয়ে উঠেছে, নিঃশ্বাসে এক ধরনের অস্থিরতা। কিন্তু যখন সে একটু সরে এল, তখনই খেয়াল করল—
জ্যাসপারের ঠোঁটের কোণে রক্ত!
হঠাৎই তার সম্বিত ফিরে এলো।
সে দ্রুত নিজের ঠোঁট হাত দিয়ে চেপে ধরল, যেন নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে এটা সত্যি ঘটেনি। কিন্তু মিষ্টি স্বাদ এখনো তার জীভে লেগে আছে।
ফিওনার চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল। এটা কি করলাম আমি?
সে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল না, দ্রুত ঘুরে দরজা খুলে ছুটে বেরিয়ে গেল। বুক ধড়ফড় করছে, মাথা ঝিমঝিম করছে।সে করিডোরের এক কোণে গিয়ে কাঁচের দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল,যেন এখনই পড়ে যাবে।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।আমি… আমি ওই প্রিন্সকে চুম্বন করেছি!
ফিওনা ধীরে ধীরে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল,কিন্তু যতবার সে তা করছিল,ততবারই সেই মিষ্টি স্বাদ জিহ্বায় ছড়িয়ে পড়ছিল। যেন কোনো অদ্ভুত মধুর আস্বাদ,যা একবার পেলে আর ভুলে থাকা সম্ভব নয়।
তার নিঃশ্বাস তখনো ভারী,বুক ধকধক করছে।
এটা কীভাবে সম্ভব?সে কি ভুল দেখছে?নাকি সত্যিই জ্যাসপারের ঠোঁট থেকে কিছু বেরিয়ে এসেছিল?
ফিওনা নিজের ঠোঁট আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখল। না,কোনো চিনি বা মধু মাখানো নেই।তবু কেন সেই স্বাদ এখনো এত প্রকটভাবে লেগে আছে?
তার মস্তিষ্ক নানা সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করতে লাগল।
ড্রাগনরা কি… চুম্বনের সময় গ্লুকোজ ছাড়ে?
কিন্তু এটা তো কল্পনার মতো শোনায়!
তারপরই মনে পড়ল,জ্যাসপার প্রথমবার যখন বলেছিল, “গ্লুকোজ খাওয়াতে যাচ্ছি,” তখন সে ভেবেছিল এটা নিছকই রসিকতা।কিন্তু এখন…না,এটা সাধারণ কিছু নয়।
ফিওনার জানা ছিল না,ভেনাসের অন্য কোনো ড্রাগনের মধ্যে এই ক্ষমতা আছে কি না।
কারণ এই বিশেষ ক্ষমতা শুধুমাত্র জ্যাসপারের।
তার শরীরের গভীরে এমন এক বৈশিষ্ট্য আছে,যা অন্য কারো নেই।জ্যাসপার চাইলে তার চুম্বনের মাধ্যমে শরীর থেকে একধরনের প্রাকৃতিক গ্লুকোজ নির্গত করতে পারে,যা মানুষকে এক মুহূর্তেই দুর্বল করে দেয়,একরকমের মিষ্টি নেশার মধ্যে ফেলে দেয়।
ফিওনা জানত না,তার ভেতরকার অস্থিরতা জ্যাসপারের ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি।সে শুধু অনুভব করছিল,তার ঠোঁট থেকে সেই স্বাদ মিলিয়ে যাচ্ছে না,বরং আরও গভীরে বসে যাচ্ছে।
আর সত্যিটা জানার আগেই সে হয়তো আবার সেই স্বাদ পেতে চাইবে…যা জ্যাসপার খুব ভালো করেই জানত।
জ্যাসপার ক্লাসরুমের নীরবতা ভেঙে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগোল। বের হওয়ার আগেই, এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়াল। নিজের ঠোঁটের কোনায় আঙুল চেপে ধরল, তারপর ধীরে ধীরে সামনে আনল।
রক্ত।
চোখের কোণে এক ঝলক শয়তানি হাসি খেলে গেল।
হাহ… অবশেষে।
এর আগে প্রতিবার সে-ই ফিওনাকে উন্মাদের মতো চুম্বনে ডুবিয়েছে, তার প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আজ—
আজ প্রথমবার ফিওনা নিজেই তার দিকে ঝুঁকেছিল, নিজেই তাকে আকড়ে ধরেছিল, যেন কোনো অজানা তৃষ্ণায় পুড়ছে।
এই অনুভূতি… অদ্ভুত, নতুন।
সে ভেবেছিল, সাধারণ চুম্বনে ফিওনা বাধা দেবে, তাই গ্লুকোজ বের করেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেই গ্লুকোজের মিষ্টি স্বাদ শুধু ফিওনাকেই দুর্বল করেনি—একভাবে তাকেও আক্রান্ত করেছে।
গ্লুকোজের প্রভাব শেষ হওয়ার পর কি ফিওনা আবার আগের মতো হয়ে যাবে?
নাকি এই অনুভূতি তার মাঝেও রয়ে যাবে?
জ্যাসপার দরজার ফাঁক দিয়ে শেষবারের মতো ক্লাসরুমের ভেতর তাকাল।
কাঠের ডেস্কগুলো এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, বাতাসে হালকা তার আর ফিওনার গায়ের সুবাস মিশে আছে।
সে মৃদু হাসল।
হুমিংবার্ড, তুমি নিজেও জানো না তুমি কী করেছ।
তারপর সে দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে গেল, যেন কিছুই হয়নি।
কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা সেই মৃদু হাসিটা এখনো মিলিয়ে যায়নি।
জ্যাসপার আজ ভার্সিটি এসেছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক উদ্দেশ্যে—লুকাসকে হুমকি দেওয়া,তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া যে সে যেন ফিওনার কাছ থেকে দূরে থাকে।
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৭
কিন্তু এখন?
সব ভুলে গেছে।
ফিওনার উন্মাদ প্রতিক্রিয়ার পর তার মস্তিষ্ক যেন কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছে।
সে স্পষ্টই মনে করতে পারছে ফিওনার কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো,তার ক্ষু*ধার্ত চাহনি,সেই নরম ঠোঁটের আগ্রাসন…
জ্যাসপার এক ঝলক আকাশের দিকে তাকাল, তারপর ধীর পায়ে করিডোর ধরে হাঁটা দিল, তার দীর্ঘ ছায়া পড়ে থাকল পিছনে—অন্ধকারের মতো, যা আস্তে আস্তে ফিওনাকে গ্রাস করতে চলেছে।