আয়ুর প্রহর পর্ব ৪

আয়ুর প্রহর পর্ব ৪
তুশিতা নুর তৃষ্ণা

প্রহর আয়ুশ কে পিছন থেকে ডাকতে যাবে ঠিক তখনি আয়ুশ নিজেই ফিরে এসে প্রহরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপর বললো,
–“আপনার নাম্বার টা দিন তো।”
–“আমার তো ফোনই নেই।”
প্রহরের কথা শুনে আয়ুশ আফসোসের স্বরে বলে উঠলো,
“ওহ শিট!তখন যে কেন খেয়াল করলাম না!আপনি আমায় বলতে পারতেন যে আপনার ফোন নেই!”
উত্তরে প্রহর আর কিইবা বলবে?সে চুপ করে রইলো।
তারপর আয়ুশ শক্ত গলায় প্রহরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না ফিরে আসি,দরজা খুলবেন না। শুধুমাত্র আমার কন্ঠস্বর না শোনা অব্দি একদম খুলবেন না।আমি বাহির থেকে লাগিয়ে যাচ্ছি। আপনিও ভিতরে দরজা এঁটে বসে থাকবেন।ঠিকআছে?”

–“জি!ঠিক আছে!
আয়ুশ নিজের হাতের ঘড়িটা খুলে প্রহরের হাতে দিয়ে বললো,
–“সময় দেখে ঘুমিয়ে পড়বেন।ফিরতে দেরী হলে রাত জাগবেন না।আর একদম ভয় পাবেন না।”
প্রহর মাথা কাত করে আচ্ছা বলে জিজ্ঞেস করলো,
–“কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন এই রাত্রিবেলায়?
–“এতো কথা জিজ্ঞেস করবেন না, শুধু যা বলছি তাই করবেন।”
বলেই আবার চলে যেতে লাগলো আয়ুশ।বাহির থেকে দরজা লাগাতে গিয়ে কি মনে করে আবার ও ফিরে এলো সে।দেখলো প্রহর দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। আয়ুশ প্রহরের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে প্রহরের চোখের দিকে তাকিয়ে আকুতির স্বরে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“প্লিজ প্রহর,আমি না বলা পর্যন্ত দরজা খুলবেন না।যাই কিছু হয়ে যাক না কেন।দরজার ভিতরে এই রুমে আমি আপনাকে সেইফ মনে করি।এই শহরের মানুষ বড়ই স্বার্থপর।বড়ই বিশ্বাসঘাতক।কাউকে বিশ্বাস করি না আমি। আপনাকেও কারো কাছে রেখে আপনাকে অনিরাপদ রেখে যাওয়ার মতো রিস্ক আমি নিতে পারবো না প্রহর।আপনি প্লিজ দরজা খুলবেন না।”
বলেই প্রহরের উত্তরের অপেক্ষা না করে মাথা ঘুরিয়ে দরজা লাগিয়ে চলে গেল আয়ুশ।প্রহরের উত্তর সে চায়নি।কেন!কারণটা সে নিজেও জানে না।তবে এতটুকু জানে মেয়েটা কথা শুনবে,তার কথা সে ফেলবে না।আর ওইদিকে প্রহর ও স্বামীর বাধ্যগতা স্ত্রী হয়ে ভিতর থেকে ভালো করে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে স্বামীর আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।

অনিতা চিৎকার করে উঠতেই কাঁধে পাওয়া হাতের স্পর্শ তার মুখ চেপে ধরলো।কানে ফিসফিসিয়ে বললো,“আরে বোকা মেয়ে ,চিৎকার করিস না! আমি রে আমি!”
মুখ থেকে হাত সরে গেলে অনিতা পিছন ফিরে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস নিয়ে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো।বললো –“বাবা!কখন এলে!?
ততক্ষণে মিস্টার শামসুজ্জামান ডাইনিং এর লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছেন।তারপর অনিতার সামনে এসে বললেন,
–“এসেছি,একটু আগেই।তা মা,এতোরাতে এখানে কি করছিস?
–“আমি পানি খেতে এসেছি বাবা।”
–“পানি খেতে এসেছিস তো পানি কি এইদিকে নাকি?তুই তো গেস্টরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছিস।”
অনিতা খেয়াল করলো সে ডাইনিং পেরিয়ে গেস্টরুমের দিকে চলে এসেছে।অনিতা ভ্যাবাচ্যাকা গেল।বাবার কাছে এতোকিছু বলা যাবে না।তাই সে আমতা আমতা করে বললো,

–“আ আ আআসলে বাবা।আমার খেয়াল ছিল না।”
অনিতার বাবা একটু হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
–“বুঝি তো মা,ওখানে বিয়েটা হয়নি বলে মনে খারাপ?”
–“একদম না বাবা।আমি এখনই বিয়ে করতে চাইনি।”
–“আমি তোর বাবা।আমাকে এড়িয়ে যাস না অন্তত! চিন্তা করিস না।আমি তোকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিবো।এখন যা।রাত হয়েছে খুব।পানি খেয়ে গিয়ে ঘুমা।”
অনিতা আচ্ছা বলে পানি খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।একটু পরই আশপাশ দেখে মিস্টার শামসুজ্জামান গেস্টরুমের ভিতর উঁকি দিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,

–“শেহনাজ,এখন যদি ধরা পরে যেতে।তাহলে কি হতো?
–“মিস্টার শামসুজ্জামান এসে বাঁচাতো” বলেই হাসলেন শেহনাজ পারভীন।
–“তো এখানে কি করছো এতোরাতে?রুমে কথা বলা যেতো না?”
–“আরে বহুবছর আগে যে লোকটাকে দিয়ে একসময় কাজ করিয়েছিলাম না ওর কথা তোমার মনে আছে?কি নাম যেন ওর!!!!ও হ্যাঁ পলাশ।ওই পলাশ ফোনে চিৎকার করছে।বলছে ওর নাকি আরো টাকা লাগবে। কিন্তু কাজের সময় যা এমাউন্ট বলেছে তার পুরোটার সাথে বাড়িয়ে টাকা দিয়ে দিয়েছি। হঠাৎ এতোবছর পর ফোন দিয়ে সে বলে,তার নাকি তখন বুদ্ধি ছিল না।এখন বুদ্ধি হয়েছে।তাই আরো টাকা লাগবে।এসব ধান্দাবাজদের জাবাবে আমার ও তো কড়া গলায় কথা বলতে হবে।তাই এইখানে চলে এসেছি।তোমার মেয়ে যে এতোরাতে পানি খেতে চলে আসবে তা কি আমার জানা ছিল নাকি”?
শেহনাজের কথা শুনে শামসুজ্জামান চিন্তায় পড়ে গেলেন।এতো বছর বাদে পলাশ টাকা চাইছে কেন আবার!!তিনি বললেন,

–“আপাতত অনিতার কথা সাইডে রেখে পলাশের কথা ভাবতে হবে। হঠাৎ করে ও ফোন দিয়ে টাকা চাইবে কেন?আমরা তো বলেছি,ও যেন আর কখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে।ওকে বড় অংকের টাকা দেওয়ার পরেও ওর লোভ যায়নি দেখছি।”
–“এইজন্যই আমি ওইসময়ই বলেছিলাম,ওকেও উপরে পাঠিয়ে দাও। বিশ্বাসঘাতকদের বিশ্বাস করতে নেই।”
শেহনাজের সাথে শুনে শামসুজ্জামান ঈষৎ হেসে বললেন,
–“নো টেনশন বেবি,তখন পাঠাতে পারিনি তো কি হয়েছে।এখন তো পাঠিয়ে দিতে পারবো!”
শেহনাজ আঁতকে উঠলেন।অনেকবছর আগে দুজনে মিলে যে জঘন্য কাজটা করেছিলেন,ওইটার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো আবার!তিনি হতচকিত হয়ে বললেন,
–“তো এখন তুমি কি করতে চাইছো শামস?”
শামসুজ্জামান চোয়াল শক্ত করে বললেন,

আয়ুর প্রহর পর্ব ৩

–“এখন থেকে আগাম প্ল্যান করে রাখতে হবে। পলাশ’কে
ফোন দিয়ে বলো,তুমি ওর সাথে দেখা করতে চাও।” বলেই মুখ পাল্টে দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলেন মিস্টার শামসুজ্জামান।
সাথে সাথে দরজার পাশ থেকে একটা ছায়া সরে গেল।

আয়ুর প্রহর পর্ব ৫