আলোর ভীড়ে গল্পের লিংক || ইশরাত জাহান অধরা

আলোর ভীড়ে পর্ব ১
ইশরাত জাহান অধরা

নিজের নব বিবাহিত স্ত্রীকে সিড়িতে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো ইনাম।ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো মেয়েয়াটা সিড়ির ফ্লোরে বসে রেলিংয়ে মাথা থেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।ইনাম বা হাতে থাকা ঘড়িতে চোখ বুলালো।রাত ৯ টা ১৫ মিনিট!অনেকক্ষন ধরে কি এভাবে বসে ছিলো?ইনাম কয়েক কদম এগিয়ে গেলো।নিচু হয়ে ঝুঁকে ডাকতে লাগলো।দুই তিন বার ডাকার পরে প্রিয়তা হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠলো।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতেই ইনামকে দেখলো।ইনাম প্রিয়তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

“আপনি এখানে?”
প্রিয়তার কথা শুনে ইনাম বিরক্ত হয়ে বলল,
“এই সেইম কথাটা আমার তোমাকে জিজ্ঞেস করার কথা ছিলো!এখানে কি করছো?বাসার ঠিকানা পেলে কি করে?”
“মার কাছ থেকে নিয়েছি ঠিকানা।”
“আম্মুর কাছ থেকে?”
“হুম!”
“তো কি দরকারে এসেছো?”
“থাকার জন্য এসেছি!হাতে ব্যাগ দেখতে পারছেন না?”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,
“মানে?তুমি এখানে থাকবে?কিসের জন্য? ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কিসের জন্য মানে?আমি আপনার বউ!আপনার সাথে আমি থাকবো না তো কে থাকবে?”
কিছু একটা ভেবে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে প্রিয়তা এগোতে লাগলো ইনামের দিকে।প্রিয়তাকে এগুতে দেখে ইনাম অবাক হলো।প্রিয়তা এসে একদম ইনামের থেকে কয়েক ইঞ্চি দুরে দাঁড়িয়ে বলল,
“বাসাতে আপনার সংসার আছে?”
“মানে?”

“মানে আরেকটা বউ আছে?যাকে লুকানোর জন্য আমাকে বাসায় রাখতে চাচ্ছেন না!”
“কিসব উল্টাপাল্টা বলছো?মাথা কি ঠিক আছে?”
প্রিয়তা ইনামের থেকে দুরে সরে গিয়ে বলল,
“তাহলে আমাকে এখানে থাকতে দিবেন না কেন?নিশ্চয়ই কোন খাপলা আছে!”
কথাটা শুনে ইনাম শুকনো ঢোক গিললো।এদিক ওদিক তাকয়ে থেকে বলল,
“কিসের খাপলা?”
“বিয়ের রাতে যার সাথে লুকিয়ে কথা বলছিলেন ফোনে অই মেয়েটা নিশ্চয়ই এই বাসায় আছে!আপনার সাথে থাকে তাই না?”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,

“আমি তোমাকে আগেও বলেছি আমি অইদিন কোন মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম না!আমার কলিগের সাথে কথা বলছিলাম!এই একটা বিষয়কে ঘুরিয়ে পেচিয়ে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো!”
প্রিয়তা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
“বিয়ের দিন কারোর কলিগ ফোন দেয়!তাও আবার রাতের বেলা!”
“সারাদিন আমাকে ফোনে পায়নি।রাতে পেয়েছে!”
“আচ্ছা মানলাম আপনার কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক নেই। আমাকে বাসায় ঢুকতে দিন।সেই সকাল বেলা আসছি।এসে দেখি দরজায় তালা দেওয়া!”

“সারাদিন সিড়িতে বসে ছিলে?”
“তো?আপনার ফোন নাম্বারও তো আমার কাছে ছিলো না!”
“দেখো আমি এখন বাসায় ঢুকতে দিতে পারব না।আমার প্রবলেম আছে।আর আম্মুও না!না জানিয়ে না ডিসকাস করে হুট করে পাঠিয়ে দিয়েছে তোমায়!চলো বাসে তুলে দিচ্ছি তোমাকে।এসি বাসে!কোন ঝামেলা ছাড়াই পৌছে যাবে!”
প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল,

“কেমন হাজবেন্ড আপনি?আপনার স্ত্রী সারাটাদিন ধরে না খেয়ে ছিল।বাইরে সিড়িতে বসেছিলো।কই ঘরে নিয়ে একটু খাতির আপ্যায়ন করবেন।খাবার খেতে দিবেন।তা না করে আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন?আপনি এমন কেন?”
“খাবার বাইরের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নিবে!”
“আমি বাইরের খাবার খেতে পারি না।”
ইনাম কিছু বলতেই যাবে হুট করে এক মহিলা এসে বলল,
“আরে ইনাম!বাড়ি থেকে চলে এসেছো?”
ইনাম একবার প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,

“জ্বি!গতকালই এসেছি!”
মহিলার চোখে এবার প্রিয়তাকে পরলো।ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এই মেয়ে কে?”
ইনাম কিছু বলতেই যাবে।প্রিয়তা হেসে বলল,
“আমি উনার স্ত্রী।”
মহিলা অবাক হয়ে বলল,
“ইনাম তুমি বিয়ে করলে কবে?দাওয়াতও তো দিলো না!”
ইনাম প্রিয়তার দিকে তাকালো।দেখল প্রিয়তা হেসে ইনামের দিকে তাকিয়ে আছে।ইনাম কোনমতে হাসার চেষ্টা করে বলল,

“আসলে বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেলো।তাই আপনাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।”
মহিলক এগিয়ে প্রিয়তার থুতনি ধরে বলল,
“বাহ!মাশাল্লাহ। এত মিষ্টি একটা মেয়ে।শুনো আমি পাশের ফ্লাটে থাকি।আমার হাজবেন্ড বিদেশে থাকে।আর ছোট ছোট দুইটা মেয়ে আছে।কোন চিন্তাভাবনা ছাড়াই আমার বাসাতে আসতে পারো।গল্প করব দুজন!ঠিকাছে?”
প্রিয়তা হেসে মাথা নাড়ালো।
মহিলাও হেসে নিজের বাসায় চলে গেলো।
“কি হলো?দাঁড়িয়ে আছেন কেন দরজা খুলুন!”
“তুমি সিউর যে এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে?”
“হুম!”

ইনাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি কিন্তু সারাদিন বাইরে থাকবো।একা একা থাকতে হবে তোমায়। পারবে একা একা থাকতে?”
“সেটা নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা করতে হবে না।আপনি আমাকে ঘরে ঢুকতে দিন।আমার গরম লাগছে অনেক!”
আর কোন উপায় না পেয়ে ইনাম পকেট থেকে চাবির রিং বের করে দরজার লক খুলতেই প্রিয়তা দৌড়ে রুমে ঢুকে গিয়ে সোফায় বসে পরল হেলান দিয়ে।এখন একটু শান্তি লাগছে।

“ব্যাগ গুলা নিবে কে?”
“আপনি নিয়ে আসুন।আমি সারাদিন ব্যাগ নিয়ে টইটই করে ঘুরেছি।”
ইনাম বিরক্ত হয়ে ব্যাগগুলা নিয়ে বাসায় ঢুকে দরজা আটকে দিলো।প্রিয়তা এবার শুয়া থেকে উঠে বসলো।আশপাশ তাকালো।সামনেই টিভি দেখে উঠে দাঁড়ালো দৌড়ে গিয়ে টিভির সামনে দাঁড়ালো।দুই হাত মেলে টিভির সাইজ বুঝার চেষ্টা করলো।দেখলো টিভি ওর হাতের থেকেও বড়।অবাক হয়ে বলল,
“এত্ত বড় টিভি!”

“যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে টিভি দেখিও।”
প্রিয়তা সম্মতি জানিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল,
“আপনার কি কোন প্রেমিকা আছে?”
“নাহ!কেন?”
“তাহলে আমি যে রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেলাম।আপনি আমাকে না বাড়িতে এনে নিজেই ঢাকাতে এসে পরলেন!কেন?”
“তেমন কিছু না!অফিসে কাজ ছিলো।”
প্রিয়তা কিছু না বলে ব্যাগ থেকে কাঁপড় বের করে বলল,
“ওয়াশরুম কোথায়?”

ইনাম দেখিয়ে দিতেই কিছুদুর যেয়ে আবার পিছনে ফিরে বলল,
“আপনি আমাকে আসার সময় নিয়ে আসতে পারতেন!এভাবে কাওকে না জানিয়ে ঢাকায় ফেরত আসাটা মোটেও ঠিক হয় নি।আপনার মা আপনাকে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন।আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার উপর রাগ করে চলে এসেছেন!”

প্রিয়তা আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ইনাম কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইল সটান হয়ে।আসলেই মাকে বলে আসা উচিত ছিলো।কিন্তু কিছু করারও তো ছিলো না!একটা শ্বাস ফেলল।
কয়েক দিন আগে,
বাবা মার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেছে ইনাম।যদিও এই বিয়েতে তার কোন মতই ছিলো না।তার মনে হচ্ছিলো সে মেয়েটাকে ঠকাচ্ছে।তার উচিত হচ্ছে না মেয়েটাকে বিয়ে করা।
“কি হলো কবুল বলছিস না কেন?”

ইনাম আশেপাশ্ব তাকাতেই দেখল সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে।আর কিছু না ভেবে মনের সকল জড়তা দুর করে কবুল বলতেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।
প্রিয়তাকে বাসর ঘরে বসানো হয়েছে।ইনাম রুমে ঢুকতেই প্রিয়তা উঠে ইনামকে সালাম করতেই যাবে ইনাম বাধা দিয়ে বলল,

“সালাম করতে হবে না!শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসো।তোমাকে এত ভারি শাড়ি পরতে দেখে আমার নিজেরই গরম লাগছে।আর তুমি করে বলছি বলে কিছু মনে করো না।তুমি আমার থেকে পাঁচ ছয় বছরের ছোট হবে তাই তুমি করে বলছি।”
ইনাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।হঠাত পকেটে থাকা মোবাইল তীব্র শব্দে বেজে উঠলো।ফোনের স্কিনে নাম দেখে পিছু ফিরে উঁকি দিয়ে দেখলো প্রিয়তা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে কিনা!এখনো বেরুয়নি দেখে কল রিসিভ করে বলল,
“বলেছিলাম এত রাতে ফোন না করতে!”

“তো এটা কি কালকে বলা যেতো না!আর কল দিবি না।আমি কালকে দেখা করবো।নিজে গিয়ে কথা বলব।”
কল কেটে পিছনে ফিরতেই দেখলো প্রিয়তা হাতে তাওয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকালেও নিজেকে সামলে নিলো।কিছু বলতেই যাবে প্রিয়তা বলল,
“এত রাতে কার সাথে কথা বলছিলেন?”
“আমার এক কলিগের সাথে।”

“তো কেন বললেন যেন ফোন না করে?কালকে গিয়ে ডিসকাশন করবেন?”
“বেশি রাত হয়ে গেছে বলেই বলেছি এই সময়ে যেন আর ফোন না করে।আর কাজের ব্যাপার তাই কালকে দেখা করতে বলেছি।”
“কিন্তু আপনি তো ছুটি নিয়েছেন।তাহলে…..”

“আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমাই।কাল সকালে যা প্রশ্ন করার করো!আমি অনেক টায়ার্ড!”
সকালে ঘুম ভাংতেই ইনাম বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়তা নেই।ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বেরুতেই মা বললেন…..

আলোর ভীড়ে পর্ব ২