আলোর ভীড়ে পর্ব ২

আলোর ভীড়ে পর্ব ২
ইশরাত জাহান অধরা

“এত রাতে কার সাথে কথা বলছিলেন?”
“আমার এক কলিগের সাথে।”
“তো কেন বললেন যেন ফোন না করে?কালকে গিয়ে ডিসকাশন করবেন?”
“বেশি রাত হয়ে গেছে বলেই বলেছি এই সময়ে যেন আর ফোন না করে।আর কাজের ব্যাপার তাই কালকে দেখা করতে বলেছি।”

“কিন্তু আপনি তো ছুটি নিয়েছেন।তাহলে…..”
“আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমাই।কাল সকালে যা প্রশ্ন করার করো!আমি অনেক টায়ার্ড!”
বলেই বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় শুতে শুতে বলল,
“তুমি বিছানায় ঘুমাও।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রিয়তা কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।বাবা মা শেষে কিনা এরকম একটা লোকের সাথে বিয়ে দিলো!
সকালে ঘুম ভাংতেই ইনাম বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়তা নেই।ভ্রু কুচকে এলো।পরক্ষনেই ভাবলো হয়তো রুমের বাইরে গিয়েছে।শুয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নামতেই দেখলো মা টেবিলে খাবার রাখছেন।ইনামকে দেখে বললেন,
“তুই একা কেন?বউমা কোথায়?”

“ও তো ঘরে নেই।কেন এখানে আসেনি?আমি তো ভাবলাম ও মনেহয় তোমার সাথে কথা বলার জন্য এসেছে।”
“কই না তো!ও তো আসেনি।”
“তাহলে কোথায় গেলো?”
“ছাদে যায় নি তো?”
“ছাদে কি করে যাবে?ছাদ তো তালা মারা।”

রেহানা বেগম রান্না করে কেবল কিচেন থেকে বের হয়েছেন।এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।এত সকালে আবার কে এলো?আচলে ভেজা হাত মুছতে মুছতে দরজা খুলতেও মেয়েকে দেখে অবাক হলেন।বিস্ময় নিয়ে বললেন,
“কিরে?তুই?”
প্রিয়তা বিরক্ত নিয়ে বলল,

“হ্যা আমি!অবাক হবার কি আছে?মন হচ্ছে আজ প্রথম দেখলে।আগে কোনদিন দেখোনি!”
“তুই এসেছিস কেন?জামাই বাবা কই?”
“তোমার জামাই বাবা কই কিভাবে জানব?কই আমার খবর নিবে, খাবার খাওয়াবে,আদর আপ্যায়ন করবে! তা না করে উনার কথা জিজ্ঞেস করছো!”
রেহানা বেগম বুঝলেন মেয়ে রেগে আছে।এখন আরও প্রশ্ন করলে এভাবেই উল্টা উত্তর দিবে।দরজার সামনে থেকে সরে এসে বললেন,

“ঘরে আয়।বস।পানি আনছি তোর জন্য।”
হাতে থাকা সুটকেসটা ঘরের ভিতর এনে রেখে নিজের রুমে গেলো।ফ্যান চালিয়ে বিছানায় বসলো।পুরা ঘেমে গিয়েছে।
“নে পানি খা!”

মায়ের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেয়ে পাশের টেবিলে রেখে দিলো।রেহানা বেগম এবার মেয়ের পাশে বসলেন।হাত নিজের কোলের রেখে বললেন,
“কি হয়েছে?ঝগড়া করেছিস?”
“নাহ!”
“তাহলে কেও কিছু বলেছে?”
“নাহ!”

“এসেছিস কেন?বিয়ের পরে এভাবে হুটহাট আসা যায়?”
কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
“অই বাড়ির কেও জানে তুই যে এখানে এসেছিস?”
প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে বলল, “নাহ!”
“ইনামকেও বলিসনি?”
প্রিয়তা চুপ করে রইলো।
রেহানা বেগম বিরক্ত হয়ে বললেন,

“কিযে করিস না!অই বাড়ির মানুষ এখন তোকে না পেয়ে টেনশন করছে না?ইনামকে জানিয়ে আসতি!”
প্রিয়তা মনে মনে হাসলো।যে ওকে পাত্তাই দেয় না,যার সাথে রাগ করে চলে এসেছে তাকেই বলে আসবে?বিষয়টা হাস্যকর না?
রেহানা বেগম উঠে চলে গেছেন ইনামদের জানিয়ে দিতে যে প্রিয়তা এই বাড়িতে আছে।মা চলে যেতেই প্রিয়তা সোজা হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।সারারাত ঘুম হয়নি।ঘুম আসছে অনেক।চোখ দুটো বন্ধ করতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো।

প্রায় দুইদিন পেরিয়ে গেছে।প্রিয়তা এখনো নিজের মায়ের বাড়িতে।ভেবেছিলো ইনাম ওকে নিতে আসবে কিন্তু ইনাম নিতে আসাটা দুরের কথা। ফোনটাও করে নি।রেহানা বেগম এসে বললেন,
“কিরে?ইনাম আসে না কেন?ও কি আসবে না?”
“আমি কি করে জানব?”

মেয়ের এমন ত্যাড়া কথা শুনে হতাশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
কিছুক্ষন বাদেই রেহানা বেগম এসে বললেন,
“ইনাম কাওকে কোন কিছু না জানিয়ে ঢাকায় চলে গেছে।তুই আসার পরেরদিনই!”
প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল,
“ঢাকায় চলে গেছে?”

“হুম।বিকালে তোর কাকা শশুড় আসবে নিতে।রেডি থাকিস!”
“আমিও ঢাকাতে যাবো।”
রেহানা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
“কিহ?কেন?”
“কেন আবার!ঢাকাতে আমার যে চাকরিটা কনফ্রম হয়েছিলো সেখানে জয়েন করব।”
“কিন্ত তুই তো বলেছিলি চাকরিটা করবি না!”
“তখন বলেছিলাম করবনা। এখন বলছি করব!”
“যা ভালো বুঝিস তাই কর!”

প্রিয়তা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতেই ইনাম এসে বলল,
“খাবার রেডি করা আছে৷ খেয়ে নাও।”
খাবারের কথা শুনতেই প্রিয়তার পেটে ক্ষিধায় মোচর দিয়ে উঠলো।তোয়ালে রেখেই ইনামের পিছু পিছু ডাইনিং টেবিলে আসতেই ইনাম বলল,
“চেয়ারে বসো।”
প্রিয়তা চেয়ারের বসতেই ইনাম প্লেট এগিয়ে দিলো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ডিম ভাজি?”

“ঘরে আর কিছু ছিলো না।আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।খেয়ে নাও।আর শুনো সামনের বাম পাশের রুমটা আমার।আর ডান পাশের রুমটা তোমার ঠিক আছে?”
প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে এক লোকমা মুখে দিতেই ইনাম বলল,
“তাহলে আমি যাচ্ছি।খাওয়া শেষ হলে তোমার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
বলেই বসা থেকে উঠে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।ইনামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল প্রিয়তা। দরজা লাগাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো প্রিয়তার।আচ্ছা এই লোক দরজা আটকালো কেন?উনি কি মেয়ে?মেয়েরাই না দরজা আটাকায়!”

আর কিছু না ভেবে খাওয়াতে মনযোগ দিলো।
পরেরদিন,
চোখে মুখে রোদ পরতেই চোখ মুখ কুচকে এলো প্রিয়তার।শুয়া থেকে উঠে আড়মোড়া ভেংগে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেলো ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই ইনাম ব্রেকফাস্ট টেবিলে রাখলো।
“আপনাকে রান্না করতে হবে না।এখন থেকে আমি রান্না করব!”
ইনাম ইশারায় বসতে বলল।প্রিয়তা বসে পরোটা ছিড়ে এক টুকরা মুখে দিতেই ইনাম বলল,

“যাচ্ছো কবে?”
মুখে থাকা পরোটা চিবাতে চিবাতে বলল,
“আমি যে যাব কে বলেছে আপনাকে?”
“মানে?”
“মানে আমজ এখানে থাকব।আগেই বলেছি।”
ইনাম আর কিছু না বলে খাবার খেয়ে উঠে পরলো।রেডি হয়ে জুতা পরতে পরতে বলল,

“আমি রাতে আসব।’
” হুম।”
“দরজার লক দিয়ে রাখবে।”
“হুম।”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই প্রিয়তা বলল,
“শুনুন।”
“তাড়াতাড়ি বলো।”
“আমার একটা জব হয়েছে।আজকে জয়েনিং এর ডেইট।”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,
“তারমানে তুমি চাকরির জন্য এসেছো?”
“হুম।”

“কংগ্রাচুলেশনস। সময়ের অভাবে বেশি কিছু জানতে পারলাম না।যাইহোক।,বেস্ট অফ লাক।”
“আপনার কোন আপত্তি নেই?”
“আপত্তি কেন থাকবে?”
“এইযে আপনার বউ চাকরি করবে এটা নিয়ে?”
“নাহ!এতে আপত্তি করার কি হলো?নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছো!আমার কি অধিকার আছে তোমাকে আটকানোর?যাইহোক,লেট হয়ে গেছে আমি আসছি।আর হ্যা সরি তোমাকে আমার পৌছে দেওয়ার দরকার ছিল যেহেতু ঢাকা শহরের কিছুই চিনো না তুমি।কিন্তু আমার হাতে টাইম নেই।এই টাকাটা রাখো।ক্যাবে করে চলে যেও!”
ইনাম যেতেই প্রিয়তা যাবার জন্য রেডি হতে লাগলো। দরজা লক করে বাইরে বেরিয়ে আসলো।একটা টেক্সি নিয়ে নিলো।

ইনাম অফিসে বসে ফাইল দেখছিলো।এই কয়দিনে অনেক ফাইল জমা হয়ে গেছে। সামনে থাকা কফির মগে এক চুমুক দিয়ে ফাইলের পেইজ উল্টে পালটে দেখছে।দরজার নক শুনে পারমিশন দিলো দরজার অপর প্রান্তের মানুষটাকে আসার জন্য। ম্যানেজার সাহেব এসে বললেন,
“স্যার,আমাদের অফিসে একজন নতুন স্টাফ এসেছে।”
“হ্যা তো?উনাকে উনার কাজ বুঝিয়ে দিন।”

“উনি একটা বিষয় বুঝতে পারছেন না।বারবার একই ভুল করে যাচ্ছেন।আপনি যদি একটু….”
“আচ্ছা ডাকুন উনাকে।”
“উনি আমার সাথেই আছে।”
“তাহলে আসতে বলুন ভেতরে।”
ম্যানেজার সাহেব বাইরে গিয়ে নিয়ে আসল নতুন স্টাফ কে।
“এইযে স্যার।”
ফাইলের দিকে চোখ রেখেই বলল,
“বসুন।”

আলোর ভীড়ে পর্ব ১

ম্যানেজারকে উদ্দেশ্য করে বলল
“আপনি যেতে পারেন এখন।”
“তো বলুন কোন বিষয়টা বুঝতে পারছেন না?”
বলেই সামনে তাকাতেই….

আলোর ভীড়ে পর্ব ৩