আলোর ভীড়ে পর্ব ৩

আলোর ভীড়ে পর্ব ৩
ইশরাত জাহান অধরা

“আচ্ছা ডাকুন উনাকে।”
“উনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।”
“তাহলে আসতে বলুন ভেতরে।”
ম্যানেজার সাহেব বাইরে গিয়ে নিয়ে আসল নতুন স্টাফ কে।

“এইযে স্যার।”
ফাইলের দিকে চোখ রেখেই বলল,
“বসুন।”
ম্যানেজারকে উদ্দেশ্য করে বলল
“আপনি যেতে পারেন এখন।”
“তো বলুন কোন বিষয়টা বুঝতে পারছেন না?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলেই সামনে তাকাতেই কাওকে দেখতে পেলো না।ভ্রু কুঁচকে এলো ইনামের।ম্যানেজার কি তার সাথে মশকরা করেছে?নতুন স্টাফ কোথায়?কই দেখতে পারছে না তো সে!চেয়ার থেকে উঠে ডাকতেই যাবে হঠাত চোখ পরল টেবিলের নিচের দিকে। দেখল একটা মেয়ে ফ্লোর থেকে কাগজ কুড়াচ্ছে।কাগজ কুড়াতে কুড়াতেই বলল,
“সরি স্যার, কাগজগুলা পরে গিয়েছে।”

ইনাম আপাতত মেয়েটার মুখ দেখে নি।নিচু হওয়ার কারনে সব চুল সামনে এসে পরেছে তাই মুখটা দেখা যাচ্ছে না।সব কাগজ উঠিয়ে বসা থেকে উঠে সামনে তাকাতে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো মেয়েটি।ইনামও মেয়েটাকে দেখে যে চমকিয়েছে সেটা ওর মুখের এক্সপ্রেসন দেখেই বুঝা যাচ্ছে।মেয়েটা অবাক হয়ে চিল্লিয়ে বলল,
“আরে ইনাম তুই?”

ইনামও অবাক হয়ে বলল,
“এশা তুই?এখানে?তুইই নতুন স্টাফ!”
“হ্যা!তুই থুক্কু আপনি আমার বস?”
ইনাম বিরক্ত হয়ে বলল,
“আপনি বলবি না।যেভাবে ডাকছিলি সেভাবেই ডাক!”
“বাইরের সবাই কি মনে করবে?”
“যা মনে করার করুক!আমার কি?”
এশা হেসে বলল,
“আমি তো ভাবতেই পারিনি তোর সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে!”
“আমিও!বস।কি বুঝিসনি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
এশা চেয়ার টেনে বসল।ইনামও তার নিজের চেয়ারে বসতেই এশা ফাইল এগিয়ে দিলো।ফাইলে চোখ বুলিয়ে বলল,
“সহজই তো!আমি তোকে আরও সহজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
বলেই সবকিছু বুঝিয়ে দিতে লাগলো।

প্রিয়তা অফিসে বসে আছে।সামনেই কম্পিউটারের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে।ইনামের বিষয়টা ওর মাথা থেকে যাচ্ছেই না।লোকটা ওকে এভাবে ইগনোর কেন করছে?অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকা ছাড়া আর কি কারন হতে পারে?কিন্তু উনি তো বলছেন উনার সাথে কোন মেয়ের সম্পর্ক নেই।মিথ্যা বলছে নাকি সত্য বলছে বুঝবে কি করে?কোন না কোন কারন তো আছেই নয়তো এভাবে ইগনোর করার কোন মানে হয় না।কারনটা কি?উনার কি আমাকে পছন্দ হয় নি?পছন্দ না হলে তো সরাসরি বলে দিতে পারে এভাবে ইগনোর না করে!লোকটা তো কিছু বলছেও না।আচ্ছা উনি কি আমাকে বলছে না এই কারনে যে আমি মন খারাপ করব বা কাবিনের টাকা ফেরত চাইবো?হুম এটাই হবে!এছাড়া ইগনোর করার কোন কারন তার চোখে পরছে না।

“কি হলো কি ভাবছেন?আর সামনের দিকে তাকিয়ে কি টাইপ করছেন দেখি!”
ম্যানেজার কথাটা বলেই কম্পিউটারের স্কিনে চোখ রাখতেই দেখল সেখানে “tytyuyyiiiiiytuiiyii” এরকম হযবরল টাইপের লেখা। প্রিয়তা মাথা নিচু করে ফেলল।চাকরির প্রথম দিনেই কি এক ভুল করে বসল সে?মুখ ফুটে বলল,
“সরি স্যার!আর এমন হবে না!”
“মনে থাকে যেনো।”

বলেই সেখান থেকে চলে যেতেই প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।মনে হলো নিঃশ্বাসের সাথে মাথায় থাকা সকল চিন্তা ভাবনাকেও বের করে দিয়েছে সে।কাজে মনযোগ দিলো।
কাজ করতে করতে লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে।আশেপাশে তাকাতেই দেখলো সবাই দুপুরের খাবার খাচ্ছে।প্রিয়তার ক্ষিধা লেগেছে।সকালে দুইটা পরোটা খেয়ে বেরিয়েছিলো।তার পর পেটে এক দানাও খাবার পরেনি।খাবার নিয়েও আসেনি সে।বাইরের খাবার একদমই খেতে পারে না।কিন্তু ক্ষিধার চোটে বসেও থাকতে পারছেনা সে।তাই আর না পেরে কেন্টিনের দিকে গেলো খাবার কিনতে।
এশা ইনামের দরজায় নক করলো।ইনাম আসার অনুমতি দিলে এশা কেবিনে ঢুকতেই ইনাম বলল,

“তুই এই লাঞ্চ টাইমে?”
এশা টেবিলের উপর টিফিনের বক্স রেখে বলল,
” খাবার খেয়ে নে।”
“তুই কি খাবি? ”
“আমার খাওয়া শেষ।আম্মু একটু বেশি দিয়ে দিয়েছে খাবার।বাসায় নিয়ে গেলে বকবে।”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,
“কিন্তু আমি তো খাবার কেন্টিন থেকে কিনে এনেছি।”
“বাইরের খাবার খেয়ে খেয়ে পরে অসুখ হবে।কেন্টিনের খাবারটা আমাকে দিয়ে দে।”

এশা কেন্টিনের খাবার নিয়ে চলে গেলো।ইনাম এশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন।হঠাত প্রিয়তার কথা মনে হলো।সে নিশ্চয়ই এখন লাঞ্চ করছে!কি দিয়ে লাঞ্চ করছে?ঘরে তো কোন খাবার ছিলো না!পরক্ষনেই ভাবলো কেন্টিন থেকে খেয়ে নিবে নাহয়।এত চিন্তা করার কি আছে?
প্রিয়তা কেন্টিন থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাচ্ছিলো।হঠাত হাতে থাকা মোবাইল বেজে উঠলো।মোবাইলটা রিসিভ করতেই মা বলল,

“কিরে তুই এখন কোথায়?”
“অফিসে!আর কোথায় থাকব?”
‘ইনাম তোকে দেখে খুশি হয়েছে?”
কথাটা কানে যেতেই প্রিয়তার মুখ কালো হয়ে গেলো।মা কি আর জানে ইনাম তার মেয়েকে দেখে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলো?দেখেই ওনার মুখের এক রাশ অন্ধকার নেমে এসেছিলো?মুখে আবার হাসি ফুটিয়ে বলল,
“হ্যা মা অনেক খুশি হয়েছে।আচ্ছা আমি রাখছি।পরে কথা হবে।অফিসে আছি তো!”
“আচ্ছা।”

ফোনটা রেখে সামনে হাঁটতেই যাবে হঠাত একজনের সাথে ঢাক্কা লেগে হাতে থাকা সব খাবার নিচে পরে গেলো।প্রিয়তা একবার ফ্লোরে থাকা খাবারের দিকে তাকিয়ে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।ইনাম একটা কাজে কেন্টিনের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো। হঠাত প্রিয়তাকে দেখে থমকে গেলো।প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি এখানে?”
ইনাম গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“তোমার যে এখানে চাকরি হয়েছে সেটা আগে বলো নি কেন?”

“আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন নি!তাই বলি নি!ভয় পাবেন না। অফিসের কেও জানবে না আমাদের সম্পর্কের কথা।আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।আমি কাওকে বলব না।”
“আমি কি বলেছি তোমাকে না বলতে?সবাই জানলেও আমার কোন অসুবিধা হবে না।”
প্রিয়তা কিছু না বলে ফ্লোরে থাকা খাবারগুলা পরিষ্কার করতেই যাবে ইনাম বাধা দিয়ে বলল,
“তোমাকে এগুলো পরিষ্কার করতে হবে না।অফিসে ক্লিনার আছে।ক্লিনাররা পরিষ্কার করে নিবে।”
বলেই চলে গেলো।ইনামের যাওয়ার দিকে প্রিয়তা কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে রইলো।

ইনাম নিজের কেবিনে এসে চেয়ারে বসলো।এই মেয়েকে যতোই সে দুরে রাখতে চাইছে, এই মেয়ের থেকে দুরে থাকতে চাইছে কিছুতেই পারছে না!কোন না কোন ভাবে এই মেয়ে ওর কাছে এসে পরছে।ওর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে!ভেবেই রাগে মাথার চুল দুই হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিলো।
প্রিয়তা নিজের চেয়ারে বসে আছে।লাঞ্চ ব্রেক প্রায় শেষের দিকে।অথচ এক দানাও ওর পেটে পরেনি।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে থাকা গ্লাস থেকে পানি খেয়ে নিলো।পানি খেতে খেতেই লাঞ্চ টাইম শেষ হয়ে গেছে।কাজে মনযোগ দিবে হঠাত ইনাম এসে টেবিলের উপর টিফিন বক্স রাখলো।প্রিয়তা অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে ইনামকে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই ইনাম বলল,

“আমি তোমার খাবার নষ্ট করেছি।আমার কারনেই তোমার হাত থেকে খাবার পরে গেছে।এজন্যই খাবার দিয়েছি।খেয়ে নাও।নয়তো পরে ঝামেলা হবে।ভুল ভাল কাজ করে রাখবে।এতে আমার কোম্পানির ক্ষতি হবে।”
বলেই প্রিয়তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে।অফিসের বস কিনা একজন স্টাফকে খাবার দিয়ে গেছে এই বিষয়টা তারা হজম করতে পারছে না।ইনামের জন্য আনা খাবার ইনাম অন্য একজন স্টাফকে দিয়ে দিবে সেটা এশা ভাবতেই পারে নি।ও তো খাবারটা ইনামের জন্য এনেছিলো।ইনাম কিনা ওকে এভাবে অপমান করলো।সামান্য স্টাফকে দিয়ে দিলো!রাগে গজ গজ করতে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে রইলো এশা।

আলোর ভীড়ে পর্ব ২

রাত ৮টা,
প্রিয়তা অফিস থেকে বেরিয়েছে।বাস স্ট্যান্ডে বাসের জন্য বসে আছে সে। কিছক্ষন পরপর মশা কামড়াচ্ছে তাকে।শেষে বিরক্ত হয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে বসলো।কিছুক্ষন দাঁড়াতেই হঠাত একটা কিছু শব্দ শুনতে পেলো।ভ্রু কুঁচকে এলো তার। কিসের শব্দ আসছে দেখার জন্য সামনে যেতেই….

আলোর ভীড়ে পর্ব ৪