আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৬
Raiha Zubair Ripti
গায়ে হলুদের স্টেজে পাশাপাশি বসানো হয়েছে কনা আর রাহুল কে। সবাই এক এক করে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে তাদের। কনা মূর্তির মতো বসে আছে। কনার মুখে হাসি নেই। পিচ্চি পিচ্চি ছেলে মেয়ে সামনেই নাচতেছে। সন্ধ্যা কনার রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। কাঁচের চুড়ি গুলো পড়তে গিয়ে সেগুলো হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে গেলো। সন্ধ্যার মেজাজ তুঙ্গে চলে গেলো। বিরক্ত মুখে নিচু হয়ে চুড়ির অংশ গুলো তুলতে নিলে দেখে খাটের নিচে একটা কালো ডায়েরি পড়ে আছে উল্টো হয়ে। সন্ধ্যা সেটা উঠালো। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে সোজা করতেই চোখ গেলো আটকে একটা নামে। নামটি হলো রাত। সন্ধ্যার কপালে দু ভাজ পড়লো।রাতের নাম কনার ডায়েরি তে কেনো? সন্ধ্যা ভালো করে দেখতেই দেখতে পেলো কিছু লেখা আছ এখানে। সন্ধ্যা পড়া শুরু করলো।
– দিনটি বোধহয় আজ মঙ্গলবার । একটু অদ্ভুতই লাগে দিন গোনার এই অভ্যাসটা। আপনার সাথে পরিচয়ের আজ ২ মাস ১৩ দিন। শুনতে তো বেশ ছোট সময়, তাই না? কিন্তু এই অল্প সময়েই কীভাবে যেন আপনাকে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি, তা নিজেও জানি না। আচ্ছা, ২ মাস ১৩ দিনে কেউ কাউকে এভাবে ভালোবাসতে পারে? এটা কি আসলেই ভালোবাসা, নাকি এটাকে মানুষ এট্রাকশন বলে উড়িয়ে দেবে? জানি না, তবু একটা ব্যাপার জানি—আপনার প্রতি আমার এই টান কেবলই হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া কিছু নয়। এটা গভীর, অন্তহীন।
রাত, জানেন? আমাদের নামটা কতটা সুন্দরভাবে জুড়ে যায়! রাত+কনা= রাতকনা। যেন আমাদের জন্যই পৃথিবীতে এই নামটা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এই সুন্দর নামের মতোই অসাধারণ হলো না আমাদের সম্পর্কটা।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আপনার জন্য কখনও হিংসা করব, ভাবিনি। কিন্তু এখন আমার বুকের ভেতর সেই অজানা আগুনটা জ্বলছে। হিংসা করি সেই মানুষটাকে, যে আপনার দৃষ্টিতে এসে পড়েছে। কেন আমার দিকে একবারও তাকালেন না সেভাবে?
আমি তো চেষ্টা করেছিলাম, রাত। আপনাকে বোঝার, আপনার চোখের ভাষা পড়ার। কিন্তু আপনার চোখে আমার জন্য কিছুই ছিল না, ছিল কেবল সেই অন্য কারো ছায়া।
সবাই বলে, ভালোবাসা নাকি নিঃস্বার্থ হয়। কিন্তু আমি পারিনি। আপনার প্রতি আমার এই ভালোবাসা আমাকে দুর্বল বানিয়েছে, আমাকে ভেঙে দিয়েছে। আর আজ আমি শুধু প্রশ্ন করি, কেন আপনার কাছে আমার ভালোবাসা যথেষ্ট হলো না?
রাত, জানেন? আমি প্রতিদিন নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করি, কিন্তু কোনো উত্তর পাই না। কখনো ভাবি, হয়তো আপনি আমার কথা ভুলেই গেছেন। হয়তো আপনি কখনোই বুঝবেন না আমি কীভাবে প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে ভাবি। জানেন, আমার কাছে রাত মানে আপনি। আপনি ছাড়া রাত যেন কোনো অর্থই পায় না।
কিন্তু আজকাল সেই রাতগুলো আর আগের মতো মনে হয় না। প্রতিটি রাত যেন আমাকে আরো একা করে দেয়। জানেন, আমি কখনো কাউকে এতটা অনুভব করিনি। কিন্তু আপনাকে? আপনাকে অনুভব করি প্রতিটি নিঃশ্বাসে। এমনকি যখন চোখ বন্ধ করি, তখনো আপনার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাই।
কিন্তু আপনি? আপনি কি একবারও আমাকে অনুভব করেন? একবারও কি মনে হয়, কেউ আকাশের চাঁদকে নয়, কেবল আপনাকে চায়? আমি জানি, আপনার কাছে এসবের কোনো গুরুত্ব নেই। আপনি হয়তো কখনো ভাবেনই না, আমি কতটা কষ্টে আছি।
রাত, জানেন? কখনো কখনো মনে হয়, আপনার থেকে দূরে চলে যাই। এমন কোথাও, যেখানে আপনাকে আর দেখতে পাব না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য এই যে, যত দূরেই যাই না কেন, আপনার স্মৃতিগুলো আমাকে তাড়া করে। আপনার সেই প্রথম দেখা হাসিটা, আপনার কণ্ঠের গভীরতা—সবকিছু আমাকে গ্রাস করে।
আজকাল নিজেকে আয়নায় দেখতে ভয় পাই। মনে হয়, আমি আর আগের মতো নেই। চোখের নিচে কালি জমেছে, মুখে হাসির রেখাটা হারিয়ে গেছে। আমি হয়তো ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি, রাত।
কিন্তু আপনি জানেন না। জানবেনও না। হয়তো কোনো একদিন আপনি ফিরে তাকাবেন, আর দেখবেন, যে মানুষটা আপনাকে সারাজীবন ভালোবেসে গেছে, সে আর নেই। হয়তো তখন আপনার একটু খারাপ লাগবে। কিন্তু ততদিনে আমি কোথায় থাকব, তা কে জানে?
রাজশাহী তে আসার পর ক’দিন ধরে মনে হচ্ছে, আমার আর কিছুতেই ভালো লাগে না। খাবার মুখে দিলে স্বাদ পাই না, ঘুমাতে গেলে স্বপ্ন আসে না। শুধু একটা শূন্যতা, একটা অদ্ভুত তীক্ষ্ণ ব্যথা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। জানেন, আমি যখন একা বসে থাকি, তখন বারবার আপনার সেই হাসিটা মনে পড়ে। যে হাসি আমাকে প্রথম আপনার দিকে টেনেছিল।
কিন্তু এখন সেই হাসি কেবলই স্মৃতি। আমার জীবনে আর কোনো সত্য নেই, শুধু এই তীব্র অনুভূতিটা ছাড়া।
আমার ইচ্ছে করে চিৎকার করে বলতে, “রাত, আমি আপনাকে ভালোবাসি!” কিন্তু আপনাকে জানালে তো কোনো লাভ নেই। আপনি তো আমাকে চাইবেন না, তাই না? হয়তো আমি শুধু একদিকের ভালোবাসায় বন্দী হয়ে বাঁচবো, অথবা হয়তো মরেই যাবো।
তবু একটা কথা থেকে যায়—আপনি যদি কখনো আমার কথা ভাবেন, একবার শুধু মনে করবেন, এই মেয়ে আপনাকে ভালোবেসেছিল নিজের সবটুকু দিয়ে। কিন্তু আপনি তা কখনোই দেখতে চাননি।
জানি, এভাবে চিঠি লিখে কোনো লাভ নেই। হয়তো আপনি কখনোই এই কথা জানবেন না। তবু আমি লিখি, কারণ এটুকুই আমার বাঁচার উপায়। আপনার জন্য জমে থাকা কথাগুলো লিখে হালকা হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু জানেন, লিখতে লিখতে বুকের ভার আরও বেড়ে যায়।
আজ সকালে জানালা দিয়ে সূর্যের আলো দেখছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, আজকের এই আলোটা যেন আমার জন্য নয়। আমি চাই, আপনার জীবনটা উজ্জ্বল থাকুক, সুখের আলোয় ভরে উঠুক। কিন্তু নিজের অজান্তেই আবার প্রশ্ন জাগে—আমি কি একটুও জায়গা পেতে পারতাম না সেই আলোতে?
আজ আমি কিছু ঠিক করে ফেলেছি, রাত। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি এই অপেক্ষা করতে করতে, এই ভেঙে পড়া নিজেকে নিয়ে বেঁচে থাকতে থাকতে। হয়তো আমার বেঁচে থাকার প্রয়োজনই নেই। আপনাকে ছাড়া পৃথিবীটা যেন অর্থহীন এসবই মনে হয় এখন।
তবে যাবার আগে একটা কথা বলব। আমি জানি, আপনি আমাকে কখনো ভালোবাসবেন না। কিন্তু আমি আপনাকে যে ভালোবেসেছি, সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে সত্য কথা। আমি গর্বিত যে আমি আপনাকে ভালোবেসেছি।
আর হ্যাঁ, রাত+কনা—এই নামটা যেন কখনো ভোলেন না। কারণ এই নামটাই প্রমাণ করে, একপাশের ভালোবাসাও কতটা সুন্দর হতে পারে।
আমার মন বলছে, একদিন আপনি বুঝবেন। বুঝবেন, আমি কীভাবে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু সেই দিনটায় আমি থাকব তো? নাকি হারিয়ে যাবো কোথাও, অন্ধকারে, যেখানে আর কোনো ‘রাতকনা’ হবে না?
বিদায়, রাত। যদি কোনোদিন আমার কথা মনে পড়ে, শুধু একবার বলবেন, “কনা আমাকে ভালোবেসেছিল।” তাতেই আমি শান্তি পাবো, যেখানেই থাকি না কেন।
ডায়েরি টা পড়ে সন্ধ্যা বরফের ন্যায় জমে গেলো। কনা রাত কে ভালোবেসেছিল! তাহলে সন্ধ্যাকে কেনো জানালো না? আর রাত কোন মেয়েকে ভালোবাসে? ডায়েরি টা হাতে নিয়ে ছাঁদে আসতেই কনার মলিন মুখ টা চোখে পড়লো। আষাঢ় সন্ধ্যাকে দেখা মাত্রই এগিয়ে আসলে সন্ধ্যা আষাঢ়ের হাতে ডায়েরি টা ধরিয়ে দিয়ে কনার দিকে এগিয়ে গেলো। কনার হাত চেপে ধরে বলল-
-“ কনা সাইডে আয় কথা আছে।
সন্ধ্যা কনা কে নিয়ে সাইডে আসলো। আষাঢ় কিছুই বুঝতেছে না। সন্ধ্যা রেগেই জিজ্ঞেস করলো-
-“ এমন মহান সাজার মানে কি কনা?
কনা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ মহান সেজেছি মানে?
-“ মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতেছিস তুই! মাথা কি ঠিক আছে তোর? তুই যে আরেক টা মানুষ কে ঠকাচ্ছিস সেটা বুঝতে পারছিস?
-“ কাকে ঠকাচ্ছি আমি?
-“ জানিস না কাকে ঠকাচ্ছিস? রাহুল লোকটাকে তো তুই ভালোই বাসিস না তাহলে তাকে কেনো বিয়ে করছিস? সে যখন জানবে তার বউ আরেক জন কে ভালোবাসে তখন তার রিয়াকশন কেমন হবে জানিস?
কনা পিলে চমকে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
-“ ক…কি বলছিস। আমি আবার কাকে ভালোবাসি। আমি কাউকে ভালোবাসি না।
-“ ওহ্ রিয়েলি? তাহলে ডায়েরিতে ওসব কি লেখা? তুই রাত কে ভালোবাসিস! অথচ আমাকে জানালি না?
কনা বরফের ন্যায় জমে গেলো। আশেপাশে তাকালো কেউ শুনে ফেললো না তো। আষাঢ়ের হাতে ডায়েরি টা দেখে সহসা সেটা কেঁড়ে নিয়ে বলল-
-“ আমার ডায়েরি টা কেনো ধরেছিস তুই? এটা একটা পার্সোনাল জিনিস। না বলে দেখা উচিত হয় নি।
-“ পার্সোনাল জিনিস কেউ যেখানে সেখানে ফেলে রাখে না নিশ্চয়ই?
আষাঢ় সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আরে কি হচ্ছে? কে কাকে ভালোবাসে। আর কে কাকে ঠকাচ্ছে?
সন্ধ্যা আষাঢ়ের দিকে কটমট চাহনি নিয়ে বলল-
-“ আপনার ভাইকে ভালোবাসে কনা। আচ্ছা আপনার ভাই কাকে ভালোবাসে? ওর সেই ভালোবাসার মানুষ টা কে জানেন? আমি কথা বলবো। মেয়েটাও কি রাত কে ভালোবাসে? ভালো না বাসলে আমি রাত কে মানানোর চেষ্টা করবো।
কনার না চাইতেও এবার হাসি পেলো। সন্ধ্যা যার খোঁজ করছে সেই মেয়েটা তো সে নিজেই।
-“ এই কনা তুই নিশ্চয়ই চিনিস। বল মেয়েটা কে?
-“ কেউ না। রাত আমাকে ভালোবাসে না সন্ধ্যা।
-“ তুই তো বাসিস।
-“ এক তরফা ভালোবাসায় কিছু হয়? কখনও দেখেছিস পূর্ণতা পেতে?
-“ তাই বলে আরেকজন কে বিয়ে করে ফেলবি? আমি আষাঢ় আছি তো। আমরা ঠিক কিছু একটা করতাম।
-“ কিছু করে লাভ নেই। যা হচ্ছে সেটাই হতে দে। রাহুল তো ভালোবাসে আমাকে। আমি আসছি রুম থেকে অস্বস্তি হচ্ছে ভীষণ।
কনা চলে আসলো। সন্ধ্যা আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেটা দেখে আষাঢ় বলল-
-“ ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
-“ আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করুন তার সেই ভালোবাসার মানুষটা কে।
আষাঢ় নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল-
-“ নাও ফোন। নিজেই জিজ্ঞেস করো।
কনা নিজের রুমে আসলো। রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো। শরীরের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে অস্বস্তি যেন ছড়িয়ে পড়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়াতে গিয়ে থমকে গেল। আয়নায় নিজের মলিন মুখটা দেখে আরও বেশি অস্থির লাগলো।
সাথে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে একটু চমকে উঠল। নিজেকে এত বিবর্ণ, এত ক্লান্ত আগে কখনো দেখেনি।
মনে হচ্ছিল, রুমের দেয়ালগুলো তাকে চেপে ধরছে।
হাতের চুড়িগুলো খোলা শুরু করল কনা। কিন্তু হাতগুলো এমনভাবে কাঁপছিল যে কাজটা শেষ করতে পারছিল না। শেষে চুড়িগুলো একপাশে রেখে ঘরের ভেতর হাঁটতে শুরু করলো। কখনো বিছানায় বসে, কখনো জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুতেই মন শান্ত হচ্ছে না। বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক শব্দ যেন বেড়েই চলেছে।
কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরির পর কনার হঠাৎ খেয়াল হলো, বেলকনি। হয়তো একটু ঠান্ডা হাওয়া মনটা শান্ত করতে পারে। দরজাটা ঠেলে বেলকনিতে পা দিতেই হঠাৎ যেন মনে হলো
আলো-আঁধারির মধ্যে ছায়ামূর্তির মতো কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।
কনার বুক ধক করে উঠলো।
“কে?” নিজের অজান্তেই কথাটা বের হয়ে এলো।
কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। মনের ভেতর সন্দেহ আর ভ্রমের যুদ্ধ শুরু হলো। “এটা কি সত্যি? নাকি ভুল দেখছি?”
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মনে হলো, হয়তো কেউ নেই। চোখের ভুল। এমনটাই মনে হচ্ছিল, কিন্তু আবারও সেই ছায়াটা একটু নড়ল।
কনার শরীরটা হিম হয়ে গেল। প্রথমে সে ভ্রম ভেবেছিল। কিন্তু চোখের কোণে পরিচিত চেহারাটা স্পষ্ট হতে লাগল। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বের হলো— রাত? এই সময়? এখানে?
“না, এটা অসম্ভব!” নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল কনা। কিন্তু কৌতূহল আর অজানা আশঙ্কা তাকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল। সে আর সহ্য করতে পারল না। একটা কিছু তাকে নিচে নামার জন্য তাড়া দিচ্ছিল। কোনো কিছু না ভেবেই দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল। নিচে নেমে সোজা সেই মানুষটির সামনে দাঁড়ালো।
রাতের উপস্থিতি যেন সবকিছু অবিশ্বাস্য করে তুলেছে। কনার মনে হচ্ছিল, এ কোনো স্বপ্ন। শরীরের প্রতিটি রক্তকণা যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল। সে নিজের দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে আবার তাকাল। সত্যি রাত!
রাত কোনো কথা বলল না। তার মুখে কোনো কথা নেই। কনার দিকে গভীর, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। কনার মুখ থেকে শব্দ বের হচ্ছে না। এই মুহূর্ত যেন সময়কে স্থির করে দিয়েছে।
অবশেষে, কনা ভাঙা স্বরে বলল, “আপনি এখানে?”
আলো-আঁধারির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে রাত। আগের মতোই শান্ত চেহারা নিয়ে এক পা এগিয়ে এসে ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি ফুটিয়ে বলল-
“তোমার গায়ে হলুদ সেজন্য আসলাম। হয়তো এটুকুই তোমার জীবনে আমার শেষ উপস্থিতি।”,
শেষ উপস্থিতি কথাটা কানে আসতেই সারা শরীর জমে গেলো।
কনার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। কনার গলা ভেঙে এলো। তার চোখে অভিমান আর ক্ষোভ একসাথে ভেসে উঠল।
“ শেষ উপস্থিতি?
-“ হ্যাঁ।
-“ আচ্ছা একটা কথা জানতে পারি?
-“ বলো।
-“ আপনি আমার অপূর্ণতায় থেকে গেলেন কেনো? প্রকৃতি কেনো এমন নির্দয়তা দেখালো?
রাত ঠাণ্ডা ও দৃঢ় স্বরে বলল-
-“ এক জীবনে সব পেয়ে গেলে জীবন নষ্ট হয় কনা। কিছু জিনিস অপূর্ণতায় থাকতে হয়। অবসরে আফসোস করার জন্য।
-“ আপনার কি খারাপ লাগে না? একটা মেয়ে আপনাকে এতো ভালোবাসছে অথচ আপনি ফিরেও তাকাচ্ছেন না।
-“ এর উত্তর আমার কাছে জানা নেই।
কথাটা বলেই কনার গালে থাকা হলুদ নিয়ে ফের কনার গালে লাগিয়ে বলল-
-“ তবে পৃথিবীর সব সুখ তোমায় আমাকে ভুলতে সাহায্য করুক। এতো সুখ আসুক যে তুমি আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য সূক্ষ্ম সময় টাও যেনো না পাও।
-“ মানুষ ভোলা কি এত সহজ? আপনি পারবেন আমাকে ভুলতে? আমি তো পারবো না।
-“ পারবে পারবে। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই।
-“ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তাহলে আমি কেনো আপনাকে পেলাম না। মানুষ চাইলেই সব কিছু করতে পারে না।
-“ ভালো থেকো আসি।
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৫
কথাটা বলেই রাত আর দেরি করলো না চলে গেলো। কনা ঠাই দাঁড়িয়ে দেখলো তার যাওয়া। চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়তে লাগলো। রাতের অবয়ব যত দূরে যেতে লাগলো ততই কনার বুক ভারি হয়ে আসলো। বুকের ব্যথা বেড়ে উঠলো। কনা মাটিতে বসে পড়লো। বুকে হাত দিয়ে এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো। ভালোবাসায় এত কষ্ট এত ব্যথা কেনো? কতক্ষণ কান্না করলো বুঝতে পারলো না। হঠাৎ কি একটা মনে হতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চোখে থাকা জল মুছে নিজেকে শক্ত করলো৷ লম্বা শ্বাস টেনে পেছন ফিরতেই আকস্মিক রাহুল কে দেখে চমকে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
-“ আপনি….