আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৫
Raiha Zubair Ripti
ভার্সিটি থেকে মাত্র ৫ মিনিট দূরেই একটা ছয়তলা ভবনের চারতলায় একটা দুই কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে আষাঢ়। ফ্ল্যাট টা বেশ পছন্দ হয়েছে সন্ধ্যার। আষাঢ় দুটো বেড,একটা আলমারি,একটা ড্রেসিং টেবিল, পড়ার টেবিল,ডাইনিং টেবিল,একটা টিভি, সোফা,একটা ছোট ফ্রিজ কিনে লোক দিয়ে পুরো ফ্ল্যাট টা সাজিয়ে তারপর সন্ধ্যা কে নিয়ে এসেছে। সন্ধ্যা এসে পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে রান্নার জন্য গিয়ে দেখে রান্না যে করবে তার হাঁড়ি পাতিল,সবজি, চাল কিছুই নেই। সন্ধ্যা আষাঢ় কে ডাকলো। আষাঢ় রান্না ঘরে আসতেই সন্ধ্যা বলল-
-“ সবই তো এনেছেন কিন্তু রান্নার জিনিস আনেন নি কেনো? এখন কি রাঁধবো? আর খাব কি?
-“ খাওয়ার জন্য রাঁধতে হবে সেটা কোথায় লেখা আছে? আমরা আজ অর্ডার করে খাবো। কাল ঢাকা যাবার আগে কিনে দিয়ে যাব।
-“ তা খাবার কি অর্ডার করেছেন?
-“ হ্যাঁ করেছি তো। এসে পড়লো বলে। রাত হয়েছে তুমি বরং গিয়ে কম্বলের নিচে গিয়ে শুয়ে থাকো না। খাবার আসলে আমি রুমে নিয়ে আসবো নি।
ঠান্ডা লাগায় সন্ধ্যা চলে গেলো রুমে। খাবার চলে আসলে আষাঢ় খাবার প্লেটে বেড়ে রুমে এসে বলল-
-“ কি দরকার বলো এই ঠান্ডায় তোমার ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ার। এরচেয়ে বরং আমি খাইয়ে দেই।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ খাইয়ে দিতে চাচ্ছেন?
-“ হু।
-“ আচ্ছা দিন।
আষাঢ় খাইয়ে দিলো সন্ধ্যা কে। সন্ধ্যা পেট ভরে খেয়ে পানি খেয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। আষাঢ় খাবার খেয়ে বাকি খাবার ফ্রিজে রেখে বসার ঘরের লাইট নিভিয়ে রুমে এসে রুমের লাইট নিভিয়ে কম্বলের ভেতর ঢুকে ঠান্ডা হাত পা দিয়ে জড়িয়ে ধরলো সন্ধ্যা কে। সন্ধ্যার শরীর যেনো জমে গেলো। সাথে রাগ। এতক্ষণ কম্বলের নিচে থেকে শরীর গরম করলো আর এই লোক ঢুকেই ঠান্ডা হাত পা উপরে দিলো! সন্ধ্যা হাত পা সরিয়ে দিলো।
-“ সরিয়ে দিচ্ছ কেনো?
-“ আগে শরীর গরম করুন। তারপর দিবেন।
-“ আর ইউ সিওর?
-“ হু।
সন্ধ্যা কথাটা বলতে না বলতেই আষাঢ় সন্ধ্যার পাজামা ধরে টান দিতে নিলে সন্ধ্যা বলে উঠে –
-“ আরে পাজামা ধরে টানছেন কেনো?
-“ তুমিই তো বললে শরীর গরম করতে।
-“ তো পাজামা টানলে আপনার শরীর গরম হবে কি করে?
-“ শীতকালে তো পুরুষ দের গরম করার অস্ত্র এটাই পিও।
-“ একদম না আমার মুড নাই।
-“ আমার তো মুড আছে।
-“ এই শীতে সকালে উঠে আমি গোসল করতে পারবো না। দূরে সরুন বলছি।
-“ সকালে করতে হবে না গোসল। বেলা দশটা বাজে ঘুম থেকে উঠে করিও নো প্রবলেম। দরকার হলে হট ওয়াটার এনে দিব।
কথাটা বলে আষাঢ় ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করলে সন্ধ্যা বলে-
-“ আমি ওয়াশরুমে যাব ছাড়ুন।
-“ রাত টা কি সেখানেই কাটাবা?
-“ আশ্চর্য আমি রাত ওয়াশরুমে কেনো কাটাবো? পাঁচ মিনিট লাগবে জাস্ট।
-“ ওকে অ্যাম ওয়েটিং ফর ইউ।
সন্ধ্যা পাঁচ মিনিট পর চলে আসলো। পাশ থেকে ভেসলিন নিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে নিলো। ঠোঁট ফেটে যেনো না যায় শীতে। পাশে এসে শুতেই আষাঢ় সন্ধ্যার ঘাড়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো।
-“ আমার সুরসুরি লাগে ডাক্তার।
আষাঢ় মাথা উঁচু করে তাকালো সন্ধ্যার দিকে।
কি আশ্চর্য আদর করতে গেলে ম্যাডামের বলে সুরসুরি লাগে! আষাঢ় এবার সন্ধ্যার ওষ্ঠদ্বয়ে ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ যেতেই সন্ধ্যা বলে উঠে-
-“ ধূর দিলেন তো ঠোঁটের সব ভেসলিন গুলো খেয়ে।
আষাঢ় চোখ ছোট ছোট করে বলল-
-“ তাতে কি হয়েছে? পাশেই আছে ভেসলিন আবার না হয় নিও। তাই বলে এতো বাঁধা দিবা সন্ধ্যা? একটা পুরুষ মানুষই বুঝে শুভ কাজে এত বাঁধা দেওয়ার যন্ত্রণা টা ঠিক কেমন।
-“ আচ্ছা যান আর দিব না বাঁধা। ভেসলিন টা দিন। ঠোঁট ফাটাতে চাই না আমি।।
-“ এখনই লাগবে? পড়ে নিলেও তো চলে।
-“ তাইলে আপনিও পরে আসিয়েন কাছে। টাটা বাই বাই।
-“ এ্যাই না। এই যে নাও তোমার ভেসলিন। মাখো ঠোঁটে।
সন্ধ্যা দাঁত কেলিয়ে হেসে ফোনের ক্যামেরা জ্বালিয়ে ঠোঁটে ভেসলিন লাগিয়ে নিলো।
-“ সামান্য ভেসলিনই তো সেটা তো না দেখেই ঠোঁটে লাগানো যায়। তারজন্য আবার ফোনের ক্যামেরা লাগে?
-“ আমার লাগে।
আষাঢ় আর কথা বাড়ালো না। সন্ধ্যার মাঝে ডুবে যেতে লাগলে আকস্মিক ফোনে রিংটোন বাজতেই আষাঢ় এবার রাগে নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো।
-“ আর কত বাঁধা আসবে খোদা।
-“ আরে ফোন রিসিভ করেন। দেখেন কে ফোন দিছে।
আষাঢ় ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ফোন করছে। আষাঢ় ফোন রিসিভ করে বলল-
-“ কিরে রাত এতো রাতে ফোন কেনো?
রাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো।
-“ কই এত রাত ভাই। সবে নয়টা বাজে।
আষাঢ় কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখলো আসলেই নয়টা বাজে।
-“ ওহ্ আমি ভাবছি রাত ১২ টা বাজে। কিছু বলবি?
-“ হ্যাঁ। শুনলাম তুমি ফ্ল্যাট নিয়েছো। ঐ বিল্ডিংয়ে কি ফ্ল্যাট আর খালি আছে?
-“ না কেনো?
-“ কনার জন্য।
-“ কনার জন্য ফ্ল্যাট কেনো লাগবে? সন্ধ্যার সাথেই থাকবে। আমি দু রুম দেখে নিয়েছি কনার জন্য। ও আসবে কবে?
-“ আগামীকাল নিয়ে আসবো।
-” আচ্ছা আয়। আমিও কাল ঢাকা ব্যাক করবো। দু ভাই এক সাথে যাওয়া যাবে।
-“ আচ্ছা ধন্যবাদ ভাই।
-“ শাট-আপ ভাইকে ধন্যবাদ কেনো দিচ্ছিস? এখন রাখি বুঝলি আমি একটু ব্যস্ত।
-“ কোনো কাজ করছো নাকি?
-“ হ্যাঁ ভীষণ ইমপোর্টেন্স কাজ করছি ভাই। এখন রাখি? সকালে ফোন দিব নি।
-“ আচ্ছা।
আষাঢ় ফোন কেটে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করলো। আর কোনো বাঁধা আসে কি না। না আসলে না। আষাঢ় এবার মুড নিয়ে সন্ধ্যার কাছে গেলো। এবার আর কোনো বাঁধা আসলো না।
সকালে প্রথম আলোর কিরণে ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার, বাইরে পাখির কিচিরমিচির। রাতের ঘটনার রেশ এখনো তার মুখে লেগে আছে। একটু অস্বস্তি আর একটু হাসি মিশে গিয়েছিল তার মনে। পাশে তাকিয়ে দেখে আষাঢ় গভীর ঘুমে মগ্ন। ভেসলিন আর ঠান্ডার প্রসঙ্গগুলো মনে করে সন্ধ্যা হালকা হাসল।
কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক করেও আর ঘুম এলো না। সে নীরবে উঠে গিয়ে পর্দাটা সরাল। জানালা দিয়ে দেখল, নিচে রিকশার টুংটাং শব্দ। ভোরের রাজশাহী শহর একটু অন্য রকম।
আষাঢ়ের ঘুম এখনো ভাঙেনি। সন্ধ্যা আস্তে করে রান্নাঘরে গিয়ে খুঁজল কী আছে। ফ্রিজ খুলে দেখে রাতের খাবারের অবশিষ্টাংশ।
ফ্ল্যাটটা এখনো নতুন, তাই সবকিছুই এক ধরনের সজীব লাগছে। সন্ধ্যা ডাইনিং টেবিলে বসে রইলো। একটু রোদ উঠলেই গোসলে ঢুকবে।
এদিকে আষাঢ় ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠল। ঘুমের আবেশে একটু এলোমেলো চোখে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো সন্ধ্যা নেই। আষাঢ় রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে সন্ধ্যা কে চাদর জড়িয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল—
-“ তুমি উঠেছ কখন?”
-“অনেকক্ষণ হলো।
আষাঢ় হালকা হাসি দিয়ে বলল—
-“ গোসল করবে না? চলো এক সাথে করি।
-“ রোদ উঠুক তারপর করবো গোসল আমি। আপনি গিয়ে করুন আর বাজারে যান রান্নার জিনিসপত্র আনতে।
-“ আচ্ছা চলো দুজন এক সাথে যাই। তোমার যা যা লাগবে নিয়ে আসবে।
-“ আচ্ছা গোসল করে আসেন আগে।
আষাঢ় চলে গেলো। গোসল করে বের হতেই সন্ধ্যা ঢুকলো গোসলে৷ গোসল সেরে দুজনে রেডি হয়ে বাজারে গেলো।
প্রায় দু ঘন্টা বাজার সেরে ফিরে এসে সন্ধ্যা রান্নাঘরে ঢুকে গেল, আর আষাঢ় টিভি ছেড়ে বসে গেল সোফায়। কিছুক্ষণ পর খাবারের গন্ধে পুরো বাসা ভরে গেল। সন্ধ্যা খাবার পরিবেশন করতে করতে বলল—
-“ এ আসেন খেয়ে নিন।
আষাঢ় টেবিলে আসলো। দুজনে খাবার খেলো।
বাসাটা এখনও পুরোপুরি সাজানো না৷ তাই
সন্ধ্যা আর আষাঢ় দুজনেই বিকেলের দিকে পুরো বাসাটা গুছিয়ে নিল। সন্ধ্যা রান্নাঘরের সবকিছু নিজের মতো করে সাজিয়ে রাখল, আর আষাঢ় লিভিং রুম আর বেডরুমের ছোটখাটো বিষয়গুলো দেখল। সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যা ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসতেই আষাঢ় এক কাপ চা নিয়ে হাজির হলো।
-“এই নাও, ম্যাডাম। তোমার জন্য চা!”
সন্ধ্যা চায়ের কাপ নিয়ে হেসে বলল—
-“ অনলাইনে অর্ডার করছিলেন নাকি চা?
-“ আরে না নিজে বানিয়েছি।
সন্ধ্যা মুখে নিয়ে বলল-
-“ নাইস টেস্ট।
-“ সত্যি?
-“ হু। আচ্ছা কনা আর রাত কখন আসবে?
-“ সন্ধ্যা হবে।
কথাটা বলে আষাঢ় সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে রইল। সন্ধ্যার মুখে ক্লান্তি আর প্রশান্তি একসঙ্গে মেশা। আষাঢ় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল—
-“চলো ছাদে যাই। আজ সন্ধ্যার আলোয় আমাদের শহরটা দেখি।”
সন্ধ্যা আষাঢ়ের হাত ধরে ছাদের দিকে এগোল। ছাদে গিয়ে তারা দুজন একসঙ্গে দাঁড়াল। বাতাসে হালকা শীতের ছোঁয়া। সন্ধ্যা আষাঢ়ের পাশে দাঁড়িয়ে শহরের আলো দেখছিল।
-“শহরটা দেখতে কি সুন্দর! তাই না?
-“ হুম।
-“ কিন্তু জানো কি, এর চেয়ে সুন্দর আমার কাছে তোমার সঙ্গে কাটানো এই মুহূর্তগুলো।”
সন্ধ্যা হেসে বলল—
-“ তাই বুঝি?
-“ হুমম।
-“ সন্ধ্যা শুনো..
ঠিক তখনই আষাঢ়ের ফোনে আবার রাতের কল এল। আষাঢ় বিরক্ত হয়ে বলল—
-“এই ছেলেটা এক মুহূর্তও শান্তি দিতে পারে না!
সন্ধ্যা হেসে বলল—
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৪
-“ রিসিভ করুন। এসে পড়েছে হয়তো।
-“ ওহ্ হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গেছি ওরা আসছে।
আষাঢ় ফোন রিসিভ করল।
-“ এসেছিস রাত?
-“ হ্যাঁ ভাই। নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
আষাঢ় ছাঁদ থেকে নিচে তাকালো। রাত আর কনাকে দেখলো। আষাঢ় নিচে গিয়ে ওদের নিয়ে আসলো।