আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৬

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৬
Raiha Zubair Ripti

রাত কনা,আষাঢ় সন্ধ্যা মিলে এই ভর সন্ধ্যায় বেড়িয়েছে কোলাহল মুক্ত শহরে হাঁটতে। কাল সকালেই রাত আষাঢ় চলে যাবে। সেজন্য আজ সবাই মিলে ঘুরতে বের হলো একটু। সন্ধ্যা গোলাপি রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। তার উপর চাদর। আষাঢ় ব্লাক হুডি পড়েছে। সন্ধ্যার হাত ধরে এগিয়ে চলছে। পেছনে রাত কনা। কনাও চাদর পড়েছে। আর রাত জ্যাকেট। তবে তারা হাত ধরে হাঁটছে না। রাত পকেটে হাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হুট করে রাস্তার ওপাশে ঝিলমিলি বেলুন দেখতে পেলো সন্ধ্যা। আষাঢ়ের হাত টেনে হাঁটা থামিয়ে বলল-

-“ ডাক্তার আমি ঝিলমিলি বেলুন কিনবো।
আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তুমি বাচ্চা মেয়ে নাকি?
-“ আশ্চর্য এসব বেলুন তো বাচ্চাদের জন্য না।
-” তাহলে?
-“ আমাদের মতো কাপল দের জন্য। আপনি দেখেন নি এই বেলুন এখন ট্রেন্ডে। সব পুরুষ তার পছন্দের নারী কে কিনে দেয়। আর আমি নিজ থেকে বলার পরও আপনি দিচ্ছেন না! আপনার টাকা দেওয়া লাগবে না। আমিই দিবো নি। তবুও কিনে দিন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ আচ্ছা চলো খোঁটা দিও না। কিনে দিচ্ছি।
আষাঢ় সন্ধ্যার হাত ধরে সাবধানতার সহিত রাস্তা পাড় হলো। বেলুনের কাছে গিয়ে একটা বেলুন কিনে দিলো। সন্ধ্যা বেলুন টা আষাঢ়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দোকানদারের থেকে সব গুলো বেলুন নিয়ে বলল-
-“ ডাক্তার আপনার আইফোন দিয়ে কয়েকটা সুন্দর পিক তুলে দিন তো। অনেক দিন হলো ফেসবুকের প্রোফাইল চেঞ্জ করি না।
আষাঢ় পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে দিলো। সন্ধ্যা বেলুন গুলো দোকানদারের হাতে দিয়ে বলল-
-“ চলুন ঐ দোকানদারের কাছে যাই।
আষাঢ় মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে বলল-

-“ কোন দোকান আবার?
-“ ঐ যে আইসক্রিম। আমি খাবো আপনি পিক তুলবেন। আজ অনেক ছবি তুলবো। আপনার নতুন আইফোন সিক্সটিন ফুল করে ফেলবো। আমাকে তো কিনে দিলেন না আইফোন। আগের টা কি করছেন পনেরো?
-“ ওটা বাসায়। তোমার আইফোন লাগবে? বলতে কিনে দিতাম।
-“ সব কেনো বলে দিতে হবে? আপনি নিজ থেকে দিতে পারেন না? গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হয়ে একে ওপরকে আইফোন গিফট করে। আর আপনি স্বামী হয়ে করেন না!
-“ ওক্কে বাবা নেক্সট উইক কিনে দিব।
-“ পাক্কা?
-“ হু।
-“ তাহলে চলুন আইসক্রিমের দোকানে।

আষাঢ় আইসক্রিম কিনে দিলো। সন্ধ্যা খেতে গিয়ে মনে পড়লো কনা রাতের কথা। পেছন ফিরে দেখলো রাত কনাকে ঝিলমিলি বেলুন কিনে দিচ্ছে। সন্ধ্যা আষাঢ় কে ঠেস মেরে বলল-
-“ ভাইয়ের থেকে কিছু শিখুন ডাক্তার।
-“ ও আমাকে দেখে শিখবে। আমি কেনো ওকে দেখে শিখবো?
-“ এই কনা আয় আইসক্রিম খাই।
রাত কনার হাত ধরে এগিয়ে আসলো।
-“ আইসক্রিম খাবে এই রাতে কনা? ঠান্ডা লাগবে কিন্তু।
সন্ধ্যা হা হয়ে গেলো। আইসক্রিম খেতে খেতে আষাঢ় কে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল-
-“ আপনি তো আমাকে এভাবে সতর্ক করলেন না ডাক্তার। এখন যদি আমার ঠান্ডা লেগে যায় তখন?
-“ লাগবে না ঠান্ডা। তোমার স্বামী ডাক্তার না? মেডিসিন চিকিৎসা সবই আছে। ও তো ডাক্তার না তাই টেনশন করছে। ঠান্ডা লাগলে ডক্টরের কাছে গেলে আলাদা খরচ না?

-“ ওওও হ্যাঁ আমি তো এটা ভাবি নি।
আষাঢ় পাশে ফিরে বিরবির করে বলল— উফ বাঁচলাম।
কনা আর খেলো না আইসক্রিম। সন্ধ্যার খাওয়া শেষ হলে তারা একটা টঙের দোকানে গিয়ে বসে। সবাই এক কাপ মালাই চা খেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। দুপুরে রান্না করে রাখা খাবার গরম করে রাতের ডিনার সেরে সবাই ঘুমাতে চলে যায়।
সকালে ব্রেকফাস্ট করে আষাঢ় রাত বেরিয়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। আষাঢ় প্রতি সপ্তাহে আসবে।
এখন ফ্ল্যাটে পড়ে রইলো কনা, সন্ধ্যা। তারা রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলো।
আষাঢ়ের মা আমেনা বেগম এখন একা দেখে রান্না বান্না করার জন্য আষাঢ় একটা কাজের বুয়া রাখলো। আষাঢ় ঢাকায় ফিরে সোজা হসপিটালে আগে ঢুকে। হসপিটালের ডিউটি শেষ করে রাতে বাসায় ফিরে। বাসায় আসতেই বসার ঘরে শ্রেয়া কে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো। শ্রেয়া তার মাকে সন্ধ্যার ব্যপারে বলছে-

-“ আন্টি সন্ধ্যা এখন বিবাহিত। এখন পড়াশোনা করে আর কি করবে? এখন তো ওর উচিত ছিলো পড়াশোনা ছেড়ে সংসারে মনোযোগ দেওয়া। তা না করে রাজশাহী চলে গেছে।
আষাঢ় শরীরের এপ্রন টা খুলে বলল-
-“ পড়েছিস তো ন্যাশনালে তাই পড়াশোনার ভ্যালু জানিস না। সন্ধ্যা যা মেধাবী মেয়ে সে পড়াশোনা ছেড়ে শুধু সংসার করুক সেটা আমি নিজেই মানবো না। তাই বোনের হয়ে কুটনামি কম কর।
-“ আশ্চর্য এটা কুটনামির কি হলো?
-“ কুটনামিই তো। আর তুই এই সময় এ বাসায় কেনো?
শ্রেয়া চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল-

-“ আন্টির সাথে গল্প করতে আসলাম। সব ছেলের বউই তো পড়াশোনা করার জন্য বাহিরে চলে গেছে।
-“ সেই সুযোগে তুই মায়ের কান ভারি করছিস?
-“ আহ আষাঢ় থাম তোরা।
আমেনা বেগম বলে উঠলো কথাটা।
-“ ও তো নিজের মা কে এতো সময় দেয় না মা। ওর মা অসুস্থ। ও তার সেবাযত্ন না করে দেখি প্রায় ও তোমাকে এটা ওটা বলে।
-“ আশ্চর্য তোদের বাসায় আসলেই এভাবে কথা বলিস কেনো?
-“ আসিস কেনো? আমরা কি বলেছি আয়?
শ্রেয়া চায়ের কাপ টা রেখে চলে গেলো। দরজা অব্দি যেতেই আষাঢ় বলে উঠল-
-“ বাকি চা টা খেয়ে যা। চায়ে দুধ,চিনি,চা-পাতা দেওয়া হয়েছে। দাম অনেক এসবের।
-“ তোর চা তুইই খা।
শ্রেয়া চলে গেলো। আষাঢ় রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যাকে ফোন করলো। সন্ধ্যা পড়ার টেবিলে বসে এসাইনমেন্ট করছিলো। আষাঢ়ের ফোন পেয়ে ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকারে চালু করে টেবিলের উপর রেখে এসাইনমেন্ট করতে করতে বলল-

-“ বলুন ডাক্তার। ঠিকমতো পৌঁছে ছিলেন?
-“ জ্বি ম্যাডাম। কি করছো?
-“ লিখছি।
-“ কি লিখছো?
-“ প্রেমপত্র শুনবেন?
-“ কাকে লিখছো? আমাকে?
-“ ইয়েস। শুনবেন?
-“ হু বলো।
-“ ডক্টর আষাঢ় আহমেদ তার হসপিটালের জন্য কিছু আসবাবপত্র শাপলা লিমিটেড থেকে বাকিতে ক্রয় করলো..
-“ ওয়েট অ্যা মিনিট। আমি জীবনে এক পয়সা বাকি খাই নি কারো থেকে। আর তুমি বলছো আমি আসবাবপত্র বাকিতে ক্রয় করছি? আর এটা তোমার প্রেমপত্র?

-“ ইয়েস স্যার। রাত পোহালেই এটা জমা দিতে হবে।
-“ খেয়েছো?
-“ না পিৎজা অর্ডার দিছি। ওটা খেয়েই রাত টা পার করবো।
-“ রান্না করো নি কেনো?
-“ সময় নেই।
-“ আহারে বউটা আমার। আমি কাছে থাকলে রেঁধে মুখে তুলে খাইয়ে দিতাম।
-“ আর রাত হলে জামা কাপড় ধরে টান মারতেন তাইতো?
-“ এভাবে বলো না। পুরুষ মানুষ তো। বউ পাশে তাকা স্বত্বেও ছুঁতে না পারার কষ্ট তুমি বুঝবে না মেয়ে। তুমি তো পুরুষ নও। আরো এটা শীতকাল। শীতকাল ভীষণ কষ্টের পুরুষ দের জন্য একা থাকা। সেজন্য দেখো না পুরুষ মানুষ বেশিরভাগ শীতকালে বিয়ে করে।

-“ বুঝলাম। আচ্ছা ক্যালকুলেশন করুন তো ৬৭০০০০ থেকে ৪৫০০০ বাদ দিলে কত থাকে।
-“ কি একাউন্টিং এর এটা ওটা আমাকে দিয়ে করাচ্ছো। পাশে ক্যালকুলেটর নেই?
-“ আলসেমি লাগছে। আপনি বলুন।
-“ ৬২৫০০০।
-“ থ্যাংক ইউ।
-“ আমি কিন্তু শুক্রবারে আসবো।
-“ আজ কি বার?
-“ আজ সোমবার।
-“ এসে কি করেন?
-“ তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে চলে যাব।
-“ মনে যেনো থাকে।
-“ ওক্কে ম্যাডাম৷ তা আপনাদের পিৎজা আসে নি?
-“ এসেছে হয়তো। কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম।
-“ খেয়ে নাও আগে তাহলে। আর ল্যাপটপ টা অপেন করো ভিডিও কল দিবো একটু পর। তোমাকে দেখবো ডিসটার্ব করবো না একদম।

-“ আচ্ছা।
-“ আই লাভ ইউ…
-“ এই সন্ধ্যা তোর পিৎজা রেখে গেলাম। খেয়ে তারপর লাভিউ টু সহ সব বলিস।
কনা চলে গেলো নিজের রুমে।
-“ আমি লাভ ইউ বলছি কনা কিভাবে শুনলো?
-“ কারন ফোন লাউডস্পিকারে দেওয়া।
-“ হেডফোন নেই তোমার?
-“ আছে।
-“ তো লাগাতে পারো না? কত কি বলে ফেলি মাঝেমধ্যে।
-“ তো ফোনে বলেন কেনো?
-“ সামনা-সামনি তো শুনো না। আচ্ছা বাদ দাও এখন বলো।
-“ কি বলবো?
-“ আশ্চর্য আমি আই লাভ ইউ বললাম না?
-“ হু তো?
-“ তুমি লাভ ইউ টু বলবা না?
-“ লাভ ইউ টু।
-“ বলার পর বললা। আগে কেনো বলো নি?
-“ আমি কাজ করতেছি ডাক্তার। আমি রোমান্টিক মুডে নাই।
-“ থাকোই বা কখন বলো? সব সময় তো তেঁতো মুখেই থাকো।
-“ খেয়ে তারপর ফোন করুন। এখন রাখুন।

আষাঢ় কেটে দিলো ফোন। তারপর চটজলদি রাতের খাবার খেয়ে নিলো। রাত ১১ টা পয়তাল্লিশের দিকে আষাঢ় ভিডিও কল দিলো। সন্ধ্যা রিসিভ করলো। আষাঢ় দেখতে পেলো অন্ধকার রুমে টেবিলের সামনে খাতা নিয়ে বসে আছে সন্ধ্যা। ঝাড়বাতির আলোয় একটু আলোকিত হচ্ছে সন্ধ্যার মুখ। আষাঢ় ফ্লাই কিস ছুঁড়ে বলল-
-“ সন্ধ্যা ক্যাচ।
সন্ধ্যা হাত বাড়ি ধরে ফেলার মতো করে হাত মুঠোবন্দি করে বুকের বা পাশে চেপে ধরে বলল-
-“ আটকে রেখে দিলাম হৃৎস্পন্দনের সাথে।
-“ এবার তুমি দাও আমিও আটকে রাখি।
সন্ধ্যা কিস ছুঁড়ে দিলো। আষাঢ় ধরে নিয়ে বলল-
-“ এবার এটাকে পকেটে ভরে রাখলাম। আমার হৃৎস্পন্দনে বরফ জমে আঁটকে গেছে। শুধু কিস ঢুকতে পারে না।
-“ তাহলে গরম পানি ঢালুন। বরফ গলে যাবে।
-“ তোমাকে আজ এত সুন্দর লাগছে কেনো?
-“ কারন আজ গোসল করিনি।
-“ ২০২৪ সালের শেষ দিনটা টা গোসল না করে কাটিয়ে দিলে?
-“ যা শীত। একদিন না করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না।
আষাঢ় হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১২ টা বেজে গেছে।

-“ হ্যাপি নিউ ইয়ার সন্ধ্যা। ১২ টা বেজে গেছে।
সন্ধ্যা ঘড়ির দিকে তাকালো। আসলেই ১২ টা বেজে গেছে।
-“ ২৫ সাল চলে আসলো?
-“ ইয়েস ম্যাডাম।
-“ ইশ আপনি আজই কেনো চলে গেলেন? বিয়ের পর এই প্রথম নিউ ইয়ার আমাদের। আপনার সাথে কটানোর কথা ছিলো এই রাত টা।
-“ আছি তো সাথেই এই যে।
-“ আই মিস ইউ। সবাই বাহিরে বাজি ফাটাচ্ছে।
-“ এসব করা ভালো না পাখি। ২৫ সাল নিয়ে তোমার কোনো প্রত্যাশা ইচ্ছে আছে?
-“ শুধু ২৫ সাল না। আগামী সব বছর গুলোকে ঘিরে একটাই প্রত্যাশা আপনার সাথে আপনার পাশে থেকে হাসি খুশি রাগ,ঝগড়া করে পুরো জীবন কাটিয়ে দেওয়া।
-“ ইনশাআল্লাহ। উই উইল অলওয়েজ স্টে টুগেদার।
-“ ইনশাআল্লাহ। আপনার কোনো প্রত্যাশা নেই?
-“ আছে তো।
-“ কি?

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৫

-“ আমি চাই ২০২৫ সাল তোমার জীবনে নতুন আশা, সাফল্য এবং সুখ নিয়ে আসুক। এই বছর যেন তোমার জন্য প্রশান্তি ও শান্তির বার্তা নিয়ে আসে, এবং তোমার সকল চাওয়া পূর্ণ হয়। ২০২৫ সাল তোমার জন্য আনন্দের পথপ্রদর্শক হোক।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৭