ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ২১
Arishan Nur
পিচঢালা রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি শাইশাই করে এগিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র মনোযোগ সহকারে ড্রাইভ করছে। পাশের সীটে চুপটি করে বসে আছে আয়না। ওর মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। বাসায় ফেরার তাড়াও নেই। বরং বাসায় ফিরতে না পারলেই স্বস্তিবোধ করবে। সমুদ্র কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে কিছু ই জিজ্ঞেস করেনি। কোথায় বা সর্বোচ্চ নিয়ে যেতে পারবে? নরকে? ওই নরকের কারারুদ্ধ গুমোট পরিবেশ তো নিজের বাসাতেই বিরাজমান। আয়নার চোখ বুজে আসছিলো। সমুদ্র একবার ওর দিকে তাকায়। এরপর সুধালো, ” ঘুম পাচ্ছে?”
আয়না হচকচিয়ে উঠে। এরপর বলে, ” না।”
–” ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে ঘুরবো কোথাও। দেন লাঞ্চ করবো। বাট মিটিং আছে। এখন কিন্তু মিটিংয়ে যাচ্ছি। মিটিং শেষ করে লাঞ্চ করে বাসায় পৌঁছে দিবো।”
আয়নার একবার বলতে মন চাইলো বাসায় যাবো না। গাড় থামান কিন্তু শরীরে জোড় পায় না। কেমন ক্লান্ত লাগছে। সমুদ্র বার কয়েক আয়নার দিকে তাকায়। যতোবারই ওকে দূর থেকে অফিসে দেখেছে, মেয়েটা এতো নিশ্চুপ স্বভাবের না। সবসময় একটা চঞ্চলতা ভাব থাকে ওর মধ্যে। অফিসে প্রায় সবার সঙ্গে ওর ভাব। সবার সঙ্গে কাজ বাদ দিয়ে খালি গল্প করে। সেই মেয়ে নিশ্চয়ই বড় আঘাত পেয়েছে বিধায় এতো নিশ্চুপ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সমুদ্রের অনুতপ্ততার মাত্রা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কেন সে নিজের অতীত টেনে এনে বর্তমান কে কষ্ট দিলো? কেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি! তার একটা ভুল কাজের জন্য এখন দু’জনকেই পোহাতে হচ্ছে। অন্যকে দুঃখ দিয়ে কোনোভাবে সে সুখে থাকতে পারেনা। অন্যরা অবশ্য পারে কিন্তু সমুদ্র পারেনা। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয় খুব। আয়নাকে ওভাবে বাজে ভাবে ট্রিট করার পর সে এতো পরিমাণ গিল্ট ছিলো, সর্যি বলেও কাজ হলো না। তাদের সম্পর্ক এখন কেমন জানি নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। বাবুই পাখির বাসার মতো। ঝড়ে যেকোনো সময় ভেঙে যাবে কিন্তু দূর থেকে সুন্দর, পরিপাটি। এমনটা সে কোনোদিন আশা করেনি। আয়নাকে কখনো ইউশার সঙ্গে সে মনের ভুলেও তুলনা করতে চায় না। করবেও না ভবিষ্যতে। কিন্তু ওইদিন কি যে হলো সমু নামটা শুনতেই গা জ্বালা দিয়ে উঠে। তার অতীত যে বড্ড কালো। ওমন কালোকে কেউ স্মরণ করতে চায় না।
সমুদ্রের গাড়ি থামে গুলশান ১ এর একটা অফিসের সামনে। তখন চারটার বেশি বাজছিলো। আয়নাকে নিয়ে দশতলায় লিফটে উঠে পড়ে ও। আজকে রুহুল সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করবে আপকামিং প্রোজেক্ট নিয়ে। বহুতলা ভবনের অফিসটা সম্পূর্ণ কাঁচে ঘেরাও করা। কাঁচের ভেতর গলিয়ে সূর্যের রশ্মি এসে ঝিলিক মারছে। ওই কাঁচের প্রতিবিম্বতে আয়নাকে দেখতে পায় সমুদ্র। ওকে এক প্রকার ক্লান্ত, বিধ্বস্ত লাগছে। নাকফুল টা এখনো জ্বলজ্বল করছে। কেমন মায়া কাজ করে৷ দায়িত্বের দ্বিঘাত সমীকরণের দু’টি মূলের মধ্যে তো মায়া নেই। তাহলে মায়া কেন কাজ করলো? হয়তো ওর মনে দুঃখ দিয়েছে জন্য বৈকি!
কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যখন আলোচনার জন্য মিটিং বসায়, সেখানে লাক্সারি থাকে। সমুদ্র জানিয়ে দিয়েছিল তারা দু’জন আসছে। মিটিংয়ের গোল টেবিলে দু’টো চেয়ার বরাদ্দ। নামসহ লেখা দেওয়া আছে কে কোথায় বসবে। আয়নার চেয়ার, সমুদ্রের পাশেরটায়। সমুদ্র একদম একপ্রান্তে। আয়নার পাশে কোনো একজন যার নাম আবুল শাখাওয়াত। সমুদ্র তড়িঘড়ি করে আয়নার আগে গিয়ে ওর চেয়ারে বসে পরে। আয়না অবাকের চূড়ান্ত সীমায় অবস্থান করে বলে উঠে, ” হ্যালো, স্যার এটা আমার চেয়ার৷ আপনি কেন বসেছেন এখানে।”
সমুদ্র দ্রুত নেমপ্লেটে এক্সচেঞ্জ করে দেয়। আয়নাকে নিজের অবস্থানে বসতে দিলো।
আয়না ফের জিজ্ঞেস করলো, ” এটা কি হলো?”
সমুদ্র বিড়বিড় করে বলে, ” কোনো আবুইল্লার পাশে আমার বউকে বসাবো না!”
আয়না ধপ করে ওর পাশের চেয়ারে বসে। মিটিং চলমান অবস্থায়। সবাই ব্যস্ত ভঙ্গিতেই প্রোজেক্টরের সামনে চোখ রেখেছে। কিছুক্ষণ পর সমুদ্রের প্রেজেন্টেশন আছে। সে সব গুছিয়ে নিচ্ছে। এমন সময় দেখলো আয়না একটু পরপর পা নাড়াচ্ছে। এই অভ্যাস অনেক মানুষেরই আছে। কিন্তু কেউ পা নাড়ালে সমুদ্রের কেমন জানি লাগে৷ মাথা ঘুরায়। সে আস্তে করে ফিসফিস করে বলে, ” এই পা নাচানো বন্ধ করো।”
আয়না ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলে, ” হুয়াই?”
–” আমার অসুবিধা হয়।”
–” আমার মজা লাগে। সো থামাবো না।”
–” কাউকে পা নাচাতে দেখলে আমার মাথা ঘুরে, বমি পায়।”
আয়না নিচু গলায় বলে, ” সেকি আপনি ছেলে হয়েও অন্যকে পা নাচাতে দেখলে প্রেগন্যান্ট হন? সব লক্ষণ তো ওমনই।”
সমুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো। টাইটা একটু লুজ করে প্রেজেন্টেশন দিতে সামনে যায়। প্রেজেন্টেশন ভালো মতোই দেয়। চলনসই। এরপর গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে। আয়না তখনও পা নাড়াচ্ছিলো। এটা ওর একটা বদ অভ্যাস। কাজ করতে করতে আনমনে পা নাড়ায় সে। আজও ব্যতিক্রম নয়। নোটে সব টুকে নিচ্ছে আর পা নাড়াচ্ছে৷ এমন সময় ফিল হলো কেউ তার পায়ে গুতা দিলো। সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে উঠলো এবং আশেপাশে তাকায়। সমুদ্র তার পাশেই একদম নর্মাল হয়ে বসে আছে। আয়না একটু নিচু হয়ে দেখে এটা সমুদ্রের ই পা। ও চোখ গরম করে তাকায়। কিন্তু সমুদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে তার পায়ে গুতা দিচ্ছে৷ কেমন বজ্জাত ছেলে! আয়না নিজের পা সরিয়ে নিলো। এরপর দু’মিনিট পর পুনরায় সমুদ্র তার পায়ে পা ঘঁষে এবং আস্তে করে বলে, ” পা নাড়াতে মানা করলাম আর আমাকে শেষমেশ প্রেগন্যান্ট বানিয়ে দিলে। এখন দেখি কেমনে পা নাচাও।”
সে নিজের এক পা দিয়েই আয়নার দু’ পায়ের উপর ভর দিলো যেন তার পা নাড়াতে না পারে। একটা মানুষের পাও এতো ভারী হয়। মনে হচ্ছে ইটের বস্তা পায়ের উপর রেখে দিয়েছে কেউ। আয়নাও কম যায় না৷ সে পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে সমুদ্রের পিঠে এতো জোড়ে চিমটি কাটে। সমুদ্র এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সে ‘আইয়া’ বলে চিল্লিয়ে উঠে। সবার দৃষ্টি ওর দিকে যায়। ভীষণ ভ্যাবাচেকা খায় ও। এতো ভারী লজ্জার বিষয়বস্তু! কি বলবে ভেবে পায় না৷
আয়না ওকে সাহায্য করে। বলে উঠে, ” ওনার পায়ের রগ নড়ে গেছে এজন্য ব্যথা হচ্ছে।”
সমুদ্রও তাল তাল মিলিয়ে সম্মতি দেয়। আদৌ পায়ের রগ নড়ে যাওয়া বলে কোনো রোগ আছে কীনা খেয়াল ই আসছে না। তবে আয়না এখনো হাত দিয়ে চিমটি দিয়েই যাচ্ছে। ব্যথায় পিঠ কুচকে যাচ্ছে তার৷ একদম ম্যাসেলে চিমটি কেটেছে।
সে আস্তে করে ফিসফিস করে বলে, ” ভুলেও আর আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। মনে থাকে যেনো?”
–” আচ্ছা। চিমটি কাটা বন্ধ করো।”
–” অফিসের মধ্যে আর বিরক্ত করবেন না এটাও মনে রাখেন।”
–” ওকে ফাইন।”
আয়না শেষ সময় ইচ্ছা করে একটু জোরে চিমটি দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়।
মিটিং শেষে সমুদ্র নিজের পা’জোড়ার দিকে তাকালো। পায়ের রগ গুলো ঠিক আছে কীনা দেখে নিলো। দশতলা থেকে নিচে নামার জন্য লিফটে উঠে। লিফটে তারা দুজনেই ছিলো। লিফটের দরজা বন্ধ হতেই সমুদ্র আয়নার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে এনে ওর ডান গালে একটা চু–মা দেয়। আয়নার চোখ বড় হয়ে যায় আপনা-আপনি। সঙ্গে সঙ্গে লিফট খুলে আটতলায়। দু’জনে দু’দিকে ছিটকে পড়ে। কিন্তু লিফটের দরজার সামনে কেউ ছিলো না। সমুদ্র দ্রুত গেইট অফ হওয়ার বাটন ক্লিক করে। লিফট অফ হয়ে চলতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে আয়নার গায়ের সঙ্গে মিশে ওর পিছে দাঁড়িয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে, আয়নার বাম গালে আরেকবার কিস করে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই বলে, ” প্রেগন্যান্ট মেয়েরা হয়। বিশ্বাস না হলে, বাস্তব উদাহরণ দিয়ে দেখাতে পারি।”
ওমনি ছয়তলায় লিফট থামে। সমুদ্র ভেবে নেয়, এবারো কেউ আসবে না। তাই সরে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুইজন মাঝবয়েসী ভদ্রমহিলার সামনে লিফটের দরজা খুলে। দ্রুত সমুদ্র উলটা ঘুরে যায়। ভাবখানা এমন যেন খুব গম্ভীর ভঙ্গিমায় মশা মারছিলো। লিফটের দেয়াল মিরর দিয়ে বানানো। কাজেই সমুদ্রের রিয়াকশন পুরাটাই আয়না দেখে ফেলে।
সমুদ্র বলে উঠে, ” আন্টি কিছু মনে করবেন না। মশা মারছিলাম৷ ডেঙ্গুর সিজন৷ আপনাদের জন্য ই মশা মারলাম৷ কামড়ালে আপনাদেরই কামড়াবে। নাহলে নারীর জাত মশকী কে মারার ইচ্ছা ছিলো না। ”
মাঝবয়েসী মহিলা দুটি ভ্রু কুচকে লিফটে উঠে মন্তব্য করা শুরু করে, ” আজকালকার ছেলে-মেয়ে গুলো এতো বেয়াদব। কোনো ধৈর্য নাই। হায়া নাই। এ যুগের মেয়েগুলো আরোও বেশি বেহায়া৷ ”
স্পষ্টত আয়নাকে মিন করেই বললেন। সমুদ্রের রাগ হয় অনেক। কিছু বলার আগেই ওরা নেমে পড়ে৷ সে রাগে গজগজ করতে করতে বলে, ” আয়না ওদের তুমি কিছু বললে না কেন?”
–” ভুল কি বললো তারা? অভদ্রতাই তো করছিলেন।”
–” আজব, আমি জানতাম কি এনারা আসবে এই মুহূর্তে। ”
–” এখন দোষটা ওদের? লিফটে করে মানুষ উঠা-নামা করে। আপনি ফাতরামি করলেন কেন?”
সমুদ্র এবারে চৌদ্দতলার এক কফি শপে বাটন ক্লিক করে। আয়না নামতে ধরলে তাকে আটকে দেয়৷
আয়না বলে, ” চৌদ্দ তলায় যাবেন তো গ্রাউন্ড ফ্লোরে কেন আগে বাটন চাপ দিলেন? লিফট ব্যবহার করতে পারেন না? নামতেও দিচ্ছেন না। ”
— সিডনি নামক গ্রাম থেকে এসেছি তো তাই লিফট আজকেই প্রথম চোখে দেখলাম ৷ সর্যি। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ার ও না আমি, এইজন্য এইসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার কম বুঝি৷ ”
আয়নার জাস্ট সমুদ্রের অতিরঞ্জিত আদিখ্যেতা সহ্য হয় না। মনে চায় ওর চুল সব ছিঁড়ে টাকলা বানিয়ে দিতে। তোমার যদি এতোই দরদ থাকত তাহলে ওইদিন এতো রুড হতে না। ওইদিনের কথা কোনোদিন ভুলবে না আয়না৷
সে এবারে সমুদ্র থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে বলে, ” আপনাকে জাস্ট আমার বিরক্ত লাগছে। লিফটে কেন এসব করলেন?”
–” তুমি ই তো বললে অফিসে কিছু না করতে। এজন্য লিফটে একটু রোমান্স করতে চাইলাম। পছন্দ করলে না।”
সমুদ্র কফি শপে বসে একটাই কফি অর্ডার দেয় । ওয়েটারের সামনেই মেন্যু কার্ড দেখে বলে, ” একটা ভ্যানিলা ল্যাটের দাম সাড়ে পাচ’শ। এতো কেন দাম?”
–” কোয়ালিটি ভালো স্যার। ”
–” কেন ?আপনাদের গরু কী অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে যে গরুর দুধের কোয়ালিটি বেশি ভালো?”
–” জি স্যার। অস্ট্রেলিয়ান গরুর দুধ। আমাদের খামারের গরু।”
–” একটা কফি-ই দেন।”
আয়নার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। লোকে ঠিক বলে, মানুষ যতো বড়লোক হয়, ততো কৃপন হয়৷ একটা কফিই দু’জন শেষ করে উঠে পরে৷
সমুদ্রের একবার ইচ্ছা করলো আয়নার হাত ধরে তাকে সর্যি বলে নিজের অতীতের সব বলে দিতে৷ কিন্তু কোনো এক দ্বিধায় সেটা পারেনা।
আয়না বাসায় আসতেই একটা দুঃসংবাদ শুনলো। তার দাদাভাই নাকি হুট করে আরোও অসুস্থ হয়ে গেছে। কাশছে খুব। গায়ে জ্বর। সে ফ্রেশ হতে গিয়ে থেমে দাদীকে জিজ্ঞেস করলো, ” মেডিসিন নিয়েছে?”
–” হ্যাঁ, একটু আগেই খাওয়ায় দিলাম।”
দু’ঘন্টা হওয়ার পরও অবস্থার আরোও অবনতি হয়। দাদাভাই কাশতে কাশতে শ্বাস নিতে পারছে না এমন অবস্থা। কাশতে কাশতে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল একবার৷ বাসায় কোনো পুরুষ ও নেই। আয়না, আলিয়া দুজনেই একপ্রকার কেঁদে ফেলে। আয়না ওর দাদা-দাদী কে খুব ভালোবাসে। ওনাদের কিছু হলে সহ্য হয় না।
আয়না বলে উঠে, ” দাদা হাসপাতালে চলো। ”
–” না না বুবু। ঠিক হয়ে যাবে। হাসপাতালে যাবো কেন? তোমার আব্বু নাই বাসায়। ড্রাইভার ও তো নাই। ”
–” এভাবে থাকলে সারারাত কষ্ট পাবে। তার চেয়ে বরং আমি নিয়ে যাই।”
দাদাভাইয়ের এক কথা সে হাসপাতালে যাবে না। আয়না বাবাকে ফোন দিয়ে জানালো। তারা ভীষণ চিন্তায় পড়ে। বাসাতেই ফার্মেসির লোক ডেকে নেবুলাইজার দেওয়ালো। তাও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। রাত হয়ে গেছে। কীভাবে কি করবে বুঝতে পারছে না। উবার কল দিচ্ছে। উবারও আসে না। দাদাভাইও যাবেন না বলে দিয়েছে। বাসায় কোনো পুরুষ নাই। সে এভাবে দুটো মেয়ে নিয়ে রাত বারোটার পর বের হবেন না। আয়না কান্নাকাটি করে অনেক অনুরোধ করে কিন্তু সেকালে চিন্তা-ভাবনার তোফাজ্জল সাহেব এতোরাতে বের হতে রাজী হন নি।
এমন সময় সমুদ্রের কল আসে। আয়না রিসিভ করতেই ও বলে উঠে, ” আমি তোমার বাসার গলির সামনে। বাসায় আসতে চার মিনিট ও লাগবে না। এসে দেখছি কী অবস্থা। জরুরি মনে হলে হসপিটালে শিফট করবো। টেনশন নিও না৷ ”
–” আপনি এসে কি দেখবেন আর কে বললো আপনাকে দাদাভাইয়ের কথা?”
–” বাবা ফোন দিয়ে জানালো। ”
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ২০
এই প্রথম সমুদ্র ফাহাদ সাহেবকে আংকেল না বলে বাবা বলে সম্মোধন করে। আয়না বুঝি তা খেয়াল করলো না৷
আয়নার একটু হলেও স্বস্তিবোধ হয়। উনি আসছেন তবে! বাবা জানিয়েছে ওনাকে৷ আয়নাদের বিপদে রাত বারোটার পরও উনি ছু’টে আসছেন!