ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩৪

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩৪
Arishan Nur

সমস্ত ডমেস্টিক ভা য়োলেন্সের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে সমুদ্র অভাবনীয় কাজ করে। এতে আয়না ও ইউশা দু’জনেই অদ্ভুত চোখে তাকায় ওর দিকে।কিন্তু বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই তার। তার মতে, আয়নাও ভায়োলেন্স ক্রিয়েট করেছে। ওর কি দরকার ছিলো পাকনামি করে ইউশা ডেকে আনার। লজিক-যুক্তি কিছুই রাগের বশে সমুদ্রের পোষ মানলো না।
সে কাটকাট গলায় সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বলে, ” বাহ! আয়না, তুমি দেখি অতিমাত্রায় মহান। এতো জনদরদী যে স্বামীর ভাগ অন্যকে বুঝিয়ে দিতে চাইছো?”
কথাগুলো শ্রবণ মাত্র আয়নার চোখ বেয়ে পানি পরে। সমুদ্র ভ্রুক্ষেপ না বলে, ” এতো ছিঁচকাঁদুনে স্বভাবের হয়েও ভালোই সাহস দেখাচ্ছো!”

আয়নার সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে। মনে-মস্তিষ্কে অনেক কথা সাজিয়ে, নিজেকে সারারাত ধরে বুঝিয়ে এই সিন্ধান্তে উপনীত হয়েছে সে। সমুদ্রের সুখের জন্য সে এই ভয়াবহ পদক্ষেপ নিতেও রাজী হয়ে গেছে কেবল ওর চোখের পানি দেখে। ওনার চোখের পানি আয়নাকে এতো পরিমাণ পীড়া দিচ্ছিলো যা একত্রিত করলে একটা নদী হয়ে যাবে৷ কারো উপস্থিতি যদি কাউকে কাঁদায়, তবে দূরে সরে যাওয়াই ভালো।
–” কী হলো? আন্সার মি, আয়না? এখানে এসব কী হচ্ছে? নাটক চলছে এখানে? এই মেয়ে তোমার সাথে কি করছে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সমুদ্র যে প্রচণ্ড রেগে আছে তা ওর ব্যবহার আর চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে যেটা ওর অতীত ও বর্তমান দু’জনই টের পাচ্ছে। ওর রাগের সামনে দুজনেই ঘাবড়ে কাচুমাচু হয়ে পড়ে৷ আয়না প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করে। থা প্পড় খাওয়ার পর সে চোখ আঁধার দেখছে। জীবনে প্রথম কেউ তার গায়ে হাত তুললো তাও কে সে? যাকে ভালোবেসে, সুখ ত্যাগ করে সে দেউলিয়া হতে চলেছে!
সমুদ্র উত্তরের আশায় না থেকে ইউশার দিকে তাকিয়ে বলে, ” তোমার এখানে কাজ কী? কেন এসেছো?”
ইউশা কিছুটা তেজি আওয়াজে বলে, ” আমার কোনো কাজ নাই। তোমার ওয়াইফেরই কাজ ছিলো। এক প্রকার অনুরোধ করে এখানে আনিয়েছে আমাকে। সমুদ্র আমি তোমাকে আগেও একবার বলেছি, আরেকবার ভাবো আমাদের নিয়ে।”

–” শাট আপ! ভাবার আর আছে কী ইউশা? সব ঘাটের জল খেয়ে পুরাতন ঘাটে ফিরতে লজ্জা লাগে নি? অস্টিনের সঙ্গে থেকেও তৃপ্তি মিললো না? আবার কোন মুখ নিয়ে আমার কাছে ব্যাক করবে তুমি?”
ওর চোখ-মুখ শক্ত হয় লজ্জায় অপমানে চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে বলে, ” আয়নার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক ভালো না। তোমার ওর সাথে সংসার করতে কষ্ট হচ্ছে কজ ইউ লাভ মি, সমু।”
সমুদ্র কথাগুলো শোনামাত্র বিকট গমগমে আওয়াজে চিল্লিয়ে উঠে বলে, ” আমি জাস্ট হেইট ইউ! এইকথা গুলো চিট করার দিনই বলা দরকার ছিলো। ইউশা, আমি আর জীবনেও তোমার চেহারা দেখতে চাই না৷”
ইউশা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ” তোমার ওয়াইফ তো পারলে হাতে-পায়ে ধরে আমাকে তোমার লাইফে আনার ট্রাই করছে। অথচ আমার উপর ক্ষেপছো তুমি !”

সমুদ্র এতোক্ষণে আয়নার দিকে মনোযোগী হয়। ইউশার উপস্থিতিও তাকে আর ভাবায় না। কিন্তু ততোক্ষণে আয়না ক্যাফে ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। সে হতাশার নিশ্বাস ফেলে, নিজেকে সামলায়৷
কি থেকে কি হচ্ছে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কাল অব্দি যেখানে সব ঠিক ছিলো আজ আয়না এতো অবুঝের মতো ব্যবহার কেন করছে? সে ইউশার সঙ্গে কথা বাড়ালো না, আসলে সময় নেই হাতে। আয়নাকে অনুসরণ করে।

আয়না তখন মাঝ রাস্তায়। এলোমেলো পায়ে হাঁটছে। দুপুরের সূর্য মাথায় খাড়াভাবে কিরণ ছড়াচ্ছে। শীতের শেষে সূর্যের আরাম রোদ গায়ে লাগছে। সে পা ফেলতে পারছে না। মাথা ভারী লাগছে। চারদিক থেকে হর্ণের শব্দে বুদ্ধি লোপ পায়। হাঁটা থামিয়ে দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো বেজায়। চারপাশে এতো আওয়াজ কিছুই কানে ঢুকছে না। কেবল কানে ঝনঝন করে বাজছে সমু নামটা! ওহ তার মানে, ইউশা তবে সমুদ্রকে সমু বলে ডাকতো। এতো আদুরে নামে ডাকা সম্পর্কে নিশ্চয়ই বোঝাপড়াও বেশ! এজন্য আয়নার মুখে ওই নাম শুনে বিয়ের পর প্রথম কাছে আসা-আসিতে এতো রিয়্যাক্ট করেছিল? করবেই বা না কেন! নিজের ভালোবাসার মানুষের দেওয়া নামে অন্য কেউ ডাকলে রাগ তো উঠবেই। সে তো সমুদ্রের জীবনে অন্যকেউ-ই! আপনজন হলো আর কই! তার চোখের সামনেই তো সবটা ঘটছিলো, সে আগে কেন বুঝে নি? ওই যে একবার স্যার বলেছি আয়ু তুমি একটা গাধা, স্যার একদম ঠিক বলতেন। সে আসলেই গাধা, নাহলে, কেন সমুদ্রের দায়িত্ব হয়ে এতোদিন অবহেলা সহ্য করলো।

আচমকা মনে হলো আশেপাশে থেকে অনেকেই একাধারে চিল্লাচ্ছে। কার উপর চিল্লাচ্ছে ওটা মাথায় ঢোকে না তার, চোখ মেলে তাকালোও না। তবে কেউ একজন খুব জোরে তার বাহু পাকড়াও করে টেনে মাঝ রাস্তা থেকে ফুটপাতে এনে দাঁড় করালো। আয়না চোখ মেলে তাকাতেই আক্রোশ ও ভয়ার্ত নীলচে চোখে দু’টির সম্মুখীন হলো।
সমুদ্র চেচিয়ে চেচিয়ে বলছে, ” পাগল হয়ে গেছো নাকি তুমি? মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছো? এক্ষুনি গাড়ি এসে মেরে দিতে ধরছিলো। আমি ঠিক সময় না আসলে কে তোমাকে রিস্ক নিয়ে বাঁচাতো? এতোগুলা মানুষ যে চিৎকার দিয়ে বলছে সরেন, কানে যায় না সেগুলো?”

–” ” গাড়ি এসে ধাক্কা দিলেই ভালো ছিলো।”
–” আরেকটা থা প্পড় খাওয়ার শখ জেগেছে?”
আয়না তোয়াক্কা করে না। ওর বাহু থেকে সমুদ্রর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, ” মায়ের কাছে চলে গেলেই ভালো হবে। এ’দুনিয়ায় মা ছাড়া আর কেউ আপন না। তা ভালো মতোই বুঝিয়ে দিয়েছেন।”
সমুদ্র এবারে নরম হয়। সব রাগ কই যেনো পালানো। সে আস্তে ওর দু’গাল আলতো করে হাত রেখে বলে,
” তুমি আমাকে ভুল বুঝছো! পুরাটাই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং।”
কিন্তু আয়না শুনতে পায় না। তার আগেই চোখ-মুখ বাকিয়ে বমি করে দেয়। সমুদ্র দ্রুত ওকে ধরে, ওর মাথায় হাত বুলায়৷ পাশের দোকানের লোকটা এক বোতল পানি এনে দেয়৷ ও সামান্য সুস্থ বোধ করতেই সমুদ্র বলে, ” বাসায় চলো। প্লিজ, তোমার রেস্ট দরকার। ”

–” উহু, আমি আপনার সঙ্গে ফিরছি না।”
–” হুয়াট!”
–” আমার এবারে সত্যি স্পেস দরকার, সমুদ্র। আপনি দায়িত্ব নিতে গিয়ে হাপিয়ে গেছেন, আপনার হাপিয়ে উঠা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিলো। আপনার দায়িত্ব হয়ে থাকতে চাই না আর। ভালোবাসতে পারলে, তবেই ফিরবো।”
–” তুমি আমার স্ত্রী, আয়না।”
–” স্ত্রী হয়েও লাভ কী হলো? সে-ই মনে অন্যকারো বসবাস!”

–” ওহ গড! প্লিজ ফর গড সেক, চুপ করো। আমাকে না জানিয়ে, সবটা না শুনে কেন এভাবে ওলওয়েজ পাকনামি করো?” ইউশাকে ডেকে এনে আমাকে ওর সামনে অসম্মানিত করার আগে, একবার অন্তত কথা বলবে তো আমার সাথে? আমাদের অতীত সম্পর্কে জানোই বা কতটুকু?”
–” না কিছু জানতে চাই আর না আপনাদের মধ্যে দেয়াল হতে চাই। ছেড়ে দিয়েছি তো আপনার উপর সব অধিকার। আপনি মুক্ত।”
–“মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব আলোচনা না করে চলো বাসায় চল।”
–” আমি আমার বাসায় যেতে চাই।”

সমুদ্র অবাক হয়। তিন মাসে সে অনেকবার আয়নাকে ও’বাসায় যেতে বলেছে কিন্তু ও ইচ্ছুক নয়। জোড়াজুড়ি করলেও যায়নি। আজ নিজ থেকে যেচে পড়ে যেতে চাচ্ছে। আসলে সে নিজেই আয়নার আচরণে খুব সন্দিহান! কাল রাতের ঘটনার পর আয়নার আচার-আচরণে অস্পষ্টতা ফুটে উঠছে৷ তার ভাবনার মধ্যেই আয়না একটা রিকশা নিয়ে নেয়। সমুদ্র একদণ্ড ভাবে কী করবে।
তারপর কী যে হলো! এক দৌঁড়ে চলন্ত রিকশায় উঠে বসে। হাঁটুতে লাগে, মনে হয় ছিঁলে গেছে। রিকশাওয়ালা অবাক হল। সমুদ্র তোয়াক্কা করে না ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে আয়নার পানে।
তারপর আয়নাকে সুধালো, ” একবারও জিজ্ঞেস করেছো আমি মুক্তি চাই কীনা? সি ইজ মাই পাস্ট।”

–” পাস্ট হলে ওর ছবি আপনার ফোনে কেনো?”
–” আমার ফোন চেক করলে কবে? ”
–” যা জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দিলেন না যে?”
রিকশা ভাঙ্গা রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বেশ খানিকটা ঝাঁকি খায়। দ্রুত সমুদ্র ওকে ধরে যেন অসুস্থ শরীরে পরে না যায় । এরপর বলে, ” ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, সিমে সব জায়গায় ওর স্থান ব্লকলিস্টে। ছবিও তো ডিলিট করেছি তাও কীভাবে দেখলে জানি না। ”
আয়না বিষাদময় হাসি হেসে বলে, ” নাম্বার ব্লকলিস্টে রেখে হচ্ছেই বা কী? মন থেকে তো ব্লক করতে পারেন নি।”

সমুদ্র পালটা কঠিন প্রশ্ন রোদের উত্তাপে জ্বলে যায়। সত্যি বলছে আয়না। ওর আসলেই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে হাপিয়ে গেছে। ওর শান্তি দরকার। ভালোবাসা দরকার। পৃথিবীর কোন কোণে গেলে ভালোবাসা আর শান্তি মিলবে? আদৌ সংসার জীবনে শান্তি মিলে? আয়নাকে এই মুহূর্তে কিছু বলেও লাভ নেই। ও নিজের মতো উত্তর খুঁজে নিচ্ছে। সমুদ্রের দেওয়া কোনো উত্তর-ই এইমুহূর্তে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

রিকশা এসে থামে, আয়নার মিরপুরের বাসার সামনে। ছয়’তলা বিল্ডিংয়ের সামনে আসতেই সমুদ্র ভাড়া দেওয়ার জন্য ওয়ালেট বের করে। ওয়ালেটের ট্রান্সপারেন্ট স্থানে তার আর আয়নার ছবি প্রিন্ট করে রাখা। কোনোদিন ওয়ালেট চেক করলো না ও, তবে ঠিকই ফোন ঘেটে কুৎসিত অতীত টেনে বের করলো। তারও দোষ আছে। আয়নার তার সমন্ধে জানার সব অধিকার আছে। কিন্তু তবুও গোপক করেছে নিজের অতীত!
রিকশাওয়ালা মামার ডাকে ধ্যান ভেঙ্গে যায় তার৷ ওনি বলে, ” দুইজন ভাড়া দিচ্ছেন কেন?”
সমুদ্র দেখলো আয়না ভাড়া দিয়েছে, অথচ সে আগে টাকা বের করলো। সে বলে, ” আয়না, টাকা ব্যাগে রাখো। আমি দিচ্ছি না।”

–” আপনার দয়া আমার লাগবে না।”
রিকশাওয়ালা মামাকে টাকা দিয়ে ও গেইট খুলে ভেতরে ঢুকে। রিকশাওয়ালা মামা বলে, ” ভাইজান, ভাবীর সঙ্গে মনে হয় বিশাল কাইজা বাজছে।”
সমুদ্র টেনশন ভরা মুখে বলে, ” বিশাল তো অনেক ছোট মান, আমার মনে হয়, মহাকাশ সম কাইজা রে ভাই!”

মামা বলে, ” মাইয়া মানুষের জিদ বেশি। আমার বউটাও খালি কাইজা করে বাপের বাড়ি যাইতো। হে একবার আর আইবো-ই না বাপের বাড়ি থিকা।”
সমুদ্র উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” তারপর কি হলো?”
–” পরে আর হইবো? তিন বাচ্চার মা হইয়া এখনো রাগ করে যায় গা।”
সমুদ্র আয়নার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সি গারেট ধরায়। গতকালকের হ্যাংওভার কাটতে না কাটতেই ছুটে’ কফিশপে গিয়েছিলো এখন মাথাব্যথায় মনে হচ্ছে মাথা ছিঁড়ে যাবে।

শায়লা চৌধুরী আজ অফিসে যান নি। বাসায় ছিলেন। দুপুরে খাওয়া এখনো হয়নি তার। আজ বাসায় কেউ নেই। আয়নার দাদা-দাদী ওনাদের বড় ছেলের বাসায় গেছেন। আলিয়া ভার্সিটিতে আর ফাহাদ অফিসে গেছে৷ একাই ছিলো বাসায়। বাসায় থাকলে ঘর গুছাতে তার ভালো লাগে। তিনমাসে এ’বাসার প্রতিটা আনাচে-কানাচেতে সে যত্ন করে সাজিয়েছেন৷ অনেক কিছু পরিবর্তন করেছেন। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বাসাটা।

সে ভাবেও নি জীবনের কোনো এক অধ্যায়ে এমন ভরা সংসার তার কপালে জুটবে। অনেক সুখেই আছে সে। আলিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা আগাইনি। ও সারাদিন ব্যস্ত থাকে। রাতে ফিরে সবাই একসঙ্গে খায়। তবে এ’বাসার প্রতিটা সদস্যের প্রাণ হলো আয়না। ফাহাদ তো সবসময়ই আয়নাকে নিয়ে মন খারাপ করে থাকে। প্রায় জিজ্ঞেস করে, শায়লা, আমি কী খুব খারাপ বাবা নাকি? শায়লার খারাপ লাগে বেশ। এ’বাসার সবার জন্য তার একদম খাঁটি একটা মায়া জন্মেছে। এমনকি তার আয়ুকেও এখন ভালো লাগে৷ ওর অনুপস্থিতিতে ওর জন্য মায়া কাজ করে৷ মন চায় নিজে কল দিয়ে ও এবাসায় নিয়ে আসতে।

এমন সময় কলিং বেল বাজে। সে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে দরজা খুলতেই হতভম্ব ও হতবুদ্ধি হয়ে যায়। চোখের সামনে কাকে দেখলো সে? আয়ু! আয়ু দাঁড়িয়ে আছে।
আয়না ভেতরে প্রবেশ করে। ওকে কেমন টায়ার্ড লাগছে। শায়লা চৌধুরী জিজ্ঞেস করলো, ” কেমন আছো, আয়ু মামনি?
আয়না জবাব দেয় না। শায়লা চৌধুরী বলে, ” কতোদিন পর এলে! এ’বাসার প্রতি আর মায়া কাজ করে না তোমার? বাবার কথা মনে পড়ে না?”
আয়না নিজের বাসাটাকে একবার দেখে নেয়। আসলেই তো! এই বাসাটা তার। বাসার প্রতি প্রান্ত আয়না-আলিয়া তাদের দু’বোনের স্মৃতি বাহক।

শায়লা বলে উঠে, ” বাবা হচ্ছে বটগাছ, বুঝেছো? বাবার ছায়া যার আছে সে সবচেয়ে শক্তিশালী। আমার ছিলো না সে’ছায়া তাই আমি বুঝি। আব্বুর সঙ্গে রাগ করে না। তোমার বাবা এসবের দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হচ্ছে।”
আয়না বলে, ” আমি এখন ঘুমাবো। উনি আসলে ওনাকে বাসায় ঢুকতে দিবেন না।”
শায়লা বলে, ” ঝগড়া হয়েছে নাকি তোমাদের? ”
আয়না ওর রুমে চলে যায়। শায়লা চৌধুরী দ্রুত ফাহাদ সাহেবকে কল দিয়ে বলে, ” তোমার বড় মেয়ে এসেছে। আজ অফিস ছুটি নিয়ে বাসায় আসো। আমি ওর পছন্দের সব ডিশ রান্না করছি। আর সমুদ্রকে বলো আসতে।”

ফাহাদ সাহেব সত্যি চারটার আগেই এলেন বাড়িতে। শায়লার হাসি মুখ দেখে তার মন ভালো হয়ে গেলো। সে মেয়ের রুমের সামনে গিয়ে থেমে যায়। শায়লা চৌধুরী বলে, ” গিয়ে দেখো। কি করছে ও!”
ফাহাদ সাহেব দরজা অল্প ফাঁক করে দেখেন মেয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। উনি আর ডিস্টার্ব করলেন না৷ বাসায় শায়লা আয়নার পছন্দের চিকেন রোস্ট করলেন। সমুদ্রের পছন্দের খাসির রেজালা৷ বিকেলের দিকে আয়নার ঘুম ভাঙ্গে। একটু পর শায়লা চৌধুরী এক কাপ চা এনে দিলেন। আর দরজা খুলে দিতেই মিলি লেজ গুটিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আয়নার মন সামান্য ভালো হলো। নিজের কম্ফোর্ট জোনে এসে একটু হলে শান্তি পায়। মিলি আগের চেয়ে মোটা আর একটু বড় হয়ে গেছে৷ শায়লা চৌধুরী তার মাথায় হাত দিয়ে বলে, ” আয়ু৷ তুমি এসেছো দেখে আমি আজ অনেক বেশি খুশি।”
আজ শায়লার চোখে সে কোনো প্রকার ছলনা খুজে পায় না। খুব বিশুদ্ধ ছিলো হাসিটা। সেজন্য সেও হাল্কা হাসি উপহার দিলো।

সমুদ্র সারাদিন উদাসীন হয়ে বাইরে ই ছিলো। অফিয়া অব্দি যায় নি। বাবা রাতে দাওয়াত দিয়েছেন। বিকেল্বে দিকে সে তার প্রোফেসারের থেকে একটা ইমেইল পেলো। তার মেডিকেল কলেজে একটা সেমিনার হবে। তাকে ইনভাইটেশন দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার। অনেক দেশের বড় ডাক্তাররা এখানে জয়েন করবে। ওতোবড় সেমিনারে তাকে তার মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে রিপ্রেজেন্টেশন করার জন্য মেইল দিয়েছে। তবে খুব দ্রুত সেমিনার শুরু হবে। আগামী সপ্তাহে। প্রোফেফার বোধহয় জানেন না, সমুদ্র এখন বাংলাদেশে। তবে টিকিট পাইলে অবশ্যই যাবে। এতোবড় সু্যোগ হাত ছাড়া করা যাবে না৷

সন্ধ্যায় আয়নার বাসায় গেলো সে। আয়নার দাদা-দাদী ও এসেছেন। সবাইকে খুশির সংবাদ দিলো সে। তবে মাদার তেরেসাকে এখনো বলার সুযোগ পায়নি। আয়না একবারও রুম ছেড়ে বের হয়নি। খাওয়ার সময় সে বলে উঠে তার রুচি নেই খাওয়ার। তাও শায়লা চৌধুরী রোস্ট আর পোলাও তুলে দিলো একপ্রকার জোর করে।খাওয়ার সময়েই ওদের দু’জনের ঝগড়াঝাটির পর মুখোমুখি হলো। বাসার সবাই বুঝতে পারছে কোনো গণ্ডগোল তো হয়েছেই। সমুদ্র মন দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করছে।

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩৩

আয়না অনিচ্ছায় এক লোকমা খেতেই কেমন গা গুলিয়ে আসে, সে দ্রুত বাথরুমে চলে যায়।ডাইনিং টেবিলে বসা সবাই হা হয়ে যায়।
বাথরুমে পৌঁছেই আয়না হড়বড় করে বমি করে ফেলে। বেসিন ধরে দাঁড়িয়ে পরে৷ মনে হচ্ছে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাবে৷

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩৫