ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪
Arishan Nur
আয়না নিজের রুমে বসে ফোনের স্ক্রিন দেখছিল। বেশ ক’টা মেইল এসেছে। সাদবিন সমুদ্র ২৪ ইমেইল এড্রেস থেকে। আয়না একবারও সেগুলো খুলে দেখলো না। নিশ্চয়ই অফিসের কাজ রিলেটেড কিছু হবে। তার একদম কাজ করার ইচ্ছে নেই। এনগেজডমেন্ট হওয়ার দুদিন কেটে গেছে। দুইদিনের মধ্যে তার অফিস যেতে হয়নি। এজন্য সমুদ্র বারবার তাকে ইমেইল দিয়ে গেছে, সে ইমেইল এর রিপ্লেও দেয় নি৷ কল করেছিল, সে ধরেনি।
এমন সময় তার বাবা এসে দরজা নক করলো। সে নড়েচড়ে উঠলো। তার বাবা এসে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,” ব্যস্ত নাকি মা?”
–” না, না বাবা, তুমি ভেতরে এসো।”
ফাহাদ সাহেব ভেতরে এসে বললো, ” আমার আয়ু মার কি হলো? এতো চুপচাপ কেন আজ? মাথাব্যথা করছে নাকি?”
আয়না অসহায়বোধ করলো। আয়না সামান্য চুপচাপ থাকলেই বাবা এসে জিজ্ঞাসা করে মাথাব্যথা করছে কিনা! কিন্তু বাবাকে কিভাবে বুঝাবে তার ক্ষণে ক্ষণে এতো মুড সুয়িং হয়! মনের মধ্যে কতো কিছু ঘুরপাক খায় সেগুলো বুঝে না বাবা। সে বলে উঠে, ” না, বাবা এমনি রুমে বসে আছি। তুমি এসে বসো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফাহাদ সাহেব এসে বসলেন পাশে তারপর বলে উঠে, ” তোমার আম্মু থাকলে নিশ্চয়ই এখন বাসার পরিবেশ অন্যরকম হতো। আমি তো এতোকিছু বুঝি না। তোমার যা যা লাগবে সব কিনে নিয়ে এসো।”
আয়না সুন্দর করে হেসে বলে, ” আমার কিছু লাগবে না, বাবা।”
ফাহাদ সাহেব বললেন, ” কালকে তোমার দাদা-দাদি আসছেন।”
ফাহাদ সাহেব লক্ষ্য করলেন তার মেয়ে সারাদিন পর এখন একটু হাসলো। সে বুঝে উঠতে পারছে না, তার আদরের ছোট্ট মেয়েটা কি বিয়েতে খুশি না! তাকে তো একবারও কিছু বলছে না। সে ছোট করে দম ফেললো।
আয়না প্রশ্ন করলো, ” বাবা? তুমি ইশরাক আংকেলকে কিভাবে চেনো?”
ফাহাদ সাহেব বলে উঠে, ” আমরা ভার্সিটির ব্যাচমেট৷ হলে পাশাপাশি রুমে থাকতাম। তখন থেকেই খুব ভালো বন্ধুত্ব। তবে, আমি চিটাগং ট্রান্সফার হওয়ার পর যোগাযোগ কমে যায়৷ কন্ট্রাক্ট নাম্বার ও হারিয়ে ফেলি ”
–” তারপর আবার কিভাবে দেখা হলো?
ফাহাদ সাহেব এটার উত্তর দিলেন না৷ পাশ কাটিয়ে, এড়িয়ে গিয়ে বললেন, ” তোমার ইশরাক আংকেল ই তোমাকে ওনাদের অফিসে ইন্টার্ণশীপ করতে রিকুয়েষ্ট করেছিল। নাহলে আমি তোমাকে পড়াশোনার পাশাপাশি এসব অফিস করতে দিতাম না। ইশরাক আর ভাবী দুইজনের খুব ভালো মনের মানুষ। ”
উনি আরোও কিছু বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই ভীষণ জোড়ে আওয়াজ তুলে আয়নার ফোন বেযে উঠলো। স্ক্রিনে সমুদ্রের নাম দেখতে পেয়ে ফাহাদ সাহেব বলে উঠে, ” সমুদ্র আমাকেও কল দিয়েছিলো, তোমাকে নাকি ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু জরুরি কথা আছে ওর। এখন ফোন ধরো। আমি আসি।”
বাবা যাওয়ার আগে দরজা লাগিয়ে দিয়ে গেলো। আয়নার তো বাবার সামনে এমন পরিস্থিতিতে পরায় ভীষণ লজ্জা লাগলো। বাবা কি ভাবছেন? হবু জামাই ফোন দিয়ে কখনো শ্বশুড়কে অভিযোগ করে যে তার মেয়ে ফোন ধরছে না? মাত্র তিন বারই তো কল দিয়েছিলেন। সে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সমুদ্র বলে উঠে, ” মিস আয়না?”
মিস আয়না বলে ডাকবে এটা ভাবেনি সে। ওইদিন তো আয়না বলেই ডাকছিলো। আজ আবার কি হলো। সে বলে উঠে, ” জ্বি? ”
–” ফোন ধরছিলেন না কেন?”
-” ব্যস্ততা ছিলো।”
–” এ সময়টায় ব্যস্ততা থাকবেই। তাই বলে সব কাজ বাদ দিয়ে ব্যস্ততা নিয়ে পড়ে থাকবেন? ”
আয়না ভীষণ রকম বিরক্ত হলো। মনে মনে বলে, ফোন ধরেছি কি বকবকানি শোনার জন্য? এরপর আর একবারও যদি তোর ফোন ধরছি আমি আমার নাম বদলে দিব৷ পরক্ষণেই খেয়াল হলো হবু স্বামীকে তুই বলে ডাকা বিরাট অপরাধ!
সমুদ্র বলে, ” ইমেইল চেক দিয়েছেন?”
–” না।”
–” ব্যস্ততা ছিল দেখবেন কিভাবে? যাইহোক যেজন্য কল দিচ্ছিলাম, কালকে প্লিজ অফিস আসবেন। সকাল থেকেই অফিসে উপস্থিত থাকবেন। নয়টা টু পাঁচটা অফিস করতে হবে কাল আপনাকে।”
–” কিন্তু আমি তো ইন্টার্ণ জুনিয়র ট্রেইনি। পার্ট টাইমে আছি।”
— ” কিন্তু কালকের দিনটায় ফুলটাইম লাগবে আপনাকে আমার।”
–” কিহ!”
–” আই মিন, কাল একটা জরুরি মিটিং আছে। সেখানে আপনার উপস্থিতি কাম্য।”
— ” আমাকেই কেন নিচ্ছেন? অন্য কাউকে নেন প্লিজ।”
–” না, আপনাকেই নেওয়া হবে। তাছাড়া আজ অফিসে সব জুনিয়র ট্রেইনি অফিসদেরকে তিনটা টীমে ভাগ করেছি। আপনাকে আমার টীমে রেখেছি কারণ আপনি কাজে প্রচুর ভুল করেন৷ অন্যদের এতো ঠ্যাকা পড়েনি যে আপনাকে এক্সট্রা টাইম দিবে।”
–” আপনার তাহলে কী জন্য ঠেকা পড়লো?”
–” সব ঠেকা তো আমারই।”
আয়না বুঝলো না, লোকটা কি মিন করছে? আয়না তার জন্য তাহলে ঠেকা! তাকে নিয়ে ওই লোক বিশাল বিপদে পড়ে গেছে এইটা বুঝাতে চেষ্টা চালাচ্ছে?
সমুদ্র আবারোও বলে উঠে, ” নেক্সট থেকে কল দিলে রিসিভ করবেন। বাবাকে যেন আর কল দিতে হয় না।”
খট করে কল কাটার আওয়াজে আয়না সামান্য নড়েচড়ে উঠলো।
সকাল সাড়ে দশটার দিকে অফিস পৌঁছে আয়না। আসার কথা ছিলো নয়টায় কিন্তু একটু দেরি করে ফেলেছে। সে এসে ডেস্কে বসে কম্পিউটার অনও করেনি তার আগেই টুম্পা আপু এসে হাজির। টুম্পা হচ্ছে সমুদ্রের পিএ। আয়নার ধারণা , টুম্পা আপু হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ। আয়নাকে সে বেশ ক’বার সমুদ্রের ঝারি খাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আদরও করে একটু বেশি। আয়না ঝারি খেলে টুম্পাও কষ্ট পায়।
টুম্পা তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে, ” স্যার ডাকছেন তোমায়।”
–” উনি আমার খোঁজ নিচ্ছেন?”
টুম্পা আপু বলেন, ” সকাল নয়টা থেকে এ পর্যন্ত তিনবার তোমার খোঁজ নিচ্ছিলো। তোমার নাকি নয়টায় অফিস থাকার কথা।”
আয়না এবারে খানিক উদ্বিগ্ন হলো। এহেরে, এইবার বদমেজাজি লোকটা নিশ্চয়ই তাকে কাঁচা চাবিয়ে খেয়ে ফেলবে! উফ রোজ রোজ ঝারি শুনতে ভালো লাগে না। চাকরি টা ছেড়ে দিতেই হবে।
সে ধীরগতিতে আগায় সমুদ্রের কেবিনের দিকে। সঙ্গে টুম্পাও ছিল৷ কিন্তু কেবিনে ঢোকার আগে টুম্পা বললো, ” স্যার বলেছিল, তোমাকে ভেতরে একা ই পাঠাতে। তুমি যাও। ওনার কথা শুনো। তারপর প্রোপারলি কাজ কর। আমি তো আছিই সাহায্যে করার জন্য। অল দ্যা বেস্ট।”
আয়না নক করতেই ওপাশ থেকে বললো,” হ্যাঁ আসেন।”
আয়না ভেতরে ঢুকেই অদ্ভুত সুন্দর একটা ঘ্রাণ পায়। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
সমুদ্র একবার তাকে দেখে নিয়ে বললো, ” আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, কালকে রাতে আপনার বিয়ে হয়েছে। এইজন্য আজ সকালে যখন ইচ্ছা উঠবেন, সকালে গোসল করবেন, কোনো টাইম লিমিট নেই। যখনই মর্জি।”
আয়না সঙ্গে সঙ্গে তার বাম কাঁধ বেয়ে ঝুলে থাকা ভেজা চুল গুলো সরিয়ে কোমড়ে এলিয়ে দেয়৷ লোকটা এতোকিছু দেখে কখন? আজকেও এসব কথা বলতে হবে? ঠে-স মে–রে কথা বলার স্বভাব কি ওনার বদলাবে না?
–” অফিসটাকে মনে হচ্ছে নিজের শ্বশুড়বাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন? কী ঠিক বললাম?”
আয়না কোনো ভাবনায় স্থির ছিল তা খেয়াল নেই তার, তবে সমুদ্রের কথা ঠিকঠাক শুনেনি জন্য ভুলে বলে উঠে, ” হু।”
সমুদ্র মনে হয় সামান্য হাসলো এরপরে বললো, ” তাই? তাহলে মিস আয়না, আপনি আমার অফিসটাকে অফিশিয়ালি নিজের শ্বশুড়বাড়ি হিসেবে মেনে নিয়েছেন?”
আয়না এবারে মনোযোগ দিয়ে শুনেছে কথা তাই দ্রুত তড়িঘড়ি করে জবাবে বলে, ” না, না তা কেন ভাববো? ওইসময় মনের ভুলে বলে ফেলেছিলাম। স্যরি ”
–” ভাবলেও অসুবিধা নেই। যাইহোক আপনাকে একটা ফাইল দিয়েছি, সেটা ভালোমতো স্টাডি করবেন। একটার দিকে আপনাকে নিয়ে মিটিং এটেন্ড করব। ডেস্কেই থাকবেন। অন্যকোথাও যেন খুঁজতে নাহয় আপনাকে।”
–” আচ্ছা।”
আয়না ফেরত যেতে ধরলে পুনরায় সমুদ্র তাকে ডেকে নিল।
ওইসময় টুম্পাও কেবিনে ঢুকে। সমুদ্র আয়নাকে ইঙ্গিত করে বলে, ” ফাইল ঠিকঠাক পড়ে নিবেন। নাহলে দেখা যাবে ক্লাইন্ট জিজ্ঞেস করলো, বলুন তো বাংলাদেশের জাতীয় মাছের নাম কী? আপনি উত্তর দিবেন টুনা ফিস। ”
টুম্পা এমন রসিকতায় না হেসে পারলো না। তবে সমুদ্রের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। আয়না বোধহয় রাগে প্রস্থান করলো৷
একটা বাজার আগেই সমুদ্র তার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়ায়। তখনো পনেরো মিনিট বাকি বিধায় আয়না হেড ডাউন দিয়ে ছিলো। সমুদ্র তার সামনে দাঁড়িয়ে আলতো হাতের কিঞ্চিৎ ছোঁয়া তার চুলে দিতেই আয়না ধড়ফড়িয়ে উঠে। মেয়েটার শরীরে বুঝি সেন্সর ডিটেক্টর আছে!
–” গুড নুন, মিস আয়না, ঘুমাচ্ছিলেন?”
–” না না। জাস্ট হেড ডাউন দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলাম। ফাইলের খুঁটিনাটি আমি সব পড়েছি। টুম্পা আপু বুঝিয়েও দিয়েছে৷ আপনি চাইলে ধরে আমাকে যাচাই-বাছাই করে নিতে পারেন?”
–” দরকার নেই। চলুন যাওয়া যাক তাহলে।”
আয়না তার পিছু পিছু এগিয়ে যায়। সে বুঝতে পারছে না, সমুদ্র যদি ডাক্তার হয়, তাহলে ডাক্তারি বাদ দিয়ে অফিসে এসে তাদের কেন এতো জ্বালায়? অবশ্য ওনার যে গোমড়া মুখ রুগী তাকে দেখলে আরোও অসুস্থ হয়ে পড়বে কিনা, সুস্থ হওয়ার বদলে!
পার্কিং লটে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র বুঝি ড্রাইভিং করবে, এজন্য ড্রাইভিং সীটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।। তবে আজ আয়না কোনো রিস্ক নিতে চায় না। সে দ্রুত পায়ে কদম ফেলে পিছনের সীটে গিয়ে বসলো। সমুদ্র বুঝি দু’দণ্ড দাঁড়ালো। এরপর ড্রাইভিং সীটে বসে পড়ে। গাড়ি যখন চলছিল তখন একটা হিন্দি গান বাজচ্ছিলো। বেশ রোমান্টিক গানটা। আয়নার হাসি পেল। ওনার প্লেলিস্ট এ এসব গানও থাকে?
সমুদ্রের বারবার ভিউ মিরর ঠিক করার ভঙ্গিমায় আয়নার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিল, সমুদ্র চুপিসারে তাকে দেখছে। অদ্ভুত আজব লোক তো! পারলে সারাদিন তাকে বকে, সবার সামনে মজা নেয় আর এখন একটু পরপর তাকাচ্ছে!
গাড়ি গুলশানের একটা ছিমছাম দামী রেস্তোরাঁয় এসে থামে। এমন টাইপ রেস্তোরায় দুপুরে অফিস মিটিং হয়। গাড়ি পার্ক করতেই আয়না নামবার তাড়া দেখালে সমুদ্র সুধালো, ” আগেই নামবে না। আমি দরজা খুলে দিচ্ছি। ওয়েট।”
সমুদ্র নেমে পড়লো। ওনার মুখে ওইদিনকার মতো ‘তুমি’ সম্বোধন শুনলো। আয়না এতে ঘাবড়ে যায়। অবশ্য উনি যখন ভরাট গলায় মিস আয়না আপনি এটা ভুল করেছেন, ওটা করেছেন বলে তখনও ঘাবড়ে যায়!
তার দিকের দরজা খুলে দিয়ে সমুদ্র বললো, ” আস্তে নামো।”
আয়না চটজলদি নামতে গিয়েই তার গায়ের সঙ্গে সামান্য ছুঁয়ে যায়। সেদিনের ওই পারফিউমের ঘ্রাণ আরোও যেন তীব্রভাবে নাকে এসে লাগে। সমুদ্র একটু সরতে চায় কিন্তু বাংলাদেশের পার্কিং লটের দুর্বস্থার জন্য বেশি সরতে পারে না। না পারতে একটু গা ঘেঁষেই দাঁড়ালো দুজনে। চোখাচোখি হতেই আয়না চোখ নামিয়ে নেয় তৎক্ষনাত।
একহাত দূরে আরেকটা গাড়ি পার্কিং করা। আয়নার নরম শরীরের ছোঁয়া বাহু থেকে কাঁধে এসে ছুঁ’তেই তার সর্বাঙ্গে একদম ভিন্ন অনুভূতি হয়। কেমন টাল-মাতাল লাগে!
দুইজন ভেতরে এসে বসতেই সমুদ্র মেন্যু কার্ডের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, ” লাঞ্চ অর্ডার দেই।”
–” ক্লাইন্টরা আসবেন না?”
–” আসবে। আরোও একঘন্টা পর।”
–” তাহলে আমরা এতো আগে আসলাম কেন?”
সমুদ্র কিছুটা দো’টানা অনুভব করে, এরপর সুধালো, ” আমার দেড়ঘন্টা দেরি করার ইচ্ছা ছিল না তাই একঘন্টা আগেই আসলাম।”
সে বলে উঠে, ” আমরা আগেভাগে খেয়ে নিলে ক্লাইন্টরা কি ভাববে? ”
–” কি ভাববে?”
–” ভাবতে পারে আমরা তাদেরকে রেখে খেয়ে নিয়েছি৷ গুরুত্ব দিচ্ছি না। কষ্ট পেতে পারে।”
সমুদ্র তার কথায় ভীষণ মজা পেল।
–“ক্লাইন্টরা ফয়দা ছাড়া কিছু ভাবে না।”
–” ও।”
–” তুমি মেন্যু দেখো৷ হাল্কা কিছু নেও ”
আয়না ভাববো একঘন্টা এই বদমেজাজি লোকটার সঙ্গে বসে থাকার চেয়ে কিছু খাওয়া ভালো৷ কিন্তু সে তো টাকার ব্যাগ আনেনি সঙ্গে।
সে বলে উঠে, ” আমি ভুলে টাকা আনি নি। ব্যাগটা ফেলে চলে এসেছি।”
–” কিহ?”
–” আ…. কিছু না।”
সমুদ্র একটু ঘাড় কাত করে, হাত কাঁধের দিকে নিয়ে মালিশ করতে করতে বলে, ” মেয়েদের সাথে স্বামী থাকলে তাদের টাকার ব্যাগের প্রয়োজন হয় না।”
ওনার মুখে এসব কথা শুনে আয়নার গাল দুটো রক্তিম আভা ফুটে৷ সে অন্যদিকে ঘুরে বসে।
সমুদ্র ওয়েটারকে ডাক দিলো অর্ডার নেওয়ার জন্য। আয়নার ইচ্ছা ক্লাইন্ট গেলে লাঞ্চ করবে তাই এখন হাল্কা কিছু অর্ডার দিবে৷
সমুদ্র বললো, ” কি খাবে তুমি? ”
–” একটা চকলেট মিল্কশেক।”
সমুদ্র ওয়েটারকে বলে, ” সাথে একটা ক্যাপাচুনা উইথ আউট সুগ্যার। ”
আয়না সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে, ” আমার মিল্ক শেকে এক্সট্রা স্যুগার এড করে দিবেন।”
সমুদ্র তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে, আস্তে করে বলে, ” আমার ডায়বেটিস হয়ে যাবে তো।”
প্রায় ঘন্টাখানেক পর ক্লাইন্টরা আসলো। দুইজন ফরেনার আর একজন বয়স্ক বাঙ্গালী মহিলা। মাত্র তিনজন এসেছেন । ওনাদের ব্যবহার দেখেই আয়নার মন ভালো হয়ে গেলো। কি সুন্দর হেসে-হেসে কথা বললো। আধাঘন্টা খুব বেসিক ডিসকাশন চলমান থাকলো। তারপর একটা চুক্তিপত্রে সমুদ্র সিংনেচার দিলো। এরপর ওই দুইজন ফরেনার চলে যায়। ওনারা যাওয়ার পরপর, বাঙ্গালী মহিলাটা এবারে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, ” বউমা, কেমন আছো?”
আয়না বেশ হতভম্ব হলো। একবার সমুদ্রের দিকে তাকালো। ও খাবার অর্ডার দিতে ব্যস্ত।
সে আমতাআমতা করে বলে, ” ভালো। আপনি কেমন আছেন?”
সমুদ্র বলে উঠে, ” উনি তোমার আরেকজন শ্বাশুড়ি। আমাকে একদম মায়ের মতো ভালোবাসেন।”
আয়না ভদ্রমহিলার দিকে তাকালো । মহিলা জবাবে বললো, ” তোমাকে দেখে খুব ভালো লাগছে এখন।”
সমুদ্র বলে উঠে, ” তুমি একটু মাথায় কাপড় দেও। জামাই সামনে বসে আছে। বউ-বউ সাজো। দুইদিন পর বিয়ে তোমার।”
মিসেস ইভানা বললো, ” ওর যেভাবে থাকতে মন চায় সেইভাবে থাকুক তো।”
আয়না দ্রুত ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে মাথায় দিলো। খয়েরী ওড়না মাথায় জড়াতেই কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি ছেয়ে যায় মনের মধ্যিখান ঘিরে।
মিসেস ইভানা সামান্য হেসে বলে, ” তুমি খুব এডোরেবল একটা মেয়ে। কিসে পড়ছো? সমুদ্র তোমার ব্যাপারে কিন্তু কিছুই বলেনি। জিজ্ঞেস করলে বলে সরাসরি মিট করো। আজ অবশেষে সুযোগ পেলাম তোমাকে দেখবার।”
আয়না আস্তে করে বলে, ” ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। ”
–” ওয়াও, দ্যাটস সো নাইস। তুমি তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট বউ মা। ” এরপর একটু থেমে সুধালো, ” বিউটি উইথ ব্রেইন শব্দটা বুঝি তোমায় দেখেই আবিষ্কার হয়েছে।”
আয়না একবার আড়চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো। সমুদ্রের তাদের কথায় ভাবান্তর নেই। সে ফোনে ব্যস্ত৷ খাবার পরিবেশন করা হলে, তিনজনে খেতে লাগলো। আয়নার একটু আন কম্ফোর্ট লাগছিল। গরম গরম স্টেক কেটে খেতে একদম ইচ্ছা করছিল না তার। এছাড়া বাঘের পাশে বসে কারই বা স্টেক খেতে মন চায়? সে চামচ দিয়ে নড়াচড়া করছিল।
সমুদ্র বুঝি তাকে খেয়াল করছিলো৷ এমনই সময় উনি তার প্লেটটা এগিয়ে সামান্য নিজের দিকে টেনে স্টেকটা যত্ন করে পিজ পিজ করে কেটে দিলো। তারপর বললো, ” ঠিকমতো খাও। নাহলে আবার প্রেশার ফল করবে।”
আয়নার তখন ভালোও লাগলো। আবার কিঞ্চিৎ শরমও লাগলো। সে চুপচাপ ভদ্র বাচ্চার মতো খাবার খেতে লাগে। এরমধ্যেই সমুদ্র তার আন্টির সাথে টুকটাক কাজ রিলেটেড কথা বলে তাদের বিয়ের দাওয়াত দিলো৷
সমুদ্র বললো, ” ঘরোয়া ভাবে অনুষ্ঠান হবে। খুব সিম্পেল ওয়েডিং। আপনার দাওয়াত থাকলো। ”
আয়না খেতে খেতে ভাবলো, ওনার তাহলে মনেও আছে যে ওনার বিয়ে শুক্রবার ! ভাব দেখে মনে হয় বিয়ে জিনিসটা কি সেইটায় জানেন না।
খাওয়ার সময় তার হাতে খাবার লেগেছিল বিধায় হাত ধৌত করতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো৷
আয়না যেতেই মিসেস ইভানা বলে উঠে, ” আই থিংক ইউ লাভ হার।”
সমুদ্র তার পানে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ” আন্টিমনি, তোমার মনে হয় আমি দ্বিতীয় দফা অন্যকাউকে ভালোবাসবো? নেভার!”
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩
–” বাট হুয়াই?”
–” ভালোবাসা প্রথমদফাতেই সুন্দর। দ্বিতীয়বার আর সাহসে কুলাবে না।”
–” আয়না অনেক ভালো একটা মেয়ে।”
–” দায়িত্ব পালন করে যাব৷”