ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪৪
Arishan Nur
” এ জার্নি বাই ট্রেন” কম্পোজিশন যতোটা ইন্টারেস্টিং আর নব্য অভিজ্ঞতার হয়, বাস্তবে যেন তার থেকেও কয়েক গুন বেশি-ই সুন্দর। সবে পনের মিনিট হয় ট্রেন ছেড়েছে। হুইশেলের শব্দটা কানে বাজতেই ধীরগতিতে ট্রেন চলা আরম্ভ হলো। ট্রেন চলতে শুরু করার টাইমে আয়নার কেমন জানি এক ভিন্ন অনুভূতি হলো। জীবনে প্রথম বারের মতো তার ট্রেন জার্নি৷ ছকর-ছকর টাইপের আওয়াজ কানে ভাসে। রেল লাইনের দু’পাত বেয়ে ট্রেন গন্তব্যের দিকে ছু’টে। সে সমুদ্রের ম্যাসেজ উপেক্ষা করে ট্রেন জার্নি উপভোগ করে।
এখন অবশ্য ট্রেন তার আপন গতিতে ছু’টছে। জানালার সীটের ধারে বসে চোখ নিবন্ধ রেখেছে আয়না। বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছিলো। অন্ধকারে তেমনভাবে কিছু দেখা যাচ্ছে না৷ কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে ট্রেন ছুটছে। ল্যাম্পপোস্ট থাকলে,বাইরের দৃশ্য সামান্য দেখার সুযোগ মিললোও, দ্রুতগামী ট্রেনের গতি এগিয়ে যায়। ফলে কিছু দেখার আগেই অন্ধকার এসে ভীড় জমায়। তাই ভালো লাগছে তার৷ বাতাসে চোখ-মুখ ঠাণ্ডা হয়ে আসে তার। চুল উড়তে থাকে এলোমেলো ভাবে বাতাসের ধাক্কায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এমন সময় সমুদ্র এসে তার সামনে দাঁড়ালো তবে কিছু বললো না৷ আয়না একপলক দেখে জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে বাতাস খায়৷ ও কেবল চোখ মেলে একবার দেখে গেলো৷ সবে রাত নয়টা বাজে। এতো জলদি কেউ ঘুমাবে না৷ শ্রাবণ সবার দৃষ্টি আর্কষণ করে বলে, ” ট্রেন জার্নি টা কেমন পানসে লাগছে না? চলো সবাই মিলে গানের কলি খেলি। মেয়েরা এক দল আর ছেলেরা এক দল। খেলবা সবাই? তাহলে আর বোর ফিল হবে না।”
তাদের ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে একজোড়া ফরেনার কাপল এসেছে, ওনারা সুদূর ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছেন। ওখানকার স্থানীয়। ইন্দোনেশিয়ান ভদ্রমহিলারও চোখের মণি নীলচে। উনি বারবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি দিচ্ছেন। হয়তো ভাবছে সমুদ্রও ভিন্নদেশীয় কীনা! সমুদ্র পালটা হাসি দেয়। ইতিমধ্যে সবাই গানের কলি খেলার জন্য একপ্রকার উত্তেজিত হয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়নাও এসে দাঁড়ালো। সমুদ্রের একদম ইচ্ছা নেই এসব খেলা খেলার। সে সরে দাঁড়ালো। এই ট্যুরে যারা এসেছে সবাই ওর অনেক জুনিয়র। বেশ কয়েক বছরের জুনিয়র। জুনিয়রদের সঙ্গে মিশতে ভালো লাগে না।
এছাড়া আয়না তার ম্যাসেজ উপেক্ষা করেছে বিধায় সামান্য কুণ্ঠিত বোধও করছে৷ ওর আবার কী হলো? মেয়ের মতি-গতি বুঝতে মনে হয় “নারীর মন” রিলেটেট বিষয়ে পিএইচডি করা অত্যাবশকীয়। তবে, আয়না যদি এই মুহূর্তে তার থেকে দূরে থাকবে বলে মনোনিবেশ করে, সে অভিযোগ করবে না। জীবনের এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়ালো, এখন সে কেবল আয়নাকে আগের মতো খুশি দেখতে চায়। আগের মতো সুস্থ হয়ে যাক ও, তার জন্য কারো জীবনে এতোবড় ট্রমার জন্ম হোক যে হাসতেও ভুলে যাবে, এমন মানুষ হতে চায় না সমুদ্র । এরজন্য যদি আয়নার জীবন থেকে দূরে সরে যেতে হয়, সেটাও গ্রহনযোগ্য বৈকি। তবে আয়না বরাবরের মতো নিশ্চুপ। ওর নিরবতা ক্রমশ সমুদ্রের মনে নেতিবাচক প্রভাবের আঁচড় কাটছে মনের অন্তরালে। কি হবে সামনে? দ্বিতীয়বারের মতো সব ঠিক হবে তো?
গানের কলির আসর জমজমাট হচ্ছে৷ প্রথম পক্ষ গান শুরু করে। শ্রাবণের দল থেকে গান শুরু হলো। খালি গলায় শ্রাবণ গান ধরায়, ওত সঙ্গে তাল দিয়ে সবাই একসুরে গায়।
“বসন্ত বাতাসে, সই গো, বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে, সই গো, বসন্ত বাতাসে
আমার বাড়ি আসে, সই গো, বসন্ত বাতাসে।”
ট্রেন আপন গতিতে ছু’টছে। হীম ঠাণ্ডা, হিমেল বাতাসের মাঝে এমন গানের আসর যেনো আগুণ! সবার চোখ-মুখেই হাসির রেখা। আসলে, ট্যুর কিংবা ভ্রমণ আছে জন্যই মানুষ মানসিক ভাবে সুস্থ আছে। নাহলে এমন চাপমুখর ব্যস্ততায় কবে মানুষ ডিপ্রেশনে থেকে ধুকে ধুকে বাঁচতো! ভ্রমণের অপরনাম ম্যাজিক হওয়া উচিত। ভ্রমণে আসলে আপনা-আপনি মানুষের মন-মেজাজ ভালো হয়ে যায়। কয়েকদিনের জন্য সকল কাজ-কর্ম থেকে বিরতি৷ আহা! খালি ঘুরাঘুরি করা!
মেয়েদের দলকে “স” দিয়ে একটা গান গেতে হবে। মেয়েরা অনেক ভাবছে ‘স’ দিয়ে কী গান আছে, কোন গানের লাইন ‘স’ দিয়ে শুরু হয়। রঙ্গন কাউন্ট ডাউন শুরু করে। জোরে জোরে বলে, দশ, নয়, আট…….
ছেলেরা অনেক খুশি। ওরা প্রথম রাউন্ডেই জিতে যাচ্ছে। অবশেষে “স” দিয়ে কেউ গান গাইতে পারলো না।
ছেলেরা আবার গান গাওয়া শুরু করে, এবার শ্রাবণ আর রঙ্গন একজোট হয়ে গাচ্ছিলো,
“ওই দূরে চলো না নীল আকাশে
হারিয়ে যাই তোমার হাতটি ধরে,
পায়ে পায়ে ঘুঙুর পায়ে, হারিয়ে তুমি
কাশবনের মৃদুল বাতাসে হয়েছি,
গানের রেশ বেশ কড়া হচ্ছিলো। দূরে সরে থাকা গেলো না৷ গানের আওয়াজ শুনে সমুদ্র দূর থেকে এগিয়ে আসরে যোগ দেয়। দারুণ গাচ্ছিলো ওরা। ফরেনার দুজন খুব উপভোগ করছে৷ সবাই হাত তালি দিচ্ছে।
“চলো না হারিয়ে যাই তোমায় নিয়ে
কোনো নাম না জানা, ওই অজানা শহরে, চলো…..”
সে গানের আসরের ঠিক মাঝে আসায়, আয়নার সঙ্গে চোখাচোখি অথবা শুভদৃষ্টি ঘটে। রঙ্গন গান থামিয়ে বলে, ” এইবার ইংরেজী অক্ষর “ল” দিয়ে গাও তোমরা।”
ছেলেদের দলের সবাই মোটামুটি ভালো গায়৷ কিন্তু মেয়েদের মধ্যে পিউ-আলিয়া কেউ গান গেতে পারেনা৷এমনকি রঙ্গনের বোন রুশাও পারেনা গেতে৷ পিউ আর আলিয়া গিয়ে তর্ক জুড়ে দেয়৷ শ্রাবণ নাকি ইচ্ছা করে ওদের হারানোর জন্য এমনভাবে টিম তৈরি করছে। জানে ওদের টিমে কোনো গায়িকা নাই, তার ছেলেদের টিমে গায়ক দিয়ে ভরা। এটা নাকি বৈষম্য হচ্ছে। ঝগড়াঝাটির শেষ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলো ট্রুথ-ডেয়ার খেলা হবে।
তবে শেষ মুহূর্তে ফরেনার ভদ্রলোক বলে উঠে, ” আই ওয়ান্ট টু হেয়ার মোর ফ্রম ইউ গায়েজ। ওয়ান্ট টু হেয়ার সাম বাংলা সং।”
বাঙ্গালী নিজেদের মধ্যে যতো ঝামেলাই করুক না কেনো, বিদেশিদের সামনে ফিটফাট থাকবেই। বিদেশি বাবু যেহেতু বাংলা গান শুনতে চাইছে তাহলে নিজের দেশের সুন্দর গানগুলোই শুনাতে হবে। সুন্দর কণ্ঠে।
শ্রাবণ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে, ” বস, এইবার তুমি গাও। তুমি গান গাইলে পুরা ট্রেনের মানুষ গান শুনতে চলে আসবে।”
–” আমি! নারে গান গাইতে আর ভালো লাগে না। আগের মতো গাইতে পারি না। তোরাই তো খুব জোস গাচ্ছিলি। গাইতে শুরু কর আবার।”
শ্রাবণ বলে, ” তুমি ছায়ানটের ছাত্র। তুমি গান শুনাও একটা। প্লিজ।”
সমুদ্র আগে রবীন্দ্র সংগীত ভালো গাইতো। সবাই প্রশংসা করত অনেক। কিন্তু ইদানীং চর্চা নেই। চর্চা ছাড়া রবীন্দ্র সংগীত ডিজাস্টার! সে গলা খাকারি দিয়ে গান গাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।
এরপর আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আয়ু, কোন গান শুনতে মন চাচ্ছে? বলো তো!”
আয়না সহ কেউ ভাবেও নি সমুদ্র আয়নাকে উদ্দেশ্য করে কিছু জিজ্ঞেস করবে। সবার দৃষ্টি যায় আসরের এককোনায় গুটিসুটি মেরে বসে থাকা মেয়েটার দিকে। ও যেন এতেই বিব্রতবোধ করে জোড় পূর্বক হাসে।
রঙ্গন দুষ্টুমি করে বলে, ” ভাবী বলেন, কী গান শুনবেন?”
শ্রাবণ ভ্রু কুচকে বলে, ” ঐ ব্যাটা, ভাবী না তোর ফ্রেন্ড? ”
রঙ্গন বলে, ” কিন্তু ভাইয়া তো কলেজের সিনিয়র। সিনিয়র ফার্স্ট ব্রো।”
আয়না আশেপাশে তাকিয়ে উস-খুস করে অন্যদিকে যাত্রা শুরু করলে, খালি গলায় গানের আওয়াজ ভেসে আসে,
“এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”
আয়না থমকে দাঁ ড়ালো। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে, সমুদ্র তার পানে চেয়ে আছে। ও আয়নার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে গেয়ে উঠে,
” তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম”
বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেব তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারই ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম”
সমুদ্রের কণ্ঠে হয়তোবা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জন্য কেমন একটা মাদকতা আছে। ওর কণ্ঠে গান শুনলে কিছু একটা উপলব্ধি করা যায়৷ মনে হয়, ওর কণ্ঠে বড়ই বেদনার ছাপ৷ মনে হয় ও নিজের দুঃখ গাইছে। আসলেই কী তাই?
গানের আসর শেষ হলে, ট্রেনের ভেতর থেকে দুজন এসে ওদের ডিনার দিয়ে যায়৷ খিঁচুড়ি আর ডিম সেদ্ধ৷ যদিও বা আহামরি কোনো কিছু না৷ কিন্তু কেনো জানি সবাই মিলে একসাথে খেতে বেশ মজা লাগলো৷ খাওয়া-দাওয়ার পর, ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলা শুরু করে৷ কোকের বোতল নিয়ে খেলা শুরু করে। সবার আগে রঙ্গনের দিকে বোতল থামে৷ রঙ্গন ট্রুথ নেয়৷ শ্রাবণ জিজ্ঞেস করলো, তোমার লাইফের ফার্স্ট ক্রাশ কে?”
রঙ্গন একটা দুষ্টু হাসি দিলো। সমুদ্র তীর্যক চাউনিতে তাকায় ওর পানে৷
রঙ্গন বলে, ” আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম৷ আমার এক মামা বিয়ে করে মামীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলো৷ মামীর উপর ক্রাশ খাইছিলাম।”
রঙ্গনের এহেন অকপটে স্বীকারোক্তিতে সকলেক তাজ্জব বনে যায়। ধাপে ধাপে খেলা জমে। শ্রাবণ বোতল ঘুরালে, এবারে আয়নার দিকে বোতল থামলো৷
আয়নাকে সহজ প্রশ্ন করলো শ্রাবণ। ও বলে, ” ভাবী, আপনার কেমন ছেলে পছন্দ ছিলো? বিয়ের আগে?”
এরপর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, ” ভাইয়া, তুমি কান বন্ধ করে রাখো।”
সমুদ্র হেসে বলে, ” প্যারা নাই৷”
আয়না বলতে চাইছিল না, কিন্তু সবাই শুনতে চায়, এমনকি সমুদ্রের আগ্রহ দ্বিগুণ। সমুদ্রের ধারণা নিশ্চয়ই কোনো সিএসই ইঞ্জিনিয়ার পছন্দ। এজন্য লজ্জা পাচ্ছে। আয়না উত্তর দিচ্ছিলো না দেখে আলিয়া বলে উঠে, ” আপার ছোট থেকেই ডাক্তার ছেলে পছন্দ। স্পেশালি এপ্রোণ পরা ডাক্তার। ”
সমুদ্র শোনামাত্র বলে উঠে, ” তাহলে এখন থেকে প্রতিদিন এপ্রোণ পরে বসে থাকবো।”
অনেক অব্দি গল্প-গুজব চলে। তখন অবশ্য সমুদ্র ছিলো না। একটু দূরেই ফরেনার দুজনের সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত ছিলো। তারপর আর ওকে দেখা যাচ্ছিলো নাব।এদিকে শিঙ্গাড়া, চিপস সব খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমুদ্র নেই৷ আয়না উঠে যায় সীট থেকে। একাই হেঁটে হেঁটে ট্রেনের বগির শেষ মাথায়, দরজার সামনে আসতেই সমুদ্রের কণ্ঠস্বর শুনলো৷
–” কি ব্যাপার? এখানে কেন?”
আয়না চকিতে উঠে তাকালো। লম্বা মানুষটা কালো জ্যাকেট গায়ে ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ কি যেন দেখছিলো। কী দেখছিলো সেটা আয়নারও দেখতে মন চাইলো৷
সমুদ্র বলে, ” আমার রাতের বেলা ট্রেন জার্নি খুব ভালো লাগে৷ স্পেশালি ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখার মজাই আলাদা।”
আয়না একটু উঁকি মেরে চাঁদ দেখার চেষ্টা করে। সাফ বোঝা যায় ও ভয় পাচ্ছে। সমুদ্র ওর বাহু ধরে এগিয়ে এনে বলে, ” সবকিছুরই এক্সপেরিয়েন্স থাকা দরকার। দেখো আজকের চাঁদ কি সুন্দর!”
আয়না হাতল ধরে উপরের দিকে তাকায়। একফালি চাঁদ দেখতে পেলো সে। আজকে কী পূর্ণিমা নাকি! ওর উড়ন্ত চুল গুলো সমুদ্র মুখ থেকে সরিয়ে নিজের হাতে মুঠো করে ধরে৷
এরপর বলে, ” পরের স্টেশন এ নামবা?”
আয়না চোখ বড় বড় করে বলে, ” বলেন কি!এখনই নেমে পড়লে সিলেট পৌঁছাবো কীভাবে?”
–” আরে বোকা! স্টেশন এ নেমে চা-বিস্কুট কিনে দেন আবার উঠে পড়বো। টিকিট আছে তো। দেখতে চাইলে দেখাবো।”
একটু পর ট্রেনে থামলো৷ কয়েক মিনিটের জন্য মনে হয়। যাত্রীদের সঙ্গে সমুদ্র আয়নাকে নিয়ে নেমে যায়৷ প্লাটফর্ম এ ভীড় লেগে ছিলো৷ আরেকটা ট্রেন নাকি আসবে কিন্তু লেইট করেছে জন্য যাত্রীরা অপেক্ষায় আছে। প্লাটফর্ম এর ফ্লোরেই ফ্লাস্কে করে চা-বিস্কুট বিক্রি করছে এক মহিলা৷ সমুদ্র দু’কাপ চা কিনে আয়নাকে নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে। এই প্লাটফর্ম বুঝি ঢাকার বাইরে। ইতিমধ্যেই কুয়াশায় ঢেকে গেছে আকাশ। দূর-দূরান্ত অন্ধকার আর কুয়াশা। ট্রেন থেমে আছে। যাত্রীদের আনাগোনা। একজন কুলিও দেখা গেলো। এখন আর কুলির দেখা মিলে না৷ অবশেষে চা হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠে পরে তারা। চা এতো গরম ছিলো মুখে দেওয়া যাচ্ছিলো না। ফুঁ দিয়ে খেতে হচ্ছে।
সমুদ্র এবারো গেইটের ধারর দাঁড়ায়৷ আয়নাও দাঁড়ালো। তার বেশ মজা লাগছে।
সমুদ্র বলে, ” ভূতের গল্প শুনবা?”
আয়না ভ্রু কুচকে বলে, ” আপনি ভূতের গল্প জানেন নাকি!”
–” আগে তো ফেসবুক ছিলো না৷ আমরা রেডিও এফএম এ ভূতের গল্প শুনতাম। শুনবা নাকি? ছোট একটা গল্প?”
–” বলেন তাহলে শুনি।”
–” একটা ছেলে এরকম শীতের রাতে, প্রায় রাত বারোটার ট্রেনে করে সিলেট যাচ্ছিলো৷ পথিমধ্যে ট্রেন থামে কোনো এককারণে। সে প্লাটফর্ম এ বসে গল্পের বই পড়ছিল৷ রাত তখন অনেক৷ প্লাটফর্ম ফাঁকাই ছিলো।হুট করে একটা মেয়ে এসে বলে, গল্পের শেষ এ কী হয়েছে বলা যাবে?”
ছেলেটা এন্ডিং বলে দেয়, যেখানে নায়ক তার নায়িকার মৃত্যু তে শোকাহত হয়ে প্রেমের বই লিখেছে। এবং বেস্টসেলার হয়।”
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪৩
আয়না বিরক্ত হয়ে যায় বলে, ” খুবই বোরিং গল্পটা। এরচেয়ে চুপ থাকুন তো।”
সমুদ্র হাসে বেশ শব্দ করে তারপর বলে, ” প্লাটফর্ম এ গল্পের এন্ডিং শোনা মেয়েটা চলে যা-ওয়ার পর ছেলেটা ভূমিকার অংশ পড়ে, যেখানে লেখা ‘ আমার প্রিয় সন্ধ্যামালতি, তোমার গালের কালো দাগ আমার সবচেয়ে প্রিয়।”
আয়না হাই তুলে একটা। চা খাওয়ায় মনোযোগ দেয়৷
সমুদ্র বলে যায়, ” ছেলে টা হতভম্ব হয়ে কালো কুয়াশার দিকে তাকিয়ে থাকে কারণ গল্পের এন্ডিং শোনা মেয়েটারও গালে কালো দাগ ছিলো।”
আয়না চমকে উঠে বেশ। সে সমুদ্রের দিকে তাকায়। সমুদ্র বলে, ” বারোটা বাজতে চললো। পরের প্লাটফর্মে নেমে সন্ধ্যামালতির সঙ্গে দেখা করবে?”