উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব ৪৬

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব ৪৬
আফিয়া আফরোজ আহি

সূর্য হেলে গেছে পশ্চিম আকাশে। আকাশ জুড়ে মেঘেদের মেলা। মাঝে মাঝে কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে। বিয়ে শেষে স্টেজে বসেছে আমাদের কাজিনদের আড্ডা মহল। বড়ারা বাগানের একপাশে গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছে। বাড়ি কাছাকাছি হওয়ার যাওয়ার তাড়া নেই। বড়া তাঁদের মতো আড্ডা দিচ্ছে আর আমরা আমাদের মতো। একটু আগেই শেষ হয়েছে আমাদের ফটোসেশন। যতো কাপল পোজ আছে সব ট্রাই করা শেষ। বিয়ের দিন ফটো পারফেক্ট হতে হবে। নাহয় এতো কষ্ট করে দুই ঘন্টা বসে কোমর ব্যথা করে সাজাটাই বৃথা যাবে। কাপল ফটো, গ্রূপ ফটো, সিঙ্গেল ফটো সব তুলা শেষ করে একটু আগে আড্ডায় বসেছি। সবাই মিলে গল্প করছি এমন সময় ইভা একটা আয়না নিয়ে এলো। দুজনের মাঝে রাখা হলো আয়নাটা। আয়নায় দুজনের মুখ স্পষ্ট। ইভা আদ্রকে প্রথমে জিজ্ঞেস করলো,

“আয়নায় কাকে দেখতে পাচ্ছে আদ্র ভাই?”
আদ্র আয়নায় তাকিয়ে হাসলেন। অতঃপর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বললেন,
“আদ্র’র লাল টুকটুকে বউ”
আদ্রর কথা শুনে সবার মাঝেই হই হই পড়ে গেল। ইভা এবার আমায় জিজ্ঞেস করলো। আমি একটু সময় নিয়ে ভেবে বললাম,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার সদ্য বিবাহ করা একমাত্র বর”
আদ্র আমার দিকে তাকালেন। উনি কি ভেবেছে উনি বলতে পারবে আর আমি বলতে পারব না? আমিও ‘আদীব চৌধুরী আদ্রর’ বউ আমিও পারি, হুহ। গল্পের একপর্যায়ে আদ্র উঠবে কিন্তু উনার জুতা খুঁজে পাচ্ছে না। নিশ্চই এটা ইভা আর রোশনির কাজ। আদ্র জুতা বেশি খোজা খুঁজি করলো না সোজা ইভাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কতো চাই বল?”

ইভা যেন আদ্রর কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। ইভা কিছু বলবে তার আগেই আদ্রর বন্ধুরা শুরু করে দিলো তারা জুতা ফেরত নিবে না। লাগলে নতুন জুতা কিনে নিবে। এই নিয়ে ইভা রোশনি আর আদ্রর বন্ধুদের কথা কাটাকাটি শুরু হলো। আদ্র সেসবে পাত্তা দিলো না। বন্ধুদের থামিয়ে দিয়ে শেরওয়ানির পকেটে হাত গুঁজে একটা খাম বের করলো। ইভার দিকে বাড়িয়ে দিয়েও বলল,
“এতে হবে নাকি আরো লাগবে?”
ইভা আদ্রর বন্ধুদের ভেংচি কেটে দিলো। খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
“এতেই হয়ে যাবে ভাইয়া। ইউ আর দা বেস্ট জিজু”

অতঃপর এলো বিদায়ের পালা। আশ্চর্য জনক বিষয় হলেও বিদায়ের সময় আমার একটুও কান্না এলো না। বিষয়টা অবাক করার মতো না? যেই মেয়ে দুদিন আগে থেকে মুড অফ করে বসে ছিলো, সকালে কান্নাকাটি করলো সে এখন কাঁদছেই না। আমার মনেই হচ্ছে না আমি আমার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে এই বুঝি ১০ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে ফুপ্পির বাড়ি যাচ্ছি আবার চলে আসবো। আমার কান্না না পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমার ভাই-বোনেরা। ওরা আমার সাথে সাথে আছে। এমনকি আমার সাথে সাথে ফুপ্পির বাড়ি অবধিও এসেছে। ওরা চায় না আজকের এই খুশির দিনে আমার মন খারাপ হোক। আমায় হইহুল্লোড়ে মাতিয়ে রেখেছে। কখন যে ওদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে চলে এসেছি আমি নিজেও জানি না। গেটের সামনে গাড়ি থামতেই আদ্র প্রথমে নেমে পড়লো। অতঃপর আমার পাশের গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। মুচকি হেসে আদ্রর হাতে হাত রেখে নেমে পড়লাম। ভিতরে যেতে নিলে আদ্রর বন্ধুরা বাঁধা দিলো। আদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে? ভিতরে যেতে দিচ্ছিস না কেন?”
আদ্রর বন্ধুদের মাঝে মিহি আপু বলল,
“এমনি এমনি তো যেতে দিবো না বন্ধু। বউকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে হবে”
মিহি আপু কথাটা বলতে দেরি করলেও আদ্রর করতে দেরি হলো না। আমায় ফট করে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
“এই কথা, আগে বলবি তো? এখন সর বউ নিয়ে যেতে দে। বউ আমার গরমে ঘেমে যাচ্ছে”
পাশ থেকে আদ্রর বন্ধুরা সাথে আমার বজ্জাত কাজিনরা শিস বাজাচ্ছে। ইভা তো একপ্রকার চি*ল্লিয়েই বলে উঠলো,
“জিও আদ্র ভাই”
মিহি আপু বলল,
“বউয়ের প্রতি কি ভালুপাসা?”

হটাৎ করে কোলে নেওয়ায় নিজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আদ্রর গলা জড়িয়ে ধরলাম। আদ্র আমায় নিয়ে গট গট পায়ে হাঁটা দিলো বাড়ির ভিতরে। একেবারে ড্রয়িং রুমের সোফায় নিয়ে বসিয়ে দিলো। পাশে নিজেও বসলো। একটু পর শুরু হলো মানুষের আনাগোনা। পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে মানুষ। নতুন বউ দেখতে এসেছে সবাই। নিজেকে কেমন উদ্ভট প্রাণী মনে হচ্ছে। আমি বসে আছি একেকজন এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, প্রশ্ন করছে আরো কতো কি? তবে সস্থির বিষয় হলো পাশে আদ্র আছে। উনিই আমার ভরসা। উনি পাশে থাকলে আমি সমস্ত পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো। এক আন্টি এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পাশে বসলেন। থুতিনিতে হাত রেখে আদ্রকে বলল,

“বউ দেখি মাশাআল্লাহ মেলা সুন্দর আদ্র বাবা। একদম পরীর মতো”
আদ্র হাসি মুখে বলল,
“এই জন্যই তো মামুর মেয়েকে অন্য কারো ঘরে যেতে না দিয়ে নিজের বউ করে নিয়ে এসেছি। কি বলো ভালো করেছি না আন্টি?”
“একদম ভালো করেছিস বাবা”
বড়দের সামনে এভাবে কেউ বলে? এই আদ্র দিন দিন কেমন লাজ লজ্জা ভুলে যাচ্ছে। যার তার সামনে যাতা বলে ফেলে পড়ে লজ্জায় পড়তে হয় আমায়। এই লোককে নিয়ে আর পারি না।

ফুলে সজ্জিত পুরো কক্ষ। পুরো রুম জুড়ে তাজা ফুলের ঘ্রান। ফুলের ঘ্রানে চারপাশ মো মো করছে। বেলি, রজনীগন্ধা, গোলাপ ফুলের সমাহার বসেছে পুরো রুম জুড়ে। শুধু খাট না খাটের পাশের টেবিল, সোফার সামনে টি-টেবিলেও ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। বেলি ফুল আর রজনীগন্ধার ঘ্রানে মেতে উঠেছে পুরো রুম। কিছুক্ষন আগেই সবাই মিলে আমায় রুমে নিয়ে এসেছে। আমায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওরা সেকি লজ্জা জনক সকল কথা বার্তা শুরু করে দিয়েছে। ওদের কথা শুনে লজ্জায় আমার মাথা কাঁটা যাচ্ছে। লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসছে, কান দিয়ে মনে হয়ে ধোয়া বের হবে। আমরা কাজিনকুল এতো অ*সভ্য কথা বলতে পারে তা জানা ছিলো না। আজকের দিনটা না এলে বোধ হয় জানাও হতো না। ঈশিতা আপু,ভাবি আর ইভা মিলে আমায় লজ্জার সাগরে চুবিয়ে মা*রছে। মনে মনে বলছি,

“ওপর থেকে কেউ দড়ি ফালাক আমি উঠে যাই”
এদের মাঝে আর থাকা যাচ্ছে না। এমন সময় আগমন ঘটলো আদ্রর। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম। বাহিরে আদ্রর বন্ধুরা ওকে আটকে রেখেছে। টাকা ছাড়া আদ্রকে রুমে ঢুকতে দিবে না। আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি চাই?”
“টাকা”
“কেন?”
“এইযে আমরা কষ্ট করে রুম সাজালাম তার জন্য”
“আমার বউ আমার রুম ভিতরে যাবোও আমি। তোদের কেন টাকা দিবো?”
“আমরা যে রুম সাজালাম সেটা?”
“তোদের আমি রুমে সাজাতে বলেছি? তোরা সাজিয়েছিস কেন? আমি কোনো টাকা দিবো না তোরা তোদের ফুল নিয়ে যা”

“এটা কিন্তু ঠিক না আদ্র। শা*লীদের বেলায় তো টুপ্ করে টাকা বের করে দিয়েছিস। আমাদের বেলায় কিপ্টামো করছিস কেন?”
“ওরা আমার শা*লী, বড্ড আদরের তাই দিয়েছি। আর তোরা হোলি বন্ধু নামক হা*রামি। তাই তোদের দিবো না”
মিহি আপু গাল ফুলিয়ে বলল,
“তুই আমাদের হা*রামি বলতে পারলি?”
জিসান ভাইয়া বলল,
“হা*রামি বলিস আর যাই বলিস টাকা দিতেই হবে”

শুরু হয়ে গেল তর্ক বিরতর্ক। অতঃপর আদ্র তাঁদের টাকা দিয়ে বিদায় করলো। রুমে ঢুকতেই ইভা, ঈশিতা আপু আর ভাবি হেসে দিলো। আদ্র কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আদ্রকে দেখে ভাবি হেসে বলল,
“আদ্র ভাই এসে গেছেন? রোদ ভয় পাচ্ছিলো তাই আমরা গল্প করছিলাম। আপনি যখন এসেছেন এখন আমরা যাই। কি বলো ঈশিতা?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ চলো”
ইভা যাওয়ার আগে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলে গেল,
“বেস্ট অফ লাক বনু”

ইভারা চলে গেল। আদ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। দরজা বন্ধ করার শব্দে কেঁপে উঠলাম। আদ্র একটু একটু করে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। হৃদস্পদন বেড়ে যাচ্ছে। আকস্মাৎ ভয় জেঁকে ধরলো। বিছানা থেকে নেমে আদ্রকে সালাম করতে গেলে উনি আটকে দিলেন আমায়। উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
“রৌদ্রময়ীর স্থান আমরা বুকে, পায়ে নয়। আর কখনো যেন না দেখি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। মনে থাকবে?”
মাথা নাড়িয়ে সায় জানালাম। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। আদ্র আমায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল আলমারির দিকে। আলমারি খুলে কিছু বের করলেন। অতঃপর আমার সামনে বসে আমার হাতে একটা চেক তুলে দিয়ে বলল,

“তোর মোহরানার টাকা”
“এগুলো দিয়ে আমি কি করবো?”
“যা ইচ্ছে তাই করবি। এটা তোর প্রাপ্য”
“এখন তোমার কাছে রাখো আমার লাগলে আমি নিয়ে নিব”
“ঠিক আছে আলমারিতে আছে। নিয়ে নিস। এখন হাতটা এদিকে বাড়া তো”
ডান হাত বাড়িয়ে দিলাম। অনামিকায় রিং থাকায় আদ্র ডান হাতের মধ্যমা আঙুলে একটা রিং পড়িয়ে দিলো। অতঃপর চুম্বন এঁকে দিলো হাতের উল্টো পৃষ্ঠে।
“পা বের কর দেখি”
“পা? কেন?”
“কথা না বলে যেটা বলছি শোন”

লেহেঙ্গা একটু উঁচু করে পা বের করলাম আদ্র পকেট হাতড়ে কিছু একটা বের করলেন। অতঃপর আমার আলতায় রাঙা পায়ে থাকা নুপুর গুলো খুলে নতুন এক জোড়া নতুন নুপুর পড়িয়ে দিলো।
“নতুন নুপুর কেন?”
“আগের নুপুর গুলো কেমন পুরোনো হয়ে গেছে”
“পুরোনো কবে হলো? সেদিনই তো পড়িয়ে দিলেন”

“এটাতে ঝুনঝুনি বেশি। তুই আমার আশেপাশে থাকলে তোর নুপুরের শব্দ শুনে আমি তোর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবো। সারাবাড়ি তোর নুপুরের রিনঝিন শব্দে মুখরিত হয়ে থাকবে। তবে এটা পড়ে বাহিরে যাওয়া মানা”
আমি ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সায় জানালাম। আদ্র নুপুর পড়ানো শেষে আলতায় রাঙানো পায়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। উনার হটাৎ স্পর্শে শিউরে উঠলাম। গাঁয়ে কাঁটা দিলো। আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওনার দৃষ্টির নড়চড় হচ্ছে না। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে মূল্যবান কিছু খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। নড়তেই আদ্র বলে উঠলো,

“নড়ছিস কেন? দেখতে দে”
“কি দেখো?”
“লাল টুকটুকে বউ রূপে আমার রৌদ্রময়ীকে”
“এতক্ষন দেখলে তাও হয়নি?”
“রৌদ্রময়ীকে দেখার তৃষ্ণা আমার এ জীবনে মিটবে না। রৌদ্রময়ীকে দেখার তৃষ্ণা আমার আজীবন রয়ে যাবে। যতো দেখবো, ততো কম পড়ে যাবে”
“এই সরো তো। আমার একভাবে বসে বসে পা ব্যথা করছে”
বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। এই ভারী লেহেঙ্গা পড়ে আর থাকা যাচ্ছে না। আদ্র বলল,
“কাবার্ডে দেখ তোর জন্য শাড়ি রাখা আছে। সেখান থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আয়”
“ওযু কেন?”

“নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নতুন জীবন শুরু করবো তাই”
কোনো কথা না বলে নীল রঙের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। একে বারে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম। চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আদ্র তোয়ালে নিয়ে এগিয়ে এসে চুল মুছতে মুছতে বলল,
“এখনো সেই বেখেয়ালিই রয়ে গেলি? পড়ে সর্দি লাগলে?”
“তুমি আছো তো খেয়াল রাখার জন্য”
আদ্র সুন্দর করে চুল মুছিয়ে দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে এলো। দুজন একসাথে নামাজ আদায় করে নিলাম। আদ্র জায়নামাজে বসে থেকেই বলল,

“জানিস রৌদ্রময়ী চাওয়া হালাল এবং মন থেকে হলে সাথে আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে আল্লাহ তায়ালা সেটা তোকে যে কোনো ভাবে পাইয়ে দিবেন”
“যেমন?”
“এইযে আমি তোকে চেয়েছি। আমার চাওয়ায় কোনো ঘাটতি ছিলো না তুই আমায় ভালোবাসিস না জেনেও ভালোবেসেছি । ইভানের সাথে তোর এনগেজমেন্ট হওয়ার পরও আমি আশা ছাড়িনি। আমি জানতাম আমার রব আমায় নিরাশ করবেন না। দেখ দীর্ঘ ১২ বছরের ভালোবাসার ফল হিসেবে তুই এখন আমার বউ, আমার জীবনসঙ্গী”

আদ্রর কথা গুলো মন দিয়ে শুনলাম। আসলেই আল্লাহর কাছে চাইতে পারলে উনি কাউকেই খালি হাতে ফিরান না।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। স্নিগ্ধ হিমলে হাওয়া এসে মুহূর্তেই শরীর ঠান্ডা করে দিয়ে যাচ্ছে। হাওয়ার তালে তালে দুলছে লম্বা ঘনকালো কেশ গুচ্ছ। ক্ষনিকের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করলাম কারো বাহু বন্ধনের মাঝে। এটা যে আদ্র সেটা বুঝতে মুহূর্তও লাগলো না। পিছনে ঘুরে আদ্র গলা জড়িয়ে ধরলাম।
“দেখো পরিবেশটা সুন্দর না?”
আদ্র নেশালো কণ্ঠে বলল,
“পরিবেশের চেয়েও সুন্দর আমার রৌদ্রময়ী। নীল শাড়িতে তাকে নীলাঞ্জনার চেয়েও সুন্দর লাগছে নেশা ধরে যাচ্ছে চোখে”

আদ্র কেমন নেশালো চোখে চেয়ে আছে। ওনার এমন চাহনি দেখে শুকনো ঢোক গিললাম। আদ্র এগিয়ে এলো। কানের পৃষ্ঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। শিউরে উঠলাম। আদ্র ফিসফিস করে বলল,
“এমন বিধ্বংস রূপে সামনে কেন এলি জান? খুন হয়ে যাচ্ছি আমি তোর রূপের ঝলকে। নেশা ধরে যাচ্ছে যে। এই নেশা কাটানোর জন্য যে তোকে চাই। বড্ড বাজে ভাবে চাই। দিবি সেই অনুমুতি?”
কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। বুকের মাঝে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে। গলা শুকিয়ে আসছে। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আদ্রর সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমার কোনো রাইট নেই উনাকে বাঁধা দেওয়া। আদ্র ফের জিজ্ঞেস করলো,
“কি হলো জান কিছু বলছিস না কেন?”

কিছু না ভেবে আদ্রকে জড়িয়ে ধরলাম। কারণ মুখে বলার সাহস আমার নেই। আদ্র হয়তো আমার উত্তর বুঝতে পারলেন। ঠোঁটের কোণের মুচকি হাসি ফুটিয়ে টুপ্ করে কোলে তুলে নিলেন আমায়। আদ্রর গলা জড়িয়ে ধরলাম। আদ্র আমায় বিছানায় বসিয়ে লাইট অফ করতে গেলেন। লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। আদ্র একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। মনের মাঝে কেমন ঝড় বইছে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আদ্র আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে ভর দিলেন আমার ওপর। কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলেন। কপাল থেকে ওষ্ঠ সরিয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার মুখপানে। লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে গাল দুটো।

আদ্রর চোখে নেশা। একটু তাকিয়েই ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। আদ্র এগিয়ে আসছে। মুহূর্তের ব্যবধানে অধরে অধর মিলিয়ে দিলো। পুরো ওষ্ঠ জুড়ে আদ্রর বিচরণ। অবাধ্য হয়েছে তার হাতের আনাগোনা। কোমর জড়িয়ে নিজের আরো কাছে টেনে নিলেন। আদ্র অবাধ্য স্পর্শে নিজেকে কেমন পা*গল পা*গল লাগছে। শরীর বেয়ে শিহরণ ছেয়ে যাচ্ছে।

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব ৪৫

কেমন হাঁসফাঁস লাগছে। যতো সময় যাচ্ছে আদ্রর পা*গলামো ততো বাড়ছে। বিছানার চাদর খামচে ধরলাম। আজ যেন আদ্র নিজের মাঝে নেই। নেশার ঘোরে পুরোপুরি ডুবে গেছেন। সকল ভালোবাসা উজার করে দিচ্ছে। পুরো রুম জুড়ে ফুলের মিষ্টি ঘ্রান আর দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ। উত্তপ্ততা ছেয়ে গেছে রুম জুড়ে। আদ্র কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলল,
“সরি জান। একটু কষ্ট সহ্য করে নে”

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন পর্ব ৪৭