উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৩

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৩
আফিয়া আফরোজ আহি

ব্যালকনিতে বসে আছি। আরুর ব্যালকনিতে ফুল গাছ নেই। কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমার ব্যালকনি হলে এতক্ষনে মিষ্টি ফুলের ঘ্রানে মো মো করতো। নিজের ব্যালকনিটাকে বড্ড মিস করছি। বাসায় থাকলে নিশ্চই ঈশিতা আপু, ইভা, রোশনি গল্প করছে চলে আসতো। কিন্তু এখানে কেউ নেই। আদ্র সাহেব এসেই রুমে ঢুকেছে, ফুপ্পি গেছে রান্না করতে, আরু ফুপ্পির রুমে পড়ছে। ও এই কদিন ফুপ্পির সাথেই থাকবে। ফুফা গেছে শহরের বাহিরে। আমি ভাবনাটা শহরে বিচরণ করছি। এমন সময় রুমে প্রবেশ করলো আদ্র ভাই। হাতে তার খাবারের ট্রে। খাবার নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলেন। উনাকে এখানে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

“খাবার এখানে আনলে কেন? আমি তো রুমে যেয়েই খেতে পারতাম”
“তার দরকার নেই। তু্ই রাতের আকাশ দেখ আমি খাইয়ে দিচ্ছি”
“আমার হাত এখন ঠিক আছে আমি নিজের হাতে খেতে পারবো”
“তোকে আমি জিজ্ঞেস করেছি তোর হাত ঠিক আছে কিনা?”
মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর দিলাম। আদ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তাহলে এতো বেশি বুঝতে তোকে কে বলেছে?”
মুখ ভেংচি কাটলাম। এই আদ্র ভাই ইদানিং বজ্জাত হয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় ঝগড়া শুরু করে দেয়। কথা ঘুরায়, ধমক দেয়। আগে কখনো এমনটা করতো না। যেটা বলতাম সেটাই শুনতো। কথার বিপরীতে কোনো রিয়েকশন আসতো না। কোন দুঃখে যে বেটাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম আল্লাহ মালুম। আদ্র ভাই হাত ধুয়ে এসে ভাত মাখাচ্ছেন। মুখের সামনে খাবার ধরে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হা কর”
বাধ্য মেয়ের মতো খাবার খাচ্ছি। আমায় খাইয়ে দিতে দিতে আদ্র ভাই নিজেও খাচ্ছে। উনি এখন আমার খাবারেও ভাগ বসাতে চলে এসেছে? ইহা তো মোটেও ভালো লক্ষণ নহে। চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি আমার এখান থেকে খাচ্ছ কেন?”
“খিদে পেয়েছে তাই খাচ্ছি”
“খিদে পেলে অন্য প্লেটে খাবার নিয়ে খাও। আমার খাবারে ভাগ বসাচ্ছ কেন?”
“তোকে বলেছি না তোর খাবার অনেক টেস্টি? তাই তোর খাবারেই ভাগ বসাই”
“বাকি খাবার কি টেস্ট ছাড়া?”
“হ্যাঁ, শুধু তোর খাবার টেস্টি”
“আজব কথা বার্তা”

খেয়াল করে দেখালাম প্লেটে নেওয়া খাবার আমার তুলনায় বেশি। আমি এতো খাবার কখনোই খাই না। তার মানে উনি ইচ্ছে করেই বেশি খাবার এনেছে। পাজি লোক একটা! আদ্র ভাই খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে এসে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছিয়ে দিলেন। হুট্ করে ঝুঁকে এলেন আমার ওপর। ওনাকে এতটা কাছে দেখে পিছন দিকে হেলে গেলাম। আদ্র ভাই ঝুঁকে কানে কানে ফিস ফিস করে বলল,
“এক প্লেটে খাবার খেলে ভালোবাসা বাড়ে”

তড়িৎ গতিতে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। ওনার মুখে লেগে আছে মুচকি হাসি। উনি আমায় উনার দিকে তাকাতে দেখে চোখ টিপ দিলেন। সরে গিয়ে প্লেট দিয়ে প্রস্থান করলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র ভাই চলে গেলে খেয়াল হলো তার কথার মানে। মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়ে গেলাম। তাহলে এই ছিলো বজ্জাত লোকটার মনে? এই জন্যই তখন বলছিলো আমার খাবার মজা লাগে! এভাবে উনি আমায় বোকা বানালো? আর আমিও এক বলদি। উনি যা বলেছে সেটাই বিশ্বাস করে ওনার সাথে ঝগড়া করে গেছি। লজ্জায় লাল হচ্ছি এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। পাশে থাকা ফোন সামনে ধরলে নজরে এলো স্ক্রিনে ভেসে থাকা নামটা। স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করছে ঈশিতা আপুর নাম। ভিডিও কল দিয়েছে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হুড়মুড় করে সব গুলো একসাথে কথা বলা শুরু করলো। একেক জন একেক কথা জিজ্ঞেস করছে।
ঈশিতা আপু জিজ্ঞেস করলো,

“রোদ সোনা কি করছিস? খেয়েছিস? ওষুধ?”
ইভা জিজ্ঞেস করছে,
“কিরে বনু প্রেম কেমন চলছে? আদ্র ভাই কিছু বলেছে তোকে? আমাদেরও বল কি কি বলেছে”
রোশনি বলে উঠলো,
“আপু তুমি একা একা ওখানে মজা করছো তাই না? আর এখানে আমরা মন মরা হয়ে বসে আছি তোমার জন্য”
কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,
“আমি তোদের অনেক বেশি মিস করছি। এখানে ভালো লাগছে না। আমায় এসে নিয়ে যাও”
ঈশিতা আপু আমার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে আদূরে ভঙ্গিতে সুধালো,

“কি হয়েছে রোদ সোনা? মুখটা অমন করে রেখেছিস কেন? ওখানে ভালো লাগছে না?”
“না, একা একা ভালো লাগছে না। তোমরা এসে আমায় নিয়ে যাও”
“একা একা কোথায়? ফুপ্পি, আরু, সব চেয়ে বড় কথা আদ্র ভাই আছে তো। একা লাগবে কেন?”
“ফুপ্পি রান্নাঘরে ব্যাস্ত, আরু পড়ছে ফুপ্পির রুমে। আর আদ্র ভাই তার কথা আর কি বলবো! সে এসে আমায় ব্যালকনিতে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আর একটু আগে এসে খাইয়ে দিয়ে গেছে। সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত। আদ্র ভাইয়ের সময় নেই আমার সাথে বসে গল্প করা…”
কিছু বলার আগেই পিছন থেকে কেউ চুল টান দিলো। মাথায় ব্যথা পেতেই আউচ করে উঠলাম। কোন ফাজিল রে! পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখালাম আদ্র ভাই ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বুকে হাত গুঁজে কপাল কুঁচকে বলল,

“আমার নামে নালিশ দেওয়া হচ্ছিলো? তা কি কি বলছিলি আমিও একটু শুনি”
আদ্র ভাইকে দেখে শুকনো ঢোক গিললাম। এতক্ষন যে তার নামেই নালিশ দিচ্ছিলাম। উনি সেগুলো শুনে ফেলেনি তো! তাহলে নিঃঘাত আমার কপালে শনি আছে।
“কই আমি কিছু বলিনি তো”
ফোনের ওপারে ওরা তিনজন আমার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে। ঈশিতা আপু বলতে নিলো,
“আসলে রোদ বলছিলো তুমি নাকি….”
“কিছুই বলিনি। আদ্র ভাই তুমি আমার ওষুধ গুলো নিয়ে এসো তো। খাওয়ার পড় একটা ওষুধও খাওয়া হয়নি। তুমি যাও ওষুধ আনতে”
আদ্র ভাই চোখ ছোট ছোট করে সন্দীহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। উনি যে আমার কথা বিশ্বাস করেনি সেটা ওনার মুখ ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
“কি হলো যাও”
আদ্র ভাই রুমে চলে গেল। আমি ফিসফিস করে বললাম,

“তোমরা পা*গল? আদ্র ভাই শুনে নিলে কি হতো? এই ঈশিতা আপু আবার বলতে যাচ্ছিলো আমায় বাঁশ দিতে। আদ্র ভাই আসলে কিছু বলো না প্লিজ”
আমার অবস্থা দেখে তিনজন হাসছে। ঈশিতা আপু হাসতে হাসতে বলল,
“ঠিক আছে বলবো না। তু্ই মন খারাপ করিস না”
আদ্র ভাই ওষুধ নিয়ে এসে খাইয়ে দিলো। অতঃপর তিনজন মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম। রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে। ওদের খাবার খাওয়ার জন্য নিচ থেকে ডাকতেছে। কল কেটে দিলো। কল কাটার সাথে সাথে আদ্র ভাই ঝুঁকে এলো আমার ওপর। এই লোকের আজকে কি হয়েছে? হুট্ হাট ঝুঁকে পড়ছে এভাবে? আদ্র ভাই চোখে চোখ রেখে বলল,

“আমার নামে নালিশ করছিলি তাই না? আমি এসে রুমে ঢুকেছি, তোর সাথে আড্ডা দেইনি, তোকে সময় দিচ্ছিনা। এগুলোই তো বলছিলি তাই না?”
ভীতু চোখে তাকিয়ে আছি আদ্র ভাইয়ের দিকে। উনি তার মানে আমার বলা সব কথাই শুনেছে। এখন আমার কি হবে?
“আমি কিছুই বলিনি”
“তাই?”
“হ্যাঁ”
ফিসফিস করে বলল,
“তাহলে আজকে সারারাত এখানেই থেকে যাই। দুজন মিলে গল্প করবো, তার সাথে একটু আকটু রোমান্স। ভালো হবে না? কি বলিস?”
চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,

“না, না। তুমি যাও। তোমার রুমে যাও, কাজ করো”
“এখন তো আমি কোনো মতেই যাবো না। বউ আমার নামে নালিশ জানিয়েছে আমি তাকে সময় দিচ্ছি না। এই অপবাদ তো মানা যায়না। তাই আজ আমি এই রুমেই থাকবো”
আমার মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। কান্না কান্না ভাব। এই বুঝি কান্না করে দিলাম বলে। আদ্র ভাই আমার রিয়েকশন দেখে উচ্চ শব্দে হেসে দিলো। উনার হাসি থামার নামই নিচ্ছে না। হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
“তোকে ভয়ে পেলে দারুন লাগে। অদ্ভুত সুন্দর লাগে”
একটু থেমে ফের বলল,
“তু্ই কি ভেবেছিস আমি এখানে থাকবো? আমি এতক্ষন মজা করছিলাম। ভেবেছিলাম তোকে ওষুধ খাওয়াতে এসে তোর সাথে খানিক ক্ষণ গল্প করবো কিন্তু যখন এসে শুনলাম তুই ওদের কাছে নালিশ দিচ্ছিস তখন ভাবলাম তোর সাথে একটু মজা করা যাক। তু্ই যে কান্নাই করে দিবি কে জানতো”
আদ্র ভাইয়ের চুল টান দিয়ে বলে উঠলাম,

“যাও বজ্জাত লোক তোমার জন্য আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তুমি জানো?”
“আমি তো সেটাই চেয়েছিলাম”
গাল ফুলিয়ে বললাম,
“বজ্জাত লোক!”
আদ্র ভাই আমার গাল ফুলাতে দেখে হেসে দিলো। আমিও হেসে দিলাম। দুজন হাসতে লাগলাম। হাসি থামিয়ে গল্পে মত্ত হলাম। গল্প করতে করতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেছে আমাদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। ঘড়ির কাঁটা বারো টার কাছাকাছি। আদ্র ভাই জিভে কামড় দিলেন,
“সিট”
“কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?”
“এইযে গল্প করতে করতে এতো রাত হয়ে গেল। তোর তো তাড়াতাড়ি ঘুমানো প্রয়োজন। চল তোকে রুমে নিয়ে যাই”
আদ্র ভাই আমায় রুমে নিয়ে এলে। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গাঁয়ে কম্বল টেনে দিলেন। আলতো করে কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
“ঘুমিয়ে পড়। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি”
মাথায় উষ্ণ পরশে কখন যে চোখ গেল আমি নিজেও জানি না। পাড়ি জমালাম ঘুমের দেশে।

শরীর এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। হাঁটতে তেমন কষ্ট হচ্ছে না। সকাল থেকে গুটি গুটি পায়ে সারাবাড়ি চক্কর দিয়ে বেরিয়েছি। ফুপ্পির সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছি পুরো দিন। রোশনি স্কুলে গিয়েছিল। এসেছে একটু আগে। আদ্র ভাই অফিসে গিয়েছে। উনি আমায় রেখে যেতে চায়নি কিন্তু আমিই উনাকে জোর করে পাঠিয়েছি। ফুফা শহরের বাহিরে উনিও যদি অফিসে না যায় তাহলে হবে? কাউকে না কাউকে তো লাগবেই। রুমে হাঁটা চলা করছি। হঠাৎ সমস্বরে দরজার কাছ থেকে শব্দ ভেসে এলো। ফিরে দেখি আমার তিন সাগরেত দাঁড়িয়ে আছে। ঈশিতা আপু, রোশনি আর ইভা। ওদের দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তিনজন একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার ওপর। ওদের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে কতদিন পড় আমাকে দেখেছে। তিনজনের চাপে পরে মনে হচ্ছে ভর্তা হয়ে যাবো।

“তোমরা সবাই? হঠাৎ এই সময়?”
“আমাদের রোদ সোনা আমাদের মিস করছে আর আমরা না এসে পাড়ি? কাল তোর কথা শুনে ভেবে রেখেছিলাম আসবো। তাই হুট্ করে চলে এলাম। তোকে সারপ্রাইজ দিতে। কেমন লেগেছে সারপ্রাইজ?”
উচ্ছাস নিয়ে বলে উঠলাম,
“অনেক অনেক ভালো লেগেছে। বাড়ির সবাই কেমন আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে”
ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম,
“ইভান ভাই কেমন আছে? আমি আসার পর আর ভাঙচুর করেছে?”
ইভা বলে উঠলো,
“তু্ই চলে আসার আধ ঘন্টা পর ভাইয়া ইরা মেয়েটাকে টানতে টানতে নামছিলো। মেয়েটা ভাইয়ার হাত থেকে নিজের হাত ছুটাতে চাইলে ভাইয়া চোখ রাঙিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। আম্মু পথ আটকে জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাচ্ছে?”

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১২

ভাইয়া বিপরীতে বলেছে, “আপদ দূর করতে যাচ্ছি”। এরপর রাতে না মেয়েটা আর না ভাইয়া কেউই বাড়ি ফিরেনি। কোথায় গেছে কি করছে কিছুই বলে যায়নি”
ইভান ভাইয়ের জন্য কিছুটা টেনশন লাগছে। যদিও উনি এর আগেও বাড়ির বাহিরে ছিলেন। তার কাছে এটা কোনো বিষয়ই না। কিছুটা খারাপ ও লাগছে তার জন্য। কিন্তু কেন সেটা জানি না। ইভান ভাইয়ের কথা মাথা থেকে বাদ দিয়ে মত্ত হলাম গল্পে।

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৪