উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৩৪
আফিয়া আফরোজ আহি
চারপাশে আনন্দের জোয়ার। সবাই ভেসে চলেছে জোয়ারের তালে তালে। মনে হচ্ছে বাড়িটার নাম “খান ভিলা”থেকেই মুহূর্তের মাঝে “আনন্দ ভিলা” হয়ে উঠেছে। প্রতিটা মানুষের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে হাসি। হাসি সরছেই না কারো মুখ থেকে। আড্ডা, দুস্টুমি, এর ওর পিছনে লাগা, লেগপুল সবই হচ্ছে। পুরো ছাদ জুড়ে আমাদের কাজিন মহল। ছাদে বসার জন্য বিছানা পাতা হয়েছে। ওরা আগে থেকেই করে রেখেছে রাতে না ঘুমিয়ে আড্ডা দিবে তাই। প্রথমে ড্রয়িং রুমে আড্ডা দেওয়ার কথা থাকলেও কিছু সংখ্যক মেহমান চলে আশায় ছাদটাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। কতো গুলো দিন পর সবাই একত্রিত হয়েছি তার হিসেব নেই। দিন না বছর হবে হয়তো। এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে আদ্র নামক মানুষটার জন্য।
রাত অনেক হয়েছে তাও আমাদের মাঝে ঘুমাতে যাওয়ার তাড়া নেই। সবাই মজে রয়েছে আড্ডায়। মেয়েরা মেহেদী পড়ছি, ঈশিতা আপু বেশ ভালো মেহেদী পড়াতে পারে সাথে ভাবিও। দুজন আমাদের সবাইকে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। শেষ রাতের দিকে সবাই ঝিমিয়ে পড়ছে। যে যার মতো যেখানে পেরেছে সেখানেই ঘুমিয়ে গেছে। ঘুম চোখের পাতায় জেঁকে বসেছে কিন্তু আশেপাশে বালিশ খুঁজে পাচ্ছি না। যে কয়টা বালিশ আনা হয়েছিল সবই ওরা নিয়ে নিয়েছে। উঠে বালিশ আনতে যাবো আদ্র ভাই হাত ধরে আটকে দিলেন।
“একা একা কোথায় যাচ্ছিস?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“বালিশ আনতে যাচ্ছি, তুমি তো জানো আমি বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না”
“বালিশ লাগবে না। দাঁড়া আমি ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি”
আদ্র ভাই দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসলো। আমায় ইশারা করলো তার উরুতে মাথা রেখে ঘুমাতে।
“বালিশ নিয়ে আসলেই তো হয়। তুমি এভাবে কতক্ষন বসে থাকবে? তোমার পিঠ, ঘাড় ব্যাথা করবে তো”
“তু্ই ঘুমা বাকিটা আমি বুঝে নিবো”
আদ্র ভাই জোর করে শুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, তো কখনো চুলের ভাঁজে বিলি কাটছেন। মাঝে মাঝে ঝুঁকে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিচ্ছে কপালে। সবাই ঘুমিয়ে কাঁদা। আর এইদিকে এই লোকের ভালোবাসা উতলে উতলে পড়ছে। কখন যে ঘুমিয়েছি নিজেও জানি না।
সকাল সকাল বাড়িতে আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। বিয়ের প্রিপারেশন তো আর কম না! যদিও আগে থেকেই অনেকটা করে রাখা হয়েছে। সবাই ছুটে চলেছে এদিক সেদিক। যার যার দায়িত্ব পালনে সে সে ব্যাস্ত। সবার ব্যাস্ততার মাঝে আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি। সকাল যে কখন হয়েছে সে খেয়ালও আমার নেই। কেউ আমায় ডাকেনি। ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে আবিষ্কার করলাম পুরুষালি আলিঙ্গনে, মানুষটার বুকে মুখ গুঁজে আছি। গায়ে চাদর জড়ানো। চাদরের মধ্যে থেকে মুখ বের করে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছি। সকাল হয়েছে আরো আগে। কিন্তু কেউ আমায় ডাকেনি কেন? নিজের অবস্থানের দিকে লক্ষ্য করতেই খেয়াল হলো আদ্র ভাইয়ের বাহুর ওপর মাথার রেখে ঘুমচ্ছিলাম, নড়াচড়ার ফলে যেন আঘাত না পাই সেজন্য উনি দুহাতে আগলে রেখেছেন আমায়। এক হাতের ওপর ভর দিয়ে তাকালাম মানুষটার দিকে। ঘুমন্ত অবস্থায় কতই না সুন্দর লাগছে। ইসস! এই কিউট বর টা আমার? ভাবতেই মনে দক্ষিণা হাওয়া দোল দিয়ে গেল। আদ্র ভাইয়ের কপালে এক গোছা চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। হাত বাড়িয়ে চুল গুলো ঠিক করে দেওয়ার বদলে আরো এলোমেলো করে দিলাম। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওনাকে দেখছি এমন সময় উনি ঘুমিয়ে থেকেই বলে উঠলেন,
“এভাবে দেখিস না, প্রেমে পড়ে যাবি”
হতোচকিয়ে উঠলাম। তারমানে উনি জেগে ছিলেন? রসিকতা করে বললাম,
“প্রেমে পড়লেই বা কি? বর তা তো আমারই। অন্য কেউ তো আর না! প্রেমে পড়লেও আমি পড়বো, ঝগড়া করলেও আমিই করবো”
“তাও ঝগড়া করবিই?”
“অবশ্যই!”
আদ্র তাই হুট্ করে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো। ভ্রু কুঁচকে বললাম,
“কাহিনী কি? তোমার লক্ষণ তো ভালো ঠেকছে না। রাতে ইচ্ছে করে আমায় তোমার কোলে শুতে বলেছিলে তাই না?”
আদ্র ভাই ফিসফিস করে বলল,
“তখন যদি বলতাম এভাবে ঘুমা তাহলে ঘুমাতি?”
“সবার সামনে এভাবে ঘুমাবো কিভাবে? আমার লজ্জা করবে?”
“আমার তো আর লজ্জা নেই। তাই তুই ঘুমিয়ে যেতেই নিচ থেকে চাদর এনে দুজনের গাঁয়ে দিয়ে দিয়েছি। ভালো করেছি না বল?”
তারমানে সকাল বেলা সবাই আমাদের এভাবে একসাথে দেখেছে? সব বড় ভাই বোনদের সামনে এই বেলাজ লোকটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছিলাম? এখন সবাই নিশ্চয় লজ্জা দিবে আমায়?
“ভালো না ছাই! বেলাজ লোক ছাড়ো আমায়”
নিজেকে আদ্র ভাইয়ের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বললাম “তুমি থাকো আমি গেলাম”
বলে চলে এলাম। নিচে আসতেই দেখা হলো ইভার সাথে। ইভা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মহারানীর ঘুম হলো অবশেষে? আমি তো আরো ভাবলাম দশটার আগে তোর ঘুম ভাঙবে না”
“তোরাই তো ডাকিসনি”
“ডাকবো কিভাবে? আদ্র ভাইয়ের কড়া নির্দেশ তার মিসেস এর ঘুম না হওয়ার অবধি তাকে ডাকা যাবে না। এতে যতো বেলাই হোক না কেন! আজকে আদ্র ভাইয়ের মতো একটা জামাই নেই বলে আরো দু ঘন্টা আগে উঠতে হয়েছে”
“পাবিও না, কারণ আদ্র ভাই একটাই আছে। আর সেটা আমার”
ভেংচি রুমে চলে এলাম। ফ্রেশ হতেই খাবার নিয়ে রুমে এলো ঈশিতা আপু। নিচে যাওয়ার জো নেই। পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে আত্মীয় স্বজন দিয়ে ভরে গেছে। বিয়েরটা বাড়িতে হওয়ায় সবাই এখানেই। খাওয়া শেষ হতেই শাওয়ার নিতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। বেরিয়ে এসে দাঁড়াতেই রুমে আম্মু প্রবেশ করলো। এই সময়ে আম্মুকে আমার রুমে দেখে খানিকটা অবাকই হলাম বটে। আম্মু এগিয়ে এসে হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে নিলো। চুল গুলো মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
“এইযে গোসলের পর ভালো মতো চুল মুছিস না? চুলের পানিতে অর্ধেক জামা ভিজিয়ে ফেলেছিস তারপর যে সর্দি লাগবে সে খেয়াল আছে? সব সময় কি আমি তোর চুল মুছে দেওয়ার জন্য বসে থাকবো? নিজের খেয়াল নিতে কবে শিখবি তু্ই?”
“তুমি থাকতে আমায় কেন নিজের খেয়াল রাখতে হবে?”
“কাল থেকে কি আমি তোর সাথে থাকবো?”
এই একটা প্রশ্নে আমি চুপ মেরে গেলাম। আম্মু পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
“কে খেয়াল রাখবে তোর? সময় মতো খাস না, চুল ঠিক করে মুছিস না, বিছানা, টেবিল সব এলোমেলো করে রাখিস। এগুলো সহ্য করবে কে?”
কথা গুলো শুনেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো কাঙ্খিত মানুষটার মুখশ্রী। যে আমার নির্দ্বিধায় সহ্য করে নিবে। হাসি মুখে মেনে নিবে আমার যতো পা*গলামি। আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
“কে আর সহ্য করবে? আদ্র ভাই আছে না? উনিই সহ্য করবে”
“আদ্র ছেলেটা আছে বলেই তো তোর মতো বাঁদরকে ওর গলায় ঝুলিয়ে আমি শান্তিতে আছি। নাহয় দেখা যেত এতদিনে আমি দেশান্তরী হতাম। আর ভাই কিরে? বিয়ে হয়েছে তোর ওর সাথে। এখনো ভাই ভাই করিস কেন?”
“কাজিনের সাথে বিয়ে দিলে এমনই হবে। ছোটবেলা থেকে যাকে ভাই মেনে এসেছি তাকে জামাই ভাবতে একটু তো সময় লাগবেই নাকি?”
“থা*পরে গাল লাল করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের বছর পেরিয়ে গেল এখনো শুধরালি না? আর এক বার ভাই ডাকতে শুনি, তারপর তোর হচ্ছে”
মুখটা ভার করে বললাম,
“তুমি আজকের দিনেও আমায় বকবে? চলেই তো যাবো। আজ অন্তত বোকো না”
কথাটা কাজে দিলো। এই এক কথায় আম্মু কিছুটা নমনীয় হলো। তবুও আগের রেশ কাটলো না।
“হাঁটিহাটী পা পা করে দশ মিনিটের রাস্তায় পেরোলেই চলে যাওয়া হয় না। প্রতিদিন নিয়ম করে দুবার দেখা দিয়ে যাবি। আর সেখানে গিয়ে বাঁদরামি কম করবি”
“তুমি যেভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমি কোনো এক দ*জ্জা*ল শাশুড় বাড়ি যাচ্ছি। আমি তো আমার ফুপ্পির কাছেই যাচ্ছি, তাই নো টেনশন”
“ফুপ্পির কাছে যাচ্ছিস এটাই তো টেনশন। পড়ে দেখা যাবে আপা তোকে আদর দিয়ে দিয়ে বাঁদর বানিয়ে ফেলল। তখন নিচে নামানো কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই আগেই সাবধান করে দিবো যেন অতি আদর না দেয়”
“আম্মু!”
এর মাঝে ঈশিতা আপু রুমে ঢুকলো। হাতে সুটকেস। বিছানায় সুটকেস টা রেখে খুলল। ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো মেরুন রঙের টকটকে লেহেঙ্গা। রঙটা যেন জ্বল জ্বল করছে। সাথে বাকি সব এক্সেসোরিজ। একদম আমার ড্রিম লেহেঙ্গা। মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল,
“কি সুন্দর লেহেঙ্গা! কে পছন্দ করেছে গো?”
ঈশিতা আপু হেসে বলল,
“কে আবার? তোর বর”
আমি জানতাম আদ্র ভাই ছাড়া এটা অন্য কেউ পছন্দ করতেই পারে না। মানুষটা আমায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে চিনে। আমার কি পছন্দ, কি অপছন্দ সবটাই তার মুখস্ত। রেডি হতে বসে পড়লাম। মাঝে একবার উনি এসে ঘুরে গেলেন। কাছে এসে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর জিজ্ঞেস করলো,
“লেহেঙ্গা পছন্দ হয়েছে?”
“অন্নেক”
হুট্ করে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল,
“তোকে পরিপূর্ণ বউ রূপে দেখার জন্য হলেও এই বিয়েটা জরুরী ছিলো”
দীর্ঘ সময় বসে থাকতে থাকতে কোমর ধরে এসেছে। আমি বেশিক্ষন একাধারে বসে থাকতে পারি না। অবশেষে সাজ শেষ হলো। সাজ শেষ হতেই উঠে দাঁড়ালাম। আয়নায় ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখছি। লেহেঙ্গাটায় নিজেকে বেশ ভালোই লাগছে। ঈশিতা আপু এগিয়ে এলো কাছে। আমায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। চোখের কোনা থেকে কাজল নিয়ে কানের পিছনে দিতে দিতে বলল,
“মাশাআল্লাহ! কারো নজর না লাগুক। কতো তাড়াতাড়ি দিন গুলো কেটে গেল তাই না? এইতো সেদিন মেঝ আম্মু হসপিটাল থেকে একটা পুতুল নিয়ে এলো। তাকে নিয়ে আমাদের মাঝে সেকি আনন্দ উল্লাস,কাড়া-কাড়ি,মা*রা*মা*রি। আমি, শুভ ভাইয়া, ইভান ভাই, রুদ্র, রিসাব, ইয়াদ, ইফাজ ভাইয়া, অভ্র ভাইয়া সেকি ঝগড়া করেছিলাম। অভ্র ভাই বলল,
“আমি সবার বড় তাই আমি আগে কোলে নিবো”
একে একে সবার কতো আল্হাদ পুতুলটাকে নিয়ে। দেখতে দেখতে সেই পুতুলটা কতো বড় হয়ে গেল। আজ নাকি তার আবার বিয়ে? ভাবা যায়?”
এর মাঝে ইভা রোশনি রুমে ঢুকলো। ইভা কাছে এসে বলল,
“আর এদিকে আমার বিয়ে হচ্ছে না। আমিও যে বড় হয়েছি সে খেয়াল কারো আছে?”
ঈশিতা আপু বিরক্ত হলো। তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো,
“সারাদিন বিয়ে বিয়ে করিস তাই তোর হচ্ছে না। একটু সবুর কর, সবুরে মেওয়া ফলে”
“তাহলে আজ থেকে আর বলবো না”
ইভার কাণ্ডে তিনজন হেসে দিলাম। এর মাঝে ডাক পড়লো নিচ থেকে। কাজী সাহেব এসে পড়েছেন। আমাদের বিয়ে পড়িয়ে তাকে অন্য জায়গায় যেতে হবে আরো বিয়ে পড়ানো বাকি আছে। নিচে নেমে দাঁড়াতে মাথার ওপর ফুলের ওড়না ধরলো ভাইয়ারা। সামনে রুদ্র আর রিসাব ভাইয়া, পিছনে ইয়াদ আর ইফাজ ভাইয়া। আমার পিছনে ইভা, রোশনি, ঈশিতা আপু। বাগানের কাছে আসতেই চোখ পড়লো গোল্ডেন রঙা শেরওয়ানি পরিহিত আদ্র সাহেবের ওপর। মানুষটাকে এই সাজে চমৎকার লাগছে। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মন মুগ্ধ করা হাসি। ওনার ওই হাসিতে ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি আমি। আশেপাশের মেয়েগুলো তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে লাভ নেই। জামাই তো আমারই। মনে মনে নিজেই হাসলাম। স্টেজের কাছে এগিয়ে যেতেই আদ্র ভাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো। দুহাতে লেহেঙ্গা তুলে রেখেছি। এক হাতের লেহেঙ্গা ছেড়ে ওনার হাত ধরতে যাবো তার আগে ইভা এসে সামনে দাঁড়ালো। হাত পেতে বলল,
“বউয়ের হাত পড়ে ধরবে। আগে আমাদের পাওনা দাও”
“তোদের পাওনা এলো কোথা থেকে?”
“আমাদের গেট ধরার টাকা”
আদ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে বলল,
“গেট কোথায়? ধান্দাবাজির জায়গা পাস না?”
ইভা রোশনি ফট করে কোথা থেকে একটা ফিতা এনে বেঁধে দিলো। রোশনি আর ইভা মিলে হুট্ করেই স্লোগান তুলল,
“টাকা দেও, বউ নেও”
ওদের সাথে তাল মিলালো আরো কয়েক জন। আদ্র ভাই পড়েছে ফ্যাসাদে। ওনার অবস্থা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে। ওড়নার নিচে মিটি মিটি হেসে নিলাম। আদ্র ভাই শেষে উপায় না পেয়ে টাকা দিয়ে দিলো। ইভা একটু কাচি এনে আদ্র ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলল,
“গেট তো ধরা হলো না। এটাকেই গেট ধরার ফিতা ভেবে কেটে ফেল”
আদ্র সাহেব এক মুহূর্ত সময় নিলো না। ঘ্যাচ করে ফিতা কেটে হাত বাড়িয়ে দিলো। এক হাতে লেহেঙ্গা তুলে আরেক হাত রাখালাম ওনার হাতের ওপর। আদ্র ভাই হাতের উল্টো পৃষ্ঠে চুমু এঁকে দিলো। ওনার এহেন কাণ্ডে লজ্জা পেলাম। আদ্র ভাই আমার নিয়ে বসিয়ে দিলো নির্দিষ্ট আসনে। নিজে যেয়ে বসলো অপর পাশের আসনে। আশেপাশে জাঁকজমকের অভাব নেই। আমি যেমনটা চেয়েছি ঠিক তেমনটাই হয়েছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান, বাচ্চারা এদিক সেদিক ছুটো ছুটি করবে, এক পাশে বড়রা থাকবে, সবাই এনজয় করবে বিয়েটা। ঠিক তেমনটাই হচ্ছে।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছেন। আগের সেই অনুভূতি। দুরু দুরু কাঁপতে থাকা বুক নিয়ে মানুষটাকের গ্রহণ করেছিলাম। জড়িয়েছিলাম নিজের সাথে। তখন জানতাম না মানুষটাকে গ্রহণ করতে পারবো কিনা। এক রাশ সংশয় জেঁকে ছিলো মনের কোণে। জানা ছিলো না ভবিষ্যত! কিন্তু আজ অনুভূতি ভিন্ন। আজ সজ্ঞানে মানুষটাকে নিজের করে নিবো। নিজেকে লিখে দিবো তার নামে।
কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে একবার তাকালাম মানুষটার দিকে। আদ্র ভাই চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখের ইশারায় ভরসা দিলেন। ওনার চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে কাঙ্খিত শব্দ খানা বলেই দিলাম। উনার চোখে খেলে গেল খুশির ঝলক। ওনাকে বলতে বললে ফট করেই বলে দিলো। ওনার এহেন কাণ্ডে সবাই হেসে দিলো। সমস্বরে বলে উঠলো,“আলহামদুলিল্লাহ”। আদ্র সাহেবের যেন তর সইলো না। ফটাফট মাঝের ফুলের পর্দা সরিয়ে দিলো। ঘুমটা তুলে এক ধ্যানে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“মাশাআল্লাহ”
উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৩৩
এগিয়ে এসে কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উনি। ওনার চাহনি দেখে লজ্জায় লাল,নীল, কমলা বর্ণ ধারণ করছি আমি। একেবার নিজের দিকে তাকালাম। সব ঠিক আছে তো! গাঁয়ে মেরুন রঙা লেহেঙ্গা, মেহেদী রাঙা হাত ভর্তি লাল রেশমি চুড়ি, গলায় জুয়েলারি, মুখে প্রসাধনীর ছোঁয়া। না সবই তো ঠিকই আছে। আদ্র ভাই মুগ্ধ কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আমার লাল টুকটুকে বউ। আমার রৌদ্রময়ী”