উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৭

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৭
আফিয়া আফরোজ আহি

“আপু তোমাকে আর ইভান ভাইকে দাদুমনি ডাকছে”
টেবিলে বসে আছি। আমার সামনে বই খুলে রাখা। বাতাসের প্রকোপে একের পর এক পৃষ্ঠা উড়ে যাচ্ছে নিজ তালে। সেই সাথে তালে তাল মিলিয়ে উড়ছে খুলে রাখা কেশ গুচ্ছ। এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে এসে পড়ছে। আমার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। আমি ব্যাস্ত জানালা পেরিয়ে আকাশ দেখায়। নীল রঙা আকাশ দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ রঙ তুলিতে খুব যত্ন নিয়ে আকাশটাকে এতো সুন্দর রূপে সাজিয়েছে যে চোখ ফেরানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকাশ দেখার সাথে মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে নানান চিন্তা ভাবনা। কলম হাতে দাঁতের মাঝে আটকে ধরে রেখেছি। একটু পড়ছি তো দুই মিনিট বই দেখছি আর বাকি দশ মিনিট এদিকে সেদিক তাকিয়ে আছি। নাহ, এখন আর যাই হোক আমার দ্বারা পড়াশোনা হবে না। এমন সময় ঠাস করে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলো রোশনি। হাপাতে হাপাতে উপরোক্ত কথাটা বলে উঠলো। কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

“হটাৎ ডাকছে যে!”
রোশনি বলা শুরু করলো,
“একটু আগে বড় আম্মু দাদুমনির রুমে গিয়েছিলো খাবার খাওয়াতে সাথে আমিও গিয়েছিলাম। তখন দাদুমনি জিজ্ঞেস করলো,
“বড় বউমা রোদ আর ইভান দাদুভাইয়ের আকদ কি হয়ে গেছে?”
বড় আম্মু ঘাবড়ে গিয়েছিলো। সাথে আমিও। কি বলবো বুঝতে পারছি না। একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। এমনি দাদুমনির শরীরের এই অবস্থা তার ওপর এসব শুনলে নিশ্চই আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। কি করবো কিছুই মাথায় আসছিলো না। এখন দাদুমনিকে মিথ্যা বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। নাহয় দেখা যাবে উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা অঘটন ঘটে যাবে। তাই বড় আম্মু বলেছে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আম্মা ওদের তো আকদ হয়ে গেছে”
এটা শুনে দাদুমনি মন খারাপ করেছে। মন খারাপ করে বলল,
“আমায় একবার ডাকলেও না?”
“আম্মা আপনি তো অসুস্থ। এই অসুস্থ শরীরে আপনি কিভাবে ড্রয়িং রুমে যাবেন বলুন তো? তাই আপনাকে ডাকিনি। তার ওপর হাই পাওয়ারের মেডিসিন খাওয়া আপনি সেই সময় ঘুমিয়েছিলেন। ডক্টর বলেছে আপনি ঘুমালে যেন না ডাকি। তাই আর ডাকিনি। আপনি মন খারাপ করবেন না”
“ও আচ্ছা। তা আমার দুই দাদুভাইকে একসাথে ডাকো তো। দুজনকে পাশাপাশি কেমন লাগে একটু দেখি। ওদের একসাথে দেখে আমি আমার চোখ জুড়াই। আমার দুই মানিক জোড়”
বড় আম্মু তাই তোমাদের ডাকতে আমায় পাঠিয়েছে”
একদমে কথা গুলো বলে রোশনি থামলো। বেচারি এক দমে এতো কথা বলে হাপিয়ে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। গ্লাসে পানি ঢেলে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম।

“তু্ই যেয়ে ইভান ভাইকে ডাক আমি আসছি”
রোশনি পানি খেয়ে গ্লাস আমার হাতে দিয়ে বলল,
“ইভান ভাইতো বাসায় নেই”
“ও আচ্ছা। চল”
হাফ ছেড়ে বাচলাম। ভালোই হয়েছে বজ্জাত টা বাসায় নেই। আমাকে ও আর তার মুখোমুখি হতে হবে না। বাঁচা গেল! রোশনির সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নামছি। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে ইভান ভাইয়ের বউ। তাকে দেখেও না দেখার ভান করলাম। এমন সময় ইভান ভাইয়ের আগমন হলো। না চাইতেও চোখ পড়ে গেল বজ্জাত লোকটার দিকে। সকালে একদম পরিপাটি রূপে বেরিয়েছিল মানুষটা। আর এখন একদম এলোমেলো, অগোছালো রূপে ফিরেছেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মানুষটা ক্লান্ত। ইভান ভাইকে দেখে মেয়েটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে এলো। ঢং করে ইভান ভাইয়ের বাহু ঝাকিয়ে বলল,

“ইভান দেখো পড়ে গিয়ে আমি ব্যথা পেয়েছি। হাত ছুঁলে গেছে, জ্বালা করছে। তুমি একটু ওষুধ এনে দিবে”
ইভান ভাই এক ঝটকা মেরে হাতে ছাড়িয়ে নিলেন। বিরক্তিকর চোখে তাকালেন মেয়েটার দিকে। ওনার তাকানোর ধরণ বলে দিচ্ছে তিনি কতটা বিরক্ত! এতটাই যদি বিরক্ত হতেন তাহলে বিয়ে করেছিলন কেন? দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“বি’ষ এনে দেই। খেয়ে অন্তত আমায় মুক্তি দেও”
মেয়েটা হেসে ধীর কণ্ঠে বলল,
“এতো সহজে তো তুমি আমার থেকে মুক্তি পাবে না মিস্টার ইভান। তোমায় পরিপূর্ণ রূপে ধ্বংস না করা অবধি আমার থেকে তোমার নিস্তার নেই”
ইভান ভাই রক্তিম চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। পারছে না চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেয়। হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে রেখেছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এর মাঝে আগমন ঘটলো বড় আম্মুর। আমাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আম্মা তোমাদের ডাকছে। আম্মা তোমাদের আকদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলবে তোমাদের আকদ হয়ে গেছে। এমনি আম্মার শরীর ভালো না। তারপর তোমরা এমন কিছু বলো না যেন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে”
বড় আম্মুর কথায় মাথা নেড়ে সায় জানালাম। একবার ইভান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আগে আগে দাদুমনির রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে দাদুমনি। আমাকে দেখে কাছে ডাকলেন। পাশে বসে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম। দাদুমনি আমার থুতনিতে হাত রেখে বললেন,
“সবে আকদ হয়েছে এখন কোথায় সারাদিন শাড়ি পড়ে ঘুরবি। আমার দাদুভাইকে পা*গল করবি, তা না করে কি সব পড়ে আছিস?”

এমনি সময় হলে কথাটা শুনে লজ্জায় মুড়িয়ে যেতাম। কিন্তু এখন লজ্জার বদলে বিরক্ত লাগলো।এর মাঝেই ইভান ভাই রুমে ঢুকলেন। দাদুমনির ওনার সামনেই এগুলো বলতে হলো? আর এই বজ্জাত টাই বা কেন এলো? একটু পরে এলে তার কি এমন হয়ে যেত! ইভান ভাই কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করলেন না। তার মুখভঙি দেখে মনে হচ্ছে উনি কথাটা শোনেনই নি। পকেটে হাত গুঁজে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালেন। গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“কেমন আছো দাদুমনি? শরীরের কি অবস্থা?”
“এইতো দাদুভাই ভালোই আছি। তোদের দেখে আরো ভালো লাগছে এখন। দুজন পাশাপাশি দাড়া তো আমি চোখ জুড়িয়ে তোদের দুটোকে দেখি”

আমি নরলাম না। মাথা নিচু করে বসে আছি। ইভান ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে আমার নেই।
“কিরে যাচ্ছিস না কেন? তোরই তো বর। যেয়ে পাশে দাঁড়া”
বর না ছাই! মাথা নিচু করে রেখেই ইভান ভাইয়ের থেকে এক হাত দদূরত্বে দাঁড়ালাম। দাদুমনি ধমক দিয়ে বলল,
“এমন ভাবে দারিয়েছিস মনে হচ্ছে ইভান তোর ভাসুর। কাছে এসে দাড়া”
না চাইতেও লাট সাহেবের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে হলো। তিনি চাইলে হয়তো আজকে সত্যি সত্যি আমরা কাপল হতাম। পাশাপাশি খুনসুটি করতে করতে দাঁড়াতাম। তখন আর জোরে করে পাশাপাশি দাঁড় করাতে হতো না। কিন্তু! ইভান নামক মানুষটা মুহূর্তের ব্যবধানে সব কিছু পাল্টে দিলো। শেষ করে দিয়েছে আমার সকল আশা। আঘাত করেছে আমার ছোট্ট হৃদয়ে। একবার ইভান ভাইয়ের চোখের দিকে তাকালাম। তিনি এমনটা না করলে আজ আমাদের দুস্টুমিষ্টি একটা গল্প হতো। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। দাদুমনি আমাদের দিকে তাকিয়ে মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে বলল,

“দুজনকে পাশাপাশি খুব সুন্দর মানিয়েছে। একদম রাজযোটক জুটি যাকে বলে”
দাদুমনির কথায় না চাইতেও হেসে দিলাম। রাজযোটক জুটি না ছাই! হাসিতে মিশে আছে তাচ্ছিল্য। ইভান ভাই হয়তো বুঝলেন আমার হাসির কারণ। তাই কিছু বললেন না। এর মাঝে রুমে ঢুকলো ইভান ভাইয়ের বউ। আমায় এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,
“এই মেয়ে সরো আমার জামাইয়ের পাশ থেকে”
পড়ে যেতে নিলে ইভান ভাই হাত ধরে ফেললেন। পড়তে গিয়েও এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
“কে তোমার জামাই মেয়ে? তুমি কেন রোদ দাদুভাইকে ধাক্কা দিলে?”
মেয়েটা ইভান ভাইয়ের বাহু জড়িয়ে ধরে বলল,
“এই তো! এটাই আমার জামাই”
“ওকে ছাড়ো? এসব কি বলছো তুমি? ইভান এই মেয়েটা কে?”
ইভান ভাই মেয়েটার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইছেন কিন্তু মেয়েটা ছাড়ছেই না। ইভান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

“ইরা হাত ছাড়ো নাহয় ভালো হবে না”
মেয়েটা ছাড়ার নামই নিচ্ছে না। দাদুমনি ফের জিজ্ঞেস করলেন,
“এটা কে ইভান? তোকে এভাবে ধরেছে কেন? এই মেয়ে পর পুরুষের হাত ধরতে লজ্জা করে না? হাত ছাড়ো”
ইভান ভাই কোনো মতে বললেন,
“এটা আমার বন্ধু দাদুমনি”
“মিথ্যা বলছো কেন ইভান? তুমি না আমার বর?”
“দাদুমনি তুমি ওর কথায় কান দিও না। ও মজা করছে”
আমি নীরব দর্শকের মতো ওদের নাটক দেখে যাচ্ছি। দাদুমনি আমায় বলল,
“তু্ই কিছু বলছিস না কেন? অন্য একটা মেয়ে এসে তোর জামাইকে জামাই বলছে আর তু্ই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস?”

আমার কি বা করার আছে? আমার কোনো অধিকার নেই মেয়েটাকে সরানোর। আর নাতো আছে ওকে কিছু বলার। তাই আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলাম। ইরা বলে উঠলো,
“তুমি মিথ্যা বলছো কেন ইভান? আমি না তোমার বউ? তুমি আমায় তোমার বন্ধু বলছো কেন?”
ইভান ভাই দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন,
“ইরা বাড়াবাড়ি করো না। যেটা বলছি শোনো”
রুমে বড় আম্মু, আম্মু, ছোট আম্মু, ঈশিতা আপু, প্রিয়ম ভাবি সবাই চলে এলো। বড় আম্মু ইরাকে ইভান ভাইয়ের থেকে সরিয়ে নিতে গিয়ে বলল,
“ইরা পাগলামো করে না মা। রুমে যাও”
ইরা চিৎকার করে বলল,
“আমি কোথাও যাবো না। আমি এখানেই থাকবো। আপনারা আমার থেকে আমার জামাইকে কেড়ে নিতে এসেছেন আমি আপনাদের সেটা করতে দিবো না। সরুন আপনারা”
ইভান ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“ইভান তুমি বলো তুমি আমার বর না? সেদিন না আমরা বিয়ে করলাম? কি হলো বলো?”
পুরো রুম নিশ্চুপ হয়ে গেছে। দাদুমনি অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“মেয়েটা যা বলছে সেটা কি সত্যি ইভান? তু্ই সত্যিই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছিস?”
সবাই অবাক নয়নে দাদুমনির দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম বার দাদুমনি ইভান ভাইকে নাম ধরে ডাকলেন। এমনি সময় ‘ইভান দাদুভাই’ বলে ডাকেন। ইভান ভাই একবার চোখ তুলে তাকালেন ফের মাথা নিচু করে নিলেন। একদম চুপ হয়ে আছেন তিনি। তার মুখে করো রা নেই। ঘরে থাকা সবাই মুখে কুলুপ এটে রয়েছে।
“কি হলো বল? কিছু বলছিস না কেন?”
ইভান ভাই তারপরও চুপ। দাদুমনি উত্তেজিত হয়ে গেল। বড় আম্মুকে জিজ্ঞেস করলেন,
“বড় বউমা মেয়েটা যা বলছে তা কি সত্যি?”
বড় আম্মু ইতি উতি করছেন। মুখ খুলে বললেন,

“আসলে আম্মা…”
“হ্যাঁ কি না?”
বড় আম্মু উপায় না পেয়ে মাথা নেড়ে সায় জানালেন। সেকেন্ডের ব্যবধানে দাদুমনি বুক চেপে ধরে ঢোলে পড়লেন। বিড়বিড় করে বললেন,
“এটা তু্ই ঠিক করলি না ইভান”
আর কোনো সারা শব্দ নেই। সবাই হুড়মুড় করে এসে ধরলো দাদুমনিকে। পানির ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। ইভান ভাই ইরা মেয়েটাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললেন,
“তোকে যেন আমার ত্রিসীমানার আশেপাশে না দেখি”
কিছুতেই দাদুমনির জ্ঞান ফিরছে না। ইভান ভাই এগিয়ে এসে বলল,
“তোমরা সরো। দাদুমনিকে এখনই হসপিটালে নিতে হবে। সরো”
সবাই সরে গেল। ইভান ভাই দাদুমনিকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। উনার পিছু পিছু আম্মু, বড় আম্মু, ছোট আম্মুও গেল।

আই সি ইউ’র সামনে সবাই দাঁড়িয়ে মিলে দাঁড়িয়ে আছি। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। দাদুমনির অবস্থা খুবই খারাপ। শ্বাস নিচ্ছে খুবই ধীর গতিতে। হসপিটালের করিডরে সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। শুভ ভাই গম্ভীর মুখে বেরিয়ে এলো। আদ্র ভাই এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“নানুমনির কি অবস্থা শুভ ভাই?”
“বেশি ভালো না। সবাই নামাজ পড়ে দাদুমনির জন্য দোয়া করো”

শুভ ভাই চলে গেলেন। ওনার আরো রোগী দেখা বাকি। ফুপ্পি কেঁদে উঠলো। বড় আব্বু, আব্বু, ছোট আব্বু সবাই গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। আম্মুরা ফুপ্পিকে সামলাচ্ছে। আমি এক পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছি। পাশে এসে কেউ দাঁড়ালো। আলতো হাতে আমার মুখ দুহাতের আজলায় তুলে নিলো। আমি আমার মতো কান্না করেই যাচ্ছি। আদ্র ভাই আলতো হাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। মাথাটা বুকে চেপে ধরে মিহি কণ্ঠে বলল,
“কান্না করে না রোদ সোনা। নানুমনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে দেখে নিস্। কান্না করে না”
আমার কান্না থামলে তো! আদ্র ভাই আমায় নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। সেই মুহূর্তে এলেন ইভান ভাই। মানুষটাকে দেখে মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল। বসা থেকে উঠে গিয়ে সোজা ইভান ভাইয়ের সামনে দাঁড়ালাম। রাগে গর্জে উঠে শুধালাম,

“কি সমস্যা? আপনি এখানে এসেছেন কেন?”
ইভান ভাই শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন,
“দাদুমনিকে দেখতে”
আমার কি হলো জানি না। এক ধাক্কা দিলাম ইভান ভাইয়ের বুকে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলাম,
“নাটক দেখাতে এসেছেন? আপনার নাটক দেখার ইচ্ছে কিংবা মুড আমাদের কারোই নেই। আপনি এখান থেকে যান। আপনার জন্যই এই সব কিছু হয়েছে। আপনি আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছেন। আপনার জন্য আজ দাদুমনি অসুস্থ হয়ে আই সি ইউ তে ভর্তি। সব কিছুর জন্য আপনি দায়ী। আপনি এখান থেকে চলে যান। চলে যান বলছি”

ইভান ভাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র ভাই এসে আমায় সামলালেন।
“এতো হাইপার হোস না রোদ। পড়ে তু্ইও অসুস্থ হয়ে যাবি”
“ইভান ভাইকে যেতে বলো। ওনাকে যেন আমি দাদুমনির আশেপাশেও না দেখি। যেতে বলো ওনাকে”
ইভান ভাই কোনো কথা বললেন না। মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলেন। একটু আগালে সামনে পড়লো ইরা। ইরা জিজ্ঞেস করলো,

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৬

“কেমন লাগছে মিস্টার ইভান?”
ইভান ভাই মুখ তুলে তাকালেন। রক্তিম তার চাহনি। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“আমার দাদুমনির কিছু হলে আমি তোকে মে’রে ফেলবো ইরা। একদম মে’রে ফেলবো”
ইরা পা উঁচু করে ইভান ভাইয়ের কানে ফিসফিস করে বলল,
“তোমার ধ্বংস তো মাত্র শুরু মিস্টার ইভান”

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৮