একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ২৬
রনীতা তুশ্মি
“কেমন লাগলো তোর স্পেশাল সারপ্রাইজ? ”
কেনীথের পৈশা*চিক হাসি আর রাগা*ন্বিত কন্ঠস্বরে আনায়া আঁতকে উঠলো। এসব কি তার সপ্ন নাকি সত্যি তা বিশ্বাস করতে পারছে না। চোখ মুখে যেমন বিস্ময় তেমন আ*তংকে ছাপ। আনায়া বিস্ময়ে ঘেরা চোখজোড়া একবার নিজের বাবাকে দেখছে তো একবার কেনীথকে। কপাল বেয়ে এখন ঘাম ঝরছে। খানিকটা সময় নিয়ে আনায়া নিজেকে তটস্থ করলো। কয়েকবার ঢোক গিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে তারেকের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
—“বাবা!বাবা!আমার কথা তুমি শুনতে পারছো? ও বাবা সাড়া দেও… বাবা তুমি….
কথা বলতে বলতেই আনায়ার কথা বলার শক্তি ফুরিয়ে গেলো। গলার মাঝে একদলা আ’তংক আর কষ্ট জমাট বেঁধে গিয়েছে। মেয়ে হয়ে কি করে নিজের বাবার এমন র*ক্তমাখা আঘা*তপ্রাপ্ত চোহারা সহ্য করা যায়। তারেকের ঠোঁটের একপাশ হতে অঝোরে রক্ত গ*ড়াচ্ছে। নিস্তেজ শরীরের নিস্তেজ চোখের পাতাগুলো বহু কষ্ট করেও পুরোপুরি খুলছে না। চোখ আর গালের পাশের র*ক্ত লেগে রইছে। সঙ্গে তারেককে দেখে মনে হচ্ছে যেন সে আনায়ার ডাকে সাড়া দিতে চেয়েও পারছে না। যা দেখে আনায়ার চোখে আচমকা জল জমে উঠেছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে নিজেকে কোনোমতে আটকিয়ে কেনীথের দিকে তাকিয়ে অনুনয় করে বলতে লাগলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
—“কেনো করছেন এসব? দোহাই লাগে আপনার…অন্তত আমার বাবার সাথে কিছু করবেন না। আমার বাবাকে ছেড়ে দিন৷ আপনার যত রাগ…যত ক্ষো*ভ… যত প্রতিশোধ নেওয়ার সবকিছু আমার সাথে নিন। প্রয়োজনে আপনি আমায় নির্দ্বিধায় মে*রে ফেলুন, আমি কিছু বলবো না। তবুও আমার বাবাকে কষ্ট দিবেন না প্লিজ! উনি অসুস্থ…
শেষের কথাটুকু আনায়া ক্রন্দনরত সুরে খানিকটা চিৎকার করে বললো। ঠিক তখনই কেনীথ তারেকের চুলের মুঠিটাকে আরেকটু শক্ত করে ধরে ঘাড়টাকে একদম সোজা করালো। এবং আনায়ার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
—“নাহ…! তোকে মে*রে ফেলার জন্য তো আমি তোকে এখানে নিয়ে আসিনি। তুই ম*রলে সব কাহিনিই শেষ। যে কষ্টটা আমি পেয়েছি সেটা তুই কি করে পাবি? আর নিজের বাপের জন্য এতো ন্যাকা কান্নার কোনো প্রয়োজন নেই। এসব তোর বাপের প্রাপ্য। আর এই সিচুয়েশনের জন্য শুধুমাত্র তুই দায়ী আর কেউ নয়। নিজের বাপের কপালে এইসব তুই নিজেই টেনে এনেছিস!”
এই বলেই কেনীথ একটা পৈ*শাচিক কান্ড করতে উদ্বেগ হলো। সে তারেকের মাথাটা ছেড়ে দিয়ে তারেকের পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো। আনায়ার দিক হতে সম্পূর্ণ উল্টো মুখী হয়ে তারেকের মুখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে মুচকি হাসলো। যে হাসি ঠোঁটে একভাষা প্রকাশ করলেও কেনীথ চোখের ভাষায় যেন ছিলো ভ*য়ংকর কিছু।
এদিকে আনায়া কিছুই বুঝতে পারছে না। কেনীথ সেখানে বসে বসে কি করছে তাও ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না। আনায়া অস্থির হয়ে পড়লো। সে কয়েকবার জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলার পর কেনীথকে ডাকতে লাগলো আর তারেককে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করতে লাগলো। আর কেনীথ শুধু আনায়ার কথা শুনে কিছুটা সাইড হলো যাতে আনায়া তার বাবা আর কেনীথ ; উভয়ই কে ঠিকঠাক দেখতে পারে।
কেনীথের হাভভাব আনায়া ঠিক বুঝতে পারছে না। ও কি করতে চাইছে তাও তার মস্তিষ্কের আন্দাজের বাহিরে। এরই মাঝে কেনীথ তারেকের ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলটাকে একহাতে ধরে অন্যহাতে থাকা ধারালো প্লায়ার্সটাকে আঙ্গুলের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।
আনায়া কেনীথের কাজকর্ম দেখে স্তব্ধ হয়ে পড়লো। ও অস্থিরতায় বারবার ঢোক গিলছে আর একবার নিজের বাবাকে তো একবার কেনীথকে বিস্ময়ের চোখে দেখছে। এদিকে তারেক মাথা খানিকটা কাত করে কাঁপতে কাঁপতে আ*তংকিত চোখে নিজের আঙ্গুলের দিকে চেয়ে রইছে। যেহেতু তারেক পুরোপুরি সুস্থ নয় সেহেতু এখনো সে শারীরিক ভাবে পুরোপুরি সক্ষম নয় সঙ্গে তার বাকশক্তিও স্পষ্ট নয়। যে কারণে তার সাথে খুব খারাপ কিছু হলেও স্পষ্ট সুরে চিৎকার করা ছাড়া তার করার মতো আর কিছুই নেই।
—“কি… করতে… চাইছেন আপনি? আমার বাবার সাথে কিছু করবেন না প্লিজ।”
আনায়া নিজের হাত পা বাঁধা বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জোড়ে জোড়ে নড়াচড়া করতে করতে কথাটা কেনীথের উদ্দেশ্য ক্রন্দনরত সুরে অনুনয় করে বললো। কিন্তু এতে কেনীথের কোনো হেলদোল হলো না। বরং কেনীথ আনায়ার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসলো। অতঃপর পুনরায় নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তারেকের আতংকিত চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তারেকের আঙ্গুলটাকে প্লায়ার্সের মাঝে স্থাপিত করলো।
এটা দেখা মাত্রই আনায়ার চোখ থেকে আকস্মিকভাবে পানি ঝড়লে লাগলো এবং সে কেনীথের দিকে বিস্মিত চোখে চেয়ে বলতে লাগলো,
—“না…না…না…এমন কিছু করবেন…”
আনায়ার কথাটুকু আর সম্পূর্ণ হলো না বরং তার আগেই কেনীথ নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে প্লায়ার্সে জোরে চাপ দিতেই তারেকের তাজা রক্তযুক্ত কাঁটা কনিষ্ঠ আঙুলটা সরাসরি ফ্লোরে ছিটকে পড়লো।
—“বাবা…….!”
এটা দেখা মাত্রই আনায়া আকস্মিকতায় জোরে চিৎকার করেই স্তব্ধ হয়ে পড়লো। তার পুরো শরীর অনবরত কাঁপছে। বিস্ময়ে ঘেরা চোখ জোড়া হতে অনবরত পানি ঝড়লে। নিজের বিস্মিত চেহারার উন্মুক্ত মুখটাও আর বন্ধ হচ্ছে না। আর না সেখান হতে একটাও শব্দ বের হওয়ার মতো শক্তি রয়েছে তার।
অন্যদিকে চোখের সামনে নিজের হাতের আঙ্গুলটাকে ছিটকে পড়াটা তারেকের নজর হতেও এড়িয়ে গেলো না। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটায় তারেক প্রথমে আনায়ার মত বিস্ময়ের চোখে এমন কান্ড হতে দেখলেও, মূহুর্তেই যখন তার মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে উঠলো। তখন সে প্রচন্ড ব্যাথায় ছটফট করতে লাগলো। সঙ্গে তার অস্পষ্ট ভাষায় চিৎকার করতে থাকলো।
কিন্তু এতোকিছুতে কেনীথের মনে কোনো আলাদা অনুভূতি তৈরি হলো না। তার যেন তারেক আর আনায়ার এই কষ্ট দেখেই শান্তি হচ্ছে। কিন্তু এই সামান্য শান্তিতে তো কেনীথের মন ভরবে না। সে এই পৈ*শাচিক শান্তি আরো বেশি উপভোগ করতে চায়। যে কারণে সে শুধু একটা আঙ্গুল কেটেই থামলো না বরং একে একে ডান হাতের আরো চারটি আঙ্গুল নিরদ্বিধায় কেটে ফেলো। দ্বিতীয় বার একই কাজ করার পর আনায়া আবারও নিজের বাবার জন্যে ছটফট করে কেঁদে ভাসালেও, নিজের বাবার এমন করুন অবস্থা নিজ চোখে দেখার মতো মানসিক কিংবা শারিরিক শক্তি আর জোগালো না। আনায়া ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়লো তারেকের ওমন ছটফটানি আর বিভৎস হৃদয়বিদারক চিৎকারে। যে কারণে আনায়া একটা সময় তীব্র কষ্টে ছটফট করতে করতেই নিজের বাবার হৃদয়বিদায়ক করুন পরিণতিকে নিজের চোখে ভাসমান স্মৃতি বানিয়ে জ্ঞান হারালো।
আনায়া চেয়ারের মাঝে চোখ বুজে অজ্ঞান হয়ে ঢুলে পড়তেই তারেক নিজের সকল ব্যাথা উপেক্ষা করে আনায়ার দিকে ইশারা করে মুখ নাড়িয়ে অস্পষ্ট ভাবে কি যেন সব বলতে লাগলো। সঙ্গে নিজের কাটা হাত নাড়িয়ে আনায়ার দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত হতে লাগলো। জীবনে যে যতই অপকর্ম করুক না কেনো একজন বাবা নিজের শেষ সময়েও নিজের আগে সন্তানের কথা ভাবতে বাধ্য। আর যেমনটা তারেকের সাথে হচ্ছে।
একসময় হয়তো সে অনেকের সাথেই অন্যায় করেছে, নিজের সন্তানকে হয়তো নিজের আ*ক্রোশের শিকার বানিয়েছে। কিন্তু শেষ জীবনে একটু হলেও তার অপকর্মে তিক্ত অনুভূতিতে সে অনুশোচনা করেছে। নিজের মেয়েদের এতো যত্ন-আত্তি, ভালোবাসায় সেও হয়তো বাকিটা জীবন ভালো হয়েই থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু ভাগ্য তাকে সে সুযোগ দেয়নি। যত যাই হোক, যার যার কর্মফল একদিন সবাই ভোগ করবে। হয়তো সেটা পরকাল কিংবা ভাগ্য বেশি খারাপ হলে তা দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়।
আর হয়তো তারেকের ভাগ্য একটু বেশিই খারাপ ছিলো বিধায় এখন তার কর্মফল বি*ভৎস ভাবে দুনিয়াতেই ভোগ করতে হবে। আজ অবশ্য তারেকের সেই সপ্নের কথা মনে হচ্ছে। অনেক আগে থেকেই আনায়াকে নিয়ে সে অদ্ভুত সব সপ্ন দেখতো। যার ফলে সে বাস্তবের আনায়া আর তার সপ্নের আনায়াকে গুলিয়ে ফেলতো। সবসময় তার সপ্নের মূল গল্পই ছিলো আনায়ার হাতে তার ধ্বং*স।
আজ কেনো যেন মনে হচ্ছে সে আজকের দিনের জন্যই হয়তো আগাম ভাবে সেই সপ্নগুলো দেখছিলো। কেনীথ সরাসরি তারেককে নিজের পরিচয় না দিলেও, তারেক খুব ভালো করেই কেনীথকে চিনে ফেলেছে। অবশ্য তার কল্পনার বাহিরে ছিলো যে এই ছেলে আবারও কোনোদিন এভাবে ফিরে আসবে। তাও কিনা তার মেয়ের জীবনের সাথে পুনরায় জড়িয়ে। তারেক আজ নিজের পরিস্থতির জন্য আনায়াকে সরাসরি দোষারোপ না করলেও কোনো না ভাবে যে সবকিছুকে পুনোরায় সংযুক্ত আনায়াই করেছে। আর যে কারণে ধরা যায়, তারেকের সপ্নের অর্থ ভুল কিছু ছিলো না। আনায়ার জন্যই তাকে এবার নিজের কর্মফল দুনিয়াতেও ভোগ করতে হবে।
কেনীথ তারেকের এমন হাবভাবে নিজের কাজকে স্থগিত রাখলো। এবং তারেকের ইশারা মতো পেছনে ফিরে আনায়ার অবস্থা দেখে হঠাৎ সবকিছু ফেলে দাঁড়িয়ে পড়লো। আনায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত পায়ের বাঁধন গুলো খুলে দিলো। এবং খুব দ্রুত নিস্তেজ শরীরের আনায়াকে পাজকোলে তুলে নিয়ে আনায়ার বি*ধ্বস্ত অচেতন মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বিড়বিড়য়ে বললো,
“আমি তো তোকে পুরো পিকচারটা লাইভ দেখাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই তো যাস্ট ট্রেইলার-ই সহ্য করতে পারলি না! ইট’স ওকে, আমি না হয় তোর জন্য পুরো পিকচার ভিডিও করে রেখে দেবো। এরপর না হয় দুজনে মিলে একসাথে দেখবো, ওক্কে বেবস!”
—“ভি…ভা…ন…!”
আনায়াকে নিয়ে কেনীথ সেখান থেকে প্রস্তান করার পথেই আচমকা তারেকের অস্ফুটস্বরে বলা ডাকটা শুনেই আচমকা ওর পা জোড়া থেমে গেলো। এবং সে আনায়াকে নিয়ে পুনোরায় পেছনে ঘুরে তারেকের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। তারেককে দেখে মনে হচ্ছে ও প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে কেনীথের দিকে নিজের চোখজোড়া খুলে তাকিয়ে রইছে। যেন ওকে কিছু বলতে চায়। হঠাৎ তারেকের কথা শুনেই কেনীথ যথেষ্ট অবাক হয়েছে তবে সে তা তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকি হেসে তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
আর খুব দ্রুতই কেনীথ আনায়াকে নিয়ে তারেকের সামনে উপস্থিত হয়ে তার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
—“বাহ!শেষ সময়ে মুখে বুলি ফুটেছে দেখি। আবার আমাকেও দেখি ভুলিসনি। ঠিকই চিনতে পেরেছিস। বাট সরি, এখন আর তোর বাঁচার কোনো অপশন নেই। তুই যেটা করেছিস তার ফল আজ তুই পাবিই। হোয়াট এভার, কি বলতে চাস সেটা বল?”
—“আ…মার মে…য়েকে ভু…লেও কিছু… করো না। এসবে…ওর… কো…নো দোষ নেই…”
আজ এতো বছর পর অস্ফুটস্বরে এতোটুকু বলেই তারেক হাপিয়ে গেলো। অন্যদিকে তারেকের কথা শুনে কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
“যাস্ট এটা বলার জন্য এতো কষ্ট করলি? আর কি বলছিস তুই…তোর মেয়েকে যেন কিছু না করি? ওর কোনো দোষ নেই? ইউ নো হোয়াট, আজ তোর এই পরিস্থিতির জন্য একমাত্র তোর মেয়েই দায়ী! নয়তো আমি তো তোকে ছেড়েই দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু ঘুরেফিরে তোর ভাগ্য ঠিকই আবারও মৃ*ত্যুর পথ খুঁজতে আমার কাছে চলে এসেছে।”
—“দয়া… করে আ…মার মে…য়েকে কিছু ক…রো না। ওর সত্যিই কোনো দোষ নেই। সব… দোষ আমার, যত শা…স্তি সব কিছু… আমাকে দেও।”
—“বাহ, মেয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা? কিন্তু….! সত্যি বলতে এখন পর্যন্ত ওকে আমি কিছুই করিনি। বাট নাউ আই হ্যাভ ডিসাইডেড দ্যাট, আই উইল বি ফা’/কিং হার।”
কথাটা বলা মাত্রই কেনীথ তারেককে উদ্দেশ্য করে চোখ মা*রলো। এবং আনায়াকে নিয়ে সেখান থেকে পুনরায় চলে যেতে নিলে তারেকের ছটফটানি দেখে থেমে যায়। এবং তারেকের উদ্দেশ্যে তাচ্ছিল্য আর রাগের সাথে আবারও বলতে থাকে,
—“জানি কষ্ট হবে,মেয়ের জন্য ছটফট করবি। কিন্তু কি করবো বল! তুই আমার মায়ের মৃ*ত দেহটাকে পর্যন্ত নিস্তার দিস নি। আর সেখানে আমার এত্তো সুন্দর একটা বউ থাকতে…,কিছু না করেই কিভাবে ছেড়ে দেই?”
কেনীথ কথা বলতে বলতেই একবার আনায়ার অচেতন মুখের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। এদিকে তারেক ওর দিকে বিধ্বস্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আচমকা হাসতে লাগলো। যার হাসির ফাঁকে উন্মুক্ত হতে থাকা দাঁত গুলোও এখন র*ক্তাক্ত। আর তারেকের এমন অসময়ে আজব হাসি দেখা মাত্রই কেনীথ কিছুটা অবাক হলো। সঙ্গে তার মেজাজও খানিকটা বিগড়ে গেলো। এই লোকটির কষ্টতে কেনীথ শান্তি চায় সেখানে এ কেনো আচমকা হাসছে। কেনীথ খানিকটা কঢ়া কন্ঠে বলতে লাগলো,
—“হঠাৎ হাসছিস কেনো? মাথার তার ছিঁড়ে গিয়েছে?”
তারেক কেনীথের কথায় নিজের হাসি থামালো না। বরং হাসতে হাসতেই কেনীথের উদ্দেশ্য ফিসফিস করে কিছু কথা বললো।
—“……………………..
যেটা শোনা মাত্রই কেনীথ কিছুটা অবাক হলেও পুনরায় নিজেকে স্বাভাবিক করে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসতে হাসতে বললো,
—“লাইক সিরিয়াসলি? তুই এমন কিছুর সপ্ন দেখছিস? তোর মেয়ে আমার বিয়ে করা বউ,তার মানে এই না যে ওর সাথে আমি আমার পুরো জীবনটা কাটিয়ে দেবো। আর তুই যে সপ্ন দেখছিস তা কখনোই সম্ভব নয়। তোর সাথে আজ যা হচ্ছে সেটা তোর কর্মফল। এমনটা কোনোদিনও আমার সাথে হবে না। কারণ আমি এমনটা হতে দেবো না।”
কেনীথের রাগান্বিত হয়ে বলা কথাগুলোতেও যেন তারেকের হাসি থামলো না। যা দেখে কেনীথের রাগটা আরো বাড়তে লাগলো। তবে এই মূহুর্তে আনায়াকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়াটা বেশি জরুরি। তাই মাথাটা আর গরম করার ইচ্ছে তার নেই। যে কারণে কেনীথ তারেকের উদ্দেশ্যে বাঁকা হেসে বললো,
—“যত পারিস হেসে নে। তোকে তো আমি একটু পর দেখে নিচ্ছি । তুই মৃ*ত্যুর আগে নিজের জীবনটা এনজয় কর আর আমি না হয় তোর মেয়েকে এন…জয়…
কেনীথ নিজের কথাটুকু আর সম্পূর্ণ না করে ঘাড় কাত করে বাঁকা হাসলো। এবং সেখানে আর এক মূহুর্তেও দাঁড়িয়ে না থেকে আনায়াকে নিয়ে নিজের সেকেন্ড সিক্রেট দরজার দিকে রওনা দিলো।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে এসেছে। নির্জন এলাকা হওয়ায় স্বল্প রাতকেও গভীর মনে হয়। আনায়ার নিস্তেজ শরীর বিছানায় পড়ে রইছে। বেশিক্ষণ হয়নি তার কেনীথ তাকে রুমে এনে শুইয়ে দিয়েছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর আনায়ার জ্ঞান ফিরলো। এরমাঝে কেনীথ তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা একবারও করেনি। যাস্ট এনে বিছানায় শুইয়ে রেখেছে। এমনকি তখন যে ভিজে পুরো চুপসে গিয়েছিলো, এখনও ঠিক সেই জামাকাপড়েই একই অবস্থাতেই রয়েছে।
আনায়ার জ্ঞান ফিরতেই ও ধীরে ধীরে চোখ খুলে চারপাশটা দেখতে লাগলো। এখন সে আর আগের রুমটাতে নেই বরং এটা কেনীথের সেই বিশাল নিজস্ব রুমটা। চারপাশে এখন অবশ্য যথেষ্ট লাইটের জন্যা আলো রয়েছে। এখন রুমটা আর লাল আলোয় অন্ধকার করে রাখা নয়।
আনায়ার মস্তিষ্কে আচমকা তার বাবার কথা সরণ হতেই চমকে শোয়া থেকে উঠে বসলো। এরপর সেসব কল্পনা না সত্য এসবের চিন্তা ভাবনা রেখে সরাসরি বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে পৌঁছে গেলো। আশেপাশে কে আছে না আছে সেটা দেখারও সময় হলো না তার। আনায়া যখন দরজা বন্ধ পেয়ে পাগলের মতো জোরে জোরে ধাক্কাধাক্কি করে শব্দ করতে ব্যস্ত ঠিক সেই মূহুর্তে পেছন থেকে কেনীথের আওয়াজ এলো।
—“এখন আর বাহিরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ড্রেস চেঞ্জ করে ঘুমিয়ে যা। ক্ষিধে পেলে খেয়ে নিতে পারিস।”
কেনীথের কথা শোনা মাত্রই আনায়া পিছনে ফিরলো। দূরে সোফার একপাশে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বসে রইছে কেনীথ। আনায়া তার দিকে ফেরা মাত্রই কেনীথ চোখ খুলে সোজাসুজি হয়ে বসলো। এদিকে আনায়া দরজা থেকে সরে গিয়ে কেনীথের দিকে এগোতে লাগলো। আর কেনীথও আনায়াকে দেখা মাত্রই বসা থেকে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজলো। আপাতত কেনীথের পরনে শুধু কালো রংএর টাওজারটাই রয়েছে।
আনায়া কেনীথের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে তীব্র আক্রোশপ্রসূত মনোভাব পোষণ করে বলতে লাগলো,
“আমার বাবা কোথায়? আপনি কি করেছেন ওনার সাথে। সত্যি করে বলুন কি করেছেন আপনি? কথা বলছেন না কেনো? কথা বলুন…আমি আপনাকে শেষ করে ফেলবো…”
কথা বলতে বলতেই আনায়ার চোখ হতে অঝোরে পানি ঝড়তে লাগলো। অন্যদিকে কেনীথ আনায়া এহেন অবস্থায় তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
“বাপ মেয়ে মিলে তো আমায় সেই কবেই শেষ করে দিয়েছিস। আরো কি শেষ করতে চাস?”
আনায়া কেনীথের কথাকে অগ্রাহ্য করে দাঁত খিঁচে বললো,
“কি চাই আপনার? এবার তো বলুন কোন পাপ করেছিলাম দেখে আজ এসব করছেন আপনি? আমাদের সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক? এক প্রশ্ন করতে করতে হাপিয়ে গিয়েছি আমি এবার তো কিছু বলুন!”
আনায়া ক্রন্দনরত অবস্থায় চিৎকার করে কথা বলে থামলো। অন্যদিকে কেনীথ স্বাভাবিক চাহনিতে আনায়াকে দেখছে। মূহুর্তেই কিঞ্চিৎ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কেনীথ আনায়ার দিকে এগোতে লাগলো। হঠাৎ কেনীথকে এভাবে অগ্রসর হতে দেখে আনায়া কয়েক পা পিছিয়ে ভীতিগ্রস্ত হলো ঠিকই তবে কন্ঠে যথেষ্ট তেজ রেখে বলতে লাগলো,
“এদিকে আসছেন কেনো? দূরে থাকুন আমার থেকে!”
তবে আনায়ার কোনো কথা কেনীথ শুনলো না। সে যথারীতি আনায়ার দিকে নিস্তব্ধ চাহিনি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে আনায়া কিঞ্চিৎ কয়েকবার ঢোক গিলে পেছনে যেতে যেতেই আচমকা কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলো। আনায়া বুঝতে পারলো সে পেছাতে পেছাতে দেওয়ালের সাথে লেগে গিয়েছে। আনায়া দ্রুত গতিতে সেখান থেকে সরে আসতে নিলে তা আর সম্ভব হলো না। বরং তার আগেই আচমকা কেনীথ তার মুখোমুখি এসে হাত দুটো খপ করে ধরে ফেললো। আনায়া বিস্ময় আর রাগের সাথে কেনীথকে কিছু বলার আগেই কেনীথ তার হাতদুটো দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে আনায়ার মাথার কাছে উঁচু করে চেপে ধরলো। আনায়া এদিকে কেনীথের বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে অস্থির হয়ে পা ছোটাছুটি করতে চাইলে কেনীথ নিজের পায়ের সাহায্যে আনায়ার পা দুটো আঁটকে ফেললো।
আনায়া এখন পুরো মূর্তির মতো দেওয়ালের সাথে লেপ্টে রইছে। এদিকে আবার কেনীথ যতটা পারলো আনায়ার সম্পূর্ণ কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো। শুধু এতেই থামলো না বরং ধীরে ধীরে নিজের মুখটা আনায়ার মুখের কাছে অগ্রসর করতে লাগলো। এটা দেখা মাত্রই আনায়া নিজের মাথাটা ঘুরিয়ে দেওয়ালের দিকে একপাশ করে আকস্মিকভাবে হু হু করে কেঁদে ফেললো।
—“প্লিজ ছেড়ে… দিন আমায়…”
আনায়ার অনুনয় কিংবা কান্না, কোনোকিছুতেই কেনীথ মোটেও থামলো না। সে যথারীতি আনায়া যে পাশে মুখ ফিরিয়ে রইছে ঠিক তার বিপরীত পাশে উন্মুক্ত গলায় নিজের মুখ ডুবালো। আচমকা গরম নিশ্বাস গলায় পড়তেই আনায়ার সমগ্র শরীরে শিহরিত হলো। তবে তা কেনীথের প্রতি প্রচন্ড বি*দ্বেষ আর তীব্র ঘৃ*ণা সহিত অনুভূতি নিয়ে।
কিছুক্ষণ একই ভাবে থাকার পর কেনীথ আনায়ার গলায় সম্পূর্ণ ভাবে নিজের মুখ গুঁজে রাখা অবস্থাতেই আনায়ার উদ্দেশ্যে শিহরণ জাগানো কন্ঠে বলতে লাগলো ,
—“আজ যদি সম্পূর্ণ রুপে তোকে চাই, তবে হবি আমার?”
কেনীথের কথার উদ্দেশ্য আনায়া প্রথমে ঠিকঠাক বুঝলো না। তবে আপাতত তার চোখ হতে অঝোরে পানি ঝাড়তে থাকা কান্না থামিয়েছে। এদিকে কেনীথ আনায়ার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আনায়ার গলা হতে মুখ তুললো। এদিকে আনায়াও এবার ঘুরিয়ে রাখা মুখটা সোজাসুজি করে ফেলেছে। আর এতেই কেনীথ এবার আনায়ার মুখের দিকে নিজের মুখ এগোলো।
আনায়ার পলকহীন বিধ্বস্ত চোখের দিকে কেনীথের প্রগাঢ় অভিলাষী চোখের চাহনি। যে চাহনিতে হাজার কথার সংমিশ্রণ ঘটলেও সামান্য কিছু বোঝার সাধ্য কারো নেই। একে অপরের নিশ্বাস প্রতিনিয়ত একে অন্যের উপর আঁচড়ে পড়ছে। দূরত্বটাও ছিলো খুব ক্ষীণ। তবে কেনীথ সেই দূরত্বটাকে আরেকটু কমিয়ে দিতে আচমকা নিজের ঘোরলাগা দৃষ্টি নিয়ে আনায়ার মুখের দিকে অগ্রসর হলো।
কেনীথ কি করতে চাইছে তা ঠিকই আনায়ার বোধগম্য হলো। যে কারণে কেনীথ ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে আনায়া এক অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে ফেললো।যার মূখ্য উদ্দেশ্য অবশ্য কেনীথের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়াটাই ছিলো। কেনীথের সব প্রত্যাশায় পানি ঢেলে আনায়া আচমকা নিজে থেকেই কেনীথের গলায় নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো। তবে এই ঠোঁট স্পর্শ করানোয় না ছিলো কোনো ভালোবাসা আর না ছিলো কোনো প্রণয়াকাঙ্ক্ষা। শুধু বরাবরের মতো কেনীথের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আর রাগ, ক্ষো*ভ।
আনায়া শুধু ঠোঁট ছোঁয়ায়নি বরং নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে কেনীথের গলার একটা অংশ জোরে কা*মড়ে ধরেছে। যেন সেই অংশটুকু তার কামড়ে ছিঁড়েই ফেলবে। এদিকে কেনীথ এতে বিন্দুমাত্র নড়চড় করলো না। যেভাবে শক্ত হাতে আনায়ার হাত ধরে রেখে তার খুব কাছে ছিলো ঠিক সেভাবেই রইলো। শুধু আনায়ার ক্ষো*ভ যখন খুব বেশি তীব্র হলো ঠিক তখনই কিঞ্চিৎ চোখমুখ কুঁচকে দাঁত খিঁচে ফেললো। তবে মূহুর্তেই নিজেকে পুরোপুরি সামলে নিলো।
এদিকে আনায়া থামলো না যতক্ষণ পর্যন্ত আনায়ার কামড়ে দেওয়া অংশ হতে র*ক্ত না গড়লো। যখনই আনায়া বুঝতে পারলো রক্ত বের হতে শুধু করেছে ঠিক তখনই আনায়া নিজেকে শান্ত করে কেনীথকে ছেড়ে দিলো। আর কেনীথের গলার সেই অংশ যেন আনায়া নিজের দাঁত দিয়ে যেন খুঁড়ে ফেলেছে। নরম মাংসে ডাবিয়ে দেওয়া দাঁতের চিহ্ন গুলো স্পষ্ট।সেখান হতে অনবরত গলগল করে র*ক্ত গড়াচ্ছে।
যা দেখে আনায়া কেনীথের দিকে সরাসরি দৃঢ় দৃষ্টি ফেলে শান্তিতে কিঞ্চিৎ বাঁকা হাসলো। যত যাই হয়ে যাক, এই কাজ করে যেন নিজেকে সে কিছুটা হলেও শান্তনা দিতে পারছে।
এদিকে আনায়াকে এভাবে হাসতে দেখে কেনীথও কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে আনায়া একহাত ছেড়ে দিলো। এবং নিজের হাত দিয়ে গলায় স্পর্শ করতেই একগাদা র*ক্ত হাতের লেগে গেলো। যা কেনীথ নিজের একবার নিজ চোখে দেখে নিয়ে আনায়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলতে লাগলো,
—“কি’স করতে চাইলে যে কামড়ে র*ক্ত বের করে দিতে হয়, তা জানা ছিলো না। ইট’স ওকে, নেক্সট টাইম না হয় আমি কামড়ে দেবো আর তুই না হয় কি’স করবি!”
কেনীথের এহেন কথা শুনে আনায়া মুখ চুপসে গেলো। কেনীথ আবার সত্যি সত্যি না হয় এমন কিছু করে তার সাথে। এরই মাঝে কেনীথ আনায়ার অবস্থা দেখে হাসলো।
—“চিন্তা করিস না। এখন আর কা’মড়াকাম’ড়ি করার মুড নেই।”
কেনীথের এই কথায় আনায়া স্বস্তির ঢোক গিললো। তবে কেনীথের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে কেনীথ আঁটকে ফেললো। আপাতত আনায়ার বামহাত কেনীথ এখনো দেওয়ালের সাথে আঁটকে রেখেছে আর আনায়ার ডান হাতটা উন্মুক্ত। তবে কেনীথ নিজের নিজের ডান হাতটা আনায়ার কোমড়ের পাশে রেখে আনায়াকে আঁটকে রেখেছে। এদিকে অবশ্য আনায়ার ডানপাশেই দেওয়ালেন সাথে একটা বুক সমান কাভার্ড। যেখানেই ফুলদানির পাশে আনায়া ছুরি আর শিশিটা রেখে গিয়েছিলো। হঠাৎ এটা মনে হতেই আনায়া খেয়াল করে দেখলো ছুড়িটা ফুলদানির পেছনেই রয়েছে।
এটা দেখামাত্র আনায়া আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করলো না নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে। আচমকা নিজের সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করে কেনীথের উন্মুক্ত বুকে জোরে নিজের ডান হাতটা দিয়ে ধাক্কা দিলো। এদিকে কেনীথও খানিকটা অসাবধানতার জন্য আনায়াকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে গেলো। আর আনায়াও খুব দ্রুত গতিতে ডান হাতটা কাভার্ডের উপর হাতিয়ে ছুরিটা শক্ত করে হাতে তুলে নিলো। অসাবধানতার জন্য অবশ্য ফুলদানিটা নিচে পড়ে গেলো সঙ্গে সেই বি*ষের শিশিটাও হয়তো কাভার্ডের আশেপাশে কোনো চিপায় পড়ে গিয়েছে।
আনায়া শক্ত হাতে ছুরি ধরে কেনীথের দিকে তাক করে শাসিয়ে বলতে লাগলো,
“আর একবারও আমার কাছে আসবেন না! নয়তো এবার আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আমি কিন্তু আপনাকে আঘাত করতে একটুও ভাববো না।”
কেনীথ আনায়ার শাসানোতে একটুও বিচলিত হলো না। বরং প্যান্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে আনায়ার দিকে নির্বিকার হয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। এটা দেখে আনায়া আনায়া কিছু একটা করে বসতে চাইলেও সরাসরি সাহস জোগালো না। তবে কেনীথ পুনোরায় তাকে কিছু করে না বসে এই ভেবে এবার নিজেই কেনীথকে আঘাত করার পদক্ষেপ নিলো।
কেনীথ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আনায়া আচমকা নিজের হাতের ছুরিটা দিয়ে কেনীথের উন্মুক্ত বাহুতে আঘাত করলো। মূহুর্তেই কেনীথের ফর্সা মাসেলস্ পূর্ন বাহু হতে ফিনকি দিয়ে র*ক্ত গড়াতে লাগলো। যা সম্পূর্ণ হাত বেয়ে টপটপ করে ফ্লোরে পড়তে লাগলো। ধারালোর ছুরি আঘাত এতোটাই বেশি ছিলো যে শরীরের মাংস অনেকটা গভীর হয়েই কেটে গিয়েছে। কেনীথ নিজের সাথে এমন কিছুটা হওয়াতেও একটুও বিচলিত হলো না। একই ভাবমূর্তি নিয়ে কিছুক্ষণ আনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকার পর পুনোরায় আনায়ার দিকে এগোতে নিলো। আনায়া এবারও আগেপিছে কিছু বা ভেবে পুনরায় কেনীথের অন্যহাতে একইভাবে আঘাত করে বসলো। এবারও সেই গভীর ক্ষত আর ফিনকি দিয়ে ওটা র*ক্তের ছড়াছড়ি। তবে এবারও কেনীথের সেই একই ভাবমূর্তি। এতো আ*ঘাতের পরও যেন তার কোনো আ*ঘাতই লাগেনি। সবকিছু যেন স্বাভাবিক।
তবে এবার কেনীথ আনায়ার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে আনায়া খানিকটা বিচলিত হলো। কেনীথের এমন ভাবমূর্তি তার পছন্দ হচ্ছে না। যখনতখন কিছু একটা করে ফেলতে পারে কেনীথ। সে যে সাহস দেখাতে গিয়ে দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছে তা তো মিথ্যা নয়।
আনায়া ঘাবড়ে গিয়ে কেনীথকে ছুরি দেখিয়ে পুনরায় কিছুটা ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো। তবে কেনীথ না থেমে আনায়ার থেকে এবার কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে সটানভাবে দাঁড়িয়ে বললো,
“এবার তুই বল তোর কি করা উচিত?”
কেনীথের এহেন শান্তস্বরের কথা শুনে আনায়া ঘাবড়ালো। এবার কিছুটা মনে ভয়ও জাগছে। তবে আনায়াকে আরেকটু ঘাবড়ে দিয়ে কেনীথ বলতে লাগলো,
“খুব শীঘ্রই আমার তোকে চাই। একদম সম্পূর্ণ নিজের করে… সে সময়ের জন্য তৈরি থাকিস।”
আনায়া কেনীথের কথার উদ্দেশ্যটা হয়তো বুঝলো তবে কেনীথ আবারও বললো,
“এটা ভাবিস না যে কয়েকবার আমাকে আঘাত করার সুযোগ পেয়েছিস বলে যাই ইচ্ছে তাই করতে পারবি!একটা কথা মাথায় রাখিস, এখানে সবকিছু আমার ইচ্ছেতেই হয়।
উম… আরেকটা কথা! আমার স্পর্শ, আমার উক্তি কিংবা সম্পূর্ণ আমিটাই তোর কাছে বি*ষাক্ত হলেও, তুই বরং আমাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করে ফেল। এটাই তোর জন্য জন্য মঙ্গল হবে। কেননা ভালো হোক কিংবা মন্দ, আমি তোর মাঝে এমন ভাবে নিজের অস্তিত্ব মিশিয়ে দেবো যে তুই চাইলেও কখনো আমার অস্ত্বিত্বকে নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলতে পারবি না।
আর এমনিতেও, এখন পর্যন্ত নিজের হাত থেকেই আমার নামটা সরাতে পারিসনি অথচ আমায় আঘাত করার তোর কত বাসনা।”
শেষের কথাটুকু কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উল্টোফিরে চলে যেতে নিয়েছিলো তবে আচমকা আনায়ার এক অনাঙ্ক্ষিত কাজ আর ডাকে তাকে পুনরায় আনায়ার দিকে ফিরতে হলো।
—“দেখুন! সরিয়ে ফেলেছি…
কেনীথ পেছনে ঘুরে দেখলো আনায়া নিজের বাম হাতের তালুতে ইচ্ছে মতো ছুরির কয়েক ঘা বসিয়ে দিয়েছে। কেনীথের নামের অংশটুকু র*ক্তের স্রোতে ঢেকে গিয়েছে। যেখান থেকে গলগল করে রক্ত ঝড়ে ফ্লোরে পড়ছে। অথচ আনায়ার মাঝের কোনো হেলদোল নেই। সেই কেনীথের দিকে দৃঢ় চোখে তাকিয়ে। সঙ্গে ঠোঁটের কোণায় ঝুলছে অদ্ভুত হাসি।
এরই মাঝে আনায়া কেনীথের দিকে আচমকা এগিয়ে এলো। এবং নিজের রক্তমাখা হাতের তালু কেনীথের উন্মুক্ত বুকে ঘষতে লাগলো। মূহুর্তেই ফর্সা ত্বকের সম্পূর্ণ বুকটা লাল রং-এর তরলে ছেয়ে গেলো।
এদিকে স্বাভাবিক ভাবমূর্তি নিয়ে কেনীথ শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে আনায়া কাজকর্ম দেখছে। তবে এবার তার মুখে রয়েছে গাম্ভীর্যের ছাপ। মস্তিষ্কে তার কি চলছে তা অজানা। অন্যদিকে কেনীথের বুকে আনায়া নিজের হাত দিয়ে র*ক্ত মাখিয়ে দিতে দিতেই তীব্র আত্নবিশ্বাসী হয়ে বলতে থাকলো,
“এভাবেই সবকিছু মুছে যাবে। আর আপনিও…!”
আনায়া কেনীথের বুক হতে হাত সরিয়ে নিতে ধরলেই কেনীথ আনায়ার হাত খপ করে ধরে ফেললো। তবে এবার কেনীথের ভাবমূর্তিতে কিছুটা ব্যতীক্রম মনোভাব লক্ষ করা যায়। যেন সে ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রেগে। অবশ্য সবকিছু মিলিয়ে রাগারও যথেষ্ট কারণ হয়েছে। তবে কেনীথ এবার আনায়ার হাতটাকে শক্ত করে ধরলো। আনায়া শক্ত হয়ে জোর করে কেনীথের কাছ হতে নিজের হাতকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারলো না।
এরই মাঝে কেনীথ আনায়ার হাতে হেঁচকা টান দিয়ে আনায়াকে নিজের কাছে নিয়ে এলো এবং কটমট করে বলতে লাগলো,
—-“যথেষ্ট করেছিস, আর নয়! নয়তো এবার আমি কিছু করলে কেঁদেও কূল পাবি না।”
সোফার উপর আনায়াকে জোর করে বসিয়ে রেখেছে কেনীথ। শুধু শুধু বসিয়ে রাখেনি বরং সে নিজেও আনায়ার পাশে বসে আনায়ার হাতের ব্যন্ডেজ করতে ব্যস্থ হয়ে পড়েছে। অথচ নিজের হাত গলার ক্ষ*তর দিকে তার কোনে নজরই নেই। এদিকে অবশ্য কেনীথের সবকিছুই আনায়ার অতিরঞ্জিত আর বিরক্তিকর ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। আর কেনীথের ক্ষ*তর দিকে তাকিয়েও হচ্ছে না তার বিন্দুমাত্র আফসোস কিংবা অনুশোচনা।
এদিকে কেনীথ এতক্ষণ ধরে আনায়ার হাতের রক্তগুলো তুলো দিয়ে পরিষ্কার করছিলো কিন্তু হঠাৎ আনায়ার বেখেয়ালীর মাঝে কেনীথ অতিরিক্ত মেডিসিন তুলোতে নিয়ে আচমকা আনায়ার হাতে চেপে ধরলো। এতেই আনায়া যন্ত্রণায় ছ্যাত করে উঠলো। কেনীথের দিকে কঢ়া চোখ নিয়ে তাকালেও কেনীথ ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আনায়ার হাতের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। আনায়ার বুঝতে বাকি নেই যে কেনীথ ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে। যে কারণে আনায়ারও কিছুটা ক্ষোভ তৈরি হলো কেনীথের সাথে সেইম জিনিস করার।
কেনীথ আনায়ার হাতে মেডিসিন লাগিয়ে যখন ব্যান্ডেজ প্রস্তুতি করতে নিয়েছে ঠিক এরই মাঝে আনায়া তুলোতে অনেকটা মেডিসিন লাগিয়ে আচমকা কেনীথের গলায় জোড়ে চেপে ধরলো। কেনীথ নিজের কাজে ব্যস্থ ছিলো বিধায় যন্ত্রণাও বেশি হলো তবে কেনীথ সামান্যও বিচলিত না হয়ে আনায়া বাম হাতটাকে টেনে নিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধতে লেগে পড়লো। এটা দেখে আনায়া কিছুটা অবাক হলো। গলার ক্ষতটা তো একটু বেশিই ছিলো তবে কোনো রিয়েক্ট করলো না কেনো। কেনীথ যখন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না তখন আনায়া কেনীথের গলা থেকে হাত সরিয়ে নিলো। তবে মনে মনে একবার ভেবেছিলো কেনীথতের হাতের কাঁ*টা জায়গাগুলোতে একই কাজ করার। তবে নিজের ইচ্ছেয় পানি ঢেলে আপাতত নিজেকে সংযত করে নিয়েছে।
এরই মাঝে কেনীথের ব্যান্ডেজ বাঁধা শেষ হলে সে আনায়ার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো এবং আনায়ার উদ্দেশ্য বললো,
“ড্রেস চেঞ্জ করে নিস। ক্ষিদে পেলে বল, খাবার এনে দিচ্ছি নয়তো নিজেই বানিয়ে খেয়ে নিস।”
এতটুকু বলে চলে যেতে নিলে হঠাৎ আনায়া অনুনয় করে বলতে লাগলো,
—“প্লিজ আমার বাবাকে ছেড়ে দিন! আর কিছু চাই না আমার। আমি আমার সাথে ইচ্ছে তাই করুন তবুও প্লিজ…
আনায়া কথা বলতে বলতেই নিজের চোখ হতে জল গড়ালে কান্না থামাতে ঠোঁট চেপে ধরলো। অন্যদিকে এই কান্না বরাবরের মতো কেনীথের শক্ত পাষাণ মনকে নরম করতে পারলো না। কেনীথ কাটকাট স্বরে জবাব দিলো,
—“ভুলে যা সব, আজকের পর তোর বাবা বলতে আর কেউ থাকবে না।
একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ২৫
কেনীথের কথায় আনায়া প্রচন্ড বিস্মিত হলো। কেনীথ কি সত্যিই তার বাবাকে মে*রে ফেলবে? এরপর কি তাকে বাকি জীবনটা এই ন*রপি*শাচের সাথেই কাটাতে হবে? নাহ, এমনটা তো হতে পারে না। তার পক্ষে এমনটা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু সে করবেও টা কি? যেখানে এই কেনীথের পরিচয়ই তার কাছে অজানা। কে এই কেনীথ, কি তার পরিচয়? কি তার সঠিক উদ্দেশ্য কিছু তো তার জানা নয়। আনায়া শুধু কেনীথের যাওয়ার পানে চেয়ে রয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকলো আর প্রতিনিয়ত নিজের মন মস্তিষ্কের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্থ হয়ে পড়লো।