একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩১

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩১
রনীতা তুশ্মি

আনায়া শিকদার বাড়িতে এসেছে একদিনও হয়নি। কেনীথের ইচ্ছে অনুযায়ী পাভেলের সাথে কথা বলার পরপরই কেনীথ আনায়াকে শিকদার বাড়িতে পাঠানোর কথা জানায়। কেনীথের মুখ থেকে চলে যাওয়ার কথা শুনে আনায়া হা-না কিংবা কোনো টু শব্দও করেনি।শুধু সন্ধ্যার দিকে পাভেলের সাথে নির্বিকারে শিকদার বাড়িতে চলে এসেছে।
আনায়া মাঝে বলতে গেলে এখন আর সত্যিই কোনো অনুভূতির দেখা মেলে না। যখন যে যেটা বলছে তখন সেটাই নির্বিকারে করে নিচ্ছে। আর কেনীথের কথা ফেলার তো কোনো সুযোগই নেই।

গভীর রাত। শিকদার বাড়ির চারপাশে ৩-৪ জন গার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছুক্ষণ আগ অব্দি পাভেলও শিকদার বাড়িতেই ছিলো তবে একটা জরুরি কাজে সে বেরিয়ে গিয়েছে। এমনিতেও কেনীথ শুধু আনায়ার মোটামুটি খোঁজখবর নেওয়ার দায়িত্বটা ওকে দিয়েছে,আলাদা করে আনায়ার দেখভালের জন্য শিকদার বাড়িতে থাকতে বলেনি। তবে কেনীথের আদেশের চেয়ে বেশি করে হলেও পাভেল আনায়ার দেখাশোনায় বেশি সচেতন। কারণ তার উপর কেনীথের দাদি লুসিয়ারও আলাদা করে কিছু নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে যে কাজ পড়ে গিয়েছে তাতে শিকদার বাড়িতেও থাকাটা সম্ভব হলো না। পাভেল গিয়ে আনায়ার কাছ থেকে বিদায় নিলো ঠিকই তবে আনায়া কোনো কিছুই বলেনি। চুপচাপ মলিন চেহারায় পাভেলের কথা শুনেছে। পাভেল যাওয়ার আগে আনায়াকে কিছু সর্তকতা মূলক কথাও বলে গেলো। যেমন রাতের বেলায় যেন প্রয়োজন ছাড়া কোথাও না যায়, বেশি প্রয়োজন হলে যেন তাকে জানায়, ঠিকঠাক রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যায়। এছাড়া আনায়াকে তার নিজের যত্ন নেওয়ারও পরামর্শটা দিতে ভুললো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পাভেলের হাবভাব কিংবা বাচনভঙ্গিতে এক অদ্ভুত মুগ্ধতা বিরাজ করে। দেখতেও যেমন অসাধারণ তেমনি তার কাজকর্মও। ধরা যায় কেনীথের সান্নিধ্যে না এলে হয়তো সে কখনোই নিজের এই তুখোড় মেধাকে এসব কাজে লাগাতো না। নিশ্চিত ভালো ভাবেই নিজের জীবনটাকে আদর্শ করে গড়ে তুলতো। তবে এটা না হওয়ায় তার তেমন আফসোসও নেই। কেনীথের হয়ে এতোদিন কাজ করতে করতে তার এইসব কাজ আর মানুষগুলোর উপর ভিন্নরকম মায়া জমে গিয়েছে। এখন চাইলেও সে এসব থেকে বের হতে পারে না।

পাভেল চলে গিয়ে অনেকক্ষণ হয়েছে। রাতের খাবার টেবিলে সাজানো গোছানো ছিলো তবে আনায়া কোনোটাই মুখে তোলেনি। পাভেল চলে যেতেই কিছুক্ষণ তার বাড়ির সবজায়গা ঘুরে ঘুরে দেখেছে। একবার তাদের বাড়ির সেই রহস্যময় ঘরটার সামনে গিয়ে থেমেছে। অতঃপর সে কেনীথের কথাগুলোর সাথে, সেই রাতে আনায়া আর ইনায়ার পাওয়া পুরোনো কিছু অ/স্ত্র আর জামাকাপড় পাওয়ার ঘটনার সাথে সবকিছু মিলিয়ে দেখেছে। তবে আনায়া রুমে ভেতরে আর প্রবেশ করেনি। চাবিটা হয়তো তার রুমেই কোথাও রাখা আছে তবে সে আর তা খুঁজতে যায়নি।
শেষমেশ আনায়া গিয়ে তার বাবার ঘরে শুয়ে পড়লো। ঘরের জানালা গুলো সব খুলে রাখা। ঘুমানোর আগে আনায়া সেগুলোও বদ্ধ করলো না। বিছানার উপর কোনোমতে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো। শরীরটা কেমন যেন একটুও ভালো লাগছে না।
ঘুমন্ত আনায়া বাহির থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে শিহরিত হয়ে প্রতিনিয়ত কেঁপে কেঁপে উঠছে। তবে তার ঘুম ছাড়ছে না। অত্যাধিক ক্লান্তি যেন তাকে ঘুমের বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের মাঝে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
পুরো একটা বাড়িতে একা একটি মেয়ে। রাত যখন আরো বেশি গভীর হতে লাগলো তখন আনায়া আরো বেশি ঘুমে বিভোর হয়ে উঠলো। তার আশেপাশে কেউ এসে চলাফেরা করলেও হয়তো সে তা টের পাবে না। এরই মাঝে হঠাৎ সত্যি সত্যিই তার কাছে এক আগন্তুকের আগমন ঘটলো। তবুও আনায়া একটুও টের পেলো না।

আনায়া নেই বিধায় কেনীথ খুব শান্তিতেই অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তবে তার ঘুমটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর হঠাৎ মাঝরাতে তার ঘুম ছুটে গেলো। মাথার মধ্যে হঠাৎ পাহাড় সমান চিন্তা এসে ভর করলো। কেনীথ খুব ভালো করেই অনুভব করলো তার কিছু একটা চাই। খুব তীব্রভাবে চাই। সে জানে সে কি চাইছে তবে কেনীথ তার এই অনুভূতিকে পাত্তা দিতে নারাজ।
কিছুক্ষণ রুমের মধ্যে হাটাহাটি করলো। অতঃপর এই চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ইনায়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে লাগলো। ইনায়া বয়স নেহাৎ অনেকই কম তবে ও ভীষণ চঞ্চল আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন সঙ্গে জেদি মেয়ে। ওর কথাবার্তা বাচ্চামো লাগলেও ও একদম চুপচাপ থাকার মতো মেয়ে নয়।

কেনীথ আপাতত ওকে একটা আশ্রমে রেখেছিলো। পরবর্তীতে ওকে অন্য জায়গায় ঠিকঠাক ভাবে সরিয়ে দিতো এই নিয়তে। কিন্তু আচমকা এতো কঢ়া নিরাপত্তা থাকার পরও ইনায়া কিনা সেখান থেকে পালিয়ে গেলো। মানে একেবারেই সোজা গায়েব! ওকে কেনীথের কোনো টিমই কিনা খুঁজে পাচ্ছে না? বিষয়টা অবিশ্বাস্য, কেনীথ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে এখানে কাহিনি খানিকটা ভিন্ন। ইনায়া নিশ্চিত কোনো স্পেশাল মানুষের হাতে পড়েছে নয়তো সে নিজেই গিয়েছে। কিন্তু কেনীথ ভেবে পায় না বিডিতে এমন কে রয়েছে যে কেনীথের চেয়েও বেশি পাওয়ারফুল। আবার ইনায়া যদি নিজে থেকে যায় তবে সেই ব্যাক্তিটা কে হতে পারে! আবার হঠাৎ এটাও মনে হচ্ছে যে ইনায়া আর এই দেশেই নেই। খুব বড়সড় প্লানিং হয়েছে এখানে। কেউ তো সুযোগ-সন্ধানী হয়ে বসে ছিলো। আর সুযোগ পাওয়া মাত্রই ইনায়াকে হাতিয়ার বানাতে সরিয়ে নিয়েছে।
কেনীথ কিছুক্ষণ ভাবুক চিত্তে নানান ভাবনাচিন্তা শেষে পুনোরায় আনায়ার বিষয়টি নিয়ে অস্থির হয়ে পড়লো। হতাশ হলো নিজের এই অবস্থা দেখে। ঘুরেফিরে কিনা সেই একই ভাবনায় আঁটকে যাচ্ছে। আরো কিছুক্ষণ স্থির হয়ে চিন্তাভাবনার পর কেনীথ শেষমেশ আনায়ার কাছে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলো। নিজের সিন্ধান্তে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েই সে শিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো।

রাতের আঁধারে শিকদার বাড়ির সামনে গিয়ে কেনীথের গাড়িটা থামলো। কেনীথ গাড়ি থেকে বেরোতেই বাড়ির সামনের দুজন গার্ড এসে কুর্নিশ করে পুনোরায় নিজেদের স্থানে চলে গেলো। কেনীথ আর এক মূহুর্তও দেরী না করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।
একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে হলুদ রংএর একটি বাল্বের আলোয় চারপাশে খুব কম পরিমাণ আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইছে। কেনীথ প্রথমে ভাবলো আনায়া হয়তো দোতলায়, সেই ভাবনা অনুযায়ী দোতলার দিকে এগোতে গিয়ে নজর পড়লো ডাইনিং টেবিলের উপর। আগ্রহ নিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলো সব খাবার ঢেকে রাখা। কেনীথ কয়েকটার ঢাকনা উঠিয়ে বুঝলো আনায়া এসব খাবার ছুঁয়েও দেখেনি। মেজাজটা খানিক খারাপ হলো তবে নিজেকে সামলে নিলো।
কেনীথ পুরনোয় দোতলায় যেতে চেয়েও গেলো না। বরং কি যেন ভেবে তারেকের থাকার ঘরের দিকে এগোতে লাগলো। মন বলছে আনায়া এখানেই রয়েছে। কেনীথ যথারীতি সেই রুমে প্রবেশ করে আনায়াকে পেলো ঠিকই তবে রুমের হালচাল দেখে কিছুটা অবাকও হলো।

সাই-সাই করে বাহিরের ঠান্ডা বাতাস রুমে প্রবেশ করছে। আর আনায়া সেই ঠান্ডার মধ্যেই কেঁপে কেঁপে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কেনীথ এবার গিয়ে আস্তে করে দুবার আনায়ার নাম ধরে ডাকতো। তবে আজ কিছুটা ব্যতীক্রম করে “তারা” এর পরিবর্তে “আনায়া” নামেই ডেকেছে।কিন্তু আনায়ার ঘুম ভাঙ্গেনি।
আনায়া জাগলো না দেখে কেনীথও আর ডাকলো না। বরং ঘরের জানালা দুটো গিয়ে বন্ধ করে দিলো। সঙ্গে আনায়ার এতো খামখেয়ালিতে অনেকটাই বিরক্ত হতে লাগলো। তবুও কেনীথ বারবার নিজেকে থামিয়ে নিচ্ছে। আপাতত মাথা গরম করার কোনো ইচ্ছে নেই। এমনিতেই দিনদিন কোথা থেকে সব প্যাচ এসে হাজির হচ্ছে কে জানে।
কেনীথ আনায়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এক ধ্যানে কপাল কুঁচকে আনায়াকে দেখতে থাকলো। জানালা বদ্ধ করার পরেও মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে। যা দেখে কেনীথের কপালটা আরো বেশি কুঁচকে গেলো। এভাবে আরো কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কেনীথ আচমকা পাঁজাকোলে তুলে নিলো। আকস্মিক ঘটনায় আনায়া ঘুমের মাঝেই আচমকা জোড়ে কেঁপে উঠে পুনোরায় কেনীথের বক্ষস্থলে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।

এদিকে কেনীথ আনায়ার স্পর্শেই চমকে গিয়েছে। শরীর তো নয় যেন বরফের খন্ড। এভাবে থাকলে আবারও কঠিন ঠান্ডা এসে জেঁকে বসবে। তখন আবার সেবাযত্ন করে ঠিক করবেটা কে! কেনীথকেই তো করতে হবে না। কেনীথ এসব ভাবতে ভাবতেই তার হঠাৎ মনে হলো আনায়াকে সোজা একটা আছাড় মে*রে নিচে ফেলে দিতে। হাত আর মন দুটোই নিশপিশ করছিলো এ কাজ করতে। তবে মস্তিষ্কের চেতনা তাকে থামিয়ে দিলো।
আর একটুও সময় নষ্ট না করে কেনীথ আনায়াকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লো। সে আনায়াকে নিয়ে বের হতেই তার গার্ডরা এগিয়ে এলে কেনীথ ওদের ইশারায় গাড়িটা খুলে দিতে বলে। এরপর আর দেরী না করে কেনীথ আনায়াকে নিজের পাশের সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। সঙ্গে একবার আনায়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিরক্তি নিয়ে বললো,
“ম*রার ঘুম ঘুমিয়েছে নাকি!”

ভোর সকালে আনায়ার ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের অবস্থান অনুমান করে আনায়া কিঞ্চিৎ চমকে উঠলো। যথাসাধ্য মনে করার চেষ্টা করে ভাবলো তার তো এখানে থাকার কথা ছিলো না। তবে সে এখানে…
আনায়া ঠিকঠাক নড়াচড়াও করতে পারছে না। মলিন চেহারাটা বিস্ময়ের সাথে কেনীথের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে। কেনীথ পুরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে সাপের ন্যায় ওকে পেঁচিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আর আনায়া যেন সেই কেনীথের উন্মুক্ত বক্ষস্থলের মাঝে রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় আঁটকে গিয়েছে। আনায়া খানিকটা নড়াচড়া করতে চেষ্টা করলো কিনা তাতেই কেনীথ নিজের চোখদুটো খুলে কপাল কুঁচকে আনায়া দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে আনায়া যেন তার ঘুৃমের বড়সড় ব্যাঘাত ঘটিয়ে ফেলেছে আর সে যেন আনায়াকে কাঁচাই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
কেনীথের এহেন রুপে আনায়াও খানিকটা ভীত হলো। তবে কেনীথ মূহুর্তেই নিজের ভাবগতিক পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রুপে কোমড় পর্যন্ত ঢেকে রাখা কম্বলটাকে একহাতে টেনে নিজেদের গলা পর্যন্ত টেনে দিলো। অতঃপর তার অন্যহাতের উপর থাকা আনায়া মাথাটাকে নিজের কাছে টেনে আনায়ার দিকে তাকিয়ে নির্বিকারে বললো,
“ঘুমিয়ে যা! প্রমিজ করছি, আজকের পর আর কষ্ট দেবো না।”
আনায়া এ কথার উদ্দেশ্য কি বুঝলো আর না বুঝলো তার আগেই কেনীথ আনায়াকে আরো বেশি কাছে টেনে নিয়ে চোখ বুজলো।

দেখতে দেখতে আনায়ার কেনীথের মৃ*ত্যুপুরী প্রাসাদে প্রায় আরো তিনমাস কেটে গিয়েছে। এরমাঝে আনায়া আর কেনীথের সম্পর্কেও হয়েছে নানান পরিবর্তন। কেনীথ আনায়াকে আর কখনোই কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করেনি। বরং সবসময় ওর থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। এই কয়েক মাসে কেনীথ আনায়ার আশেপাশে দিনের বেলাতেও যেমন প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা যায়নি, তেমন খুব অল্প কয়েকদিনই আনায়া আর সে রাতে একসাথে ঘুমিয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই কিসব যেন কাজের জন্য কেনীথ বাড়ির বিভিন্ন আলাদা রুমে কিংবা রাত জেগেই কাটিয়েছে। তবে কখনোই আনায়াকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা কিংবা শারীরিক সংস্পর্শেও যায়নি। এ যেন একই বাড়িতে দুজন দু জগতের মানুষের বসবাস।
এদিকে আনায়ার গায়ের দৃশ্যমান ক্ষতগুলো প্রায় অনেকটাই সেরে গিয়েছে। কেনীথ আর যেটাই করুক না কেনো,নিয়মিত গিয়ে ওর শরীরের খোঁজখবর নিয়ে এসেছে। কখনো নিজে কিংবা কখনো আনায়াকে দিয়েই ক্ষতগুলোতে মেডিসিন লাগিয়েছে। সময় মত খাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো ওর হাতের নাগালেই দিয়ে এসেছে।

তবে আনায়া এই কয়েকমাসে যেন আরো বেশি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কেনীথ ওকে এখন জোর করিয়েও আর দু একটা কথাও বলাতে পারেনি। পরবর্তীতে সে এই চেষ্টাও করেনি। কারণ আনায়াকে একটু কোনো বিষয়ে জোর করতেই ও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই চোখ হতে জল অনবরত জল ফেলে কাঁদতে থাকে। কেনীথ এসবে আরো বিরক্ত হয় আর মেজাজটাও খারাপ হয়। যে কারণে কেনীথ আর এসব বিষয়ে তেমন মাথা ঘামায় না।
তবে ইদানীং কেনীথ আনায়ার মাঝে কিছু পরিবর্তন দেখতে পারছে। আনায়াকে আড়াল থেকে লক্ষ করলে কেনীথ মাঝেমধ্যে অদ্ভুত সব জিনিস দেখতে পায়। আনায়া এমনিতে এখন আর একটা কথাও বলেনা ঠিকই তবে সে একা থাকলে কারো সাথে ইশারায় নানান কথা বলার মতো অঙ্গভঙ্গি করে। আবার কখনো অদ্ভুত ভাবে শব্দহীন হাসিতে হাসতে থাকে। কিন্তু এসবের মাঝে কেনীথ যখনই তার সামনে যায় তখনই সে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে এবং পুনোরায় থমকে যায়।

কেনীথের আর বুঝতে বাকি নেই যে আনায়া এখন পুরোপুরি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়া দুদিন আগে সে আরো একটা অদ্ভুত কাজ করেছে। সাধারণ কেনীথ নিজের সহ আনায়ার রান্নাটাও নিজের হাতেই করে এসেছে এই কয়েকটা মাস। কিন্তু কখনোই সে এসব কাজে আনায়াকে ডাকেনি। কিন্তু দুদিন আগে হঠাৎ আনায়া কেনীথের কাছে এসে এই কয়েকমাসের ব্যবধানে প্রথম মুখ ফুটে বললো সে নাকি সকালের খাবারটা নিজের হাতে রাঁধবে।
হঠাৎ আনায়ার এমন ইচ্ছের কথা শুনে কেনীথ অবাক হয়েছিলো তবে আনায়াকে এতোদিন পর এভাবে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে শুনে যথেষ্ট খুশিও হয়েছিলো। ভেবেছিলো আনায়া হয়তো এবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিও কেনীথ তাকে আরো কিছু জিজ্ঞেস করলে আনায়া একটা কথাও বলেনি।

চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আর আনায়া কথা বলবে না দেখে কেনীথও আর আনায়াকে তেমন জোর করেছি। ওর ইচ্ছে অনুযায়ী রান্নাটা ওকেই করতে দিয়েছিলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত আনায়া উদ্দেশ্য ধরতে পেরে কেনীথ শুধু তাচ্ছিল্যের সাথে হেসেছে।
সেদিন যথারীতি আনায়া দুজনের জন্য সকালে স্যুপ বানিয়ে ছিলো। দু’জনে মিলে ডাইনিং টেবিলে মুখোমুখি বসে খাবার খাচ্ছিলো। কেনীথ অকপটে খাবার খাচ্ছে আর আনায়া নির্বিকার হয়ে বসে স্যুপের বাটির দিকে তাকিয়ে তা চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করছে। আবার মাঝেমধ্যে দু একবার মুখেও দিচ্ছে। অনেকদিন হয়ে গেলো তার কেনো যেন ঠিকঠাক খাবার খেতে ইচ্ছে করে না। মাঝেমধ্যেই বমি হয়ে যায়। নিজেকে সবসময় কেনীথের অগোচরে রাখতে চায় বিধায় এসব কেনীথেরও তেমন নজরে পড়ে না।

তবে এখন আনায়া খেতে খেতে কয়েকবার আড় চোখে কেনীথকে দেখছে। যেন সে এই মূহুর্তে ভিন্ন কিছু হওয়ার আশা করছে তবে কেনীথ পুরো খাবারটা শেষ করে ফেললেও আনায়া ফলাফল স্বরুপ কিছুই দেখতে পারছে না।
কেনীথের খাবারের শেষ পর্যায়ে গিয়ে আনায়া ভেতর ভেতর খানিকটা অস্থির হয়ে উঠলো। যা তার বাহ্যিক হাভভাবে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যাচ্ছে। এদিকে কেনীথ পুরো খাবার খাওয়াটার সময় মুচকি হেসে মাথা নিচু থাকা অবস্থায় খাবারের দিকে তাকিয়েই সম্পূর্ণ খাবারটা শেষ করেছে। এবং সর্বশেষে খানিকটা পানি খেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আনায়ার কাছে এলো।
এরপর আনায়ার সামনে হতে একহাত বাড়িয়ে চেয়ারে উপর নিজের খানিকটা ভর ছেড়ে দিলো। অতঃপর আনায়ার মুখের কাছে ঝুঁকে গিয়ে মুচকি হেসে বলতে লাগলো,

“দ্য টেস্ট ওয়াজ সো গুড। একমাত্র বউয়ের হাতের রান্না বলে কথা! বাট বি*ষটা ঠিকঠাক কাজ করেনি। যে বি*ষটা মিশিয়েছিস সেটা পরিপূর্ণ নয়। ওটার সাথে আলাদা করে আরেকটা মেশাতে হতো। তবেই কাজ হতো। ইট’স কলড রিঅ্যাকটিভ টক্সিসিটি। যেখানে দুটো পদার্থ পৃথক অবস্থায় খুবই সাধারণ কিন্তু দুটো একত্রিত হলেই সোজা উপরে।
হোয়াট এভার, এতো কষ্ট না করে আমাকে বললেই পারতি। আমি নিজেই রেঁধে লিকুইডটা মিশিয়ে খেয়ে নিতাম। শুধু শুধু কষ্ট করলি। আচ্ছা তোকে এসব কুবুদ্ধি দেয় কে শুনি? তোর ওই কাল্লা কাটা বাপটা!”
কেনীথ কথা বলা মাত্রই তাচ্ছিল্যের সাথে পুনোরায় হেসে ফেললো। এদিকে আনায়া কেনীথের মুখের দিকে নির্বিকারে তাকিয়ে। যেন সে যে এই কাজটা করছে এতে তার মাঝে নেই কোনো অনুতাপ কিংবা ভয়। মলিন চেহারার চোখজোড়া সম্পূর্ণ নির্বিকার।
কেনীথ জানে আনায়া কিছু বলবে না। যে কারণে টুপ করে আনায়ার স্যুপে ভেজা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে সরে এলো। এবং সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বললো,
“রান্না তো ভালোই পারিস! মাঝেমধ্যে একটু রেঁধে খাওয়ালে কষ্ট পাবো না। বি*ষ মেশানো হলেও চলবে, প্রবলেম নেই!”

কেনীথ সেখান থেকে চলে গেলেও আনায়া নির্বিকারে ঘরের এক কোণার দিকে চেয়ে রইলো। তার বাবাটা মাঝেমধ্যেই সব অদ্ভুত বুদ্ধি দিয়ে যাচ্ছে। কি সব বোঝাচ্ছেও। আনায়া বুঝতে পারে না সে কোনটা শুনবে। মাঝে দুমাস তার বাবাটা তেমন বিরক্ত করেনি। সে কয়দিন আনায়াও ঠিকঠাক ছিলো। অথচ ইদানীং কি সব কথাবার্তা বলে ভয় দেখায় আনায়াকে। সঙ্গে সব সময় এটাও বলে যে সে তাকে নিয়ে যাবে। অবশ্য এতে আনায়ার কোনো আপত্তি নেই। সে সত্যিই তার বাবার সাথে যেতে চায়। শুধু একটা সঠিক সময়ের জন্য তার অপেক্ষা।

আনায়া শেষবার কেনীথের ক্ষতি করতে চেয়েছিলো সেই কয়েকমাস আগে। যখন কেনীথ রাতের বেলায় শিকদার বাড়ি থেকে এই বাড়িতে নিয়ে এলো তার ঠিক কিছুদিন পর। কেনীথ স্বাভাবিক ভাবেই আনায়ার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিলো তবে একটা পর্যায়ে আনায়া আচমকা বালিশের নিচ থেকে ছুরি বের করে কেনীথের পিঠে আঘাত করতে বসেছিলো। এটা তার আগাম পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু ঠিক সেই মূহুর্তেই কেনীথ আনায়ার ছুরি ধরা হাতটা সহ অন্য হাতটাও দুপাশ থেকে চেপে ধরে আনায়ার নির্লিপ্ত মুখের কাছে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলেছিলো,
“বিধবা হওয়ার এতো শখ জেগেছে! স্বামীকে নিজ হাতে মে*রে এতোটাও সতীসাবিত্রী না হলেও চলবে।..যাস্ট একটা চু/মু খাবো আজ। প্রমিজ করলাম, তুই না চাইলে আর কখনো তোর কাছে আসবো না।”
কেনীথ আর সেদিন আনায়াকে আলাদা করে আনায়াকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি। বরং তার আগেই ওর ওষ্ঠে খুব অল্প সময়ের জন্য ওষ্ঠ মিলিয়ে সরে এসেছিলো। আর এটাই ছিলো তাদের শেষবারের মতো ঘনিষ্ঠ হওয়া। এরপর কেনীথ ভুলেও ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেনি।

এবার কেনীথ আনায়ার একটা ট্রিটমেন্টের জন্য পাভেলকে ডেকেছে। ও বসের ডাক শুনেই সোজা বাড়িতে এসে হাজির। কেনীথ ওকে একজন ভালো সাইক্রিয়াটিস্টের সাথেও কথা বলে রাখতে বলেছে। যথারীতি কেনীথের কথামতো পাভেল সবকিছুর ব্যবস্থা করে রেখেই কেনীথের কাছে ছুটে চলে এসেছে। তবে সঙ্গে করে কিছু জিনিসও এনেছে।
পাভেলকে দেখা মাত্রই কেনীথ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো,
“কাহিনি কি বলতো! আমার চেয়ে যেন ওর প্রতি তোর চিন্তাই বেশি। যখনই দেখি তখনই হাঁপানি রোগীর মতোই হাঁপাতে থাকিস।”
পাভেল মুখ ভেঙ্গচিয়ে বললো,
“আপনার না রইলেও আমার জীবনের মায়া দয়া আছে। আর সত্যি কথা উনি ভালো মানুষ। আর ভালো মানুষদের জন্য পাভেলের দরদ একটু বেশিই উথলায়। যাক গে, আপনি দিনে যেহেতু যাবেন না তাই রাতেই একটা সাইক্রিয়াটিস্টের এপয়েন্টমেন্ট নিয়েছি। আজ রাতেই যাবেন তো?”
কেনীথ পাভেলের দিকে নির্বিকারে তাকিয়ে বললো,

“হুম!”
কিছুক্ষণ সময় দুজনের মাঝে নিরবতা চলার পর পাভেল খানিকটা ইতস্তত ভাবে বললো,
“উনি কি একটু বেশিই অসুস্থ! আপনি তো বলছিলেন আপনি নাকি আর… তবে?”
পাভেল আর এখন উল্টো পাল্টা কিছু বললো না। তবে কেনীথ ওর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলো। অতঃপর দুদিন আগের আনায়ার খাবারে বি/ষ দেওয়ার ঘটনাটা খুলে বললো। কেনীথ বুঝেছিলো কোনো একটা ঘাবলা আছে। যথারীতি আনায়া সেই কাভার্ডের পেছনে পড়ে থাকা শিশিটা বি/ষ ভেবেই খাবারে মিশিয়েছিলো। যা ধরতে কেনীথের একটুও দেরী হয়নি।
এদিকে কেনীথের মুখ থেকে এহেন কথা শুনে পাভেল পুরো তব্দা খেয়ে গিয়েছে। বিশ্বাসই হচ্ছে না যেন আনায়া এমন কিছু করেছে।
“বলেন কি বস! সোজা আপনাকে উপরে পাঠানোর জন্য…। বউ একটা পেয়েছিলেন, আপনার চেয়েও এক ধাপ উপরে।”
কেনীথ পাভেলের কথায় হাসলো,

“যেদিন থেকে আমি বলেছি ওকে আর কষ্ট দিবো না সেদিন থেকে ও আমাকে কষ্ট দেওয়ার পায়তারা করে চলছে। কষ্ট বললে ভুল হবে, আমাকে উপরে পাঠানোর জন্য যুদ্ধের ময়দানে নেমে গিয়েছে।
আমি ভেবে পাই না, ওর বাপ মরেও আমার পিছু ছাড়ছে না কেনো। শা/লা বা/স্টার্ড একটা। ম/রার পরও আমার পিছনে লেগে আছে।”
পাভেল কেনীথের অর্ধেক কথা বুঝে বাকি অর্ধেক আর বুঝলো না। চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
“মানে?”
কেনীথ ওর দিকে নির্বিকারে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হেসে বললো,
“বুঝবি না!… এক মিনিট, তুই এসব কি এনেছিস।”
পাভেল খানিকটা মুচকি হেসে বললো,
“আপনাদের জন্য এনেছি।”
এই বলেই কেনীথের হাতে পাভেল একটা বড়সড় শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। কেনীথ সেটা হাতে নিয়ে খানিকটা কপাল কুঁচকে বললো,

“আমাদের জন্য!”
এই বলতে বলতেই কেনীথ শপিং ব্যাগ থেকে একটা কালো রংএর শাড়ি আর কালো রংএর পাঞ্জাবি বের করলো। কেনীথ জিনিস দুটোকে দেখে পাভেলের দিকে তাকাতেই পাভেল বললো,
“সুন্দর না! পছন্দ হয়েছে?”
কেনীথ কপাল কুঁচকে নিয়ে বললো,
“এসব দুই কার জন্য নিয়ে এসেছিস। না মানে তারা না হয় শাড়ি পড়ে নিলো কিন্তু আমি পাঞ্জাবি! লাইক সিরিয়াসলি, আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে হয়তো লাস্ট পাঞ্জাবি পড়েছিলাম। মাফ কর ভাই, তোর চয়েস ভালো তবে আমি এসব পড়বো না।”
—“আরে বস, একদিন পড়লে কিছু হবে না। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে দু’জনে সেজেগুজে একটু ঘুরাঘুরি করে আসুন। এরপর না হয় ডক্টরের কাছে চলে যাবেন।”
—“পাভেল! তোর কথায় কেনো যেন আমার হাসি পাচ্ছে। তুই আমাদের থেকে যা চাচ্ছিস তা হওয়ার সম্ভবনা আমি আর রাখছি না। ও যতদিন আছে থাক। ইনায়াকে পেয়ে গেলে ওদের দুজনকে আলাদা ভাবে কোথাও পাঠিয়ে দেবো। ভালো থাকবে দুজনেই,সাথে আমিও।”
পাভেল কেনীথের এমন সহজ স্বীকারোক্তিতে চমকে উঠলো।
“কি বলছেন এসব! আপনি সত্যি ওনাকে… ”

—“হুম!”
—“কিন্তু কোনো?”
—“কিন্তু নয় কেনো! যে যেভাবে ছিলো সেভাবেই থাকা উচিত। যার যেটা প্রাপ্য ছিলো সে সেটা পেয়ে গিয়েছে। আমি আবার নিজের জীবনটাকে নিজের মতোই রাখতে চাই। আর ওরা যদি চায় তবে ওরাও আগের মতো নিজের জীবনকে সাজিয়ে নিক। আমার কোনো আপত্তি নেই। ”
কেনীথের এমন নরম নরম কথায় পাভেল তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। এমন কেনীথকে সে বহু বছরেও দেখেনি। তবে এটা আজ কাকে দেখছে।
“বস! আমার মনে হয় ওনার সাথে সাথে আপনিও একটু নিজের চেক-আপটা করে নিয়েন। আপনাকেও আমার ঠিকঠাক মনে হচ্ছে না।”
পাভেল ভেবেছিলো কেনীথ হয়তো আবারও রেগে গিয়ে কিছু বলবে কিন্তু কেনীথ তেমন কিছু না বলেই শুধু মুচকি হাসলো। কেনীথের চেহারাটাও পাভেলের কেমন যেন মলিন মনে হচ্ছে।

—“আচ্ছা বস, আপনি তো বললেন উনি যদি চায় আবার নিজের মতো জীবন সাজিয়ে নিবে। তাহলে উনি যদি আবার ওই রেহান আহমেদের কাছে ফিরে যায় তাহলেও কি আপনার কোনো আপত্তি নেই?”
—“আপত্তি থাকার কথা বুঝি?”
পাভেল আবারও ভরকে গেলো। এখন মনে হচ্ছে সে নিজেই পাগল হয়ে যাবে। নিজের বউয়ের অন্য কারো কাছে চলে যাওয়াতেও কিনা কেনীথের কোনো আপত্তি নেই!
“অনেক হয়েছে। এসব বাদ দিন। তাড়াতাড়ি দুজনে তৈরি হয়ে ঘুরে আসুন। আপনার জন্য না হলেও ওনার জন্য এই সময়ে ঘুরাঘুরির প্রয়োজন আছে। আর মানা করবেন না।”
কেনীথ পাভেলের দিকে তাকিয়ে নিজের চেহারাটা খানিক গম্ভীর করে বললো,
“আমি এসব পাঞ্জাবি পড়ছি না। আর শাড়িটা না হয় ওকে দিয়ে আসছি। আশা করি তোর চয়েস ওর সত্যিই পছন্দ হবে।”

খাবারের বি*ষ দেওয়ার ঘটনার পর কেনীথ খুব অল্প সময়ই হয়তো ওর আশেপাশে গিয়েছে। কথাবার্তা যেহেতু হয় না সেক্ষেত্রে কেনীথও কোনো প্রয়োজন ছাড়া ওর কাছে যায়নি। সন্ধ্যা রাতের দিকে কেনীথ আনায়ার কাছে শাড়িটা নিয়ে গেলো। রুমে গিয়েই দেখলো আনায়া বিছানার উপরে চুপচাপ এক ধ্যানে দেওয়ালের দিকে নজর ফেলে তাকিয়ে রইছে। চেহারাটা দিনদিনে আরো বেশি মলিন হয়ে গিয়েছে। তবে কেনীথ খেয়াল করে দেখলো, ইদানীং আগের চেয়ে আনায়াকে কিছুটা স্বাস্থ্যবান মনে হয়। খাবারটা কেনীথের জোরাজুরিতে আনায়া খায় তবে হঠাৎ এই পরিবর্তনে কেনীথ খুশিই হয়েছে।
কেনীথকে দেখে আনায়ার মাঝে কোনো হেলদোল হলো। যে ভাবে থাকার সেভাবেই বসে রইলো। কেনীথও এই নিয়ে তেমন পাত্তা দিলো না। ও জানতো এমনটাই হওয়ার ছিলো। আনায়ার কাছ থেকে এখন আর এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করাটা বোকামি।

এরই মাঝে কেনীথ কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে আনায়ার সামনে গিয়ে বসলো। কেনীথকে নিজের মুখোমুখি বসতে দেখে আনায়ার চোখজোড়া কেনীথের দিকে পড়লো। মলিন মুখে নিস্তব্ধ চোখে তাকিয়ে সে।
কেনীথ আড়ালে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মুচকি হাসলো। অতঃপর আনায়ার কপালে পড়ে থাকা এলোমেলো চুল গুলো দু’হাতে সরিয়ে দিলো। তবে এখনোও সে কিছু বললো না। কিছুক্ষণ সময় একই ভাবে অতিবাহিত করার পর কেনীথ এক হাতে ওর গলার পাশে হাত রেখে মাথাটা খানিক নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলো। আনায়া এখনো নির্বিকার। সে বরাবরের মতোই কিছু বলবেও না করবেও না।
“এখন তো আগের মতো আর কষ্ট দেই না? দেই বল! তবে এমন কেনো করছিস। আমি অশান্তিতে থাকলে তোর শান্তি হয়, তাই না?”
কেনীথের চোখে আজ ভিন্ন কিছু। গলার স্বরেটাও যেন করুন মনে হচ্ছে। নিজের অদ্ভুত পরিবর্তন করে যেন সে আজ আনায়াকে অনুনয় করছে। অথচ আনায়া নির্বিকার।
কেনীথ আনায়ার নিস্তব্ধতায় নিজেকে সামলে নিলো। গাল থেকে হাত সরিয়ে আনায়ার হাতে কালো রংএর শাড়িটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“পাভেল এনেছে। এক জায়গায় যেতে হবে,পছন্দ হলে পড়ে ফেলিস।”
কেনীথ এই বলেই আনায়ার কাছ সরে এসে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো।

বরাবরের মতো কেনীথের গায়ে একটা কালো রংএর টিশার্ট আর কালো রংএর প্যান্ট। বড় বড় চুল গুলো এবার একটু ঠিকঠাক করে বাঁধা। কেনীথ নিচে পাভেলের সাথে টুকটাক কাজ নিয়ে কথা বলছিলো। অনেকক্ষণ হয়ে যাচ্ছিলো বিধায় পাভেল একটু তাড়াতাড়ি করার জন্য উদ্বেগ হলো। আনায়ার তৈরি হয়ে নিচে আসার কথা কিন্তু আনায়া যেহেতু আসছে না সেজন্য কেনীথ নিজেই কিছুটা বিরক্ত হয়ে উপরে চলে গেলো।
কেনীথ রুমের কাছে এসে বিরবির করে বলতে লাগলো,
“একটু রেডি হতেই এতো দেরী তবে…”

কেনীথ রুমে প্রবেশ করে আনায়ার দিকে তার নজর পড়তেই তার কথা থেমে গেলো। কেনীথ নিজেও খানিকটা থমকে গিয়েছে। আচমকা নিশ্বাসও ভারী হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে যেন তার শ্বাসনালী অকার্য হয়ে পড়ছে।
কেনীথ ধীর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। আনায়া নিস্তব্ধ চোখে আয়নায় নিজেকে দেখছে। আনায়ার এক হাত তার পেটের উপর। ফর্সা ত্বকে কালো রং টা অসম্ভব সৌন্দর্যের সাথে ফুটে ওঠেছে।
শাড়িটা খুব সাধারণ, ব্লাউজটা কুনুই পর্যন্ত। আনায়ার মুখে নেই কোনো আলাদা প্রসাধনী। একদম সাধারণ একটা মলিন চেহারা। তবুও সৌন্দর্যের ঐশ্বর্য যেন সর্বাঙ্গে বিরাজ করছে।
কেনীথ এতক্ষণ আনায়াকে পেছন থেকে আয়নাতেই দেখছিলো। একটা সময় আনায়ার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আনায়া কেনীথের দিকে ফিরে তাকালো, সঙ্গে আলগোছে পেট থেকে হাতটা সরিয়ে ফেললো। কেনীথ ওর দিকে খানিকটা রুদ্ধশ্বাস চাহনিতে তাকিয়ে রইছে।

আনায়া নির্বিকার রইলেও কেনীথকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। বেচারার হঠাৎ দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। কেনীথ নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে অসহনীয় চাহনির সাথে বলতে চাইলো,
“হেই ব্লাড!আজকেই শেষ বার। এরপর কোনোদিন আমার সামনে কালো শাড়ি পড়ে আসবি না। না!না! আর কখনো শাড়িই পড়বি না। আমার অসহনীয় লাগে, একটুও ভালো লাগে না। শাড়িতে তোকে একটুও ভালো লাগে না।”
কিন্তু এসবের কিছুই কেনীথ বললো না। বেচারার কথাও গলায় আঁটকে গিয়েছে। কেনীথ পাশে ফিরে জোরে শ্বাস ফেললো। অতঃপর আনায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আর কখনো শাড়ি পড়ার প্রয়োজন নেই। দেরী হয়ে যাবে, আজ না হয় এভাবেই যাই।”
এই বলেই কেনীথ আনায়ার গালে একহাত রেখে কপালে খুব অল্প সময়ের জন্য নিজের ঠোঁট ছোঁয়াল। এরপর আনায়ার হাত ধরে যাওয়ার জন্য উদ্বেগ হতেই আনায়া অস্ফুটস্বরে বললো,
“আমার ক্ষিদে পেয়েছে।”

হঠাৎ আনায়ার মুখে কথা শুনে কেনীথ ত্বরিত পেছনে ফিরে তাকালো। আনায়া একদম আগের মতোই রয়েছে। তবে কেনীথের শুরু থেকেই মনে হচ্ছে যেন আনায়া কিছু বলতে চায়। ওর চোখ দুটোর গভীরতা ঠিক তাই জানান দিচ্ছে। কেনীথ এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি তবে এখন ভাবছে খাবার খাওয়াতে খাওয়াতে কিছু জিজ্ঞেস করে জানলে জানাও যেতে পেরে। আপাতত কেনীথ খানিকটা উদ্বেগের সাথে বললো,
“আ…ঠিক আছে। আমি খাবার নিয়ে আসছি। তুমি আগে খেয়ে নিস, এরপর না হয় দুজনে বের হবো।”
কেনীথ এই বলেই দ্রুত নিচে চলে গেলো খাবার আনতে।
নিচ থেকে খাবার সাজিয়ে রুমের কাছে আসার এই সময়ের ব্যবধানটা খুব বেশি ছিলো না। তবে উদ্বেগপূর্ণ কেনীথ প্লেট হাতে রুমের কাছেই পৌঁছাতেই কোনো ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার বিকট আওয়াজ শুনতে পেলো। মূহুর্তেই সম্পূর্ণরুপে ও থমকে গেলো। বিস্ময়ের সাথে প্লেট হাতে অতিদ্রুত রুম প্রবেশ করতেই এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো। এক আকাশ সমান ভয় এসে কেনীথের মাঝে আছড়ে পড়লো।
আপনা আপনি হাত থেকে খাবার সহ প্লেটটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেলো। কেনীথ তাতে কোনো প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে একবার অস্ফুটস্বরে বললো,

“তারা!”
কোনো সাড়াশব্দ মিললো না। কেনীথের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। তার আগে কখনো এমনটা অনুভব হয়নি যা হচ্ছে। এতোটা উদ্বিগ্ন সে কখনোই হয়নি। কেনীথ নিজেকে যতটা পারলো সামলে নিয়ে বারান্দায় গেলো। গিয়ে দেখলো সেখানেও আনায়া নেই। অতঃপর ঠোঁট চেপে বারান্দার গ্রিলের কাছে গিয়ে উদ্বিগ্ন চোখে নিচের দিকে তাকাতেই কেনীথ সম্পূর্ণ রুপে থমকে গেলো। মনের অজানা ভয়টাই অবশেষে সত্যি হলো।

কেনীথ পাগলের মতো নিচে নেমে বাহিরে যাওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন। একই শব্দ পাভেলও শুনতে পেয়েছিলো আর সেও অবাক হয়ে বাহিরে যেতে নিয়েছিলো। কিন্তু কেনীথকে এভাবে দেখে সে নিজেও চমকে গিয়েছে। হঠাৎ কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না। পাভেল দুবার কেনীথকে জিজ্ঞেস করেছিলো তবে কেনীথ এতোটাই উদ্বিগ্ন যে সে পাভেলের কথা ঠিকঠাক কানেই নেয়নি। পাভেলও আর দেরী না করে কেনীথের সাথে ছুটে বাহিরে চলে গেলো।
কেনীথ গিয়ে তার রুমের বারান্দার নিচে থামলো। কেনীথ সম্পূর্ণ স্তব্ধ পড়েছে, তার সাথে পাভেলও। দুজনের কেউই ভাবেনি এই মূহুর্তে তাদের এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে।
কেনীথ দ্রুত নিজেকে সামনে নিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা আনায়ার অচেতন দেহটার কাছে এগিয়ে গেলো। মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে আনায়ার মাথাটা নিজের কোলের উপরে রেখে পাগলের মতো আনায়াকে কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। আনায়ার কপালের অংশে খানিকটা কেটে গিয়ে অনবরত র/ক্ত ঝড়ছে। হাত পায়ে ছোট বড় পাথরের আঘাতে কিছুটা করে কে/টে গিয়েছে।

কেনীথের রুমের বারান্দার নিচের ছোট-বড় পাথরগুলো আর সরানো হয়নি। এতে উপর থেকে পড়ে যাওয়ায় আঘাতটাও বেশি পাওয়ার কথা কিন্তু তারা যা দেখছে তার কারণটা ঠিক দুজনে বুঝে উঠতে পারছে না। পুরো জায়গাটায় অন্ধাকার তবে কাছেই হলুদ রংএর ছোট লাইটের আলোয় মোটামুটি সব কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
যেখানে আনায়ার কপাল ব্যতীত অন্য কোথাও তেমন কেটে যায়নি সেখানে আশেপাশে যে র*ক্তের স্রোত বইছে তার কারণই দুজনে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ এতো ব্লিডিং কোথা থেকে হচ্ছে তা দুজনের মাথায় ঢুকছে না।
কেনীথ উদ্বিগ্ন স্বরে বললো,
“এই পাভেল! এতো ব্লিডিং কেনো হচ্ছে রে? এতো র/ক্ত কিসের?”
পাভেলও পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে এসব দেখে। ও নিজেও অস্থির হয়ে বলতে লাগলো,
“বুঝতে পারছি না বস। বস!বস! আর দেরী করা ঠিক হবে না। আমি গাড়ি বের করছি আপনি নিয়ে আসুন ওনাকে।”
যথারীতি পাভেল একমুহূর্তও দেরী না করে গাড়ি বের করলো। অন্যদিকে কেনীথ র/ক্তাক্ত আনায়াকে ওই অবস্থাতেই পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে গাড়ির পেছন সিটে গিয়ে বসলো।
পাভেল কার ড্রাইভ করছে আর কেনীথ আনায়াকে নিজের কোলেই আলতোভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রইছে। গাড়ি সহ কেনীথের সর্বাঙ্গে খানিকটা করে র/ক্ত লেগে রইছে।কেনীথের চোখেমুখে অধিক উদ্বিগ্নতার স্পষ্ট ছাপ। কেনীথের এহেন অবস্থা দেখে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। যে কেউ মূহুর্তেই বলে ফেললে এটা কেনীথ নয়। এটা হয়তো সেই ছোট্ট বেলার ভিভান। যার চোখেমুখে সবসময় মিলতো এক অদ্ভুত ভয়-আতংকের ছাপ। যে কিনা সামান্য ঘটনাতেও থাকতো চরম উদ্বিগ্ন। হ্যাঁ,এটা সেই ভিভান যে তার তারার জন্য আজ না চাইতেই ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

আনায়াকে হসপিটালের নিয়ে আসা হয়েছে ঘন্টা খানেক হলো। ওর পরিস্থিতি দেখে আনায়াকে ইমারজেন্সি কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেনীথ এখন একদম শান্ত আর স্তব্ধ। তার হাভভাবে মনে হবে যেন কিছুই হয়নি। বরং সব স্বাভাবিক। কে বলবে একটু আগে যে ছেলেটা পাগলের মতো ছটফট করছিলো এখন সে একদম চুপচাপ শান্ত রুপে একপাশে দাঁড়িয়ে রইছে।
এছাড়া কেনীথের মুখে মাক্স আর মাথায় কালো ক্যাপ পড়া। এই কাজটা পাভেলই জোর করে করেছে। নয়তো ভিকে কে কেউ সহজে চিনে নিলে তখন পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে যাবে। পুরো কাহিনি মিডিয়া তোলপাড় করে দিবে। এমনিতেও হঠাৎ ইন্ডাস্ট্রি থেকে ভিকে নামক রকস্টারটা গায়েব হইছে। এটা নতুন কিছু নয়, এটা কেনীথের বৈশিষ্ট্য। এই আছে তো এই নেই। কোথায় থাকে কিংবা কি করে তাও কারো জানা নেই। যে কারণে এসব এখন সবার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। শুধু কেনীথের কোনো ইভেন্ট অথবা কনসার্ট এর শোরগোল পড়লেই জনগণ আবারও জেগে ওঠে।

এদিকে পাভেল পারলে চিন্তায় ব্যাঙ্গের মতো লাফালাফি করে। কোঁকড়ানো চুল গুলো পুরো কাকের বাসার চেয়েও ভয়ংকর রুপের হয়ে গিয়েছে। বেচারার ভেতরে কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে। একবার এদিক তো একবার ওদিকে পায়চারি করে চলেছে।
আরো কিছু মূহুর্ত অতিবাহিত হওয়ার পর অবশেষে একজন ডক্টর তাদের কাছে এগিয়ে এলেন। ডক্টরকে আসতে দেখে কেনীথও এগিয়ে এলো আর পাভেল তো লাফিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো,
“ডক্টর উনার কি অবস্থা? সব ঠিক আছে?”
—“আপনি পেশেন্টের কি হন?”
মধ্যে বয়স্ক লোকটার এমন কথা শুনে পাভেল কিছুটা বিরক্ত হলো তবুও পাশে থাকা কেনীথের দিকে ইশারা করে বললো,

“উনি পেশেন্টের হাজব্যান্ড আর আমি পেশেন্টের…ভাই।”
“ওহ! পেশেন্ট মোটামুটি ঠিক আছে বাট সরি… আমরা বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারিনি। অতিরিক্ত আঘাতে উনার গর্ভপাত হয়ে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
ডক্টরের এহেন সহজ স্বীকারোক্তিতে দুজনেই যেন আকাশ থেকে পড়লো। কেনীথের কপাল কুঁচকে গিয়েছে। অন্যদিকে পাভেল তব্দা খাওয়ার মতো হাবভাব বানিয়ে বললো,
“ডক্টর আপনার হয়তো কোনো ভুল হচ্ছে। আমি একটু আগে যে পেশেন্ট কে নিয়ে আসা হলো তার কথা জিজ্ঞেস করছি। আপনি কার কথা বলছেন?”
“আপনি আনায়া শিকদার নামক পেশেন্টের কথা বলছেন, রাইট! যাকে একটু আগে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়েছিলো।”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩০

“জ্বী জ্বী, কিন্তু এই বাচ্চা কোথায় থেকে…”
পাভেলের কথা শেষ হওয়ার আগেই ডক্টর কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,
” ওয়ান সেকেন্ড, মিস্টার…”
কেনীথ যেন আরো বেশি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। চুপচাপ এতোক্ষণ ধরে ডক্টর আর পাভেলের কথা শুনে যাচ্ছিলো। মনে মনে নিজেও অনেক কিছু আন্দাজ করে ফেলেছে। ঠিক এরই মাঝে ডক্টর তার নাম বলতে গিয়ে আঁটকে গেলে কেনীথ নির্বিকারে বললো,
“ভিভান শিকদার।”
“জ্বী মিস্টার ভিভান শিকদার। আপনি কি সত্যিই জানতেন না যে আপনার স্ত্রী তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো? ”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩২