একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫
রনীতা তুশ্মি

বিস্তৃত সবুজ ঘাসে মোড়ানো উদ্যান। ভোরের কুয়াশায় চারপাশ সম্পূর্ণ রুপে আচ্ছাদিত। সূর্যের হালকা কিরণ এসে বিস্তীর্ণ উদ্যানে এসে আছড়ে পড়েছে। হালকা-মধ্যম শীতল হাওয়া মানব শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে।
অথচ এমন পরিস্থিতিতে এই বিস্তীর্ণ উদ্যানের বুক চিরে, কালো ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে চলেছে এক আত্মবিশ্বাসী যুবতী। তার উপস্থিতি যেন এক দৃঢ় ঘোষণা দিচ্ছে যে, সে এখানে শাসন করতে এসেছে। বাতাস তার চুলের খেলায় বিভোর। পিঠ পর্যন্ত ঘন সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বাতাসের তালে তাল মিলিয়ে উড়ছে। তার গ্রীবা উঁচু করে রাখার ভঙ্গিমাই যেন জানান দিচ্ছে, এই পৃথিবী তারই!এই রাজত্ব তারই! এই সাম্রাজ্য তারই!

পরনে তার আধুনিক হর্স রাইডিং পোশাক। অফ হোয়াট কালারের ব্রিচেস এর সঙ্গে ডার্ক ব্লু কালারের হালকা লেদার জ্যাকেট। সাথে লম্বা কালো বুটের সোনালী হিলের প্রান্তে সূর্যের আলো এক ঝলক ছড়াচ্ছে। চোখে তার এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি৷ যে দৃষ্টি প্রকৃতিকে জানান দিচ্ছে, সে শুধু ঘোড়ার পিঠে চড়েই এই বিশাল সাম্রাজ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে না বরং সে দিগন্ত চূর্ণ করে নিজেকে সবার ওপরে প্রতিষ্ঠিত করছে।
লাগাম ধরে রাখা তার দৃঢ় হাতের মাংসপেশি স্পষ্ট। সঙ্গে প্রতিটি দৌড়ে তার শরীরের নিখুঁত ভারসাম্য যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় চারপাশের নিস্তরঙ্গ প্রকৃতিকে। তার ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে থাকা এক রুক্ষ হাসি যেন বলে, “আমি ঠিক সেটাই চাই, যা আমার চাই!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘোড়ার পায়ের তীব্র শব্দ উদ্যানের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে। তার অদম্য উচ্ছ্বাসে প্রতিটি ছুটে চলায় চারপাশে সৃষ্টি হচ্ছে এক শক্তি আর ক্ষমতার অদৃশ্য বলয়। এই মেয়েটি শুধু ছুটছে না; সে তার নিজস্ব র”ক্তে বোনা এক গল্প লিখছে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে জ্বলছে তার ব্যক্তিত্বের অ”গ্নি।
মেয়েটি যেন নিজেকে প্রতিটি মুহূর্তে রচনা করছে। তার উপস্থিতি এমন, যেন পৃথিবী তার নিয়ন্ত্রণে। ঘোড়ার পিঠে বসে, একদিকে তার দৃঢ় মনোবল এবং অন্যদিকে তার দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস! যে দৃশ্য সে তৈরি করে, তা যেন শুধু বাস্তবতা নয় বরং এক জ্বলন্ত গল্প।
মেয়েটি প্রবল উচ্ছ্বাসের স্রোতে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটছিল। তার প্রতিটি শ্বাসে যেন ঝড়ছিলো আগুনের উত্তাপ । বাতাস তার চুলের মধ্যে ঝড় তুলেছে আর তার চোখে সেই এক অ*গ্নিমূল্য দৃষ্টি। তবে হঠাৎ দূরে এক পরিচিত ব্যক্তির আগমন তার তীক্ষ্ণ নজরে পড়তেই সে থমকায়।তার ঠোঁটের রুক্ষ হাসিটা বিস্তৃত হয়। বিস্তৃত হাসির ফলে ফর্সা দু’গালে ছোট বড় দুটো টোল ভেসে উঠে।

মেয়েটি লাগাম টেনে ধরে রাখা নিজের কালো গ্লাভস পড়া হাতের বন্ধনটাকে দৃঢ় করে, এক ঝটকায় ঘোড়াটি ঘুরিয়ে সে ওই ব্যক্তির দিকে এগোতে লাগলো। ওদিকে তার পরিচিত ব্যক্তিটিও এতোক্ষণে এগিয়ে এসে নিদিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে পড়েছে৷ অত্যধিক সুশ্রী রূপের এক তরুনী।
পরনে কালচে লাল রঙের রাজকীয় লং গাউন।তার উপর কালচে রংএর বড়সড় মখমলে কাপড়ের আলখাল্লায় নিজেকে আবৃত করে রেখেছে। আলখাল্লার বড়সড় টুপিটার দরূন মুখের এক চতুর্থাংশ ঢেকে গিয়েছে। তবে এসব ছাড়িয়ে উঁকি দিতে থাকা খানিকটা গাঢ় লাল রংএর চুলগুলো দৃশ্যমান। সবমিলিয়ে সে অত্যাধিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ রাজকন্যা সরূপ।
এদিকে ঘোড়াটিকে থামিয়েই দৃঢ় ভাবে মেয়েটি উঁচু থেকেই এক লাফে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল। তার শরীরের প্রতিটি আন্দোলন যেন এক আ*গুনের শিখা, যেটি নিমিষেই চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
মাটি ছোঁ*য়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হতে অ*গ্নিস্ফু*লিঙ্গের মতো তেজ ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ ঠোঁটে তার বিস্তৃত হাসি।

মেয়েটি আর দেরী করলো না। সে আলখাল্লায় আবৃত মেয়েটির দিকে এগোতে লাগলো। টাইট ফিটিং রাজকীয় পোশাকে তার রাজকীয় ভাবসাব। সবুজ ঘাসের উপর তার ফেলা প্রতিটি পায়ের তালই যেন সমান। হাঁটতে হাঁটতেই দুহাত উঁচিয়ে নিজের খোলা চুলগুলো আলগা খোঁপা করে নিলো। নিমিষেই তার সামনের ছোট চুলগুলো ব্যতীত বাকি সকল চুল তার খোঁপার মাঝে আটকা পড়লো।
তার প্রতিটি পদক্ষেপে তার শরীরে যেন আগুনের উ*ত্তাপ ঝরছিল। তার চলাফেরায় ছিল এক অদৃশ্য শক্তির প্রকাশ। সে যেন এক অগ্নিপাখি, যাদের পথ কখনো থামানো যায় না। তাদের আগুন কখনো নিভে না। তার হাসি, তার চলন, তার চোখ—সব কিছুতেই অ*গ্নি তেজে ধ্বং*সাত্মক আবহ স্পষ্ট।
মেয়েটি আলখাল্লায় আবৃত সেই সুন্দর তরুনীর কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“কি খবর, কিছু হয়েছে!”

মেয়েটির কথার বিপরীতে অন্যজন তার মলিন চেহেরার ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,
“নাহ, কিছু না। তোমার রাইডিং করা শেষ!”
মেয়েটি হেসে পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখলো একবার। আশেপাশে তারা দুজন বাদে আরো কিছু গার্ড হয়েছে। আর একজন তার ঘোড়াটাকে নিদিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটিও মুচকি হেসে বললো,
“হ্যাঁ,শেষ। আজ এতোটুকুই থাক। তুমি করবে নাকি? তোমাকে কত বলি, মাঝেমধ্যে তো আমার সঙ্গী হতেই পারো।”
—“তা হওয়া যায়। কিন্তু… সত্যি বলতে এসব আমার তেমন ভালো লাগে না। তুমি অনেক সুন্দর করে সব ম্যানেজ করতে পারো। আর তোমার ঘোড়া ব্লেজ-ও অনেক সাহসী আর অনেক ভালো। কিন্তু আমার এতো বড় বড় ঘোড়া গুলোর কাছে যেতেই ভয় লাগে।এসব আমার জন্য নয়।”
তরুনীর ভীতু চেহেরায় ভীতু কথা শুনে যুবতী মেয়ে পুনোরায় মুচকি হাসলো।
“হুম, ব্লেজ সত্যিই অনেক সাহসী আর ভালো। তবে তোমার সাদা রাঙ্গা লিও-ও কম কিছু নয়। ওকে কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগে।”

মেয়েটি খানিকটা উপহাস করে বললো,
“ও তো আমার মতোই দুর্বল। আমরা দুজন চুপচাপ গল্প আলাপের জন্যই ঠিক আছি। এছাড়া আমাদের দিয়ে কিছু হবেও না।
আর তোমরা দুজন তো হলে আ*গুন। সাহসী অগ্নি মেয়ে অ্যানার, সাহসী ব্লেজ। ব্লেজ অর্থ তো অগ্নি শিখা, তাই না!”
অ্যানা মুচকি হাসলো। আ*গুনের বি*ক্ষিপ্ত শি*খার ন্যায় জ্বলজ্বলে শান্ত চেহারার প্রাপ্তবয়স্ক নারীটির সম্পূর্ণ নাম অ্যানা তাইসিয়া। অন্যদিকে বিস্তৃত গোলাপ বাগানে নির্জনে বেড়ে ওটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুলের ন্যায় গড়ে ওটা তরুণী হলো আলেসিয়া ম্যারিন রোজ। রোজ হলো এক বিস্তৃত গোলাপ বাগানের গাঢ় লাল রাঙ্গা আকর্ষণয়ী ফুল যা একান্তই আলাদা, একান্তই একাকী। চারপাশে হাজারো গোলাপ ফুটে থাকলেও তার অস্তিত্বে এমন এক আকর্ষণ বহমান রয়েছে, যা যে কারো দৃষ্টি আটকে রাখে। তার লাল চুল যেন সেই গাঢ় লাল ফুলের গভীর পাপড়ির মতো, সূর্যের আলোয় ঝলমল করলেও তার গভীরে কোথাও এক নিরব বিষণ্ণতার ছায়া লুকিয়ে থাকে।

রোজের উপস্থিতি হলো সেই ঠিক সেই ফুল, যা তার নিজস্ব সৌন্দর্য ও গোপন বেদনা দিয়ে বাগানের সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। বাগানের অন্য ফুলেরা হয়তো বাতাসে নিজেদের মৃদু গন্ধ বিলায়, কিন্তু রোজ যেন নিজের একাকিত্ব দিয়েই বাগানকে পূর্ণতা দেয়। অথচ সেও এক জ্বলন্ত শিখা, যা নীরবে আলো জ্বালায় এবং অন্ধকারকে ছায়া দেয়।
তার লাল রঙ, তার একাকিত্ব, এবং তার নীরব উপস্থিতি যেন সমগ্র মহাবিশ্বের প্রকৃতিকে জানান দেয়; সে কোনো সাধারণ ফুল নয়। সে হলো সেই বিশেষ গোলাপ, যার প্রতিটি পাপড়ি এক অসমাপ্ত গল্পের প্রতিচ্ছবি। চারপাশে হাজারো ফুল থাকলেও রোজের অস্তিত্ব আলাদা, যেন তার একাকিত্বই তাকে অনন্য করে তুলেছে। রোজ যেন প্রকৃতির এক নিঃশব্দ আর্তনাদ, যার সৌন্দর্য কেবল দৃষ্টিতে নয়, তার গভীরতাকে ছুঁতে পারলে যে কারো হৃদয়ে গভীর দাগ কাটার এক অদৃশ্য-অমূল্য ক্ষমতার অধিকারী।
রোজ পুনোরায় সোজাসাপটা ভাবে জিজ্ঞেস করলো অ্যানাকে৷

“তবে তুমি কি এখন যাবে না! আরো কোনো দরকার…”
অ্যানা খানিকটা ইতস্ততভাবে বললো,
“আ…রোজ… ”
অ্যানা কথা সমাপ্ত করার আগেই রোজ বললো,
“আজও?”
অ্যানা ইতস্ততভাবে ঠোঁট চেপে কিঞ্চিৎ হেসে বললো,
“হুম!”
রোজ খানিকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
“ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি তবে।”
অ্যানা ঘাড় কাত করে বললো,
“চিন্তা করো না, আমি কাজ শেষ করেই চলে আসছি।”
রোজও চুপচাপ সেখান থেকে উল্টো ঘুরে হাঁটা শুরু করলো প্রাসাদ সরূপ বিশাল বাড়িটির দিকে।মনের মাঝে বরাবরের মতো আজও বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে তাকে। আজও হয়তো সূর্যের আলোয় এই রাশিয়া সম্পূর্ণ রুপে উজ্জীবিত হওয়ার আগেই আরো কয়েকটা প্রাণ চলে যাবে।

এসব নতুন নয়। তার জন্মই হয়তো এসব দেখার জন্য হয়েছিলো। মাঝেমধ্যে আফসোস হয়। সে কেনো আর সবার মতো নয়। তার আশেপাশের সবার কাছে মানুষ মা/রা, কা/টা ছিঁ/ড়া করা এসব কত সহজ বিষয়। অথচ বাগানের একটা প্রজাপতি কোনো কারণে মা/রা গেলে তার কত কষ্ট হয়। কষ্টে বুক ভার হয়ে আসে। কি অদ্ভুত! তার কি আদৌও এই পা*পের সম্রাজ্যে জন্মানোর কথা ছিলো! শেষে যাকে অল্প বয়সে ভালো বাসলো, সে তো আরো এক ম*হাপা*পী। হাহ…তবুও সবকিছু জানার পরও নির্ল*জ্জের মতো সেই পা*পীকে এখনো ভুলতে পারছে না। তার পুরো জীবনটা এতোটাই তুচ্ছ্য কেনো তা রোজের জানা নেই। আগে জীবন নিয়ে আফসোস হতো আর এখন তাচ্ছিল্যের উপহাস করেই বাঁচে সে।

রোজের চলে যাওয়া পুরোটাই অ্যানা নিজ চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। ও পা*পের সাম্রাজ্যে সাজানো রাজকীয় প্যালেসে প্রবেশ করতেই অ্যানা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এরই মাঝে তার কাছে একজন ব্যক্তি এগিয়ে এলো। এই প্রাসাদেরই ব্যাক্তিগত প্রয়োজনীয় ব্যক্তি সে। লোকটি তার কাছে আসতেই অ্যানার ঠোঁটে রুক্ষ বাঁকা হাসি ফুটে ওঠলো। ও জানে এখন তাকে কি করতে হবে।
অ্যানা লোকটির সাথে সাথে উদ্যান পেরিয়ে পেছনের দিকে এক বিশেষ জায়গায় যেতে লাগলো। অ্যানা আগে আগে দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে ওদিকে রাশিয়ান বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটি তার পেছন পেছন হেঁটে চলেছে।
অ্যানার ভাবগাম্ভীর্যটাই ভিন্ন রকম। সবসময় তার ছোট-বড় সকল পদক্ষেপ এক অগ্নি তেজ দৃশ্যমান থাকে। যথারীতি এখনও তার হাঁটাচলা, অঙ্গভঙ্গিতে রাজকীয় ব্যক্তিত্বের সাথে তে*জস্ক্রিয় মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।
তারা দুজন মিলে ফাঁকা উদ্যানের নির্জন জায়গায় গিয়ে প্রবেশ করলো। অ্যানা দেখলো সামনে এই জায়গায় একই সাথে তাদের দায়িত্বরত কালো পোশাক পড়া দশ থেকে বারো জন লোক দৃঢ়তার সঙ্গে সমান তালে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে রইছে। প্রত্যেকের হাতে যথেষ্ট অ/স্ত্র রয়েছে।
আর তাদের মাঝে হাঁটু গেঁড়ে তিনজন লোক বসে রইছে। তাদের হাত গুলো পেছনে এক করে রাখা। মাথা খানিকটা ঝুঁকানো, চোখেমুখে জীবন বাঁচানোর জন্য আ*তংক। অ্যানা মনের গভীর থেকেই হাসলো। মানুষের বেঁচে থাকার কত শখ। কি আছে জীবনে!কিচ্ছু না! তবুও সবাই বাঁচতে চায়, জীবন ত্যাগে সবারই ভয়। আজব দুনিয়ার আজব সব ব্যাপার স্যাপার।

অ্যানা এসব না ভেবে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো। লোকগুলোকে এখানে গভীর রাতে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। অবশ্য তাদের উপর এখন পর্যন্ত কোনো ট/র্চার করা হয়নি। অ্যানার এসব ভালো লাগে না। এতোটুকু দয়ামায়া সে তার শিকারদের উপর করে। তার মতে, বেচেরা গুলো একটু পর তার হাতেই শেষ হবে। তবে মৃ*ত্যুর আগে আগলা কষ্ট দেওয়ার কি প্রয়োজন। এসব অতিরিক্ত আর বিরক্তিকর লাগে তার কাছে।
এজন্য যথারীতি অ্যানার নিয়ম অনুযায়ী লোকগুলো আনার পর ভালো রকমের সেবাযত্ন করা হয়েছে। কিন্তু তবুও লোকগুলোর মধ্যে কেউ নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। কারণ তারা জানে, হিং*স্র বাঘিনীর চেয়ে ঠান্ডা মাথার নীরব হায়না বেশি ভয়ং*কর। আর তাদের এখানে আনারও অবশ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তারা কিনা এই রুশ মাফিয়াদের বিপক্ষে যেতে চেয়েছিলো? এরপরও তাদের বাঁচার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। এই আশা করাটাই যেন দুঃস্বপ্ন।
অ্যানা লোকগুলোর কাছে কিছুটা এগিয়ে যেতেই লোকগুলো তার কাছে ছুটে এসে পা জড়িয়ে ধরতে চাইলো। অ্যানা দ্রুত পিছিয়ে গেলো। অন্যদিকে কিছু কালো পোশাকে আবৃত লোক এসে ওদের শক্ত করে ধরে ফেললো। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক আর একজন মধ্যেবয়স্ক পুরুষ। অ্যানার এসব বিষয় ভালো লাগে না। একদিন সবাইকে ম*রতে হবে, তবে আজ এতো বাঁচার জন্য ছটফট করার কি রয়েছে। ও ভেতরে ভেতরে কিছুটা বিরক্ত হলেও চোখেমুখে তীক্ষ্ণ হাসি ফুটিয়ে তুললো।

অ্যানা নির্বিকার ভঙ্গিমায় নিজের হাত থেকে কালো গ্লাভস দুটো খুলতে শুরু করলো। এটা দেখে পাশ থেকে একজন ব্যক্তি এসে তার দুহাত শূন্যে তুলে ধরলো। অ্যানা পাশে ফিরে সেই ব্যক্তিটির দিকে তাকালো না। বরং মাটিতে পড়ে থাকা তিনজনের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসতে হাসতেই নিজের গ্লাভস দুটো তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে খানিকটা উপর থেকেই হাতের মাঝে ফেললো। তার বর্তমান ভাবভঙ্গি প্রচন্ড উদাসীন। যেন এসব তার রোজকার ব্যাপার।তবুও এসব করতে যেন তার ভালোই লাগে। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে যে।
অ্যানার গ্লাভস হাতে নিয়ে সেই বডিগার্ড সরে যেতেই অন্য আরেকজন এসে অ্যানার হাতের কাছে একটা পিস্তল এনে দিলো। অ্যানা সেটা সুন্দর করে হাতে তুলে এদিক ওদিক করে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। অতঃপর নির্বিকারে সে তিনজের দিকে এগিয়ে গেলো।

সেই তিনজন বডিগার্ড গুলোর বন্ধন থেকে ছুটতে চাইছে। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারনে রুশ ভাষাতেই অনবরত অ্যানার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চলেছে। কিন্তু সেসবে অ্যানার কিচ্ছু আসে যায় না। উল্টো বিরক্ত লাগে তার এসব। এমন তো নয় যে সে এদের বাঁচার সুযোগ দেয় না। সে তো সবাইকে প্রথমে সতর্কতা বার্তা পাঠায়। এরপরও যারা অ্যানার সতর্কতাকে মান্য করে না, অ্যানা তো তাদেরকেই ধরে এনে শেষ করে দেয়। এখন যে যত বড়ই তার শ/ত্রু হোক, ফাস্ট অর লাস্ট অপরচুনিটি তো সে বরাবরই সবাইকে দিয়ে আসছে। তবুও মানুষ তার কথা মান্য না করে মৃ*ত্যুর রাস্তা খুঁজে নেয়। এখন এটা কি তার দোষ? মোটােও না!
অ্যানা সুন্দর মতো পিস্তলটাকে লোড করার প্রস্তুতি শুরু করলো। ম্যাগাজিনে গুলি পূর্ণ রয়েছে তা অ্যানার জানা৷ এখন আপাতত বাম হাতে পিস্তলটাকে ধরে ডান হাতে পিস্তলের স্টাইডটাকে টানলো।
এরপর সেই তিনজনের কাছে গিয়ে রুশ ভাষাতে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলতে লাগলো,

“প্লিজ এভাবে কান্নাকাটি করবেন না! আমার প্রচন্ড বিরক্ত লাগে এসব।আর এতো হাউমাউ করার কি রয়েছে। আমি কি আপনাদের মে”রে ফেলেছি নাকি! তবে, প্লিজ এসব চিৎ*কার, চেঁচা*মেচি, হাত-পা ধরে কান্নাকাটি… করে আমার সুন্দর ফুরফুরে মেজাজটা অন্তত বিগড়ে দিবেন না। নয়তো আপনাদের পরিণতি আরো বেশি খারাপ হবে।”
অ্যানার নির্বিকারভাবে বলা হাস্যরস মাখানো কথাগুলোর শেষটা খানিক গাম্ভীর্যের সাথে সমাপ্ত হলো। আর এদিকে সে তিনজনও নিমিষেই চুপ করে গেলো। এই অ্যানার সম্পর্কে খানিকটা হলেও ধারনা রয়েছে তাদের। মূলত গোপনে তারা যতটুকু জানতে পেরেছে।

এ.টি. তথা অ্যানা তাইসিয়া শুধু রুশ মাফিয়া লুসিয়ার টিমের একজন বিশেষ সদস্যই নয় বরং সাথে একজন ইন্টারন্যাশনাল রকস্টার। তুলনামূলক ভাবে গানের সাথে যুক্ত সে গত ছয় বছর ধরে। তবে তার পরিচিতি সকলের মাঝে ছড়িয়ে মাত্র দুই- আড়াই বছর হলো। খুব অল্প সময়ের মাঝেই ভালো পরিচিতি আর সফলতা কুড়িয়েছে। তার দর্শকদের কাছে সে এক খুব পছন্দের ব্যক্তি। কিন্তু তার এই সুন্দর পরিচিতর পেছনেও যে এক মাফিয়া সদস্য হওয়ার মতোও ভয়ং*কর পরিচয় রয়েছে তা সবার কাছেই অজানা।
অ্যানার রকস্টার ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বৈশিষ্ট্য কিংবা স্টাইল রয়েছে। তার ফ্যান ফলোয়ারের হিসেব নেই অথচ অ্যানার পুরোপুরি মুখ আজ পর্যন্ত কেউ দেখতে পারেনি। এই পাপের সাম্রাজ্য ব্যতীত সে সকল জায়গাতেই সবসময় কালো মাস্ক- ক্যাপ আর কনসার্টের জন্য বিশেষ ধরনের কালো অথবা কালচে লাল রংএর মাস্কারেড মাস্ক লাগিয়ে রাখে। যেটি শুধু তার চোখ কিংবা মুখের উপরে অংশই না বরং ঠোঁট ব্যতীত মুখের উপরিভাগের দুই তৃতীয়াংশই ঢেকে যায়।
এছাড়া সে যেখানেই যায় সব জায়গায়তেই কঠোর সিকিউরিটি তার সঙ্গে সঙ্গে ঘেঁষে থাকে। এসব সিকিউরিটি তার ব্যক্তিগত; তার ইন্ডাস্ট্রি থেকে কাউকেই সে নিজের সিকিউরিটির জন্য রাখে না।

এছাড়া সে নিত্যন্তই এক রহস্যময়ী। একজন ইন্টারন্যাশনাল রকস্টার হওয়ার পরও না বাহিরের কেউ তার কেউ মুখ দর্শন করতে পেরেছে আর না কেউ জানতে পেরেছে তার সঠিক পরিচয়। জায়গা ভেদে সে যতগুলো দেশেই গান গেয়েছে সেখানেই মানুষ তার গলায় বিভিন্ন ভাষার গান শুনেছে। আগে অনেকেই তাকে রাশিয়ান ভাবতো কিন্তু পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে তাদের ধারণায় ভাঙ্গন ধরে। অনেকেরই দৃঢ় বিশ্বাস সে রাশিয়ান নয় কিন্তু তার সঠিক পরিচয় কি তাও সবার অজানা।
আর এই বিষয়টি নিয়ে গোপনে ঘাটাঘাটি করতে বসেছিলো দেশের বড় মাপের এক জার্নালিস্ট। সে যথারীতি এই বিষয়টি এক রিপোর্টও প্রকাশ করতে চেয়েছিলো। তার ধারনা এই রকস্টার এটিই রুশ মাফিয়াদের কোনো বড়মাপের সদস্য। এই নিয়েই খুঁটিনাটি কিছু প্রমাণও জোগাড় করে ফেলেছিলো।

যেটা কিনা অ্যানাও জেনে গিয়েছিলো। যে কারণে প্রথম বারেই সে এই নিয়ে সেই মধ্যবয়স্ক জার্নালিস্টকে লোকজন পাঠিয়ে এ*লার্ট করে। কিন্তু এতে জার্নালিস্ট ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলেও সে পুরোপুরি থামে না। কারণ এই লোকটি কাজ করছিলো অ্যানাদের শত্রু পক্ষ ইতালিয়ান মাফিয়া হয়ে। আর আজ সেই কারণেই তার পরিণতি হয়েছে অ্যানার পায়ের কাছে। আর তার সাথে ইতালিয়ান মাফিয়াদের গুপ্তচর রুপে দুই চ্যালা।
অ্যানা সর্বপ্রথম মাঝে বসে থাকা ব্যাক্তিটির মাথার উপর নিজের পিস্তলটা খেলার ছলে ঘুরাতে লাগলো। অতঃপর তার পাশের জনের মাথার উপর। তাদের তিনজনের হাতই পেছন থেকে অ্যানার লোকজন হাঁটু গেঁড়ে বসে শক্ত করে ধরে রইছে। অ্যানা এবার চারপাশটা তাকিয়ে দেখলো। আরেকটু সময় অতিক্রম হলেই সূর্যের কঢ়া রোদ সেন্ট পিটার্সবার্গের মাটিতে ঢেলে পড়বে। অ্যানাকে অবশ্য এর আগেই নিজের কাজ শেষ করতে হবে। বেশি বেলা করে কাজ করাটা তার ভালো লাগে না।

অ্যানা পুনোরায় ইতালিয়ান মাফিয়াদের গুপ্তচরদের দিকে তাকিয়ে রুক্ষ হেসে তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
“ইটালিয়ানদের চ্যালা তোরা,তাই না!”
ওদের দুজনের কথা শুনে সেই দুজন দৃঢ় চোখে ওদের দিকে তাকালো। অ্যানার মনে হলো হঠাৎ এদের মধ্যে যেন তেজের জোয়ার এসে বইছে। অ্যানা কিঞ্চিৎ হাসলো,
“আরে আরেহ, এতো চিন্তা করিস না! আমরা তোদের মতো চুনোপুঁটি কিংবা ছ্যাচড়া নই।তোদের টর্চার করে, তোদের সিক্রেট ইনফরমেশন নিয়ে কিচ্ছু জানতে চাইবো না আমি। এটা অ্যানার স্টাইলে ঠিক যায় না।
বাংলার খেটে খাওয়া মাইয়া আমি। কিছু প্রয়োজন হলে নিজেই ব্যবস্থা করে নেই।”
অ্যানা শুরুতে ইতালিয়ান ভাষায় কথা বললেও, শেষে গিয়ে আচমকা খাঁটি বাংলার কন্ঠস্বরে নিজের কথার সমাপ্তি করলো। অথচ হঠাৎ তার মুখে এই ভাষার অর্থটা আশেপাশের কেউই বুঝতে পারলো না। অ্যানার মতো আশেপাশের সবাই রুশ, ইংরেজি, ইতালিয়ান সহ আরো কয়েক ধরনের ভাষা জানে কিন্তু তাদের কাছে বাংলাটা ঠিক বোধগম্য হলো না।

অ্যানা আশেপাশে সবার হাভভাব দেখে হাসলো। নিমিষেই আবার চোখমুখ গাম্ভীর্যের সাথে ঢেকে গেলো। অ্যানা আচমকা একজনের কপালে নিজের পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগারে হাত রাখলো।গম্ভীর্য আর তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
“ইতালিয়ান ক্যামেরো! আন্ডারওয়ার্ল্ডে ভালোই নাম ডাক তোদের। আশা রাখছি খুব শীঘ্রই তোদের এই নাম-ডাক, বিশাল সাম্রাজ্য ধুলোয় মিশিয়ে দেবো।”
এই বলতে না বলতেই অ্যানা ট্রিগারে চাপলো। মূহুর্তেই পিস্তল থেকে গুলি বেড়িয়ে কপালের ছেদ করে মাথার ভেতরে প্রবেশ করলো। অ্যানার হাতের আঙ্গুলের ডগায় কিঞ্চিৎ র/ক্তের ছিটে এসে লাগলো। আনায়া তাতে পাত্তা দিলো না।এসব তার কাছে স্বাভাবিক।কখনো জার্নালিস্ট, কখনো কিংবা বিজনেস ম্যান, আর কখনো এদের মতো চ্যালাপ্যালা। এমন বহু মানুষের জান নিজ হাতে নিয়ে, অ্যানার দিনের শুরু কিংবা শেষ হয়।
কিন্তু আচমকা তার এই পদক্ষেপে বাকি দুজন মূহুর্তেই কেঁপে উঠলো। এদিকে মাঝের ব্যক্তিটি আলগোছে উল্টো হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছে। তাদের পেছনে থাকা লোকগুলো এতোক্ষণে সরে গিয়েছে। তবে এবার দুজনের মাঝে সেই মধ্যবয়স্ক জার্নালিস্ট যেন একটু বেশিই ভয় পাচ্ছে।

অ্যানা এবারও আর একটুও সময় নষ্ট না করে পাশের জনের মাথাটাতেও নির্বিকারে শ্যুট করলো। সেও আলগোছে নেতিয়ে মাটিতে পড়লো। এবার পালা মধ্যবয়স্ক জার্নালিস্টের৷ অ্যানা মুচকি হেসে সেই লোকটির সামনা-সামনি দাঁড়ালো। এদিকে লোকটি সুযোগ পেতেই আনায়া পা দুটো জড়িয়ে ধরেছে। তাকে ছাড়াতে বাকিরা ছুটে আসতে চাইলে অ্যানা ইশারায় মানা করলো। সে চুপচাপ নিজের গ্রীবাটা উঁচু করে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসছে। এদিকে সেই জার্নালিস্ট কেঁদেকেটে একাকার।
“মা তোমার পায়ে পড়ি।তুমি আমার মেয়ের মতো। প্লিজ আমায় মেরো না। আমি তো হয়তো তোমার বাবার মতোই, প্লিজ আমায় মে’রো না।”
অ্যানা মুখটা নিচু করে রুক্ষ হেসে বলতে লাগলো,
“আপনি যদি আমার পা দুটো ছাড়তেন। তবে আমি হয়তো বেশি খুশি হবো। আপনি আমার পিতা সমতুল্য বলে কথা!”

অ্যানার নরম কন্ঠস্বরে চারপাশের সবাই খানিকটা অবাক হলো না। অ্যানা তো এখানে আনার পর কাউকে ছেড়ে দেয় না। তবে আজ কি ভিন্ন কিছু হবে। এদিকে সে লোকটিও কিছুটা খুশি মনে অ্যানার পা দুটো ছেড়ে দিয়ে মুখ তুলে তাকালো।
দৃঢ়ভাবে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সামনে, হাঁটুগেঁড়ে বসে বাঁচার আকুতি জানিয়ে তাকিয়ে মুখ উঁচিয়ে রইছে মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। হয়তো মনে মনে আশা বুনতে শুধু করেছে এবারের মতো জান হাতে নিয়ে ফেরার।
—“তুমি সত্যিই আমায় মারবে না!…মা আমি যা করেছি ভুল করেছি। এটা আমার প্রফেশন ছিলো বিধায়… প্রমিজ করছি আর কখনো এসব করবো না আমি। আমি প্রফেশন ছেড়ে দেবো। তুমি সত্যিই মহান, আমার মতো অধমকে নিজের বাবার জায়গায় বসিয়ে আজ প্রাণ ভিক্ষা দিলে আমার।”
—“ওয়ান সেকেন্ড! আমি কখন বললাম যে আমি আপনাকে মা”রবো না। এটা তো অসম্ভব। অ্যানা এখানে আজ পর্যন্ত যাদের যাদের নিজের শিকার বানিয়ে এনেছে, তাদের সে কখনোই ছাড়েনি। ছেড়ে দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।”

এবার লোকটির চোখমুখ শুঁকিয়ে গেলো। অন্যদিকে অ্যানার কাজকর্ম দেখে চারপাশের বডিগার্ড গুলো মনে মনে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসছে।
“মানে?”
অ্যানা লোকটির কথায় মুচকি হেসে বললো,
“তোর মতো মানুষ গুলো হয় মেইন কালপ্রিট। এই যে বললি এসব কাজ তুই নিজের প্রফেশনের ভিত্তিতে করিস… এগুলো সব ভুয়া কথা।
নাহ..!আমি প্রত্যেকটা প্রফেশনকেই সম্মান করি। আর যারা নিজেদের প্রফেশনের প্রতি সর্বদা সৎ থাকে তাদের তো আরো বেশি পছন্দ আমার। কিন্তু তুই তো তোর কাজে সৎ ছিলি না! যদি তুই এতো ভালো মানুষের বাচ্চাই হইতি তবে নিশ্চয় এখন ক্যামোরোদের হয়ে কাজ করতিস না। থাকোস এই দেশে আর কাম করো ওই হা/লার বেডাদের লগে।”
“তুমি ভুল বুঝছো। আমি সত্যি বলছি, ওরা আমায় জোর করেই নিজেদের কাজে…”
—“তুই কি ভেবেছিস, আমি ঘাস খাই। কিচ্ছু জানি না আমি! তা আঙ্কেল, এই কাজ করার বিনিময়ে যে হিউজ এমাউন্ট আপনার ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়েছে তা কি এসব চুনোপুঁটি জার্নালিস্টের কাজকর্ম করেই? ইশ কি করলাম জীবন…গান গেয়ে আর মানুষ না মে*রে, আপনার মতো জার্নালিস্ট তো আমারও হওয়া উচিত ছিলো। জীবনটাই বৃথা গেলো।”

অ্যানার এহেন হাস্যরসের কথাবার্তায় লোকটির ঘাবড়ে গেলো। খুব করে মনে হচ্ছে সে জীবনের একদম শেষ মূহুর্ত উপভোগ করতে বসেছে। সে শেষ বারের মতো মুখ খুলে অ্যানাকে কিছু বলতে লাগলো,
“মা… আমি তোমার বাবার মতো। এই ভেবে অন্তত আমার প্রাণ ভিক্ষা… ”
লোকটি নিজের কথা শেষ করতে পারলো না বরং এর আগেই অ্যানা তার মুখের ভেতর পিস্তল ঢুকিয়ে দিলো। লোকটির চোখদুটোও ছানাবড়া হয়ে উঠলো। অথচ অ্যানা নির্বিকারে বললো,
” জীবনের শেষ সময়েও ভুল মানুষের সাথে নিজের তুলনা করে চরম ভুল করলি। আমার বাপটা খুব একটা ভালো মানুষ ছিলো না রে। তোর কপাল ভালো,আমি অ্যানা বলেই আজ তোর পরিণতি আমার বাপের মতো হলো না।”
কথা শেষ করা মাত্রই অ্যানা ট্রিগারে গুনে গুনে একধারে তিনবার চাপলো। নিমিষেই এক ঝটকায় র*ক্তের ছিটেগুলো এসে অ্যানার কব্জি অব্দি জায়গায় পর্যন্ত লেগে গেলো। এদিকে সেই জার্নালিস্টও মাটিতে গড়িয়ে পড়েছে। অ্যানার কাজ শেষ হতে না হতেই ও আশেপাশের লোকগুলোকে ইশারা করলো।

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৪

যাতে কয়েকজন লোক এসে লা*শগুলো টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজে লেগে পড়লো। এদিকে অ্যানা পিস্তলটাকে তার বিশেষ এক বডিগার্ডের হাতে দিয়ে খানিকটা কাছেই থাকা বাগানের পানির ছোট ফোয়ারার দিকে এগিয়ে গেলো। হাতে লেগে থাকা র*ক্ত গুলো ধুতে ধুতেই তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি বললো,
“রাত আটটায় ফ্লাইট। সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।”
অ্যানা পাশে ফিরে সেই বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটিকে দেখে মুচকি হেসে, পুরনোয় মাথা ঘুরিয়ে নিজের কাজের দিকে মনোযোগ দিলো। আর মনে মনে অস্ফুটভাবে বললো,
“হাহ…অবশেষে বহু বছর পর।”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫ (২)