একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫ (২)

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫ (২)
রনীতা তুশ্মি

পাভেল কেনীথ দুজনেরই মাথায় অনেকটা করে আঘাত লেগেছে। দুজনের এক্সি*ডেন্ট হওয়ার পর অতিরিক্ত মানুষজন আর মিডিয়ার আগেই পাভেলের ম্যানেজমেন্টে লোকেরা আগেভাগে এই খবর পেয়ে গিয়েছে। যে কারণে অন্তত মিডিয়া চলে আসার আগেই ওরা কেনীথ আর পাভেলকে সরিয়ে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে।
একরাত-একদিন পুরোটা হসপিটালে কাটিয়ে দেওয়ার পর কেনীথ হসপিটাল থেকে চলে আসার সিন্ধান্ত নিলো। দুজনের মাথাতেই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আ*ঘাতটা খুব বেশি গভীর না হওয়ায় দুজনেই এবারও বেঁচে গিয়েছে।

তবে তাদের দুজনেরই জানা এইকাজ কে করছে।
এসব নতুন নয়। গত কয়েকবছরে বহুবার কেনীথকে মে*রে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো ট্রাক কিংবা বাস এসে ওদের গাড়িতে এট্যাক করেছে নয়তো হুটহাট নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো সে বরাবরই কোনো না কোনো ভাবে বেঁচে গিয়েছে। এটা কেনীথের ভাগ্য কিংবা পাভেলের সতর্কতা কিংবা সঠিক দায়িত্ববোধের ফলাফলও বলা চলে।
এবারও যেমন ড্রাইভিং করার সময় খানিকটা সতর্ক হয়েছিলো বিধায় বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। এর একটা না একটা তো সমাধান বের করাই উচিত।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কেনীথ নিজের জোরের বলেই পাভেলকে নিয়ে হসপিটাল ছেড়ে বেরিয়ে এলো। এতো তাড়াহুড়ো করারও অবশ্য কারণ হয়েছে। আজ রাতে শহরের বড় এক রিসোর্টে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে স্পেশাল গেস্ট হিসেবে কেনীথও রয়েছে। কেনীথের যদিও তেমন আগ্রহ নেই এই সব নিয়ে তবে তার আগ্রহ ভিন্ন জায়গায়।
পাভেল আর কেনীথ হসপিটাল থেকে তার শহরের এপার্টমেন্টে চলে এলো বিকেলের দিকে। শরীরের খানিকটা ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে তবে এসবে তাদের কিছু আসে যায় না। কাজ করা শুরু করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কেনীথ গত কয়েকবছর ধরে তার নিজস্ব রহস্যময় বাড়িটা ছেড়ে এখানেই থাকতে শুরু করেছে। এখন ওই বাড়িতে খুব প্রয়োজন ছাড়া যাওয়া হয় না। এখন অবশ্য ওর পাগলামি গুলোও কমে গিয়েছে। মানুষ নিয়ে তার আজব খেলা গুলোও থেমে গিয়েছে। কেনেল আর ক্লারাও এখন তার সাথেই শহরের এপার্টমেন্টে থাকে। ওদের খাদ্যাভ্যাস থেকে এখন মানুষের মাং”স নামক উপকরণটা বাদ পড়েছে। কেনীথ আর ওদের দিনকাল এখন ভালোই চলে। মাঝখান থেকে পাভেলের উপর একগাদা কাজের চাপ পড়ে গিয়েছে। ওরও অবশ্য ভালোই লাগে এসব করতে। তবে সমস্যা হলো কিছুদিন পর পর কে”নীথের উপর হামলার বিষয়।

ড্রইং রুমে কেনীথ চুপচাপ সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইছে। তার দুপাশে ফ্লোরের উপর বসে রইছে কেনেল-ক্লারা। ওরাও কেনীথের মতো চুপচাপ রইছে। এদিকে পাভেল কেনীথের সামনের সোফায় বসে রইছে কেনীথের মুখ থেকে কিছু শোনার উদ্দেশ্যে। না জানি এবার তাকে কি করতে হয়। মাথার সাদা ব্যান্ডেজ খুলতে আরো কয়েকদিন লাগবে। অথচ কেনীথ এতো তাড়াহুড়ো করে। পাভেলও কিছু বলতে পারে না।
এরই মাঝে কেনীথ চোখ খুলে টানটান করে বসলো। পরনে কালো রংএর টাউজার আর হুডি।কেনীথ এবার খানিকটা ঝুঁকে নিজের দুই হাঁটুতে নিজের কুনুই দুটো ঠেকিয়ে হাত দুটো শূন্যে ঝুলিয়ে দিলো। অতঃপর পাভেলের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই পাভেল ঢোক গিললো। আমতাআমতা করে বললো,
“হেই ব্রো!এভাবে তাকাও কেনো। আমার কি দোষ। আমি তো কিছুই করিনি৷”
কেনীথ বিরক্তি নিয়ে বললো,

“শুরুতে কাহিনিটা তো তুই-ই করেছিস। যাই হোক, এখন আর সলিউশনও বের করতে পারছিস না।”
পাভেল খানিকটা ইতস্ততভাবে বললো,
“আমি কি করবো। ঐ ইনা যে এতো পাগলামি করবে তা তো আমিও কল্পনা করতে পারছি না। ও পুরো সাই”কো হয়ে গিয়েছে। ওকে থামানো দরকার।”
—“থামানো তো তখন যাবে যখন ওকে ধরতে পারবো। কিন্তু সেটাই তো…”
এই বলেই কেনীথ পুনোরায় পাভেলের দিকে কড়া নজরে তাকাতেই পাভেল ঢোক গিলে বললো,
“এবার কি করতে হবে?”
কেনীথ নির্বিকার হয়ে পুনোরায় সোফায় গা ছেড়ে দিয়ে বললো,
“আজ রাতের পার্টিটা তো রেড লাইট রিট্রিট রিসোর্টেই হচ্ছে, তাই না?”
—“হুম তো”
—“ব্যবস্থা করে রাখিস!”
পাভেল খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
—“মানে?”

কেনীথ একগাল মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর নিজের বেড রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
—“এবার স্বয়ং ইনাকে লাগবে আমার। আ’ম সেইং ইট এগেইন, আই ওয়ান্ট ইনা।”
কেনীথ এইটুকু জোর গলায় বলে পাভেলের দিকে একচোখ মে’রে গটগট করে নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগলো। এদিকে পাভেল থতমত খেয়ে বিস্ময়ের সাথে বলতে থাকলো,
“বস এটা কি করে হয়। ইনা… ওকে আমি কোথায় পাবো…আর তার সাথে তুমি কিভাবে৷ হাউ ইজ দিস পসিবল?
—“এভরিথিং ইজ পসিবল ইফ দিস কেনীথ ওয়ান্টস।”
কেনীথ জোর গলায় পেছনে না ফিরেই কথাটা বলেই নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। এদিকে পাভেল কি করবে না করবে তা বুঝতে না পেরে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

হলুদ রঙের কয়েকটা বাল্বের আলোয় বিশাল হলরুমেটা খানিকটা আলোকিত। তবে খুব বেশি আলো চারপাশে নেই। এটি এমন একটা জায়গা যেখানে ভেতর হতে দিন রাত সব সমান। খুব বেশি পার্থক্য দেখা যায় না এখানে। সর্বক্ষণই এখানে অন্ধকারের আবহ বিরাজ করে।
তবে এমন একটা জায়গার সর্বস্বজুরে বেবি কট সাজিয়ে রাখা। বেবি কট কিংবা ছোট নবজাতক বাচ্চাদের থাকার ছোট ছোট এই বিছানা গুলোর সবটাতেই নবজাতকে পূর্ণ। কম করে হলেও চল্লিশের উপর নবজাতক এই হলরুমে রাখা হয়েছে। এছাড়াও এসবরে দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছে বারো থেকে পনেরো জনের মতো নার্স। প্রত্যেকের পরনেই নার্সের মতো সাদা পোশাক। এছাড়া রুমের কোণায় কোণায় কয়েকজন গার্ডও রয়েছে।

কিছু বাচ্চা জেগে রইছে আর কিছু বাচ্চা ঘুমিয়ে। নার্সগুলো খুব যত্ন সহকারে সকল বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে ব্যস্থ। দিনরাত এভাবেই তারা কাজ করে চলেছে। তারা জানে এই বাচ্চাগুলো তারা আর কয়েকঘন্টা পর নিজেদের কাছে পাবে না।এর আগেই এদের মধ্যে থেকে চল্লিশটা বাচ্চা চলে তাদের আসল গন্তব্যে। বাধ্য হয়ে হোক কিংবা নিজ ইচ্ছেয়, গত কয়েকবছর ধরে এভাবেই তারা এইসব পা*পের জগতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়া তারা এটাও জানে যে,তাদের মধ্যে কখনো যদি মনুষ্যত্ব বিকাশের দরূন এই জগৎ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয় তবে হয়তো তারা সেই সুযোগও পাবে না। এখানে এসেছিলো তো তারা নিজ থেকেই কিন্তু যেতে পারবে শুধু মাত্র ইনা কিংবা প্রধান কর্তৃপক্ষের নিজ সিন্ধান্তেই।

নার্স গুলো বেশির ভাগ সময়ই অত্যন্ত আ*তংক আর সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের কাজ করে। না জানি কখন কোন ভুল হয়ে যায়। আর তারা যাদের হয়ে কাজ করছে তাদের সাথে বেঈমানী কথা তো তারা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না। নয়তো তাদেরও পরিণতও হবে লিজার মতো।
লিজার মতো এভাবে জীবন দিয়েছে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে এখানে। নিজেদের সাথে কাজ করা বহু সঙ্গীকেই তারা হারিয়েছে। শুধুমাত্র এই জগৎ থেকে বের হতে চাওয়া কিংবা এখানকার ইনফরমেশন বাহিরে লিকের চেষ্টা করার অপ’রাধে। এই বিষয়ে কড়া নি’ষেধ রয়েছে তাদের উপর। আর যাই হোক, এখানে কাজ করে বেঈ”মানী করার কোনো সু্যোগ নেই। এমন কিছু চিন্তা করা মানেই যেনো নিশ্চিত ভয়ং*কর মৃ*ত্যু।
সকলের ব্যস্তার মধ্যেই আচমকা সরু হিলের খটখট আওয়াজে প্রত্যেকের কলিজা কেঁপে উঠলো। ক্রমশই এই আওয়াজ দৃঢ় হতে লাগলো। তারা ভালো করেই বুঝে গিয়েছে কে আসছে।
এরই মাঝে ইনা বুকে দুই গুঁজে গম্ভীর মুখে ক্যাটওয়াক করতে করতে সেখানে প্রবেশ করলো। তাকে দেখা মাত্রই সকালেই মাথা ঝুলিয়ে কুর্নিশ করলো। এদিকে নির্বিকার ইনার ভাবভঙ্গিমা। অতচ তার এই নির্বিকার ভাবসাবই সবার কলিজার পানি শুঁকিয়ে দেয়। যদিও সকলে খেয়াল করলো আজ ইনার ঠোঁটের কোণায় এক অদ্ভুত হাসি। ওকে কি কিছুটা খুশি মনে হচ্ছে! খুব অল্প সময়েই তারা ইনার মুখে এই হাসির ঝলক দেখতে পেয়েছে।

ঠিক কি কারণে ইনার এই পরিবর্তন ঘটে তা তাদের জানা নেই কিন্তু এই হাসিতে তাদের মোটেও খুশি হওয়া চলবে না। কারণ যখনই তারা ইনার মুখে এই হাসির ঝলক দেখেছে ঠিক তার কিছু মূহুর্ত পরেই ইনা পাগলের মতো ভয়ং”কর তা”ন্ডব চালিয়েছে। যথারীতি প্রত্যেকেই এই ভেবে কিছুটা আতং”কিত। না জানি, আজ কি করে বসে।
এরই মাঝে ইনা সাজিয়ে রাখা সারি সারি বেবি কটগুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। আজ হঠাৎ বাচ্চাদের কাছে ইনাকে আসতে দেখে প্রত্যেকেই খানিকটা আশ্চর্য সঙ্গে আতং”কিত। একবার মনে হচ্ছে,ইনা হয়তো একটু বেশিই খুশি। সেক্ষেত্রে এসবকে স্বাভাবিক ভাবা যেতে পারে। কিন্তু ততক্ষণেই মনে হচ্ছে এই আনন্দই না আবার ধ্বং”সে পরিণত হয়।

এদিকে ইনা এসে একটা ফুটফুটে বাচ্চার বেবিকটের কাছে এসে দাঁড়ালো। বাচ্চাটা অসম্ভব সুন্দর। মেয়ে বাচ্চা হয়তো। ইনা সেই প্রথম থেকেই খেয়াল করছিলো বাচ্চাটার হাসি পুরো হলরুমকে মুখরিত করছে। যদিও নবজাতকের হাসি ততটাও আওয়াজ সম্পূর্ণ নয় সঙ্গে আরো অনেক বাচ্চা আশেপাশে জেগে থেকে শুয়ে শুয়ে খেলা করছে, শব্দ করছে। কিন্তু এই বাচ্চাটিকে তার একটু বেশিই আনন্দিত মনে হলো। ইনা মনে মনে ভাবলো, এই বাচ্চাটাও হয়তো আজ তার মতো একটু বেশিই খুশি। বিষয়টি তার কাছে ভালো লাগলো।
ইনা বুকে হাত গুঁজে থাকা অবস্থাতেই চোখে মুখে তীক্ষ্ণ হাসি ফুটিয়ে বেবি কটের ভেতরের দিকে ঝুকে বাচ্চাটাকে এক নজনে দেখলো। এসব বাচ্চার বয়স খুব একটা বেশি নয়। এখানে যেসব বাচ্চা আনা হয় তারা প্রত্যেকেই নবজাতক। এবং এদের এখানে আনার মূল উদ্দেশ্য কিংবা এদের যে মূল গন্তব্যে পাঠানো হয় সেটাও ঠিক নিওনাটাল পিরিয়ডের কিংবা শিশুর জন্মের পর থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই। কারণ এই সময়টাতেই মূলত একজন শিশুকে নবজাতক হিসেবে ধরা হয় এবং এই পুরো সংস্থার কাজটাই হয় মূলত এসকল বাচ্চাদের নিয়ে।

এদিকে ইনাকে দেখে বাচ্চাটা আরো বেশি হাসতে লাগলো। ওর মুখ থেকে যেন হাসিই সরছে না। ইনা ওকে দেখে বিস্তৃত ভাবে মুচকি হাসলো। আজকে সত্যিই সে কিছুটা খুশি। ইনা আচমকা নিজের হাতের বাঁধন খুলে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। আর এটা দেখা মাত্রই তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্সের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। শুধু সে নয় বরং বাকি নার্সগুলোও নিজেদের কাজের পাশাপাশি ইনার কাজকর্ম হাবভাব লক্ষ করছে।ইনা কখন কি করে বসে তা কারোরই আন্দাজে নেই।
এদিকে ইনা দিব্বি বাচ্চাটা নিজের কোলে তুলে আলতো হাতে বাচ্চাটার গাল বুলিয়ে দিচ্ছে। দুজনের মাঝে সে কি আন্তরিকতা। যদিও ইনা একদম চুপচাপ, মুখ হতে একটা কথাও বলছে না। কিন্তু বাচ্চাটার এই অনবদ্য হাসি তার কলু’ষিত সত্তাকে ক্ষণি’কের জন্য ভুলিয়ে দিয়েছে।

ঠিক এরই মাঝে প্রবেশ করলো কালো রংএর বড় কোর্ট পড়া লোকটি।লোকটির আসল নাম অলিভার মেসন। সে মূলত কোনো বাংলাদেশী নয় বরং একজন বিদেশি। যদিও সে বাংলাটা খুব স্পষ্ট আর ভালো ভাবেই জানে কিংবা বলতে পারে। এই পুরো গ্রুপটা মূলত হান্স কোম্পানির হয়ে কাজ করে। আর জার্মানিতেই মূলত এই এস.পি.হান্স নামক কোম্পানির মূল ভিত্তি অবস্থিত। যার ছোট বড় বিভিন্ন শাখাগুলো পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইছে।

নতুন কিংবা সম্প্রতি কালে এই হান্স কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়নি।এটি বহু বছর ধরে জার্মানিতে নিজেদের রাজত্ব চালাচ্ছে। যেটি মূলত বিভিন্ন মেডিসিনের এবং প্রসাধনীর উপর কাজ করে আসছে। তবে লোকচক্ষুর সামনে এই কোম্পানি যতটা স্বাভাবিক ঠিক তার চেয়েও বহু গুনে ভয়ং*কর এর কোম্পানির আড়ালের কাজকর্ম।
সাধারণ মানুষ ব্যতীত তাদের বড় একটি সেক্টর উচ্চ বিলাসী গোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত এক্সপেন্সিভ মেডিসিন ও কসমেটিকস উপর প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। আর হান্স কোম্পানির পুরো পৃথিবীতে প্রভাবশালী হওয়ার পেছনের ঘটনাটাও ঠিক এটাই। তারা বছরের পর বছর এভাবেই লোকচক্ষুর আড়ালে নানান অনৈতিক কাজ করে আজ বিশ্বে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

আর অলিভার মেসনও বহু বছর ধরেই এই হান্সের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবেই কাজ করছে। অলিভারকে দেখা মাত্রই ইনা ব্যতীত বাকি সকলেই মাথা ঝুকিয়ে কুর্নিশ করলো। অলিভারের আজ এসব খেয়াল করার পরিস্থিতি নেই। সে ভাবছে ইনাকে নিয়ে। আজও কাজের কাজ কিছু হয়নি। না জানি এটা শোনার পর আজ ও কি করে বসে।
অলিভার চেহেরার রং উড়ে গিয়ে ফেকাসে হয়ে গিয়েছে। ইনা মেয়েটা সাইকো, ও অনেক বড় একটা সাইকো। মারা’ত্মক ধ্বং’সলীলার তা’ন্ডব চালানোর মতো এক সাইকো সে।
তবুও অলিভার ইনার কাছে গিয়ে ওকে ডাকলো৷
–“ইনা! ”
ইনা বাচ্চাটার খেয়ালে মত্ত ছিলো। আশেপাশের কিছু খেয়াল রাখার মতো খেই হারিয়ে ফেলেছিলো। অলিভার ওকে ডাকা মাত্রই ত্বরিত নিজরে ধ্যান থেকে বেড়িয়ে এসে সচেতন হলো। তবে অলিভারের দিকে তাকালো না, বরং বাচ্চাটার সাথে মুচকি হেসে আঙ্গুল দিয়ে খেলা করতেই বললো,

—“হুম!”
ইনার এহেন হাভভাবে অলিভার আরেকটু ঘাবড়ে গেলো। আজ ইনাকে তো বেশিই হাসিখুশি মনে হচ্ছে। বুঝতে পারছে না এতে তার কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত নাকি আরো বেশি দু’শ্চিন্তা করা উচিত। এই ইনার কোনোকিছুই তো তার ঠিকঠাক বোধগম্য নয়।
এদিকে অলিভারের এহেন ঘাবড়ানো অবস্থা দেখে পাশের নার্সটি চিন্তায় পড়ে গেলো। তার চিন্তা মূলত ইনার কোলে থাকা বাচ্চাটিকে নিয়ে। শেষমশ না আবার এই বাচ্চাটিকেই ইনার পাগলামির বলি হতে হয়৷ যতই হোক, এখানে মানুষরূপী বহু জানো”য়ার রইলেও ইনার মতো ভয়ং*কর জা”নোয়ার সে ব্যতীত আর কেউ নেই। আর তারা তো হলো এদের হাতের পুতুল। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে যত্ন-আত্তি মিশিয়ে এতো সময় ধরে পার করার পর বাচ্চাদের উপর নার্সদের এখন ভিন্ন রকম মায়া জমে গিয়েছে। যত যাই হোক, তারা কখনোই ইনাদের মতো পাষাণ মনে চোখের সামনের কোনো বাচ্চার ক্ষ”তি হতে দেখতে পারবে না।

কিন্তু সমস্যা হলো ইনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্স তথা রিভা মেয়েটা কি করে ইনার কাছ থেকে বাচ্চাটিকে সরিয়ে নিবে। এটা ভাবতেই তো তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তবুও অনেক সাহস করে ইনার উদ্দেশ্যে বললো,
“ম্যাম…ওকে না হয় আমার কাছে…”
রিভা নিজের কথাও শেষ করতে পারেনি। বরং এর আগেই ইনা বাচ্চাটার থেকে মুখ সরিয়ে রিভার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,
“দেখছো না,আমারা খেলা করছি!”
ইনার শান্ত তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বরে রিভা কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো৷ আর কিছু বলার সাহস নেই তার। বাঁধ্য হয়েই দু পা পিছিয়ে গেলো রিভা।
এদিকে ইনা এবার অলিভার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন।”
এই বলেই ইনা পুনোরায় বাচ্চাটার দিকে মুখ ফিরিয়ে ওর সাথে খেলতে লাগলো। এবার একহাতে বাচ্চাটিকে নিজের সাথে আগলে রেখেছে আর বাচ্চাটির গ্রীবায় অন্য হাতের দু আঙ্গুল দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছে।
অলিভার কিছু বলছে না দেখে এবার ইনার চোখমুখ শক্ত হলো। নিরেট কন্ঠে নিজেই বললো,

“আবারও বেঁচে গিয়েছে তাই তো?”
অলিভার খানিকটা ইতস্ততভাবে বললো,
“সবকিছুই ঠিক ছিলো তবুও… ম’রেনি।”
ইনা কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ওর এই নিস্তব্ধতা সবাইকে ভয় পাওয়াচ্ছে।এর আগেও যতবার ইনা এই ব্যর্থ হওয়ার খবর শুনেছে ততবার ইনা প্রচন্ড পাগলামি করে তা’ন্ডব চালিয়েছে। সেসব সময় বহু কষ্টে সবাই ওকে সামলে নিয়েছে। এমনি কখনো কখনো ওকে থামাতে সেন্সলেস করার ইনজেকশন পু’শ করতে হয়েছে। কিন্তু এবার ওর এমন প্রতিক্রিয়া কারো বোধগম্য হচ্ছে না। বিশেষ করে অলিভার নিজেই এই বিষয়ে আতং”কিত।

অলিভার আরো কিছু বলবে এর আগেই ইনা বাচ্চাটিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। হঠাৎ বাচ্চা টিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে তা কেউই বুঝে উঠতে পারলো না। অলিভার তড়িঘড়ি করে পেছন থেকে বললো,
“ইনা কোথায় যাচ্ছো?”
ইনা কোনো জবার দিলো না। বরং সে যেতে যেতে হলরুমের দরজার কাছে চলে গেলো। ঠিক সেই সময়ে অলিভার আবারও ইনার উদ্দেশ্য জোর গলায় বললো,
“ইনা বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? পাগলামি করো না বলছি। ওকে রেখে যাও।”
এবার ইনা চলে যেতে নিয়েও আর গেলো না। বরং পেছনে ঘুরে অলিভার সহ বাকি সকলকে দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। আর ভাবভঙ্গি একদম স্বাভাবিক। না রা’গ, না ক্ষো’ভ; হাভভাব দেখে আগাম কিছুই বোঝার স্কোপ নেই। এমনই এক অদ্ভুত সাইকো সে।

ইনা অলিভার দিকে শান্ত নজরে তাকালেও তা অলিভারের কাছে তীক্ষ্ণ চাহনি মনে হচ্ছে। অলিভার নিজেও খানিকটা অস্থির হয়ে গিয়েছে। কি করবে না করবে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না। এদিকে ইনা খানিকসময় বাদে মাথা নিচু করে বাচ্চাটার দিকে তাকালো। ফুটফুটে চেহারা বাচ্চাটার মুখে এখনো হাসি লেগে রইছে। ওর হাসি দেখে ইনার ঠোঁটের কোণাতেও কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠলো।
কিন্তু মূহুর্তেই তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন হলো। বাচ্চাটা এখনো হাসছে কিন্তু এই হাসি তার পছন্দ হচ্ছে না। বর্তমানে ইনা মোটেও খুশি নয় তবে বাচ্চাটা কেনো খুশি! সে কি ইনাকে দেখে উপহাস করছে? কিন্তু কেনো? এবারও সে ব্যর্থ, তাই! নিমিষেই ইনার ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে কঠিন হলো। ঠোঁটের কোণায় থাকা কিঞ্চিৎ হাসিটাও মুছে গেলো। ইনা বাচ্চাটার গালে একহাতে চেপে ধরলো। প্রথমে খানিকটা আলতো হাতে ধরলেও মূহুর্তেই সে জোর প্রয়োগ করতেই বাচ্চাটা ব্যাথায় গোঙানির মতো শব্দ করে উঠলো।
এহেন পরিস্থিতি দেখে অলিভার, রিভা সহ বাকি কিছু নার্সও দৌড়ে ওর দিকে ছুটে আসতে নিলো। অলিভার জোরে জোরে বললো,

“ইনা না! ওকে কিছু করো না। তুমি ভুল… ”
তারা ইনার কাছে পৌঁছানোর আগেই ইনা একহাতে বাচ্চার গালটা ধরে উপরের দিকে শূন্যে তুললো। নিমিষেই বাচ্চার গায়ে পেঁচানো সাদা কাপড়টা নিচে খুলে পড়লো। ছোট বাচ্চা হওয়ায় সেভাবে কাঁদতে না পারলেও তার গোঙ্গানির মতো শব্দগুলো নিত্যন্তই করুণ। অথচ ইনার চোখে যেন গভীর শূন্যতা, আর হৃদয়ে একটি অস্পষ্ট উত্তেজনা।
অলিভার ওর কাছে গিয়ে বাচ্চাটাকে নেওয়ার আগেই ইনা বাচ্চাটিকে শূন্য থেকে সোজা ফ্লোরের মধ্যে আছড়ে ফেললো। নিমিষেই বাচ্চাটির নরম দেহটা ফ্লোরে পড়তেই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলো।
নিচে পড়ে শিশুটি কেমন করুণ এক আর্তনাদে চিৎকার করে উঠল। সেই চিৎকার যেন বাতাসে মিশে গিয়ে সবার মাঝে স্তব্ধতা তৈরি করল।শিশুটির মৃদু কান্না সকলের কাল বেজে উঠল। কিন্তু সেই কান্না যেন ইনাকে দমাতে পারল না। মেয়েটির ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠেছে।
সবাইকে আরো একবার বিস্মিত করতে সে আরো এক পদক্ষেপ নিলো। হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে বিধ্বস্ত দেহের বাচ্চাটির গলা চেপে ধরে বলতে লাগলো,

“তুইও ম’রবি না, তাই না! কেনো ম’রবি না? ম’রতে হবে, সবাইকে ম’রতে হবে।”
ইনার কথা বলার মাঝেই অলিভার যখন ওর হাত ছাড়িয়ে সরিয়ে নিতে চাইলো ঠিক তখনই যেন ইনা আরো বেশি ক্ষি*প্ত হলো। এক ঝটকায় অলিভারের হাতটা ছুঁড়ে সরিয়ে দিলো। আর মূহুর্তেই বাচ্চার পা দুটো দু’হাতে ধরে কাপড় কাঁচার মতো শূন্যে তুলে নিচে আছড়ে ফেললো। নিমিষেই বাচ্চার নরম মাথা আর পেট ফেটে গিয়ে নাড়ীভুঁ’ড়ি, মস্তিষ্ক বের হয়ে গেলো। রক্তের সাথে বাচ্চার পুরো শরীরটা মাখামাখি হয়ে গিয়েছে। এবড়োখেবড়ো শরীরের নাড়ী”ভুঁ’ড়ি আর মস্তি’ষ্কের অংশগুলো অত্যন্ত বি’শ্রী দেখাচ্ছে।
হলরুমের বাকি সব নার্স গার্ডের রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। কয়েকজনের চোখে বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। আবার এতো হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজে অনেক গুলো বাচ্চা জেগে গিয়ে কান্নাকাটি করছে। বাঁধ্য হয়েই নার্সদের এমন পরিস্থিতিতেও বাকি বাচ্চাদের সামলাতে হচ্ছে।

এদিকে অলিভার ইনার কাছ থেকে উঠে এলো। ওর চোখেমুখে নিস্তব্ধতা। জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার আর কিছু বলার নেই। এমনটাই হওয়ার ছিলো হয়তো।
এদিকে ইনা সেই বীভৎস বাচ্চার দেহের এক পা ধরে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর বাচ্চাটির শুধু একটি পা ধরে শূন্যে ঝুলিয়ে নিয়েই সে হল রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। ইনার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে র’ক্তের ধারা ফ্লোরে এক বীভৎস আলপনা একে দিচ্ছে। র’ক্তে মাখানো বাচ্চাটার কিছুটা মস্তি’ষ্ক আর না’ড়ীভুঁ’ড়ি ফ্লোরে এখনো পড়ে রইছে আর বাকিটা উল্টো হয়ে শূন্যে ঝুলতে থাকা দেহের সাথে।সঙ্গে ইনার নির্বিকারে হেঁটে চলে যাওয়ার দৃশ্য যেন এক নর’কীয় লো’মহর্ষক চিত্র।
এদিকে ইনা চলে যেতেই অলিভার পাশে রিভা সহ বাকিদের ইশারা করে বললো যেন ফ্লোরটা পরিস্কার করে দেওয়া হয়। অলিভারের নজর থেকে সবার চোখের কান্না গুলো এড়িয়ে গেলো না কিন্তু সে তাদের মতোই নিরুপায়। সঙ্গে এক সুস্থ মস্তিষ্কের পা’গল কিংবা জা’নো’য়া’রও।

যেমন মেয়ে মানুষের দেহে’র বিশেষ অংশের মাং’স খাওয়াটা তার নেশা। যদিও সে এই নেশাকে দমিয়ে রাখতে পারে।কিন্তু সময় সুযোগ হলেই তার এই নেশার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।তখন সে চাইলেও এই সুযোগ ছাড়তে পারে না। যেমনটা সে লিজার ক্ষেতেও সেই সুযোগ হয়েছিলো তার। এছাড়া আরো একটি নেশা হলো মস্তিষ্ক খাওয়া। মানুষের মস্তিষ্ক খেলে যে কুরু কিংবা প্রিয়ন রোগ হয় এটা তার ভালো করেই জানা। কিন্তু তবুও সে এই নেশা ছাড়তে পারে না। খুব নিয়ম করে অল্প একটু মগজ খেয়ে নিলেও তৎক্ষণাৎ সে মনে করে একগাদা এন্টি প্রিয়ন ড্রাগস্ নিয়ে খেয়ে নেয়।

এছাড়া এই পাপের রাজ্যে কাজ করতে করতে এসবে সে অভস্ত্য। এই যে কিছুদিন পর পর এতোগুলো করে বাচ্চা নিদিষ্ট গন্তব্যে পাঠাতে হয়, সে এসবের সাথেও আগে থেকেই অভস্ত্য। সে ভালো করেই জানে এসব বাচ্চার সাথে কি করা হয়। কিন্তু সে তো জা”নো’য়ার। এতোকিছু জেনেও তো দিনের পর দিন সে এসব কাজের লিপ্ত থেকেছে। আর ভবিষ্যতেও থাকতে হবে। এমনকি ভবিষ্যতে হয়তো এরচেয়েও আরো খা’রাপ কাজ করতে হবে। নিজ হাতেই করতে হবে। তবে সেটাই তো হবে তার পদোন্নতি।
অলিভার জানে ইনা এখন কোথায় গিয়েছে। তার মতো সুস্থ মস্তি’ষ্কের নরখাদক ব্যতীত এখানে আরো একজন রয়েছে। যে সত্যি সত্যিই সম্পূর্ণ বিকৃ’ত মস্তিষ্কের একজন নর’খাদক।

ইনা বাচ্চাটির দেহটাকে নিয়ে একটা কালো কুচকুচে অন্ধকার ছোট ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। আশেপাশের সবকিছু কালো কুচকুচে অন্ধকার। শুধুমাত্র ঘরের সামনে একটা নীল রঙের আলোয় পথটা ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে।
ইনা বাচ্চাটির পা টাকে শক্ত করে ধরলো। অন্যহাত দিয়ে বদ্ধ দরজার লকটা খুলতেই বন্ধ রুম থেকে অদ্ভুত ভেপসা গন্ধে ইনা চোখমুখ খানিকটা বিরক্তিতে কুঁচকে গেলো। অন্যকেউ হলে হয়তো এতোক্ষণে তার গন্ধে গা গুলিয়ে যেতো। অথচ ইনা নির্বিকারে রুমে মধ্যে প্রবেশ করে রুমের নীল রঙের বাল্বটা জ্বালালো। হালকা একটু নীল রঙের আলোতেই ঘরের কোণায় বসে থাকা এক বীভৎস চেহেরার মানুষ তার নজরে এলো।
খুব বেশি বয়স হবে না সেই ছেলেটির। অল্পবয়সী যুবক বলা চলে। মাথা,গালে পাগলের মতো বড় বড় চুল দাঁড়িতে পরিপূর্ণ। পরনে শুধু একটা কালো রংএর ছিঁড়া ফাটা প্যান্ট। বাকি রোগা-সোগা দেহের হাড় হাড্ডি গুলো যেন দেহ থেকে বেড়িয়ে আসছে। শরীরে এক ছটাক মাংস ব্যতীত বাকি সবই যেন হাড় হাড্ডি। কতদিনের অভুক্ত সে তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট ঘা। সেখান থেকে পঁচা পু’চ-এর মতোও কিছু সদৃশ্য। এছাড়া আঁচ’ড়-আঘা’তের কিছু চিহ্ন রয়েছে। ছেলেটি চুপচাপ ঘরেরে কোণায় ঝিমাচ্ছিলো। কিন্তু আচমকা ঘরের আলো জ্বলতেই সে পাগলের মতো ছটফট শুরু করতে লাগলো। অন্ধকারে থেকে সে অভস্ত্য।সপ্তাহে যখনই সে এইখানে আলোর দেখা পায় তখনই সে পাগলের মতো উম্মা*দ হয়ে যায়। এমনিতেও সে একজন পাগল। এক উ’ম্মাদ নর’খাদক সে।
বীভৎস চেহেরার ছেলেটি এই ঘরের কাউকে দেখা মাত্রই ওর দিকে হাম”লা করার জন্য ছুটে আসতে চাইলো। কিন্তু যখনই ইনার দিকে তাকালো তখনই কিছুটা চুপসে গেলো সে। গুটিয়ে নিলো নিজেকে। ইনাকে হামলা করার মতো সাহ’স তার মতো নরখাদ’কেরও নেই। কোনো এক অদ্ভুত কারণে সে ইনার কাছে দূর্বল। ইনা তাকে যাই বলে সে ঠিক তাই করে। সে ইনাকে যতটা ভয় করে তার চেয়েও বেশি সে ইনাকে পছন্দ করে।

ছেলেটি খেয়াল করে দেখলো ইনার হাতে মানুষের দেহ খ’ন্ড ঝুলছে। নিমিষেই তার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এতোকিছুর মাঝে সে এটা খেয়াল করতেই তো ভুলে গিয়েছে। সে দৌড়ে ইনার কাছে আসতে চাইলে ইনার কিছুটা সামনে এসে তাকে থেমে যেতে হলো।
পায়ে তার মোটা শিকল বাঁধা। চাইলেও সে আর ইনার একদম কাছে যেতে পারবে না। ছেলেটি ইনার দিকে বাচ্চাদের মতো করুণ চোখে তাকালো। যত যাই হোক, একগাদা চুল দাঁড়ির মধ্যে দৃশ্যমান একজোড়া চোখ নিত্যন্তই মায়াবী। সেই চোখজোড়া ইনার দিকে প্রগাঢ় আকুতি নিয়ে তাকিয়ে রইছে।
ইনা কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। মুচকি হেসে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটির উষ্কখুষ্ক চুলে পূর্ণ মাথায় কয়েকবার আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দিলো।ছেলেটিও কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে নিলো ইনার সান্নিধ্যে।
কিছুক্ষণ সময় পর ইনা ছেলেটির মাথা থেকে হাত সরিয়ে অন্য হাতে থাকা বাচ্চাটার দেহ ছেলেটির সামনে উঁচিয়ে ধরে মুচকি হাসলো। ছেলেটিও একগাল হেসে ইনার হাত থেকে বী”ভৎস দেহটা একপ্রকার পাগলের মতো ছিনিয়ে নিয়ে পুনোরায় ঘরের কোণায় গিয়ে বসে পড়লো।

এখন আর সে ইনাকেও চিনবে না। সবার আগে পেটের ক্ষিদে।ওটা মিটে গেলে বাকিসব। তরতাজা ছোট্ট মানব দেহের কচি নরম মাং”স। নিমিষেই ছেলেটি বাচ্চাটার কচি হাতটা কামড়ে দেহ থেকে ছিঁ’ড়ে ফেললো। অতঃপর পাগলের মতো একে একে দেহের বাকিসব অংশ গুলো কাম”ড়ে ছিঁ’ড়ে নিয়ে খাওয়ার সুবিধার্থে ছোট ছোট অংশ করলো। হিং*স্র মানবের দাঁতের প্রতিটি কামড়ে র*ক্তে মাখানো কচি মাংসে নিমিষেই ডেবে গিয়ে হালকা টানেই ছি’ন্নবি’চ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটির বুকের চামড়া-মাংস মুরগীর মতো টেনে হিঁ’চড়ে ছোট্ট কলি’জাটা হাতিয়ে বের করলো সে। তরতাজা কাঁ’চা ক’লিজাটা কয়েক কা”মড়েই ছিন্ন-বি”চ্ছিন্ন করে চিবিয়ে খেয়ে নিলো। বাচ্চাটির হাতের ছোট্ট ছোট্ট নখ গুলো কবুতরের হাড় মাং”সের মতো কড়মড় করে কা’মড়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে লাগলো। হাতের বড় বড় নখ গুলো দিয়ে বা’চ্চার দেহের না”ড়ীভুঁ’ড়ি গুলো এতোক্ষণ ছি’ন্নভিন্ন করে মাং’স থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
এসব সবকিছুই নির্বিকারে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো ইনা। যথারীতি বাচ্চাটার র’ক্ত লেগে থাকা হাত দুটো দিয়ে নিজের মুখে একবার ঘষে নিয়ে নিজের মুখটাও তাজা র’ক্তের আবরণে সাজিয়ে তুললো। অতঃপর নিজের বুকে দু-হাত গুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মূহুর্তেই তার শান্ত চোখজোড়ায় তী”ব্র আ”গুন জ্ব”লে উঠলো। রুক্ষ স্বরে বলতে লাগলো,

“আমি বলেছিলাম ভিকে! আমি তোমায় কখনোই ছাড়বো না।তুমি যে আ’গুন জ্বা’লিয়েছিলে, সে আগু’নেই পু’ড়ে ছাই হয়ে যাবে তোমার নাম-পরিচয়। আমি শুধু সেই মুহূর্তেরই অপেক্ষায় রয়েছি।
তোমার ম”রতে হবে ভিকে। তোমায় ম”রতে হবে। তোমার জন্য সব হারিয়েছি আমি। সব হারিয়েছে আমার প্রিয়জন। এই সব কিছুর হিসেব দিতে হবে তোমায়। এই ইনায়ার হাতেই তোমায় ম”রতে হবে।
তোমার সৃষ্টিতে তুমি নিজেই ধ্বং’সের বীজ বুনেছ। এবার সেই বি’ষফল আমি ছুঁয়ে দেখবো; দেখবো তোমার করুণ সমাপ্তি।

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫

সময়ের গতিপথ যেমন কখনো থেমে থাকে না, ঠিক তেমনি আমিও থামব না।জীবন আবারও তোমায় আরেকটি সুযোগ দিয়েছে হয়তো, কিন্তু আমি দিচ্ছি না। যেভাবেই হোক, তোমার গল্পের শেষ অধ্যায় আমি নিজ হাতে লিখব।”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৫ (৩)